শালুক ফুলের লাজ নাই পর্ব -০৩+৪

##শালুক_ফুলের_লাজ_নাই(০৩)
শালুক আজকে নিজের রুমেই ঘুমাবে,শাপলার সাথে ঘুমাতে গেলে তার চুল কেটে ফেলার খবরটা জানাজানি হয়ে যেতে এক মুহুর্ত ও সময় লাগবে না।সবচেয়ে বড় কথা শালুককে নিয়ে একটা ছোট খাটো দরবার বসবে।বাড়িতে মেয়েদের মধ্যে শুধুমাত্র শালুকের চুলই ঘন,লম্বা,সিল্কি।অন্যদের চুল কোঁকড়ানো অথবা ছোট অথবা পাতলা।এজন্য শালুকের চুলে শালুক নিজেই হাত দিতে পারে না। শালুকের মনে হয় চুলগুলো শুধু তার মাথায় রয়েছে,এমনিতে এই চুলের মালিক এই বাড়ির সবাই।
বড় চাচী,মেজো চাচী সপ্তাহে দুই তিন দিন ধরে চুলে বিভিন্ন হেয়ার প্যাক লাগিয়ে দেয় শালুককে।

নিজের রুমের দরজা লাগাতেই শাপলা এসে দরজায় দুমদাম ধাক্কাতে লাগলো।

শালুক সবেমাত্র মাথা থেকে ওড়না সরিয়েছে,দরজায় দুপদাপ শুনে আবারও ওড়না ভালো করে মাথায় পেঁচিয়ে শালুক উঠে গিয়ে দরজা খুললো।

ফ্যাকাসে মুখে শাপলা দাঁড়িয়ে আছে দরজার সামনে। শালুক জিজ্ঞেস করার আগে শাপলাই বললো,”আদুর বিদেশিনী আমার রুমে এসে হাজির,আমার সাথে ঘুমাবে না-কি!আমার কেমন জানি লাগতেছে শালুক।তুই ও আয় আমার রুমে। এমনিতেই তো তুই একা ঘুমাতে পারিস না আজ কি মনে করে নিজের রুমে এলি।”

শালুক একটু ভাব নিয়ে বললো,”আমি কি আজীবন ছোট-ই থাকবো না-কি? একা ঘুমানোর অভ্যাস করছি।আর তোর রুমে তিনজন মিলে গাদাগাদি করে ঘুমাতে পারবো না আপা।ফার্দিকারে দেখলে কখন কি করে ফেলি আমার মাথার ঠিক নেই।আমি কসম করেছি এটা নিয়ে। ”

শাপলা চোখ গোল করে জিজ্ঞেস করলো, “কিসের কসম?”

শালুক মাথা নেড়ে বলে, “এই দুই তলার কসম,একদিন চরম প্রতিশোধ নিবো।ওই আদনান তার ফার্দিকাকে কি বলেছে জানিস,আমার না-কি ঘুমের ঘোরে হাটার অভ্যাস,মানুষের গলা টিপে ধরার অভ্যাস,তাই আমার সাথে যাতে না ঘুমায়।তখনই আমি কসম করেছি,যদি না করি তবে এই দুইতলা ভূমিকম্পে ভেঙে খানখান হয়ে যাবে আদনাইন্না আর ওর পিরিতির ফার্দিকাকে নিয়ে।”

শাপলা বোনের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললো, “তুই থাকবি কোথায় তখন?”

শালুক ফিক করে হেসে বললো, “আমাকে এতো বোকা ভেবেছিস আপা?আমি কি সেটা না ভেবেই কসম করেছি না-কি? আমি ছাদে আমার চিলেকোঠার ঘরে থাকবো।ভেঙ্গে গেলে দুইতলা যাবে,ওটা তো ভাঙ্গবে না।ওটার কসম তো করি নি।”

শাপলা হতাশ হয়ে বললো, “তুই যদি জানতি শালুক তুই কি পরিমাণ বোকা,তবে এই কসম করতি না।”

শালুক রেগে গিয়ে বললো, “যা ভাগ এখান থেকে। আসছে আমার বুদ্ধিজীবি। ”

শাপলা হতাশ হয়ে চলে গেলো নিজের রুমের দিকে।

দরজা বন্ধ করে শালুক বিছানায় পিঠ লাগাতেই রাজ্যের ক্লান্তি এসে ভর করলো শালুককে।নিজেকে কেমন নিস্তেজ,নিষ্প্রাণ লাগছে শালুকের কাছে।একটা মানুষের প্রতারণায় শালুক এভাবে গুড়িয়ে যাবে কখনো কি ভেবেছে সে?

অসাড় হয়ে যাওয়া দেহটা যখন ঘুমের রাজ্যে প্রবেশ করছে সেই মুহুর্তে শালুকের মাথায় আসলো সে আসলেই বোকা।
তা না হলে সে কিভাবে বড় চাচীর কাছে গিয়েছিলো তখন চুল বাঁধার জন্য?কেউ যাতে ওর চুল কেটে ফেলার ব্যাপারটা ধরতে না পারে তার জন্য ঘোমটা দিয়ে রাখছে সকাল থেকে। একা ঘুমাতে ভয় পাওয়ার পরেও নিজের রুমে একা ঘুমাতে এসেছে। অথচ সে কি-না এক মুহুর্তে ভুলে গেছে মাথার চুলের কথা।

নিজেকে নিজে জিজ্ঞেস করলো শালুক,”কবে তোর মাথায় বুদ্ধি হবে শালুক?”

জবাব এলো না।

ঘুমাতে গিয়ে শালুকের হঠাৎ করেই মনে হলো জানালার ওপাশে কে যেনো দাঁড়িয়ে আছে। আড়চোখে শালুক সেদিকে তাকাতেই যেনো কিছু একটা সরে গেলো। ভয়ে আতঙ্কে জমে গেলো শালুক।
একা ঘুমাতে গেলেই শালুকের এরকম হয়।সবসময় মনে হয় কেউ একজন আছে, তাকে আড়াল থেকে দেখছে।

হঠাৎ করেই শালুক যেনো নিশ্বাস ফেলার শব্দ ফেলো বিছানার নিচে থেকে।

পায়ের কাছ থেকে কাঁথা টেনে নিয়ে কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়লো শালুক।মনে মনে একদমে আয়াতুল কুরসি পড়ে যাচ্ছে।

ঝুম বৃষ্টি নিয়ে সকাল শুরু হলো। জানালার গ্লাসে বৃষ্টির ঝাপটা এসে বারবার আঘাত হানছে।শালুক চোখ খুলে তাকিয়ে দেখে চারদিক কেমন অন্ধকার হয়ে আছে।হতভম্ব হয়ে গেলো শালুক!
এক ঘুমে সে এক রাত এক দিন কাটিয়ে ফেলেছে!
এমন ঘুম ঘুমিয়েছে যে সন্ধ্যা নেমে গেছে অথচ শালুক টের পায় নি।

অবাক হলো শালুক আবার কিছুটা। কেউ তাকে ডাকলো না কেনো?বিশেষ করে ধ্রুব ভাই বাড়িতে আসার সাথে সাথেই তো মা গলাটাকে একটা ছোটখাটো হ্যান্ডমাইকের রূপ দিয়ে সবার কান ফাটিয়ে ডাকাডাকি শুরু করে। যেনো ধ্রুব কোনো দেশের প্রাইম মিনিস্টার, তাকে দেখতে যেতেই হবে সবার।
আজ এরকম করলো না কেনো তবে মা? নাকি তাও শালুকের কানে যায় নি!

ব্রাশ করে ফ্রেশ হয়ে শালুক পা টিপে টিপে বের হলো রুম থেকে।
তারপর শাপলার রুমে গিয়ে বললো, “আপা, আমাকে কেউ ডাকে নি কেনো?সন্ধ্যা হয়ে গেছে অথচ কেউ একবার ডাকলো না।আমি যদি মরে যেতাম তবে কেউ জানতি ও না তোরা।”

শাপলা বিরক্ত হয়ে বললো, “কানের কাছ থেকে যা তো শালুক,গাধার মতো কথা বলছিস।এমনিতেই রাতভর ওই আশার আর আদনান ভাইয়ের কাহিনি শুনতে শুনতে কান ব্যথা হয়ে গেছে,ঘুমাতে পারি নি সারারাত ধরে। এখন ঘুমাতে দে।
কষ্ট করে একবার গিয়ে দেখ ধ্রুব ভাই আসার কতোদূর!
স্টেশনে কে গেছে তাকে আনতে? ”

শালুক চমকালো।ধ্রুব ভাই এখনো আসে নি?তারমানে এখনো সন্ধ্যা হয় নি।আর সে কি-না ভয় পেয়েছে এই ভেবে যে সন্ধ্যা হয়ে গেছে। আনন্দিত হয়ে শালুক নিচে নেমে এলো।
হাসনা রান্না ঘরে, সবার জন্য নাশতা বানানো হচ্ছে।বড় চাচী আর মেজো চাচী রুটি বানাচ্ছেন।ফুফু রুটি সেঁকছে।শালুকের মা চুলায় আলু,গাজর,পেঁপে দিয়ে ভাজি করছে।
মতির মা মাছ কুটছেন।

শালুক নাক সিঁটকালো।এইসব হাবিজাবি ভাজাভুজি খেতে শালুকের একেবারে বিরক্ত লাগে।
মেজো চাচা চোরের মতো মুখ করে বসে আছে সোফায়।শালুকের ভীষণ মায়া হলো চাচার জন্য।এই লোকটা কতো বছর ধরে ছেলের মুখে বাবা ডাক শোনে না।বাবা ছেলে মুখোমুখি হন না।একসাথে বসে খান না।

শালুককে দেখে সেলিম সাহেব জিজ্ঞেস করলেন,”স্কুলে যাবি কখন?”

শালুক আকাশ থেকে পড়েছে যেনো স্কুলের কথা শুনে। বিস্মিত হয়ে বললো,”এই ঝড় বৃষ্টির মধ্যে তুমি আমাকে স্কুলে যেতে বলো চাচা?সামান্য লেখাপড়ার জন্য তো আর আমি আমার জীবন রিস্কে ফেলতে পারি না, তাই না?বেঁচে থাকার অধিকার আমার ও আছে।”

আদনান চায়ের কাপ নিয়ে আসতে আসতে বললো,”সেই সাথে পরীক্ষায় গোল্লা মারার অধিকার ও শালুকের আছে।”

শালুকের ভীষণ বিরক্তি লাগলো। মনে মনে বললো, “ফার্দিকার সামনে স্মার্ট হতে চাচ্ছো সে আমি ভালো করেই বুঝি।একদিন সবকিছুর শোধ নিবো।শুধু তোমার প্রতি একটা ভালোবাসা ভালোবাসা ব্যাপার আছে বলে চুপ করে থাকি।”

বাহিরে রিকশার টুংটাং শব্দ হতেই সেলিম সাহেব উঠে দাঁড়িয়ে গেলেন।তারপর ব্যস্ত হয়ে উপরে চলে গেলেন।হাসনা বেগম চিৎকার করে বলতে লাগলেন,”আমার ধ্রুব বাবা আসছে রে,তোরা সব কোথায় গেলি।”

পাতলা একটা সাদা টি-শার্ট পরনে,ব্ল্যাক ট্রাউজার পরে ধ্রুব তখন আধ ভেজা হয়ে হাসনা বেগমের শাড়ির আঁচলে চুল মুছছে।সবাইকে সালাম দিয়ে এগিয়ে গেলো আদনানের দিকে।তারপর দুই ভাই কোলাকুলি করলো।

আদনান আশার দিকে তাকিয়ে বললো, “তোর হবু ভাবী,আশা।আর আশা,এই তোমার বড় দেবর ধ্রুব।”

আশা বিড়বিড় করে বললো, “হ্যান্ডসাম! ”

শাপলা ততক্ষণে সেজেগুজে হাজির হয়ে গেলো নিচে।ধ্রুবর পাশে দাঁড়িয়ে বললো, “কেমন আছো ধ্রুব ভাই?”

ধ্রুব মুচকি হেসে বললো, “ভালো আছি,তোরা সব কেমন আছিস?”

শাপলা গাল ফুলিয়ে বললো, “এতোদিনে মনে পড়লো? ”

কিছু না বলে ধ্রুব হাসলো।

শালুক ঘোমটা টেনে দিয়ে বসে রইলো শক্ত হয়ে। ধ্রুব কাঁধ থেকে ব্যাগ খুলে শালুকের দিকে ছুড়ে দিয়ে বললো, “ভাব বেড়ে গেছে না-কি তোর?সবাই আমার সাথে কথা বলছে আর তুই ভাব নিয়ে বসে আছিস এখানে?আমার ব্যাগটা রুমে নিয়ে রেখে আয়।ব্যাগের সব কাপড় চোপড় সুন্দর করে গুছিয়ে রাখবি আমার আলমারিতে। ভাঁজ যেনো না ভাঙে শালুক,আই রিপিট ভাঁজ যেনো না ভাঙে। তাহলে তোকে দিয়েই আয়রন করাবো মনে রাখিস।”

শাপলা বললো,”আমাকে দাও,আমি রেখে আসি।”

চোখ লাল করে ধ্রুব তাকালো শাপলার দিকে।তারপর বললো,”তোকে আমি বলেছি?”

শাপলা নিভে গেলো ধ্রুবর চোখ রাঙ্গানো দেখে।
ধ্রুবর রুমে গিয়ে সব কাপড় বের করে শালুক সব দলা মোচড়া করলো প্রথমে।সবগুলোর ভাঁজ নষ্ট হবার পর এলোমেলো করে সবকিছু আলমারিতে গাদাগাদি করে রাখলো।
ব্যাগের উপরের চেইন খুলতেই শালুক অবাক হলো। ভেতরে একটা শপিং ব্যাগে প্লাস্টিকের ফুলের বিভিন্ন রঙের কয়েকটা গাজরা,নানান ডিজাইনের হেয়ার ব্যান্ড।একটা চিরকুটে লিখা,”কেশবতীর জন্য।”

শালুক মুখ বাঁকিয়ে বললো, “তলে তলে টেম্পো চলে,আমরা বললেই হরতাল!”

নিচে আসতেই দেখে সবাই খেতে বসেছে। মেজো চাচা নেই শুধু।শালুক আসতেই ধ্রুব বললো,”তোর চাচাকে বল খেয়ে যেতে,আমি পরে ছোট চাচীর সাথে খাবো।উনি আর ওনার স্ত্রী যেনো খেয়ে আমার সামনে থেকে বিদায় হয়।”

শালুকের বড় চাচা আজাদ সাহেব বললেন,”ধ্রুব বাবা,এখনো এসব ধরে বসে থেকে কি লাভ?শুধুশুধু বাবা ছেলের মধ্যে… ”

আজাদ সাহেব কথা শেষ করতে পারলেন না।ধ্রুব কঠোর স্বরে বললো, “এই ব্যাপারে আমি কারো থেকে কোনো সুপারিশ শুনতে চাই না।”

আজাদ সাহেব থেমে গেলেন।শালুকের বাবা ফয়েজ আহমেদ একটা নিশ্বাস ফেলে খাওয়ায় মনোযোগ দিলেন।

ধ্রুব গিয়ে দাদার রুমে বসে রইলো। নাশতা শেষ করে ধ্রুবর দাদা রশিদ সাহেব নাতির পাশে এসে বসলেন।তারপর নরম স্বরে বললেন, “আমাকে মাফ করে দিস দাদাভাই। আমার জন্যই তোর শৈশব,কৈশোর সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেছে। আমার জন্যই তুই বাবা মা হারা হলি।”

ধ্রুব হেসে বললো, “তোমার কোনো দোষ নেই দাদা।এসব ভেবে তুমি আপসেট হইও না।”

দাদার রুম থেকে বের হয়ে ধ্রুব ছাদের দিকে গেলো।ছাদের নিজের রুমে ঢুকে বেশ বড়সড় একটা ধাক্কা খেলো ধ্রুব।দেয়ালে দীপালি নামক মহিলার একটা ছবি ঝুলছে।

মুহুর্তেই ধ্রুব ক্রোধান্বিত হয়ে গেলো। ছবিটি নামিয়ে সোজা নিচতলায় গেলো। সবাই তখনো ডাইনিং টেবিলে বসে খাচ্ছে। আচমকা ধ্রুব ছবিটি আছড়ে ফেললো ফ্লোরে।মুহুর্তের মধ্যে শত খণ্ডবিখণ্ড হয়ে গেলো ফ্রেমের সব কাঁচ।কয়েকটা কাঁচ কুড়িয়ে নিয়ে ধ্রুব আবারও ভাঙ্গলো। ফলস্বরূপ নিজের দুই হাত কেটে গেলো কিছুটা।

চিৎকার করে ধ্রুব বললো, “এই কাজ কে করেছে?আমার অপছন্দ জেনেও কে এই কাজ আবারও করেছে ছোট চাচী?
এই ছবি আমার ঘরে কেনো লাগানো হলো?”

হাসনা নিজেও জানে না কে লাগিয়েছে।কিন্তু ধ্রুবকে এভাবে রাগতে দেখে বললেন,”বাবা মাথা গরম করিস না।আমি লাগিয়েছি বাবা।আমার ভুল হয়েছে। আর হবে না এরকম।”

ফোঁস ফোঁস করে নিশ্বাস ফেলে ধ্রুব বললো, “শুধু তুমি বলে আজ আমি থেমে গেলাম। এই কাজ আর করো না চাচী।নয়তো ধ্রুবকে চিরতরে হারিয়ে ফেলবে।এখন তো তুমি আছো বলে তোমার টানে ফিরে আসি,এরপর আমাকে আর খুঁজে পাবে না।”

তারপর হনহনিয়ে দোতলায় নিজের রুমে চলে গেলো ধ্রুব।

রান্নাঘরে দাঁড়িয়ে ফরিদা থরথর করে কাঁপছে। হাসনা তার দিকে তাকাতেই ফরিদা বললো, “আমার ভুল হয়ে গেছে আপা।ধ্রুবর বাবা মাঝরাতে ঘুম থেকে উঠে এই ছবির দিকে তাকিয়ে থাকে। বউ হয়ে আমি কিভাবে সহ্য করি বলেন যে আমার স্বামী তার প্রথম স্ত্রীর ছবি এভাবে লুকিয়ে দেখে?তাই ছবিটি আমি ধ্রুবর ছাদের ঘরে লাগিয়ে রেখেছি।ভেবেছি মায়ের ছবি দেখলে ধ্রুবর রাগ একটু হলেও কমবে।এখন দেখছি আমি ভুল ছিলাম।”

হাসনা কঠোর স্বরে বললো, “এরকম কাজ আর কখনো করতে যেও না আপা।আমাকে জিজ্ঞেস না করে আর কখনো এসব কাজ করবে না।”

শালুকের ভীষণ মায়া হলো ধ্রুব ভাইয়ের জন্য।একটা মানুষ মনের ভেতর কতো যন্ত্রণা লুকিয়ে রাখে তা আমরা বাহিরে থেকে কি একটুও বুঝতে পারি?
মা নেই,বাবা থেকেও নেই,একা জীবন যে কাটায় তার কষ্টের গভীরতা কে মাপতে পারে?

হাসনা শালুককে ডেকে বললো, “ধ্রুবর ঘরে ওর নাশতা নিয়ে দিয়ে আয় শালুক।”

নাশতার ট্রে হাতে নিতেই শালুকের রাগ হলো। সে খেয়েছে হাবিজাবি ভাজাভুজি দিয়ে অথচ ধ্রুব ভাইয়ের জন্য ঘন করে বানানো দুধ চা,পরোটা, কসা মাংস,ডিম ভাজা।

শালুক মায়ের দিকে একবার তাকিয়ে মনে মনে বললো, “এই যে আমার মা হয়ে আমার সাথে খাবার নিয়ে এই বাটপারি করলো মা,আমার কি কষ্ট কম হচ্ছে?সবাই ধ্রুব ভাইয়ের ব্যথা অনুভব করে,শালুকের ব্যথা কেউ বুঝে না।”
অভিশাপ দিলাম ধ্রুব ভাইকে,এই খাবার খাওয়ার পর তার পেট খারাপ করুক।যাতে বাথরুমেই তার থাকার ব্যবস্থা হয়।স্যালাইন ছাড়া আর কিছুই যাতে খেতে না পারে। ”

চলবে……

রাজিয়া রহমানশালুক_ফুলের_লাজ_নাই(০৪)

ধ্রুব পকেট থেকে একটা মাউথ অর্গান নিয়ে বাজাতে বসলো। নীল রঙের এই মাউথ অর্গান ছিলো ধ্রুবর বাবা-মা থেকে পাওয়া শেষ উপহার। যখনই ধ্রুবর কষ্ট হয় ভীষণ, ধ্রুব এই মাউথ অর্গান বাজায়।মা’ই তো তাকে শিখিয়েছিলো মাউথ অর্গান বাজাতে।
মায়ের কথা ভাবতেই ধ্রুবর কেমন বুক চিনচিন করে ব্যথা হয়।মা’য়ের চেহারা ও সে প্রায় ভুলতে বসেছে।
আজকে দেখে আবারও মনে পড়লো। আচ্ছা, একটা জীবন তপস্যা করলেও কি ধ্রুব আর বাবা-মা কে এক বন্ধনে আবদ্ধ করতে পারবে?

শালুক রুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে শুনতে পেলো ভেতর থেকে একটা খুব সুন্দর সুর ভেসে আসছে। শালুকের বুঝতে দেরি হলো না এটা কিসের সুর,আর কেনো বাজছে।এই বাসার সবাই জানে ধ্রুবর যখন অতিরিক্ত মন খারাপ হয় তখন সে মাউথ অর্গান বাজায়।সেই সময় কেউ-ই তাকে ডিস্টার্ব করে না।

মনে মনে এতোক্ষণ ধ্রুবকে যেসব অভিশাপ দিয়েছে তা ফিরিয়ে নিয়ে আল্লাহকে বললো,”আল্লাহ,ধ্রুব ভাইয়ের যাতে কিছু না হয়।ওনার পেট খারাপ যাতে না করে কিছুতেই।এমনিতেই তার মন খারাপ।”

দরজায় নক হতেই ধ্রুব উঠে গিয়ে দরজা খুলে দিলো। শালুক নাশতার ট্রে বিছানার উপর রেখে বললো, “আপনার নাশতা। ”

ধ্রুব এক ঝলক তাকিয়ে বললো, “হাত কেটে গেছে,খাইয়ে দিতে পারলে খাইয়ে দে।নয়তো ট্রে নিয়ে বিদায় হ সামনে থেকে। ”

শালুক কিছুক্ষণ ভাবলো কি করবে,তারপর উঠে চলে গেলো। ধ্রুব হাতের দিকে তাকালো। রক্ত হাতেই শুকিয়ে গেছে। ধ্রুব মুচকি হেসে বিড়বিড় করে বললো, “এই হৃদয়ে যে রক্তক্ষরণ হচ্ছে তার তুলনায় এই রক্ত কিছুই না।হৃদয়ের রক্তক্ষরণ নিয়ে বেঁচে থাকতে পারলে এই সামান্য হাতের কাটাকে কেনো ভয় পাচ্ছি?”

হাসনা বেগম রুমে আসতে আসতে বললেন,”হাত না-কি কে/টে ফেলেছিস ধ্রুব?
শালুক গিয়ে না বললে তো জানতামই না।কি কান্ড বল তো দেখি?”

ধ্রুব হাসলো। এই একটা মানুষ শুধু তাকে নিঃস্বার্থভাবে ভালোবেসেছে ছোট বেলা থেকে। সবার থেকে ধ্রুব অবহেলা পেয়েছে, এই মানুষটার থেকে পেয়েছে অকৃত্রিম ভালোবাসা।

হাসনা পরোটা ছিড়ে নিয়ে মাংস দিয়ে ধ্রুবর মুখে পুরে দিয়ে বললেন,”ধ্রুব,এভাবে আর কতোদিন বাবা?বাড়ির ছেলে বাড়িতে ফিরে আয় না।কি যে হলো তোর হুট করে। খোকাও আমেরিকা চলে গেলো, তুই ও তার এক সপ্তাহ পর চলে গেলি।বাড়িটা কেমন খাঁখাঁ করে বাবা।জহির ও আসে চট্টগ্রাম থেকে। তোর ফুফু ছেলের জন্য কি যে হাপিত্যেশ করে মরে,অথচ ছেলেটা আসতেই চায় না।আমরা কি ওর পর কেউ?এই বাড়িতে কি ওর মায়ের ভাগ নেই?তবে কেনো ছেলেটা এতো লজ্জা পায় বল তো?”

ধ্রুব খেতে খেতে বললো, “আমি গতরাতে কল দিয়েছিলাম,আমাকে তো বললো আজকে বিকেলের ট্রেনে ভাইয়া ও আসবে।তবে কাউকে বলতে নিষেধ করেছে।মনে হয় ফুফুকে সারপ্রাইজ দিবে চাচী।তুমি কিছু বলো না কাউকে।”

হাসনা উৎফুল্ল হলেন শুনে।দুচোখ আনন্দে চকচক করে উঠলো। ধ্রুবকে সবটা খাইয়ে বের হয়ে গেলেন হাসনা।

শালুকের বড় চাচী আদিবা পাকা কলা,ডিম,এলোভেরা জেল মিশিয়ে কি একটা হেয়ার প্যাক বানিয়ে শালুককে ডাকছে।শালুক একটা হিজাব নিয়ে হিজাব পিন দিয়ে ভালো করে হিজাব বেঁধে নিচে নামলো।
আদিবা চেয়ারে বসলেন,সামনে একটা মোড়া রাখা।শালুকের অন্তরাত্মা কেঁপে উঠলো,এক দৌড়ে নিজের রুমে যেতে নিতেই ধ্রুবর সাথে ধাক্কা লাগলো।

বিরক্ত হয়ে ধ্রুব বললো, “ষাঁড়ের মতো ছুটছিস কেনো?”

নিচ থেকে আদিবা বেগমের ডাক শোনা গেলো আবারও।

ধ্রুব জিজ্ঞেস করলো, “বড় চাচী ডাকছে যে কানে যায় না?ওদিকে না গিয়ে রুমের দিকে যাচ্ছিস কেনো?”

শালুক চুপ করে রইলো।কোনোমতে এখন ঝগড়া করা যাবে না।ধ্রুব যদি কোনো মতে জানতে পারে শালুকের চুল নেই তবে আজ শালুকের কপালে শনি আছে।
মনে মনে দোয়া ইউনুস পড়তে লাগলো। আল্লাহকে বললো, “ইউনুস নবীকে তুমি মাছের পেট থেকে উদ্ধার করেছো আল্লাহ,আমাকে ও আজকে এই বিপদ থেকে উদ্ধার করো।”

শালুককে চুপ থাকতে দেখে ধ্রুবর সন্দেহ হলো। শালুক তো মৌনব্রত করার মেয়ে নয়।তবে সে চুপ করে আছে কেনো।শালুকের হাত ধরে টেনে ধ্রুব নিচের তলার দিকে নামাতে লাগলো। শালুক গলা ফাটিয়ে চিৎকার করতে লাগলো।

আদিবা বেগম শালুকের হিজাব খুলতে যেতেই আরেকটা যুদ্ধ বাঁধলো।শালুক কিছুতেই তার হিজাব খুলতে দিবে না।আদিবা বেগম মেয়ের সাথে না পেরে ধ্রুবর দিকে তাকালেন।ধ্রুব এগিয়ে এসে শালুকের দুই হাত চেপে ধরে বললো, “আপনি ওর হিজাব খোলেন চাচী।”

হিজাব সরাতেই আদিবা বেগম চিৎকার করে উঠলেন।ধ্রুব কিছু বুঝতে পারলো না। শালুকের পিছনে গিয়ে ওর চুল দেখে ধ্রুব নিজেও চিৎকার করে উঠলো।

মুহুর্তেই সারা বাড়ি জেনে গেলো শালুকের কোমর সমান চুল শালুক কেটে ফেলেছে।
মাথা নিচু করে শালুক দাঁড়িয়ে আছে। একটা মানুষের চুল নিয়ে সারা বাড়ির সবার এতো মাথা ব্যথা হবে কেনো শালুক এই হিসেব কিছুতেই মিলাতে পারছে না।

মুহুর্তেই নিচতলার চেহারা বদলে গেলো যেনো দরবার বসেছে,দাদা দাদী থেকে শুরু করে নয়না আপার পিচ্চি মেয়ে নিধি পর্যন্ত সেই বিচারসভায় হাজির হলো।

সবার এক প্রশ্ন,কেনো শালুক চুল কে/টে ফেলেছে?

শালুক ভেবে পেলো না কি জবাব দিবে!সে কি বলবে আদনান ভাই ফার্দিকাকে বিয়ে করবে,এই দুঃখে,কষ্টে সে চুল কে/টে ফেলেছে?
এই কথা শালুক জীবনে ও বলতে পারবে না।
ধ্রুব অস্থির হয়ে পায়চারি করছে।রাগে তার মাথা ফেটে যাচ্ছে।সে কি-না এই বেকুব, গাধা মেয়েটার জন্য হেয়ার ব্যান্ড, গাজরা নিয়ে এসেছিলো!আর এদিকে সে টাক্কু হয়ে বসে আছে?

শালুকের মনে হলো, প্রতিবার পরীক্ষায় ফেইল করার পরেও এরকম দক্ষযজ্ঞ বাঁধে নি এবার এরা সামান্য চুল নিয়ে যা করছে।

মিনমিন করে শালুক বললো,”লম্বা চুলে গরম বেশি লাগে,তাই আমি কে/টে ফেলেছি।”

আদিবা বেগম হুঙ্কার দিয়ে বললেন,”গরম লাগে,তোর একার গরম লাগে এই দুনিয়ায়?আর কারো গরম নেই?তোর এতো গরম লাগলে আমাকে বলতি।আমি তোর চাচাকে বলে তোর ঘরে এসি লাগিয়ে দিতাম।তুই কোন সাহসে চুলে হাত লাগালি?”

শালুকের মেজো চাচী দূরে দাঁড়িয়ে প্যাচপ্যাচ করে কাঁদতে কাঁদতে বললেন,”কতো যত্ন করে তোর চুল এতো বড় করছি আমরা।রাত জেগে ইউটিউবে গতকাল রাতেও একটা হেয়ার স্টাইল শিখেছি। অথচ তুই কি-না সব আশায় পানি ঢেলে দিলি?”

আদনান হাসতে হাসতে বললো, “লজ্জায় কে/টে ফেলেছে মা,গিয়ে দেখো কোনো পরীক্ষায় ও আন্ডা পেয়েছে। তাই এই কাজ করেছে।”

ধ্রুব রেগে গেলো আদনানের এই কথা শুনে। হাত মুষ্টি করে নিজেকে সামলালো।

আশা বললো, “শর্ট হেয়ারেও শালুককে কিউট লাগছে আন্টি।ওর জন্য শর্ট হেয়ারই বেস্ট। ”

আদনানের বোন আফিফা ধমকে উঠলো আশাকে।চোখ রাঙিয়ে বললো, “তুমি চুপ করো আশা,তুমি এসব বুঝবে না।আমাদের শালুকের চুল আমাদের পরিবারের সবার কাছে একটা ভালোবাসা। তুমি ওসব বুঝবে না।”

হাজার জিজ্ঞাসাবাদের পরেও শালুকের মুখ থেকে কেউ কথা বের করতে পারলো না যখন তখন শালুকের দাদা ধ্রুবকে বললেন,”তোর উপর দায়িত্ব রইলো এই রহস্য উদঘাটনের।”

আদনান হেসেই যাচ্ছে বারবার শালুকের চুলের এই অবস্থা দেখে। শালুককে এই মুহূর্তে ভীষণ রোগা লাগছে।প্রেমে ছ্যাঁকা খেয়ে শালুক যেই কষ্ট পেয়েছে এখন বুঝতে পারছে তার চাইতে হাজার গুণ বেশি কষ্ট তার জন্য অপেক্ষা করছে।

কিছুক্ষণ ভেবে শালুক সিদ্ধান্ত নিলো ধ্রুব ভাইকে সে সত্যি কথা বলে দিবে।তা না হলে ধ্রুব যে সহজে শালুককে নিস্তার দেবে না তা শালুকের চাইতে ভালো আর কে জানে?

সন্ধ্যা হতেই শালুক আজ বই নিয়ে বসে গেলো। আজ পড়া নিয়ে কোনো অবহেলা চলবে না।কেননা আজকে শালুকের সামান্য একটু দোষ পেলেই সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়বে শালুকের উপর।

এক মগ ধূমায়িত কফি নিয়ে ধ্রুব এলো শালুকের রুমে।শালুককে পড়তে দেখে ধ্রুব মনে মনে হাসলো।
বিছানার উপর দুই পা ভাঁজ করে বসে বললো, “নে এবার ঝেড়ে কাঁশ তো শালুক।কোনো হাংকিপাংকি আমার সাথে করবি না। ”

শালুক মাথা নিচু করে বললো, ” আমি সরি ধ্রুব ভাই। আমার আসলে মাথার ঠিক ছিলো না। প্রচন্ড রাগে আমি এরকম করে ফেলেছি হুট করে। ”

ধ্রুব ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করলো, “রাগের কারন কি?”

শালুকের দুই চোখ জলে টইটম্বুর হয়ে গেলো মুহূর্তেই।একটু হাওয়া দিলেই কচু পাতার জলের মতো টুপ করে পড়ে যাবে।
যন্ত্রণারা মাথাচাড়া দিয়ে উঠলো আরো একবার। নেই,নেই,আদনান ভাই আর শালুকের নেই।চিৎকার করে শালুকের এই কথা বলতে ইচ্ছে করলো।

তবুও আস্তে করে বললো, “আদনান ভাই আমাকে এভাবে ঠকালো কেনো? আমি কি দোষ করেছি?উনি তো আমাকে ভালোবাসতেন তবে কেনো এখন রূপ পাল্টালেন বলেন?
আমি তো এক বুক আশা নিয়ে আদনান ভাইয়ের দেশে ফেরার অপেক্ষায় ছিলাম।অথচ উনি ফিরে এলেন সাথে হবু বউ নিয়ে। আমার তখন মাথা ঠিক ছিলো না আর।নিজেকে মনে হয়েছে পৃথিবীর সবচেয়ে অসহায়। কাউকে কিছু বলতে পারি নি আমি।তাই রাগের মাথায় এরকম করে ফেলেছি। ”

ধ্রুব যেনো হতভম্ব হয়ে গেলো শালুকের এসব কথা শুনে।মাথার ভেতর আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে তার রাগ।নিজেকে সংযত করে অবাক দৃষ্টিতে শালুকের দিকে তাকিয়ে বললো, “আদনান ভাই তোকে কখনো ভালোবাসি বলেছে শালুক?”

শালুক চমকে গেলো এই প্রশ্ন শুনে। আদনান ভাই তো তাকে কখনো এরকম কিছু বলে নি।
মাথা নেড়ে বললো, “না,বলে নি।”

ধ্রুব জিজ্ঞেস করলো, “তোকে কখনো বলেছেন উনি যে তোকে ছাড়া বাঁচবে না,তোকে না পেলে মরে যাবে।সিনেমায় দেখিস না নায়কেরা যেরকম বলে নায়িকাদের? ”

শালুক কিছুক্ষণ ভাবলো। আদনান ভাই তাকে বউ বলে ডাকতো ঠিকই তবে এরকম কথা তো কখনো বলেন নি।

আবারও মাথা নেড়ে শালুক বললো, “না বলেন নি কখনো। ”

ধ্রুব যেনো হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো। তারপর বললো, “তাহলে তুই কোন দিক থেকে ভেবে নিলি উনি তোকে ভালোবাসেন?”

শালুক উত্তর দিতে পারলো না সহসা।কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললেন, “তাহলে কেনো উনি আমাকে বউ বলতেন?কেনো বলতেন তার ভবিষ্যৎ বাচ্চার আম্মু।দেশে আসার আগেও তো যখন আমার সাথে কথা হয়েছিলো,আমাকে বলেছিলেন যে আমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে। এসব কি পজিটিভ সাইন নয়?ভালো যদি না বাসেন তবে কেনো এসব বলতেন?”

ধ্রুব নিশ্বাস ফেলে বললো,”,আদনান ভাই এরকমই। ছোট বেলা থেকেই উনি তোকে এভাবে বলতেন।তোর বয়স কম,আবেগ বেশি। তুই টিন-এজ মেয়ে,এটা ওনার মাথায় রাখা উচিত ছিলো। হয়তো উনি কিছুটা মজা নিতে চেয়েছেন তোর সাথে। কিছু মানুষ থাকে যারা মেয়েদের সাথে এসব মজা নিয়ে আনন্দ পায়।ব্যাপারটা যেভাবেই হোক উনি তোর সাথে এভাবে কথা বলায় তুই ব্যাপারটা অনেক দূর পর্যন্ত ভেবে ফেলেছিস।এখানে আসলে দোষ তোর নয় শালুক।তোর এজটাই এরকম।কেউ একটু ইমোশনাল কথা বললে এই বয়সী মেয়েরা তখন নানারকম স্বপ্ন দেখতে থাকে।এজন্য বিপরীত মানুষটার উচিত এই ব্যাপারে সতর্ক হওয়া।তার একটু ভুলে এরকম অনেক মেয়ে অনেক বড় ভুল করে ফেলে।তুই আসলে যেটাকে ভালোবাসা ভেবে কষ্ট পাচ্ছিস সেটা কোনো ভালোবাসা নয়।এটাও একটা আবেগ তোর।

তোর ব্যাপারটা আসলে হচ্ছে তোর অবচেতন মন আদনান ভাইকে পছন্দ করে, সেই ভালো লাগাকে তুই ভালোবাসা ভেবে বসে আছিস।
প্রিয় নায়কের প্রেমের কথা,বিয়ের কথা শুনলে মানুষ যেমন কিছু সময়ের জন্য কষ্ট পায়,তুই ও তাই পাচ্ছিস শুধু।আদনান ভাই তোর শুধুমাত্র পছন্দের একজন মানুষ এর বেশি কিছু না।
আদনান ভাইকে যদি তুই সত্যি ভালোবাসতি তবে তার সামনে এভাবে ঠিক থাকতে পারতি না।হার্দিকাকে দেখেও এভাবে চুপ থাকতে পারতি না।ভালোবাসা হলে প্রিয় মানুষের পাশে অন্য কাউকে সহ্য করা যায় না শালুক।এই যে আজ দুদিন হয়ে গেলো, তুই কি একবারও আদনান ভাইকে দেখে তার বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে বলতে পেরেছিস,তুই তাকে ভীষণ ভালোবাসিস?
পারিস নি তো।

আমি তোকে বকবো না আজ।কাউকে কিছু বলবো না। আজ তোকে পড়তে হবে না।তুই নিজেই ঠান্ডা মাথায় বসে ভেবে দেখ,এটা তোর সত্যিকার ভালোবাসা না-কি একতরফা ভালো লাগা।
আর সারপ্রাইজের কথা বলছিস,এই যে আমাদের জন্য ভাবী নিয়ে এসেছে এটাই তো সারপ্রাইজ!”

ধ্রুব উঠে চলে গেলো শালুকের রুম থেকে। তারপর থেকে শালুক ভাবতে লাগলো।ভেবে দেখলো আসলেই তো ধ্রুব ভাই ঠিক বলেছে।সে তো এভাবে ভেবে দেখে নি।
নিজের ভাবনা ভাবতে গিয়ে শালুকের মোটা মাথায় অন্য একটা ভাবনা এলো।
ধ্রুব ভাই এসব ব্যাপারে এতো কিছু কিভাবে জানলো?

ধ্রুবর রুমে গিয়ে শালুক জিজ্ঞেস করলো, “তুমি এতো কথা কিভাবে জানো ধ্রুব ভাই? তুমি ও কি কাউকে ভালোবাসো না-কি? ”

ধ্রুব চোখ লাল বড় করে তাকাতেই শালুক ভেংচি দিয়ে বললো, “আমি কিন্তু সব জানি,দেখেছি ও।কোন কেশবতীর জন্য যে গিফট এনেছো সব আমি দেখেছি। ”

ধ্রুব হেসে উঠে বললো, “ঠিকই জানিস।আমার ও একটা কেশবতী আছে।যাকে আমি ভীষণ রকম ভালোবাসি। এবার ভাগ এখান থেকে। ”

চলবে……

রাজিয়া রহমান

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here