#শেষ_পাতার_তুমি
#ফারিয়া_আফরিন_ঐশী
#পর্বঃ২৫
রায়ান আয়ানার কোমড় টেনে আরো এনে আয়ানাকে জড়িয়ে ধরলো।
আয়ানাও আলতো হাতে জড়িয়ে ধরে আছে।
রায়ান এক হাতে মুভি পজ করে দেয় তারপর বলে–আয়ু,তুমি আমাকে তোমার জীবনে আরও একটা সুযোগ দিয়েছো।এখন আমি চাই আমাদের সম্পর্ককে আরও একধাপ এগিয়ে নিতে,,তুমি কি রাজি??
আয়ানা কেঁপে উঠলো।
রায়ান–তোমার নীরবতা কি সম্মতি বলে মেনে নেবো আয়ু?
আয়ানা বেশ জোড়ে রায়ানকে জড়িয়ে ধরলো।
রায়ান আয়ানাকে ছাড়িয়ে কপালে ঠোঁট ছুয়ে দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে আয়ানাকে কোলে তুলে নিলো।।
নতুন করে সবটা শুরু করার জন্য পা বাড়ালো।
রাত বোধহয় ৩.১৩,,
আয়ানা আধশোয়া অবস্থায় ঘুমন্ত রায়ানকে দেখছে।
রায়ান বা হাতে আয়ানাকে জড়িয়ে রেখেছে আর অন্য হাত নিজের মাথার নিচে।
একটা পাতলা সবুজ নকশীকাঁথায় আবৃত তারা।
আয়ানা বেশ নিপুণ চাহনীতে রায়ানকে দেখছে।
রায়ানের ডানগালে যে কালো ছোট্ট একটা তিল আছে তা কখনো আয়ানার নজরেই আসেনি।
আয়ানার এতোশতো ভাবনার মাঝেই রায়ান আরো কাছে টেনে নেয় আয়ানাকে,চোখটা পিটপিট করে খুলে দেখে তার প্রিয়তমা তার পানে নিপুণ চাহনীতে চেয়ে আছে।
রায়ান আয়ানার দিকে ঘুরে বলল–কি দেখছো আমায়?
আয়ানা হাসিভাব রেখে বলে–দেখছিলাম কি পঁচা লোক আপনি।
রায়ানও হালকা হেসে বলে–তা এই পঁচা লোককে এতো ভালো করে কেনো দেখা হচ্ছে?
আয়ানা রায়ানের নাক টেনে বলে –আমার ইচ্ছে।
রায়ান একটু হেসে আয়ানার গলাতে মুখ ডুবিয়ে দিলো।
সকালে,
আয়ানা রান্নাঘরে শাশুড়ীকে সাহায্য করছে খাবার বানাতে।
রায়ান আর রেদোয়ান যাবতীয় সমস্যা নিয়ে আলোচনা করছে।
রায়ান চাকরি ছেড়ে দিয়েছে কারণ চাকরি করতে হলে এতো ঝামেলা মাথায় রাখা যায় না। এখন তার মূল কাজ আয়ুকে প্রটেক্ট করা।
রায়ান চাকরি ছাড়ার আগে থেকেই ফ্রিল্যান্সিং এর কাজ করতো।
এখন একটা ব্যবসা করার জন্য চেষ্টা করছে।
রেদোয়ান –আমি বলি সব ঝামেলা শেষ করে তবেই নতুন কাজে হাত দে বাবু।নয়তো সব ঘেটে যাবে।
রায়ান–হুমম বাবা।আমি ভাবছি রেস্টুরেন্ট রিলেটেড যদি কিছু করা যায়।
রেদোয়ান –ঠান্ডা মাথায় ভেবে তারপর সিদ্ধান্ত নিবি বাবা।সেই কাজই করবি যে কাজে তোর জ্ঞান আছে।
রায়ান–জি বাবা।
সকালের নাস্তা শেষে রেদোয়ান বাজারে চলে গেলো কিছু মাসিক জিনিস কিনতে।
রেশমির কেসের ডেট পরাতে দাদির সাথে কোর্টে গিয়েছে।
আয়ানা আছে বলে এ তারিখ রায়ান আর কোর্টে যায়নি।
রায়ানা ল্যাপটপে কাজ করছে,
রেশমি দুপুরের রান্না করেই বেরিয়েছে, আয়ানা শুধু সবজিটা নামিয়ে বাটিতে রেখে ঘরে এলো।।
রায়ানের কাধে ঠেস দিয়ে বসে বলল–আপনি মামনির সাথে গেলে পারতেন।
রায়ান ল্যাপটপে চোখ রেখেই বলল–তোমার ব্যাপারে রিস্ক নিতে চাইছি না।
আয়ানা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলল–আমি একটা বিষয় বুঝতে পারছি না,,বাবা তো আমার নিজের বাবা।তাহলে বাবা কেনো আমার ক্ষতি চাইছে?বলুন তো।
রায়ান ব্যস্ত হাতে টাইপ করতে থাকা আঙ্গুল থামিয়ে মনে মনে বলল–তার মানে আয়ু জানে না আফজাল সাহেব ওর নিজের বাবা না।
রায়ান ভাবনা রেখে আয়ানা টেনে নিজের কোলে বসিয়ে বলল–ওসব ভাবার জন্য আপনার স্বামী রয়েছে আপনাকে ভাবতে হবে না।আপনি শুধু আপনার অধম স্বামীর খেয়াল রাখুন।
আয়ানা মুখটা কুঁচকে বলল–একদম আমার স্বামীকে অধম বলবেন না।
রায়ান কান ধরে বলল– সরি সরি।
আয়ানা হেসে দিলো সাথে রায়ানও।
আয়ানা হাসি থামিয়ে বলল–শান্তর ব্যাপারে কি করবেন আপনি? এভাবে ঘরে থাকা যায় বলুন।
রায়ান–শান্ত এখনো কোনো স্টেপ নিচ্ছে না।এটাই সমস্যা। আমি বেশ ইনফরমেশন গেদার করেছি।
আয়ানা–হুমম।
রায়ান আয়ানাকে ওভাবে কোলে নিয়েই কিছু কাজ করতে শুরু করে দিলো।
আয়ানা বসে থেকে একপর্যায়ে রায়ানের কাধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে গেলো।
কাজ শেষে রায়ান তাকাতেই বুঝলো আয়ানা ঘুমিয়ে পরেছে।
খুব সাবধানে তাকে বিছানাতে শুয়ে দিয়ে রায়ান ফ্রেস হওয়ার জন্য বাথরুমে চলে গেলো।
ঝামেলা ছাড়া ১ সপ্তাহ বেশ ভালোই কাটালো রায়ান ও পরিবারের সবাই।
তবুও রায়ানের মনের মধ্যে খচখচ করছে শান্তর চুপ থাকা ব্যাপারটা নিয়ে।
সব দিক থেকে রায়ান বেশ চাপ দিচ্ছে শান্ত কে তবুও রায়ান চিন্তামুক্ত হতে পারছে না।
বুকের ওপর ঘুমন্ত আয়ানাকে নিয়ে সিলিং এর দিকে তাকিয়ে এসবই ভাবছিলো রায়ান।
পানির পিপাসা তে আয়ানার ঘুম ভেঙে যায়।
উঠতে নিলেই রায়ান তড়িঘড়ি করে বলে–কি হয়েছে?
আয়ানা হাতের ইশারাতে বোঝায় পানি খাবে।
রায়ান খাটের পাশে রাখা পানির বোতল থেকে আয়ানাকে পানি খায়িয়ে দেয়।
আয়ানা –একটা কথা বলতে চাই আপনাকে।
রায়ান পুনরায় আয়ানাকে বুকে টেনে বলল–পারমিশন নেওয়ার কি আছে,বলো কি বলবে?
আয়ানা মাথা তুলে রায়ানের দিকে তাকিয়ে বলে–আমার মনে হয় আমাদের একটা বেবি হলে সব ঝামেলা মিটে যাবে।আমি বেবি নিবো।
রায়ান–এতো ঝামেলার মাঝে মোটেই না।।আর তোমার শরীরের যে অবস্থা।
আয়ানা চড়া গলাতে–ঠিকই তো আছি আমি।
রায়ান–উপর উপর ঠিক আছো।ব্লাড কম শরীরে,বিপি অলওয়েজ লো, হিমোগ্লোবিনের সমস্যা তারওপর গত কতগুলো মাস অসুস্থ ছিলে যা এখনো রিকভার হয়নি।এতো সমস্যার মাঝে এখনি বেবি নেওয়া রিস্কি।
আর আমি চাইছি ও না।
আয়ানা মুখটা কালো করে চোখ বুজে নিলো।
সে ভেবেছিলো রায়ান হয়তো রাজি হবে তাই দাদির কথা মতো সে রায়ানকে বাচ্চার কথা বলল কিন্তুু রায়ান তো মুখের ওপর না করে দিলো।
আয়ানার মন খারাপ বুঝে রায়ান আয়ানার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল–সময় আছে আয়ু।আর বেবি মানে অনেক দায়িত্ব, হুটহাট করে ডিসিশন না নেওয়া বেটার।
আয়ানা–ওকে।
রায়ানের কথাতেও আয়ানার মন তেমন ভালো হলো না।
সকালে উঠে আয়ানা গোসল সেরে শাড়ি পড়ছে।
আর রায়ানা বিছানাতে উল্টো হয়ে শুয়ে আছে।
শাড়ির আঁচল ঠিক করার সময় ড্রইং এ কারো চেচামেচি শুনে ভ্রু কুঁচকে এলো আয়ানার।
রায়ান উঠে দাঁড়িয়ে –কুল ডাউন,আমি দেখছি।শাড়ি ঠিক করো আর না বলা অবধি ঘর থেকে বেরোবে না।
রায়ান কোনোমতে টি শার্ট গায়ে দিয়ে হন্তদন্ত হয়ে বেরিয়ে গেলো।
আয়ানা শাড়ি ঠিক করে দরজার কাছে কান পেতে দাঁড়িয়ে রইলো।
কারণ রায়ান দরজা পেছন থেকে বন্ধ করে দিয়েছে।
বাইরে বেশ চেচামেচি চলছে।
বাইরে,
রায়ান–দেখ বারবার আমার বাড়ি এসে তুই ঝামেলা করতে পারিস না।
শান্ত–তুই বারবার আমার লাইফে ঝামেলা করছিস কেন?আয়ু কোথায় বল?
রায়ান–আয়ু কোথায় আমি কিভাবে বলবো?তোর হবু বউ তুই জানিস।
শান্ত-বিয়ের দিন তুই তুলে এনেছিস ওকে।
রায়ান–ও ওতো বাচ্চা খুকি।তুললাম আর আমার কোলে উঠে এলো।ফালতু না বকে বের হ।
শান্ত–তুই আমাকে চেক করতে দে,আয়ু কে না পেলে চলে যাবো।
রায়ান–নাহ।তুই কিন্তুু হ্যারাজ করছিস।
শান্ত এবার তার লোকজন বাইরে থেকে রায়ানের বাবার মাথায় বন্দুক ধরে শান্ত বলল–আমি জানি আয়ু তোর কাছে আছে।নিয়ে আয় ওকে নয়তো তোর পুরো পরিবারের আজ ওপরে যাওয়ার ব্যবস্হা করে দিবো।
রায়ান–নো।ওয়েট।
বলে রায়ান নিজের ঘরে চলে গেলো সাথে শান্তর ২ জন লোক।
দরজা খুলতেই রায়ানের পেছনে বন্দুক ধারী ২ জনকে দেখে ঘাবড়ে গেলো আয়ানা।
আয়ানা–এরা?
রায়ান আয়ানার কাছে এসে দাঁড়ালো, ইতিমধ্যে চোখে পানি ভর্তি হয়ে গলা আটকে আসছে রায়ানের।
রায়ান আয়ানাকে কাছে টেনে কপালে বেশ লম্বা চুমু দিল, ততক্ষণে দুজনের চোখের পানি গড়িয়ে পড়লো।
রায়ান লোক ২ জনকে উদ্দেশ্য করে–আমার কিছু পারসোনাল কাজ আছে আমার স্ত্রীর সাথে।
একজন লোক–আমরা ঘরের বাইরে যেতে পারবো না।
রায়ান–যেতে হবে না।
কথাটা বলেই আয়ানার ঠোঁটে নিজের ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো।
লোক ২ টো মুখ চেয়ে আবারও নির্বিকার ভাবে দাঁড়িয়ে রইলো।
রায়ান আয়ানার কপালে আবারও চুমু দিয়ে ফিসফিস করে বলল–চিন্তা করো না।আমি তোমায় আমার কাছে নিয়ে আসবো আবার।তুমি একটু নিজের খেয়াল রেখো।
আয়ানা সাথে সাথে দুকদম পিছিয়ে চেচিয়ে বলল–নাহ যাবো না।
আয়ানার চিৎকার শুনে শান্ত রায়ানের ঘরে এসে জোর হাতে আয়ানার বা হাত ধরে বলল–চলো আয়ু।
আয়ানাকে জোড় করে নিয়ে যেতে লাগলো।
আসন্ন ভয়ে আয়ানা কাঁদছে আর বারবার বলছে–আমি যাবো না রায়ান প্লিজ।
এখনো বাড়ির সবার মাথায় বন্দুক ঠেকানো।রায়ান নিরুপায়,পরিবারকে বাঁচাতে তাকে তার স্ত্রী কে বিপদের মুখে ফেলে দিতে হলো।
#শেষ_পাতার_তুমি
#ফারিয়া_আফরিন_ঐশী
#পর্বঃ২৬
আসন্ন ভয়ে আয়ানা কাঁদছে আর বারবার বলছে–আমি যাবো না রায়ান প্লিজ।
এখনো বাড়ির সবার মাথায় বন্দুক ঠেকানো।রায়ান নিরুপায়,পরিবারকে বাঁচাতে তাকে তার স্ত্রী কে বিপদের মুখে ফেলে দিতে হলো।
শান্ত চলে যাওয়ার খানিকপর ওর লোকেরাও চলে গেলো।
রায়ান কপাল চেপে চেয়ারে বসে আছে, চোখজোড়া বন্ধ।
রেশমি আর রেদোয়ান ও চুপ করে বসে আছে,আয়ানার কথা ভেবে দুজনেই বেশ টেনশনে আছে।
দাদি তো নিজের ঘরে বসে নামাজ পড়ছেন,কারণ এখন সৃষ্টিকর্তাই ভরসা।
রায়ান আচমকা বড় বড় পা ফেলে বেরিয়ে গেলো।
রেশমি জিজ্ঞেস করার আগেই সদর দরজা পার হয়ে চলে গেল রায়ান।
অপরদিকে,
আয়ানা ঘরের এককোণে গুটিসুটি দিয়ে বসে আছে।
একটু দূরে শান্ত খাবার হাতে আয়ানার সামনে বসে আছে।
শান্ত–আয়ু, এমন কেনো করছো?আমরা তো বেস্টফ্রেন্ড।ঐ রায়ান তোমাকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল।
আয়ানা নিশ্চুপ।
শান্ত–প্লিজ কথা বলো।কিছু খেয়ে নেও এটলিস্ট।
আয়ানা এবার চড়া গলাতে বলল–হ্যাঁ আমি খেলেতো সুবিধা তাইনা?আমাকে সেন্সলেস করে পার্টির হাতে তুলে দিতে পারবে।
শান্ত খানিক অবাক হলেও তা বাইরে প্রকাশ না করে বলল–কি সব বলছো?
আয়ানা–একদম নাটক করবে না।
শান্ত প্লেট রেখে দাঁড়িয়ে বলল–আচ্ছা, করলাম না।আর হুমম,খাবারে কিছু মেশাইনি।খাবারের পর ইনজেকশন পুশ করবো তাতে কষ্ট হবে তাই খেতে বলেছি।
আয়ানা উঠে দাঁড়িয়ে শান্তর সামনে এসে কলার টেনে বলল–লজ্জা করে না।আরেকজনের বউ তুলে আনতে।এতো নিচ কাজ করে তা মুখে স্বীকারও করছো।
শান্তর কলার ধরাতে বেশ ক্ষেপে গিয়ে বলল–না করেনা।তোর শাস্তি এখনো বাকি।
বলেই সজোরে এক ধাক্কা দিলো,মাথা ঠেকাতে কপালে হাত রাখলেও হাতে বেশ জোরে আঘাত লাগলো কাঠের টি টেবিলে।
শান্ত নিজের শার্ট ঠিক করে দরজা লক করে চলে গেলো।
আয়ানা হাত সামনে এনে দেখে হাতের আঙ্গুল লাল হয়ে আছে,নাড়াচাড়া করলেই ব্যথা হচ্ছে।
ফুপিয়ে কাঁদছে আয়ানা।
আয়ানা উঠে বারান্দা ঘেষা কাচের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।
চোখ থেকে পানি ঝড়ছে,পানিটা ব্যথার তবে ব্যথাটা হাতের নয়।
বাইরে বেশ বৃষ্টি হচ্ছে, শান্ত তাকে কোথায় রেখেছে তা ঠাহর করতে পারছে না আয়ানা।
বাড়ির বাইরে এতো গাছ-পালা দেখে আয়ানা কনিফিউশনে আছে,ঢাকা শহরে এতো গাছপালা ঘেরা জায়গা আছে নাকি।
অপরদিকে,
রায়ান তার এক বন্ধুর সাথে বসে আছে,
মূলত তারা ভার্সিটি দেখে বন্ধু।পুরোটা সময় ইনফরমেশন দিয়ে রায়ান কে তার এই বন্ধু আকিফ ই সাহায্য করেছে।আকিফ আইটি সেক্টরে কর্মরত।
আকিফেরই পরিচিতো আর্মির মেজর জুবায়ের সাহেব।
তারা ৩ জনই শান্তর খোঁজ নিচ্ছে।
আকিফ–শান্তর লোকেশন ট্রেস করতে পেরেছি।
জুবায়ের –গুড।লোকেশন নোট করো ফাস্ট।
আকিফ–স্যার লোকেশনটা ঢাকার বাইরে।নন্দনবাজার।
রায়ান–এটা তো ঢাকা থেকে মেবি বেশ দূর!
জুবায়ের –হুমম।যদি ভুল না হই তোমার ওয়াইফ এখানেই আছে।
রায়ান–আমাদের যাওয়া উচিত এখনি।
জুবায়ের –নো।স্টপ।শান্ত এতো কাঁচা কাজ করবে না যে আমরা যাবো আর আয়ানাকে নিয়ে আসবো।
রায়ান–তাও ঠিক।বাট এখন কি করবো?
জুবায়ের –লিসেন,আজ অলরেডি রাত হয়ে গিয়েছে, কাল সকালে রওনা হবো।আর তুমি রাতে আয়ানার সাথে দেখা করবে।ওকে যাবতীয় প্লান বুঝিয়ে দেবে।
রায়ান–ও কি পারবে??
জুবায়ের –ইনশাআল্লাহ ওকে পারতেই হবে।নাহলে খুব ক্ষতি হতে পারে সবার।
রায়ান চিন্তিত মুখ নিয়ে অফিস থেকে বেরিয়ে গেলো।
রায়ান বেরিয়ে গেছে খেয়াল হতেই জুবায়ের বলল–ওহ শিট!রায়ানের ওপর এ্যাটাক হতে পারে।আকিফ গো।
বলতেই আকিফ দৌড়ে বেরিয়ে গেলো।
রায়ান কিছুদূর হেঁটে আসতেই পিছে আকিফের আওয়াজ শুনতে পেলো।
রায়ান মুখ থেকে সিগারেট টা নামিয়ে বা হাতে ধরে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইল।
আকিফ রায়ানের কাছাকাছি এসে হাঁটুতে ভর করে হাঁপাতে লাগলো।
রায়ান–কি রে!ওমনে দৌড়াচ্ছিস কেনো?
আকিফ হাফ নিতে নিতে বলল–স্যার বলছিলো তোর রিস্ক আছে তাই।
রায়ান সিগারেটে টান দিয়ে বলল–ধুর!চল চা খাই।
আকিফ –ক্যাম্পের ভিতরের ক্যাফে থেকে খাবো চল।
রায়ান আর আকিফ আবারও ক্যাম্পের দিকে গেলো।
চা খেয়ে জুবায়ের কয়েকজন গার্ড সহ রায়ানকে বাড়ি পৌঁছে দিলো।
আর ৬ জন লোককে রায়ানদের বাড়ি সর্বক্ষণ পাহারা দিতে বলল।
রায়ান ঘরে এসে বারান্দায় বসে রইলো।
বারান্দায় এসে আবারো সিগারেট ধরালো।
রেদোয়ান এসে রায়ানের কাধে হাত রাখতেই রায়ান সিগারেট ফেলে বাবাকে বসতে দিলো।
রেদোয়ান –তোর তো এই নেশা ছিলো না বাবু?
রায়ান–আমি আর পারছি না বাবা।বাধ্য হয়েই!
রেদোয়ান –বুঝতে পারছি আমি।তবে স্মোক করা ভালো না বাবু।ছেড়ে দে ধীরে ধীরে।
রায়ান–তোমার বৌমাকে ফিরিয়ে এনেই বন্ধ করে দেবো বাবা।ও যে ক দিন ছিলো আমি স্মোক করিনি।
রেদোয়ান –হুমম! ঠিক হয়ে যাবে সব চিন্তা করিস না।
রায়ান স্হির দৃষ্টিতে রাস্তার পানে চেয়ে রইলো।
অপরদিকে,,
শান্ত বেল্ট হাতে রুমের সোফাতে বসে হাঁপাচ্ছে।
বিছানার নিচের পূর্ব কোণটাতে আয়ু পরে আছে।
তার পরোনে কাঁচা হলুদ শাড়িখানাতে হালকা রক্তের দাগ স্পষ্ট।
হাত, গলা,পিঠের যে অংশটুকু দেখা যাচ্ছে সবটাতে মোটা বেল্টের দাগ,কিছু কিছু ক্ষত থেকে রক্ত ঝড়ছে।
আয়ু ফিকরে কাঁদছে।
হাত-পা নাড়াতে পারছে না।
শান্ত বেল্ট ফেলে উঠে দাঁড়িয়ে বলে–আমার কথার বাইরে কাজ করলে এর চেয়ে খারাপ অবস্থা করবো।সো ডোন্ট ডু দিছ।
বলেই শান্ত চলে গেলো।
আয়ানা ডুকরে কাঁদছে।জীবনে কখনো মা-বাবা তাকে একটা টোকাও দেয়নি।
কাঁদতে প্রায় চোখ বুজে আসে তার।ব্যথার দরুণ সেন্স হারায় আয়ানা।
পরদিন,
সকাল সকাল রায়ান,জুবায়ের, আকিফ নন্দন বাজারের উদ্দেশ্যে।
ঘন্টা ৪ পর তারা পৌঁছালো,লোকেশন অনুযায়ী শান্তর বাড়ির কাছাকাছি চলে এলো।
শান্তর এই বাগানবাড়ি বেশ নির্জন জায়গায়,
বেশ দূরে নন্দনবাজার মূল শহর।
আশেপাশে কোনো খাবার দোকানও নেই।
রায়ানরা বেশ দুরত্ব রেখে খোলা মাঠের এক কোণে তাবু টানিয়ে নিলো।সবাই কোনো এক কলেজের টি শার্ট পরে নিলো যাতে বোঝা যায় তারা কলেজ ক্যাম্পিং এ এসেছে।
রায়ানকে দিনের বেলায় তাবু হতে বের হতে বারণ করে দিলো জুবায়ের।
সারাদিন জুবায়ের, আকিফ শান্তর বাড়ির আশেপাশে ঘুরঘুর করে ইনফরমেশন কালেক্ট করে নিলো।
মেইন গেটের বাইরে বেশ কড়া পাহারা।
জুবায়ের এর লোক একজন গার্ডের বেশ ধরে বাড়ির ভেতরের ইনফরমেশন পৌঁছে দিলো।
দিন শেষে,সন্ধ্যা নেমেছে মাত্র,
আয়ানার গা কাঁপিয়ে জ্ব এসেছে।ব্যথার দরুণ এতো জ্বর।ডাক্তার আনা সম্ভব না বলে শান্ত একজন মহিলা মেইডকে ঘরোয়া উপায়ে চিকিৎসা করতে বলেছে তাই সে আয়ুর মাথাতে জলপটি দিচ্ছে, শান্ত শহরে গিয়েছে ওষুধ আনতে।
বাড়ির সামনে কড়া পাহারা থাকলেও পেছনের ঝোপঝাড়ে তেমন পাহারা নাই।
বাড়ির পেছনের পাইপ পেয়ে আয়ানাকে রাখা ঘরের ছোট্ট বেলকোনিতে আসা যায়।
আকিফ রায়ানকে সেই রাস্তা বলে দিলো।
প্লান মোতাবেক রায়ান পাইপ বেয়ে বারান্দাতে উপস্থিত হতেই জলপটি দিতে থাকা মেইড বারান্দার দরজা খুলে বলল–আসুন।
রায়ানকে দরজা খুলে মেইড চলে যায়,
বাইরে থেকে দরজা লক করে।
রায়ান দ্রুত বিছানার কাছে এসে আঁতকে ওঠে।
আয়ানার মুখে বেশ কিছু আঘাতের দাগ সাথে হাতে,গলাতে।
রায়ান ধীর পায়ে কাছে এসে আয়ানার পাশে এসে কপালে হাত রাখতেই বুঝল আয়ুর বেশ জ্বর।
কপালে ঠোঁট ছুয়ে দিতেই পিটটিট করে চোখ মেলল আয়ানা।
ঝাপসা চোখে রায়ানকে দেখে চোখে ভির করলো হাজারো পানিকণা।
উঠে বসার চেষ্টা করতেই রায়ান ধরে বসিয়ে দেয়।
রায়ান আয়ুর মুখ দুহাতের আজলে নিয়ে–কিভাবে আয়ু?
আয়ানা ভাঙা গলাতে বলল–কোনো একটা পেপারে সই করতে বলেছিলো, করিনি তাই বেল্ট দিয়ে মেরেছে।
রায়ানের চোখ ছলছল করে উঠলো।
আয়ানা উঠে বসাতে আঘাতের স্হান গুলো আরো ভালো করে বোঝা যাচ্ছে।
রায়ান আলতো হাতে টেনে আয়ানাকে নিজের বুকের ওপর নিলো।
দুজনের চোখ থেকেই পানি গড়িয়ে পড়ছে। দুজনেই নিরব।
নীরবতায় আঘাত করে আয়ানা বলল–আমার খুব কষ্ট হচ্ছে রায়ান।
রায়ান আয়ানার মুখটা সামনে এনে সমস্ত মুখে ঠোঁট ছুয়ে দিলো আর বলল–সব ঠিক হয়ে যাবে।
আয়ানা–কবে?
রায়ান–দ্রুতই।শুধু আমি যা বলবো তাই করবে।
আয়ানা–আমি যদি মরে যাই?
রায়ান একটু রাগী চোখে তাকিয়ে বলল–ফারদার আর এমন ফালতু কথা বলবে না।
আয়ানা ঠোঁট ফুলিয়ে কান্নার বেগ তুলতেই রায়ান বলল–আরে কাঁদছো কেন?তোমার কিছু হলে আমার বাচ্চাদের কি হবে?তারা তো তাদের মা কে মিস করবে।
আয়ানা–সব সময় ফাজলামো।
আয়ানাকে জড়িয়ে ধরে বেশ কিছু কাজ বুঝিয়ে দিলো।
আয়ানাকে খাবার খাইয়ে দিয়ে রায়ান চলে যায়।
আর বলে যায়–মাঝরাতে আবারও আসবে।
আয়ানার জ্বর হালকা নামলেও মাথাব্যথা করছে তাই বিছানাতে গা এলিয়ে দিতেই চোখ বন্ধ করে পাড়ি দেয় ঘুম রাজ্যতে।
ওপরদিকে,
শান্ত ওষুধ এনে দেখে আয়ানা বিভোর ঘুম।ওষুধ রেখে চলে যায়।
রায়ান মাঝরাতে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।
রায়ান গাছের নিচে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছে,
জুবায়ের পানির বোতল হাতে পাশে দাঁড়িয়ে বলল–একটা কথা বলি।
রায়ান–জি স্যার,বলুন।
জুবায়ের –বিদেশ যাওয়ার চিন্তা ছিলো নাকি কখনো?
রায়ান–ভার্সিটি লাইফের শুরুর দিকে প্লান ছিলো বাট মধ্যবিত্ত বুঝতেই পারছেন স্যার।
জুবায়ের –হুমম।
#চলবে