#শেষ_পাতার_তুমি
#ফারিয়া_আফরিন_ঐশী
#পর্বঃ৪
রায়ানের মা যেতেই রায়ান নাবিলার নম্বরে ফোন দেয়!!
কিন্তুু বিগত ২ ঘন্টা থেকে তার নম্বর ব্যস্ত বলছে!!
রায়ান রেগে বিছানাতে বসে পড়ল!!! কি করবে তা বুঝতে পারছে না!!
এরইমধ্যে রায়ানের ফোনটা কর্কশ কন্ঠে বেজে উঠল!!
রায়ান দ্রুত সামনে নিয়ে দেখল নাবিলার ফোন!!
ফোন রিসিভ করতেই নাবিলা চিল্লিয়ে উঠল–কি সমস্যা?? দেখছো যখন ফোন বিজি তখন এতো কল দেওয়ার কি দরকার??
রায়ানের এমনিতে রেগে ছিল আরও রাগ উঠে গেল তবে স্বভাবত ঠান্ডা মেজাজের হওয়ায় সে শান্ত কন্ঠে বলল–দরকার আছে বলেই ফোন করেছি!!
নাবিলা কাঠ গলাতে বলল–দ্রুত বলো!!!
রায়ান–বাবা আমার বিয়ের জন্য মেয়ে দেখছে!!তুমি যদি একবার বাবার কাছে তোমার ব্যবহারের জন্য ক্ষমা চাইতে তাহলে আমি কোনো ব্যবস্হা করে তোমার বাড়িতে প্রস্তাব পাঠাবো!!
নাবিলা–আর ইউ ম্যাড??সিরায়াসলি রায়ান,, আমি তোমার বাবার কাছে ক্ষমা চাইবো!!কখনোই না!!উনি আমায় অসভ্য মেয়ে বলেছিলেন!!সো ক্ষমা উনি চাইবেন!!
রায়ান –তাহলে থাকো তোমার ইগো নিয়ে!!
বলেই রায়ান ফোন কেটে দিল!!!
তারপর রেগে নাবিলাকে ব্লক করে দিল!!!
রিলেশনের ৩ বছরে নাবিলার সিরিয়াসনেস নিয়েই রায়ানের সমস্যা!!
মেয়েটা কোনো বিষয়ে সিরিয়াস না!!!
রায়ান রাগের মাথায় ড্রইং রুমে বসে থাকা বাবাকে গিয়ে জানাল সে বিয়েতে রাজি!!
রেদোয়ান তো মহা খুশি!!
আয়ানার বাবাকে ফোন করে সামনের সপ্তাহের ডেট ফাইনাল করে নিলো!!
রায়ানের মা ঘরে এসে কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই রায়ান বলল–মা আমি বিয়ে করছি এটাই ফাইনাল!!আর কিছু জানতে চেও না!!!
রায়ানের মা চলে গেলেন!!একমাত্র ছেলে বলে কথা বিয়ের কিছু কাজ তো থাকেই!!!
সপ্তাহখানেক পর,
আজ সন্ধ্যাতে রায়ানরা আয়ানাদের বাসায় যাবে!!
রায়ানের বাবা সেই ৪ টে থেকে তাড়া দিচ্ছে!!
রায়ানা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে পাঞ্জাবি পরছে আর তার ৩ বছরের সম্পর্কের কথা ভাবছে!!এই ১ সপ্তাহে রাগ ঠান্ডা হওয়ার পর রায়ান বহুবার চেষ্টা করেছে নাবিলার সাথে কথা বলার কিন্তুু নাবিলা মেজাজ দেখিয়ে ফোন রিসিভ করেনি আর ২ দিন আগে ব্লক করে দিয়েছে!!
মেয়েটার এই সমস্যা ইগো আর চিনচিনে মেজাজ!!!এই সপ্তাহে রায়ান বহু বার বাবাকে বলতে চেয়েও পারেনি বলতে!!!
রেদোয়ান আবার তাড়া দেওয়ায় ঘোর কাটে রায়ানের!!
অপরদিকে,
গোলাপী জামদানী আর হালকা কিছু গহনা পরে আয়নার সামনে বসে আছে আয়ানা!!২ দিন আগে বাবার পরিস্থিতি আর নিজের বিয়ের কথা!!আয়ানা সব শুনে বাবার কথাতে রাজি হয়েছে!!কারণ মেয়ে হিসেবে তার দায়িত্ব বাবার কথা মানা!!!
নিজের বরকে এখনো দেখেনি সে তবে বাবার ওপর ভরসা আছে বলেই আজ সে সেজে নতুন জীবনের অপেক্ষা করছে!!!
নিচে মানুষের আওয়াজ শুনে আয়ানা বুঝল বরের বাড়ির লোক এসেছে!!
রায়ানরা এসে রেদোয়ান আর আয়ানার বাবা জরুরি কিছু কথা সেরে নিল!!
তারপর রায়ানের দাদি তাড়া দিল আয়ানাকে নিয়ে আসার জন্য!!
আয়ানাকে সামনে এনে বসানো হলো!!
রায়ানের দাদি খানিক খুঁটিয়ে দেখে রায়ানের বাবাকে খুঁচিয়ে ফিসফিস করে বলল–বাবু রে,, মেয়ের গায়ের রঙ তো তেমন উজ্জ্বল না!!বয়স কম ঠিকাছে তবুও!!!
রেদোয়ান বিরক্ত নিয়ে বলল–মা রাখো তো রঙ!!এই যুগে কিসব কথা বলো!!!
রায়ানের দাদি কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে আয়ানাকে উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন করল–তা তুমি মেয়ে কুরআন পড়তে জানো নাকি??
আয়ানা মাথা এলিয়ে জানালো যে সে পড়তে জানে!!
রায়ানের মা আয়ানার পাশে বসে বলল–মাশাআল্লাহ মা!!
রায়ানের বাবা আয়ানার বাবাকে উদ্দেশ্য করে বলল–তাহলে বিয়ের কাজ শুরু করি নাকি!!!
আয়ানার বাবা–রায়ান বাবা!!আয়ুর সাথে একান্তে কথা বলতে চায় যদি??!!
রেদোয়ান –যা কথা বিয়ের পর হবে!!কাজ শুরু করি!!
রায়ান এবারে আয়ানার মুখের দিকে তাকাল!!তবুও সে কোনো কারণ খুঁজে না পেয়ে আবার মাথা নামিয়ে নিজের ভাবনাতে ডুব দিল!!নিজের কাছে তার নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে!!
রায়ান মনে মনে–নাবিলার সাথে অন্যায় করছি আমি!!
কাজির ডাকে ধ্যান ভাঙে রায়ানের!!!
বিয়ের পাট চুকিয়ে আয়ানাকে নিয়ে রায়ানরা রওনা হয় তাদের বাড়িতে।।
বিয়েতে তেমন আয়োজন নেই বলে রায়ান আয়ানার জন্য বাসর ঘরও সাজানো হয়নি!!
আয়ানাকে ব্যাগসহ রায়ানের মা রায়ানের ঘরে বসিয়ে দিয়ে গিয়েছে!!!
আয়ানা ঘরটা ঘুরে দেখল!!বেশ ছোট একটা ঘর!!আসবাব দিয়ে ঠাসা!!মাথার ওপরের ফ্যান টা বিরক্তিকর আওয়াজে ভনভন করে ঘুরছে!!
আয়ানা ধুপ করে বিছানাতে বসে!!কারণ এমন ঘরে থাকা তার অভ্যাস নাই!!ছোট থেকে বেশ আদরে মানুষ সে!!বড়লোক বাবার মেয়ে!! তবে ভাগ্যর পরিহাসে আজ এখানে!!
কট করে দরজাতে শব্দ হওয়ায় আয়ানার হুস আসে!!
রায়ান এসেছে!!
আয়ানা ঠোঁট ভিজিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে,চোখে একরাশ আতঙ্ক!!
রায়ান দূর থেকেই দাঁড়িয়ে বলল–আমি আপনার সাথে একটু কথা বলতে চাই!!ফ্রেস হয়ে ব্যালকোনিতে আসবেন একটু?
বলেই রায়ান ব্যালকোনিতে চলে যায়!!
আয়ানা হাফ ছেড়ে দ্রুত বাথরুমে যায়!!!
বাথরুমে গিয়ে তো আয়ানার চোখ ছানাবড়া!!
আয়ানা–একি!!!এখানে তো টয়লেট আর বাথরুম একসাথে!!এ বাবা!!!
বেশ অস্বস্তি নিয়ে আয়ানা ফ্রেস হয়ে বের হয়!!
তারপর ধীর পায়ে ব্যালকোনিতে যায়!!!
রায়ানের থেকে একটু দুরত্ব রেখে দাঁড়িয়ে হালকা করে কাশি দিয়ে নিজের অস্বস্তি বোঝানোর চেষ্টা করল!!
রায়ান না ঘুরেই বলল–কিছু কথা ক্লিয়ার করা দরকার!!
আয়ানা–জ্বি বলুন!!
রায়ান এবার ঘুরে বলল–আমার ৩ বছরের একটা সম্পর্ক আছে!!তাকে আমি ভীষণ ভালোবাসি!!কিছু পারছোনাল সমস্যার কারণে আজ আপনার আর আমার বিয়ে হয়েছে!!তবে ভয় নেই আমি আপনাকে টাচ করবো না!!সব সামলে নিয়ে আমি আপনাকে ডিভোর্স দিয়ে দিবো!!
সবটা এক শ্বাসে বলল রায়ান!!
আয়ানা অবাকের চোখে সবটা শুনে বলল–খুব দারুণ বললেন তো!!হিন্দি সিরিয়ালের মতো!!সব সামলে ডিভোর্স দিবো!!!আমার মতামতের কোনো দাম নেই!!!
রায়ান–দেখুন!!আমি কখনো আপনার সাথে সুখি হবো না!!এতে করে আপনাকে ঠকানো হবে!!আমি এটা চাই না!!
আয়ানা মুখ ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে রইল!!
রায়ান–প্লিজ হেল্প করুন!!প্লিজ!!
আয়ানা কোনো উত্তর না দিয়ে ধুপ করে সোফাতে গিয়ে শুয়ে পড়ল!!
আয়ানা মনে মনে ভাবছে –বাবা যখন বিয়ে দিয়েছে তখ৷ আমি যে করেই হোক ওনার সাথেই থাকবো!!
আরও নানান কথা ভাবতে ভাবতে আয়ানা ঘুমিয়ে পড়ে!!
রায়ানা রুমে এসে বালিশ নিয়ে ব্যালকোনিতে শুয়ে পড়ে কারণ একই রুমে একজন মেয়ের সাথে থাকতে তার কেমন যেন লাগছে!!!
সকাল ৭ টা,
স্বভাবত রায়ানের ঘুম ভেঙে যায়!!!ঘরে এসে দেখে আয়ানা এখনো ঘুম!!
রায়ান ফ্রেস হয়ে বেরিয়ে দেখে আয়ানা তখনও ঘুম!!
আয়ানার সকালে ওঠার অভ্যাস নেই তা বেশ বুঝে যায় রায়ান!!
রায়ান একখানা বই নিয়ে জানালার ধারে চেয়ার নিয়ে পড়তে শুরু করে!!!
কিছুক্ষণ পর,
আচমকা তার দাদির চেচামেচি তে ধ্যান ভাঙে রায়ানের!!!
ঘড়িতে তাকিয়ে দেখে সকাল ১০ টা বেজে ৩৮ মিনিট!!!
রায়ান সোফাতে তাকিয়ে দেখে আয়ানা এখনো ঘুম!!
আবারও বাইরে তার দাদির আওয়াজ শুনতে পায়, তার দাদি বলছে—কি মেয়ে রে বাবা!!!এখনো সোয়ামীরে নিয়ে ঘর থেইকা বাইর হইলো না!!!লজ্জা শরম নাই এদের!!আমাগো সময় আলো ফোটার আগেই পাকঘরে চইলা যাইতাম আমরা!!!
রায়ান তড়িঘড়ি করে আয়ানা কে ডাকতে শুরু করল!!!
আয়ানার সাড়া না পেয়ে মুখে পানির ঝাপটা দিলো!!
আয়ানা লাফ দিয়ে উঠে বলল–কি হয়েছে??
রায়ান–বেলা হয়েছে বেশ!!উঠুন!!দাদি বকছে!!
আয়ানা দ্রুত ফ্রেস হয়ে ঘর থেকে বের হলো!!
বেরিয়ে দাদির সামনে পড়তেই দাদি কটাক্ষ চোখে তাকিয়ে বলল—
#চলবে
১০২৩ শব্দের পর্ব♥️♥️♥️
বিঃদ্রঃ রাতে আরও ১ টা পর্ব দিবো!!কারেন্ট ছিলো না তাই দেরি হলো!!