#শিশির_ভেজা_রোদ্দুর
#Weeding_Special_02
#Writer_NOVA
ঘুম ভাঙতেই মনে হলো কেউ আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে আছে। জানালার ফাঁক দিয়ে এক ফালি আলো এসে অন্ধকার রুমটাকে বেশ আলোকিত করে দিয়েছে। সেই আলোতে স্পষ্ট দেখতে পেলাম এক পুরুষ অবয়ব আমাকে জড়িয়ে ধরে নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে। একবার ধরফর করে উঠতে গিয়ে খেয়াল হলো আমি আমার জামাই বাড়ি। আর যে আমাকে ধরে রেখেছে সে আমার পরাণের সোয়ামি। তাই যেভাবে ছিলাম সেভাবেই রইলাম।সারারাত ঘুমের কারণে মাথাটা হালকা লাগছে। শরীর ব্যাথাটা একটু কমছিলো। কিন্তু মনে হচ্ছে তা আমার এনজিও সংস্থা আবার বাড়িয়ে দিবে। তাকে সরানোর ব্যর্থ চেষ্টা করলাম। এতো বলিষ্ঠ শরীর আমার পক্ষে সরানো দায়। আমি একটু নড়েচড়ে উঠতে নিলে উনি আরেকটু শক্ত করে আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুম জড়ানো কন্ঠে বললো,
— নড়াচড়া করো না তো। একটু ঘুমাতে দাও।
ও আল্লাহ কি বলে এসব! সারারাত ঘুমিয়ে এখনও তাকে আমি ঘুমাতে দিচ্ছি না। আমি তার হাতটা আমার পেটের ওপর থেকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিতে নিলে ছোট করে এক ধমক দিলেন।তারপর চোখ না খুলে বললো,
— এত নড়াচড়া করছো কেন? ঘুমাতে কি দিবে না নাকি? চুপ করে শুয়ে থাকো।
— আমি ওশাসরুমে যাবো।
— কেন?
— ওয়াসরুমে মানুষ কেন যায়?
উনি ফট করে চোখ খুলে দুষ্টুমির সুরে বললো,
— কেন যায়?
— নাচতে যায়।
— তাহলে আমিও যাবো চলো।
— আপনি যাবেন কেন?
— আমার বউয়ের নাচ দেখতে।
— নাচ দেখতে হবে না। আমি জোরে চিৎকার করে গান গাইবো তা শুনে নিয়েন।
— নাহ আমি তোমার নাচ দেখবো।
— কোন দরকার নেই। আপনার ঘুমের ডিস্টার্ব হচ্ছে তাই চুপচাপ ঘুমান।
— তুমি সাথে থাকলে কোন ডিস্টার্ব হবে না।
— আমি ওয়াসরুমে যাবো। আমার গোসল করতে হবে।
— কেন গোসল করবা? আমি তো কিছুই করিনি।
আমি তার দিকে চোখ পাকিয়ে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললাম,
— আপনি যে কিছু করেননি তা কি আমি সবাইকে গোসল না করে জানিয়ে দিবো😬?
— এস ইউর উইশ। আমি কিছু করিনি তাই এখন তোমার গোসল করারও প্রয়োজন নেই। পরে করলেও হবে। এখন চুপচাপ শুয়ে থাকো। আমিকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাতে দাও।
— ছাড়েন, আমাকে একটু ওয়াসরুমে তো যেতে দেন।
— গোসল না করলে যেতে দিবো।
— কি ধরনের কথাবার্তা এসব?
— ইহা আপনার শাস্তি মহারাণী। গতকাল আমার সাথে চিটিং করার ফল।
— আমি কোন চিটিং করতে চাইনি।
— কিন্তু করে ফেলছো।
— গালতিসে মিষ্টেক।
— এই গালতির ফল এখন ভোগ করবা।
— ওপর থেকে সরেন।
— কি বলছি মনে আছে? তাহলে ছাড়বো।
— এবার কিন্তু বেশি বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে।
— তুমিও করছো।
— সরবেন?
এনাজ লাফ দিয়ে উঠে মাথার কাছের একটা জানালা খুলে দিলো। আমি সেই সুযোগে সটকে পরতে নিলে মুহুর্তের মধ্যে আমার হাত টেনে নিয়ে আবার যেভাবে ছিলো সেভাবে আমার ওপর শুয়ে রইলো। আমি অবাক কন্ঠে বললাম,
— কি হলো এটা?
— দেখতেই তো পেলে।
— ভালো হবে না কিন্তু।
— না হলে আমার কিছু করার নেই।
— ওপর থেকে সরেন।
— এক শর্তে সরতে পারি?
— আবার কিসের শর্ত?
— একটা লিপ কিস করতে দিবা তাহলে।
— বদমাশ বেডা।
— এখানে বদমাশির কি হলো? এখনও তো বদমাশির কিছু শুরুই করলাম না।আমার বউ আমি যা খুশি করতে পারি। আমার পুরো অধিকার আছে। যদি কিস না করতে দাও তাহলে অন্য কিছু করবো। রাতের কাজ দিনে করতে আমার কোন সমস্যা নেই।
এক চোখ মেরে একগালে শয়তানি হাসি দিয়ে উনি কথাগুলো বললো। আমি তার দিকে চোখ দুটো রসগোল্লা বানিয়ে তাকিয়ে আছি। এই ছেলের মুখে আজ কিছু আটকাবে না। আমি মুখ খুলে কিছু বলতে নিলে উনি টুপ করে ঠোঁটে একটা চুমু খেয়ে বসলো। আমার চোখ দুটো এবার বেরিয়ে যাবে। রাগী গলায় বললাম,
— কি হলো এটা?
উনি লজ্জা পাওয়ার ভান করে বললো,
— বউকে আদর দিলাম।
— এবার কিন্তু বদমাশি হইতাছে।
— বউয়ের সাথে বদমাশি করবো না তাহলে কার সাথে করবো বলো?
— আল্লাহর দোহাই লাগি চুপ করেন আপনি। আমার ঢের শিক্ষা হইছে। আপনার সাথে আর কখনো লাগবো না। এবারের মতো মাফ করেন। আপনার সাথে চালাকি তো দূরে থাক, কোন কথার অবাধ্যও হবো না।
— যাক, বোঝার জন্য ধন্যবাদ। এবার টাইট করে একটা লিপ কিস দিতে দাও তাহলে ছেড়ে দিবো। তবে আজকের রাতে কোন ছাড়াছাড়ি নেই। তোমাকে আমার করেই ছাড়বো।
— না, না এখন আর কিছু ন…..
পুরো কথা আমি শেষ করতে পারলাম না। তার আগেই পরম যত্নে আমার অধর যুগল সে তার অধর দিয়ে আটকে নিলো। আমার বাঁধা দেওয়ার মতো শক্তিটুকুও নেই। কারণ তার পুরো শরীরের ভারটা আমার ওপরেই। হাত দুটো আটকানো। ছাড়া থাকলে ধাক্কা মেরে সরানো যেতো।
💖💖💖
বৌ-ভাতের অনুষ্ঠানে……..
পার্লার থেকে কমিউনিটি সেন্টারে যেতেই দেখি আমাদের বাড়ির মানুষ চলে এসেছে। আজ সাজতে অনেক দেরী হয়ে গেছে। গাঢ় নীল রঙের কাতান শাড়ির সাথে সেম রঙের ঘোমটা। গোল্ডেন স্টোনের জুয়েলারি সারা শরীরে ঝিকমিক করছে। পাশের এক কমিউনিটি সেন্টারে বৌ-ভাতের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। মোটামুটি বেশ বড় করেই আয়োজন। যদিও মানুষ বেশি নয়। আমাদের বাসার লোক আর এনাজের বন্ধু ও তাদের পরিবার। মোহনার সাথে ভেতরে ঢুকতেই সব আমার দিকে তাকিয়ে রইলো। আমি এদিক সেদিক তাকিয়ে এনজিও সংস্থাকে খুঁজতে লাগলাম। এক সময় পেয়েও গেলাম। চাচ্চুদের সাথে কথা বলছে। তার পরনে আজ নীল রঙের কোর্ট-প্যান্ট,পায়ে কালো সু জুতা। আমার দিকে তাকিয়ে এক চোখ মেরে শয়তানি হাসি দিলো। আমি ভেংচি কেটে সামনে তাকালাম। এনাম সামনে এসে এক হাত এগিয়ে দিয়ে বললো,
— ভাবী সাহেবা, আপনার হুকুমের আগে বান্দা হাজির। দয়া করে আপনি কি আমার সাথে যাবেন? আমি আপনাকে স্টেজে বসিয়ে দিতাম।
আমি মিষ্টি হাসি দিয়ে নিচুস্বরে বললাম,
— নিশ্চয়ই দেবরজী, কেন নয়?
মোহনা হাত সরিয়ে দিলো। এনামের হাত ধরে সামনে এগুতে নিয়ে থেমে গেলাম। মোহনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
— মোহনা, যাও গিয়ে খেয়ে নাও।
— না ভাবী, পরে খাবো। আগে আপনাকে খাওয়াবো তারপর আমি।
— আমাকে মেবি তোমার ভাইয়ার সাথে খেতে বসতে হবে। তাও সবার শেষে। তুমি খেয়ে নাও।
— আচ্ছা, তাহলে আমি খেয়ে নিবো।
— আমার জন্য তোমার অনেক দেরী হয়ে গেলো।
সরি তার জন্য।
— আরে তুমি সরি কেন বলছো? এটা আমার দায়িত্ব ছিলো। তোমার সাথে সাথে আমিও তো পার্লার থেকে সেজে আসতে পারলাম। এতে তো আমারি লাভ হলো।
আমি মুচকি হেসে এনামের সাথে যেতে লাগলাম। এনামের পরনে কালো রঙের কোর্ট-প্যান্ট। এনাজের থেকে ওর গায়ের রং অনেকটা ফর্সা। কালো তে বেশ লাগছে। এনাজের সামনে দিয়ে যেতে নিলে সে মাথা নিচু করে আমার কানের কাছে মুখ এনে বললো,
— আজকে রাতে খবর আছে। আমিও দেখবো আমার হাত থেকে তোমাকে কে বাঁচায়?
আমি দাঁতে দাঁত চেপে কথাটা হজম করে নিলাম। একবার ক্রুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে স্টেজে উঠে গেলাম। এনাম আমার সাথে বসে কতগুলো ছবি তুললো। ভিডিওম্যান কিছু সময় আমাদের ভিডিও করলো। এনাম যাওয়ার আগে বললো,
— কিছু লাগলে বলেন ভাবী।
আমি মাথা নেড়ে সায় দিলাম। এনাম দ্রুত পায়ে স্টেজ থেকে নেমে গেলো। আমি হাসিমুখে সবার খাওয়া দেখতে লাগলাম। হঠাৎ কিছুটা দূরে ইফাত, সিফাতকে দেখতে পেলাম। আমি হাত বাড়িয়ে ডাকতেই সিফাত দৌড়ে এলো। কিন্তু ইফাত মুখ গোমড়া করে যেখানে বসে ছিলো সেখানেই রইলো। সিফাতকে আমার পাশে বসিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
— বাসার সবাই কেমন আছে?
— সবাই ভালো আছে। শুধু ছোট বোনের ঠান্ডা লাগছে।
— তোর আম্মু ভালো আছে?
— হ্যাঁ ভালো আছে।
— কে কে আসছিস?
— আমি, ভাইয়া, আব্বু, দাদা এই চারজন আসছি। আম্মু, দাদী বাসায়।
— কালকে আমাদের বাসায় গিয়েছিলি?
— হুম।
— কোথায় তোদের দেখি দেখলাম না?
— তোমাকে সাজাইতেছিলো। তাই হয়তো খেয়াল করোনি।
— ওহ আচ্ছা।
— জানো ভাইয়া না অনেক কান্না করছে তোমার জন্য। তোমার সাথে আর কথা বলবে না বলছে।
আমি মুচকি হেসে ইফাতের দিকে তাকালাম। ইফাত বড় মানুষের মতো মুখটা ঘুরিয়ে ফেললো। সাদ্দাম, শাকিল, তামিম, সাফা, ঝুমা খাবার শেষ করে আমার সাথে কথা বলতে এগিয়ে গেলো। ওদের দেখে সিফাত দৌড়ে ইফাতের কাছে চলে গেলো। সবগুলো গাদাগাদি করে আমার পাশে বসলো। এমনভাব মনে হচ্ছে পারলে আমাকেই সোফা থেকে ফেলে দেয়। তামিম কিছুটা চেচিয়ে আমাকে বললো,
— একটু ঐদিকে যেতে পারিস না?
আমি রেগে বললাম,
— আমাকে সোফা থেকে ফেলে দে। না পারলে কোলে এসে বস তোরা।
সাদ্দাম শয়তানি হাসি দিয়ে বললো,
— আইডিয়া খারাপ নয়। তুই ওঠ আমরা কতগুলো ছবি তুলে নেই।
আমি সবার দিকে একবার তাকিয়ে দেখলাম কেউ আমার দিকে তাকিয়ে আছে কিনা। কাউকে তাকাতে না দেখে মেজাজ দেখিয়ে বললাম,
— ঐ সাদ্দাম, শাকিল, তামিম তোদের আমি কি বলছিলাম?
সাফা সেলফি তুলতে তুলতে আমাকে বললো,
— কি বলছিলি ওদের?
শাকিল কপাল কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,
— কি বলছিলি?
আমি ফোঁস করে একবার নিঃশ্বাস ছেড়ে বললাম,
— বলছিলাম না, আমার জামাইকে বলতে, “জিতছেন ভাই, জিতছেন।” তোরা কি তা বলছিস?
তামিম জিহ্বায় কামড় দিয়ে বললো,
— একেবারে ভুলে গেছিলাম রে।
আমি মুখটাকে থমথমে বানিয়ে বললাম,
— জলদী গিয়ে বলে আয় যা। ওর বন্ধুরা সামনে থাকলে বলিস। অন্য কারোর সামনে বলার দরকার হলে। কি বলতে হবে মনে আছে তো?
শাকিল বললো,
— হুম মনে আছে। তাকে বলবো, “জিতছেন ভাই জিতছেন। আমাদের নোভার মতো মেয়ে দুটো পাবেন না। আপনার সুন্দর জীবনটাকে তেজপাতা বানাতে ও একাই যথেষ্ট।”
— কি বললি তুই?
— আরে রাইগো না, রাইগো না। আমি বিষয়টা বুঝিয়ে বলছি।
— বেশি বাড়িয়ে বলতে হবে না। যা বলার তা বলবি। তোরা যে বেশি বাড়িয়ে বলতে গিয়ে আমার মান-ইজ্জ্বত খেয়ে আসবি তা আমি জানি।
আমাদের কথার মাঝে সাদ্দাম ভ্রু নাচিয়ে বললো,
— বলতে পারলে কি দিবি? তুই যদি এখান থেকে উঠে আমাদের একা ছবি তুলতে দিস তাহলে বলবো যা।
আমি আস্তের ওপর সাদ্দামের পায়ে একটা লাথি মেরে মুখ বাঁকিয়ে বললাম,
— তোদের কিছু বলতে হবে না। যা ভাগ।
আমরা যে কথা বলছি সেদিকে সাফা, ঝুমার কোন খেয়াল নেই। তারা হাঁসের মতো ঠোঁট দুটো চোখা করে সেলফি তুলতে ব্যস্ত।
💖💖💖
কিছু সময় পর…..
সোফার এক কোণায় চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছি আমি। আমার হারামী বন্ধু-বান্ধবীগুলো আমাকে সোফায়ও জায়গা দেইনি। আমার জামাইকে আমার শিখানো ডায়লগ “জিতছেন ভাই জিতছেন” বলে এসে আমাকেই সোফায় থাকতে দেইনি। ইভা, অনন্যা,অর্থি একবার আমার সাথে দেখা করে সারা কমিউনিটি সেন্টার চক্কর মারছে। নূর আপিকে এতখন তায়াং ভাইয়ার সাথে দেখা গিয়েছে। এখন কোথায় জানি না। মোহনা, শাহেদের সাথে। তন্বী, রওনক, তওহিদ ভাইয়া ও শারমিন একসাথে খেতে বসেছে। আমি অসহায়ের মতো সবার দিকে তাকিয়ে আছি।আমাকে দেখে তায়াং ভাইয়া এগিয়ে এসে এক হাতে জড়িয়ে ধরলো। তারপর মিষ্টি হেসে বললো,
— কিরে রাত কেমন কাটলো😷?
আমি তায়াং ভাইয়ার দিকে কটমট করে তাকিয়ে রাগী কন্ঠে বললাম,
— তায়াং ভাইয়া আমি তোর ছোট বোন।
— বন্ধুর বউ হিসেবে জিজ্ঞেস করছি।
ওর বাহুতে জোরে একটা কিল দিয়ে বললাম,
— ভালো হয়ে যা ভাইয়া, ভালো হয়ে যা।
— তুই ভালো হয়ে যা। গতকাল রাতে ছেলেটার সাথে ঠিক করিসনি।
আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
— এটাও বলে দিয়েছে?
— জানে জিগার দোস্ত। আমাকে বলবে না তো কাকে বলবে?
— হইছে চুপ কর। সব বন্ধু একিরকম। মুখে কোন লাগাম নেই। কোথাও কি বলতে হয় আর করতে হয় সেটাই জানিস না।
— তা কেমন আছিস?
— আলহামদুলিল্লাহ ভালো তুই।
— আলহামদুলিল্লাহ।
— এখানে দাঁড়িয়ে কেন?
— আমাকে সোফায় জায়গা দিচ্ছে না।
— বন্ধু-বান্ধবগুলা এমনি হয়।
— তুই আমাদের সাথে যাবি না?
— হু যাবো তো।
— নূর আপির সাথে কথা হয়েছে।
— হুম।
— এবার রওনক ও তন্বীর ব্যবস্থা কর।
— হ্যাঁ, তাই করবো।
তায়াং ভাইয়াকে আবির ভাইয়া ডাকতেই আমাকে ছেড়ে চলে গেলো। ভিডিওম্যান আমাদের ভিডিও করবে। তাই আমার হারামী বন্ধু-বান্ধবীগুলো উঠে গেলো। অবশেষে আমি বসতে পারলাম। এনাজ স্টেজে উঠে আমার পাশে ঘেঁষে বসলো। আমি কিছুটা দূরে সরতে চাইলে আমার পেছন দিয়ে এক হাত দিয়ে আমার বাহু চেপে ধরলো। আমি একবার তার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে ভিডিও-এর লাইটের দিকে তাকালাম। উনি কানের সামনে মুখ এনে ফিসফিস করে বললো,
— এতো পালাই পালাই ভাব কেন?
আমি বিরবির করে বললাম,
— জামাইয়ের হাব-ভাব বেশি ভালো না তাই।
— হু যত পালানোর পালাও। আমিও তো দেখবো পালিয়ে যাও কোথায়? শুধু শুধু এত কষ্ট করছো। শেষে তো আমার কাছে ধরা দিতেই হবে।
— এত সহজে না।
— আমিও আজ দেখবো।
— ভয় দেখান কেন?
— ভয় না সত্যি কথা বলছি।
— আমি আজকে আপনার সাথে থাকবো না।
— দেখা যাবে।
আমি কাঁদো কাঁদো ফেস করে তার দিকে তাকাতেই সে এক গালে কিলার টাইপের হাসি দিলো। কানের কাছ থেকে মুখ সরানোর আগে কানে টুপ করে একটা চুমু খেলো। আমি খাইয়া ফালামু লুকে তার দিকে তাকালাম।ইচ্ছে করছে তার ঠোঁট দুটো জোরে টেনে দিতে। ভিডিওম্যান আমাকে উদ্দেশ্য করে বললো,
— ভাবী, চোখ দুটো ছোট করেন। মনে তো হচ্ছে আমার ভাইকে চিবিয়ে খেয়ে ফেলবেন।
এনাজ শয়তানি হাসি দিয়ে বললো,
— তাই করবে ভাই। দেখেন না চোখ দুটো কি পরিমাণ বড় করছে।
আমি নিচু স্বরে এনাজকে বললাম,
— হু যতখুশি শয়তানি করেন। দিন তো আপনারই।
— রাতও আমারি।
আমি দাঁত কিড়মিড় করে বললাম,
— লুচ্চামির ওপর কি ডিগ্রি করছেন😤?
এনাজ সামনের দাঁতগুলো দেখিয়ে বললো,
— না, অনার্স কমপ্লিট করছি। আমার আরো কত রোমান্টিক অত্যাচার সহ্য করতে হবে তোমাকে। সবে তো শুরু।
আমি মৃদুভাবে আমার কপালে একটা চাপর মেরে মাথা নিচু করে রাখলাম। এনাজ মুচকি হাসছে। ভিডিওম্যান ভিডিও করে অন্যদিকে চলে গেলো।আমি তার থেকে অনেকটা দূরত্ব রেখে বসছি।এনাজ হাতের ইশারা করে তার কাছে ডাকলো। আমি মাথা নাড়িয়ে মানা করলাম। সে লো ভয়েজে বললো,
— একটা কথা শুনো।
— কোন কথা নেই। আবার লুচুমি করবেন।
— কিছু করবো না।
— আপনাকে দিয়ে বিশ্বাস নেই।
— আসতে বলছি।
— আমি আসবো না।
— বলছিলাম কিছু করবো না। তোমার তো ভালো লাগলো না। ওয়েট আমিই আসছি।
উনি উঠে এসে আমার কানের কাছে মুখ আনলো। আমি কিছুটা পিছিয়ে গেলাম। তখন কেউ দেখেনি বলে রক্ষা। এখন যদি কেউ দেখে নেয় তাহলে কি ভাববে? এই ছেলের মাথায় তা নেই। হাত দিয়ে আটকে গালে একটা চুমু বসিয়ে দিয়ে হাসতে হাসতে দ্রুত পায়ে স্টেজ থেকে নেমে গেলো। আমি সবার দিকে তাকালাম। কেউ যদি দেখে ফেলে তাহলে কি হবে? এই বেডার তো কিছু না। আমিই লজ্জা পাবো। সবার দিকে তাকিয়ে দেখলাম যার যার কাজে সে ব্যস্ত। শুধু তার বন্ধুগুলো আমার দিকে তাকিয়ে মিটমিট করে হাসছে। তার মানে তারা দেখছে। আমি লজ্জায় দ্রুত মাথা নিচু করে ফেললাম।
#শিশির_ভেজা_রোদ্দুর
#Part_67
#Writer_NOVA
এক সপ্তাহ পর…..
হঠাৎ করে পেছন থেকে কেউ জড়িয়ে ধরতেই আমি কিছুটা ভড়কে গেলাম। আচমকা হওয়ায় ভড়কে গিয়েছি। ঘাড় ঘুরিয়ে এনাজকে দেখে চোখ ছোট ছোট করে তাকালাম। উনি আমার দৃষ্টি উপেক্ষা করে গালে টাইট করে একটা চুমু খেলো। সে ঘাড়ে হালকা করে নাক ঘষে কাঁধে থুঁতনি রেখে বললো,
— শীতের মধ্যে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছো কেন?
— এমনি।
— মন খারাপ?
— না তো।
— আমি জানি তো মন খারাপ।
— তেমন কিছু নয়।
— আগামীকাল বাবার বাড়ি থেকে চলে যাবে তাই মন খারাপ করছে তাই না?
— হুম অনেকটা তাই।
আমাকে তার দিকে ঘুরিয়ে কপালে কপাল ঠেকিয়ে নাকের সাথে নাক হালকা ঘষে বললো,
— মন খারাপ করো না। আবার সামনের মাসে এসে কয়েকদিন বেড়িয়ে যেয়ো।
আমি তার নাক ধরে কিছুটা জোরেই টান দিয়ে বললাম,
— নাকটা বেশি লম্বা হয়ে গেছে।
— হবেই তো নতুন বউ পেয়েছে যে।
— ফাজিল ছেলে, মুখে কিছু আটকায় না
— কিছু না বলতেই এমন নাক,মুখ সিটকানো শুরু করলে। যদি বলা শুরু করি তাহলে কি হবে?
— মুখে তো এখন কিছু আটকায় না।
— আটকাবেও না। এতদিন অনেক কষ্টে সবকিছু আমার মায়াবী বউটার জন্য হেফাজত করে রাখছি। এখন সেগুলো তো কাজে লাগাতে হবে।
— এনাম ভাইয়া কোথায়?
— আছে মুহিনের সাথে আশেপাশেই।
— চলেন খাবার খাবেন।
উনি এক হাতে শক্ত করে আমার কোমড় জড়িয়ে আমাকে কাছে টেনে নিয়ে ফিসফিস করে বললো,
— একটু পর।
— কেন?
— তুমি পাশে আছো তাই।
— বাহ বাহ কি ভালোবাসা!
— আকাশে আজ চাঁদও উঠেনি। উঠলে জোছনা বিলাস করা যেতো।
— ইস, কত শখ!
— হুম অনেক শখ।
আমি চুপ হয়ে গেলাম। উনি চেয়ারে বসে আমাকে তার কোলে বসিয়ে দিলো। দুই হাতে কোমড় জড়িয়ে ধরে রাখলো।আমি চোখ বড় বড় করে বললাম,
— হচ্ছেটা কি? দরজা খোলা। কেউ এভাবে দেখলে কি ভাববে? ছাড়ুন বলছি।
— কেউ আসবে না। আর দেখলে আমাদের রোমান্স করতে দিয়ে তারাই চলে যাবে।
— হইছে ছাড়েন। কেউ দেখে ফেললে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পরতে হবে।
— কেউ দেখবে না তো।
— এনাজিও সংস্থা ছাড়েন।
—ছাড়তে পারি এক শর্তে।
— আবার শর্ত?
— জ্বি।
— কোন শর্ত মানতে পারবো না।
— চুপচাপ বসে থাকলে তো কোন শর্ত দেইনা আমি।
— আমাদের দেখতে না পারলে কেউ চলে আসবে। তখন কেউ দেখে ফেললে লজ্জায় পরতে হবে।
— তুমি না রোমান্স করার মুডটাই নষ্ট করে দাও।
— আমি আবার কি করলাম?
— চুপচাপ কোলে বসে থাকো। কোন মোচড়ামুচড়ি করবে না। তোমার ছটফটানি দেখলে আমার মনে হয় অন্যের বউকে চুরি করে জড়িয়ে ধরছি।
উনার কথায় কিছুটা বিরক্তি ও অসন্তোষের প্রকাশ পেলো। আমি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ঘাপটি মেরে তার বুকে মাথা রেখে বসে রইলাম। তার অবাধ্য হওয়া যাবে না। বেচারা মন খারাপ করে ফেলছে। অবশ্য মন খারাপ হওয়ারি কথা। উনি মুখ ঘুরিয়ে রাখলেন। আকাশে চাঁদ না থাকলেও ফকফকা আলো আছে। সেই আলোতে তার বিষন্ন মুখটা দেখে আমার খারাপ লাগলো। তার খোঁচা খোঁচা দাড়ির সাথে আমার গালটা হালকা করে ঘষা দিয়ে বললাম,
— রাগ করছো?
— না।
— আমার তো মনে হয় রাগ করছো।
এনাজ স্পষ্ট রাগী গলায় বললো,
— রাগ করবো কেন? আমি রাগ করার কে?
— আল্লাহ কি রাগ! রাগ করেও বলে রাগ করার কে?
— হুম ছাড়ো আমায়। কেউ দেখে ফেললে লজ্জায় পরবে। আমি চাই না তুমি লজ্জায় পরো।
আমি দুই হাতে তার গলা জড়িয়ে ধরে আদুরে কন্ঠে বললাম,
— এত রাগ আমদানি হয় কোথা থেকে?
— আমার রাগ এখনো দেখোনি তুমি।
— দেখবো কি করে? তুমি তো আমার সাথে রাগ দেখাতেই পারো না।
— কে বললো পারি না?
গলার থেকে হাত সরিয়ে গাল দুটো টেনে দিয়ে বললাম,
— আমি জানি। তোমার মনের খবর আমি রাখি এনজিও সংস্থা।
— কিচ্ছু জানো না তুমি। জানলে আমার সাথে এমন করতে না। একটু আদর করতে গেলেই তোমার এই সমস্যা, ঐ সমস্যা। তুমি আমায় একটুও ভালোবাসো না। ভালবাসলে এমন করতা না।
মুখ গোমড়া করে ঠোঁট ফুলিয়ে বাচ্চাদের মতো করে অভিযোগ করতে লাগলো। আমি এক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে মিটমিট করে হাসতে লাগলাম।উনি আমাকে হাসতে দেখে বললো,
— সত্যি কথা বলছি।
আমি তার কথার উত্তর না দিয়ে তার গালে টুপ করে এক চুমু খেয়ে বসলাম। সে গাল ডলে অভিমানী সুরে বললো,
— লাগবে না।
— তাহলে কি লাগবে?
— কিছু লাগবে না। সরো, আমার ভালো লাগছে না।
— কেন ভালো লাগছে না? তোমার ভালো লাগার ঔষধ তো তোমার সাথেই আছে।
এনাজ এতটাই অভিমান করেছে যে এতখন ধরে যে আমি ওকে এক নাগাড়ে তুমি বলে সম্বোধন করছি সেই দিকেও খেয়াল নেই। হঠাৎ ভ্রু জোড়া কুঁচকে আমাকে জিজ্ঞেস করলো,
— তুমি কি আমাকে এতখন তুমি বলে সম্বোধন করেছো?
আমি দুষ্টুমি করে বললাম,
— কই নাতো!
— না তুমি আমাকে তুমি করে বলছো।
— একটুও না।
— মিথ্যে বলো না।
— জ্বি মহাদোয় আমি তোমাকে এতখন ধরে তুমি বলে সম্বোধন করছি। কিন্তু তোমার তো কোন খেয়াল নেই।
এনাজের চোখ মুখ খুশিতে ঝলকে উঠলো। শক্ত করে আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘাড়ে নাক ডুবিয়ে বললো,
— আমার এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না তুমি আমাকে তুমি করে বলছো। প্লিজ আরেকবার বলবে।
— কি বলবো বলো?
— তুমি বলো।
— কি বলবো বলো তুমি?
— লাভ ইউ টিডি পোকা।
— লাভ ইউ টু।
— আমিও এর মধ্যে ভেবেছিলাম তোমাকে তুমি করে বলতে বলবো। কিন্তু তুমি তার আগেই বলে ফেললে। আমার যে কি খুশি লাগছে।
— কেউ আমার সাথে রাগ করেছিলো।
— রাগ করে তো লাভ হলো।সে আমাকে তুমি করে বললে।
💖💖💖
কথাটা বলেই আমার সারা মুখে অসংখ্য চুমু খেলো। সামান্য তুমি বলায় কেউ এতো খুশি হয় তা এই প্রথম দেখলাম। মনে হচ্ছে এই ছেলে পাগল ছাড়া আর কিছু না। হ্যাঁ পাগলই তো,আমার পাগল। আমি তার চোখের দিকে তাকিয়ে বললাম,
— এতো খুশি হয়েছেন মনে হচ্ছে আমি আপনাকে বাবা হওয়ার সুসংবাদ দিয়েছি।
— তা হলে তো আমি খুশিতে পাগল হয়ে যেতাম।
— বাকি নেই।
— কি?
— পাগল হওয়ার কথা বলছি।
এনাজ কোন কথা না বলে ঠোঁটে আলতো করে একটা চুমু খেয়ে দুই হাতে আমার গলা জড়িয়ে ধরে আদুরে গলায় বললো,
— বউ, ও বউ!
— জ্বি বলেন।
— আবার আপনি তে নেমে গেছো?
— সরি, বলো।
— আমার একটা পুতুল বেবী লাগবে।
— এখন না পরে।
— না প্লিজ এখুনি।
— সবেমাত্র বিয়ে হলো। এখুনি আমি কোন টেউ টেউ নিতে পারবো না।
— প্লিজ এমন করো না। একটা বাবু নেই আমরা। ও ছোট ছোট পায়ে সারারুমে ঘুরে বেড়াবে। আধো আধো গলায় আমাকে বাবা বলে ডাকবে। তোমাকে মা বলে ডাকবে। আমি অফিস থেকে ফিরে ওকে বুকে নিয়ে ঘুমাবো। ওর সাথে খেলবো, ওর আধো আধো বুলি মুগ্ধ হয়ে শুনবো। প্লিজ একটা বাবু নেই না।
— নিবো না তাতো বলিনি। তবে দেরী আছে। আমার পড়াশোনা শেষ করে নেই।
— তুমি সংসার চালানোর পাশাপাশি পড়াশোনা চালিয়ে যাবে। আমি তোমাকে সবসময় হেল্প করবো।প্লিজ রাজী হয়ে যাও।
— একটুও না।
— পেটে একটা বেবী দেই না?
— চুপ করো। কি শুরু করছো?
এনাজ দাঁত বের করে শয়তানি হাসি দিয়ে বললো,
— আচ্ছা, বেবী না নেই। বেবী নেওয়ার প্রসেসিং তো করতে পারি আমরা?
— লুচ্চা বেডা। মুখে কি কিছু আটকায় না। থামেন তো। তখন থেকে কি বলা শুরু করছে!
আমি লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেললাম। এর মুখে আজকাল কিছু আটকায় না। সে আমার থুঁতনি ধরে মুখ উঁচু করলো। আমি চোখ বন্ধ করে মুখ খিচে রাখছি। এনাজ দুষ্টুমীর সুরে বললো,
— ইস, আমার টিডি পোকা লজ্জা পাইছে। লজ্জা পেলে তোমাকে অনেক কিউট লাগে।
আমাকে আরো লজ্জা দেওয়ার ধান্দা তার। আমি তার বুকে মৃদু করে কয়েকটা কিল বসিয়ে দিয়ে বললাম,
— শুধুই কি বলি আপনি লুচ্চামির ওপর ডিগ্রি করছেন? লাগামছাড়া কথাবার্তা।
— আমার বউয়ের সাথে বলি, অন্য কারো বউয়ের সাথে নয়।
— ছাড়েন তো। কখন থেকে দুষ্টামী শুরু করছে।
তার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে ভেংচি কাটলাম।আচমকা এমন হওয়ায় সে কিছুটা চমকে গেলোও সেই ভাবটা মুখে না রেখে শয়তানি হাসি দিয়ে বললো,
— আজকে রাতে খবর আছে।
আমি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললাম,
— দেখা যাবে।
— ওকে দেখে নিও।
আমি আর দাঁড়ালাম না। দ্রুত পায়ে আম্মুর কাছে গিয়ে হাতে হাতে কাজ করতে লাগলাম। একসাথে সবাই খাবার খেয়ে নিলাম। বিছানা করে মশারী টানিয়ে নিলাম। তায়াং ভাইয়া, তন্বীর সাথে কথা হয়েছে একটু আগে। খালামণির সাথে কথা বলতে বলতে বারান্দায় চলে গেলাম। কথা শেষ করে বাইরে তাকিয়ে কিছুটা জোরে চিৎকার করে উঠি। এনাজ ওয়াসরুম থেকে দ্রুত বের হয়ে এসে বলে,
— কি হয়েছে? চিৎকার দিলে কেন?
আমি খুশিতে কথা বলতে পারছি না। আমার মুখ হা হয়ে আছে। এনাজ আবারো বললো,
— কি হয়েছে বলবে তো?
আমি হাত দিয়ে বাইরে দেখিয়ে দিলাম। এনাজ বাইরের দিকে তাকিয়ে আমার মতো করে মুখ হা করে রাখলো। তারপর আমার এক হাত চেপে ধরে ফিসফিস করে বললো,
— টিডি পোকা আমি যা দেখছি তুমিও কি তা দেখতে পারছো?
— হুম।
— আমার মনে হচ্ছে স্বপ্নের জগতে আছি।
— আমারো।
— বিশ্বাস হচ্ছে না আমার।
— চলো ছাদে যাই।
— হুম জলদী চলো। এত সুন্দর মোমেন্ট হাতছাড়া করার মতো নয়।
আমি ও এনাজ অনেকটা দৌড়ে ছাদে চলে এলাম। এখন আপনাদের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে আমরা দুজন কি দেখে দৌড় দিলাম। আমাদের দালানটা দক্ষিণমুখো। বারান্দায় দিয়ে দূর-দূরান্তের আলুর খেত দেখা যায়। আমাদের বারান্দার সামনে ঝাঁকে ঝাঁকে জোনাকি পোকারা জ্বলছে নিভছে। মনে হচ্ছে ওদের মিছিল লেগে গেছে। সাধারণত শীতের সময় এদের দেখা মিলে না। হঠাৎ কি মনে করে ওরা হানা দিয়েছে তা ওরাই ভালো জানে। জোনাকির আলোতে পুরোটা জায়গা অন্য রকম পরিবেশে পরিণত হয়েছে। ছাদে গিয়ে দুজন পাশাপাশি বসে পরলাম। এনাজের কাঁধে আমার মাথা হেলিয়ে দিয়ে এই সুন্দর মুহুর্তটা অনুভব করতে লাগলাম।
অনেকটা সময় কেটে গেলো এভাবে। সবাই শুয়ে পরেছে অনেক আগে। এতখনে হয়তো ঘুমিয়েও গেছে।ধীরে ধীরে জোনাকি পোকাগুলো ঝাঁকে ঝাঁকে অন্য দিকে চলে যেতে লাগলো। এক সময় অন্ধকারের সাথে মিলিয়ে গেলো। এনাজ আমাকে মৃদুস্বরে ডাকলো।
— টিডি পোকা!
— হুম বলো।
— ওহ জেগে আছো?
— জ্বি।
— আমি ভাবলাম ঘুমিয়ে গেছো। তাই ডেকেছিলাম।
— কিছু বলবে?
— চলো এবার রুমে ফিরে যাই।
— আরেকটু থাকি?
— জোনাকি পোকা তো নেই।
— তবুও।
— ওকে।
উনি আবারো চুপ হয়ে গেলেন। ভারী একটা সোয়েটার পরে আছি। তবুও শীত করছে। ঠান্ডা লাগবে জেনেও বাইরে থাকতে ভালো লাগছে। প্রিয় মানুষটার কাঁধে মাথা রেখে এই নীরব পরিবেশ অনুভব করতে কার না ভালো লাগে বলুন তো। এনাজ কিছু সময় চুপ থেকে বললো,
— একটা কথা বলি?
— বলো।
— চলো না আজ আবার ডুব দেই নতুন অধ্যায়ে!
আমি চোখ দুটো বড় করে তার দিকে তাকালাম।যদিও আমি পুরোপুরি তার হয়ে গেছি বহু আগেই। বৌ-ভাতের রাতে আমাকে ছাড়েওনি, কোন সময়ও দেইনি। পুরোপুরি নিজের করে ফেলেছে। নতুন জীবনে পদার্পন হয়েছে সেদিন। তবুও আজ তার মুখে এমন কথা শুনে কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে গেছি। তার চোখ দুটো অসহায় হয়ে আমার দিকে স্থির। চাতক পাখির মতো আমার উত্তরের অপেক্ষায় আছে। সেই চোখের দিকে তাকিয়ে কেন জানি মানা করতে পারলাম না। লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেললাম। সে কিছুটা খুশি গলায় বললো,
— তোমার মাঝে দ্বিতীয় বারের মতো ডুব দিতে দিবে আমাকে?
আমি কোন উত্তর দিলাম না। তার বুকে মুখ লুকালাম। তাতেই সে তার উত্তর খুঁজে পেলো। দুই চোখের পাতায় আলতো করে চুমু খেয়ে আমাকে কোলে তুলে নিলো। আমি এখনো তার বুকে মুখ লুকিয়ে রেখেছি।লজ্জায় আমি শেষ। তারপর…… আর কিছু না। যান ভাগেন, এতো কিছু পড়তে হবে না।
#চলবে