শূন্য থেকে আসে প্রেম পর্ব ২১+২২

#শূন্য_থেকে_আসে_প্রেম
#পর্ব – ২১
#আভা_ইসলাম_রাত্রি

সৌরভ কোনোমতে নিজেকে সামলে রুমে আসে। বিছানায় ক্লান্ত গা টা এলিয়ে দিয়ে সিলিংয়ের দিকে তাকিয়ে থাকে। কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না। খুব অস্থির অস্থির লাগছে তার। আজ সে নিজের বাবার কাছে , মা কাছে সবশেষে নিজের স্ত্রীর সাথে খারাপ ব্যাবহার করেছে। এখন তো ওর নিজের প্রতি নিজেরই ঘৃনা লাগছে। এসব ভেবেই সৌরভের চোখের কোণা থেকে জল গড়িয়ে বালিশে পড়লো। সৌরভ ভাবছে আর ভাবছে কিন্তু এই ভাবনার কোনো শেষ পথটা খুঁজে পাচ্ছে না। বারবার এই কথাতেই এস আটকে যায় ও খুব খুব বড় ভুল করেছে ও। যার কখনো কোনো ক্ষমা হয়না। হটাৎ রুমে সৌরভের মা আসলেন। বিছানার উপর ছেলেকে বিদ্ধস্থ রূপে শুয়ে থাকতে দেখে মার মনটা মোচড় দিয়ে উঠলো। ধীর পায়ে সৌরভের পাশে বসে তার মাথায় হাত বুলালেন । সাথে সাথে সৌরভ তার মায়ের কোলে মাথা রেখে মার কোমর জড়িয়ে ধরে নিশব্দ চোখের জল ফেলে দেয়। সৌরভের মা তার চুলে হাত বুলিয়ে বললেন,

” ঈপ্সিতা কই সৌরভ ? বাসায় দেখলাম না। ”

সৌরভ মার কোমরটা আরো শক্ত করে ধরে কান্নাভেজা গলায় বলে,

” মা আমার অনেক বড় ভুল হয়ে গেছে মা। অনেক বড় ভুল। এখন আমি এই ভুলের কোনো মাসুল দিতে পারছিনা। আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে মা। অনেক কষ্ট। এতটা কষ্ট যতটা হলে নিজেকে নিকৃষ্ট মনে হতে পারে। ততটা। জানো মা ঈপ্সিতা সবসময় বলতো আমি নাকি নিকৃষ্ট পুরুষ। আজ আমার কাছে মনে হচ্ছে তার মুখে নিকৃষ্ট ডাক টা শুনার জন্যে হলেও তাকে আমার চাই। একেবারে নিজের করে চাই। ”

সৌরভের মা অনেক অবাক হয়ে বললো,

” তোকে নিকৃষ্ট বলতো মানে ? কি করেছিস তুই ওর সাথে ? নিজের স্বামীকে নিকৃষ্ট বলার মত মেয়ে ও নয়। তাহলে ? ”

সৌরভের চোখ দিয়ে নোনা জল প্রবাহিত হতে লাগলো। কান্না আটকানোর চেষ্টা করে বলে,

” আমি ওকে ব্লেকমেইল করেছিলাম যে যদি ও আমাকে বিয়ে না করে তাহলে ওর ফ্যামিলিকে পথে বসাবো আমি। ওর ফ্যামিলিকে এমন ভাবে দুর্নাম করবো যাতে লোকসমাজে আর মুখ দেখাতে না পারে। এর ফলে ওর বাবা হার্টঅ্যাটাক করবে। আর ওর মা তার শোকে ধুকে ধুকে মরবে। আর ও নিজের ফ্যামিলির কথা ভেবে রাজি হয়ে যায়। আর আমি যা বলি ও তাই করে। আমার হাতের পুতুল হয়ে। মা আমি এটা কি করলাম। নিজের হাতেই নিজের ভাগ্যকে নষ্ট করলাম। মা এর কোনো ক্ষমা হয় না। কোনো ক্ষমা হয়না। ”

সৌরভের মা এসব শুনে আঁতকে উঠলেন। তার অতি শান্ত ভদ্র ছেলে যে এতটা নিচে নামতে পারে তা তার বিশ্বাসের বাইরে একদম। সৌরভের মা ঘৃনামিশ্রিত গলায় বলেন,

” তুমি এতটা নিচে নামতে পারো তা আমি ভাবতেই পারছিনা সৌরভ। এই শিক্ষা দিয়েছিলাম তোমাকে আমরা। বলো ? ”

সৌরভ মার দিকে তাকিয়ে করুন গলায় বলে,

” মা প্লিজ তুমি অন্তত আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিও না। আমি একা হয়ে যাবো মা। মরে যাবো আমি। পারবনা আর। নিজেকে অনেক নষ্ট মনে হচ্ছে। প্লিজ মা তুমি অন্তত ক্ষমা করো আমায়। ”

সৌরভের মা ঘৃণায় উঠে যেতে নিলে সৌরভ মার কোমরটা জড়িয়ে ধরে বলে,

” প্লিজ মা। প্লিজ। আমি মরে যাবো মা। নিসঙ্গতায় আমি তিলে তিলে শেষ হয়ে যাবো মা। প্লিজ উঠে যেও না। ”

সৌরভের মা কিছু না বলে আবার বসে পড়লেন। বলেন,

” এখন আমি ইপ্সিতার মা বাবার কাছে কি জবাব দিব। আমার তো এটা ভেবেই মাথা ঘুরাচ্ছে। তুমি তো ওকে বিদেয় করে দিয়েই খালাস। কিন্তু এবার যে আমাদের ওর বাবার বাড়িতে জবাব দিতে হবে তা সম্পর্কে তোমার কোনো ধারণা আছে ? ”

সৌরভ মার কোল ছেড়ে নিজের মাথা বালিশে রাখে। সিলিংয়ের দিকে তাকিয়ে বলে,

” আমি ফিরিয়ে আনবো ঈপ্সিতা কে। একদিনেই আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে। বাকি দিনগুলো আমি সে_ হিনা থাকতে পারবো না। আমি যাবো ওর কাছে আবার। আবার আমার মনের কোঠায় বন্দী করবো তাকে। ”

সৌরভের মা বসা থেকে উঠে দাড়ালেন। কড়া গলায় বললেন,

” হ্যা সেটাই তোমার জন্যে ভালো হবে। ওকে প্রথমে ফিরিয়ে আনো। তারপর নাহয় আমাদের ক্ষমার কথা ভাববে। ”

বলেই উনি রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন। সৌরভ ভাবছে কি থেকে কি করবে। কিন্তু মাথায় কোনো আইডিয়া আসছে না তার। হটাৎ তার মনে হলো ঈপ্সিতা এখন কোথায় সেটাইতো জানা হলো না। নিশ্চই নিজের বাসায় হবে। সৌরভ তারাতারি করে ঈপ্সিতার মায়ের ফোন কল দেয়। উনি কল রিসিভ করলে সৌরভ ব্যাস্ত গলায় বলে,

” আন্টি ঈপ্সিতা কোথায় ? আপনাদের বাসায় ? ”

মরিয়ম অনেক অবাক হয়ে বলে,

” বিকেলের দিকে তো ঈপ্সিতাকে নাকি কি কাজের জন্যে তুমি নিয়ে গিয়েছিলে ইনায়া বললো। তোমাদের বাসায়ই তো ও। নেই ? ”

সৌরভ ভাবছে ঈপ্সিতা নিজের বাসায় না গিয়ে কোথায় গিয়েছে ? ওপাশ থেকে মরিয়ম বললেন,

” কি হলো সৌরভ পেয়েছো ওকে ? ”

মরিয়মের ডাকে ধ্যান ভাঙ্গে সৌরভের। তারাতারি করে বলে,

” হ্যা হ্যা আন্টি। পেয়েছি। আপনি কোনো চিন্তা করবেন না। ”

ওপাশ থেকে মরিয়ম সস্থির নিশ্বাস ফেললো। বলেন,

” তাহলে রাখি। ”

“হুম। আসসালামুয়ালাইকুম আন্টি। ”

হটাৎ সৌরভের কি মনে হওয়ায় তারাতারি করে বলে,

” ওয়েট আন্টি। ফোন কাটবেন না। একটা কথা বলার ছিল। ”

মরিয়ম ফোনটা আবার কানে লাগিয়ে বলে,

” হুমম বলো বাবা। ”

সৌরভ মিহি গলায় বলে,

” I’m sorry আন্টি। ”

মরিয়ম খানিকটা অবাক হয়ে বললেন,

” সরি কিসের জন্যে ? ”

” আছে কিছু , আপনার অজান্তে। আবার বলছি সরি। ”

মরিয়ম ভাবলো ছেলেটার কি হয়েছে। হটাৎ সরি বলছে কেনো ? তবুও ভদ্রতার খাতিরে বলে,

” ঠিক আছে। বিষয়টা আমার অজান্তে হলেও আমি তোমাকে ক্ষমা করলাম। ভালো থেকো। ”

সৌরভ ফোনটা কান থেকে নামায়। ঈপ্সিতা নিজের বাসায় নেই তাহলে কোথায় আছে ? সৌরভের এখন পুরো পাগলপ্রায় অবস্থা। ও সাথে সাথে ইনায়া কে ফোন দেয়। ইনায়া ফোন রিসিভ করলে ব্যাস্ত গলায় বলে উঠে,

” ইনায়া , ইপ্সিতা কি তোমার বাসায় ? ”

ইনায়া খানিকটা অবাক হয়। বলে,

” নাতো কেনো ? তুমিইতো ওকে নিয়ে গেলে পার্টি থেকে। কেনো তোমাদের বাসায় নেই ? ”

সৌরভ কিছু না বলে ফোনটা কেটে দেয়। অস্থির লাগছে তার। কোথায় গেলো ও এই রাতবিরাতে। কোনো যদি বিপদ হয় তাহলে ও নিজেকে কক্ষনো ক্ষমা করতে পারবে না। কখনোই না। সৌরভ বিছানা থেকে উঠে জলদি নিজের মায়ের রুমে যায়। সৌরভের মা তার বাবার সাথে কি নিয়ে কথা বলছেন। সৌরভ সোজা তার মায়ের কাছে গিয়ে হাতটা ঝাপটে ধরে বলে,

” মা ঈপ্সিতা কোথাও নেই। এমনকি নিজের বাড়িতেও যায়নি ও। ইনায়ার বাড়িতেও নেই। আমি এখন ওকে কোথায় খুঁজব মা। আমার খুব অস্থির লাগছে। খুব করে মনে চাইছে ঈপ্সিতা কে। ”

সুরভী পাশে দাড়িয়ে ছিলো। সৌরভ এর কাছে এসে বলে,

“এটা তুমি কি করলে ভাইয়া। আমি তো ভাবতেই পারছিনা তুমি এমন করেছো। ”

সৌরভ কিছু না বলে শুধুই নিজের বোনের দিকে তাকায়। সৌরভের বাবা অতি শান্ত গলায় বলেন,

” আজ ঘুমাতে যাও। কাল সকালে ওর বন্ধু বান্ধবের বাসায় গিয়ে চেক করবে। এখন যাও ঘুমাও গিয়ে। ”

সৌরভ কিছু না বলে রুমে এস যায়। কিন্তু তার চোখে যে ঘুম ধরা দেয় না। একেবারেই না।

১০ দিন পর …..

আজ আমার IELTS ক্লাসের প্রথম দিন। এখন থেকেই শুরু হবে আমার স্বপ্ন যাত্রা। জীবনের যত গ্লানি আছে আর সৌরভ নামক অভিশাপ আছে আমি তা মুছে দিব একেবারে। আমি IELTS ক্লাসের জন্যে হোস্টেল থেকে বেরিয়ে গেছি। ক্লাস শেষ হলে আবার পার্ট টাইম জবের জন্যে যেতে হবে।

আজ সৌরভ ঈপ্সিতার খুঝেই ঘর থেকে বেরিয়েছে। এখনের সৌরভ আর আগের সৌরভের মধ্যে অনেক তফাৎ। আগের সেই মাধুর্যতা নেই ওর মুখে। চুলগুলো যেনো অযত্ন বেড়ে উঠছে। হটাৎ বাইক থেকে একটা ম্যে উপর নজর যায় সৌরভের। খুব চেনা লাগছে ওর কাছে মেয়েটাকে। কিন্তু দুর থেকে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে না। হটাত মেয়েটা kononarine পিছন ফিরলে সৌরভ মেয়েটার মুখ দেখে সেইখানেই থমকে যায়। হার্টবিট অসম্ভব ভাবে বেড়ে চলেছে তার। মেয়েটা আর কেউ না ইপ্সিতা। সৌরভ তরিগরি করে ঈপ্সিতার পিছন পিছন বাইক নিয়ে যায়। ঈপ্সিতা কে একটা বিল্ডিংয়ে ঢুকতে দেখে। সৌরভও বাইক থেকে নেমে তার পিছন পিছন যায়। পিছন থেকে জোড়ে ডাক দেয়,

” ঈপ্সিতা ?????? ”

আমি যেই ক্লাসে ঢুকতে যাবো তখনই কারো ডাকে আমি পিছন ফিরে তাকাই। কিন্তু কে জানত এই পিছন ফিরে তাকানো আমার জন্যে কাল হবে। চোখের সামনে সৌরভ ভাইয়াকে দেখে আমার বুকটা ভারী ভারী লাগছে। না চাইতেই চোখ দিয়ে জল পড়তে আরম্ভ হলো। কিন্তু উনার এই অবস্থা কেনো ? এরকম উসকোখুসকো লাগছে কেনো তাকে ? না না আমি উনার সামনে নিজেকে দূর্বল প্রমাণ করতে পারবোনা। একদমই না। তাই আবার সামনে ফিরে ক্লাসে ঢুকতে যাবো ঠিক তখনই কেউ আমার হাত ঝাপটে ধরে। আমি জানি এই হাতের মালিক কে। কিন্তু আমি শক্ত হয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে আছি। হাত ছাড়ানোর জন্যে জোরাজোরি করছি। আমি তো এটাই ভেবে পাচ্ছিনা উনি আবার আমার কাছে কি চাইতে এসেছেন। হটাৎ সৌরভ ঈপ্সিতার হাতটা ধরে নরম গলায় বলে,

” ইপশিপাখী….”

উনার মুখে এই প্রথম আদর মাখা ডাক শুনে আমার শরীরে ঝঙ্কার দিয়ে উঠলো। চোখ থেকে কেনো যেনো অবাধ্য জল গুলা ঝরতে লাগলো। সৌরভ আবার বলে,

” আমার দিকে তাকাবে না। শুধু একবার। একবার আমার দিকে তাকাও। সব মন অভিমান দুর করে দিবো। কথা দিচ্ছি। ”
#শূন্য_থেকে_আসে_প্রেম
#পর্ব – ২২
#আভা_ইসলাম_রাত্রি

” আমার দিকে তাকাবে না। শুধু একবার। একবার আমার দিকে তাকাও। সব মন অভিমান দুর করে দিবো। কথা দিচ্ছি। ”

আমার উনার এসব কথা শুনে রীতিমত রাগ লাগছে। কিসের এত দরদ উনার ? আমি পিছন ফিরে উনার দিকে তাকাই। কড়া গলায় বলি,

” মান- অভিমান ? কিন্তু আমিতো আপনার উপর কোনো মান বা অভিমান করিনি। আমি আপনাকে ঘৃনা করি । শুধুই এবং শুধুই ঘৃনা। এই ঘৃনা তো মান অভিমানের মধ্যে পড়েনা। ”

উনি আমার কথা শুনে খানিকক্ষণ করুন দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকান। আমি ঘৃণায় মুখ ফিরিয়ে অন্য দিকে তাকাই। উনি আমার হাত টা আরো শক্ত করে চেপে ধরে বলেন,

” প্লিজ এসব বলো না। আমি এই পাপের বোঝা আর নিতে পারছিনা। মাফ করে দাও। প্লিজ। আমি কথা দিচ্ছি এরপর থেকে আর কোনো কষ্ট দিবনা তোমাকে। প্রমিজ। ”

আমি হাসলাম। পরক্ষণ চোখ মুখ শক্ত করে বললাম,

” পাপ ? আপনাকে তো এই পাপের বোঝা অবশ্যই বইতে হবে। আর একটা কথা আপনি তো আমার মায়ের নামে কত বড় বড় কথা বলছেন। এখন সব শেষ ? বুঝে গেছেন বোধহয় এতদিন একটা মরীচিকা ছিলেন ? কিন্তু মিস্টার চৌধুরী আমি অপারগ। আপনাকে ক্ষমা করার কথা আমি একবার চিন্তাও করতে পারিনা। তাই আপনি আমাকে ক্ষমা করুন। ”

বলেই আমি নিজের হাতটা উনার থেকে ছাড়িয়ে নিতে চাইলে উনি আর শক্ত করে আমার হাত চেপে ধরেন। আমি রাগে চিৎকার করে বলি,

” আমার হাত ছাড়ুন বলছি। কোন অধিকারে আপনি আমার হাত ধরেন বলেন। ”

হটাৎ উনি আমার মুখটা চেপে ধরে মিহি গলায় বলেন,

” আস্তে , আস্তে। ক্লাস চলছে তুমি কি চাও সবাই তোমার আর আমার ব্যাপারটা জেনে যাক। ”

আমি মাথা নেড়ে না বললে উনি আমার মুখ থেকে হাত সরিয়ে দেন। উনি বলেন,

” আজ ক্লাস করার দরকার নেই। আমার সাথে এক জায়গায় যাবে চলো। ”

আমি এতে আরো রেগে যাই। বলি,

” মামা বাড়ির আবদার। আপনি ভাবলেন কি করে আমি আপনার সাথে যাবো ? আপনার সাথে কথা বলতেও আমার রুচিতে বাধে। আপনি এখনই এখান থেকে চলে যাবেন। ”

আমার কথা শেষ হতে না হতেই উনি আমার হাতটা ধরে টেনে নিয়ে যেতে যেতে বলেন,

” আমি তোমার কাছে পারমিশন চাইনি। শুধু আমার ডিসিশন টা জানিয়েছে। আর এখন তুমি চিৎকার করলেও লোকে তোমাকে বকবে। আফটার অল স্বামী বলে কথা। ”

বলেই উনি হাসলেন। এই মুহূর্তে এই লোকটার হাসি অসম্ভব সুন্দর হলেও আমার এই হাসি দেখে রাগে পিত্তি জ্বলে যাচ্ছে। আমি হাতটা টা ছাড়ানোর জন্যে জোরাজোরি করছি। কিন্তু এই স্বাস্থবান লোকটার থেকে ছাড়া পাওয়া কি এতই সহজ। উনি আমাকে কাছে থাকা একটা নদীর পাড়ে নিয়ে গেলেন। নদীর পাড় গেসে বসে আমাকেও জোড় করে বসিয়ে দিলেন। আমি রীতিমতো রাগে কটকট দৃষ্টিতে উনার দিকে তাঁকিয়ে আছি। কিন্তু উনি এসবের তোয়াক্কা না করে সামনের দিকে তাকিয়ে বলেন,

” পরিবেশটা সুন্দর না ?? কোনো ভেজাল আছে ? ”

আমি উনার টিটকারী শুনে হালকা হাসি পেলেও হাসলাম না। উনি আবার বলেন,

” হাসি পেলে হাসতে পারো। কোনো টেক্স দিতে হবে না হাসার জন্যে। ”

এখন আমার প্রচন্ড হাসি পাচ্ছে। কিন্তু হাসছি না। মুখে রাগের লালিমা বজায় রাখার চেষ্টা করছি। উনি এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন,

” আমি তোমার মুখের হাসিটাও কেড়ে নিয়েছে তাইনা ? ”

আমি একটু অবাক হলাম উনার কথায়। লোকটা কি আসলেই অনুতপ্ত ? যায় হোক যতই অনুতপ্ত হোক না কেনো , উনি উনার ভাগের শাস্তি ঠিকই পাবেন। আমি থমথমে মুখ নিয়ে বলি,

“হ্যা একদম ঠিক। আপনি আমার জীবন পুরো ধ্বংস করে দিয়েছেন। আর কোনো প্রশ্ন আছে ? ”

উনি এবার আমার দিকে ফিরে তাকালেন। করুন গলায় বলেন,

” কি করলে এই দোষের ক্ষমা পাওয়া যায় বলবে ? আমি সব করতে রাজি আছি। কিন্তু তাও প্লিজ আমাকে ছেড়ে যেও না। আমি সত্যিই তোমাকে অনেক ভালো…”

বলেই মুখ ফিরিয়ে নিলেন। আমি অবাক হয়ে বলি,

” ভালো , কি ? ”

” না কিছু না। সময় এলেই না হয় বলবো। এখন না। ”

আমি আর প্রশ্ন করলাম না। কেনো যেনো এই লোকটা সম্পর্কে কোনো কিছু জানতে ইচ্ছে করে না। আমি বলি,

” আমার ক্লাস মিস হয়ে গেছে শুধু আপনার জন্যে। এখন আমার ক্লাসের জন্যে এক্সট্রা পড়তে হবে। উফ। ”

উনি হটাৎ আমার দিকে ফিরে তাকান। চোখে মুখে প্রশ্ন নিয়ে বলেন,

” এই , তুমি IELTS কোর্স কেনো করছো ? ”

আমি একটু ভরকে গেলাম উনার কথায়। তারপরও বলি,

” আপাদত ইচ্ছে ইউকে যাওয়ার। বাকিটা আল্লাহর ইচ্ছে। ”

উনি মনে হয় আমার কথায় ৮৮০ ভোল্টেজের ঝটকা খেলেন। রাগে রীতিমতো উনার ঠোঁট কাপছে। এবার তো আমি উনাকে ভয় পাচ্ছি। উনি হটাৎ শক্ত করে আমার বাহু ধরে ঝাকাতে ঝাকাতে চিৎকার করে বলেন,

” সিরিয়াসলি তুমি এই ডিসিশন নিয়েছো ? I can’t believe this… কোন সাহসে তুমি এই ডিসিশন নিয়েছো ? Tell me Damm it….”

আমি উনার রাগী রূপ দেখে ভয় পেলেও নিজের মেকি রাগ নিয়ে বলি,

” হুম তো ?? আমার লাইফ আমার ইচ্ছে । আপনি নাক গলাবেন কেনো ? আপনার কোনো অধিকার নেই আমার উপর । ”

আমার কথা শুনে উনি আমাকে ছেড়ে দেন। জোড়ে জোড়ে কপালে নিজের আঙ্গুল ঘষছেন। মনে হয় রাগ নিয়ন্ত্রনের চেষ্টা চলছে। আমি আমার জায়গায় জড়সড় হয়ে বসে আছি। কোনো সময় কি করে ফেলে এই নিয়ে অনেক ভয়ে আছি আমি । হটাৎ উনি আমার চুলের পিছনে নিজের হাত ঢুকিয়ে চুলগুলোকে মুষ্টিবদ্ধ করে নিলেন। আমার মুখটা নিজের মুখে সামনে এনে আমার ঠোটে ঠোট মিলিয়ে দিলেন। আমি তো উনার এই এহেন কাজে রীতিমত ঝটকা খেলাম। পরক্ষণে নিজেকে ছাড়ানোর জন্যে মুচড়ামোচড়ি করতে শুরু করেছি। কিন্তু উনার এই জিম ওয়ালা বডির সাথে পেরে উঠছি না। কিছুসময় পর উনি নিজে আমার থেকে সরে আসলেন। আমি মাথা নিচু করে হাপাচ্ছি। উনি একদৃষ্টিতে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছেন। আমি নিজেকে সামলে উনার দিকে চোখ পাকিয়ে বলি,

” আ..আপনার স..সাহস কি করে হয় আমাকে ক..কিস করার ? জানেন আপনার এই স্পর্শ আমার ঘৃনা লাগছে। মনে অনবরত জ্বলছে। আ.. আপনি কি করে ….. ”

বলেই আমি ডুকরে কেদে দিলাম। আমার কান্না দেখে উনি আমার মাথা নিজের বুকের কাছে চেপে ধরেন। আমি সরে আসতে চাইলে উনি আমাকে শক্ত করে চেপে ধরে আমার কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বললেন,

” আর যদি কখনো “”অধিকার নেই”” কথাটা উচ্চারণ করেছো তবে আরো ভয়ানক শাস্তির জন্যে নিজেকে প্রস্তুত করে নিও। আর তোমাকে স্পর্শ করার অধিকার শুধুই আমার। তাই ঘৃনা লাগলেও সহে নাও। এখন ঘৃনা লাগছে কিছুদিন পর এই স্পর্শই অদ্ভুদ ভালোলাগার অনুভতির জানান দিবে। ”

আমি উনার শার্টের কলার খামচে ধরলাম। উনার এই ফিসফিস আওয়াজ আমার মন যেনো কাটা দিয়ে উঠছে। হটাৎ উনার করা আচরণ মনে হওয়ায় আমি ঝট করে উনার থেকে সরে আসি। উনি আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছেন। এতে আমি হালকা অসস্তি নিয়ে মাথা নিচু করে বলি,

” কি হয়েছে ? এভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো ? ”

উনি আমার দিকে তাকিয়ে গাল ভরা চমৎকার হাসি দিয়ে বলেন,

” না কিছু না। বাসায় যাবে না ? নাকি আজ আমার কাছে থেকে যাওয়ার মত ? ”

আমি আর কিছু না বলে ব্যাগ টা কাধে নিয়ে উঠে দাড়ালাম। উনাকে পিছন ফেলে বাসার দিকে হাঁটা ধরলাম। একটু পর উনিও আমার পাশে আমার সাথে পা মিলিয়ে হাঁটতে লাগলেন। কিছুদুর যাওয়ার পর আমি একটা রিকশা ভাড়া করে সেটাতে চড়ে বসি । তারপর উনার দিকে ফিরে তাকিয়ে বলি,

” খুব জলদি আপনার হাতে ডিভোর্স পেপার চলে যাবে। তাই এখন থেকেই দূরে দূরে থাকুন। নাহলে অনেক পুড়তে হবে। আর সেটা হয়তো আপনার সহ্য হবে না। তাই দূরে থাকাই মঙ্গল। ”

তারপরও মুখ ফিরিয়ে রিকশার ড্রাইভারের দিকে তাকিয়ে বলি,

” এই মামা চলেন। ”

সৌরভ ঈপ্সিতার যাওয়ার পানে মলিন দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। ঈপ্সিতার সেই কঠিন বাক্যের উত্তরে সে কিছুই বলতে পারেনি তা নিয়ে অনেক আফসোস হচ্ছে তার। কিন্তু কোনো ব্যাপার না। নেক্সট টাইম ভালো করে বুঝিয়ে দিবে সৌরভের কাছ থেকে দূরে থাকার ফল। সৌরভ ইপ্সিতা কে ভালোবাসার চাদরে মুড়িয়ে নিতে বাধ্য করবে।

চলবে…

[ একপার্ট পরেই আপনারা কতকিছু আন্দাজ করা শুরু করে দিয়েছেন। সৌরভ তার শাস্তি পাবে। কিন্তু তার জন্যে ত অপেক্ষা করতে হবে। সৌরভের শাস্তি এখন থেকেই শুরু হয়ে গেছে। ]
চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here