#শুধু তুই
#পর্বঃ১৪
#Tanisha Sultana (Writer)
ছাঁদে পায়চারি করছে করছে তুলি।
“সায়ান করেছে খুন। কি করে পসিবল। উনি তো মনে হয় একটা মসাও মারতে পারবে না। সব কেমন গোলমেল লাগছে।
” কি রে
জিসানের ডাকে তুলি ভাবনার জগৎ থেকে বের হয়।
“তুই
” চল বসি
তুলি আর জিসান দোলনায় বসে।
“মুড অফ
” নাহ তো
“তাহলে চুপচাপ কেনো?
” ভাবছি
“কিহহ
” ওই দেখ আম গাছ
তুলি পাশের ছাঁদে দেখায়।
“তো
” তো এখন আম চুরি করবো
জিসান পড়ে যায়। তুলি টেনে তোলে
“চুরি করমু
” হুম
“চল
” দেখ
“দেখমু কি?
” চুরি করা মহা পাপ
তুলি জিসানের দিকে চোখ গরম করে তাকায়।
“যাচ্ছি তো চল
তুলি গাছে উঠছে জিসান নিচে দাঁড়িয়ে আছে।
” তাড়াতাড়ি কর কেউ চলে আসবো
জিসান
পেছনে তাকিয়ে দেখে সায়ান। জিসান চমকে ওঠে।
“তুই ওখানে কি করছিস
” ননননা মমমমমাননননে
“তুতলাসছিস কেনো?
” জিসান কে রে
তুলি গাছ থেকে বলে। সায়ান গাছের দিকে তাকিয়ে চোখ বড়বড় করে
“আপনি ওখানে কেনো?
” চুরি করতে এসেছি
“মানে
” আস্তে কথা বল ব্রো নইলে
“নইলে কি? আমি এখন চিৎকার করবো
তুলি সায়ানের মাথায় আম ফেলে
” আহহহ
“আর একবার কথা বললে মাথা ফাটায় ফেলমু
জিসান ধর
তুলি আম ফেলে জিসান কুরায়। সায়ান হাত ভাঁজ করে দাঁড়িয়ে আছে।
” গাছে কে?
নিচ থেকে গাছের মালিক বলে
তুলি তাড়াহুরো করে নামতে গিয়ে ঠাস করে পড়ে যায়। তাও আবার সায়ানের ওপর। জিসান হাত বাড়িয়ে দেয় তুলি হাত ধরে টান দেয় ফলে সায়ান নিচে তারওপর তুলি তারপর জিসান।
“ও আল্লাহ গো আমার কোমর গেলো রে। আমি মরে গেলাম রে। এ্যা এ্যা
” হেলো আমার ওপর দুইশো কেজির বস্তা পড়ে আছে আপনার ওপর না
তুলি এবার তাকিয়ে দেখে সত্যি তাই।
“ওই জিসানের বাচ্চা ওঠ
জিসান ওঠে। তুলিকে টেনে ওঠায়। সায়ান পায়ে বেশ খানিকটা ব্যাথা পায়। তুলি হাত বাড়িয়ে দেয়
” নিন উঠুন
“ইডিয়েট
” আই নো এবার উঠুন
সায়ান তুলির হাত ধরে উঠে।
“তাড়াতাড়ি চল না হলে মালিক আমাদের দেখে ফেললে কিমা বানাবে
কোনো রকম দৌড়ে চলে যায়। সায়ানের রুমে এসে হাঁপাচ্ছে তুলি জিসান আর সায়ান। সায়ান রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তুলি জিসানের দিকে তাকিয়ে ঢোক গিলে।
” এএএভাবে তাকাচ্ছেন কেন? বাচ্চা মেয়ে ভয় পেয়ে তো মরেও যেতে পারি
“হুম তুলি ঠিক কইছে
” আপনি বাচ্চা?
“হহ নিষ্পাপ টুনুমুনু একটা বাচ্চা 😎
” চোর আপনি একটা। চিৎকার করে বলে
“ছি ছি ছি
সায়ান জিসান চোখ বড় বড় করে তাকায়।
” আপনার বউ একটা চোর। এটা তো আমি সবাইকে বলবো
তুলি বাইরে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায় সায়ান তুলির হাত ধরে ফেলে
“কোথাও যাবেন না আপনি
জিসান চলে যায়।
” কেনো যাবো না
“আমি বলছি তাই
” হুম যাবো না একটা শর্তে
“কিহহ
” আমাকে তুমি বা তুই করে বলতে হবে
সায়ান হাত ছেড়ে দেয়।
“যেতে পারেন
সায়ান চলে যায়।
” কি ডেমাগ। বলি আমাকে তুমি করে বললে কি মহা ভারত অসুদ্ধ হয়ে যাবে? তবে আমি আপনার থেকে তুমি ডাকটা না শুনেছি তবে আমার নামও তুলি নয়।
তুলি বেলকনিতে চলে যায়। বসে বসে চুরি করা আম খায়।
সায়ান আজ জুজুদের বাড়িতে যায়। কাল থেকে একবারও ওদের খোঁজ নেওয়া হয় নি। জুজুদের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে কলিং বেল বাজায়। জুজুর নানা (আজিম) দরজা খুলে দেয়
“তুমি এখানে?
” জুজুকে দেখতে এসেছিলাম।
সায়ান ভেতরে ঢুকে।
“সায়ান তুমি ওই মেয়েটাকে ডিভোর্স দিয়ে জুঁই কে বিয়ে করবে
সায়ান চমকে ওঠে আজিমের কথা শুনে।
” কি বলছেন আপনি?
“ঠিকি তো বললাম। নিরবকে (জুজুর বাবা) তুমি মেরে ফেলেছো। কেনো? জুঁইকে পাওয়ার জন্য। আমি তখন জোর করে জুঁইয়ের বিয়ে দিয়ে দিয়েছিলাম। আর তুমি জুঁইয়ের স্বামীকে মেরে ফেলেছো। জুজুকে এতিম করে দিয়েছো। এর দায় তো তোমাকে নিতে হবেই
” আমি মারি নি নিরবকে।
“প্রমান তো বলছে তুমি মেরেছো। তোমার কেরিয়ারের কথা আর তুমি বলেছিলে জুজু আর জুঁইয়ের দায়িত্ব নেবে তাই আমি কথাটা গোপন রেখেছিলাম। কিন্তু এখন তুমি আমার মেয়েকে বিয়ে না করলে কথাটা পুরো দেশ জেনে যাবে। থানা পুলিশ হবে। তোমার পরিবার কি কথাটা সয্য করতে পারবে
সায়ান মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে।
” সিদ্ধান্ত তোমার
“জুজু কোথায়?
” তুমি সিদ্ধান্ত জানাও আমি ওদের কথা বলবো
“ভাবার জন্য একটু সময় চায়
তুলি সায়ানকে ফলো করতে করতে এখানে চলে আসে। দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে সবটা শুনে
” সায়ানকে ভয় দেখাচ্ছে কেনো লোকটা। সব কিছুর পেছনে এই লোকটা জড়িয়ে নেই তো? জানতে হবে আমাকে। সায়ানকে আমি ছাড়ছি না। দেখি এই টাকলুটা কি করে আমার বরের সাথে ওনার মেয়ের বিয়ে দেয়।
#শুধু তুই
#পর্বঃ১৫
#Tanisha Sultana (Writer)
রাস্তায় অনমনে হাঁটছে তুলি। সায়ানের কথা ভাবছে।
“সত্যি কি সায়ান জুঁইকে বিয়ে করবে? যদিও করে তাহলে আমি কি আটকাতে পারবো? আর আমি কেনো এতো অস্থির হচ্ছি। আমি তো ওনাকে ভালোবাসি না তাহলে ওনার পাশে অন্য কাউকে কেনো সয্য করতে পারছি না। কি হচ্ছে আমার সাথে? কি করবো আমি
একটা গাড়ির সাথে ধাক্কা খায় তুলি। পড়ে যায় তুলি। গাড়ি থেকে জিসান নেমে আসে। তুলি পায়ে প্রচুর ব্যাথা পায়৷ তুলির চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।
” তুই ঠিক আছিস
জিসান তুলিকে ধরে
“পায়ে খুব ব্যাথা করছে
তুলি কান্না করতে করতে বলে। সায়ান এদিকেই আসছিলো তাই ওদের দেখে ওদের দিকে আসে। তুলির পা থেকে রক্ত ঝড়ছে। জিসান তুলিকে কোলে তুলে নেয়। সায়ানের বুকের বা পাশে চিন চিন করছে৷
” ব্রো প্লিজ তুই ডাইভ কর তুলিকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।
সায়ান ডাইভিং সিটে বসে। জিসান তুলিকে নিয়ে পেছনের ছিটে বসে।
তুলির পা ভেঙে গেছে আর কেটে গেছে। পাঁচটা সিলি দেওয়া হয়েছে। বেডে শুয়ে আছে তুলি। হাঁটার মতো অবস্থায় নেই।
“তুলি এবার আমরা বাড়ি যাবো
তুলি এবার জিসানের দিকে তাকায়। সায়ান একটু দুরে দাঁড়িয়ে আছে।
” ব্রো তুলি হাঁটতে পারবে না। তুই ওকে কোলে করে নিয়ে আয়
“তখন তো তুই আনলি এখনও তুই নে
” তুলি কোথাও পোরা পোরা গন্ধ পাচ্ছি তুইও কি পাচ্ছিস
“হুম কারো মন পুরছে
” আপনি না অসুস্থ
“তো
” কথা বলছেন কি করে
“চোখে কি কম দেখেন না কি? আমার পা ভাঙছে মুখ না
” মুখ ভাঙলে ঠিক হতো
বিরবির করে বলে সায়ান
“কি বললেন
” কিছু না
জিসান
পাশে তাকিয়ে দেখে জিসান হাওয়া
জিসান কই গেলো
“চলে গেছে
” আপনাকে
“আপনি কোলে নিবেন
” অকালে প্রানটা হারাবো
“কি বললেন? তুলি রেগে বলে
” আসুন
“কানা না কি
” 😡😡
“আমি যদি আসতে পারতাম তাহলে তো হাঁটতেও পারতাম
” ইডিয়েট
তুলি হাত বাড়িয়ে বলে
“কোলে নেন
সায়ান তবে কোলে তুলে নেয়
” আপনার ওয়েট কতো
“42
” মিথ্যুক
“সত্যি
” ৮০ কেজি কে বলছে ৪২ কেজি
সায়ান বিরবির করে বলছে
“কি বিরবির করছেন?
” কিছু না
সায়ান হাঁটা শুরু করে। তুলি সায়ানের গলা জড়িয়ে ধরে। সায়ানের কেনো জানি মুহুর্তটাকে খুব ভালো লাগছে। সময়টা যদি এখানেই থেমে যেতো। কিন্তু সেটা তো সম্ভব না।
কলিং বেল বাজায় জিসান। সায়ানের মা দরজা খুলে দেয়। সায়ানের কোলে তুলিকে দেখে ভ্রুকুচকে তাকায়
“ও কোলে কেনো?
তুলি সায়ানের গলা জড়িয়ে বলে
” শাশুমা আপনার ছেলেটা রোমান্টিক হওয়ার চেষ্টা করছে। তাই কোলে নিয়েছে। এতো দিন তো নিরামিষ ছিলো
“এখন বুঝি আমিষ
জিসান বলে
” আর আমিষ। কপাল খারাপ। এতোদিন হলো বিয়ের এপর্যন্ত একটা কিছ ও করে নাই। সম্মান দিয়ে কথা বলে আমার সাথে। মনে হয় আমি ওনার শাশুড়ী
সায়ানের মা কাশি দেয়
“কোথায় কি বলতে হয় সেটাও জানে না
সায়ানের মা চলে যায়। সায়ান হন হন করে তুলিকে রুমে নিয়ে যায়। বিছানায় শুয়িয়ে দেয়।
” মানুষ হবেন না তাই না
“আপনি মানুষ হবেন না
” আমি কি করছি
“আমি কি করছি
” ওসব কেনো বললেন
“মিথ্যা বলছি কি? আপনি তো নিরামিষ ই
” ওহহহ আচ্ছা
“হুমম। শুনুন না
” বলুন
“আমার একটা হবু বফ আছে তার সাথে পরিচয় করিয়ে দেবো আপনাকে।
” হবু বফ মানে কি
“ওয়েটিং এ আছে। ডিভোর্সের পরে এক্সেপ্ট করবো। তাই আপাতত হবু বফ
” পাগল একটা
“পাগল না পাগলি
” বসুন খাবার নিয়ে আসছি
“বিশ টিশ মিশায় দিয়েন না আবার
” চল্লিশ মিশিয়ে দেবো
সায়ান চলে যায়
“চল্লিশ আবার কি? পাগল হইলো না কি?
সায়ান তুলির জন্য খাবার নিয়ে আসে। তুলিকে ধরে বসিয়ে খাইয়ে দেয়। খাওয়া শেষে সায়ান প্লেট গোছাতে থাকে
” আমরা কি এক সাথে থাকতে পারি না
সায়ান থমকে তুলির দিকে তাকায়
“মানে
” মানে ফ্রেন্ড হয়ে। ডিভোর্সের পরে আমরা ফ্রেন্ড হয়ে থাকবো। যদি আপনি চান
“ভালো থাকতে কি লাগে?
সায়ান তুলির পাশে বসে পড়ে।
” ভালো একজন বন্ধু
“ভুল বললেন
” তাহলে
“বোঝার মতো ভালোবাসার মতো একজন মানুষ। যেটা আমার নেই। কেউ বোঝে না আমাকে। ছোট বেলা থেকেই সব সময় একা একা থাকতাম। কারণ কারো সাথে মিশতে ভালো লাগতো না। যখন নতুন কলেজে গেলাম জুঁইয়ের সাথে পরিচয় হলো। রিলেশন হলো।
” তারপর
“হাসতে শিখলাম। যে মানুষটা আমাকে হাসতে শেখালো আবার সেই হাসি কেড়ে নিলো। মজার বেপার কি জানেন আবার সেই মানুষটাই আমার জীবনে ফিরে আসতে চাইছে
” ভালো তো। আবার ভালোবাসার মানুষটাকে পাবেন
সায়ান একটু হাসে।
“শুয়ে পড়ুন
” জুজু কেমন আছে
“আমি ছাড়া সবাই ভালো আছে
সায়ান বেলকনিতে চলে যায়। সিগারেট ধরায়।
” তুলির জন্য মনের মধ্যে আলাদা একটা অনুভূতি হয়। ওর কাছাকাছি থাকতে ভালো লাগে। ওর পাগলামি ভালো। দোটানায় পড়ে গেছি আমি। কি করবো আমি? আমার জীবনটা কেনো এমন? যখন ভাবি হয়ত এখন একটু ভালো থাকবো তখনই ভালো থাকার জিনিসটা দুরে সরে যায়। বেঁচে থাকতে হয়ত আমি ভালো থাকতে পারবো না।
সায়ানের ফোনে ফোন আসে। জুজু কল করেছে
“পাপা কি করো
” বসে আছি সোনা। তুমি?
“মামনি বলছে তোমার সাথে কথা না বলতে। কিন্তু আমি তো তোমাকে এতোটা ভালোবাসি তোমার সাথে কথা না বলে থাকতে পারবো না। প্লিজ পাপা ডু সামথিং
“মামনি কি করে?
” রান্না করছে। নতুন মা কেমন আছে
“পা ভেঙে গেছে
“আমি নতুন মাকে দেখবো
” ঠিক আছে আমি কাল তোমাকে নিয়ে আসো
“প্রমিজ
” হুম প্রমিজ
“লাভ ইউ পাপা
” লাভ ইউ টু
চলবে
চলবে