শুধু তোমারই জন্য ২ পর্ব -০৭+৮

#শুধু_তোমারই_জন্য(২)
লেখনীতে- অরনিশা সাথী

|৭|

ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়। গত সপ্তাহেই আনিতার ছোট চাচ্চু আর আব্বু এসেছেন। এই মাসের চব্বিশ তারিখে আনিতার ছোট চাচ্চুর হলুদ। আনিতার চাচ্চুর বিয়ের উপলক্ষেই আনিতার আব্বু এসেছেন। মেয়ে আগে থেকেই পছন্দ করা। নাম আয়রা, অনার্স থার্ড ইয়ারে পড়ে। পাঁচ বছরের রিলশন তাদের। আনিতার চাচ্চু দেশে থাকা অবস্থায় থেকেই ওর চাচ্চুর আর আয়রার রিলেশন। দুই ফ্যামিলি রাজি এই বিয়েতে। তাই আগে থেকেই বিয়ে ঠিক করে রাখা ছিলো। কথা ছিলো আনিতার চাচ্চু দেশে আসলেই ডেট ফিক্সড করে বিয়ের অনুষ্ঠান হবে। সাত দিন বাদেই আনিতার চাচ্চুর হলুদ। বাড়ির ছোট ছেলের বিয়ে তাই অনেক বড় অনুষ্ঠান করা হবে। বিয়ে বাড়ি প্রচুর লোকজন হবে বিয়ের প্রচুর কেনাকাটা সব নিয়ে বাড়ির লোকজন প্রচুর ব্যস্ত। আনিতার আব্বু বিয়ের প্যান্ডেল থেকে শুরু করে বাজার-সদাই, দাওয়াত করা, বিয়ের কেনাকাটা সব একা হাতে সামলাচ্ছেন।

বিকেল সাড়ে তিনটার মতো বাজে। আনিতার চাচ্চুর হলুদ আজকে। আনিতা অনিমা আরোহী তাসকিয়া রোদেলা জেরিন ওরা ছয়জনে সাজতে এসেছে পার্লারে৷ সকলের সাজা শেষ। আনিতার সাজ কমপ্লিট চুল বাঁধবে এখন। চুলবাঁধা হলেই শাড়ি পড়বে। রোদেলার ফোন আসাতে রোদেলা কথা বলতে বলতে পার্লার থেকে বের হয়ে এলো। নিচে নামতে দেখে রাতুল তন্ময় শুভ আরহান ওরা চারজনে বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। রোদেলা অবাক হলো বেশ। ওদের সামনে এগিয়ে বলে,

–“আপনারা এখানে কি করছেন?”

রোদেলার প্রশ্নে তন্ময় বাইক থেকে নেমে বাইকের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে বলে,

–“আপনাদের নিতে আসলাম।”

–“আমরা একা চলে যেতে পারতাম।”

–“জানি আপনারা একা যেতে পারতেন বাট, ফাইয়াজ পাঠালো। এখানকার কোন ছেলে নাকি আনিতাকে বিরক্ত করে। একা পেলে যদি আবার____”

–“বুঝলাম। কিন্তু আনিতার তো এখনো রেডি হওয়া হয়নি।”

–“ব্যাপার না। আপনারা সবাই চলে আসুন। আহিয়ান আসছে ওকে নিতে।”

–“ওকে একা রেখে যাবো? কাঁচা চিবিয়ে খাবে ও আমাদের।”

–“ওকে বলেই আসো সমস্যা কি?”

রোদেলা গিয়ে আনিতাকে বলল সবটা। আনিতা আর বারন করলো না। চলে যেতে বলল ওদের। রোদেলা ওরা তন্ময় ওদের সাথে চলে গেলো। সাথে অনিমাকেও নিয়ে গিয়েছে ওরা। চুলবাঁধা শেষে আনিতা চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো৷ গায়ে থেকে উড়নাটা রেখে দাঁড়ালো আনিতা। পার্লারের মেয়েটি শাড়ির ভাজ খুলছে। এখন শুধু শাড়িটা পড়ালেই হবে। হঠাৎ করেই দরজায় নক পড়লো। অন্য একটি মেয়ে গিয়ে দরজা খুলতে দেখলো আহিয়ান দাঁড়ানো। হাতে একটা প্যাকেট। আহিয়ান বেলি ফুলের মালাগুলো মেয়েটির হাতে দিয়ে বলল,

–“ফুলগুলো আনিতাকে____”

এইটুকু বলতেই আহিয়ান থেমে গেলো সামনের দিকে চোখ পড়াতে। আনিতাকে দেখে আহিয়ানের মুখের কথা বন্ধ হয়ে গিয়েছে৷ মেয়েটি সবেমাত্র শাড়ি পড়ানো শুরু করেছে আনিতাকে। আনিতা আহিয়ানের দৃষ্টি অনুসরণ করে নিজের দিকে তাকাতেই তাড়াহুড়ো করে শাড়ি টেনে নিয়ে নিজের শরীর ঢেকে নিলো। আহিয়ান আর ওখান দাঁড়ায়নি। মেয়েটির হাতে ফুলগুলো দিয়ে চলে আসে। প্রচন্ড গতিতে আহিয়ানের হার্টবিট লাফাচ্ছে। জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে ও। ওদিকে আনিতারও সেম অবস্থা। লজ্জায় কুঁকড়ে যাচ্ছে মেয়েটি। ভাবছে কি করে আহিয়ানের সামনে যাবে ও?

প্রায় পনেরো মিনিট পর আনিতার সব সাজ সম্পূর্ণ হলো। আয়নায় নিজেকে দেখে নিলো একবার। লাল, কাঁচা হলুদ আর গোলাপি রঙের তিন লেয়ারের পাড় আর সাদা জমিনের চুমকি শাড়ি পড়েছে আনিতা। শাড়ির জমিনটা সম্পূর্ণ সাদা। আর আঁচলটাও লাল কাঁচা হলুদ আর গোলাপির সংমিশ্রণে। কুচি দিয়ে শাড়ি পড়েছে ও। আঁচলটা ছেড়ে রাখা। মাথায় বেলি ফুলের টিকলি আর কানে বেলিফুলের দুল। টিকলিতে একটা লাল গোলাপ আর দুই কানের দুলেও দুটো লাল গোলাপ রয়েছে৷ খোপায় বেলিফুলের মালা পেঁচিয়েছে। খোঁপায় কোনো গোলাপ নেই। সামনে কয়েকটা চুল খুলে রাখা হয়েছে। আনিতা একবার নিজের দিকে চোখ বুলিয়ে পার্লার থেকে বের হয়ে এলো। লজ্জা লজ্জা লাগছে আহিয়ানের সামনে যেতে৷ ইশ্ তখন কিভাবে দেখে ফেলল ওকে। ভাবতেই লজ্জায় কুঁকড়ে যাচ্ছে আনিতা।

আনিতাকে দেখে আরো একবার থমকে গেলো আহিয়ান। একদম পরীর মতো লাগছে দেখতে৷ ফর্সা গায়ে সাদা শাড়িটা বেশ মানিয়েছে তার উপর আবার কাঁচা ফুলের গহনা পড়েছে৷ চোখ সরানো দায় হয়ে যাচ্ছে। আনিতা সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই আহিয়ান বাইকে উঠে বসলো। আনিতাও উঠে বসেছে। এই প্রথম আনিতা আহিয়ানের বাইকে উঠলো। আনিতা দ্বিধায় আছে আহিয়ানকে ধরে বসবে কি বসবে না৷ আহিয়ান বুঝতে পেরে মুচকি হেসে বলে,

–“এত ভাবাভাবির কি আছে আনি? ধরে বসো। নয়তো পরে যাবা।”

ধীরে ধীরে আনিতা আহিয়ানের কাঁধে হাত রাখলো। আনিতা আহিয়ানকে ধরে বসতেই আহিয়ান বাইক স্টার্ট দিলো৷ মিনিট দশেকের মাথায় আনিতা ওরা বাসায় পৌঁছে যায়৷ এদিকে সবকিছু রেডি। পাঁচ দশ মিনিটের মাঝেই আনিতাদের বাসার সকলে হলুদের ডালা নিয়ে বের হয়ে পড়বে আয়রাদের বাসায় উদ্দেশ্যে। আয়রাকে হলুদ দিয়ে দিয়ে সকলেই চলে যাচ্ছে। বাইকে করে যে কজন এসেছিলো শুধু তারাই আছে এখন। ফাইয়াজের বন্ধুবান্ধব আনিতার ফ্রেন্ডরা আর এলাকার কিছু ছেলে-মেয়ে ছাড়া বড়রা সকলেই চলে গিয়েছে। আনিতার চাচ্চুও এসে হলুদ ছুঁইয়ে গিয়েছে আয়রাকে। আনিতা স্টেজে উঠেছে আয়রাকে হলুদ দিতে। আয়রা আনিতাকে একপাশ থেকে জড়িয়ে ধরে বলে,

–“আমার মেজো শাশুড়ীআম্মুটা কেমন আছে?”

আয়রার কথায় আনিতা হেসে ফেলল। হাসতে হাসতেই আনিতা বলে,

–“শাশুড়ীআম্মু যখন বলেছো তাহলে কিন্তু শাশুড়ীর মতোই ট্রিট করতে হবে আমায়। শাশুড়ীর সেবাযত্ন করতে হবে। যখন তখন হুকুম জারি করবো তোমার উপর। কথা না শুনলে বকাঝকা করবো। তখন কিছু বলতে পারবে না কিন্তু।”

–“ওক্কে ডিয়ার শাশুড়ীআম্মু নো প্রবলেম।”

আয়রা আনিতার সামনে মাথা নিচু করে ঝুকে হাত দিয়ে সালাম দেওয়ার ভঙ্গিতে কথাটা বলল। আয়রার কাজে সেখানে সকলেই হেসে উঠলো। সাথে আনিতাও। আয়রা আর আনিতার মাঝে বেশ ভাব সেই শুরু থেকেই। আনিতা হলুদ নিয়ে আয়রার গায়ে ছোঁয়াতে গেলেই আয়রা আনিতার হাত ধরে বলে,

–“শাশুড়ীআম্মু একাই হলুদ ছোঁয়াবে বুঝি? আমার শশুড়আব্বুটা কোথায়? সে ছেলের বউকে লাগাবে না হলুদ?”

–“ম্ মানে কি ব্ বলছো?”

আনিতার ঘাবড়ানো মুখ দেখে আয়রা শব্দ করে হেসে দিলো। আয়রার কথা শুনে আহিয়ান হাত উঠিয়ে বলে,

–“এই যে আমি। আপনার শাশুড়ীআম্মু তো আর আমাকে নিলো না হলুদ লাগাতে তাই যাইনি। কিন্তু এখন ছেলের বউ যেহেতু ডাকছে তাহলে আমি অবশ্যই আসবো।”

কথাগুলো বলে আহিয়ান আনিতার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসলো। আনিতার ভয় ভয় লাগছে। আয়রা যদি ওর ছোট চাচ্চুকে সব বলে দেয় তখন? তখন কি হবে? ওর চাচ্চুতো ওকে মেরে ফেলবে একদম। আনিতা ভয়ে ভয়ে আয়রার দিকে তাকিয়ে বলে,

–“কাকিয়া তুমি___”

–“আমি সব জানি আনিতা। কলেজের পাশের রেস্টুরেন্টে একটা ছেলে তোমাকে কলেজ ভার্সিটির এমন কি বাইরের এত এত মানুষের সামনে এত্ত কিউট করে প্রপোজ করবে আর সেটা বুঝি আমি জানবো না?”

–“কিন্তু তুমি তো ওখানে ছিলেনা__”

–“আমার ফ্রেন্ড ছিলো। ও-ই আমাকে ফোন করে জানিয়েছে। আর আমি ভিডিওতেও দেখেছি।”

–“ভি্ ভিডিও?”

–“হ্যাঁ কেন তুমি দেখোনি? আহিয়ান যে তোমাকে প্রপোজ করেছে সেই ভিডিওটা এফবিতে ভাইরাল হয়েছে তো। অবশ্য তোমাকে চেনা যায়না। মুখে মাস্ক লাগানো আর চুলগুলো সামনে এসে পড়ায়।”

–“তুমি চাচ্চুকে__”

–“রিল্যাক্স আনিতা। আমি তোমার চাচ্চুকে কিছু বলিনি। আর বলবোও না। সময় হোক তোমার পড়াশোনা শেষ করো তখন বলবো কেমন?”

এতক্ষণে আনিতা একটা স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়লো। আহিয়ান এসে বসলো আয়রার অন্যপাশে। আনিতা আর আহিয়ান দুজনে মিলে একসাথে আয়রাকে হলুদ দিলো। সবাই আয়রাকে হলুদ দিয়ে আবার আনিতাদের বাসায় চলে এলো। আয়রাদের বাসা থেকে এখন লোক আসবে ওর চাচ্চুকে হলুদ দিতে।

রাত সাড়ে নয়টা বাজে। আনিতার চাচ্চুকে হলুদ দিয়ে ও বাড়ির লোক চলে গিয়েছে আধ ঘন্টা হবে। আনিতা দের বাড়ির সকলেও হলুদ লাগিয়েছে ওর চাচ্চুকে। ফুল ভলিউমে সাউন্ড বক্স বাজছে। আনিতার চাচ্চুর বন্ধুরা উড়া ধুরা ডান্স শুরু করেছে স্টেজের সামনে। আর স্টেজের উপরে আনিতার মেজো কাকিমা আনিতার আশে পাশের কাকিরা সকলে রিমিক্স গানের সাথে লাফাচ্ছে। দেবরের বিয়ে বলে কথা এঞ্জয় তো করতেই হবে। সাথে আনিতা অনিমা আর ওদের কাজিনরাও যোগ দিয়েছে। সবাই মিলে নাচ করছে। এক সাইডে আহিয়ান রাতুল তন্ময় আরহান আর আনিতা বন্ধুরা চেয়ার নিয়ে বসে আড্ডা দিচ্ছে। ফাইয়াজ এদিক ওদিক দৌড়াদৌড়ি করছে।

আনিতার আব্বু বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করায় আনিতার কাকিমা রা সকলে নাচ বন্ধ করে স্টেজ থেকে নেমে যায়। আনিতা ওর রুমে চলে যায়। শাড়ি চেঞ্জ করে মেকআপ তুলে নেয়। ক্লান্ত লাগছে খুব। মাথাটাও হালকা ধরেছে। শাওয়ার নিতে চলে যায় আনিতা। ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে ড্রেসিংটেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে চুল মুছে নেয়। এখন বেশ ভালো লাগছে ক্লান্তি ভাবটাও কেটে গিয়েছে। ফোন বেজে উঠলো আনিতার। হাতে নিয়ে দেখে আহিয়ান কল করেছে। আনিতার মনে পড়লো আজকে আহিয়ানকে তেমন সময় দিতে পারেনি ও। ফোনটা রিসিভ করতেই আহিয়ান বলে,

–“কোথায় আছো?”

–“রুমে কেন বলুন তো?”

–“ম্যাডাম তো আজকে আমাকে ভুলেই গিয়েছেন। কি সুন্দর নাচগান করলেন।”

আহিয়ানের কথায় খানিকটা লজ্জা পেলো আনিতা। চুপ করে রইলো আনিতা। আনিতাকে চুপ থাকতে দেখে আহিয়ান বলে,

–“এখন কি আপনার সময় হবে আমার সাথে দেখা করার?”

–“কোথায় আছেন আপনি?”

–“ফাইয়াজদের বাসার পাশে যে আকাশি গাছের বাগান আছে ওখানেই।”

–“আসছি।”

ফোন রেখে দিলো আনিতা৷ সত্যিই আহিয়ানের সাথে আজকে তেমন ভাবে কথাই হয়নি। স্কার্ট আর টি-শার্ট পড়া ছিলো আনিতা। বিছানা থেকে উড়না তুলে গায়ে জড়িয়ে রুম থেকে বের হয়ে যায় আনিতা। চুলগুলো ভালো করে মোছা হয়নি। ফোঁটায় ফোঁটায় পানি পড়ছে।

ফাইয়াজদের পুরো বিল্ডিংও লাইটিং করা হয়েছে। সেজন্য বাগানটাও কিছুটা আলোকিত হয়ে আছে। আনিতা এদিক ওদিক তাকিয়ে কোথাও আহিয়ানকে দেখতে পেলো না। হঠাৎই আহিয়ান আনিতাকে পেছন দিকে ঘুরিয়ে একটা গাছের সাথে আটকে নেয়। গাছের সাথে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আনিতা। আর আনিতার ঠিক সামনেই আহিয়ান এক হাত আনিতার মাথার উপর গাছে রেখে অন্যহাত দিয়ে আনিতার কোমড় চেপে ধরেছে। মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে আনিতা। আর আহিয়ান অপলক ভাবে আনিতাকে দেখছে। সাজসজ্জার ছিটেফোঁটাও নেই এখন আনিতার মুখে। কিন্তু এতেই আনিতাকে যেন আগের থেকে আরো বেশি স্নিগ্ধ লাগছে। কিছুক্ষণ বাদে বাদে আনিতা কেঁপে কেঁপে উঠছে। এই প্রথম আহিয়ান আনিতার এতটা কাছে। আনিতার ভয়ও লাগছে আবার লজ্জাও লাগছে খুব।

–“এত রাতে শাওয়ার নিয়েছো কেন? তারউপর আবার শীতকাল অসুস্থ হয়ে যাবা না?”

–“স্ সরে দাঁড়ান প্লিজ।”

আনিতার কথা শুনে আহিয়ান হাসলো। সরে যাওয়ার বদলে আনিতার আরো কিছুটা কাছে গিয়ে বলে,

–“কেন? অস্বস্তি হচ্ছে?”

–“হ্ হ্যাঁ।”

–“কিন্তু আমি তো সরছি না। আগে তোমার লজ্জা ভাঙাই তারপর সরবো কেমন?”

–“ম্ মানে?”

–“মানে হলো___”

হঠাৎ করেই পেছন থেকে একটা কুকুর ডেকে উঠলো খুব জোরে। আনিতা ভয়ে পেয়ে দুহাতে আহিয়ানের শার্ট খামচে ধরে আহিয়ানের সাথে মিশে যায়। আহিয়ানও আর পুরো কথা বলতে পারলো না। মৃদু হেসে আহিয়ান আনিতাকে জড়িয়ে নেয় নিজের সাথে। কয়েক সেকেন্ড বাদে আহিয়ান বলে,

–“ভয় পেও না। এখানে কিছু নেই। আর আমি আছি তো। ভয় পাচ্ছো কেন?”

–“কুকুরটা___”

–“নেই।”

আনিতা আহিয়ানকে ছেড়ে খানিকটা দূরে সরে দাঁড়ালো। আহিয়ান এগোচ্ছে আর আনিতা পিছিয়ে যাচ্ছে। আনিতা পিছিয়ে যাওয়ার সময় কিছুতে বেজে পড়ে যেতে নিলেই আহিয়ান আনিতার বাহু ধরে টেনে একদম নিজের কাছে নিয়ে আসে। আচমকা এভাবে টানায় আনিতার মুখের উপর চুল এসে পড়ে। আহিয়ান একহাতে আনিতার বাহু ধরে রেখেই অন্যহাত দিয়ে আনিতার মুখের উপর উপচে পড়া চুলগুলো সরিয়ে দিতে লাগলো। কেমন অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে আনিতার মনের ভিতর। এভাবে আহিয়ানের এতটা কাছে চলে আসা। এভাবে স্পর্শ করা সবকিছু মিলিয়ে আনিতা লজ্জায় লাল নীল হচ্ছে। আহিয়ান আনিতার চুলগুলো কানের পিঠে গুজে দিতেই আনিতা চোখ বন্ধ করে নিলো। আহিয়ান তাকিয়ে দেখছে ওর পিচ্চি-পাখিকে৷ আচমকা কিছু একটা পড়ার শব্দে আনিতা চোখ খুলে তাকায়। আশেপাশে চোখ বুলিয়ে নিলো একবার। কাউকে দেখা যাচ্ছে না ঠিকই। তবে কয়েকজনের গলার আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। আহিয়ান বলে,

–“তুমি একটু দাঁড়াও আমি দেখছি এদিকটা কেউ আসছে কিনা?”

আনিতা মাথা নাড়ালো। আহিয়ান বাগান থেকে বের হয়ে এদিক ওদিক চোখ বুলালো কিন্তু কাউকে চোখে পড়লো না। আহিয়ান আবার আনিতার কাছে গিয়ে ওর হাত ধরে বলে,

–“চলো। এখন কেউ নেই। তবে যেকোনো মূহুর্তে যে কেউ চলে আসতে পারে।”

আহিয়ান আগে আগে হাঁটছে আর আনিতা আহিয়ানের পিছু পিছু হাঁটছে। ফাইয়াজ দের বাসায় উঠে আহিয়ান বলে,

–“তুমি বাসায় যাও। আমি চেঞ্জ করে আসছি।”

আনিতা সম্মতি জানিয়ে চলে গেলো ওখান থেকে। আহিয়ান ফাইয়াজের রুমের দিকে পা বাড়ালো। বিকেল থেকে পাঞ্জাবি পড়া। ডিসেম্বরের শেষ সময় শীতও পড়েছে ভালোই। গ্রামে শীতের প্রকোপ একটু বেশিই। আর পাঞ্জাবিটাও এখন খুলতে হবে তাই আহিয়ান চেঞ্জ করতে চলে গেলো।

চলবে ইনশাআল্লাহ~#শুধু_তোমারই_জন্য(২)
লেখনীতে- অরনিশা সাথী

|৮|

বরযাত্রী যাওয়ার জন্য বের হয়েছে সকলে। আনিতার আম্মু আর কাকিমা ওর চাচ্চুর সাথে গাড়িতে করে যাবে। সাথে ফাইয়াজের আব্বুও যাবে। আর বরের গাড়ির পেছনে বেশ কয়েকটা বাইক যাবে। আনিতার চাচ্চুর বন্ধুরা সকলে বাইকে করেই যাবে। ফাইয়াজের বন্ধুরাও বাইকে যাবে। তাসকিয়া রোদেলা আনিতা জেরিন আরোহী অনিমা ওরা সবাই ফাইয়াজ আর ওর বন্ধুদের সাথে বাইকে করে যাবে। আরোহী আর অনিমা শুভর সাথে যাবে। আর আরহানের সাথে আনিতার চাচ্চুর এক ফ্রেন্ড যাবে। জেরিনের জন্য ওয়েট করছিলো ওরা। জেরিন এসে রাতুলের বাইকের পিছনে বসতেই ওরা সকলে বাইক স্টার্ট দিলো। বরের গাড়ির পিছনে প্রায় পনেরো ষোলোটা বাইক যাচ্ছে৷ বরের গাড়ির সামনে একটা বাইকে ভিডিওম্যান বসে ভিডিও করছে।

খাওয়া-দাওয়ার পর আনিতা ওরা সকলে এক পাশে চেয়ার নিয়ে বসে আড্ডা দিচ্ছিলো। আনিতার হালকা হালকা পেটে ব্যাথা করতে শুরু করে। আনিতা উঠে যায় ওখান থেকে। কিছুক্ষণ পর ফিরে এসে অনিমার থেকে ব্যাগ নিয়ে এক সাইডে চলে যায়। ব্যাগের মধ্যে কিছু একটা খুঁজতে থাকে। না পেয়ে হতাশ হয়ে যায়। কাউকে কিছু বলতেও পারছে না। কি করবে এখন? ওর আম্মুকেও এখন আশেপাশে দেখতে পারছে না। ধীরে ধীরে পেটের ব্যাথাটাও বাড়ছে। পিরিয়ডের প্রথম দিন আনিতা প্রচন্ডরকমের পেটে ব্যাথা হয়। যা প্রায় সময় সহ্য ক্ষমতার বাইরে চলে যায়। আনিতা একপাশে একটা চেয়ার টেনে নিয়ে চুপচাপ বসে আছে। এভাবে থাকতে বেশ অস্বস্তি হচ্ছে ওর। দুহাতে পেট চেপে ধরে আছে। দাঁতে দাঁত চেপে ব্যাথা সহ্য করছে। দূর থেকে আহিয়ান লক্ষ্য করছিলো আনিতাকে। আহিয়ান উঠে এসে আনিতার পাশে বসে। আহিয়ানকে দেখে আনিতা সোজা হয়ে বসে। আহিয়ান আনিতাকে একবার দেখে বলে,

–“কিছু হয়েছে? তোমাকে এমন অস্বাভাবিক লাগছে কেন?”

–“ন্ না কিছু হয়নি। আ আমি ঠ্ ঠিক আছি।”

–“তোমার চোখমুখ দেখে ওরকম কিছু মনে হচ্ছে না। কোনো সমস্যা হলে বলো আমায়।”

–“না আসলে___”

–“তুমি এখানেই বসো। আমি আসছি।”

এই বলে আহিয়ান উঠে গেলো। আনিতাকে পেট চেপে ধরে রাখতে দেখেই আহিয়ান বুঝতে পেরেছে ওর পেটে ব্যাথা করছে। পিরিয়ডের বিষয়টাও আন্দাজ করতে পেরেছে ও। আহিয়ান আরোহীকে ডেকে বলল,

–“আনিতার মনে হয় পেটে ব্যাথা করছে। ওর কাছে গিয়ে একটু বসো। আমি আসছি।”

আরোহী চলে গেলো আনিতার কাছে। আহিয়ান বাইক নিয়ে একটা ফার্মেসীতে গিয়ে এক প্যাকেট স্যানিটারি ন্যাপকিন কিনে নিয়ে আসে। আনিতার দিকে আহিয়ান প্যাকেটটা এগিয়ে দেয়। আনিতা চোখ তুলে তাকায় আহিয়ানের দিকে। আহিয়ান প্যাকেটটা আনিতার হাতে দিয়ে বলে,

–“এতে লজ্জার কিছু নেই। লজ্জা পাচ্ছো কেন? এটা তো তোমাদের গর্বের বিষয়। মেয়েদের পিরিয়ড হয় বলেই মেয়েরা মা হতে পারে। আমাদের জন্ম হয়।”

আনিতা মৃদু হাসে। আহিয়ান কি সুন্দর ভাবে কথাগুলো বলল। আর কিছু কিছু ছেলেরা আছে যারা এগুলো নিয়ে হাসাহাসি করে। কিন্তু এসব বিষয় নিয়ে আদেও কি হাসাহাসির মতো কিছু আছে? নেই তো। এই পিরিয়ডের জন্যই তো একটা মেয়ে তার জীবনের সবচেয়ে বড় পাওয়া মা ডাকটা শুনতে পারে। তাহলে এতে এত লজ্জা কিসের? মুচকি হেসে আনিতা চলে যেতে নিলেই আহিয়ান বলে,

–“বাইরে ওয়েট করছি তাড়াতাড়ি এসো। বাসায় নিয়ে যাবো।”

আনিতা সম্মতি জানিয়ে চলে গেলো। কিছুক্ষণ বাদে আনিতা ওর আম্মুকে বলে আহিয়ানের সাথে বাসায় চলে আসে। সাথে রোদেলা আরোহী ওরাও চলে আসে। রাত সাড়ে সাতটা বাজে। বাইরে আনিতার দাদু নতুন বউ বরণ করে ঘরে তুলছে। আনিতা বাসায় ফিরে জামা পালটেই শুয়েছে। এখনো উঠেনি। ধীরে ধীরে ওর পেটের ব্যাথাটা শুধু বেড়েছেই। ঘুমিয়েছিলো একটু কিন্তু সেটাও বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি ব্যাথার জন্য। ব্যাথায় বিছানায় শুয়ে গড়াগড়ি খাচ্ছে। চোখ দিয়ে পানিও পড়ছে। আনিতার আম্মু এসে ঔষধ দিয়ে গিয়েছিলো। সেটা খাওয়ার পর এখন কিছুটা কমেছে। আনিতা ওঠে বাইরে বের হয়ে এলো। রোদেলা ওরা সবাই বসে আড্ডা দিচ্ছে৷ আনিতা গিয়ে ওদের পাশে বসতেই আহিয়ান প্রশ্ন করে,

–“পেটে ব্যাথা নিয়ে আবার এখানে এলে কেন? গিয়ে শুয়ে থাকো।”

–“কিছুটা কমেছে এখন সমস্যা নেই।”

–“কিন্তু__”

–“ঠিক আছি আমি এখন। শুধু শুধু এরকম করছেন কেন?”

সকলে মিলে বেশ কিছুটা সময় আড্ডা দিয়ে ভোরের দিকে শুতে যায়।

আনিতার চাচ্চুর বিয়ে শেষ হয়েছে দুদিন হলো। আহিয়ান ওরা কালকে চলে যাবে। ফাইয়াজ ওরা সকলে মিলে কোথাও একটা গিয়েছে। আনিতা আর আরোহী ছাদে দাঁড়িয়ে ছিলো। আনিতার ফোন বেজে উঠলো। আননোন নাম্বার থেকে ফোন এসেছে। আনিতা ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে বলল,

–“কেমন আছো?”

–“কে বলছেন?”

–“তুষার। ভালোবাসো না মানলাম তাই বলে এত তাড়াতাড়ি কন্ঠটাও ভুলে গেলে?”

–“আপনার সাথে আমি তেমন ভাবে ফোনে কথা বলেছি বলে তো আমার মনে হচ্ছে না।”

–“তুমি নাকি অনিককে ছাড়া কখনো কাউকে ভালোবাসবে না। অনিককে কখনো ভুলতে পারবে না। তাহলে এখন আহিয়ানের সাথে রিলেশনে গেলে কি করে? অনিককে ভুলে যেখানে আমাকে ভালোবাসতে পারলে না। সেখানে আহিয়ানকে ভালোবাসলে কি করে তুমি?”

তুষারের কথা শুনে আনিতা অবাক হলো বেশ। আহিয়ানের কথা ও কি করে জানলো? ওর তো জানার কথা না। এসব ভাবছিলো আনিতা। ওপাশ থেকে তুষার আবারো বলে,

–“তুমি একটা বেইমান। একটা স্বার্থপর তুমি। তোমার কখনো ভালো হবে না। সুখি হবা না তুমি।”

–“দেখুন ভালোবাসাটা বলে কয়ে আসে না। আমি তখন সত্যিই অনিককে ভুলতে পারিনি। আপনার প্রতি আমার ফিলিংস কাজ করেনি। ভালোবাসতে পারিনি আমি আপনাকে।”

–“তাহলে এখন আহিয়ানকে ভালোবাসলে কি করে? ওর প্রতি তোমার ফিলিংস কিভাবে কাজ করছে এখন?”

–“জানি না। শুধু জানি আহিয়ানের প্রতি আমার ফিলিংস আছে। মায়া কাজ করে উনার প্রতি আমার।”

–“আর অনিককে ভুলে গেলে তাই না? আহিয়ান এসেই তোমায় অনিককে ভুলিয়ে দিলো তাই তো?”

–“আগে অনিক ছিলো আমার লাইফে এখন নেই। এখন আমার লাইফে শুধু আহিয়ানই আছে। আর উনাকেই আমি ভালোবাসি। অনিককে ভুলে গেছি কিনা জানিনা তবে এখন আমি আহিয়ানকেই ভালোবাসি। আপনাকে আগেও বলছি এখনও বলছি সরি পারলে মাফ করে দিয়েন আমাকে। রাখছি।”

–“আমার মতো আবার দুদিন পর আহিয়ানকেও বলবে না তো যে আমি অনিককে ভালোবাসি ওকে ভুলতে পারছি না। আমার মতো করেই আবার আহিয়ানের সাথেও সব সম্পর্ক শেষ করে দিবে না তার কি নিশ্চয়তা? হয়তো বা আহিয়ানকেও ইউস করছো অনিককে ভুলার জ___”

আর শুনতে পারলো না আনিতা। বিরক্ত লাগছে ওর খুব তাই ফোন কেটে দিয়ে নাম্বার ব্লক করে দিলো। আনিতা লাউডস্পিকারে দিয়ে কথা বলছিলো তাই আরোহী সবটাই শুনতে পেয়েছে। পায়ের শব্দ পেয়ে আনিতা পেছনে ফিরতেই দেখে আহিয়ান চলে যাচ্ছে। ভয় হতে শুরু করলো আনিতার। আহিয়ান সবটা শুনে ফেলেনি তো? আহিয়ান যদি ভুল বুঝে আনিতাকে? আনিতা ছুটলো আহিয়ানের পিছনে। কিন্তু আহিয়ান ততক্ষণে নিচে নেমে বাইক নিয়ে বের হয়ে গেছে। আনিতা আহিয়ানকে ফোন করতে লাগলো কিন্তু আহিয়ান ফোন তুলছে না। এবার ওর প্রচন্ড রকম রাগ হচ্ছে নিজের প্রতি। যদি আগেই অনিকের ব্যাপারটা বলে দিতো তাহলে মনে হয় আজ এরকমটা হতো না।

বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা, সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত হতে চলল। এরপর আনিতা অনেকবার আহিয়ানকে ফোন করেছে কিন্তু প্রতিবারই আহিয়ান ফোন কেটে দিয়েছে। আনিতা তো সত্যিই আহিয়ানকে ভালোবেসে ফেলেছে। আহিয়ান যদি ওকে ভুল বুঝে ওর থেকে দূরে সরে যায় কি হবে তখন? কিভাবে থাকবে আহিয়ানকে ছাড়া ও? ভাবতে পারছে না আর আনিতা। তন্ময়কে ফোন লাগালো ও। কিছুক্ষণ বাদে তন্ময় ফোন রিসিভ করতেই আনিতা বলে,

–“ভাইয়া উনি কি তোমাদের সাথে আছেন?”

–“কে আহিয়ান?”

–“হ্যাঁ।”

–“হুম আমাদের সাথেই আছে। কেন বলো তো?”

–“উনি আমার ফোন কেটে দিচ্ছে বার বার। উনাকে একটু দাও তো।”

তন্ময় আহিয়ানের দিকে ফোন এগিয়ে দিলো। কিন্তু আহিয়ান ফোন নিলো না। জানালো ও আনিতার সাথে কথা বলতে চায় না। বেশ কয়েক বার তন্ময় ফাইয়াজ ওরা জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে আহিয়ান প্রতিবারই বলেছে কিছুই হয়নি পরে কথা বলে নিবে। ওরা বুঝতে পারলো দুজনের মাঝে কিছু একটা হয়েছে। তন্ময় ফোন কানে নিয়ে আনিতাকে জিজ্ঞেস করলো,

–“কি হয়েছে তোমাদের মাঝে বলো তো?”

আনিতা সবটা বলল তন্ময়কে। তন্ময় শুনে বলে,

–“আচ্ছা আমি দেখছি।”

–“নাহ তোমার কিছু বলতে হবে না। আমিই বুঝিয়ে বলবো সবটা।”

–“আচ্ছা।”

–“কোথায় আছো তোমরা? বাসায় ফিরবে কখন?”

–“নদীর ধারে চায়ের দোকানে আছি। কিছুক্ষণের মাঝেই ফিরবো।”

–“আচ্ছা। রাখছি তাহলে।”

এই বলে আনিতা ফোন কেটে দিলো। তন্ময় ওরাও আর আহিয়ানকে ঘাটায়নি বেশি। এরপরও আনিতা বেশ কয়েকবার আহিয়ানের সাথে কথা বলার চেষ্টা করেছে। কিন্তু আহিয়ান বলেনি। রাত সাড়ে এগারোটার মতো বাজে। তন্ময় কিছুক্ষণ আগে ম্যাসেজ করে জানিয়েছে আহিয়ান এখন ছাদে আছে একা। আনিতা বিছানা ছেড়ে উঠে গায়ে শাল জড়িয়ে ছাদের দিকে পা বাড়ালো। ওদের ছাদ থেকে অনায়াসে ফাইয়াজদের ছাদে যাওয়া যায়। আনিতা ফাইয়াজদের ছাদে গিয়ে দেখলো আহিয়ান রেলিং ঘেঁষে দাঁড়িয়ে সিগারেটের ধোঁয়া উড়াচ্ছে। আনিতার রাগ হলো বেশ। স্মোক করা আনিতার একদম পছন্দ না। আনিতা আহিয়ানের পাশে গিয়ে ওর হাত থেকে সিগারেটটা ছোঁ মেরে নিয়ে মাটিতে ফেলে দিলো। আহিয়ান আনিতার দিকে ঘুরে বলে,

–“এত রাতে তুমি ছাদে কি করছো?”

–“তার উত্তর আমি পরে দিচ্ছি আগে বলুন আপনি স্মোক করছিলেন কেন?”

–“ইচ্ছে করছিলো তাই।”

–“আপনি আমাকে প্রমিস করেছিলেন কখনো স্মোক করবেন না।”

–“নিচে যাও। কেউ দেখে ফেললে সমস্যা হবে।”

–“দেখুক। আগে আপনি বলুন বিকেলের পর থেকে আপনি আমাকে এড়িয়ে চলছেন কেন? আমার ফোন তুলছেন না আমার সাথে কথা বলতে চাইছেন না। এরকম করার মানে কি? কেন করছেন এরকম বলুন”

আহিয়ান শান্ত দৃষ্টিতে তাকালো আনিতার দিকে। আনিতা উত্তরের আশায় আহিয়ানের দিকেই তাকানো। আহিয়ান মৃদু হেসে বলে,

–“আচ্ছা আমি তো তোমাকে অনেক বার জিজ্ঞেস করেছি তুমি কাউকে ভালোবাসো কিনা? তুমি প্রতিবারই আমাকে না বলেছো কেন? কেন মিথ্যে বলেছো? আমাকে যদি সত্যিটা বলতে তখন কি আমি তোমায় ভালোবাসতাম না? এখন আমার অন্যের থেকে কেন শুনতে হয় তুমি অন্যকাউকে ভালোবাসতে? তুমি নিজে আমাকে কেন বললে না?”

–“আমার লাইফে কেউ একজন ছিলো। সে আমার অতীত। আমি চাইনি অতীতটা আমার বর্তমানে প্রভাব ফেলুক। অতীতটাকে পিছনে ফেলে আমি সামনে এগিয়ে যেতে চেয়েছি। আমি চাইনি আমার অতীতের কথা মনে করতে। বরাবরই আমি ভুলতে চেয়েছি আমার অতীতটাকে। আর আমি পেরেছি ভুলতে৷ শুধুমাত্র আপনার ভালোবাসার কারনেই আমি আমার অতীতটাকে ভুলতে পেরেছি। যে মানুষটা আমাকে নির্মম ভাবে ঠকিয়েছিলো আমি তার নামটাও মনে রাখতে চাইনি। কিন্তু বিশ্বাস করুন আমি ভালোবাসি আপনাকে। আমি সত্যিই আপনাকে ভালোবেসে ফেলেছি। তাই আমি চেয়েছি আমার অতীত আপনার সামনে না আসুক। আমি চাইনি আপনি এটা ভেবে কষ্ট পান যে আপনার আগেও আমার লাইফে কেউ একজন ছিলো যাকে আমি আমার সবটা দিয়ে ভালোবাসতাম। যাকে পাওয়ার জন্য আমি পাগলামি করতাম। আমি চাইনি এসব কিছু জেনে আপনি কষ্ট পান।”

–“তুমি খুব ভালো করেই জানো আনি___আমি মিথ্যে বলাটা একদম পছন্দ করিনা। তারপরও তুমি আমাকে মিথ্যে বলেছো।”

–“আই এম সরি প্লিজ। এই যে দেখুন কানে ধরছি। আর কক্ষনো কিচ্ছু লুকাবো না আপনার থেকে। তবে হ্যাঁ আমি কিন্তু সত্যিই ভালোবাসি আপনাকে। আপনি প্লিজ আমাকে ছেড়ে যাবেন না।”

কথাগুলো বলে আনিতা নিজে থেকেই আহিয়ানকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলো। এই প্রথম আনিতা আহিয়ানকে নিজে থেকে জড়িয়ে ধরেছে। আহিয়ান আগলে নেয় আনিতাকে। আনিতাকে জড়িয়ে নিয়েই আহিয়ান বলে,

–“যাবো না তো। তোমাকে ছেড়ে কোত্থাও যাচ্ছি না আমি। তুমি আমাকে না চাইলেও তোমার আমার সাথেই থাকতে হবে। যেভাবেই হোক তোমাকে আমার সারাজীবনের জন্য চাই। তুমি যাতে আমার থেকে হারাতে না পারো তার ব্যাবস্থা আমি খুব শীঘ্রই করছি।”

আনিতা আহিয়ানকে ছেড়ে দিয়ে দূরে সরে দাঁড়ালো। তারপর আহিয়ানের দিকে চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে বলে,

–“কি করবেন আপনি?”

–“সেটা কালকেই দেখতে পারবে।”

–“নাহ আপনি এখনই বলুন।”

–“সারপ্রাইজ হিসেবে থেকে যাক।”

–“এই না প্লিজ।”

আহিয়ান কিছু না বলে আনিতাকে নিজের কাছে টেনে নিলো। আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে নিলো আনিতাকে নিজের সাথে। আনিতাও চুপটি করে আহিয়ানের বুকে মাথা রেখে ওর হার্টবিট শুনছে।

চলবে ইনশাআল্লাহ~

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here