গল্পঃ শুধু তোমাকে চাই। ( ২য় পর্ব )
দরজা খোলার শব্দ পেয়ে হিমিকে ছেড়ে দিলাম, হিমি চটজলদি একটু দূরে সরে গিয়ে দাড়িয়ে আমার দিকে তাকিয়ে ফিসফিস করে বললো,– আপনার ঠোঁটে আমার লিপস্টিক লেগে আছে, কেউ দেখে ফেললে সর্বনাশ, সবাই টেনশনে পড়ে যাবে আপনার ঠোঁটের কাছে আমার ঠোঁট গিয়েছিল, নাকি লিপস্টিক! অথবা আপনি আমার ঠোঁটের কাছে এসেছিলেন নাকি লিপস্টিকের কাছে।
হিমির কথা শুনে হেসে ফেললাম, মনে মনে ভাবলাম হিমি যতটা রাগ আউটসাইডে দেখাচ্ছে, ইনসাইডে ঠিক ততটা না। তার হাবভাব দেখে বুঝলাম।
দরজা খুলে আঙ্কেল মানে হিমির বাবা ভেতরে ঢুকে তার রুম থেকে কিছু একটা নিয়ে আবার দ্রুত পায়ে বেরিয়ে গেল।
হিমিকে কাছে ডাকলাম, হিমি কাছে এসে দাড়ালো। পাসের চেয়ারটায় বসে হিমিকে বললাম,– হিমি, কোন ছেলে যদি তোমার চেয়ে তোমার শরীর নিয়ে বেশি উৎসাহ বোধ করে, তুমি কেমন আছো, মন মানসিকতা কেমন, খেয়েছো কিনা, কি জিনিস পছন্দ করো, ঘুরতে যেতে ভালোবাসো কিনা, এসব জিজ্ঞেস না করে যদি তোমার বুকের সাউজ নিয়ে ব্যস্ত হয়, চব্বিশ ঘণ্টা তোমাকে নিয়ে বিছানায় মেতে ওঠার পরিকল্পনায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে, কতক্ষণ পারবে, কীভাবে আদর করলে তোমার ভালো লাগবে, মানে সারাক্ষণ এসব নিয়ে চর্চা করা লোকটাকে তোমার সেক্স এডিক্ট মনে হয়না। ভালোবাসা কি বিশ-পঁচিশ মিনিটের বিছানার উত্তেজনায় সীমাবদ্ধ? তাই যদি হয় তবে তো উত্তেজনা শেষে ভালোবাসা শেষ। ভালোবাসার একটা অংশ হতে পারে শারীরিক এই ক্ষণস্থায়ী মেলামেশা, কিন্তু হৃদয় থেকে আসা ব্যক্তির প্রতি ভালোবাসা প্রকৃত ভালোবাসা, শরীরের প্রতি থাকে লোভ। কেউ যদি তোমাকে ভালোবেসে আপন করে নেয়, তখন তো তোমার সবই তার, সে যখন চাইবে নিজের ইচ্ছে মতোই তোমাকে একান্তে পাবে। কিন্তু তার আগে তো ভালোবেসে তোমার মন জয় করতে হবে নাকি?
হিমি আমতা আমতা করে বললো,– কিন্তু আপনি আমাকে এসব কেন বলছেন?
আমি বললাম,– গতকাল তোমার ফোন হাতে পেয়ে তোমার ফেসবুক মেসেঞ্জারে ঢুকে দেখলাম রাকিব নামের এক ছেলের সাথে তোমার অনেক সখ্যতা।
হিমি ভীষণ লজ্জা পেয়ে বললো,– এটা কিন্তু ঠিক করেননি আপনি!
আমি বললাম,– তুমি ছেলেটিকে বলেছো তোমার শরীর ভালো নেই, আর ছেলেটি রিপ্লাইতে বলেছে, কেন মবিল চেঞ্জ হচ্ছে? তুমি বলেছো মানে! ছেলেটি বললো মেনস শুরু হইছে তোমার? তারপর তুমি চুপচাপ। ছেলেটা আবার বললো, জানো মেনস শেষ হবার পরে মেয়েদের চাহিদা অনেক বেড়ে যায়, শুধু খাই খাই করে।
হিমি মাথা নিচু করে রইল।
আমি আবার বললাম,– আচ্ছা ঐ ছেলেটিও তো অবিবাহিত, ওর এত অভিজ্ঞতা কীভাবে এসব বিষয়ে! তার মানে এসব বিষয়ে ও পাকাপোক্ত, অভিজ্ঞতা সম্পন্ন। ধীরে ধীরে ও তোমার সাথে এরকম যৌন কথাবার্তা বলে ফ্রী হবে, যেহেতু যৌনতা মানব জীবনের একটা অপরিহার্য অংশ, এবং তুমিও এর বাইরে নও, এসব বিষয় শুনতে শুনতে এই বিষয়ে তোমার মনেও কৌতুহল বাড়বে। তুমিও যখন উৎসাহী হবে এই বিষয়ে, ঠিক তখনই একদিন ও তোমার কাছে তোমার খোলা বুকের ছবি চেয়ে বসবে। যেহেতু তুমিও দীর্ঘদিন ওর সাথে কথা বলে ফ্রী, তুমিও দিয়ে দিবে। এরপরে বলবে বিবস্ত্র হয়ে ছবি দিতে, এরপরে বলবে ভিডিও দিতে। এসব দেয়া-নেয়া শেষে নির্লজ্জতার শেষ সীমানায় পৌঁছে গিয়ে ওর ডাকে সাড়া দিয়ে নিজের শরীরটাকে ওর সামনে মেলে ধরতেও দ্বিধাবোধ করবে না তুমি, তারপর তোমাকে ভোগ করে ও শান্ত হবে, নয়তো আগের দেয়া তোমার বিবস্ত্র ছবি অথবা ভিডিও দিয়ে তোমাকে ব্ল্যাকমেইল করে বারবার তোমাকে ওর শয্যাসঙ্গী হতে বাধ্য করবে।
লজ্জায় হিমির মুখটা লাল হয়ে আছে দেখে বললাম,– হিমি আমার কথাগুলো শুনতে খারাপ লাগলেও একশত ভাগ সত্যি, এরকম অহরহ হচ্ছে। তোমাকে জাস্ট সতর্ক করছি। রাকিবকে আমার মোটেও সুবিধার মনে হয়নি, যেহেতু তুমি নবযৌবনা, ও এসব বলে তোমার মনে অন্যরকম এক কৌতূহল সৃষ্টি করে তোমাকে পেয়ে বসার ধান্দা করছে।
হিমি বললো,– ওকে আমি আজকেই ব্লক করে দেবো।
আমি বললাম,– হিমি, তুমি যে জিনিসটা খাওনি, সেটার স্বাদ কিন্তু তোমার কাছে অপরিচিত, কিন্তু একবার খাবার পরে যখন পরিচিত হয়ে যাবে, তখন বারবার খেতে চাওয়ার ইচ্ছেটা স্বাভাবিক। বিয়ের পূর্বে শারীরিক সম্পর্ক এর জন্যই হারাম যে, একবার শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হলে বারবার হতে ইচ্ছে করবে, এবং এটা মহা অন্যায়। কিন্তু বিয়ের পরে বৈধ বলে যখন যেভাবে খুশি করো কোন নিষেধ নেই, ভয় নেই বাধা নেই। এখনকার প্রেমের আড়ালে লুকিয়ে থাকে যৌন বাসনা। উদ্দেশ্য হাসিল হয়ে গেলেই আসল রুপ বেড়িয়ে আসে।
হিমিকে পরপর কয়েকবার ঠোঁটে চুমু খেয়েছিলাম শুরুতে মনে আছে? হিমি সেই উত্তেজনা, সেই ঘোর এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি।
আসলে হিমি আমার বন্ধুর বোন। আমি এবং হিমির বড়ো ভাই সোহেল ঢাকায় একত্রে পড়ালেখা করি। একদিন সোহেল ওর ফোন রেখে বাইরে যায়। সোহেলের ফোনে কল আসে, আমি রিসিভ করি, সেই প্রথম কথা হয় আমাদের। তারপর ধীরে ধীরে কথা বলতে বলতে হিমির প্রেমে পড়ে যাই আমি। হঠাৎ করে হিমির ধীরে ধীরে বদলে যাওয়ায় ভীষণ অবাক হই আমি, সামনে আসে রাকিবের বিষয়টি। তাই কলেজ বন্ধ থাকায় চলে এলাম এখানে।
যাই হোক লজ্জায় লাল হয়ে আছে হিমি। আমি উঠে দাড়িয়ে হিমিকে টান মেরে বুকে এনে ঠোঁটে ঠোঁট রেখে বললাম,– তোমার ঠোঁটে আর একবার কিস করি।
হিমির শরীর মৃদু কাঁপছে, চুপ হয়ে আছে হিমি, আসলে এই স্পর্শ পেতে শরীর সায় দিচ্ছে, আবার মন হয়তো বারণ করছে। শরীর ও মনের যুদ্ধে নির্বাক হিমি।
আমি হিমির কপালে কপাল, নাকের ডগায় নাক, ঠোঁটে ঠোঁট লাগিয়ে বললাম,– হিমি, এবার চিন্তা করো, তোমার মন না চাইলেও শরীর চাইছে এই স্পর্শ, এই মুহুর্তে আমি যদি তোমার স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেই তুমি সেটাও ফেরাতে পারবে না। আমি যদি এর বেশি কিছু করতে চাই তুমি তাতেও বাঁধা দিতে পারবে না। কারণ তোমার শরীর আবিষ্কার করতে চায় এই না পাওয়া আনন্দ, তোমার শিরা-উপশিরায় বইছে এখন অন্যরকম এক উত্তেজনা।
ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে কথা বলায় আমি যতবার কথা বলেছি ততবারই আমার ঠোঁট হিমির ঠোঁট স্পর্শ করেছে, এর জন্যই উত্তেজনায় হিমির শরীর আরও বেশি কাঁপছে, নিশ্বাস ঘন হয়ে এসেছে। হিমি চোখ বন্ধ করে আমার ঠোঁটে পাগলের চুমু খেতে শুরু করলো।
আমি বললাম,– এবার বুঝলে হিমি, তুমি এখনও সিদ্ধান্ত নিতে পারোনি রাকিব নাকি আমাকে ভালোবাসবে, কিন্তু আমার স্পর্শে তোমার শরীরের এই উত্তেজনা উপশম করার জন্য তোমার শরীর এই মুহূর্তে আমাকে চাইছে, কিন্তু এই উত্তেজনা শেষে যখন শরীর শান্ত হবে, তখন আবার তোমার মন বলবে আসলে এটা ঠিক হয়নি। কারণ তুমি এখনও শিওর নও তোমার মনটা কাকে দিবে। এর জন্যই মনের টান, মনের ভালোবাসাটা আগে দরকার, শরীরের সাময়িক এই মেলামেশা তো ক্ষনস্থায়ী। যেখানে মন সায় দেয়, সেখানেই প্রকৃত সুখ পাওয়া সম্ভব।
হিমি আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো,– আমার শরীর কেন এমন উতলা হয়ে উঠলো, কেন অমন অসহ্য লাগছে আমার, কি করলে ভালো লাগবে, কী চায় আমার শরীর দিতে পারবেন আপনি? পরে যা হবার হোক, এই মুহূর্তে আমার কি করা উচিৎ।
আমি হিমিকে চেয়ারে বসিয়ে শান্ত গলায় বললাম,– হিমি, স্পর্শ হোক অথবা এ ধরনের কথাবার্তায় তোমাকে এমন পরিস্থিতিতে এনে তোমার সবকিছু লুটে নিলেও শরীরের কাছে বশ হয়ে তোমার কিছুই করার থাকবে না। এই যেমন এই মুহূর্তে আমি চাইলে তোমাকে বিছানায় নিয়ে যেতে পারি, তোমার কিছুই করার থাকবে না কারণ এই মুহূর্তে তোমার শরীর অন্যরকম এক নেশায় বুদ হয়ে আছে। এভাবেই রাকিবের মতো ছেলেরা অসংখ্য মেয়েদের জীবন নষ্ট করে বেড়ায়। আমি চাইনা এরকম কিছু। আমি জাস্ট তোমাকে বোঝাতে চেয়েছি বিষয়টি। আমি তোমার মনটা চাই, তোমার ভালোবাসা চাই। শুধু তোমাকে চাই। তোমার কি ইচ্ছে বলে দাও, হয় থেকে যাই, নাহয় এক্ষুনি চলে যাই।
হিমি কিছু সময় নিরব থেকে বললো,– এই মুহূর্তে কোনকিছু আমার পক্ষে বলা সম্ভব না, কালকে বলবো।
কথা শেষে হিমি চেয়ার ছেড়ে উঠে ধীর পায়ে চলে গেল…
চলবে…
ইমতিয়াজ আহমেদ চৌধুরী।