#শুধু তুই
#পর্বঃ২৫
#Tanisha Sultana (Writer)
“বলছিলাম ভার্সিটিতে যাবো
সায়ান অগ্নি দৃষ্টিতে তাকায় তুলির দিকে
” এভাবে তাকায় কেন?
“যাবে না কোথাও
” আমি যাবো
“বললাম তো যাবে না
” আপনি কি আমার কথা শুনেন যে আমি শুনবো
“তুমি বাধ্য
” কইলেই হইলো
“হুম
“তুলি একবার যা বলে তাই করে।
” ওহহহ রিয়েলি
“ইয়াহ। আমি যাবো
” ছেলেদের হাত ধরে ঘুরতে
তুলি যেনো আকাশ থেকে পড়লো
“আমি ছেলেদের হাত ধরে ঘুরি
” কেনো মিথ্যা বললাম
“আমি আবার কার হাত ধরে ঘুরলাম? আমার তো কেনো ফ্রেন্ডই নেই
” নিশ্চয় বয়ফ্রেন্ডের কথা ভাবছেন?
“বয়ফেন্ড যেনো কা রে কয়
” ড্রামা কুইন
“আপনার
” বলেন বয়ফ্রেন্ডের
“আর যদিও বয়ফ্রেন্ড থাকে আর আমি যদি তার হাত ধরেও থাকি তাতে আপনার কি? আপনি তো নিরামিষ। আমাকে ছুঁতেই ভয় পান। মনে হয় আমি কারেন্টের মিটার ছুলেই শট খান।
” কিছুটা সেরকম
“হুররর। ভাবতেছি
” কি
“প্রপোজ করমু
” কারে
“আপনারে
” 😊😊
“না মানে যদি আপনি রাজি হন
” আগে প্রপোজ করো তারপর ভাববো
“তা হবে না
” কেনো?
“আমি দশ টাকা দিয়ে একটা গোলাপ কিনে আপনারে প্রপোজ করমু। আর আপনি যদি না করে দেন তো আমার দশটা টাকা তো লস হলো
” আল্লাহ। এসব ভাবো কি করে
“মাথা দিয়ে
” তুমি যদি সুন্দর করে প্রপোজ করতে পারো তো আমি এক্সেপ্ট করবো
“তুলি খুশি হয়ে সায়ানকে জড়িয়ে ধরে
” ছাড়ো অফিসে যাবো
“হুম
তুলি ছেড়ে দেয়
” পাগলি
সায়ান চলে যায়। তুলিও রেডি হতে যায়
” আমার নিরবের সাথে দেখা করতেই হবে। লোকটা মনে হয় পাগল। জানতে হবে সব
তুলি রেডি হয়ে ভার্সিটিতে চলে যায়। সায়ানের প্রচুর রাগ হয়।
“আমার কাছে এখন সবটা ক্লিয়ার। নিরবের প্রেম ছিলো প্রিয়ার সাথে। এক্সিডেন্ট এ প্রিয়া মরে যাওয়ায় নিরন সায়ানকে ভুল বুঝে। সায়ানের দুর্বল জায়গায় আঘাত করে। আর সায়ানের দুর্বল জায়গায় ছিলো জুঁই। ভীষণ ভালোবাসে। এখন কথা হলো জুঁই কই? আর জুজুদের বাড়িতে এলবামে যে লোকটার ছবি দেকছিলাম সে কে? আর নিরব এখান দিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে অথৎ কেউ চিনতে পারছে না। কি করে? গাপলাটা কি?
” হেই মিছ
নিরবের ডাকে তুলির হুশ ফেরে। তুলি এতোখন ভার্সিটির পাশে বসে ছিলো।
“আপনি?
নিরব তুলির পাশে বসে। মুখে সেই ভুবন ভোলানো হাসি।
” এতো সুন্দর কেনো ছেলেটা? আর এতো সুন্দর ছেলের মনটা এতো জঘন্য।
“হেলো
” হুম বলুন
“আমাকে ভয় পাও
” নাহহহ। কিছু প্রশ্ন ছিলো
“বলো
” জুঁই কোথায়?
নিরব অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকায় তুলির দিকে
“জানি না
” আপনি কি জানেন আপনার ফুটফুটে একটা পরি আছে। ভীষণ মিষ্টি দেখতে। কেমন সুন্দর করে ডাকে। ছোট ছোট পায়ে ঘুরে বেড়ায়।
নিরব তুলির কথা মন দিয়ে শুনে
“আমার পরি নেই। আমার পরি তো মরে গেছে। তুমি মিথ্যা বলছো
” আমি সত্যি বলছি
“মিথ্যে মিথ্যে
চিৎকার করে বলে নিরব। তুলি কেঁপে ওঠে। তুলি নিরবের হাত ধরে।
” শান্ত হন। আমি মিথ্যা বলেছি। আমার পরি আছে। দেখবেন
নিরব শান্ত হয়
“নতুন মা
জুজু দৌড়ে তুলির কাছে আসে। তুলি কোলে নেয়
” সোনা তোমার পাপা কথা বলো
পাপা শব্দ শুনে নিরব চমকে ওঠে। জুজু নিরবের কোলে ওঠে। ছোট ছোট হাতে নিরবের সারা মুখ ছুঁয়ে দেয়। কপালে গালে চুমুকে ভরিয়ে দেয়। নিরব রোবটের মতো তাকিয়ে আছে। কিছু বলতে পারছে না। খুব টান অনুভব করছে
“ও পাপা তুমি কোথায় ছিলে? জানো কতো মিছ করেছি তোমাকে? তুমি চলে গেলে মামনিও চলে গেলো। আমাকে একা করে দিতে ভালো লাগে তোমাদের?
জুজু কান্না করছে। নিরব জুজুর চোখের পানি মুছে দেয়।
” কাঁদে না
তুলি বাবা মেয়ের ভালো মুহুর্ত দেখছে।
সায়ান অফিসে বসে আছে। আবার সেই অচেনা আইডি থেকে কিছু পিক আসে। সায়ান সেগুলো সিন করতেই মাথায় রক্ত চড়ে যায়। তুলি নিরবের ছবি। হাত ধরা বসে থাকা জুজুর সাথে সব ছবি।
সায়ান ফোনটা ভেঙে ফেলে। অফিস থেকে বেরিয়ে যায়। জোরে ডাইভ করে তুলির ভার্সিটিতে চলে যায়। দেখে নিরব তুলি আর জুজু ফুসকা খাচ্ছে আর হাসা হাসি করছে। সায়ান চলে যায়
সন্ধায় তুলি জুজুকে রুমে দিয়ে নিজে রুমে চলে আসে। সায়ান সুয়ে ছিলো
“এই অবেলায় সুয়ে আছেন কেনো?
তুলি সায়ানের গায়ে হাত দিতে যায়। সায়ান তুলিকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়
” তোর ওই নোংরা হাত দিয়ে আমাকে ছুবি না
তুলি ফ্লোরে পড়ে যায়। হাতে প্রচুর ব্যথা পায়
“কয়ডা লাগে তোর? ভার্সিটির নাম করে ছেলেদের সাথে নিক নিক করতে যাস। আর ঘরে তোর জায়গা নেই। বেরিয়ে যা
” আমার কথা শুনুন
“আর একটা কথা বলবি না
তুলি উঠে আবার সায়ানকে ধরতে যায়। সায়ান ধাক্কা দেয়। দেয়ালের সাথে ধাক্কা খেয়ে মাথা ফেটে যায়।
” তুই বেরোবি না তাই তো
সায়ান হাত ধরে টেনে তুলিকে দরজার বাইরে ফেলে দরজা বন্ধ করে দেয়। তুলি কাঁদছে আর সায়ানকে ডাকছে কিন্তু সায়ান দরজা খুলছে না।
সায়ান দারোয়ানকে ফোন দিয়ে তুলিকে বাড়ি পৌঁছে দিতে বলে।
“আপামনি চলেন
তুলি চোখ মুছে দাঁড়িয়ে বলে
” কোথায়?
“সায়ান বাবা আপনাকে বাড়ি পৌঁছে দিতে বলেছে
” লাগবে না আমার
তুলি একা একা এলোমেলো ভাবে দৌড়াতে থাকে।
দারোয়ান সায়ানকে বলে। সায়ান দরজায় একটা ঘুসি মারে
“ওই মেয়েটা এতো ইডিয়েট। যাক যেখানে খুশি। আমি ভাববো না
তুলি একটা বাসে ওঠে। একদম পেছনের ছিটে বসে।
#শুধু তুই
#পর্বঃ২৬
#Tanisha Sultana (Writer)
বাড়িতে এসে জোরে জোরে কলিংবেল বাজাচ্ছে তুলি। তুলির মা দৌড়ে এসে দরজা খুলে দেয়। তুলি হনহনিয়ে ভেতরে ঢুকে বাড়ির নিজিস পএ ভাঙতে থাকে। তুলির বাবা মা থামানোর চেষ্টা করছে
“মামনি কি হয়েছে বলবে তো
তুলি বাবার কলার ধরে টেনে সোফায় বসায়
” তুমি কেনো আমাকে ওই গোমড়ামুখোটার সাথে বিয়ে দিয়েছো বলো?
তুলি চিৎকার করে বলে। তুলির বাবা মা ভয় পেয়ে যায়
“কি হয়েছে?
” বের করে দিয়েছে আমাকে বাড়ি থেকে। শুনছো তোমরা
তুলি এবার কেঁদে দেয়। একটু পরে চোখ মুছে আবার বলে
“আমি প্রেম করবো। অনেক গুলো। দেখি উনি কি করতে পারে
তুলি রুমে চলে যায়। তুলির বাবা সায়ানের বাবাকে ফোন দেয়
” হেলো
“তুমি আমার পায়ে ধরে আমার মেয়ের সাথে তোমার ছেলের বিয়েতে রাজি করিয়েছিলে। এখন আমার মেয়েকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার সাহস হয় কি করে?
” কে বের করে দিয়েছে?
“তোমার গুনোধর ছেলে৷ আজ থেকে তোমার সাথে আমাদের সম্পর্ক শেষ।
তুলির বাবা ফোনটা কেটে দেয়।
তুলি রুমে পায়চারি করছে
” বফ না থেকেও আমি এতোগুলো কথা শুনলাম। এখন আমি বফ বানাবো। করবো আমি প্রেম। দেখি হনুমানটা কি করতে পারে।
তুলি ফোনটা হাতে নিয়ে ফেসবুকে পোষ্ট করে ইমারজেন্সি বফ লাগবো😁
সায়ান নিউজফিল্ডে ঘোরা ঘুরি করছিলো তখন তুলির পোষ্টটা চোখে পরে। পাঁচ মিনিট আগে পোষ্ট করছে তিনশত লাইক চারশো কমেন্ট হয়ে গেছে।
“এই মেয়েটাকে তাড়িয়ে দিয়ে ভুল করেছি। এটা যে একটা পাগল তা আমি ভুলেই গিয়েছিলাম। বফ লাগবো না। দেখাচ্ছি আমি
সায়ান শার্ট নিয়ে বেরিয়ে যায়। বাইরে বেরিয়ে দেখে বাবা দাঁড়িয়ে আছে।
” কোথায় যাচ্ছ?
“কাজ আছে
” তুলিকে বের করে দিয়েছো কোন সাহসে
অনেকটা রেগে বলে
“বাবা আসলে
” এতোটা বেহায়া তুমি। মেয়েটা তোমাকে ভালোবেসে আপন করে নিতে চায় আর তুমি সব সময় কষ্ট দাও কেনো?
ওহহ জুঁইকে ভালোবাসো। ঠিক আছে চলে যাও
সায়ান কিছু না বলে চলে যায়। তুলিদের বাড়ির নিচে দাঁড়িয়ে আছে। ঘড়িতে দুটো বাজে। এতো রাতে সবাইকে জাগাতে ভালো লাগছেনা সায়ানের। তাই গাড়িটা তুলিদের বাড়ির পেছনে নিয়ে যায় আর গাড়ির ভেতরে সুয়ে পড়ে।
পাঁচটা তেতাল্লিশে তুলির ঘুম ভেঙে যায়। হালকা শীত পড়েছে। তুলি গায়ে একটা চাদর জড়িয়ে বেড়িয়ে পড়ে। বাড়ির পাশে একটা নদী আছে। যাকে সবাই ইচ্ছে নদী বলে। তুলি নদীর পারে যায় হাঁটতে হাঁটতে। নিস্তব্ধ পরিবেশ। দুইএকটা পাখির কিচিরমিচির ডাক শোনা যাচ্ছে। তুলির খুব ভালো লাগছে।
নদীতে পা ভিজিয়ে দুই হাত মেলে চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে। পরিবেশটা উপভোগ করছে।
কতোখন তুলি ওভাবে দাঁড়িয়ে ছিলো জানা নেই
“ওই
তুলি চোখ খুলে পেছনে তাকিয়ে দেখে সায়ান। তুলি আবার চোখ বন্ধ করে। সায়ান এসে তুলির সামনে দাঁড়ায়।
” এখানে কেনো?
“এটা আপনার নদী না। চাইলেও তাড়িয়ে দিতে পারবেন না
” তোমার পবলেম কি? ফেসবুকে কি পোষ্ট করছো?
তুলি একটা পাথরের ওপর বসে
“কোনো পোষ্ট করি নি তো
” মিথ্যা বলছো কেনো? আমি দেখেছি
দাঁতে দাঁত চেপে বলে সায়ান। তুলি হালকা হাসে
“দেখছেন তো আবার জিজ্ঞেস করছেন কেনো?
” কেনো করেছো সেটা জানতে চাইছি
“লাগবে তাই
” চলো আমার সাথে
“যাবো না
” মতামত জানতে চায় নি
“জানি
“অসয্য লাগে তোমাকে আমার
” তাহলে কেনো এসেছেন?
“বলতে বাধ্য নই
” তা থাকবেন কেনো আমি তো আর জুঁই না।
“তুলি
” আমি ভেবে নিয়েছি আপনাকে মুক্তি দেবো
“আমার মুক্তি চায় না
” আমার চায়
“নতুন পাইছো। এখন তো মুক্তি চাইবাই
” রাইট
“আমি এটা হতে দেবো না। তোমাকে আমার সাথে যেতে হবে
” যাবো না
সায়ান তুলিকে কোলে তুলে নেয়। গাড়িতে বসিয়ে দরজা লক করে দেয়। সায়ান ডাইভ করছে
“কেনো জোর করে নিয়ে যাচ্ছেন?
” কাজের বুয়া আসবে না কইদিন। সব কাজ তুমি করবা। কাজ করানোর জন্য নিয়ে যাচ্ছি।
“আমি কাজ পারি না
” শোখাবো তোমারে
“ইডিয়েট
” আমার কাছ থেকে শিখছো
“হুরর।
“ছেলেটা কে বলো?
” বলবো না
“বলতে বলছি
” বফ🥱
সায়ান ঠাস করে গাড়ি ব্রেক করে
“মারবেন না কি?
” নাম আমার গাড়ি থেকে
“কিহহহ
” নামতে বলছি
তুলি সিটবেল খুলে সায়ানের কোলে গিয়ে বসে। কলার ধরে বলে
“তোর যখন যা করতে ইচ্ছে হইবো তুই তাই করবি। আমার ইচ্ছার কোনো দাম নাই তাই না। তুই তো আমারে ভালোবাসোস না তাহলে আমার বফ থাকলে তোর পবলেম কি?
” সরো
তুলি সায়ানের গলা জড়িয়ে বলে
“সরবো না কি করবি তুই।
তুলি সায়ানের ঠোঁটে চুমু খায়। তারপর সরে যায়।
” চলুন
সায়ান ডাইভ শুরু করে। তুলি বাড়ি আসতেই সবাই তুলিকে ঘিরে ধরে। ডলি দুরে দুরে থাকে।
“মনা আমি তোমার সাথে ঘুমবো
সায়ান পানি মুখে দিছিলো তুলির কথায় পানি পড়ে যায়।
” তুই মনার সাথে ঘুমালে আমারে গোলুমলু নাতনি এনে দিবি কেমনে?
“দত্তক এনে দিবো।
তুলি আর মনা জিসানের রুমে চলে যায়। জিসান তন্নির সাথে কথা বলছিলো। ওদের দেখে ফোন কেটে দেয়।
“তোরা এখানে এসময়ে
মনা জিসানের পা টিপে দেয় আর তুলি চুলে বিলি কেটে দিচ্ছে
” আমার ওপর সালমান খান ভর করছে না কি এতো বালুপাসা
“ভাইয়া তোকে না দারুণ লাগছে এই হেয়ার স্টাইলে
” মনা তুই গাঁজা খাইছোস না কি?
“কেনো?
” আমি তো তিন মাস হলো চুলই কাটি না
“ওহহহ
” দোস্ত তুই খুব ভালো। নিরিহদের সাহায্য করোস (তুলি)
“আমি ভালো কিন্তু নিরীহদের সাহায্য করি না
” দোস্ত দুই হাজার টাকা দে
জিসান লাভ দিয়ে উঠে বসে
“এই জন্য এতো পাম
” প্লিজ ভাইয়া
“দে না দোস্ত
জিসান পড়েছে মহা মুশকিলে। কাল সায়ানের থেকে তিন হাজার টাকা নিয়েছে তন্নিকে কিছু গিফট দেবে বলে। এখন ওদের দিয়ে দিলে তন্নিকে কি দেবে
জিসান এসব ভাবছে সেই ফাঁকে ওরা টাকা চুরি করে ভো দৌড় দেয়।
” আমার টাকা পয়সা সব গেলো😭😭😭
দরজার বাইরে গিয়ে বলে
“দেখি এবার গিভট কি করে দেস হিহিহি
চলবে
চলবে