#শেষ_পাতার_তুমি
#ফারিয়া_আফরিন_ঐশী
#পর্বঃ২০
রায়ানের চিন্তা শুধু আয়ানার কাধের ওই ফোলা অংশ নিয়ে!!
রায়ান নিশ্চিত যে এটা কোনো পোকার কামড় নয়!!!
তাহলে কি???
ফোনের আলোতে ধ্যান ভাঙে রায়ানের!!কোনোমতে হাতড়ে ফোনটা নিয়ে দেখে জিপির ম্যাসেজ!!
ফোনটা রাখতে গিয়েও কিছু একটা ভেবে রায়ান না রেখে গুগলে গেল!!
আয়ানার কাঁধের অংশটা ভালো করে দেখে নিয়ে প্রথমে বিষাক্ত ইনজেকশন পুশ করলে ক্ষতস্থান কেমন দেখায় তা লিখে সার্চ দিতেই এতগাদা উদহারন চলে এলো রায়ানের সামনে!!
রায়ান ইমেজ অপশনে ক্লিক করে ছবি দেখতে লাগলো!!
পরপর কয়েকটি ছবি চেক করতেই একটা ছবির ওপর গভীর দৃষ্টিপাত করলো রায়ান!!!
আয়ানার কাঁধের ক্ষতের সাথে মিলিয়ে দেখল প্রায় ৮০ শতাংশ এক!!
আরেকটু ডিটেইলস পড়তে গুগলসহ ইউটিউব ঘাটতে লাগলো রায়ান!!
হঠাৎ আয়ানা নড়ে ওঠাতে ফোন রেখে আয়ানার দিকে নজর দিলো!!!
আয়ানা উঠে বসে চোখ মুছতে মুছতে বলল–পানি খাবো!!!
রায়ান পাশের টেবিল থেকে এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিতেই দেখলো সামনে বাড়ানো আয়ানার হাত কাঁপছে!!
তাই রায়ান নিজেই আয়ানাকে সাহায্য করলো পানি খেতে!!
রায়ান–তুমি কিছু খাবে??
আয়ানা বাচ্চাদের মতো মাথা নেড়ে বলল–হুমম!!
রায়ান–ওয়েট আনছি আমি খাবার!!
রায়ান উঠতে নিলেই আয়ানা রায়ানের হাত টেনে ধরে বলে –যাবেন না”!!ওই লোকগুলো যদি আবার আসে!!
রায়ান–তুমিও চলো তাহলে আমার সাথে!!একসাথে কিছু একটা খেয়ে নিবো!!
আয়ানা–কিন্তুু আমার পা??
রায়ান কোনো কথা ছাড়া আয়ানাকে কোলে নিয়ে ডাইনিং এর দিকে হাঁটা ধরলো!!
আয়ানাকে চেয়ারে বসিয়ে গরম গরম দুকাপ চা নিয়ে এলো!!সাথে চকলেট বিস্কুট!!
আয়ানাকে এক প্যাকেট বিস্কুট ছিড়ে দিলো রায়ান!!
রায়ান–চা খেয়ে বলোতো কেমন হলো??
আয়ানা–আপনি চা বানাতে জানেন??
রায়ান–হুমম!!টুকিটাকি বেশ কাজ জানি!!আর চা বানানো শিখেছি এইচএসসির পর যখন এ্যাডমিশনের জন্য রাত জেগে পড়তাম তখন!!
আয়ানা–ওহ!!আমি কফি ভালো করতে পারি!!
রায়ান বিস্কুট মুখে নিতে নিতে বলল–সুস্হ হও তারপর কফি খাবো তোমার হাতের!!!
আয়ানা ও মুচকি হেসে বিস্কুট মুখে নিলো!!আয়ানার স্বাভাবিক আচরণে রায়ান একটু স্বস্তি পেলো!!
চা খাওয়া শেষে দুজনে আবারও রুমে চলে এলো!!!
আয়ানা বসে বলল–জানালাটা বন্ধ তো??
রায়ান আয়ানার ভয় বুঝে পাশে এসে বসে বলল–ভয় পেও না!!আছি আমি!!
আয়ানা রায়ানের বুকে মাথা রাখলো!!
রায়ানের হাত আয়ানার মাথাতে বিচরণ করলেও রায়ানের মন পরে আছে ওই ইনফরমেশন গুলোর দিকে!!!
মিনিট ১০ অমন করে বসে থাকার পর রায়ান বলল–আয়ানা,,তুমি শুয়ে পরো!!রেস্ট দরকার একটু!!
আয়ানা মাথা তুলে একটু দূরে অভিমানী কন্ঠে বলল—আমি ঘুমোলে কোথায় যাবেন শুনি??আপনার প্রেমিকার কাছে??
রায়ান চোখ বুজে শ্বাস নিয়ে বলল–বাজে কথা বলো না!!কোথাও যাবো না আমি!!রাত ২.৫০ বাজে তাই ঘুমোতে বলেছি!!!
আয়ানা ঠোঁট ফুলিয়ে রায়ানের কাছে এসে বলল–ঘুমাবো না আমি!!
রায়ান–তাহলে করবে কি??
আয়ানা–আমাকে ভালোবাসুন এখুনি!!
রায়ান চোখ মুখ কুঁচকে বলল–মানে??
আয়ানা একনাগাড়ে একই কথা বলে যাচ্ছে!!
রায়ানের আচমকা ইনফরমেশনের কিছুটা মাথায় এলো!!
ওখানে লেখা ছিলো এমন বিষাক্ত ড্রাগ শরীরে প্রবেশ করলে হুটহাট আচরণে বদল আসে!!!আর অতিরিক্ত জেদ আর স্ট্রেসে ব্রেন স্ট্রোক হতে পারে!!
রায়ান দ্রুত আয়ানাকে শান্ত করতে বসলো!!
কিন্তুু আয়ানা একই কথা বলে যাচ্ছে!!
রায়ান আয়ানার আরেকটু কাছে এসে বলল–আচ্ছা!! ভালোবাসবো!!জেদ করো না!!
আয়ানা–নাহ!!এখুনি!!
রায়ানকে আয়ানা ভাবারও সময় দিচ্ছে না!!হাত ধরে ঝাঁকাচ্ছে!!
রায়ান একটু ভেবে আয়ানার মুখ দু হাতের মাঝে নিয়ে কপালে ঠোঁট ছুয়ে দিল!!
আয়ানা খানিক মুখভার করে বলল–আমি কি বাচ্চা??যে আমার কপালে চুমু দিলেন??
রায়ান–বুড়িও তো নও!!
আয়ানা বেশ চিৎকার করে বলল–না না এসব হবে না!!
আয়ানাকে উত্তেজিত হতে দেখে রায়ান বলল–আচ্ছা, আচ্ছা, রাগ করো না!!
আয়ানা কাছে সরে বলল–রাগ করছি!!বেশি বেশি!!
রায়ান–রাগ করো না!!কাল চকলেট দিবো!!
আয়ানা –ওসব লাগবে না!!
আয়ানা রাগ দেখিয়ে ধুম করে রায়ানের বুকের ওপর মাথা রাখলো!!
রায়ান–পাথর নাকি বাপু!!!বুকের হাড় সব ভেঙে গেল!!
কথাটা বলেই বুকে থাকা আয়ানাকে নিয়ে বালিশে হেলান দিলো!!!
আয়ানা রায়ানের হাত খামচে ধরে আছে!!
রায়ান–এসব খামচিতে আমার কিছুই হচ্ছে না!!নিজের নখের ১২ টা বাজিও না!!
আয়ানা হুট করে মুখ তুলে রায়ানের মুখের খুব কাছে নিয়ে এলো!!
রায়ান কিছুটা থতমত খেয়ে বলল–কি হলো??
আয়ানা মুখটা আরও তুলে রায়ানের ঠোঁট বরাবর রেখে ফিসফিস করে বলল–আপনি খুব পঁচা!!আপনি তো আদর করতেই পারেন না!!তাই আমি করে দেই!!
বলেই রায়ানের ঠোঁটের কোণে ছোট্ট চুমু দিল!!
১ম কোনো নারীর ওষ্ঠদ্বয়ের ছোয়াতে রায়ান থতমত খেয়ে আছে!!
জিহবা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে কাপা গলায় বলল–শুয়ে পরো!!!
আয়ানা ভ্রু কুটি করে–মেয়েদের মতো লজ্জা পান কেন???আজব তো!!
রায়ান আর কোনো কথা না বলে চুপ করে শুয়ে পড়লো!!
আয়ানা খানিক উশখুশ করে না পেরে রায়ানের বাহুতে কামড় বসিয়ে দিলো!!
রায়ান লাফ দিয়ে বসে হতবাকের মতো বাহু হাত দিয়ে ঘষতে শুরু করলো!!!
রায়ান–প্লিজ ঘুমাও!!
আয়ানা–নো মানে না!!!
হুট করে উঠে গিয়ে বিছানার এক কোণে গুটিমুটি হয়ে বসল আয়ানা!!
রায়ান কিছুটা দুরত্ব রেখে বসে কিছু জিজ্ঞেস করবে তার আগেই আয়ানা বলল–আপনি আমায় খুব অপছন্দ করেন তাইনা??আমি তো নাবিলাপুর জায়গা চাইনি!!!আমি তো খুব অসহায়!! আমার মা – বাবা কোথায় তাও জানি না!!আর আজকাল আমার সাথে যে কি হচ্ছে বুঝতে পারছি না!!আপনি চিন্তা করবেন না!!আমি চলে যাবো!!আর কখনো আসবো না আপনার বাড়িতে!!!
রায়ান এবার কাছে বসে আয়ানার হাতদুটো নিজের হাতে নিয়ে বলল–গিভ মি সাম টাইম আয়ু!!আমি সব ঠিক করে দেবো!!যদি বলি শুরু থেকে শেষ দোষটা আমার!!সবটাই আমার দোষ!!!কিন্তুু নাবিলা যাওয়ার আগে আমাকে একটা দায়িত্ব দিয়েছে তোমার দায়িত্ব!! আমাকে তা পালন করতেই হবে!!আর যদি বলো ভালোবাসি কিনা তাহলে বলবো বাসতে শিখছি!!নাবিলা আমার ১ম অনুভূতি!! আর তুমি হবে আমার জীবনের শেষ অনুভূতি!!১ম কে হারিয়ে বাঁচতে পারছি শেষ অনুভূতির কিছু হলে আমিও শেষ হয়ে যাবো!!!
আয়ানা মনোযোগ দিয়ে কথা গুলো শুনে কান্নাভেজা গলাতে বলল—ভালোবাসি খুব ভালোবাসি!! আপনার যত সময় প্রয়োজন নিন কিন্তুুু দিনশেষে আমাকে একটু বুকে জড়িয়ে নিলেই হবে!!
আয়ানা রায়ানের মুখ ধরে আছে,,একজনের শ্বাস অন্য
জনের মুখে বারি খাচ্ছে!!!
দুজনের দৃষ্টি স্হির একে অপরের পানে যেন দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে বছর পার করে দিবে!!!
হুট করেই আয়ানা রায়ানের ঠোঁটে নিজের ঠোঁট মিশিয়ে নিল!!
রায়ান হতবাকের মতো বসে থাকলেও আয়ানার শিহরণে সাড়া দিতে বাধ্য হলো!!
রায়ানের হাত আয়ানার কোমড়ে বিচরণ করছে!!
দুজনে দুজনাতে মত্ত!!
ঠিক এমন সময় ছাদের ওপর ধুম করে জোরে কিছুর আওয়াজে ছিটকে সরে গেল তারা!!!
পরপর ৪ বার আওয়াজে তটস্থ আয়ানা!!
রায়ান বা হাত চেপে ধরে বলল–কুল ডাউন!! দেখছি আমি!!
আয়ানা আরও শক্ত করে হাত চেপে বলল–কোথাও যাবেন না!!এখানেই থাকুন!!!
এতো আওয়াজে বাড়ির সবাই জেগে গিয়েছে ইতিমধ্যে!!
ডাইনিং এ জড় হয়েছে সবাই!!
ভয়ে ছাদে দেখতেও যেতে পারছে না!!!
রায়ান চেষ্টা করেও আয়ানার কাছ থেকে সরে যেতে পারে নি!!!
আওয়াজ টা একটু বন্ধ হলে সবাইকে বুঝিয়ে রায়ান আর রেদোয়ান ছাদের উদ্দেশ্যে গেল!!!
ছাদে উঠে তারা দেখল–ছাদের গাছ গুলোর টবগুলো এদিক ওদিক পড়ে আছে!!
রেদোয়ান–টবগুলোর এই হাল হলো কিভাবে???
রায়ান–বুঝতে পারছি না বাবা!!
রেদোয়ান –দেখ দোলনা আর চিলেকোঠা টাও ভেঙে দিয়েছে!!
রায়ান–বাবা,একটা কথা বলবো?
রেদোয়ান –বল।।
রায়ান–আমার মনে হয় এসব এ্যাটাক আয়ানার ওপর হচ্ছে!!তুমি জানো আয়ানার শরীরে কেউ বারবার সিটামল ড্রাগ দিচ্ছে!! এজন্য আয়ুর আচরণ এমন হুটহাট বদলাচ্ছে!! আমি মার্ক দেখেছি!!
রেদোয়ান –আয়ু তো বাচ্চা মেয়ে!!ওর এমন ক্ষতি কে করবে??
রায়ান–ওর বাবা-মা এর কোনো ইনফরমেশন আছে তোমার কাছে??হয়তো ওদের কোনো পুরানো শত্রু!!
রেদোয়ান –বেসিক ইনফরমেশন আছে!!
রায়ান–ওতেই হবে!!বাড়ির কাউকে কিছু জানিও না!!
বাবা,ছেলে নিচে আসতেই সবার হাজারো প্রশ্ন!!!
রায়ান ছলাকলা বুঝিয়ে আয়ুকে কোলে নিয়ে আবারও ঘরে গেল!!
আয়ানা ঘুমিয়ে পড়লেও রায়ানের যে চিন্তাতে ঘুম উবে গেছে!!
অপরদিকে,,
শান্ত—ট্রেইলার কেমন লাগছে সবার??সিনেমাটা কিন্তুু দারুন!!!
#চলবে