শালিক পাখির অভিমান পর্ব -২৬

#শালিক_পাখির_অভিমান
#পর্ব_২৬
#অধির_রায়

ভালোবাসায় মান অভিমান মিশ্রিত৷ প্রতি ভালোবাসায় অভিমান অন্তরের অন্তর আত্মা৷ অভিমানের মাঝে বুঝতে পারি অপরপক্ষের মানুষ কতোটা ভালোবাসে৷ আমি গহনার বক্স বিছানায় রান্না করতে চলে যায়৷ মনের মাঝে রাগ চেপে বসেছে৷ রাতে খাবার খেতেও নিচে আসেনি৷ রাগ করে আমারও খাওয়া হলো না৷ রাগে মাথা ব্যথা শুরু হয়ে গেছে৷ লা’থি দিয়ে কপাট খুলে রুমে প্রকাশ করলাম৷ ঘৃ’ণা’য় গা ঘি’ন ঘি’ন করছে৷ সবকিছু ভেঙে তছনছ করে দিতে ইচ্ছা করছে৷ চোখ আটকে যায় টি টেবিলের উপর রাখা নীল খামে৷ খাম খুলতেই ভিতর থেকে বেরিয়ে আসলো আমাদের একটা ফুটো। আমার ঘুমের সুযোগ নিয়ে মাথায় ভালোবাসার পরশ একে দেওয়ার৷ সাথে নীল চিরকুট।

“শ্যামলতা আলমারিতে তোমার জন্য জামদানী শাড়ি রাখা আছে৷ জলদি জামদানী শাড়ি পড়ে ছাঁদে চলে আসো৷ তোমার অপেক্ষায় প্রহর গুনছি। কখন আমার শ্যামলতাকে দেখতে পারো।”

মুহুর্তের মাঝেই আমার সকল রাগ চলে গেল৷ শাড়ি যখন আমার জন্যই ছিল তখন নাটক করার কি দরকার ছিল? উনার দেওয়া শাড়ি, মায়ের দেওয়া সোনার গহনা, চুলে বেলিফুলের মালা ঠোঁটে গাঢ় লাল লিপস্টিক, কপালে টিপ। আরশি থেকে নেত্র ফেরাতে পারছি না৷ নিজেই নিজের প্রেমে পড়ে যাচ্ছি৷ বারবার মনে হচ্ছে শালিক পাখির সাজ মাশাল্লাহ। আলতা পায়ে নুপুরে নিজেই মুগ্ধ হয়ে যাচ্ছি। দোয়া দরুদপাঠ করতে করতে ছাঁদে আসলাম৷ সমস্ত ছাঁদ আঁধারে ঘেরা৷ ভয়ে ভয়ে বললাম,

“ইহান ইহান৷”

উনার কোন উত্তর পেলাম না৷ এবার সত্যি সত্যি ভয় হচ্ছে৷ নির্জন ছাঁদে ভুতের সমাহার। ভয়ে ভয়ে চলে আসতে নিলেই গিটারের টুংটাং শব্দে দাঁড়িয়ে পড়ি৷ আলোর মেলায় খেলা করে মরিচ বাতি৷ মধুর কন্ঠ বলল,

“আমাদের বিয়ের এক বছর পূর্ণ হলো শাকিল৷ হ্যাপি এনিভার্সারী শালিক।”

আমাদের বিয়ের এক বছর পূর্ণ হলো আমার স্মরণে ছিল না৷ কবে কখন কত তারিখে বিয়ে হয়েছে সবই অজানা৷ মিটারের টুংটাং শব্দ তুলে আমার কাছে আসেন। আলতো করে কপোলে ভালোবাসার পরশ একে বলল,

“তোমাকে একদম রাজকুমারী লাগছে৷ আমাকে লাগছে দেশদ্রোহী। রাজকুমারীর মনে দেশদ্রোহীর প্রেমের অনুভূতি জাগবে৷”

আমি লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেললাম৷ উনি গিটাং দোলনায় রেখে বলল,

“আমার লজ্জাবতী শালিক৷ কবে থেকে এতো লজ্জা পাচ্ছে৷ আজ তোমার মতো করে চলব৷ তোমার কোলে মাথা রেখে আকাশ দেখব।”

ইহান আমার কোলে মাথা রেখে বলল,

“তুমি নিশ্চয়ই ভাবছো এনিভার্সারী এতো সাদাসিধে কেন? কেক থাকবে চারিপাশে ক্যান্ডেল থাকবে৷ কেক কেটে উইশ করতে হবে৷ আমার কাছে সবকিছু তুচ্ছ৷ আমার কাছে সবকিছুর থেকে তুমি বড়৷ তুমি তোমার বান্ধবীদের সাথে কাল ইনজয় করবে৷ আজ রাতে আমার সাথে কথা বলবে৷ আমার কাছে বড় হলো তোমাকে সময় দেওয়া৷ সেজন্য বিকাল থেকে তোমাকে সময় দিচ্ছি৷”

অভিমানী স্বরে বললাম,

“আপনি খুব পঁচা। আপনার সাথে কোন কথা নেই৷ আপনি আমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছেন৷”

ইহান কোমর জড়িয়ে ধরে বলল,

“তোমাকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য এতো কিছু৷ আমি জানতাম মা আমাদের সম্পর্ক মেনে নিবে৷ আমাদের সবথেকে বড় গিফট আমরা পেয়ে গেছি৷”

“আজ আমার কাছে সত্যিই স্মরণীয় একটা দিন৷ এদিনকে কেন্দ্র করে কতো কিছু ঘটেছে৷ কখন ভুলা যাবে না৷”

“চল নির্জন নিরিবিলি রাস্তায় হেঁটে আসি৷ চারদিকে প্রচন্ড গরম৷ হেঁটে আসলে একটু ঠান্ডা লাগবে৷”

“আপনি পা’গ*ল হয়েছেন৷ রাতের শেষ প্রহরে রাস্তায় হাঁটতে বের হবে কেউ। আমি পারব না আপনার সাথে রাস্তায় যেতে৷”

“ভয় পাচ্ছো৷ নিরিবিলি রাস্তায় তুমি আর আমি পাশাপাশি হাত ধরে হাঁটব। একবার চল অনেক ভালো লাগবে৷”

ল্যামপোস্টের আলোয় নির্জন জায়গায় হেঁটে যাচ্ছি এক জোড়া প্রাণ৷ একটি প্রাণ ছাড়া অন্য প্রাণ অচল৷ কারোর মুখে কোন কথা নেই৷ মনে মনে অনেক কথা হচ্ছে৷ হুট করেই রাস্তার মাঝে ইহান হাঁটু গেড়ে বসল৷ সোনার রিং আমার দিকে এগিয়ে দেন৷ মুখে হাসির রেখা ফুটিয়ে রেখে বলল,

“তুমি কি হবে আমার শেষ বয়সের সঙ্গী? শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত আমি তোমাকে পাশে চাই৷ দেহে এক ফোঁটা রক্তবিন্দু থাকা অবস্থায় তোমাকে কখনও মাথা নিচু করতে দিব না৷”

উনার দিকে আমি হাত বাড়িয়ে দিলাম৷ উনি আমার হাতে সোনার রিং পড়িয়ে রিং এর উপর আলতো করে চুমু দিলেন৷ ভালোবাসার মুহুর্তগুলো আমার কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে উঠল৷ আমি সত্যিই খুব ভাগ্যবতী৷ ভাগ্য করে ইহানের মতো একটা জীবন সঙ্গী পেয়েছি৷

নীরা চায়ের কাপে চুমু দিয়ে বলল,

“আমাদের ইয়ার চেঞ্জ পরীক্ষা চলে আসল৷ চিন্তায় আমার হাত পা কাঁপতেছে৷ আমি নিশ্চয়ই ফেল করব৷ আমি ঠিকমতো পড়তে পারি না৷”

অর্পি বরাবর পড়া চো*র৷ পড়ার কথা শুনলে তার মাথা গরম হয়ে যায়৷ অর্পি বিরক্তি সূচক দৃষ্টিতে নীরার দিকে তাকায়৷ মেঘের মতো গর্জন করে বলল,

“নীরার বাচ্চা নিরা। আর একবার কথা বললে লা*থি দিয়ে বাহিরের দেশে পাঠিয়ে দিব৷ পড়তে পড়তে কানা হয়ে গেছিস এখনও বলছিস তোর পড়তে বসিস না৷”

নীরা চোখের চমশা ঠিক করতে করতে বলল,

“দেখ অর্পি তুই আমার পড়া নিয়ে কোন কথা বলবি না৷ আমার মম পড়ার বিষয়ে খুবই সেনসেটিভ।”

ছোঁয়া সিঙ্গারায় ব্রাইট বসিয়ে বলল,

“আমার মা ধোঁয়া তু’ল’সী’পা’তা। আমাকে কতো কথা শুনান। উনার কথা এক কান দিয়ে শুনি অন্য কান দিয়ে বের করে দেই।”

অর্পি ছোঁয়ার পীঠে হালকা করে থা’প্প’ড় বসিয়ে বলল,

“এ হলো আমার বেষ্টু৷ পড়া নিয়ে কোন মাথা ব্যথা নেই৷ আমরা কি নীরার মতো ছাত্রী৷ আমরা অবশ্যই পাস করব৷”

বলেই দু’জনে হেঁসে উঠল৷ আমি টেবিলের উপর চাওমিনের বাটি রেখে বললাম,

“অনেক হয়েছে লেখাপড়া। এখন মন উজাড় করে চউমিন খাহ। তোদের জন্য আমি নিজ হাতে বানিয়েছি৷”

খাওয়ার কথা বলতে দেরি হয়েছে ছোঁয়া, অর্পির থা*পা দিতে দেরি হয়নি৷ তারা দু’জন ভু’ক্ত’ভো’গী পা*গ*লে*র মতো খাওয়া শুরু করল৷ আমি বসে না থেকে আমিও ভাগ বসাতে শুরু করলাম৷ নীরা মুখ ছিঁ*ট*কে বলল,

“তোদের এসব কান্ড দেখে আমার বমি পাচ্ছে। হ্যান্ডওয়াস দিয়ে হাত না ধোঁয়েই খাওয়ার জন্য তর্জুর চলাচ্ছিস৷”

অর্পি নীরার দিকে বাটি বাড়িয়ে দিয়ে বলল,

“এসব খাওয়ার জন্য তোর বয়স হয়নি৷ তুই এখন মাম্মানস মেয়ে৷ তুই চাওমিন খেলে এখনই তোর হার্ট অ্যাটাক হয়ে যাবে৷”

নীরা চোখের চশমা ঠিক করে বলল,

“মোটেও আমার হার্ট অ্যাটাক হবে না৷ আমি রেগুলার ইয়োগা করি৷”

আমি চেয়ার টেনে বসতে বসতে বললাম,

“শৃঙ্খলা না দেখিয়ে কা*ড়া*কা*ড়ি করে খাহ। না খেতে চাইলে মিস করবি৷”

নীরা আর বসে থাকতে পারল না৷ সেও খাওয়ার জন্য কা*ড়া*কা*ড়ি চালাল। নীরা এসব কিছু থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করলেও শেষ পর্যন্ত দূরে থাকতে পারে না৷ এসবের জন্য বাসায় গিয়ে তার মায়ের হাতে এ’লো’পা’তা’ড়ি ভাবে পি’ট’ন খাবে৷ কা’ড়া’কা’ড়ি মাঝে চাউমিন খেতে না পারলেও মাটি সম্পুর্ন চাউমিন খেয়েছে৷ এসব দেখে আমার রাগ সপ্তম আকাশে উঠে। কেউ আমার রাগের দামই দিল না৷ ছোঁয়া ভেংচি কেটে বলল,

“হুট করেই কোন কারণ ছাড়া আমাদের সারপ্রাইজ দেওয়ার কারণ কি? তুই চাওমিন নিয়ে আসছিস আমাকে বলিসনি কেন?”

অর্পি ব্রু নাচিয়ে বলল,

“বললে সারপ্রাইজ থাকতো না৷ এখন বল কোন উপলক্ষে নিয়ে আসছিস৷”

আমতা আমতা করে জবাব দিলাম,

“বন্ধুদের খাওয়াতে কোন উপলক্ষ লাগে নাকি৷ মন চাইল তাই তোদের জন্য নিজ হাতে বানিয়ে আনলাম৷”

ছোঁয়া গম্ভীর কন্ঠে উৎসাহ নিয়ে বলল,

“আমরা জানতাম তুই আমাদের থেকে কিছু লুকাবি না৷ কিন্তু আমাদের ধারনা ভুল করে দিলি৷”

আমি মিন মিন করে বললাম,

“আমাদের আমাদের বিয়ের এক বছর পূর্ণ হলো৷”

সবাই এক সাথে উচ্চ স্বরে বলে উঠল,

“কি!”

চলবে….

আমি এখনও বাসে আছি। বাসে বসে এর থেকে বড় লেখা সম্ভব হলো না৷ রিচেক দেওয়া হয়নি৷ ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন৷

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here