শেষ অধ্যায়ে তুমি পর্ব -২৮+২৯

#শেষ_অধ্যায়ে_তুমি
লেখিকা: #নুরুন্নাহার_তিথি
#পর্ব-২৮ (কেয়ার)

রাত ২.৪৫ , তূর মিহালের বুকে মাথা রেখে গুটিসুটি মেরে শুয়ে আছে। প্রচন্ড পেট ব্যথা ও শীতে কুঁকড়ে আছে তূর। একটা মোটা হোয়াইট ব্ল্যাঙ্কেটেও ওর শীত মানাচ্ছে না তার উপর আজকে মাঝরাতের দিকে ভারী তুষারপাত পরা শুরু হয়েছে কিন্তু রাত বারোটার আগ পর্যন্ত হালকা তুষারপাত পরছিল যা শরীরের সয়ে যাচ্ছিল কিছুটা।
(একটা কথা আগের পর্বে বলতে ভুলেই গেছি ওরা যখন গার্ডেনের পাশে দরজার সামনে বসেছিল তখন গায়ে ব্ল্যাঙ্কেট জড়িয়ে নিয়েছিল।)

তূর ঘুমানোর চেষ্টা করছে কিন্তু ব্যথার কারণে ঘুম আসছে না তাই মিহালের বুকে শুয়ে আছে আর তুষারপাত দেখছে পর্দার অল্প ফাঁকা দিয়ে। মিহাল বুঝতে পারছে তূরের কষ্ট হচ্ছে তাই সে উঠতে চেয়েছিলো কিছু হালকা খাবার, ঔষুধ ও পানি আনতে কিন্তু তূর উঠতে দিলো না আর বলে, তার এভাবে থাকলে একটুপর ব্যাথা কমে যাবে আর এখন কিছু খেতে ইচ্ছা করছে না এখন। মিহাল আর কি করবে নিজেও নিজের বউকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে আর ভাবছে,
মিহাল: “ইশ, এতো ভালো লাগে কেনো মেয়েটাকে! এতোটা স্নিগ্ধ কেন লাগে! মন চায় একেবারে বুকের পাঁজরের মধ্যে ঢুকিয়ে রাখি যাতে কোথাও যেতে না পারে। এতটা কিভাবে ভালোবেসে ফেললাম আমি তূরকে! এখন তো আমি মেয়েটার সবকিছুতেই মুগ্ধ হই। যদি কোনোদিন আমায় ছেড়ে দূরে কোথাও চলে যায় তাহলে কি আমি বাঁচতে পারব? জানি না আমি! ওরে আমি আমার কাছ থেকে দূরে যেতেই দিবো না সবসময় আগলে রাখবো। দেখো না কি বাচ্চাদের মতো গুটিসুটি মেরে শুয়ে আছে! একটু উষ্ণতা পেলেই হয়তো ব্যাথাটা কমে যাবে।”
এইটা ভেবেই তূরের শরীরে ব্ল্যাঙ্কেট টা খুব ভালো ভাবে জড়িয়ে নিজের সাথে আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে নিলো নিজের এই বাচ্চা বউটাকে।

_________
সকাল সাড়ে পাঁচটায় প্রতিদিনকার মত মিহালের ঘুম ভেঙ্গে যায়। সকালে ফজরের নামাজ পড়ার পর মিহাল আবার ঘুমায় তাই সকাল সাড়ে পাঁচটায় ঘুম থেকে উঠে যায় প্রতিদিন। আজও ঘুম থেকে উঠে প্রতিদিনকার থেকে ভিন্ন চিত্র দেখে কারণ প্রতিদিন মিহাল একা থাকে কিন্তু আজকে সাথে একটা মেয়ে আছে। পর্দার ফাঁক দিয়ে আবছা আলো রুমে প্রবেশ করেছে যার কারনে এলোমেলো ভাবে ঘুমিয়ে থাকা তূরকে দেখে মিহালের ঘোর লেগে যাচ্ছে কিন্তু এখন তো উঠতে হবে!! তাই মিহাল তূরের কপালে ঠোটের আলতো স্পর্শ দিয়ে উঠে যায় বিছানা থেকে তারপর ওয়াশরুম থেকে শাওয়ার নিয়ে ফ্রেশ হয়ে ফজরের নামাজটা পড়ে নেয়। তূরকে ডাকতে চেয়েছিলো তবে কি মনে করে আর ডাকলো না! ভাবলো পরে না হয় ও কাজা পড়ে নিবে নামাজটা।

আজকে আবার নামাজের পর ঘুমাতে ইচ্ছা করছে না। সকাল ছয়টা পনেরো বেজে গেছে ইতিমধ্যে। মিহাল ভাবলো তূর ঘুম থেকে উঠলে ওকে গরম দুধ ও ব্রেকফাস্টটা করিয়ে ওষুধ দিতে হবে তাই নিজেই আজকে রান্না ঘরে চলে গেল সবার জন্য একটা সহজ ব্রেকফাস্ট রেসিপি তৈরি করতে।

রান্নাঘরে যেয়ে ফল কাটতে কাটতে সাতটা বেজে গেলো। নয়টার সময় ক্লাস আছে তাই মেয়েরা উঠে পরেছে ঘুম থেকে তবে তূর ওঠেনি। ছেলেরা আর আধঘন্টা পর ঘুম থেকে উঠবে। ফাইজা ও লিরা ফ্রেশ হয়ে রান্নাঘরের দিকে যেতে নিলে আড়াল থেকে দেখে মিহাল রান্নাঘরে ঘুটুর ঘুটুর করছে তাই তারা দুজন আড়াল থেকে দাঁড়িয়ে দেখছে কি করছে মিহাল! এরইমধ্যে নাদিয়া হাই তুলতে তুলতে ওদের কাছে চলে আসে আর দেখে ওরা আড়াল থেকে কিছু লক্ষ্য করছে তাই সে নিজেও ওদের মত লুকিয়ে দেখতে লাগল ওরা কী দেখছে।

মিহালের ইতিমধ্যে ফল কাটা শেষ এখন ফ্রিজ থেকে দই, দুধ ও ক্যাবিনেট থেকে ওটস, বাদাম ও মধু বের করছে। আড়াল থেকে ওরা তিনজন মিহালের কার্যবিধি লক্ষ করছে। ইতিমধ্যে ওরা এটা বুঝে গেছে যে মিহাল আজকে ব্রেকফাস্ট বানাচ্ছে।

সাতটা বিশের দিকে ইনায়া রুম থেকে বের হয়ে তিনজনকে কেমন লুকিয়ে থাকতে দেখে ভ্রু কুঁচকে ওদের কাছে যায়। ইনায়া গিয়ে নাদিয়ার কাঁধে দুইটা টোকা মারে আর নাদিয়া ভয়ে লাফ দিয়ে উঠে আর সাথে ওরা দুইজনও। কিছু একটার শব্দ পেয়ে মিহাল রান্না ঘর থেকে বের হয়ে দেখে চারজন লুকিয়ে লুকিয়ে কিছু করছে। মিহাল ওদের জিজ্ঞাসা করে,

মিহাল: কি করছো তোমরা চারজন এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে?
মিহালের কথা শুনে ফাইজা টিটকারির সুরে বলে,
ফাইজা: তার আগে তুমি বলো তুমি কি করছো নতুন জামাই!! বিয়ে করে বাসর করার পরদিনই বউয়ের আদেশ নির্দেশ মানা শুরু করে দিলে। বাহ ভালো তো!

মিহাল ফাইজার কথায় লজ্জা পেয়ে যায় আর লিরা, নাদিয়া তো মিটমিট করে হাসছে। মিহাল বলে,
মিহাল: ফজরের নামাজের পর আজকে আর ঘুমাতে ইচ্ছা করলো না আর তূরের শরীর খারাপ লাগায় একটু ঘুমাচ্ছে তাই ভাবলাম আজকে আমিই না হয় একটা সহজ রেসিপি সবার জন্য ব্রেকফাস্টে বানাই।

লিরা, ফাইজা, নাদিয়া ও ইনায়া উৎকন্ঠিত হলো তূরের শরীর খারাপ লাগার খবর শুনে। লিরা বলে,
লিরা: কি হয়েছে ওর? বেশি শরীর খারাপ লাগছে নাকি?
মিহাল ওদের আশ্বস্ত সুরে বলে,
মিহাল: কিছু হয়নি।

এটা বলে মিহাল আবার রান্নাঘরে যেয়ে একটা গ্লাসে দুধ ঢেলে সেটা মাইক্রোওয়েভে গরম করতে দেয় আর বাকি কাজ করতে থাকে। ওরা তিনজন এবার রান্নাঘরে প্রবেশ করে আর ইনায়া যায় তূরের রুমের কাছে। তূরের রুমের দরজা বাহির থেকে লাগানো ছিল তাই একটু হালকা ফাঁক করে দেখে তূর সাদা ব্ল্যাঙ্কেট জড়িয়ে ঘুমিয়ে আছে। তূরের উন্মুক্ত গলা ও কাঁধের দিকটা ব্ল্যাঙ্কেট সরে যাওয়ায় দৃশ্যমান হয়ে আছে। এটা দেখে ইনায়ার বুঝতে বাকি থাকে না কি কারনে তূরের শরীর খারাপ! সেও আর অপেক্ষা না করে দরজাটা পুনরায় লাগিয়ে দিয়ে রান্নাঘরের দিকে যায়।

আপেল তিনটা, কলা তিনটা, নাশপাতি দুইটা, সবুজ আঙ্গুর দুই কাপ, কালো আঙ্গুর দুই কাপ , ড্রাগন ফল দুইটা, এগুলো ছোট ছোট করে কাটতে হবে তারপর, দেড় কাপ দই, দুই কাপ ওটস, দেড় কাপ তরল দুধ, চার টেবিল চামচ মধু ও কাজু-পেস্তা বাদাম কাঁটা এক কাপ দিতে হবে।
তৈরি সহজ রেসেপি।

মিহাল তূর ও নিজের জন্য দুইটা ডিম সিদ্ধ হতে দিয়েছিল। দুইটা ডিম সিদ্ধ হওয়ার পর আরও তেরোটা টা ডিম সিদ্ধ হতে দেয়। মাইক্রোওভেন থেকে গরম করতে দেওয়া এক গ্লাস দুধ, দুইটা ডিম ও দুই বাটি ফ্রুট ব্রেকফাস্ট নিয়ে খুব আস্তে আস্তে যাতে খাবারগুলো পড়ে না যায় সেভাবে নিজের ঘরের দিকে অগ্রসর হয়। বাকি সবার জন্য ফ্রুট ব্রেকফাস্ট ভিন্ন ভিন্ন বাটিতে করে রেখে দিয়ে গেছে।
দরজার কাছে গিয়ে তো আর দরজা খুলতে পারছেনা তাই ওদেরকে থেকে একজনকে ডাকে বলে দরজাটা খুলে দিতে।

রুমে প্রবেশ করার পর দেখে তূরের গায়ের থেকে ব্ল্যাঙ্কেটটা কাঁধের নিচে নেমে যাচ্ছে তাই তাড়াতাড়ি করে ব্রেকফাস্টের ট্রেটা রুমে থাকা টেবিলের উপরে রেখে দরজাটা ভেতর থেকে লক করে দেয়। তখন দরজা খুলতে মিহালকে সাহায্য করতে নাদিয়া এসেছিল আর এখন নাদিয়া মিটমিট করে হাসতে হাসতে ওদের কাছে চলে যায়।
মিহাল আবার লজ্জায় পরে যায় নাদিয়ার সামনে কিন্তু এখন তূরকে ঘুম থেকে উঠিয়ে সবার আগে এক গ্লাস গরম দুধ খাওয়াতে হবে তাহলে ব্যাথা থাকলেও সেটা আর থাকবে না।

তূরকে আস্তে আস্তে ঘুম থেকে উঠালো এরপর ব্রেকফাস্ট ট্রেটা বিছানার উপর নিয়ে আসলো সাথে পানির জগ ও গ্লাস নিয়ে আসলো। তূর দুধের গ্লাস দেখেই করুণ নজরে মিহালের দিকে তাকায় কারণ তূর খালি দুধ খেতে চায় না তাও ওর মা ওরে খাওয়াতো জোর করে আর এখানে আসার পর সকালে ওটস এর সাথে দুধ মিশিয়ে খায় কিন্তু আজকে মিহাল এক গ্লাস দুধ তূরকে খাওয়ানোর জন্য নিয়ে এসেছে তাই তূরের এমন দৃষ্টি।

মিহাল ওয়াশরুম থেকে মাউথওয়াশ ও পানি নিয়ে এসে তূরকে বলে,
মিহাল: এখানে হালকা করে মুখ চোখ ধুয়ে নাও পরে ঠিকমতো শাওয়ার নিয়ে ফ্রেস হয়ো। মুখ ধুয়ে গরম দুধটা খেয়ে নাও ভাল লাগবে।

তূর অনিচ্ছাসত্ত্বেও মুখ ধুয়ে দুধটা খেয়ে নিল। এরপর ওরা দুজনে মিলে ব্রেকফাস্ট কমপ্লিট করে। মিহাল তূরের হাতে দুইটা ট্যাবলেট দিল খাওয়ার জন্য। তূর ভ্রু কুঁচকে একবার ট্যাবলেট গুলার দিকে আরেকবার মিহালেরের দিকে তাকায়। তূর বলে,
তূর: ব্যথার জন্য একটা ট্যাবলেট বুঝলাম, আরেকটা কেন?
তূর অবশ্য জানে আরেকটা ট্যাবলেট কেন তাও মিহালের সাথে একটু দুষ্টামি করার জন্য না জানার ভান করে আছে।

মিহাল তূরের দুষ্টামি বুঝতে পেরে বলে,
মিহাল: আচ্ছা ঠিক আছে তোমার যেহেতু খেতে ইচ্ছা করছে না তাহলে ওটা খেয়োনা দেও আমি ফেলে দেই। ভিনদেশে এসেছিলাম বিবাহিত সিঙ্গেল হয়ে আর ফিরবো বউ, বাচ্চা নিয়ে একসাথে! ব্যাপারটা জোস হবে না!!

তূর মিহালের মুখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে ফিক করে হেসে দেয় সাথে মিহালও।

মিহাল বেডের পাশে পানির গ্লাস হাতে দাঁড়িয়ে আছে তাই তূর ব্ল্যাঙ্কেটটা শরীরে ভালো করে পেঁচিয়ে হাঁটু মুড়ে বিছানার উপরই দাঁড়িয়ে মিহালের গলায় দুই হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে তারপর বলে,
তূর: আচ্ছা ধরো, সত্যি সত্যি আমি কনসিভ করলাম তাহলে?
মিহাল: তাহলে আর কি! ওই যে বললাম বউ, বাচ্চা সাথে নিয়ে দেশে ফিরব!

তূর এক হাত দিয়ে মিহালের বুকে একটা আস্তে করে কিল মেরে বলে,
তূর: আমি ফাইজলামি করছিনা। সিরিয়াসলি বলছি, বল না কি করবে?

মিহাল এবার ব্ল্যাঙ্কেট সহ তূরের কোমর পেঁচিয়ে নিজের কাছে আরো টেনে এনে বলে,
মিহাল: আল্লাহ্ , যদি খুশি হয়ে দেয় তাহলে আমরাও খুশি মনে মেনে নিব আর যদি না দেয় তাহলে আল্লাহর উপর ভরসা করে থাকবো।

মিহালের কথা শুনে তূরের মুখে তৃপ্তির হাসি ফুটে। এরপর তূর মিহালের হাত থেকে ট্যাবলেট গুলা নিয়ে খেয়ে ফেলে।

তূর শাওয়ার নিয়ে এসে দেয়ালে লাগানো পুরনো ধাঁচের আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল মুচছে পরনে তার একটা লাল রংয়ের থ্রি পিস। এমন সময় মিহাল এসে পিছন থেকে ওরে জড়িয়ে ধরে আর ওর কাঁধে মুখ গুজে দেয়। মিহালের হুট করে স্পর্শে তূর কেঁপে উঠে হাত থেকে চিরুনিটা নিচে পড়ে যায়। কয়েক মিনিট এভাবে স্থায়ী হবার পর তূর মিহালকে বলে,
তূর: এই ছাড়ো তো! একটু পরে ভার্সিটির জন্য যাওয়া লাগবে, দেরি হয়ে যাবে আমাদের।
মিহাল: উহুম!
তূর: কি উহুম! ছাড়ো দেরি হয়ে যাবে।
এরপর নিজেই মিহালের হাত সরিয়ে মিহালের দিকে ঘুরে দাঁড়ায় আর মিহালের চুলে হাত বুলিয়ে বলে,
তূর: এখন ভার্সিটিতে যাও ।বিকালের দিকে আমরা আজকে ঘুরতে যাবো। ছুটি নিয়েছে তো জব থেকে?

মিহাল মন খারাপ করে বলে,
মিহাল: হুম ছুটি নিয়েছি। কই দেখছো বিয়ের পরেরদিন নতুন জামাই বউ ভার্সিটিতে যায়!!
তূর হেসে ফেলে বলে,
তূর: না তো! কোথাও দেখিনি! কিন্তু আমরা যাব!

মিহাল তূরের দুষ্টামির আভাস পেয়ে ওরে কাছে টেনে এনে ওর অধরে নিজের অধর স্পর্শ করে।
#শেষ_অধ্যায়ে_তুমি
লেখিকা: #নুরুন্নাহার_তিথি
#পর্ব-২৯ ( গুড নিউজ)

বিকেলে বাহির থেকে ঘুরে এসে সন্ধ্যায় আবার শাওয়ার নিয়ে ফ্রেশ হয়ে চুল মুছতে মুছতে বিছানায় বসে তূর। মিহাল অলরেডি অন্য ওয়াশরুম থেকে ফ্রেস হয়ে বিছানায় শুয়ে শুয়ে ফোন ঘাটছে। হঠাৎ করে তূর বলে ওঠে,
তূর: আচ্ছা বাসর রাতে শুনেছি নামাজ পড়তে হয় কই আমরা তো পরলাম না।

মিহাল মোবাইলের থেকে চোখ সরিয়ে তূরের দিকে তাকায় এরপর মোবাইলটা বিছানায় রেখে উঠে বসে বলে,
মিহাল: বিয়ে পড়ানোর পর মসজিদে অজু করে তুমি একটা নামাজ পড়েছিলেনা আমার সাথে?
তূর: হুম।
মিহাল: ওইটাই বাসর ঘরে পড়ে। বিয়ের সময় এত এত মানুষ থাকে যে আবার গিয়ে অজু করে নামাজ পড়াটা বা মেহমান থাকা অবস্থায় ভারী মেকআপ তুলে নামাজ পড়াটা হয়ে ওঠে না তাই তারা বাসর ঘরে গিয়ে পড়ে।
তূর: ওহো। ঠিকই বলেছ এজন্যই আমার ডাবল মেকআপ করতে হয়েছিল।

মিহাল হেসে ফেলে তূরের কথায়, আসলেই তূরকে মসজিদে অজু করে নামাজ পড়ার পর আবার ওখানে বসেই মেকআপ করতে হয়েছিল। বেচারী তখন মেকআপ করতে চায়নি কিন্তু ছবি তোলার স্বার্থে জোর করে মেকাপ করেছে কারণ বিয়ে পড়ানোর আগের জাস্ট একটা দুইটা ছবি তোলা হয়েছিল আরে লাল শাড়ী পরিহিত অবস্থায় ড্রইংরুমে কয়েকটা ছবি তোলা আছে কিন্তু ওই সময়ে মিহাল তূরের দিকে তাকাতে পারেনি সবার একদম ঘিরে ধরার কারণে।

মিহাল: তাহলে মাগরিবের নামাজটা পড়ে নাও অনেকটা দেরি হয়ে গেছে।

ডিনারের পর তূর বিছানায় বসা মাত্র মিহাল ওকে জাপটে ধরে ঘাড়ে মুখ গুঁজে দেয়।
মিহাল: আমি একটা কথা ভাবতেছি।
তূর: কি?
মিহাল: চল বাচ্চা নেই।
তূর চোখ বড় বড় করে মিহালের দিকে তাকায়। তূরের এভাবে তাকানো দেখে মিহাল বলে,
মিহাল: এভাবে তাকিয়ে আছ কেন? দেখো বাচ্চা নিলে আমরা বাবা-মাকে যেয়ে সারপ্রাইজ দিতে পারব।
তূূর:😒

মিহাল ডেবিল হাসি দিয়ে বলে,
মিহাল: চলো তাহলে বাচ্চা নেওয়ার প্রস্তুতি শুরু করি!

সকাল সাড়ে পাঁচটায় ঘুম থেকে উঠে ওরা দুজন শাওয়ার নিয়ে ফ্রেশ হয়ে বের হয় তারপর নামাজ পরে নেয়।

সকালের আটটার মধ্যে রেডি হয়ে ব্রেকফাস্ট করে বের হওয়ার সময় মিহাল তূরকে বলে,
মিহাল: নো পিল!
তূর: লাগবেও না হুহ।
বলে চলে যায় আর মিহাল হাসতে হাসতে সেও চলে যায়।

ক্লাস ও জব শেষ করে সন্ধ্যার সময় যখন বাসায় আসে তখন থেকে তূরকে কেমন অস্থির অস্থির লাগছে তাই দেখে মিহাল জিজ্ঞাসা করে,
মিহাল: কি হইছে তোমার? এমন অস্থির লাগতাছে কেন?
তূর:–
মিহাল: আরে বলো না। শরীর খারাপ লাগতাছে?
তূর:–
মিহাল: প্লিজ বলো। এভাবে চুপ করে থাকলে আমি বুঝবো কিভাবে।
তূর: আআসলেলে,
মিহাল: কি আসলে? বলো!
তূর: পিরিয়ড!
মিহাল: তার জন্য এরকম লজ্জায় কুঁকড়ে যাওয়ার কি আছে! এটা স্বাভাবিক ব্যাপার। এটা বলতে এত সমস্যা কোথায় তোমার? পেট ব্যথা বেশি করছে? গরম পানির সেঁক দেবে? দাঁড়াও আমি গরম পানির ব্যাগে পানি ভরে নিয়ে আসছি।

মিহালকে আটকিয়ে তূর চুপ করে আছে। মিহাল ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞাসা করে,
মিহাল: কি হলো আটকালে কেন? আর কোন সমস্যা আছে, তাহলে বলো।

তূর কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলে,
তূর: তুমি কালকে রাতে বললে না বেবি নেওয়ার কথা!
মিহাল এবার বুঝতে পেরে জোরে জোরে হেসে দেয় আর বলে,
মিহাল: এই ব্যাপার! আমি তো ভাবলাম কি না কি হয়ে গেছে। আরে বাবা! এটা ন্যাচারাল। তুমি কি আমাদের জীবনটাকে নাটক-সিনেমা পাইছো যে একবার ফিজিক্যাল হইলেই বেবি হয়ে যায়! এসব নিয়ে আর চিন্তা করো না, আমি গরম পানির ব্যাগ নিয়ে আসছি এটা দিয়ে সেক দাও তারপরে গরম দুধ খেয়ে কতক্ষণ ঘুমাও। দেখবা ব্যথা কমে গেছে।

মিহাল তূরের মাথায় হাত বুলিয়ে রান্নাঘরে চলে যায় গরম পানি করতে।

___এরিকের সাথে লিরার কথাবাত্রা তেমন হয় না। লিরা একপ্রকার এড়িয়ে চলছে প্রায় দুই মাস যাবত এরিককে। তূর ও মিহালের বিয়ের পরের দিন এরিক লিরার পথ আটকে দাঁড়ায়।

লিরা: কি ব্যাপারে এরিক! তুমি আমার পথ আগলে কেন দাঁড়িয়ে আছো? দেখো আমার ক্লাস আছে তূর ইতিমধ্যে ক্লাসে চলে গেছে।

এরিক কিছুক্ষণ শান্ত দৃষ্টিতে লিরাকে পর্যবেক্ষণ করে ওকে বলে,
এরিক: আমাকে ইগনোর করছো কেন? আমি কি করেছি?
লিরা: তুমি কি করবে? তুমি কিছুই করনি।
এরিক: তাহলে কেনো ইগনোর করছো?
লিরা: কোথায় তোমাকে আমি ইগনোর করছি? তোমার সাথে কি আমার ওরকম ভাবে যোগাযোগ আছে যে তোমাকে আমি ইগনোর করবো!

এরিক একটা হতাশ নিঃশ্বাস ফেলে বলে,
এরিক: কি করেছি আমি সেটাই তো জানতে চাইছি!! আগে তো আমার সাথে এমন করতে না। দুই মাস ধরে কি হয়ে গেল যে তুমি টোটালি আমার সাথে কথা বলা অফ করে দিয়েছো? তুমি কি আমার বিহেভিয়ারেও বুঝতে না আমার তোমাকে ভালো লাগে! আমার তো মনে হয়েছিল তুমিও আমাকে কিছুটা পছন্দ করো।

লিরা পলকহীন শূন্য দৃষ্টিতে এরিকের দিকে তাকিয়ে আছে। তা দেখে এরিক আবার বলে,
এরিক: দেখো লিরা তোমার করা এই দুই মাসে ইগনোরে আমি এটুকু তো বুঝতে পেরেছি তোমাকে আমার শুধু ভালো লাগার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়! আমি তোমাকে ভালোবাসি। আই লাভ ইউ লিরা।

লিরা এবার আর সহ্য করতে না পেরে একটু জোরেই বলে,
লিরা: কিন্তু আমি তোমাকে ভালোবাসি না! এমনকি তোমাকে ভালোবাসা আমার পক্ষে সম্ভব না।
এরিক হতভম্ব হয়ে আছে লিরার জবাব শুনে। তারপর কোন মতে বলে,
এরিক: কারনটা কি জানতে পারি? কেন তোমার আমাকে ভালোবাসেন সম্ভব না।

লিরা কি জবাব দেবে ভেবে পাচ্ছেনা তাই মাথা নিচু করে চুপ করে আছে। লিরার এভাবে চুপ করা দেখে এরিক ওর ভাবনার মাঝে বলে,

এরিক: সেদিন মোহাম্মদ ওজিলের কথা শুনে তুমি এরকম করছ তাইনা! আমি লক্ষ করেছি ওই দিনের পর থেকে তুমি আমার প্রতি কেমন যেন ইগনোরেন্স ভাবটা নিয়ে এসেছো। যদি এটাই কারণ হয়ে থাকে তাহলে বলব আমার কোনো পিছুটান নেই। আমার বাবা-মা কেউ বেঁচে নেই বোন এলিনাকে ম্যাক্স এর সাথে বিয়ে দিয়ে আমি আমার মতো থাকবো। চাচাকে আমি বলে রেখেছি উনি আমার সিদ্ধান্তে কখনো হস্তক্ষেপ করবেন না। আমি যদি মুসলিম হই তাতেও কি তোমার প্রবলেম হবে আমাকে ভালবাসতে?

লিরা অবাক চোখে এরিকের দিকে তাকিয়ে আছে। কোনরকম অবাক এর রেশ কাটিয়ে বলে,
লিরা: দেখো এটা ঠিক না। তুমি আমার জন্য নিজের ধর্ম কেন ত্যাগ করবে।

এরিক: ধর্ম ত্যাগের বিষয় না। আমি বাবা-মা মারা যাবার পর চার্চে যাই না আজ পনেরো বছরের বেশি হবে। সেখান থেকে যদি আমি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে ইসলামের দিকে যেতে পারি সেটা ভালো নয় কি? তোমার ভালোবাসায় যদি আমি ঈশ্বর বিদ্বেষী থেকে ঈশ্বর বিশ্বাসী হয়ে ওঠি সেটা কি ভালো নয়?

( প্লিজ প্লিজ প্লিজ কেউ ধর্মীয় দিকে আঘাত পেলে মাফ করবেন আমি কাউকে ধর্মীয় দিকে আঘাত দিতে চাইনি।😓)

লিরা অশ্রু ভরা চোখে এরিকের দিকে তাকিয়ে আছে। এরিক এসে লিরাকে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরে। আজ থেকে শুরু তাদের নতুন পথ চলা।

_________

কেটে গেছে এক মাসের কিছু বেশি সময়, নীরা ও ইফতির আজকে ঘরোয়াভাবে আকদ ও কাবিন হবে। মিহালের পরিবারও এখানে উপস্থিত আর তূর ও মিহাল ভিডিও কলে আছে।
সুষ্ঠুভাবে নীরা ও ইফতির বিয়েটা সম্পন্ন হয়। ওদেরকে যখন একটা রুমে রেখে আসা হয় তখন ইফতি নীরার হাত ধরে বলে,

ইফতি: তোমার সঙ্গ আমি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ছাড়বোনা। ভালোবাসি নীরা।
নীরাও প্রতিউত্তর করে ইফতিকে জড়িয়ে ধরে।

_______
কিছুদিন ধরে তূরের খুব বমি হচ্ছে সাথে শরীর খুব দুর্বল দেখাচ্ছে। এগুলো নীরার বিয়ে সম্পন্ন হওয়ার কয়েকদিনের মধ্যেই হচ্ছে। মিহাল অনেক বলে কয়ে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেছে। তূর অবশ্য বাড়িতে প্রেগনেন্সি কিট দিয়ে টেস্ট করেছিল, রেজাল্ট পজিটিভ এসেছে! কিন্তু তাও অনেক সময় কিটের মধ্যে ভুল রেজাল্ট দেখায় তাই আজকের শিউর হওয়ার জন্য মিহালের কথায় রাজী হয়ে ডাক্তারের কাছে এসেছে। তূর এখনো মিহালকে প্রেগনেন্সি কিটের ব্যাপারে কিছু জানায়নি।

ডাক্তার কিছু টেস্ট দিয়েছে সেগুলো করার আধাঘন্টা পর রিপোর্ট দিবে তাই ওরা দুজন করিডোরে বসে আছে। তূর মিহালকে বলে একটু আশেপাশের কেবিনগুলো ওয়ার্ড গুলো দেখছে আরে মিহাল রিসিপশনে গিয়েছে জানার জন্য রিপোর্ট এসে গেছে কিনা আধাঘন্টা হয়ে গিয়েছে তাই।
তূর হাঁটতে হাঁটতে বাচ্চাদের ওয়ার্ডের কাছে আসে। বাচ্চাদের দিকে তাকিয়ে থেকে নিজের ডান হাতটা পেটের উপর রাখে। আজকের ডাক্তার যখন রিপোর্টগুলো দেখে বলবে, ” ইউ আর প্রেগনেন্ট” ঠিক তখন ওর অনুভূতিটা কেমন হবে সেটাই ভাবছে।
মিহাল তূরকে খুঁজতে খুঁজতে সেখানে চলে আসে আর মিহালের হাতে রিপোর্ট। মিহাল রিপোর্টটা খুলে দেখতে পারত কিন্তু ভয়ে সে খোলেনি যদি কোন খারাপ কিছু হয়! তাই ডাক্তারের সাহায্যে জানবে কি হয়েছে তূরের।

ডাক্তার: কনগ্রাচুলেশন মিস্টার মিহাল। ইয়োর ওয়াইফ ইজ প্রেগনেন্ট। পাঁচ সপ্তাহের প্রেগনেন্সি।

মিহাল কথাটা শুনে বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে। তূরতো নিরবে খুশির অশ্রু চোখ দিয়ে থামছেই না। মিহালের এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না যে তারা বাবা-মা হতে চলেছে। ডাক্তার আরও কিছু ইম্পর্টেন্ট টিপস দিলো। মিহাল ডাক্তারকে জিজ্ঞাসা করেছিল তূরের কোনো কম্প্লিকেশন আছে কিনা, ডাক্তার বলেছে ওর কোনো কম্প্লিকেশন নেই।

বাংলোতে গিয়ে মিহাল সবাইকে খুশির খবরটা দেয় যা শুনে সবাই অনেক খুশি হয়। এরপর তূরের পরিবার ও মিহালের পরিবার সবাইকে জানানো হয় তারাও অনেক খুশি হয় ও দোয়া করে। ইনায়া এই খবরটা তানজিনাকে দেয় তানজিনাও খুশি হয়।
_________
আরিফ আর তানজিনার বিয়ে ঠিক হয়েছে পারিবারিকভাবে। আজকে ইফতি আরিফ ও তানজিনার সাথে তার বউ নীরাকে দেখা করাতে নিয়ে যাবে। নীরা জানে না আরিফের ফিয়ন্সে কে আর তানজিনাও জানেনা ইফতির ওয়াইফ কে।

আরিফ তানজিনাকে ফোন দিয়ে বলেছে জলদি আসতে। তানজিনা ও আরিফ নির্দিষ্ট জায়গায় আগেই এসে পৌঁছে গেছে ইফতি ও নীরার একটু লেট হচ্ছে। তাই আরিফ ও তানজিনা কফি অর্ডার করে।

আরিফ: জানো মেহেবিন, ইফতির প্রথমে ওর বড় শালীকে পছন্দ হয়েছিল।
তানজিনা কথাটা শুনে অনেক কাহিনীটা জানতে ইচ্ছা করে তাই জিজ্ঞাসা করে,
তানজিনা: কি বলো সত্যি! তাহলে ছোট বোনের সাথে বিয়ে হলো কেন? বড় বোনের সাথেই বিয়ে হতো।
আরিফ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
আরিফ: বেচারা ইফতি ছ্যাকা খেয়েছিল তাও পছন্দ হওয়ার দুই দিনের মধ্যেই।

তানজিনা নিজের কৌতুহল চেপে না রাখতে পেরে বলে,
তানজিনা: কেন ছ্যাকা কেন খেয়েছিল?

আরিফ: ইফতির ওর বড় শালীকে ভালো লেগেছিল মেয়েটার ব্রেইন টিউমার সার্জারি করতে যেয়ে। আমাদের এক স্যার ইফতিকে ওই মেয়েটার সার্জারি করার দুইদিন আগে মেয়েটার রিপোর্টগুলো দেয়। ইফতি রিপোর্ট হাতে পেয়ে পেশেন্টকে দেখতে গিয়ে পেশেন্টের উপর ক্রাশ খেয়ে বসে কিন্তু মেয়েটার সার্জারির দিন জানতে পারে মেয়েটা বিবাহিতা আর মেয়েটার বিয়ে হয়েছে তিন দিন আগে। তারপর তো মেয়েটা কোমাতে চলে গেল। মেয়েটার মেঝো বোনের সাথে সাক্ষাত হয় মেয়েটাকে তার বোন দেখতে আসত এই নিয়ে। তারপর ইফতির নীরাকে ভালো লেগে যায় এরপর বিয়ের প্রস্তাব দেয় আর এরপর তো ওদের প্রায় তিন সপ্তাহ আগে বিয়ে হলো।

তানজিনার কাছে কোমা ও নীরার নাম শুনে কিছুটা খটকা লাগে কিন্তু সে নিজের মনের ভাবনা নিজেই উড়িয়ে দিল কারণ তূরের তো বিয়েই হলো দুই মাসের কিছু বেশি সময়।

যখন ইফতি ও নীরা রেস্টুরেন্টে ঢুকে তখন তানজিনা ও নীরা একে অপরকে দেখে থমকে যায়।

চলবে,
ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। রিচেক করা হয়নি। কার্টেসি ছাড়া দয়া করে কপি করবেন না। হ্যাপি রিডিং❤
চলবে,
ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। রিচেক করা হয়নি। কার্টেসি ছাড়া দয়া করে কপি করবেন না। হ্যাপি রিডিং❤

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here