#শেষ_থেকে_শুরু
#পর্ব_৬
#নন্দিনি_চৌধুরী
১১.
সায়মা আরিশের বিয়ের আজকে চারদিন পার হয়েগেছে।এই চারদিন আরিশ সায়মার কাছে তেমন যায়নি।শুধু সায়মার কখন কি দরকার না দরকার সেগুলার খেয়াল রেখেছে।আরিশ কেন জানি মানতে পারছেনা সায়মাকে।কিন্তু সেতো নিজেই সায়মার দিকে এগিয়েছিলো সায়মার দিকে এগিয়েইতো সে মুগ্ধকে ছেড়েদিয়েছে।তাহলে কেন পারছেনা সায়মার কাছে যেতে।আরিশ মাথায় হাত দিয়ে বসে বিড়বিড় করে বলছে,
“কেন মুগ্ধ কেন।কেন শুধু সম্পত্তির লোভে তুমি আমাকে বিয়ে করলে।সম্পত্তির লোভে তুমি দুইজন মানুষকে ঠকালে।আমার ভালোবাসায় তো কোনো খাদ ছিলোনা।তুমি বললে সম্পত্তির বাকি অংশ আমি তোমাকে দিয়ে দিতাম।কিন্তু তুমি সম্পত্তির জন্য আমাকে মারতে চাইলে ছিহ মুগ্ধ ছিহ।আমি তোমাকে কোনোদিন ক্ষমা করবোনা কোনোদিন না।তোমার জন্য আমি সায়মার দিকে এগিয়েও এগোতে পারছিনা।মেয়েটা আমাকে তোমার নোংড়া পরিকল্পনার হাত থেকে আমাকে বাঁচিয়েছিলো।আর সেই মেয়েটাকে আমি কষ্ট দিচ্ছি।”
আরিশ অফিসে বসে এসব ভাবতে লাগলো আর ডুব দিলো অতিতে………।
মুগ্ধ আরিশের বিয়ের ২বছর পূর্ন হবার দুই মাস আগে মুগ্ধ আরিশের কাছ থেকে পাওয়ার অফ এটোনি আর মুগ্ধের ভাগের সম্পত্তির প্যাপার গুলো নিয়েছিলো।আরিশ কোনো আপত্তি করেনি সেগুলো দিতে।কিন্তু পেপার গুলো মুগ্ধকে দেওয়ার দুইদিন পরেই আরিশের একটা এক্সসিডেন্টে হয়।সিলেট থেকে ঢাকা আশার পথে এই এক্সসিডেন্টে হয়।তখন সায়মা তাকে সেফ করে হাসপাতালে নিয়ে আসে।হাসপাতাল থেকে সায়মা আরিশকে নিয়ে ওদের বাসায় যায়।মুগ্ধ বোনকে পেয়ে কিছুদিন থেকে যেতে বলে।এরপর থেকে শুরু হয় মুগ্ধ আরিশের মাঝে ঝামেলা।একদিন সকালে আরিশ অফিসে বসে কাজ করছিলো তখন সায়মা ওকে কল দেয় আর বলে ৫মিনিটের ভিতর দারচিনি ক্যাফে আসতে।আরিশ ভেবেছে হয়তো কোনো জরুরি দরকার তাই যেতে বলছে তাই আরিশ সেখানে যায়।আরিশ কে দেখে সায়মা ওকে নিয়ে একটা আড়ালে গিয়ে দাঁড়ালো আর বললো,
সায়মা:একটু পর এখানে মুগ্ধ আসবে দেখো ও কিসের জন্য এসেছে।
আরিশ সায়মার কথায় বেস অবাক হয়।সত্যি একটু পর মুগ্ধ আসে সাথে একটা লোক ও আসে।মুগ্ধ তার সাথে কিছু কথা বলছিলো আর সম্পত্তির কাগজ আর পাওয়ার ওফ এটোনির কাগজটা দিলো।আরিশ অবাক হয়ে দেখে যাচ্ছিলো।একটু পর মুগ্ধ আর লোকটা চলে গেলো।সায়মা তখন বলতে লাগলো,
সায়মা:জানো আরিশ প্রায় দেখছি মুগ্ধ এই লোকটার সাথে দেখা করে প্রথমে বাসায় আসতো।এরপর বাসায় না এসে এভাবে দেখা করে।জানো সেদিন তোমার এক্সসিডেন্টে স্পোটে আমি এই লোকটাকে দেখেছিলাম।আমার কি মনে হয় জানো মুগ্ধ তোমাকে মেরে ফেলতে চায় সম্পত্তির জন্য।কারন তুমি মারা গেলে বাকি যা সম্পত্তি আছে তাও মুগ্ধের নামে হয়ে যাবে।আর একটা কথা তোমাকে বলতে চাই আরিশ সেটা হলো মুগ্ধ কিন্তু তোমাকে বিয়েই করেছে এই সম্পত্তির জন্য নাহলে কিন্তু ও তোমাকে বিয়ে করতোনা।একটু সাবধানে থেকো।
সেদিন মুগ্ধের ব্যাপারে আরিশের মনে সন্দেহ জেগে যায়।আর সেই সন্দেহকে বাস্তব করে ফেলে যেদিন আরিশের উপর আবার প্রানঘাতিক হামলা হয়।সেদিনও মুগ্ধ অই লোকটার সাথে দেখা করেছিলো আর সেদিন বিকালেই আরিশের উপর হামলা হয়।কিন্তু সেদিনও আরিশকে বাঁচিয়ে নেয় সায়মা।এরপর আরিশ বিশ্বাস করে নেয় মুগ্ধ তাকে মারতে চায় সম্পত্তির জন্য।আরিশ চেয়েছিলো মুগ্ধকে সরাসরি জিজ্ঞেশ করতে কিন্তু সায়মা তাকে বলে যে সে যদি মুগ্ধকে গিয়ে জিজ্ঞেশ করে তাহলে মুগ্ধ মিথ্যা বলবে স্বিকার করবেনা।তার থেকে সে জেনো মুগ্ধকে ডিভোর্স দিয়ে দেয়।বেস এরপর আরিশ সায়মার সাথে মিশে গেলো।সায়মা যা বলতো তাই করতে লাগলো।সায়মার সাথে আরিশের সম্পর্কের কথা সায়মা নিজেই মুগ্ধকে জানায়।সেদিন মুগ্ধ আরিশকে গিয়ে জিজ্ঞেশ করলে আরিশ স্বিকার করে আর বলে তাকে ডিভোর্স দিয়ে দিতে।সেদিন মুগ্ধ শুধু এতোটুকু বলেছিলো আমাকে এভাবে কেন ঠকালে।আরিশ সেদিন আর কোনো উত্তর দেয়নি।এরপর দিয়ে দিলো মুগ্ধকে ডিভোর্স।
বর্তমানে,,,
সায়মা ওর মায়ের সাথে ফোনে কথা বলছে,
সায়মা:মা আমিতো পেপারগুলো খুজে পাচ্ছিনা।
সালমা:ভালো করে খুজে দেখ সব তো আরিশের কাছেই থাকার কথা।মুগ্ধ তো আর পেপার গুলো নিয়ে যেতে পারবেনা।
সায়মা:তাহলে পেপারগুলো গেলো কই?
সালমা:ভালো করে খোজ।
সায়মা:আচ্ছা তুমি এটা বলো যে মুগ্ধের প্রোপার্টি পেপার গুলো পাইছো?
সালমা:আরে না তোর বাবার থেকে বের করতেই তো পারছিনা মেহেজাবিন সেই পেপার কই রেখেছে।
সায়মা:আচ্ছা তুমি অদিকটা দেখো আমি এদিক সামলাচ্ছি।
সালমা:আচ্ছা সাবধানে কাজ করিস।আরিশ জেনো সন্দেহ না করে।
সায়মা:আচ্ছা।
আজকে কলেজে এসেছে মুগ্ধ এই চারদিন বাসায় থেকেছে সে। মন শরীর কোনোটা ভালো যাচ্ছিলোনা তার।আজকে সে কিছুটা ভালো অনুভব করছে তাই কলেজে চলে আসলো।
কলেজের আজকে প্রথম ক্লাসটা সাদাফের।সাদাফ ক্লাসে আসতেই চোখ গেলো মুগ্ধের দিকে।এই চারদিন মেয়েটা আসেনি।সাদিয়ার থেকে শুনেছে মেয়েটা অসুস্থ।চেহারাও তাই বলছে।চেহারা কেমন মলিন হয়েরয়েছে।সাদাফ ক্লাসে এসে সবার থেকে পড়ানিলো।মুগ্ধে থেকে সে আশা করছিলো মুগ্ধ হয়তো পড়া পারবেনা।কিন্তু না মুগ্ধ পড়া পেরেছে।সাদাফ এতে খুশি হলো যাক মেয়েটা তাহলে পড়াশুনায় ফাঁকি দেয়না।হঠ্যাৎ পিয়ন এসে নোটিশ দিয়ে যায় তিনদিন পর কলেজে সংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আছে।যে যে অংশ নিতে চায় তারা যেনো নাম দিয়ে দেয়।মুগ্ধের এসবে এখন ইন্টারেস্ট নেই তাই সে কিছুতেই নাম দেবেনা বলে ঠিক করলো।
বাসায় এসে মুগ্ধ ফ্রেশ হয়ে নিচে আসলো।মেহের খাবার টেবিলে বসে ফোনে কথা বলছে। মুগ্ধকে দেঝে ইশারা করে বসতে বললো।মেহের ফোন রেখে মুগ্ধে দিকে তাকিয়ে বললো,
মেহের:শুনলাম আরিশের নাকি সায়মার সাথে বিয়ে হয়েগেছে?
মুগ্ধ:হুম আমিও শুনেছি।
মেহের:মানুষ কতটা খারাপ হলে এই বিয়ের সম্মতি দেয়।এক মেয়ের সংসার এক মেয়ে ভাংলো তাতে তার কিছু যায় আসলোনা।
মুগ্ধ:বাদ দেও ভাইয়া।এসব নিয়ে আর কিছু শুনতে চাইনা।
মেহের:হুম
মুগ্ধ:আরিশের সাথে আমার একটা শেষ কাজ রয়েগেছে ভাইয়া।আমি জানি সায়মা কিসের জন্য এসব করেছে।(মনে মনে)
মুগ্ধ খেয়ে উঠে রুমে চলে যায়।রুমে গিয়ে একজনকে কল দেয়।
মুগ্ধ:আসসালামু আলাইকুম।
………………………….
মুগ্ধ:জি আমার কাজ হয়েছে?
………………
মুগ্ধ:জি ওগুলা রেডি করে রেখে দেন। আমি যেদিন বলবো সেদিন পাঠিয়ে দিবেন মিস্টার ইসলামের কাছে।
মুগ্ধ ফোনটা রেখে আরিশের একটা ছবি বের করে সেটার দিকে তাকিয়ে বলে,,
১২.
আমি জানিনা সায়মা তোমাকে কি বুজিয়েছে।তবে আমার বিশ্বাস ছিলো তুমি আমাকে কোনোদিন ছাড়বেনা।কিন্তু না তুমি আমাকে ছেড়ে দিলে।তুমি জীবনে সব খুশি আনন্দ দিয়েছিলে আবার তুমিই সব কেড়ে নিলে।যাই হোক ভালাও থাকো।এটাই দোয়া।
“জীবনে সব থেকে ভালো যেই মানুষটা রাখতে পারে। সেই মানুষটাই সব থেকে বেশি কষ্ট দিয়ে যেতে পারে।”
মেহেরাব মেহেজাবিনের ছবি হাতে নিয়ে বসে আছে।তার দুচোখে পানি সে ছবিটাতে হাত বুলাচ্ছে আর বলছে,
আমাকে ক্ষমা করে দিও মেহেজাবিন।মিথ্যা ভালোবাসায় অন্ধ হয়ে আমি তোমার ভালোবাসাকে পায়ে ঠেলে দিয়েছিলাম।নিজের হাতে নিজের ছেলেমেয়েকে মা হারা করেছি।আমি যদি জানতাম যে জীবনের সব চেয়ে বড় ভুলটা আমি করছি তাহলে করতাম না এই ভুলটা।ছেলেটা আমার সেই যে পর হলো আজ ও আমার সাথে কথা বলেনা।মেয়েটা থেকেও নেই।নিজের ছেলেমেয়ের কাছে আমি চরম অপরাধি।কিন্তু আমি কি করবো বলো আমি যদি সায়মা আর সালমাকে কিছু বলি তাহলে আমি জানি এর শোধ ওরা মুগ্ধের উপর থেকে নেবে।তোমার মেহের অনেক বড় হয়েগেছে।বোনের দায়িত্ব সে নিয়েছে।বোনকে একদম আগলে রাখছে।
সাদাফ আজকে অনেকদিন পর গিটার হাতে নিয়ে বসেছে। শেষ সেদিন সে গিটার হাতে নিয়েছিলো, যেদিন তার প্রেয়শী অন্যের ঘরে চলে গিয়েছিলো।
সাদাফ গিটার টুংটাং সুর তুলছে।আজ বেশিই মনে পড়ছে তার প্রেয়শীকে।মুগ্ধকে দেখলেই তার প্রেয়শীর কথা মনে পরে।ছয় মাস সে তার প্রেয়শীকে না দেখে ভালোবেসেছে।শুধু তার চোখ দুটো সে দেখেছিলো।যেদিন সে ভেবেছিলো সে প্রেয়শীকে সামনাসামনি দেখবে,সেদিন প্রেয়শী তাকে ছেড়ে চলে যায় বড় লোক বাড়ির বউ হতে।
সাদাফ:”প্রথম প্রেম মানুষকে যেমন হাসতে শিখায় তেমন কাঁদতেও শিখায়।প্রথম প্রেম আমাদের ভালোবাসতে শিখায়।”
সকালে,,,,,
মুগ্ধ আজকে কলেজে যাচ্ছে হেঁটে হেঁটে।আজকে তার ইচ্ছা হয়েছে হেঁটে হেঁটে যাবে।মেহের না করেছিলো তবুও আজ সে হেঁটে যাবে।সাদিয়ার জন্য অপেক্ষা করবে চার রাস্তার মাথায়।মুগ্ধ আপন মনে রাস্তার আশপাশ দেখতে দেখতে যাচ্ছে।আগে আরিশের সাথে ঘুরতে বেরোলে এভাবে হেঁটে হেঁটে দুজনে ঘুরতো।আরিশের কথা মনে পরেতেই বুক চিড়ে বেরিয়ে এলো দীর্ঘশ্বাস।মুগ্ধ হেঁটে চার রাস্তায় মাথায় এলো।সাদিয়া আজকে ওর সাথে হেঁটে যাবে বলেছে।মুগ্ধ রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিলো তখন চোখ গেলো একটা দোকানে দিকে।সেখানে চোখ যেতেই মুগ্ধের বুকটা ছেঁত করে উঠে।আরিশ আর সায়মা ঠিক তার অপর সাইডে এক সাথে দোকানের সামনে দাঁড়ানো।মুগ্ধে মুখ থেকে বেরিয়ে আসে,,,
“আরিশ সায়মা”।
#শেষ_থেকে_শুরু🦋
#পর্ব_৭
#নন্দিনি_চৌধুরী
১৩.
রাতে মুগ্ধ আরিশ আর ওর বিয়ের ছবিটা নিয়ে বসে আছে।চোখের কোণে বিন্দু বিন্দু পানি জমে আছে।সেতো চায়নি এমন কিছু।সে চায়নি আরিশের থেকে আলাদা হতে,সে চায়নি সমাজে ডিভোর্সি পরিচিয়ে থাকতে।সবতো তার ভাগ্যের পরিহাস।
“জীবনে আমরা যাকে অনেক বেশি ভালোবাসি বিশ্বাস করি সেই আমাদের সব চেয়ে বেশি কষ্ট দেয়। সে জন্য হয়তো কেউ বলেছিল__ জীবনে যাকে ভালোবাসো তাকে পেতেই হবে এমন কথা নেই। যদি সে তোমার না হতে চায়,যদি কেঁদেও তুমি তাকে না পাও। তবে তাকে হেসে মুক্তি দেও”।
সকালে,,,
মুগ্ধ যখন আরিশ সায়মা তার অপর সাইডে দেখে তখন সে তাদের থেকে আড়ালে যাওয়ার জন্য পিছাঁলেই। সায়মা তাকে দেখে ফেলে।সায়মা মুগ্ধকে দেখে একটা বাঁকা হাসি দিয়ে মুগ্ধের দিকে আগায়।মুগ্ধ সায়মাকে আসতে দেখে দাঁড়িয়ে যায়।কারণ ও ভালো করেই জানে এখন আর ও যেতে পারবেনা।সায়মা মুগ্ধের কাছে এসে দাঁড়ায় তারপর বলে,
সায়মা:আরে আপু তুই এখানে?
মুগ্ধ:হ্যা কলেজে যাচ্ছি।
সায়মা:বাব্বাহ ডিভোর্স এর মাত্র এক সপ্তাহ হলো এর মধ্যেই রাস্তায় বেরোচ্ছিস।লজ্জা সরম করেনা নাকি রে।
মুগ্ধ:কেন আমার লজ্জা করবে কেন? কেউ যদি ডিভোর্সের চারদিনের মাথায় বিয়ে করতে পারে। তো আমি কেন রাস্তায় বেরোতে পারবোনা।কোনো আইনে আমার জানামতে তো লেখা নেই যে, ডিভোর্সি মেয়ে রাস্তায় বের হতে পারবেনা।
সায়মা:উফফ এখনো তোর এতো দেমাগ আসে কোথা থেকে।যাই হোক আমি আর আরিশ বিয়ে করে ফেলেছি।
মুগ্ধ:হ্যা জানি।অন্যের স্বামীকে কেড়ে নিয়ে তাকে বিয়ে করে ফেলা কত সুখের তা তোকে না দেখলে জানতাম না।
সায়মা:তুই কি আমাকে অপমান করছিস?
মুগ্ধ:মান অপমান বোধ আছে তোর তাতো জানতাম না।এনি ওয়ে আমার দেড়ি হচ্চে সো এক্সকিউজ মি।
বলেই মুগ্ধ সোজা হাটা দিলো কলেজের পথে আর সায়মা ওখানে রাগে ফুসতে ফুসতে বলতে থাকে,
সায়মা:তোর লাইফ আমি হেল করে দেবো মুগ্ধ। যেমন করে সাদাফ,আরিশের কাছে তোকে নিচু করেছি। এভার তোর ফুল লাইফ নষ্ট করে দেবো আমি।তখন দেখবো কই থাকে এই বড় বড় কথা আর এটিটিউড। সায়মা আবার আরিশের কাছে ব্যাক করলো।আরিশ এত্তোখন ফোনে কথা বলছিলো দেখে খেয়াল করেনি সায়মা তার পাশে নেই বা মুগ্ধকেও দেখেনি।সায়মাকে আসতে দেখে আরিশ বলে,
আরিশ:কই গেছিলে?
সায়মা:অই একটি সামনে গেছিলাম চলো ভিতরে চলো।
আরিশ:আচ্ছা চলো।
মুগ্ধ মাঝ পথে আসতেই সাদিয়ার সাথে দেখা হয়।নিজেকে নরমাল করে সাদিয়ার সাথে গল্প করতে করতে কলেজে যায়।কলেজে আজকে ক্লাস নেই সবাই অনুষ্টানের জন্য বিজি।সবাই কোনো না কোনো কিছু একটাতে নাম দিচ্ছে।সাদিয়া মুগ্ধকে বলছিলো নাম দিতে কিন্তু মুগ্ধ কোনো কিছুতে নাম দেবেনা।তার এসব ভালো লাগেনা।তাই সাদিয়াও আর জোর করেনি।মুগ্ধ আর সাদিয়া বেশ কিছু সময় কাটিয়ে চলে আসে বাসায়।বাসায় আসার পথে আজকেও কিছু মহিলার বাজ্ব কথার স্বিকার হয়েছে সে।তবুও মুখ বুজে সেসব শুনে চলে এসেছে।
বাসায় এসে নিজের রুমে বসে রইল মুগ্ধ।আজকে খেতেও যায়নি নিচে।রুহি এসে অনেকবার ডাক দিলেও মুগ্ধ বলছে তার শরীর ভালোনা তাই সে পরে খাবে।
এখন রাত হয়ে গেছে মুগ্ধ তার রুমেই আছে।কেন জানি তার বিষাক্ত মনে হচ্চে।এমন একটা জীবন তার কি প্রাপ্য ছিলো।
সায়মা আরিশের আলমারি,লোকার সব খুজে হাপিয়ে গেছে কিন্তু ফাইলগুলো পাচ্ছেনা।সায়মা ভেবে পাচ্ছেনা ফাইলগুলো গেলো কোথায়।মুগ্ধ তো এই আলমারিতেই সব রাখতো।তাহলে সব আছে কিন্তু অই ফাইল দুটো কই।
সায়মা:বুজতে পারছিনা ঘরে সব আছে শুধু ফাইল দুটোই উদাও।আচ্ছা ফাইলগুলো মুগ্ধ নিয়ে যায়নিতো।কিন্তু ও কি করে নেবে আইনোতো ওতো মুগ্ধের স্ত্রী নয়।তাহলে গেলো কই ফাইলগুলো।
সায়মা আবার সব কিছু হন্নে হয়ে খুজতে লাগলো।
কি খুজতেছো সায়মা?
হঠ্যাৎ পিছন থেকে কথাটা শুজে ভেবাঁচেকা খেয়ে গেলো সায়মা।পিছনে ফিরে দেখে আরিশ দরজায় দাঁড়ানো।আরিশ রুমে ডুকে দেখে আলমারির সব কিছু ছড়িয়ে ছিটিয়ে পরে আছে।সায়মার কাছে এসে বলে,
আরিশ:এভাবে কি খুজতেছো বলোতো।সব এরকম ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে।
সায়মা:অই আসলে আমার কানের দুল খুজে পাচ্ছিনা।
আরিশ:সামান্য একটা দুলের জন্য ঘর পুলা লন্ড বন্ড করে দিছো আল্লাহ।
সায়মা:ওটা তুমি আমাকে দিয়েছিলে আরিশ।কিন্তু কোথায় যে গেলো দুলটা খুজেই পাচ্ছিনা।এক কানের দুল আছে আর কানেএ দুল খুজে পাচ্ছিনা।
আরিশ ওর পকেট থেকে দুল বের করে সায়মার সামনে ধরলো,
আরিশ:দুলটা গাড়িতে পরে ছিলো।এই নেও এই সামান্য জিনিশ নিয়ে হাইপার হবার কিছু নেই।এই অবস্থায় রিলেক্স থাকা লাগে তুমি জানোনা।
সায়মা আরিশকে জরিয়ে ধরে বলে,
সায়মা:হ্যা জানিতো।(গাধা কথাকার। আমি কি এই দুলটার জন্য পাগল হয়েছিনাকি। আমিতো যেই জিনিশ দরকার সেটা খুজতেছিলাম। নাহ কালকে মায়ের সাথে কথা বলতে হবে।)
আরিশ:চলো ডিনার করে নেই।
সায়মা:হুম চলো।
রাতে মেহের বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে আসলে রুহি মেহেরকে বলে,
রুহি:শুনো পাখি আজ দুপুর থেকে না খাওয়া। আমি অনেকবার ডেকেছি কিন্তু বলছে শরীর খারাপ তাই খাবেনা।আমার না ঠিক মনে হচ্চেনা তুমি একটু দেখোনা।
মেহের:তুমি আমাকে একটা কল করবানা যে ও এখনো না খাওয়া।আচ্ছা তুমি খাবার রেডি করো আমি দেখছি ওর কি হয়েছে।
মেহের মুগ্ধের রুমে এসে দেখে মুগ্ধ ঘুম সোফায়। পাশে আরিশের আর ওর বিয়ের ফোটো ফ্রেম।মেহের মুগ্ধের পাশে বসে মুগ্ধের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,
আমি জানি তোর খুব কষ্ট হচ্চে।কিন্তু তোকে শক্ত হতে হবে।আরিশের মতো ছেলে তোকে কোনোদিন ডিজার্ব করেনা।আরিশ কাচকে হিরা ভেবে আপন করেছে।এর ফল তো ওকে ভোগ করতেই হবে।আর কেউ না জানুক আমি জানি মিস সালমার মেয়ে ঠিক তার মতোই হয়েছে তার চেয়ে ২গুন ভয়ংকর হয়েছে।তোকে আমি সায়মার আশে পাশেও আর যেতে দেবোনা।আমি জানি ও অত পেতে বসে আছে তোর ক্ষতি করার জন্য।প্রোপার্টির ৫০% এর জন্য এসব করছে।ওই প্রোপার্টি তারা কোনোদিন পাবেনা এক মাত্র মা জানতো যে অগুলা সে কোথায় রেখেছে।
আমারটা খুব সহজে হাতালেও তোর ভাগেরটা তারা কোনোদিন পাবেনা।
মেহের মুগ্ধকে কোলে নিয়ে খাটে শুয়ে দিলো।
মেয়েটা একদম মায়ের মতো চাপা স্বভাবের হয়েছে।মাও কোনোদিন তার কষ্টের কথা গুলো কাউকে বলতোনা।মেহের যখন ২বছর তখন মুগ্ধ মায়ের পেটে।বাবা সেই অবস্থাতেও মাকে মারতো।মা মুখ বুজে সব সয্য করতো।মেহের তখোন ছোট তাই বুজতোনা।এরপর মুগ্ধ হলো কিন্তু বাবার অত্যাচার কমার বদলেএ বাড়তে লাগলো।রোজ মাকে মারতো।আর মা চুপ করে সয্য করতো।রাতে নামাজে বসে মা কাঁদতো।মায়ের এক্সসিডেন্টে এর এক সপ্তাহ আগে বাবা মায়ের সাথে হঠ্যাৎ করে স্বাভাবিক হয়ে গেলো।এর পরের সপ্তাহেই আমাকে বাসায় নিজের কাছে রেখে মাকে মুগ্ধকে নিয়ে পাঠালো নানুবাড়ি।নানুবাসা থেকে আসার পথে সারাজীবনের মতো হারিয়ে গেলো মা।আল্লাহ হয়ত আমার জন্য বোনটাকে বাঁচিয়ে দিয়েছিলো।কিন্তু সেই বোনটাকে ভালো রাখতে পারলামনা।মাকে দেওয়া ওয়াদা রাখতে পারলাম না।সব সময় মা বলতো মেহেরকে যে আমার কিছু হয়েগেলে তুই তোর বোনকে আগলে রাখবি।সেই বোনকে সঠিক সময় আগলে রাখতে পারলাম না।যখন তার জীবনটা অই মহিলা আর তার মেয়ে নষ্ট করে দিলো তারপর আগলে নিলাম।নিজেকে অনেক অপরাধি লাগে।কিন্তু এখন আমার বোনের গায়ে একটা ফুলের টোকাও লাগতে দেবোনা আমি।
মেহের কথা গুলো বলে মুগ্ধের কপালে একটা চুমু দিয়ে চলে আসে।রুহি মেহেরকে আসতে দেখে জিজ্ঞেশ করে মুগ্ধের কথা মেহের বলে,
এখন ঘুমাচ্ছে ওর রুমে খাবার রেখে আসো।ঘুম যখন ভাংগবে তখন খেয়ে নেবে।রুহি মেহেরের কথা মতো খাবার মুগ্ধের রুকে দিয়ে আসে।
১৪.
সকালে হতেই সায়মা তার মাকে কল লাগায়।আরিশ ঘুমিয়ে আছে এই সুযোগে কথা বলে নিতে হবে।
সায়মা:হ্যালো মা।
সালমা:হুম বল।
সায়মা:মা আমি পুরা বাড়ি খুজেছি কিন্তু কোথাও ফাইল দুটো পাইনি।
সালমা:কি আশ্চর্যকথা বাড়ি থেকে ফাইল গুলো গেলো কই।
সায়মা:বুজতে পারছিনা মা।তার উপর কাল আরিশের কাছে ধরা খেতে খেতে বেঁচেছি।
সালমা:মানে?
সায়মা:আরে কাল যখন ফাইল খুজতেছিলাম তখন আরিশ বাসায় এসে আমাকে এভাবে খুজতে দেখে জিজ্ঞেশ করছিলো আমি কি খুজতেছি।তখন একটা বাহানা দিয়ে দিয়েছি।
সালমা:আচ্ছা শোন কিছুদিন তুই ফাইল খোজা বন্ধ রাখ।আর শোন খুব সাবধানে চলবি বুজলি।খুব তাড়াতাড়ি এই বাচ্চার কাহীনী শেষ করবো।ততদিন একটি ম্যানেজ কর।
সায়মা:আচ্ছা।এখন রাখি আরিশ উঠে যাবে এখোনি।
সালমা:আচ্ছা।
মুগ্ধ সকালে আজকে উঠতে দেড়ি হয়ে গেছে।আড়মোরা দিয়ে উঠে দেখে পাশে টেবিলে খাবার রাখা আর সে বিছানায়।মুগ্ধ বুজতে পারব মেহের এসে তাকে শুইয়ে দিয়ে গেছে।মুগ্ধ উঠে ফ্রেশ হয়ে নেয়।আজকে কলেজে যাবেনা কোনো ক্লাস যেহুতু নেই যাওয়ার দরকার নেই।মুগ্ধ নিচে চলে যায় নাস্তা করার জন্য।মেহের টেবিলে বসে ল্যাপ্টপে কাজ করছে রুহি ফল কেটে প্লেটে রাখছে।কাজের মেয়ে নাস্তা সাজিয়ে দিচ্ছে।মুগ্ধ এসে বসেই রুহিকে বললো,
মুগ্ধ:ভাবিপু আমার খুব খুদা লাগছে।আমাকে খেতে দেও।
রুহি:কেন আজকেও না খেয়েই থাক।তোর যে খুধা বলতে কিছু আছে তা তো জানা ছিলোনা আমার।
মুগ্ধ:সরি আর না খেয়ে এরকম করবোনা।
রুহি:হুম এই নে নাস্তা।
রুহি মুগ্ধকে পরাটা,মুরগির মাংস প্লেটে দিলো।মুগ্ধ খুধা পেটে থাকায় গবগব করে খেতে লাগলো।
মেহের:তোর কলেজের অনুষ্ঠানে চিপ গেস্ট কে জানিস?
মুগ্ধ:নাতো।কে?
মেহের:আমি আর আরিশ।
মুগ্ধ:আরিশ!
মেহের:হুম একটু আগেই তোদের প্রিন্সিপাল মেইল করলো ইনভিটেশন কার্ড আমাকে সেখানে দেখলাম।
মুগ্ধ:তাহলে আমি যাচ্ছিনা কাল।
মেহের:কেন?আরিশ আসবে বলে।আরিশ আসুক যা করুক তুই যাবিনা কেন।ওর সাথে তোর সব শেষ বুজলি।সো কাল তুই যাচ্ছিস এটা ফাইনাল।
মুগ্ধ:আচ্ছা😒।
মেহের:চল তোকে কলেজে দিয়ে আসি।
মুগ্ধ:না আজকে যাবোনা।
মেহের:আচ্ছা তাহলে আমি অফিসে গেলাম সাবধানে থেকো তোমরা।
রুহি,মুগ্ধ:তুমিও সাবধানে যেও।
মেহের অফিসে বসে কাজ করছে তখন ওর ফোনে কল আসে। মেহের ল্যাপ্টপের দিকে তাকিয়ে কল রিসিভ করে।অপাশ থেকে একজন অচেনা বলে উঠে,
অচেনা:আপনার বোনের সামনে খুব বিপদ।পারলে তাকে বাঁচিয়ে নেন।ছাড়বেনা ওকে ওরা ছাড়বেনা।
মেহের কথাটা শুনে চমকে গেলো। মেহের প্রতি উত্তরে কিছু বলবে তার আগেই কল্টা কেটে গেলো।মেহের আবার নাম্বারটাতে ট্রাই করলে নাম্বার বন্ধ দেখায়।মেহের কপালে চিন্তার ভাজ পরে যায়।কে এ কিসেএ বিপদের কথা বললো।কিসের বিপোদ।
#চলবে
আজকে ভাবছিলাম গল্প দিবনা কিন্তু দিয়ে দিলাম।ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেনা।আগামিকাল একটা ঝটকা সবার জন্য ওয়েট করছে💁♀️🙆♀️।
#চলবে
আগামীকাল গল্প দিবোনা একটু সমস্যা আছে প্লিজ সরি🙏।ভুল ত্রুটি মাফ করবেন।