শেষ পাতার তুমি পর্ব ১৭

#শেষ_পাতার_তুমি
#ফারিয়া_আফরিন_ঐশী
#পর্বঃ১৭

রেশমি ছুটে এসে সব শুনে আয়ানাকে ভালো করে দেখেও আয়ানার চিৎকার করা আর সেন্সলেস হওয়ার কারণ বের করতে পারলো না!!!

রেশমি বেশ প্রাথমিক ট্রিটমেন্ট দিয়েও কোনো কাজ হলো না!!!

আচমকা রায়ানের চোখে পড়ল আয়ানার হাতের বাহুতে গেথে থাকা চিকন লম্বা সুচের!!

রায়ান একটু ঝুঁকে টিস্যু দিয়ে সুচটা বের করে এনে তার মায়ের সামনে ধরে বলল–মা দেখো!!!

রেশমি খেয়াল করে বলল–এটা তো সুচ!!ও ও এজন্য মেয়েটা ভয়ে সেন্সলেস হয়ে গিয়েছে!!!

রায়ান–কিন্তুু মা সুচ টা লাগলো কিভাবে??

রেশমি –আরে বাড়িতে তো আমি টুকটাক কাজ করি!!হয়তো কোনোভাবে সুচটা গেথে গিয়েছে!! ব্যাপার নাহ!!!তুই ভাবিস না,, এখুনি সেন্স ফিরল বলে!!

বলেই রেশমি চলে গেল!!

তবে রায়ানের মন খুঁতখুত করতে থাকল!!!

রায়ান দ্রুত আয়ানার পালস চেক করে মাথায় হাত দিয়ে জ্বর চেক করে নিল!!

পাশে বসে অপেক্ষা করতে থাকল আয়ানার সেন্স ফেরার!!!

ঘন্টাখানিক পার হওয়ার পরেও আয়ানার সেন্স না এলে রায়ানের মনে সন্দেহের সৃষ্টি হয়!!

আবারও রেশমি কে ডেকে জিজ্ঞেস করতেই রেশমি ব্যাপারটা হেসে উড়িয়ে দেন!!!

রাত ১.২৮,,

আয়ানা পিটপিট করে চোখ খুলে মাথায় হাত দেওয়ার উদ্দেশ্যে হাত উঁচু করতেই হাতে অসহ্য ব্যাথা অনুভুত হয়!!আয়ানার ব্যাথা কাতর আওয়াজ শুনেই পাশে হেলান দিয়ে চোখ বুজে থাকা রায়ান ধড়ফড় করে উঠে বলে–কি হয়েছে?? কষ্ট হচ্ছে?? মা কে ডাকবো?

আয়ানা কাঁদো কাঁদো মুখ করে বলে–হাতে ব্যাথা!!বসিয়ে দিন!!

রায়ান আস্তে করে ধরে আয়ানাকে বসিয়ে দিল!!!

আয়ানা–হাতে ব্যাথা!!!

রায়ান–মা মেডিসিন দিলে কাল এনে দিবো সেরে যাবে!!!

আয়ানা–খুদা পেয়েছে??

রায়ান–একটু অপেক্ষা করো আমি খাবার আনছি!!!

রায়ান খাবার গরম করে এনে আয়ানাকে খায়িয়ে দিতে দিতে প্রশ্ন করলো–কি হয়েছিলো তোমার ছাদে??

আয়ানা অবাকের মতো তাকিয়ে বলে–কখন??

রায়ান ভ্রু কুচকে বলল–কখন মানে??তুমি কফি নিয়ে ছাদে এলে কথার মাঝেই চিৎকার দিয়ে সেন্সলেস হয়ে গেলে!!!

আয়ানা চোখ মুখ কুঁচকে ভাবার চিন্তা করল কিন্তুু ফলস্বরূপ কিছুই তার মনে নেই!!!

রায়ানের সন্দেহ হলেও এমন সময় চুপ থাকাটাই শ্রেয় মনে করলো!!

তাই বলল–বাদ দাও!!খাবার শেষ করে রেস্ট নিতে হবে!!!

আয়ানার খাবারটা শেষ করে শুয়ে পড়ল,রায়ান ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে মনে মনে বলল–কেসটা কি হলো???

অপরদিকে,,

শান্ত বিছানাতে বসে আছে,,,হাসিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে!!!

তার সামনে সোফাতে বসে থাকা আসাদ তার বসের এমন উটকো হাসির কারণ কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছে না!!!

আবার ভয়ে কিছু জিজ্ঞেস ও করতে পারছে না!!!

শান্ত কোনোমতে হাসি থামিয়ে বলে–আমার বাবা লোকটাকে ভালোমতো মেরেছিস তো??সহজে যেন না মরে!!!

আসাদ আমতা আমতা করে বলে–জি বস!!

কথাটা শুনে শান্ত বলে–ভালো করে রোজ নিয়ম করে থ্যারাপি দিবি!!সাহস কম না!!রায়ানের সাথে যোগাযোগ করতে গিয়েছিল!!

আসাদ–ওকে বস!!

শান্ত–নিয়ম মতো আয়ু কে মেডিসিন দিবি!!আমি চাই রায়ান নিজে ওকে বের করে দিক!!

আসাদ মাথা নাড়িয়ে ধীরে দরজা দিয়ে বেরিয়ে যায়!!!

শান্ত বেডে শুয়ে বলে–তোমার সাথে আমার কোনো শত্রুতা নেই আয়ু!!তবে তোমার মরা বাপের সাথে আছে!!!তোমার বাপ তো মরেছে তার শোধ তোমার ওপর দিয়ে তুলব জান!!!

সকাল ৮ টা,,

রায়ানরা সবাই একসাথে উঠানে বসে চা খাচ্ছে!!!

আয়ানা দাদির সাথে বসে পিঠার খামি বানাতে সাহায্য করছে!!

রায়ান চা খাচ্ছে আর তার মাঝে আড় চোখে আয়ানাকে দেখছে!!!

কালকের ব্যাপারটা রায়ানকে বেশ ভাবাচ্ছে!!!

যদিও রেশমি কথাটা ওতোটা পাত্তা দেয়নি!!!

তবুও রায়ান বেশ চিন্তাতে আছে!!

কথাটা রেদোয়ানকে বলতে পারছে না!!!

আচমকা আয়ানা চায়ের কাপ হাত থেকে ফেলে দিয়ে উঠে হাত আর শাড়ি ঝাড়তে শুরু করলো!!

রায়ান উঠে বলল–কি হয়েছে??

সবাই একযোগে জিজ্ঞেস করলেও আয়ানা শাড়ি ঝেড়েই যাচ্ছে!!

রায়ান হাত ধরে ঝাঁকা দিয়ে ধমক দিল!!!

রায়ান–কি সমস্যা?? এমন করছো কেন??

আয়ানা কপাল কুঁচকে বলল–আমার শাড়িতে পোকা দেখুন!!

রায়ান–কোনো পোকা নেই,,কোথায় পোকা??

আয়ানা–এইতো!!!

রায়ান আবারও আয়ানার হাত শক্ত করে ধরে ধমক দিয়ে বলল–চুপ!!কোনো পোকা নাই!!

আয়ানা কিছু বলতে গিয়েও রায়ানের রাগান্বিত চোখের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে পারলো না!!!

রায়ান হাত ছেড়ে বলল–চেন্জ করে নাও!!

আয়ানা যেতেই দাদি বলল–কি হইলো ওই ছুড়ির??এরোম করলো কেন??

আয়ানা শাড়ি কোনোমতে চেন্জ করে আবাও উঠোনে চলে এলো!!!

দাদি–ঠিক আছোস তুই ছুড়ি??

আয়ানা–হুমম টেনিস বুড়ি!!

রেশমি আর রেদোয়ান মাথায় বুলিয়ে দিল!!!

রায়ান উঠোনের শান করা উঁচু জায়গায় বসে আয়ানার দিকে তাকিয়ে রইল!!!

পিঠা বানানোর শেষে খাওয়ার প্রস্তুতি শুরু হলো!!!

খাওয়া দাওয়া শেষে রেদোয়ান বলল–আজ সবাই বাইরে যাবো!!একবারে রাতে ফিরবো!!কি বলো সবাই??

আয়ানা লাফিয়ে উঠে বলল–সেই হবে বাবা!!!

রায়ান–সবাই রেডি হই তাহলে!!

দাদি–ওই ছুড়ি,আমারে সাজাইয়া দিবি!!

আয়ানা হেসে বলল–ওরে বুড়ি!!বুড়ো বয়সে শখ কতো!!!

দাদি–ওরে যোবান বয়সে আমারে দেখলি বুঝতি হেব্বি সোন্দরি ছেলাম!!!

আয়ানা–সে তো এখনো আছো তুমি!!

সবাই আরও খানিক কথাবার্তার পর রেডি হতে গেলো!!

আয়ানা দাদিকে সাজিয়ে নিজে কোনোমতে একটা তাঁতের কালো শাড়ি পরে বেরিয়ে এলো!!!

চুল আচড়ানোর মাঝেই রায়ান সাদা শার্ট পরে বোতাম লাগাতে লাগাতে ঢুকল!!!

আয়ানা ঘুরে বলল–বাহ!!বেশ লাগছে তো!!

রায়ান ঠোঁট একটু প্রসারিত করে বলল–সাদা রঙটা নাবিলার বেশ পছন্দ ছিলো!!বাইরে গেলেই বলতো সাদা কিছু পরতে!!!

আয়ানা রায়ানের সামনে এসে বলল–আমি জানি আমি কোনো রকমে নাবিলা আপুর মতো না!!আমি বলবো না নাবিলাপুকে ভুলে যান!!তাকে মনে রাখুন কারণ আপনার স্মৃতিতেই নাবিলার বসবাস হবে এখন!!

কিন্তুু আমাকেও একটু জায়গা দিন!!!

রায়ান –আমি চেষ্টা করছি,,নতুন করে শুরু করার!!তবে বলবো নাবিলার প্রসঙ্গ আসলে কখনো মন খারাপ করো না!!আমার আর নাবিলার মধ্যে অনেক পার্থক্য,ভুল বোঝাবুঝি ছিলো তবুও একে অপরকে ভালোবাসি!! সময় লাগবে নতুন করে তোমাকে আপন করতে!!!

আয়ানা রায়ানের হাত ধরে বলল–কখনো নাবিলাপুর প্রসঙ্গে আমি মন খারাপ করি না বরং আপনি প্রসঙ্গ না টানলে খারাপ লাগবে কারণ আপনি আপনার ১ম ভালবাসাই যদি ভুলে যান তাহলে পরে আমাকেও ভুলতে সময় নিবেন না!!!

রায়ান–হুমম!!রেডি হও,,সময় লাগবে তো!!!

আয়ানা–আমি তো রেডি!!আমার কোনো মেকাপ আবার ভালো লাগে না!!!

বলেই আয়ানা চুড়ি পড়ে বেরিয়ে গেল!!

রায়ান —সত্যি তুমি আলাদা!!কারণ নাবিলা বের হলেই কাজলকালো চোখে মায়াবতী হয়ে যেত!!

রায়ান চুল ঠিক করে ঘর থেকে বের হলো!!

একটা অটো ঠিক করা হলো!!

রায়ান আর রেদোয়ান সামনে!! আর বাকিরা পেছনে!!!

আয়ানা–আমরা যাচ্ছি কই বাবা??

রেদোয়ান –মা রে,সিনেমা দেখবো আগে!!তারপর সবাই টুকটাক কেনাকাটা করবো!!

আয়ানা–আচ্ছা!!!

সিনেমা হলের সামনে এসে অটো এসে দাঁড়াতেই রায়ান ভাড়া মিটিয়ে সবাইকে নিয়ে প্রবেশ করলো!!!

রায়ান টিকেট কাটতে গিয়েছে!!!

আয়ানা দাদির সাথে দুষ্টমি করছে!!

রায়ান এসে বললো –চলো,,ভেতরে যাই!!

আয়ানা ভিড়ের মাঝে রায়ানের বা হাত চেপে ধরলো!!

রায়ান হাতটার দিকে তাকিয়ে বলল–এই কাজটা নাবিলাও করতো!!

সিনেমা দেখার মধ্যে খানে আয়ানার মনে হতে লাগলো তার কোলের ওপর সাপ!!!

আয়ানা চিৎকার করে পপকণ ফেলে উঠে দাঁড়াল!!!!

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here