#শেষ_বিকেলে_এলে_তুমি
#পর্ব_২৬
#Tahmina_Akhter
শাঁই শাঁই করে একের পর এক গাড়ি ছুটে চলেছে নিজ গন্তব্যে।
যত সামনের দিকে অগ্রসর হচ্ছি ঠিক ততটাই পিছনে ফেলে আসছি।এই তো মানবজীবন! জীবনের সামনের দিকে এগিয়ে চলতে শুরু করলে আর পিছনে ফেরা যায় না। সবকিছু ঝেড়ে ফেলে যে যত সামনের দিকে অগ্রসর হবে সে ঠিক ততটাই সফলতা পাবে।
গাড়িতে বসে বাইরের দিকে তাকিয়ে মনে মনে কথাগুলো ভাবছি।এতটুকু পথে অতিক্রম করার মাঝে একটি টুঁ শব্দ করেনি। কারণ, আদিল স্যারের সাথে কথা বলতে বা নজর মেলাতে সংকোচবোধ হচ্ছিল, ভীষন।
কালো আবায়া আর জিলবাব পড়নে থাকা রমনীর চোক্ষুদ্বয় ব্যতিত আর কিছুই দেখা যাচ্ছে না। মাঝে মাঝে এই চক্ষুদ্বয় চশমার আড়ালে ঢাকা পড়ে যায়। আজ চশমা পরেনি বিধায় টানা টানা আঁখিদ্বয় বারংবার তার দিকে তাকাতে আমায় সম্মোহিত করছে। কিন্তু, তারদিকে তো আমি বেহায়া চাহনিতে তাকিয়ে থাকতে পারিনা।যদি উল্টাপাল্টা কিছু ভেবে বসে আমার ব্যক্তিত্ব নিয়ে।
আদিল,কার ড্রাইভ করার সময় একবার রুশার
দিকে তাকিয়ে ছিল পরক্ষণে নজর সরিয়ে ড্রাইভে মনোনিবেশ করলো আর নিজেকে অল্প ভাষায় শাসন করলো।
দু’জন দু’রকমের ভাবনা নিয়ে হসপিটালের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেলো।গাড়ি থামার পর রুশা ধীরপায়ে নেমে পড়লো গাড়ি থেকে ওপরপাশ থেকে আদিল গাড়ি থেকে বের হয়ে এলো। এরপর, কার লক করে সামনের দিকে অগ্রসর হতে লাগলো।
রুশা তার স্যারের পিছু পিছু হাঁটতে শুরু করেছে। আদিল শুধুমাত্র একবার ঘাড় ঘুরিয়ে দেখেছিল রুশা তার পিছু আসছে কি না? রুশাকে তার পিছু আসতে দেখে ঘাড় সামনে ফিরিয়ে মুচিক হেসে চোখে চশমা পড়ে আবারও হাঁটতে লাগলো।
আদিল রুশাকে তাদের ডিপার্টমেন্টের সামনে রেখে তার চেম্বারে চলে গেলো। আদিল চলে যাওয়ার পর রুশা এতক্ষণের চেপে রাখা নিঃশ্বাস ফেলে হালকা হলো। ক্লাসে প্রবেশ করতেই সর্বপ্রথম, যাকে দেখলো সে হলো মিসবাহ।
মিসবাহ গাঢ় দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো রুশার পানে। মিসবাহর, এমন চাহনির জন্য কিছুটা অস্বস্তিবোধ হচ্ছিল রুশার। এরইমাঝে ক্লাসে পর্দাপণ ঘটলো নাজের। রুশাকে দেখে জড়িয়ে ধরে বললো,
-দোস্ত,তোকে কতদিন দেখি না। আজ আমার দু’টি চোখে একটুখানি শান্তি মিললো।তোকে অনেক মিস করেছি আমি।
রুশা হেঁসে নাজকে জড়িয়ে ধরে বললো,
-আমিও তোকে অনেক মিস করেছি দোস্ত।
নাজ রুশাকে ছেড়ে দিলো এরপর রুশার হাত ধরে চেয়ারে বসিয়ে কানে কানে বললো,
-কি ভেবেছিস? মিসবাহকে না করে দিবি, না-কি?
-হ্যালো এভরিওয়ান। কেমন আছো, সবাই?
নাজ আর রুশা ঘাড় ফিরিয়ে দেখলো আদিল স্যার ক্লাসরুমে প্রবেশ করেছে। তড়িঘড়ি করে দু’জনে সবার সাথে একসঙ্গে দাঁড়িয়ে আদিলকে সম্মান প্রদর্শন করলো। সব স্টুডেন্টকে বসার জন্য ইশারা দিলো আদিল।
রিধিমা,নাজ আর রুশা বাদে সকল স্টুডেন্ট আদিলকে ক্লাসে দেখে প্রায় অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। আদিল সবার মুখের অভিব্যক্তি দেখে হালকা হেসে সব স্টুডেন্টকে উদ্দেশ্য করে বললো,
-আমাকে দেখে তোমরা হয়তো অবাক হয়েছো, তাই না?
-আসলে,স্যার আপনি আবারও আমাদের ক্লাসে মানে এই হসপিটালে এসেছেন!
মিসবাহ যেন বিশ্বাস করতে পারছে না। তাই আদিলকে জিজ্ঞেস করে ফেললো।
-হ্যাঁ, চলে এসেছি। কি করবো বলো, তোমরা? তোমাদের আর এই হসপিটালকে অনেক বেশি মিস করছিলাম তাই কিছুটা দৌঁড়ঝাঁপ করে আবারও ফিরে এলাম তোমাদের মাঝে। কেন তোমরা কেউ খুশি হওনি আমি ফিরে আসাতে?
-নো স্যার। আমরা সকলে অনেক খুশি আপনি ফিরে আসাতে।
সকল স্টুডেন্ট একসাথে বলে উঠলো। আদিল খেয়াল করে দেখলো মিসবাহ মুখ কালো করে বসে আছে। আদিল সেদিকে তেমন নজর না দিয়ে ক্লাস করাতে মনোনিবেশ করলো।
—————————–
-আব্বা, আপনি কেন এমন করছেন বলবেন একটু?
কাজল তার বাবা রায়হান সাহেবকে জিজ্ঞেস করলো।
রায়হান সাহবে সকালে কাজলের প্রশ্ন এড়িয়ে নিজের ঘরে চলে গিয়েছিলেন। কিন্তু, কাজল যে আবারও এই প্রশ্ন করবে তিনি ভাবতেও পারেননি।
দরজার সামনে দাঁড়িয়ে কাজল তার আব্বার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে এই আশায় যদি তার আব্বা প্রশ্নটির উত্তর দেয়!
-বাইরে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? ভিতরে আয়।
কাজল অনুমতি পেয়ে ঘরে প্রবেশ করলো। এরপর, তার বাবা পায়ের পাশে বসে পরলো। মেয়েকে পায়ের কাছে বসতে দেখে কিছু বললেন না রায়হান সাহেব। কারণ উনার মেয়েকে হাজার বারণ করলেও সেই পায়ের কাছেই বসবে।
-কাজল, তুই কি জানতে চাইছিস? আমি জানি। তবুও বলবো আদিল যা করছে তা ঠিক না।
-কেন,ঠিক না আব্বা? আজ এতবছর পর যখন কোনো মেয়েকে ভাইয়া পছন্দ করেছে সেক্ষেত্রে তাকে বারণ করাটা কতটুকু সমীচীন? আরও একবার ভাইয়ার মন ভেঙেছে আপনি কি চাইছেন নতুন করে ভাইয়ার মন আবারও জোড়া লাগার আগে ভেঙে চুরমার হয়ে যাক?
-গতবার, যে ভুল আমি করেছি এবারও সে ভুল আমি করতে চাই না কাজল। আদিলকে সেই ছোটবেলা থেকেই আমি কোনো কিছুর অভাবে রাখেনি তোর আম্মা তো আদিল বলতে পাগল ছিল।কিন্তু, আমার একটি পদক্ষেপে তোর আম্মা আর ভাই আমার থেকে আজ বহুদূরে চলে গেছে। আমার জীবনের একটাই আক্ষেপ তোর মায়ের থেকে আমি মাফ চাইতে পারলাম না। আর আদিলের সামনে গিয়ে দাঁড়ানোর মুখও আমার নেই।
-কেন, আপনি ভাইয়ার সামনে গিয়ে দাঁড়াতে পারবেন না? সে আপনার সন্তান, আপনার অংশ। একটিবার ভাইয়ার মাথায় হাত রেখে জিজ্ঞেস করুন, সে কেমন আছে তার আব্বাকে ছাড়া?দেখবেন তার অভিমানের বরফ গলে পানি হয়ে গিয়েছে।
-সে সাহস আমার মাঝে নেই।কাজল, আমার একটি কথা শোন মা?
-বলেন, আব্বা।
-তুই আদিলকে রুশার জীবনের সাথে বেঁধে দিস না। মেয়েটার এমনিতেই পোড়াকপাল এর মধ্যে তোর ভাইয়া আগে থেকেই তার মন আরেকজনকে দিয়ে রেখেছে। শুধু শুধু রুশাকে এমন একজনের কাছে দেয়ার কি দরকার? সে কখনোই রুশাকে ভালোবাসবে না। সে তো তার মাধুর্যকে ভালোবাসে।দেখ, গিয়ে তোর ভাই আমার থেকে প্রতিশোধ নিতে রুশাকে বিয়ে করে কষ্ট দিতে চাইছে।
কাজল,তার বাবাকে বলতে চাচ্ছিলো যে,
-আব্বা, রুশা হচ্ছে আপনার ছেলের মাধুর্য। সে কিভাবে তার মাধুর্যকে কষ্ট দিব?যার জন্য আজ সে তার পরিবারের থেকে দূরে।আবার যখন সে তার মাধুর্যকে ফিরে পেলো সেখানে আপনি আবারও তাকে বাঁধা দিচ্ছেন, কেন?
কাজলের কথাগুলো তার গলার নিচেই থেকে গেলো কিছু বলতে পারলো না। কারণ, আদিল বারণ করেছে রুশা যে আদিলের মাধুর্য এই কথা যেন কোনোভাবে রুশা বা তার আব্বা টের না পায়। তাহলে, কাজল কিভাবে তার আব্বাকে বলবে,এই কথা?
রায়হান সাহেব উনার কথা বিরতিহীনভাবে বলতে থাকলেন,
-সে হয়তো বুঝে গেছে রুশাকে আমি মেয়ের মতো ভালোবাসি?কাজল,তোর চোখের পানি যেমন আমি সহ্য করতে পারিনা ঠিক তেমনি রুশার চোখের পানিও আমার সহ্য হবে না। আজ সাড়ে চারবছর ধরে ওকে আমি আমার মেয়ের মতো আগলে রেখেছি সেখানে তোর ভাই এসে হুট করে তোদের জানালো সে তার পুরোনো ভালোবাসাকে ভুলে গিয়ে রুশাকে ভালোবাসে আর তোরা ওর কথা মেনে নিলি।
কাজল তার আব্বার কথা শুনে কিছু বলার ভাষা হারিয়ে ফেললো।কিছুটা সময় নিলো নিজেকে ধাতস্থ করতে। এরপর, তার আব্বাকে বললো,
-আব্বা, আপনি হয়তো ইদানীং ক্রাইম সিরিয়াল বেশি দেখেন।আপনার মাথায় এই কথা কিভাবে এলো যে, ভাইয়া আপনার থেকে প্রতিশোধ নিতে রুশাকে ভালোবাসে সে এই কথা মিথ্যা বলছে?আপনি এখনো আপনার ছেলেকে বুঝতে পারেননি আর বুঝতেও পারবেন না।
কথাগুলো বলে রেগে ঘর থেকে বের হয়ে গেলো কাজল। রায়হান সাহেব মেয়ের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে চোখ বুঁজে শুয়ে পড়লেন।
———————–
-রুশা, তুমি কিন্তু পরীক্ষার পরের ছুটি পর্যন্ত সময় নিয়েছিলে। ছুটি শেষ হয়েছে কবে কিন্তু তোমার থেকে এখনো কোনো এন্সার পাচ্ছি না কেন, আমি? মিসবাহ রুশার পথ আগলে ধরে বললো।
মিসবাহ, এরকম আচরণে বেশ বিরক্ত হলো রাখা রুশা।তবুও হাসিমুখে মিসবাহকে বললো,
-মিসবাহ, তুমি আমার ক্লাসমেট। তুমি আমাকে বিয়ে করতে চাও ঠিক আছে। কিন্তু, আমারও তো মতামত আছে না-কি?আমি তো সেদিন তোমার আম্মুকে কল করে বলেছি, “আমি তোমাকে বিয়ে করতে পারবোনা ” তবুও কেন এরকম বিহেব করছো তুমি?
-আমি কিছু জানতে চাই না। আমি শুধু জানি তুমি আমায় বিয়ে করবে সেটা আজ হোক কাল হোক বা দশবছর পর। তবুও আমার তোমাকেই চাই। একটা কথা মনে রেখো রুশা তুমি আমার না তো আর কারো না।
বলেই লম্বা কদম ফেলে মিসবাহ তার গাড়িতে উঠে চলে গেলো। আর রুশা থম মেরে দাঁড়িয়ে রইল মিসবাহর কথা শুনে।
হুট করে কে যেন রুশাকে পেছন থেকে জড়িয়ে বললো,
-কি রে এভাবে খাম্বার মতে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?
-নাজ, তুই কই চলে গিয়েছিলি? জানিস মিসবাহ কি বলে গেলো আমাকে?
-কি বলেছে? আর তুই এভাবে ঘামছিস কেন?
রুশা সবকিছু খুলে বললো নাজকে। সব শুনে নাজ বললো,
-তুই এই ব্যাপারটা নিয়ে রায়হান আঙ্কেলের সাথে কথা বলিস। নিশ্চয়ই কোনো সলিউশন পাবি। টেনশন করিস না। বাড়িতে চলে যা আমি রিকশা ঠিক করে দিচ্ছি।
রুশা পাহাড়সমান দুশ্চিন্তা নিয়ে বাড়ির পথে রওনা হলো।
#শেষ_বিকেলে_এলে_তুমি
#পর্ব_২৭
#Tahmina_Akther
-হ্যালো, ভাইয়া?
-কি হয়েছে, কাজল?কান্না করছিস কেন?
-ভাইয়া, রুশা এখনো বাড়িতে ফেরেনি। ও তো কখনো এত দেরি করে বাড়ি ফেরে না।
-তুই নাজকে কল করে জিজ্ঞেস কর, ওরা দুজন বোধহয় একসাথেই আছে।
নার্ভাস কন্ঠে কথাগুলো বলে উঠলো আদিল।
-ভাইয়া,আমি নাজকে কল দিয়েছি ও তো বললো, দুপুরে দু’টোয় নাকি আজ ওদের ক্লাস শেষ হয়ে গিয়েছিল। আর নাজ নিজেই নাকি রুশাকে বাড়িতে ফেরার জন্য রিকশা ঠিক করে দিয়েছে। রুশা যদি দুপুরে বাড়ির পথে রওনা হয় তনে এখনো এলো না কেন? এখন তো প্রায় সন্ধ্যা হয়ে এলো। রুশা তবে আছে কোথায়? বলেই হু হু করে কেঁদে ফেললো।
আদিল কোনোরকমে মোবাইল কান থেকে সরিয়ে একধ্যানে জানালার দিকে তাকিয়ে রইলো।পুরো শরীর অজানা আতংকে কাঁপছে। পুরো চার ঘন্টা হয়ে যাচ্ছে রুশা হসপিটাল থেকে বের হয়েছে এখনো বাড়িতে যায়নি তবে কি রুশার সাথে খারাপ কিছু ঘটেছে?
-না, না,কি ভাবছি আমি এসব? রুশার কিছু হবে না।
তড়িঘড়ি করে চেম্বার থেকে বের হয়ে হাঁটতে লাগলো উদ্দেশ্য রুশাদের ডিপার্টমেন্ট।
সেখানে যেতেই দেখলো ওয়ার্ড বয় শাওন দাঁড়িয়ে আছে।আদিল একপ্রকার দৌঁড়ে শাওনের সামনে যেয়ে জিজ্ঞেস করলো,
-এই শাওন, রুশাকে দেখেছো?
-জি,স্যার। ও তো দুপুরে এ চলে গেছে।
-ও আচ্ছা, ওর সাথে আর কাউকে যেতে দেখেছো?
-রুশার সাথে কাউকে যেতে দেখিনি। তবে রুশা গেটের কাছে যাওয়ার আগে মিসবাহ রুশার সাথে কি নিয়ে তর্ক করছিলো?স্যার, আমি আবার গেটের বাইরে গিয়েছিলাম চা খেতে তখনই ওদের দুজনকে দেখেছিলাম। এরপর,তো দেখলাম রুশার সাথে কি যেন নাম মেয়েটির সে রুশাকে রিকশা ঠিক করে দিয়েছে।
-আচ্ছা,শাওন আমি আসি তাহলে।
আদিল তার ডানহাত দিয়ে চুলগুলো পিছনে ঠেলে কোমরে একহাত রেখে কি যেন ভাবলো এরপর ওর চেম্বারে চলে গেলো।
—————————
-আয়াত, তুমি যেয়ে পুলিশে কমপ্লেন করো বাবা।আমার মেয়েটা না জানি কোথায় আছে? হায় আল্লাহ।
রায়হান সাহেব অস্থির কন্ঠে আয়াতকে উদ্দেশ্য করে বলছে।
-কাজল,আমি তাহলে পুলিশ স্টেশনে যাচ্ছি।তুমি বাবাকে দেখে রেখো।
কাজল কিছু না বলে শুধু মাথা নাড়িয়ে সায় জানালো।কান্নার দমকে ওর মুখ থেকে কথা বের হচ্ছে না। আয়াত কাকে যেন কল করলো এরপর,কথা বলতে বলতে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলো।
———————
-রিধিমা, তোমার সাথে আজ মিসবাহর কথা হয়েছে?
-নো স্যার। কিছু দরকার আছে স্যার? থাকলে বলুন আমি ওকে বলে দিব।
-না, তোমাকে বলা যাবে না। কাইন্ডলি ওর বাড়ির ঠিকানা যদি আমায় দিতে, রিধিমা?
-স্যার, আজ তো বৃহস্পতিবার। মিসবাহ আজ ওদের ফার্মহাউসে থাকবে। আপনি কি সেখানে ওর সাথে দেখা করবেন?
-সমস্যা নেই, আমি ওখানেই ওর সাথে দেখা করবো। তুমি ফার্মহাউসের ঠিকানা দাও।
-ওকে স্যার। আমি এড্রেস মেসেজ করে দিচ্ছি আপনার নাম্বারে।
-আচ্ছা।
কল কেটে দিলো আদিল। ওর ঠিক সামনে বসে আছে সুলতানা। সুলতানা আদিলকে উদ্দেশ্য করে বললো,
-আদিল,দেখ মিসবাহ রুশাকে পছন্দ করে তাই বলে রুশাকে ও কিডন্যাপ করবে এই ব্যাপারটা আমার হজম হচ্ছে না।
-তোর হজম হোক বা না হোক কিন্তু রুশাকে লাস্ট টাইম যখন দেখা গেছে তখন মিসবাহ আর রুশার কি নিয়ে তর্ক বির্তক হয়েছে। তর্ক বির্তক কি নিয়ে হবে তুই আর আমি ভালো করে জানি। তাই মিসবাহ সন্দেহের তালিকায় প্রথম।
-লাস্ট কখন দেখা গেছে রুশাকে?
-দুপুর দু’টোয়।এখন রাত সাতটা বাজে না জানি আমার মাধুর্য কেমন আছে, সুলতানা? ওকে আমি
বাকি কথাটুকু আর বলতে পারলো না আদিল ওর চোখ বেয়ে পানি পড়তে লাগলো।
মোবাইলে মেসেজ টোন বাজতেই আদিল ঝাপসা চোখে মোবাইলের স্ক্রীণে তাকিয়ে দেখলো রিধিমা এড্রেস টেক্সটে পাঠিয়েছে। সুলতানার কাছ থেকে কোনোরকম বিদায় নিয়ে হসপিটাল থেকে বেরিয়ে গেলো আদিল। কাকে যেন কল দিয়ে বললো, তাড়াতাড়ি চল আসতে?
———————-
প্রচন্ড পানির পিপাসায় আমার অবস্থা তখন বেশ করুন। কিন্তু, কিভাবে পানি খাবো আমি!
কোথায় আছি জানি না? পুরো রুম জুড়ে অন্ধকারে ছেয়ে আছে।কথা বলতে পারছি না, হাত-পা, মুখ বাঁধা। আমি কোথায় আছি? কে নিয়ে এসেছে, আমায়?
হুট করে রুমের দরজা খুলে কে যেন প্রবেশ করলো?লাইটের সুইচ অন করতেই ঘুটঘুটে অন্ধকার কেটে গেছে। তীব্র আলোর ঝলকানিতে আমি চোখ খুলে তাকাতে পারছিলাম না হয়তো অনেকসময় ধরে আঁধারে ছিলাম বলে!
বেশি কয়েকবার চেষ্টা করতেই চোখ মেলে তাকাতে সফল হলাম। চোখ খুলতেই সর্বপ্রথম যাকে দেখলাম সে হলো আমার অতি পরিচিত মুখ, মিসবাহ।
আমাকে তবে মিসবাহ এখানে নিয়ে এসেছে কিন্তু কেন?
এবার নিজের দিকে খেয়াল করে দেখলাম একটি খাটের ওপর আমাকে শুইয়ে রাখা হয়েছে।
ধীরপায়ে মিসবাহ এগিয়ে এসে আমার পায়ের কাছে বসলো। এরপর,আমার উরুতে মাথা পেতে দিলো। ঘৃণায় আমার পুরো শরীর রিরি করে উঠলো।না, আমি ওর স্পর্শ সহ্য করতে পারছিলাম না সরে যেতে পারছিলাম। কি যে এক অসহ্যকর অনুভুতি!
আমি সহ্য করতে না পেরে মুখ দিয়ে শব্দ বের করার চেষ্টা করছিলাম কিন্তু উুঁ উুঁ শব্দ ছাড়া আর কিছুই শোনা যাচ্ছিলো না।
মিসবাহ,যখন দেখলো আমি ছটফট করছি তখন সে উঠে দাঁড়িয়ে আমার মুখের সামনে উপুড় হয়ে বাঁধন খুলে ফেললো।
মুখের বাঁধন থেকে ছাড়া পেতেই বড় করে নিশ্বাস ফেলে,মিসবাহকে বললাম,
-এগুলো কি ধরণের অসভ্যতা? আমাকে এভাবে রাস্তা থেকে তুলে এনে হাত-পা বেঁধে রাখার মানে কি? আমাকে ছেড়ে দাও মিসবাহ, নইলে এর পরিনাম ভালো হবে না বলছি।
-হা হা হা রুশা। তোমার কথা শুনে আমার বেশ হাসি পাচ্ছে। তোমাকে আমি তুলে এনেছি কি ছেড়ে দেয়ার জন্য! আমি তো বলেছি যে করে হোক আমি তোমাকে আমার করেই ছাড়বো। তাই এই ব্যবস্থা করলাম।
এশার নামাজের পর কাজি সাহবে আসবে তুমি তৈরি থেকো আমার স্ত্রী হওয়ার জন্য।
মিসবাহর শেষের কথাগুলো শুনে রুশার ভয়ে অন্তর আত্মা কেঁপে উঠলো। মানে মিসবাহ ওকে বিয়ে করার জন্য এভাবে তুলে নিয়ে এসেছে!
-মিসবাহ, তুমি কিন্তু কাজটা ঠিক করছো না। আমি মরে গেলেও তোমাকে বিয়ে করবো না।
-তুমি যদি মরেও যাও দরকার হলে তোমার লাশকে বিয়ে করবো। তবুও আমার তোমাকে চাই।
-আমি তোমাকে বিয়ে করবো না। আমাকে ছেড়ে দাও বলছি মিসবাহ।আমার পরিবারের লোকেরা এতক্ষণে নিশ্চয়ই পুলিশকে খবর দিয়েছে।
-পুলিশের ভয় আমাকে দেখাবে না রুশা। পুলিশ আমার পকেটে থাকে। তোমাকে আমি ভালোভাবে বলছি আমাকে বিয়ে করতে রাজি হও যদি রাজি না হও তবে অন্য পথ বেছে নিতে হবে আমার।
-আমি তোমাকে বিয়ে করবো না
এবার বেশ চিল্লিয়ে কথাগুলো বললো রুশা।
-ওকে। বিয়ে না করলে নাই কিন্তু তোমার সাথে যে আমার আগেই ফুলসজ্জা হয়ে গেলো এখন তুৃমি কি করবে,রুশা?
মিসবাহর মুখ থেকে এমন নোংরা কথা শুনে ভয় রুশার পুরো শরীর কেঁপে।
-তুমি আমার সাথে এমনটা করতে পারলে, মিসবাহ?
-আমি তো তোমায় সোজাসাপটা বলেছি কিন্তু তুমি তো আর রাজি হলে না। আমি জানতাম তুমি আমায় বিয়ে করতে রাজি হবে না তাই তুমি যখন অচেতন ছিলে তখনই?দেখছো না তোমার গায়ে শাড়ি, আমি বদলে দিয়েছি।
মিসবাহর কথা শুনে আমি আমার শরীরের দিকে তাকালাম, দেখলাম সত্যি সত্যি আমার গায়ে শাড়ি, তবে কি মিসবাহ আমার সাথে?
এগুলো ভাবতে গিয়ে আমার চোখের পানি গড়িয়ে পড়তে লাগলো।
-আমি তোমাকে বিয়ে করতে রাজি নই তাই বলে আমার সাথে জোরজবরদস্তি করে এরকম অশোভন আচরণ করবে, তুমি ? আমি ডিভোর্সি, এক বাচ্চার মা আমার পিছনে কেন এভাবে পড়ে আছো?বিয়ে করতে হলে নাজ বা রিধিমা, নিলীমার মতো কাউকে করতে। কেন আমার সাথে তুমি এমনটা করেছো?
চিৎকার করে কান্না করছে আর কথাগুলো মিসবাহকে বলছে রুশা। কিন্তু, মিসবাহর আচরণে মনে হচ্ছে সে রুশার কোনো কথাই শুনতে পায়নি।
-এখন তুমিই ভাবো আমায় বিয়ে করবে নাকি ডিরেক্ট বিয়ে বাদে যে ফুলসজ্জা করলাম তোমার সাথে, তা সকলকে জানিয়ে দিবো? সবাই যদি এই কথা যদি জানতে পারে তবে তোমার কি অবস্থা হবে একবার ভেবে দেখো?
কথায় আছে না অল্প শোকে কাতর আর অধিক শোকে পাথর। রুশার অবস্থা এখন অধিক শোকে পাথর। দিশেহারাবোধ করতে লাগলো রুশা।
এতদিন সমাজের মানুষ জেনেছে সে ডিভোর্সি, এক সন্তানের মা।নতুন করে বুঝি ওর কপালে ধর্ষিতার তকমা লেগে যাবে?
মিসবাহের দিকে এক সমুদ্র ঘৃণা নিয়ে তাকিয়ে বললো,
-আমি তোমাকে বিয়ে করতে রাজি তবে আজকের এই ঘটনা আর অন্য কেউ যাতে জানতে না পারে।
#চলবে
(