শূন্য থেকে আসে প্রেম পর্ব ২৯+৩০

#শূন্য_থেকে_আসে_প্রেম
#পর্ব – ২৯
#আভা_ইসলাম_রাত্রি

উনার মুখে তোমার সতীন শুনে আমি খানিকটা বিষম খেলাম। আমি নিশ্চিত যে উনি মজা করছেন। তাও এই শব্দ টা না বললেও হতো। আমি চোখ পালিয়ে বলি

” সিরিয়াসলি , আপনি বললেন আর আমিও বিশ্বাস করলাম। আমাকে কি বাচ্চা মনে হয় ?? হুমম ?? ”

উনি হাতে রাখা পারফিউম জায়গায় রেখে আমার দিয়েই ফিরে তাকান। বলেন,

” কেনো তুমি কি নিজেকে বুড়ি মনে করো ?? ”

” না আমি কেনো মনে করবো। । উফফ। আপনি এত কথা পেচান কেনো?? হুমম ? ”

উনি ভাবলেশহীন ভাবে বলেন,

” কারণ তোমার কথাগুলোই এমন হয়। ”

আমি এই কথার উত্তরে আর কিছু বললাম না। উনি আমাকে বিদায় জানিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে গেলেন।

🖤🖤

আমি আমার রুমে এসে আমার ফোনটা হতে নিলাম। পৃথাকে ফোন দিলে বেশ কয়েকবার রিং হওয়ার পর ও ফোন রিসিভ করে। আমি রাগী গলায় বললাম,

” ওই কই তুই ?? আমি এদিকে মরছি না আছি তার খেয়াল আছে তোর ?? হ্যা ?? ”

ওপাশ থেকে পৃথা হাসতে হাসতে বলে,

” কেনো চিন্তা করব ?? নিজের বরের কাছে আছো এতে এত চিন্তার কি আছে ?? নাকি সারাদিন রোমান্সের চক্করে পড়ে বেস্টু আমার নাজেহাল হয়ে গেছে কোনটা ? ”

বলেই আবার হাসতে লাগলো পৃথা। উফফ সবগুলা একইরকম বেশরম। আমি নিজের গলাকে আরো চড়াও করে বলি,

” উফফ থামবি তুই। শুন তোকে একটা কাজের জন্যে ফোন দিয়েছি। ”

” হুমম বল। ”

” শুন আমি পালাবো এই বাড়ি থেকে। আর তুই আমারে হেল্প করবি। এখানে আমি থাকলে আমি কখনোই নিজেকে উনার থেকে আলাদা করতে পারবনা। তাই এই কাজে তুই আমাকে হেল্প করবি। বুঝলি। ”

পৃথা অবাক হয়ে বলে,

” কিসব বলছিশ তুই ?? এই কাজ করলে জিজু আমাকে মেরে ফেলবে। আমি পারবনা করতে। মাফ কর দোস্ত। ”

আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই পৃথা ফোন কেটে দিলো। কি করবো এখন ?? না আমারই কিছু করতে হবে। আমি আয়নার সামনে গিয়ে নিজের মুখটা আমার ড্রেসের উড়না দিয়ে নেকাবের মত করলে পড়ে নিলাম। চোখে একটা চশমা পরে নিলাম যাতে কেউ চিনতে না পারে। ঘর থেকে বের হবো ঠিক তখনই আমার ফোন বেজে উঠলো। ফোনটা আননউন নম্বর থেকে এসেছে। আমি ফোনটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে একটা রাম ধমক দিয়ে উঠলেন কেউ। কন্ঠটা আর কারো না সৌরভ ভাইয়ার। উনি ধমক দিয়ে বলে উঠলেন,

” পাখা গজিয়েছে না তোমার ?? বাড়ির বাইরে এক পাও রাখলে পা ভেঙে হাত দিয়ে দিবো ইডিয়ট। ”

আমি উনার কথা শুনে যারপরনাই অবাক হলাম। উনি জানলো কি করে যে আমি পালাতে চেয়েছিলাম। আমি রাগে শক্ত গলায় করে বলি,

“কেনো ?? কি করবেন আপনি ?? হুমম ?? আর কতদিন এভাবে আটকে রাখবেন। বুঝেন না কেনো আপনি আপনাকে আমার জাস্ট সহ্য হয় না। সহ্য হয়না। তবুও এভাবে আটকে রেখেছেন। কেনো ? ”

উনি কিছুসময় নিরব থাকার পর নিজেকে শান্ত করে বলেন,

“কিছু করার নেই। সহ্য না হলেও তোমাকে আমার সাথে থাকতে হবে। মাথায় ঢুকিয়ে নাও কথাটা। আর একটা কথা তুমি একদম এখান থেকে পালাতে পারবে না। কারণ আমি বাসা থেকে আসার সময় বাসা তালা দিয়ে এসেছি। অ্যান্ড মোস্ট ইম্পর্ট্যান্ট কথা বাসায় ভিতর কোথায় পালাবার আর কোনো রাস্তা নেই। আর যদি কোনো চালাকি করতে চাও তাহলে তোমার ডান দিকের দেয়ালের একদম উপরে দিকে তাকাও। তোমার সব গতিবিধি লক্ষ্য করছি আমি। ”

আমি উনার কথামত তাকালে দেখি একটা সিসি টিভি ক্যামেরা সেট করা। উফফ সব ব্যাবস্থা করেই রেখেছি বজ্জাত টা। কি মসিবত।

” কি দেখলে। এখন পালাতে চাইলে বুঝবে আমি কি জিনিষ। Got it ? ”

আমি ফের বলি,

“কতদিন রাখবেন এভাবে ?? ডিভোর্স হওয়ার পর তো ঠিকই আলাদা হয়ে যাবো তখন ?? ” ”

সাহেবের মনে হয় এই কথাটা ভালো লাগে নি। তাই এক রাগী নিশ্বাস ফেলে বলেন,

” পরের টা পড়ে দেখা যাবে । এখন এসব নিয়েআঠা না ঘামানই ভালো। ওকে এখন রাখছি। আর শুনো আমি রাস্তায়। আধ ঘন্টার মধ্যে আসছি। আমার সাথে মেহমান আসছে তাই কাইন্ডলি বাসাটা পরিষ্কার করে রেখো অ্যান্ড কিছু নাস্তা রেডি কর। ওকে ?? ”

উফফ এমনভাবে অর্ডার করেছ যেনো আমি উনার কতকালের আপন মানুষ। কিন্তু এসব না করলে আবার বাইরের মানুষ আমাদের পারিবারিক সমস্যার কথা জেনে যাবে। আমি তাই বলি

” ওকে। রাখবো। রাখি ? ”

” হুমম। রাখো। ”

ফোনটা রেখে আমি বিছানায় বসে পড়লাম। কি করবো এখন ?? পালানোর তো সব রাস্তা বন্ধ। আর যদি আমি এখানে থাকি তাহলে আমি ডিভোর্স নিতে পারবনা এত সহজে। কিন্তু ডিভোর্স আমার নিতেই হবে। উনাকে বুঝাতে হবে কষ্ট কাকে বলে।

কি আর করার। ঘর পরিষ্কার করে রান্নাঘরে গিয়ে নুডলস আর পায়েস করে নিলাম ঝটপট। তারপর রুমে ঢুকে টিভি দেখতে লাগলাম। আর ভাবতে লাগলাম কি করলে এই হিংস্র মানুষটা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। কিন্তু মাথায় আপাদত কোনো আইডিয়া আসছে না।

🖤🖤🖤🖤

এক ঘন্টা পর দরজা খুলার আওয়াজ শুনে আমি নিজেকে ঠিক করে দরজার সামনে এস দাড়ালাম। দেখি সৌরভ ভাইয়া আর উনার সাথে এক মেয়ে ঘরে ঢুকছে। কিন্তু মেয়েটা কে ?? আগে তো কখনো দেখিনি। যায় হোক মেয়েটাকে আমি ভদ্রতার খাতিরে সালাম দিলাম। মেয়েটাও হাসিমুখে সালামের জবাব দিয়ে আমকে জড়িয়ে ধরলো। আমিও হালকা হেসে জড়িয়ে ধরলাম। মেয়েটা আমাকে ছেড়ে দিয়ে হাসিমুখে বললো,

” আসলেই তুমি খুব সুন্দর। সৌরভ যেভাবে বর্ণনা দিয়েছে তার থেকেও বেশি। I’m impressed. আসলে ভার্সিটির ক্রাশের বউ তো এরকমই হওয়া উচিত। একদম উজ্জ্বল , নজরকাড়া ঠিক নিজের বরের মত। তাইনা সৌরভ ?? ”

বলেই হাসতে লাগলো মেয়েটা। আর আমি অস্বস্তিতে মাথা নিচু করে আছি। এভাবে কি কেউ কাউকে সরাসরি সুন্দর বলে।সৌরভ ভাইয়া বলে উঠেন,

” ইপশিপাখি ,, এ হলো নওমী। আমার কলেজ টু ভার্সিটি ফ্রেন্ড + কলিগও । ”

আমি উনার কথা শুনে আবার অসস্তিতে পড়ে গেলাম। উফফ সবার সামনে এভাবে ইপশিপাখি না বললে কি উনার চলছিলই না । কি ভাবলো মেয়েটা। নির্লজ্জ কোথাকার। আমি মাথা উচু করে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে হালকা হাসলাম।

উনাদের ড্রয়িং রুম বসিয়ে আমি নাস্তা আর চা এনে দিলাম। ওরা দুজনে অনেক হাসাহাসি করে কথা বলছে। মাঝেমধ্যে মেয়েটা সৌরভ ভাইয়ার গায়ের উপর হাসতে হাসতে লুটিয়ে পড়ছে। আর এসব দেখে আমার মনে আগুন জ্বলছে। মেয়েটা কি একটু বেশিই নির্লজ্জ না। যতই ফ্রেন্ড হোক ,, ছেলে তো ছেলেই হয়। এত ক্লোজ হয়ে কিভাবে কথা বলছে মেয়েটা ? আমি আর দাঁড়ালাম না ওখানে। ওদেরকে একা ছেড়ে দিয়ে আমি নিজের রুমে চলে আসলাম।

রাত প্রায় ১০ টা বাজে। এতক্ষণ ধরে ওরা কথা বলছে। মাঝেমধ্যে অফিসের কাজ নিয়ে ডিসকাস করছে। আর এদিকে আমি আমার রুম বসে টিভি দেখছি। মাঝেমধ্যে ওদের অবাস্তব হাসাহাসি শুনে অতিরিক্ত বিরক্ত বোধ করছি। উফফ এত জোড়ে কেউ হাসে। হটাৎ ওদের হাসি বন্ধ হয়ে যায়। আমি একটু অবাক হলাম। কি হয়েছে দেখতে আমি টিভিটা অফ করে দিয়ে ড্রইং রুমে এলে আমার চোখ পুরো ছানাবড়া হয়ে যায়। না চাইতেও চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ে আমার। এটা চোখের ভ্রম হলে হয়তো বেশি খুশি হতাম আমি।
#শূন্য_থেকে_আসে_প্রেম
#পর্ব – ৩০
#আভা_ইসলাম_রাত্রি

টিভিটা অফ করে দিয়ে ড্রইং রুমে এলে আমার চোখ পুরো ছানাবড়া হয়ে যায়। না চাইতেও চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ে আমার। এটা চোখের ভ্রম হলে হয়তো বেশি খুশি হতাম আমি। সৌরভ ভাইয়া নওমী আপুর কোমর জড়িয়ে ধরে আছেন। আর নওমী আপু সৌরভ ভাইয়ার গলা জড়িয়ে তার দিকে মুখ করে আছে। এই দৃশ্য দেখে আমি কিছু না বলে আমার রুমে চলে আসলাম। রুমের দরজা টা লাগিয়ে দিয়ে দরজার সামনে বসে নিরবে চোখের জল ফেলতে লাগলাম। যতই ঘৃনা করি আমি উনাকে কিন্তু একটা মেয়ে কখনোই তার স্বামীর ভাগ কেউকে নিতে দেয়না। সেখানে আমি কি করে দিবো। আমি মানছি আমি উনাকে ঘৃনা করি কিন্তু তাই বলে উনি ?? ছি।

সৌরভ একনজর ঈপ্সিতার যাওয়ার দিকে তাকায়। নির্ঘাত মেয়েটা ওকে ভুল বুঝেছে। কিন্তু বিষয়টা তো অন্য। সৌরভ নৌমিকে ছেড়ে দিয়ে বলে,

” ঠিক আছিস তুই ?? ”

নওমী জোড়ে এক নিশ্বাস নিয়ে বলে,

” বাপরে। এক্ষণি মুখ থুবড়ে পরতাম। ভাগ্যিস তুই ধরেছিলি নাহলে আজ আমার নাকটা নির্ঘাত ফাটত। ”

” হমম। ”

সৌরভ মুখে কথা বললেও তার ধ্যান অন্য দিকে। ঈপ্সিতা এখন কি করছে ?? শিট। এখন আবার নতুন ভাবে বুঝাও। রাগ ভাঙ্গাও। এমনিতেই আগের কাহিনীর জন্যে এতদিন ধরে আমাকে নিজের পিছনে ঘুরাচ্ছে। এখন আবার নতুন ঝামেলা।

” এই সৌরভ ? কই হারিয়ে গেলি ?? ”

সৌরভ নওমীর আওয়াজ শুনে ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে এসে বলে,

” হুমম। বল শুনছি। ”

” আজ চলে যায়রে। কাল তো এমনিতেই দেখা হচ্ছে। পরে নাহয় আরেকদিন এসে তোর বাড়িতে ডিনার করে যাবো। বাট আজ না। প্লিজ দোস্ত। মা ফোন করছে অনেকক্ষন ধরে।”

” ঠিক আছে। আজকের মত ছার দিলাম। ”

” থ্যাঙ্কইউ । আচ্ছা তোর বউ কই ?? যাওয়ার আগে দেখা করে যাই ওর সাথে। ”

সৌরভ নওমীর কথা শুনে ঈপ্সিতার রুমে যায়। রুমের দরজায় হালকা করে ধাক্কা দিয়ে আলতো গলায় বলে,

” ঈপ্সিতা , নওমী চলে যাচ্ছে। ”

আমি উনার আওয়াজ শুনে ভাবলাম যদি এখন মেয়ের সাথে দেখা না করি তাহলে মেয়েটা নানা ভাবনা ভাবতে পারে। পড়ে আমাদের পরিবারেরই বদনাম হবে তাই চোখ মুখ ধুয়ে দরজা খুলে দেই আমি। উনাকে দেখেও পাত্তা না দিয়ে নওমী কে বিদায় জানিয়ে আবার নিজের রুমে চলে এসে দরজা লাগিয়ে দিতে চাইলে উনি দরজা হাত দিয়ে ধরে রাখেন। আমি অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে বলি,

” দরজা ছাড়েন। ”

” না। কি হয়েছে তোমার ?? এমন করছো কেনো ?? ”

” কিছু হয়নি। দরজা ছাড়েন বলছি। ”

উনি আবার দরজা শক্ত করে ধরে ক্ষীণ আওয়াজে বলেন,

” আস্তে বলো। বাইরে আওয়াজ যাবে। ”

এবার আমি দরজাটা ছেড়ে দিয়ে উনার কলার ধরে রাগে কাপতে কাপতে বলি,

” আচ্ছা। বড়ই চিন্তা আপনার আশেপাশের মানুষ জনের। কই আগে সেই চিন্তা কই ছিল বলেন। যখন আপনি আমার হাতের বানানো চা ফিরত দিয়ে নিজের মায়ের বানানো চা খেতেন জানেন আমার তখন আপনি মায়ের কাছে জবাব দিতে হতো। কেনো আমি আপনাকে চা দেইনি। আর সেই জবাবদিহিতার কারণে আমি শত ঘৃনা সত্বেও আপনার জন্যে চা বানাতাম। ”

আমি এবার উনার কলার ছেড়ে দিয়ে হাতের উল্টা পিঠ দিয়ে চোখের পানিটা মুছে দিয়ে আবার বলি,

” আর যখন আপনি আমাকে তিক্ত কথা শুনাতেন তখন আমি চুপ করে থাকতাম। কেনো জানেন ?? কারণ আমাদের সমাজে সংসারে অশান্তি হলে ছেলেদের কোনো দোষ হয়না। হয় মেয়েদের। তাই আমার উপড় যাতে কখনো আঙ্গুল না উঠে তাই সেই সব তীক্ষ্ম আচরণ গুলা মুখ বুজে সহ্য করতাম আমি। যদি কখন আমি উচু গলায় কথা বলতাম তাহলে আমিই হতাম বেয়াদব মেয়ে। সংসারে আগুন লাগাচ্ছি আরো কত কি।

আর সবার সামনে অনেক স্বামী পরোয়া করতাম। আপনার খেয়াল রাখা , খাবার এর দেখাশুনা এসব কেনো করতাম জানেন ?? আপনার জন্যে না। লোকের মুখ বন্ধ করার জন্যে। যাতে কেউ আমাদের পারিবারিক সমস্যার কথা না জানে সেই জন্যে। স্বামী স্ত্রীর মধ্যে অশান্তি যাতে জানাজানি না হয় সেই জন্যে এসব কিছু শুধু নিজের মধ্যে রাখতাম। বাইরে কেউ এসব সম্পর্কে অজ্ঞ থাকতো।

শেষ পর্যন্ত যখন আমি আর সহ্য করতে ব্যার্থ হলাম তখন সেই বাড়ি থেকে চলে আসলাম। নিজের বাড়িতেও যায়নি। কারণ ডিভোর্সি মেয়েদের নিজের বাপের বাড়িও তখন খুব খুব পর হয়ে যায়। তাই নিজের টাকায় চলতাম। কিন্তু আপনার তা সহ্য হলো কই। আবার নিজের জেদ নিয়ে পানার কাছে বন্দী করে রাখলেন। আর আজ ওই মেয়ের সাথে। ছি।”

বলেই আমি কাদতে কাদতে মাটির বসে পড়লাম। দু হাত দিয়ে চোখের জল মুছতে লাগলাম। আর সৌরভ ঈপ্সিতার দিকে বিষন্ন মনে তাকিয়ে আছে। কিছু বলার মুখ নেই তার। মেয়েটাকে কত কষ্ট দিয়ে এসেছে সে। এসব ভেবেই তার ভিতর দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে। ঈপ্সিতার কান্না তার মনে উত্তাল পাত্তাল ঢেও সৃষ্টি করছে। সৌরভ ঈপ্সিতার পাশে বসে পড়ে। ঈপ্সিতা কে ছুঁতে গেলে ঈপ্সিতা দ্বিগুণ জোরে বলে উঠে,

” Just stay away from me.. ছুবেন না আপনি আমায়। আর কইবার বলবো ঘেন্না লাগছে আমার আপনাকে। ছুবেন না আমায় আপনি।

সৌরভ অনুভুতিহীন তাকিয়ে থাকে ঈপ্সিতার দিকে। ঈপ্সিতার ওই কান্নাভেজা মুখ দেখে নিজেকে আটকাতে পারলো না। ঈপ্সিতার মুখটা দুহাত দিয়ে ধরে চোখের পানিগুলো মুছে দিয়ে আলতো গলায় বলে,

” ইপশিপাখি। জানো এই সৌরভের বুকের বা পাশে তোমার নাম সিল মহর করে লাগানো। তুমি বা আমি চাইলেও আমরা আলাদা হতে পারবনা। আর তুমিহীনা এই সৌরভ তো অস্তিত্ববিহিন।আমি পারবো না তোমায় ছাড়া থাকতে। বিশ্বাস কর তোমার ঐ ঘৃনা মাখা চোখ দেখলে আমার ভিতর জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যায়। আর নওমীর সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। তুমি যা দেখেছো তা শুধুই চোখের ভুল ছিল। ও পড়ে যাচ্ছিল তাই আমি জাস্ট ওকে পড়া থেকে বাঁচিয়েছি। এর বেশি কিছু না। দেখো এই সৌরভ তো তোমারই। আর আমার মাথায় একটা কথা ঢুকেছে না তুমি না আমায় ভালোবাসো না। তাহলে অন্য মেয়ের সাথে আমায় দেখলে তোমার এত কস লাগে কেনো ?? বলো ?? ”

উনি আমার দিকে বাঁকা হেসে তাকিয়ে আছেন। আমি নিজেকে উনার থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে স্পষ্ট গলায় বলি,

” কেনো কষ্ট লাগবে না। পৃথিবীর কোনো মেয়ে তার স্বামীর ভাগ কেউকে দেয়না। তাহলে আমি কেনো দিব। আমি আপনাকে ভালোবাসি না। তাই বলে ভাগ দিয়ে দিবো এতটাও খারাপ আমি না। ”

উনি আমার কথা শুনে বিস্তর হাসলেন। আমি রাগে উনার থেকে চোখ সরিয়ে উঠে যেতে চাইলে উনি আমার উড়না টেনে ধরেন। আর এতে আমি চমকে যাই। আড়চোখে উনার দিকে তাকালে উনি ধীরে ধীরে উঠে দাড়ালেন। হুট করে আমাকে জড়িয়ে ধরেন। আমি যখন তা বুঝতে পারি তখনই রাগ উঠে যায়। আমি নিজেকে ছাড়ানোর জন্যে জোরাজোরি করতে থাকি। যতই আমি জোরাজোরি করি উনি ততই আমকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলেন,

” হসস। একদম নড়বে ইপশিপাখি। মনোযোগ দিয়ে আমার হৃদ স্পন্দন অনুভব কর। তাহলে বুঝত পারবে এইখানে শুধু তোমার নাম জপ করে অন্য কারো না। কারণ আমার মন মস্তিষ্ক জোড়ে শুধুই তার ভাবনা ছড়িয়ে আছে। অন্য করো ভাবনা সেখানে কোথায় ঠায় নিবে ?? বলো।”

আমি আবার দূরে সরে যেতে চাচ্ছি। কিন্তু আমার মন তা মানতে নারাজ। মন বলে অনুভব কর। আর মস্তিষ্ক বলে ছেড়ে দে। শেষ পর্যন্ত মস্তিষ্কের জয় হলো। আমি জোর করে উনার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলি,

” দূর থাকুন আমার থেকে। এটাই আপনার জন্যে ভালো হবে। কারণ না আমি কখনোই পুরনো কথা ভুলতে পারবো আর না আপনি আমাকে মানাতে পারবেন। তাই আমাদের আলাদা হওয়ায় ভালো। ”

বলেই উনাকে কিছু না বলার সুযোগ দিয়ে আমি অন্য রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলাম। হটাৎ দরজার বাইরে থেকে শক্ত এক আওয়াজ আসে,

” তুমি চাও বা না চাও থাকতে তো তোমার আমার সাথেই হবে। কারণ তুমি আমার অক্সিজেন। আর আমি কখনোই আমার বাচার সম্বল কেড়ে নিতে দিবো না তোমাকে। কখনোই না । ”

চলবে..
চলবে..

[

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here