শর্ত পর্ব -১৮+১৯

#শর্ত
#লেখনীতে:অনুসা রাত(ছদ্মনাম)
#পর্ব:১৮

শিশির প্রায় অনেকক্ষণ যাবত খাবার টেবিলে বসে আছে।কেয়া এসেছে তাই বাসায় আজ ভালো-মন্দ রান্না হয়েছে।শিশিরের খাওয়া শেষ অনেক আগেই কিন্তু সে এখনো বসে। কারণ তার দৃষ্টি একটু দূরে বসে থাকা রাতের দিকে। যে আপাতত সায়ানকে সামলাতে ব্যস্ত।
তা দেখে চৈতী বেগম বলছেন,

-“রাত!আমার কাছে সায়ানকে দিয়ে তুমি খেতে যাও।”

রাত না বোধক মাথা নাড়িয়ে বললো,

-“আমি পরে খেয়ে নিবো। আগে ও ঘুমাক।”

শিশির বেশ বিরক্ত হচ্ছে! কি হবে যদি ও চৈতী বেগমের কাছে সায়ানকে কিছুক্ষণের জন্য দেয় তো?শিশির উঠে দাড়ালো। সায়ানকে নিতে নিতে বললো,

-“খালি বাচ্চার খেয়াল রাখলেই হয় না রাত। নিজের খেয়ালটাও রাখতে হয়।”

রাত অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো।কেয়া টেবিল থেকে বলতে লাগে,

-“ভাবী এসে খেয়ে যাও।”

রাত আড়চোখে শিশিরের দিকে তাকালো। সে সায়ানকে সামলে নিচ্ছে।টিভির সামনে বসে গেছে আপাতত৷চৈতী বেগম মুখ টিপে হেসে বললেন,

-“এবার বললি না?”

-“কি?”

-“পরে খাবি।”

রাত কিছু না বলে তাড়াতাড়ি গিয়ে টেবিলে বসে পড়লো।চৈতী বেগমও বসলেন রাতের পাশে।রাত বেশ তাড়াহুড়ো করছে। তা দেখে চৈতী বেগম বললেন,

-“ধীরে খা রাত।”

রাত তবুও তাড়াহুড়ো করে খাচ্ছে। হঠাৎ করে রাতের বিষম উঠে গেলো। রাত দাঁড়িয়ে কাশতে লাগলো।চৈতী বেগম দাঁড়িয়ে রাতের দিকে পানির গ্লাস এগিয়ে দিলো।
আর ব্যস্ত গলায় বলতে লাগলো,

-“বলেছিলাম ধীরে খেতে।কি হত আস্তে আস্তে খেলে?”

রাত তখনো কাশছে। শিশির গেছিলো সায়ানকে বিছানায় শুইয়ে দিতে।রাতকে এ অবস্থায় দেখে সে এগিয়ে এসে রাতের মাথায় হাত দিয়ে বললো,

-“তাড়াহুড়ো করে খাচ্ছিলে কেন?”

রাতের কাশি আস্তে আস্তে কমে গেলো।নিম্ন স্বরে বললো,

-“আরে এমনি। কাশি উঠে গেলো।”

শিশির দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,

-“আমি সায়ানকে শুইয়ে এসেছি।তুমি ধীরে ধীরে খাও।”

বলেই শিশির চলে গেলো। চৈতী বেগম আবারো মিটিমিটি হেসে বললেন,

-“নাও ধীরেসুস্থে খাও।”

রাত সম্মতি দিলো।মনে মনে ভাবলো,

-“আমি সায়ানের জন্য জলদি খাচ্ছি না। আমি তো জানি যে শিশির স্যার ঠিকই সায়ানকে ঘুম পাড়িয়ে দিচ্ছেন। আমি তাড়াতাড়ি খাচ্ছি ওনার জন্য করা আমার খাস প্ল্যানটা সাকসেসফুল করার জন্য।”

বলেই রাত শয়তানি হাসলো।এদিকে শিশির টিভি দেখার ফাঁকে ফাঁকে রাতের হাসিমাখা মুখটার দিকে তাকিয়ে আছে। রাত কি সুন্দর করে সবার সাথে কথা বলছে আর খাচ্ছে।শিশির সেদিকে তাকিয়ে হালকা হেসে ভাবলো,

-“রাতকে দেখলেই আমার অদ্ভুত এক অনুভূতি হয়।মনে হয় রাতকে ছাড়া আমি বাঁচবো না৷ ওকে না দেখলে একটা মুহূর্তও থাকতে পারবো না।রাত আমাকে সত্যিই আবার বাঁচতে শিখিয়েছে৷ও আমার লাইফে না আসলে হয়ত আমি নিজেকেই শেষ করে দিতাম।গুমড়ে গুমড়ে মরতাম।”

ভেবলই শিশির মাথা চুলকায়। আবারো রাতের দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ পর বিরবির করে বললো,

-“তবে কি রাত নিজের তৃতীয় #শর্ত টাও পূরণ করে ফেললো?”

এদিকে শিশির অনেকক্ষণ যাবত তাকিয়ে থাকায় রাতও সেদিকে তাকায়। দেখতে পায় শিশির তাকেই দেখছে।রাত চোখের ইশারায় জিজ্ঞেস করে,

-“কি?”

শিশির না বোধক মাথা নাড়িয়ে হাসলো।রাত বুঝতে পারছে না যে শিশিরের হয়েছে টা কি।এমন অদ্ভুত বিহেভিয়ার কেন করছে!রাত নিজের মত খেয়ে উঠে গেলো। শিশির তার মাকে উদ্দেশ্য করে বললো,

-“মা?তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে।”

-“আচ্ছা আসছি।কেয়া?তোর কিছু লাগবে?”

শিশির কেয়ার মাথায় চাটি মেরে বললো,

-“এখন থেকে খেতে বসছিস?”

কেয়ার মুখ ভেংচি কেটে বললো,

-“হোস্টেলের খাবার খেতে খেতে আ’ম বোরড। কতদিন নিজের পছন্দমত খাই না৷ আজকে সব খেয়েই উঠব।”

শিশির বোনের মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,

-“আচ্ছা খা।”

কেয়া মুচকি হাসলো।চৈতী বেগমকে উদ্দেশ্য করে বললো,

-“না আমার আর কিছু লাগবে না আম্মু।”

-“আচ্ছা।”

চৈতী বেগম নিজ রুমের দিকে পা বাড়ায়।শিশিরও পিছন পিছন তার মায়ের রুমে যায়। চৈতী বেগমকে বিছানায় বসিয়ে নিজে পাশে বসে বলতে লাগে,

-“মা!তোমাকে আমার একটা কথা বলার আছে।”

চৈতী বেগম মুখ টিপে হেসে বললেন,

-“আমি হয়তো কিছু টা আন্দাজ করতে পারছি।”

শিশির অবাক হয়ে ভ্রু কুঁচকে বললো,

-“বুঝতে পেরেছো?”

-“হ্যা বুঝতে পেরেছি।”(গালে হাত দিয়ে)

-“কি বুঝলে?”

-“রাতকে ভালোবাসিস!”

শিশিরের শরীরে শিরশির অনুভূতি হলো। সে রাতকে ভালোবাসে। সেটা তার মা বুঝতে পারছে।সে কেন পারছে না?তার কেন এত সময় লাগলো?শিশিরকে চুপ করে থাকতে দেখে চৈতী বেগম বলে উঠলেন,

-“শোন, রাতকে আমি তোর জন্য এনেছি।ওর বাবাকে #শর্ত দিয়ে এনেছি।”

-“কিসের #শর্ত?”(অবাক হয়ে)

-“সেসব বাদ দে। যেটা বলছিলাম।”

চৈতী বেগম কথাটা এড়িয়ে গেলেও শিশিরের মনে কথাটা দাগ কেটে রইলো। চৈতী বেগম আবারো বললেন,

-“রাতকে আমার তোর জন্য পারফেক্ট মনে হয়েছে বলেই এনেছি। সায়ানকে কিভাবে সামলাবে সেটা আমি ভাবিনি,ভেবেছি তোর কথা।কিন্তু ওকে দেখ!সায়ানকেও সামলাচ্ছে আর তোকেও। ওর মত মেয়ে হয়?তুই যে ওকে ভালোবেসে ফেলেছিস সেটা আমি বুঝতে পারছি। তুইও নিজের মনকে জিজ্ঞেস কর। উত্তর পাবি।”

শিশির নিজের মায়ের কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনলো। তারপর মনে মনে ভাবলো,

-“রাতকে কি তবে বলে দেয়া উচিত আমার মনের কথা?”

-“রাতকে বলে দে নিজের মনের কথা শিশির। ভালো থাকবি ওর সাথে।”

শিশির মাথা নাড়ায়।চৈতী বেগম সেখান থেকে চলে গেলেন।শিশিরও মায়ের রুম থেকে বের হতে হতে ভাবলো,

-“আচ্ছা রাত কি আমাকে ভালোবাসে? ও যদি আমায় ভালো না বাসে তো?ওকে প্রপোজাল দেয়াটা কি উচিত হবে? যদি রিজেক্ট হই?বাট রাত তো আমার সাথেই থাকতে চায়। ও কেন আমায় রিজেক্ট করবে?”

ভাবতে ভাবতে শিশির নিজের সাথেই তর্ক করতে লাগে।দরজায় এসে কেয়াকে দেখতে পেয়ে কেয়ার মাথায় হাত দিয়ে বললো,

-“যা ঘুমিয়ে যা।”

-“অল দা বেস্ট ভাইয়া!”

-“কেন?”

-“রুমে গেলেই বুঝবি। “(চোখ টিপে)

শিশির কেয়ার কথাটা বুঝলো না।তাই নিজের মতই ঘরে এসে বেড রুমের দরজা খুললো।চারিদিকে অন্ধকার!শিশিরের ভ্রু কুঁচকে গেল। গম্ভীর কণ্ঠে বললো,

-” রাত?”

কোনো সাড়াশব্দ নেই।শিশির আবারো ডাকলো,

-“রাত?তুমি কই?”

এবার লাইট টা জ্বলে উঠলো আর রাত সামনে থেকে শিশিরের দিকে একটা খেলনা বন্ধুক তাক করলো।আর সেখান থেকে প্রায় বিশ-ত্রিশটার মত তেলাপোকা শিশিরের শরীরে পড়লো। রাত তো হো হো করে হাসছে।এদিকে শিশির কোমড়ে হাত দিয়ে রাতের দিকে ভ্রু উঁচিয়ে তাকিয়ে আছে।রাতের হাসি বন্ধ হয়ে গেলো। বন্ধুক টা ফেলে বললো,

-“আপনি ভয় পাননি?”

-“এসব কি ছিল?”

শিশিরের ঠান্ডা গলায় রাত কিছুটা কেঁপে উঠলো। তবুও নিজেকে সামলে মুখ ঘুরিয়ে বললো,

-“লজ্জা করে না? তেলাপোকা দেখে ভয় পান?”

অমনি শিশির রাতের সামনে একটা তেলাপোকা ধরে বললো,

-“এসব জিনিসে আমি ভয় পেতাম। এখন পাই না।”

আচমকা এভাবে ধরায় রাত একটু ভয় পেলো। তবুও শিশিরের হাতটা সরিয়ে বললো,

-“আগে তো পেতেন!”

-“আমাকে এভাবে ভয় দেখানোর চেষ্টা করে লাভ নাই রাত চৌধুরী। এসব ছোটখটো জিনিসে শিশির ভয় পায় না।”(হেসে)

রাত এদিকে রাগে দুঃখে কেয়াকে বকছে।তারমানে কেয়া তাকে মিথ্যা বলেছে।শিশির রাতের দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বললো,

-“বায় দা ওয়ে রাত!আমাকে ভয় দেখানোর চেষ্টা টাও এক প্রকার অপরাধ।”

-“অপরাধ!ক..কিসের অ..অপরাধ!”

শিশির রাতের দিকে এগুচ্ছে আর রাত আস্তে আস্তে পিছাচ্ছে। শিশির বাঁকা হেসে বললো,

-“বুঝতে পারছো না?”

-” ক..কি ব..বুঝবো?”

-“শাস্তি দেয়ার জন্যই এগুচ্ছি রাত। কাম অন!এটাও বুঝতে পারছো না?”

রাত চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বললো,

-“কিসের শাস্তি!কোনো শাস্তি ফাস্তি নাই।”

-“কে বললো নাই? তোমার অপরাধ হয়েছে। আর এর শাস্তিও পাবে।”

বলেই শিশির রাতকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলো।রাত ঢোক গিলে শিশিরের দিকে তাকালো। শিশিরের চোখ আবারো রাতকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলো।পলক পড়ছে না।রাত কি বলবে বুঝতেই পারছে না। কি হবে এখন তার সাথে? শিশিরকে ফাঁসাতে গিয়ে নিজেই ফেঁসে গেল!শিশির আস্তে আস্তে রাতের কাছে চলে এলো।কানের কাছে এসে নিম্ন স্বরে বললো,

-“আই লাভ ইউ রাত।”

রাতের সর্বাঙ্গে ভালো লাগার ঢেউ খেলে গেলো।খুশির জল আর মুখে হাসি নিয়ে তাকালো শিশিরের দিকে। শিশির রাতের কপালের চুলগুলো কানে গুঁজে দিলো মিষ্টি হেসে।
#শর্ত
#লেখনীতে:অনুসা রাত(ছদ্মনাম)
#পর্ব:১৯

গভীর রাত!বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে রাত।দৃষ্টি আকাশের চাঁদ টায়।শিশিরের মুখ থেকে তখন ভালোবাসার কথা শুনে রাত পাগল প্রায় হয়ে গেছিলো খুশিতে।তাই তো সেও আজ শিশিরকে নিজের মনে কথা বলে দিয়েছিলো। শিশিরকে নিজের স্বামীর অধিকার বুঝিয়ে দিয়েছে রাত।শিশিরের ভালোবাসার চাদর মুড়িয়ে নিয়েছে।এসব ভাবতে ভাবতে রাতের গাল লাল হতে আরম্ভ করলো। হঠাৎ কোমড়ে কারোর হাতের স্পর্শে কেঁপে উঠলো রাত।কাঁপা গলাতেই বললো,

-“স্যার!”

শিশির পিছন থেকে রাতের কাঁধে থুতনি ঠেকিয়ে মুচকি হেসে বললো,

-“শশশ!স্যার না। শিশির।”

-“উহুম।স্যার হবে।মাস্টারমশাই।”

শিশির রাতের কাঁধে আলতো চুমু দিয়ে বললো,

-“কল মি শিশির।”

-“হবে না আমার দ্বারা।”

-“হবে হবে।বলো বলছি।”

বলেই শিশির রাতকে আরেকটু চেপে ধরলো।রাত নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে বললো,

-“উফফো, হবে না বললাম তো।”

-“ট্রাই তো করো!”

রাত কিছুক্ষণ চুপ রইলো।আর শিশির রাতের কাঁধে থুতনি ঠেকিয়ে রাতের মুখপানে তাকিয়ে আছে। রাত লম্বা করে কয়েকবার শ্বাস নিলো।কারণ তার তো শিশিরকে নাম ধরে ডাকার অভ্যাস নাই।একটু তো বলতে কষ্ট হবেই,সময় লাগবেই।শিশির ভ্রু কুঁচকে বললো,

-“বলবে না?”

-“উফফ বলছি তো!”(বিরক্ত হয়ে)

-“থাক লাগবে না।”

বলেই সে রাতকে ছেড়ে দিয়ে দোলনায় বসে পড়লো।তখনই রাত বলে উঠলো,

-“রাগ কেন করছো শিশির!”

বলেই নিজের মুখে হাত দিয়ে দিলো।চোখ বড় হয়ে গেছে তার৷ শিশির খুশি হয়ে বললো,

-“খালি নাম ধরে ডাকতে বলেছিলাম।তুমি তো আপনি বলাটাও বাদ দিছো। ওয়াও!দ্যাটস গ্রেট।”

রাত পিছনে ঘুরে গেলো।মিটমিটি হাসতে লাগলো।শিশির আস্তে আস্তে আবারো রাতের পিছনে এসে দাঁড়ায়। শিশিরের নিঃশ্বাসের শব্দ শুনতে পারছে রাত।অনুভব করছে শিশিরের প্রতিটি নিঃশ্বাস যা রাতের কাঁধে আছড়ে পড়ছে।শিশির ধীর কন্ঠে বললো,

-“রাত?”

-“হুমম!”

-“আবার বলবে প্লিজ?”

-“কি?”

-“ভালোবাসি।”

-“ভালোবাসি শিশির।”(মুচকি হেসে)

শিশির চোখ বন্ধ করে মুহূর্ত টা অনুভব করলো।নিজের প্রিয় মানুষের মুখে ভালোবাসি কথাটা হাজারবার শুনতেও কত্ত ভালো লাগে!শিশিরের মনে আনন্দের ঢেউ বইছে।
বেশকিছুক্ষণ পর রাত শিশিরের থেকে সরে এসে বললো,

-“আমি রুমে গেলাম।”

শিশির পেছন থেকে রাতের হাত আঁকড়ে ধরে বললো,

-“আমার টি-শার্ট পড়ে বসে আছো।আমি যে খালি গায়ে।”

রাত পিছনে ফিরতেই শিশিরকে খালি গায়ে দেখতে পেলো। এতক্ষণ সে এটা খেয়াল করেনি যে শিশির খালি গায়ে দাঁড়িয়ে আছে।রাত শিশিরকে উদ্দেশ্য করে বললো,

-” বাহ রে!আমি কি ইচ্ছে করে পড়েছি নাকি। হাতের কাছে ছিল তাই।”

বলেই সে আবারো লজ্জায় লাল নীল হতে লাগলো।শিশিরের বেশ মজা লাগছে রাতকে জ্বালাতে।সে রাতের গাল টেনে বললো,

-“তাহলে এখন আমারটা আমায় ফেরত দাও।”

-“সেটা কিভাবে?”(অবাক হয়ে)

-“খুলে ফেলো।”

রাতের চোখ বড় বড় হয়ে গেলো।যেন এখনই কোটর থেকে বেড়িয়ে আসবে। শিশির বাঁকা হেসে বললো,

-“কি হলো?খুলো।”

রাত শিশিরের বুকে হালকা ধাক্কা দিয়ে বললো,

-“ধূর! ”

রাত কিছু টা দূরে সরে গেলো।মাথা নিচু করে লাজুক হাসলো।শিশির রাতের দিকে এগিয়ে এসে কোলে তুলে নিলো।রাত চেঁচিয়ে উঠলো,

-“একি করছো!”

শিশির মুচকি হেসে বললো,

-“তুমি খুলবা না তো আমারি খুলতে হবে।”

-“কিহহ!”

-“জ্বী।”

বলেঝ শিশির রাতকে নিয়ে রুমের দিকে অগ্রসর হয়।হয়তো আবারো পূনর্মিলন ঘটবে তাদের।ভালোবাসায় মেতে উঠবে দুটি আত্মা। শিশির ভালোবাসায় ভরিয়ে দিবে রাতকে আর রাত সেই ভালোবাসা আগলে শিশিরকে আপন করে নিবে।

_____

বেশকিছুদিন কেটে গেছে।সায়ানের তিন মাস বয়স হয়ে গেছে। রাতের যত্নের কমতি নেই।রাত আজকে ২ দিন পর কলেজ যাচ্ছে।গ্যাপ দিয়ে দিয়ে যায়।শিশির নামাজ পড়ে আবারো বেঘোরে ঘুমাচ্ছে।আজকে যেন বেচারার ঘুম কাটছেই না। এদিকে এটা নিয়ে চরম বিরক্ত রাত।সে কি একা একা কলেজে যাবে নাকি?আপাতত সে সায়ানকে কোলে নিয়ে ফিডার খাওয়াচ্ছে। শিশিরকে ডাকতেও পারছে না।কিছুক্ষণ পর সায়ানকে বিছানায় শুইয়ে দিতে দিতে বললো,

-“ওয়েট আব্বাজান! আপনার বাপজানকে উঠাতে হবে।”

সায়ান কি বুঝলো কে জানে!খিলখিল করে হাসতে লাগলো।রাত শিশিরের মুখের সামনে দাঁড়িয়ে কোমড়ে হাত দিয়ে বললো,

-“শিশির কা বাচ্চা!উঠ যা!”

শিশিরের তো এই ডাকে জীবনেও ঘুম ভাঙার নয়। রাত এবার শিশিরকে এক নাগাড়ে ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে বললো,

-“শিশির উঠ!উঠ।”

কিছুক্ষণ পর শিশির চোখ ডলতে ডলতে উঠে বসলো। রাগী গলায় বললো,

-“এই কি সমস্যা!ঘুমাতে দিচ্ছো না কেন?”

-“কয়টা বাজে? কলেজ যাবি না!”

-“আসতাগফিরুল্লাহ রাত। বরকে তুই-তুকারি করছো।আমি তো শুধু নাম ধরে ডাকতে বলেছিলাম।”

রাত বিছানা ঝাড়ু টা হাতে নিয়ে বললো,

-“তাত্তাড়ি উঠে ওয়াশরুমে যা।”

শিশির ভ্রু কুঁচকে বললো,

-“সায়ান যদি তোমার থেকে এসব ভাষা শিখে তো খবর আছে।”

রাত শিশিরকে মুখ ভেঙালো। শিশির হাসতে হাসতে ওয়াশরুমে চলে গেলো।রাতের একেকটা কারবার তার এত ফানি লাগে। এদিকে রাত বিছানা গুছিয়ে সায়ানকে কোলে নিয়ে বসে আছে। কারণ সারাদিন তো কাছে পাবে না তাই।শিশির ওয়াশরুম থেকে বের হতে হতে বললো,

-“তুমি রেডি হয়ে আমায় ডাক দিতা।”

-“আমার রেডি হতে বেশিক্ষন লাগে না।তোমার লাগে!”

-“মেয়েদের রেডি হতে বেশি সময় লাগে।”

-“তোমায় বলছে না?”(মুখ ভেংচি কেটে)

-“বলতে হয় না। এমনিই জানি। যাকেই জিজ্ঞেস করবে সেই বলবে।মেয়েদের রেডি হতে বেশি সময় লাগে।”

-“বুঝছি বুঝছি।রেডি হোন।”

বলেই রাত সায়ানকে কিছুক্ষণ আদর করে রেডি হতে চলে গেলো।শিশিরও সায়ানকে কোলে নিয়ে আদর করতে লাগলো।সেও তো সারাদিন বাচ্চাটাকে পাবে না।
সায়ানকে চৈতী বেগমের কাছে দিয়ে রাত আর শিশির বেড়িয়ে পড়ে কলেজের উদ্দেশ্যে।রাতের এইচএসসি পরীক্ষার বেশিদিন বাকি নেই।শিশির তো ভেবেই নিয়েছে যে এরপর আর কলেজে আসতে দিবে না। বাসায় বসে পড়াশোনা করবে।হেল্পের জন্যে তো শিশির আছেই।

রাতকে ক্লাসের সামনে দিয়ে শিশির বললো,

-“ছেলেদের সাথে কম মিশবে।”

-“না কোলে উঠে বসে থাকব।”

-“আবার ত্যাড়া কথা।”

শিশিরের চোখ রাঙানো দেখে রাত ঢোক গিললো। জোরপূর্বক হেসে বললো,

-“আপনার কোলে উঠব। এটা বলেছি।”

শিশির হেসে ফেললো। রাতের গাল টেনে বললো,

-“ক্লাসে যাও।”

রাত শিশিরকে টাটা দিয়ে ক্লাসে ঢুকলো।শিহাব আর নিপা এগিয়ে এলো।কিন্তু রিসাবকে দূরে কলে কথা বলতে দেখে রাত শিহাবকে উদ্দেশ্য করে বললো,

-“দেখলি?আগে আমারে আসতে দেখলেই পারলে কোলে উঠে যায়। আর এখন কি করতেছে দেখলি? শালারে খাড়া ধরতাছি।”

বলেই রাত রিসাবের দিকে এগিয়ে গেলো।রিসাব তখনো আস্তে আস্তে ফোনে কথা বলছে। একদম নিচু স্বরে। রাত গিয়ে রিসাবের কাঁধে হাত দিলো,

-“পরে আসতাছি শিহাব। যা তো বা*ল। দেখিস না? তোর ভাবীর সাথে কথা বলতেছি।”

-“এহেম এহেম।তাই নাকি?”

রিসাব রাতের গলা শুনে তাড়াতাড়ি করে কলটা কেটে দিলো।জোরপূর্বক হেসে রাতের দিকে তাকিয়ে বললো,

-” হে হে হে!এমনিই আরকি।”

রাত রিসাবের কান ধরে মুচরে দিয়ে বললো,

-“এমনই তাই না?আমার ননদের সাথে প্রেম করে আমার থেকেই লুকানো হচ্ছে? ”

রিসাব রাতের হাত সরিয়ে অবাক হয়ে বললো,

-“কেয়া তোর ননদ?”

-“জ্বী। আর নাম্বারটা আমিই দিছি।”

বলেই রাত হাসতে লাগে।রিসাব মাথা চুলকে বললো,

-“তাইলে তো তুই আমার ভাবী। ভাবীজান।”

-“তুইও আমার নন্দাই।”

রাত আর রিসাব মজা করতে থাকে। একটু পর শিহাব আর নিপাও এসে যোগ দিলো।রাতের মুখে সায়ানের কথা শুনে তো সবাই সায়ানের সাথে দেখা করার জন্যে পাগল হয়ে যাচ্ছে।রাতও কথা দিলো যে একদিন সবাইকে দাওয়াত করে সায়ানের সাথে দেখা করাবে।এটা হবে রাত আর শিশিরের বিয়ের দাওয়াত!যেটা রাতের বন্ধুরা পায়নি।

______

কলেজ শেষ করে টিচার্স রুমের দিকে পা বাড়ায় রাত।তার পাশে নিপা। দুজন গল্প করতে করতে যাচ্ছে। হঠাৎ পাশ থেকে কেউ বলতে লাগে,

-“এই তুমি রাত না?”

রাত দাঁড়িয়ে গেলো।পাশে তাকিয়ে দেখলো তারই কয়েকজন ক্লাসমেট দাড়ানো।তারমধ্যে রাতের পরিচিতও কয়েকজন।কিন্তু সবচেয়ে পরিচিত হলো ক্লাসে টপ করা স্নেহা।স্নেহাই কথাটা বলেছে।রাতের সাথে আগে কখনো কথা হয়নি। আজই ডাকলো।রাত মুচকি হেসে বললো,

-“জ্বী।”

স্নেহা রাতের দিকে এগিয়ে এসে বললো,

-“সো স্যাড। তোমার জন্যে অনেক খারাপ লাগছে গো।”

-“কেন?”(অবাক হয়ে)

-“শেষ অবধি এক বাচ্চার বাপকে বিয়ে করতে হলো?”

রাতের রাগ উঠে গেলো।আশেপাশে তাকাতে লাগলো। নিপা ভ্রু কুঁচকে বললো,

-“এসব কি বলছো তোমরা?”

স্নেহা আবার বললো,

-“ঠিকই তো বললাম। কেন রে রাত?তোর কি পাত্রের অভাব হয়েছিলো।বিয়ে হচ্ছিলো না বুঝি।নাকি শিশির স্যার বড়লোক বলে ঝুলে পড়লি!”

বলেই সবাই অট্টহাসি হাসতে লাগলো।রাত হাসলো।স্নেহার দিকে এগিয়ে এসে বললো,

-“হচ্ছিলো তো।বিয়ের প্রচুর প্রস্তাব আসছিলো।তাইতো শিশির স্যারের মত বড়লোকও প্রস্তাব দিলো।”

-“আচ্ছা তাই?এসব কোনো বিষয় না। এসব আমাদেরও আসে। আমাদের আসলে অবশ্য আমরা পাত্তা দিতাম না। আমি তো আরো দিতাম না। এক বাচ্চার বাপকে…এ্যাউউউ!”

রাত কিছু বলতে যাবে এমন সময় পিছন থেকে শিশির বলে উঠলো,

-“আমি যতদূর জানি শিশির স্যার তোমায় প্রস্তাব দিবে না কখনো।”

রাত অবাক হয়ে পিছনে তাকালো।সবার হাসি বন্ধ হয়ে গেল। শিশির এসে রাতের পাশে দাঁড়ায়। স্নেহা জোরপূর্বক হেসে বললো,

-“স্যার আমি তো এমনিই মজা করছিলাম। ফ্রেন্ডস তো।”

-“এ ধরণের মজা আমি পছন্দ করি না। আর আমার ওয়াইফের সাথে এধরণের মজা হলে নেক্সট টাইম আমি কাউকে ছেড়ে দেবো না। হোক সে টপ করা কোনো মেয়ে।”

শিশিরের গম্ভীর কন্ঠ শুনে সবাই ভয় পেয়ে গেল।তবুও স্নেহা সাহস করে বললো,

-“স্যার,কতজনকে চুপ করাবেন আপনি?আমাকে চুপ করিয়ে তো লাভ নাই। আরো কতজনই বলবে আপনাদের কীর্তি নিয়ে।!

রাত এবার মুখ খুললো,

-“কিসের কীর্তী?কি করেছি আমরা?ডিভোর্সের পর দ্বিতীয় বিয়ে করে সুখে থাকতে চেয়ে শিশির স্যার কোনো অন্যায় করেননি।আর আমি ওনার পাশে থেকেও কোনো অন্যায় করিনি।কে কি বললো না বললো তা নিয়ে রাত আর শিশির চৌধুরী ভাবে না। আমরা বিবাহিত। অন্তত বিয়ে আগেই তো ঘুরছি না বা পরকীয়া করছি না।আমরা একটা পবিত্র সম্পর্কে রয়েছি।আর সারাজীবন আমরা আমাদের পাশে থেকে যাব।লোকে কি বললো সে আমাদের দেখার বিষয় না।আর আমাদের পিঠপিছে যারা বলবে তারা যে খুব ভালো এমনটাও কিন্তু নয়। খোঁজ নিলে দেখা যাবে তারা আরো বড় অপদার্থ। যাদের কুটনামি ছাড়া কাজ নেই।”

বলেই রাত দম নিলো।শিশির রাতের দিকে তাকিয়ে আছে।সবাই চলে গেলো।কি আর বলবে তারা?রাতের কথা শুনে সবাই ই চুপ।নিপাও বিদায় দিয়ে চলে গেলো।শিশির রাতের হাত ধরে বললো,

-“এভাবেই পাশে থাকবে তো রাত?”

-“আজীবন।”(মুচকি হেসে)

চলবে….

(ভুলক্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন। একটা সুন্দর মন্তব্য উপহার

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here