শেষ_থেকে_শুরু পর্ব ৯

#শেষ_থেকে_শুরু
#পর্ব_৯
#নন্দিনী_চৌধুরী

১৮.
সকালের দিকে জ্ঞান ফিরেছে মুগ্ধের।হাতের সেলাইনটা খুলে দেওয়া হয়েছে।মেহের আর রুহি কালকে থেকে এখানেই আছে।সকালে নার্স এসে খাওয়ার আগের মেডিসিন গুলো খাইয়েদিয়ে গেছে।মেহের এখন নাস্তা কিনতে যাবে বাহিরে।মেহের বের হবে এমন সময় সাদিয়া এসে হাজির।হাতে খাবার ফল নিয়ে আসছে।পিছনে সাদাফ ও আসছে।

সাদাফ:আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া।
মেহের:ওলাইকুমুস সালাম।আসো সাদাফ।
সাদাফ:ভাইয়া কালকে থেকে আপনি ভাবি এখানে। আপনারা এখন বাসায় যান।ফ্রেশ হয়ে রেস্ট নিয়ে আসেন।আমি আর সাদিয়া এখানে আছি।
মেহের:না থাক তোমরা কেন কষ্ট করতে যাবে তাছাড়া তোমার তো কলেজে আজকে ক্লাস আছেনা।
সাদাফ:আমি প্রিন্সিপাল স্যারের সাথে কথা বলে নিয়েছি।আজকে জন্য ছুটি নিয়েছি।আপনারা যান ফ্রেশ হয়ে রেস্ট নিয়ে আসুন।আমরা এখানে আছি।
মেহের:আচ্ছা আমরা তাড়াতাড়ি এসে পরবো।

এরপর মেহের রুহিকে নিয়ে বাসায় চলে যায়।আর সাদিয়া সাদাফ মুগ্ধের কাছে থাকে।মুগ্ধ ঘুমিয়ে আছে।সাদিয়া আসতে করে ওর পাশে বসে মুগ্ধকে ডাক দিলো,

সাদিয়া:মুলা এই মুলা।

মুগ্ধ আসতে করে চোখ খুললো।সাদিয়াকে দেখে হালকা হাসলো মুগ্ধ।সাদিয়া আসতে করে মুগ্ধকে উঠিয়ে বসালো।মুগ্ধ আসে পাশে তাকিয়ে দেখে ভাইয়া ভাবি নেই।মুগ্ধ আসতে করে বলে উঠে,

মুগ্ধ:ভাইয়া আর ভাবিপু কই সাদু?
সাদিয়া:ভাইয়া আর ভাবিকে কিছুক্ষন হলো বাসায় পাঠাইছে ভাইয়া।কাল থেকে তারা এখানে। তাই এখন ফ্রেশ হয়ে রেস্ট নিতে পাঠিয়েছে ভাইয়া।
মুগ্ধ:অহ আচ্ছা।
সাদিয়া:আচ্ছা নে এখন এই স্যুপ্টা খেয়ে নে।

সাদিয়া একটু একটু করে স্যুপটা খাইয়ে দিচ্ছে মুগ্ধকে। তখন সাদাফ রুমে আসলো।মুগ্ধ সাদাফের দিকে একবার তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নেয়।সাদিয়া মুগ্ধকে স্যুপ্টা খাইয়ে মেডিসিন খাইয়ে শুইয়ে দিলো।সাদিয়া ফোনের দিকে তাকিয়ে সাদাফকে বলে,

সাদিয়া:ভাইয়া আমি ক্লাসে গেলাম।তুমি থাকো।আমি দুইটা ক্লাস করেই চলে আসবো।
সাদাফ:আচ্ছা গাড়ি নিয়ে যা।
সাদিয়া:আচ্ছা।

সাদিয়া চলে আসলো।মুগ্ধ তাকিয়ে আছে সাদাফের দিকে সাদাফ তাকাতেই দৃষ্টি সরিয়ে নিলো সে।সাদাফ আসতে করে মুগ্ধের পাশের চেয়ারে বসলো।

সাদাফ:সরি মিস মেহুরানী।
মুগ্ধ সাদাফের মুখ থেকে মেহুরানী ডাকটা শুনে থমকে গেলো।এক আলাদা শিহরণবয়ে গেলো তার শরীরে।
মুগ্ধ:সরি কিসের জন্য স্যার?
সাদাফ:কালকের ব্যাবহারের জন্য।আমার ব্যাবহারে আপনি কষ্ট পেয়ে কাঁদছিলেন।
মুগ্ধের কালকের ঘটনা গুলো মনে পরে গেলো আর মনে মনে বলতে লাগলো,
না স্যার আপনার কথায় আমি কাঁদিনি।আপনি তো কাল আমাকে বাঁচিয়েছিলেন।আমিতো কেঁদেছি ওই মানুষগুলোর জন্য যাদের কাছে আমি মুল্যহীন।
মুগ্ধ আসতে করে বলে,
মুগ্ধ:না স্যার আপনার কথায় আমি কষ্ট পাইনি।বরং আপনাকে ধন্যবাদ কাল আমাকে বাঁচানোর জন্য।
সাদাফ:আচ্ছা।এখন তুমি রেস্ট নেও।আমি এখানেই আছি।কিছু লাগলে বলো।

সাদাফ উঠে যায়।আর মুগ্ধ চোখ বন্ধ করে ফেলে।মেডিসিনের ডোজ কড়া থাকায় ঘুমিয়ে যায় একটু পড়েই।সাদাফ ঘুমন্ত মুগ্ধের দিকে তাকিয়ে আছে,ভাবছে এক কৈশরি মেয়ের হিজাবের মধ্য ফুটে থাকা দুটি আঁখির প্রেমে পড়েছিলো সে।সেই আঁখির মালিক তার দিকে তাকালেই এক আলাদা প্রশান্তি লাগতো তার।কিন্তু কেউ এই পবিত্র আঁখি অন্যায় কাজে লাগিয়েছে ভাবতেই সাদাফের রাগ লাগে।এতো বড় বোকামি সে কি করে করলো।আজ তার বোকামিতেই সে তার প্রেয়শীকে হারিয়েছিলো।

সালমা বেগমের রুমে মাথায় দুই দিয়ে বসে আছে সায়মা।সালমা বেগম সোফায় বসে আছে।

সায়মা:মা তুমি কেন মুগ্ধকে মারতে গেলে।এখন তো যদি কেউ জেনে যায়। তাহলে বুজতে পারছো কতবড় ঝামেলায় তুমি আমি পরবো।
সালমা:আমি কি জানতাম যে সাদাফ ওখানে।সাদাফ ওই কলেজেই আছে যেই কলেজে মুগ্ধ পড়ে।আর তুই কিভাবে গাধা মতো কাজ করস এটা আমি সেটা বুজলাম না।
সায়মা:মা আমার খুব চিন্তা হচ্চে।সাদাফ তো সিওর মুগ্ধের সাথে হাসপাতালে যদি ও সব জেনে যায় তাহলে আমাকে তো ধরে ফেলবে।

সালমা:কিছু হবেনা তুই ভয় পাস না।দরকার হলে আমি আরো একটা খুন করবো।তবুও আমার মেয়ের কিছু হতে দেবোনা।মেহেজাবীনকে যেভাবে সরিয়েছি ওর মেয়েকেও মারবো।(মনে মনে)
সায়মা:মা এখন আমি কি করবো?
সালমা:শোন তুই অই কলেজে ডুকে পর।তারপর নজর রাখবি সাদাফ আর মুগ্ধের উপর।
সায়মা:ওই কলেজে কিন্তু আরিশ কি দেবে যেতে।এই বেবির কথা বলে আমি পুরা ফেঁসে গেছি।
সালমা:কালকেই এই বেবির গল্প শেষ।তুই কোনো চিন্তা করিস না।
সায়মা:সত্যি!
সালমা:হুম সত্যি।
সায়মা:আচ্ছা মা একটা কথা বলি?
সালমা:বল।
সায়মা:আচ্ছা মা মেহেজাবীন আন্টির সাথে তোমার কিসের শত্রুতাছিলো।নাহলে তুমিতো শুধু সম্পত্তির জন্য এমন করছো বলে আমার মনে হয়না।
সালমা:শত্রুতা অনেক কিছুর।কিন্তু ওর সাথে আমার সব থেকে বড় শত্রুতা ও আমার সব সুখ কেড়ে নিয়েছিলো তাই আমি ওর জীবন্টাই ওর থেকে কেড়ে নিয়েছি।
সায়মা:মানে?
সালমা:এতো মানে তোর জানতে হবেনা।তুই এটা বল ফাইল গুলো পেয়েছিস?
সায়মা:না মা পাইনি বুজতে পারছিনা ফাইল গুলো কই।কিন্তু মা তুমি বললানা কেন মারতে চাইলে তুমি মুগ্ধকে?
সালমা:কারণ মুগ্ধকে না মারলে সম্পত্তি কোনোদিন তোর হবেনা।
সায়মা:মানে?
সালমা:আমি মেহেজাবীনের উকিলের সাথে কথা বলেছিলাম। সে আমাকে জানিয়েছে মেহেজাবীন মুগ্ধের নামের যেই সম্পত্তি রেখে গেছে। সেটা মুগ্ধ ১৮ বছর হলেই ওর নামে হয়ে যাবে।কিন্তু কোনো ভাবে মুগ্ধের যদি মৃত্যু হয় তাহলে সেই সম্পত্তি মুগ্ধের বাবা মা বা ভাই পাবে।এখন মুগ্ধের মা তো নেই।মেহের তো এই সম্পত্তি কোনোদিন নেবেনা।বাকি তোর বাপ। তার কাছে সম্পত্তি চলে আসলে সেটা হাতিয়ে নেওয়া আমার জন্য আমার কোনো সমস্যা হবেনা।কিন্তু তার জন্য আগে মুগ্ধকে মরতে হবে।
সায়মা:আমার আর এইসব ভালো লাগছেনা।ভয় লাগছে এখন।
সালমা:ভয় পাস না যা তুই এখন রুমে যা।
সায়মা:আচ্ছা।
সায়মা রুমে চলে গেলো।আর সালমা মনে মনে বলতে লাগলো,

মেহেজাবীন আমার শত্রু। ওর পুরা পরিবার আমার শত্রু।ওর জন্য আমি কোনো সুখ পাইনি আমার মা ওর মায়ের জন্য সুখ পায়নি।আর এখন ওর মেয়ের জন্য আমার মেয়ে সুখ পাচ্ছেনা।

১২টার দিকে মেহের রুহি আসলো হাসপাতালে।সাদাফ তখন বসে ছিলো।মেহের কে দেখে উঠে দাঁড়ালো।মুগ্ধ তখোনো ঘুম।

মেহের:খেয়েছে নাস্তা?
সাদাফ:হ্যা সাদিয়া খাইয়ে মেডিসিন দিয়ে কলেজে গেছে।
মেহের:অহ তোমাদের খুব ধন্যবাদ।আমাদের পাশে এভাবে থাকার জন্য।
সাদাফ:ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করবেন না।
মেহের:ডাক্তারের সাথে কথা বললাম। ডাক্তার বললো চাইলে আমরা ওকে নিয়ে যেতে পারি। তবে বাসায় নার্স রাখতে হবে ফুল দেখাশুনা করতে হবে।আমি ভাবছি ওকে নিয়ে যাবো দুটো নার্স রাখবো আর রুহিতো আছেই।
সাদাফ:আচ্ছা আমারো মনে হয় বাসায় নিয়ে যাওয়া উচিত।
মেহের:হ্যা আমি সব ফোরামালিটি করে নিয়ে যাবো এখন।
সাদাফ:তাহলে আমি আসি আজকে।
মেহের:আচ্ছা তবে বাসায় কিন্তু আসবে।সাদিয়াকে নিয়ে কেমন।
সাদাফ:জি আচ্ছা।

সাদাফ চলে যাওয়ার পর মেহের সব গুছগাছ করিয়ে মুগ্ধকে বাসায় নিয়ে আসে।সাথে দুইজন নার্স নেয়।

মুগ্ধ বাসায় আসছে আজকে দুইদিন।এই দুইদিন মুগ্ধের প্রপার সেবা করেছে রুহি আর নার্স মিলে।মেহের এখনো বোনের সাথে কথা বলেনি।মুগ্ধ বুজতে পারছে ভাইয়ের অভিমান।বিকালে মুগ্ধ খাটে পিছনে বালিশ দিয়ে হেলান দিয়ে শুয়ে আছে।তখন মেহের ওর রুমে আসে।ভাইয়কে দেখে হালকা হাসলো মুগ্ধ।মেহের মুগ্ধের সামনে বসে বোনের হাত দুটো ধরে বলতে থাকে,

মেহের:সত্যি করে বলতো চড়ুইপাখি।সেদিন তুই মাঝ রাস্তায় গেলি কিভাবে।তুইতো কলেজে ছিলি।
মুগ্ধ:…………
মেহের:কি হলো বল।বলবিনা তাইতো।আচ্ছা বলিস না আমি বলছি আরিশ সায়মা তোকে অপমান করে। আর তুই কেঁদে বের হোস রাস্তায়। আর একটা গাড়ি এসে তোকে ধাক্কা মারে।তাই তো।
মুগ্ধ ভাইয়ের কথা শুনে অবাক।
মুগ্ধ:ভাইয়া তুমি!
মেহের:হ্যা আমি জানি তোর কি মনে হয় তোর গায়ে কেউ একটা আচড় দিলে আমি তা টের পাবোনা।তোকে খোদার কসম করে বলছি অই মিসেস সালমার মেয়ের জীবন আমি বিশিয়ে দেবো আর আরিশ ওকে তো আমি রাস্তার ভিক্ষারি করে দেবো।এটা আমার প্রতিজ্ঞা।
মুগ্ধ:না ভাইয়া কোনো ঝামেলা করতে যেওনা।
মেহের:তুই চুপ কর।এতোদিন অনেক সয্য করেছি কিন্তু আর না এভার ওদের পাপেএ সাজার পালা।
মুগ্ধ ভাইয়ের কথায় খুব চিন্তায় পরে যায়।সে চায়না ভাইয়ের কোনো ক্ষতি হোক।

১৯.
সাদিয়া আর সাদাফ এসেছে মুগ্ধকে সন্ধ্যায় দেখতে।সাদাফ সাদিয়া মেহের মুগ্ধের রুমে বসা।সাদিয়া মুগ্ধের পাশে।আর সাফাফ সামনের সোফায়।মেহের দরজার পাশের চেয়ারে বসা।

মেহের:সাদাফ তোমার বাবাকেও নিয়ে আসতে।
সাদাফ:বাবা আসবে ভাইয়া আজকেই আসতো কিন্তু একটু কাজের চাপে আসতে পারেনি।
মেহের:আচ্ছা হ্যা উনি আসলে আমার খুব ভালো লাগবে।
এমন সময় সার্ভেন্ট এলো,
সার্ভেন্ট:স্যার ম্যাম অনাদের নিয়ে নিচে আসতে বলেছে নাস্তা করার জন্য।
মেহের:আচ্ছা তুমি যাও আসছি আমরা।সাদাফ সাদিয়া আসো।
সাদাফ:জি আপনি এগোন আসছি আমরা।
মেহের চলে গেলো।সাদাফ সাদিয়াকে ইশারা করতেই সাদিয়া মুচকি হেসে চলে গেলো।
মুগ্ধ আর সাদাফ এখন একা রুমে।মুগ্ধের কেমন জানি লাগছে।সাদাফ আসতে করে উঠে মুগ্ধের সামনে এলো।তারপর একটা বক্স দিলো এগিয়ে।মুগ্ধ বক্সটার দিকে তাকিয়ে আছে।সাদাফ বুজতে পেরে বলে,

সাদাফ:ধরো এটা।
মুগ্ধ আসতে করে ধরে বক্সটা।
সাদাফ:আমরা যাওয়ার পর বক্সটা খুলবা।
মুগ্ধ:জি আচ্ছা।
সাদাফ:হুম আসি টেক কেয়ার।

সাদাফ চলে গেলো।মুগ্ধ সাদাফের যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছে।

সাদাফ সাদিয়া নাস্তা করে আরো কিছুক্ষন মেহেরের সাথে কথা বলে চলে গেলো।

মুগ্ধকে রাতের খাবার মেডিসিন খাইয়ে নার্স চলে গেছে।মুগ্ধ পাশে থাকা বক্সটা হাতে নিয়ে ভাবছে খুলবে কিনা।ভাবতে ভাবতে বক্সটা খুলে ফেললো।

বক্সটা খুলে দেখে তার ভিতর অনেক গুলা চোকলেট,আর তিনটা চিরকুট।

মুগ্ধ চিরকুট তিনটা হাতে নিয়ে একটা করে খুল্লো।

প্রথম চিরকুট,
“তুমি কি জানো যে তোমাকে কাঁদলে পুরা পেত্নির মতো লাগে মেহুরানী।”শুনো আর কোনোদিন কারো কথায় কাঁদবেনা।উচিত জবাবতাকে দেবে।”

দ্বিতীয় চিরকুট,
“পৃথীবিতে কেউ যখন তোমাকে বোঝার চেষ্টা করেনা, তখন এই টুকু মনে রাখবে আল্লাহ তোমাকে বুঝেন আর ভালোবাসেন”।

তৃতীয় চিরকুট,
“চাইবে শুধু আল্লাহর কাছে,পাইলেও চাইবে না পাইলেও চাইবে।আল্লাহ চাইলে অনেক খারাপ রাখতে পারতো।কিন্তু আল্লাহ তোমাকে অনেক ভালো রেখেছে। আলহামদুলিল্লাহ”।

মুগ্ধ চিরকুট গুলা পরে মুগ্ধ হয়ে গেছে।আসলেই আল্লাহ চাইলে কত খারাপ রাখতে পারতো।কিন্তু কত ভালো আছে সে।একটা এতো ভালো ভাই ভাবি পেয়েছে।সত্যি কেন সে সেদিন মৃত্যু চেয়েছিলো।

“মানুষের জীবনে অনেক কিছু ঘটে তাই বলে মৃত্যু কামনা করা একদম ঠিকনা।দুনিয়াতে শুধু আমি একা কি ডিভোর্সি নাকি।অনেকে আছে তারা তাদের জীবনের শেষ থেকে শুরু করতে পারলে আমিও পারবো।আমকে আমার জীবনে ঘুরে দাঁড়াতে হবে।হ্যা আমি পারবোই।”
#শেষ_থেকে_শুরু
#পর্ব_বোনাস
#নন্দিনী_চৌধুরী

২০.
নিজের অফিসের চেয়ারে বসে ল্যাপ্টপে কাজ করছে মেহের।ফাঁকে ফাঁকে একটু করে কফি খাচ্ছে।মেহেরের অফিসের ম্যানেজার মেহেরের কেবিনে আসলো।

ম্যানেজার:May I coming Sir?
মেহের:Yes Coming.
ম্যানেজার:স্যার আপনার কথা মতো ArS কম্পানির সাথে আমাদের +অন্যসব কম্পানির ডিল ক্যান্সেল করিয়ে দিয়েছি।এখন আগামি ৫মাসেও তারা কোমর সোজা করে দাঁড়াতে পারবেনা।
মেহের:আগামি ৫মাস কেন আমি চাই তারা রাস্তায় নেমে যাক।সেই ব্যাবস্থা তুমি করো।কোনো এশিয়ান কাম্পানি জেনো ওদের সাথে ডিল না করে।
ম্যানেজার:জি আচ্ছা স্যার আমি এখন আসছি।
ম্যানেজার যাওয়ার পর মেহের চেহারে হেলান দিয়ে বসে বলতে লাগলো,

মেহের:”আরিশ তুই আমার বোনের চোখের পানি ঝরিয়েছিস।আমার বোনকে অপমান করেছিস।তোকে আমি রাস্তায় নামিয়ে আনবো।মিসেস সালমার যেই অর্থের জন্য তোর কাছে মেয়েকে লিলিয়ে দিছে অই অর্থই আমি কেড়ে নেবো।তুই জানোস না আমার বোন আমার কাছে কি।আমার বোনের চোখের পানির দাম তো তোকে আর সায়মাকে দিতেই হবে।Just wait And Watch Mr.Arish.”

নিজের রুমে বসে চোকলেট খাচ্ছে মুগ্ধ আর কার্টুন দেখছে।এক সপ্তাহে অনেক সুস্থ হয়ে গেছে মুগ্ধ পাশাপাশি নিজের আগের জীবনে ফিরে আসছে সে।মেহের রুহি এটা দেখে খুব খুশি।যে অবশেষে মেয়েটা ঠিক হচ্ছে।মুগ্ধ চোকলেট খাচ্ছে এর মাঝে ওর ফোনে কল আসে ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে দেখে বোবা ভুত লেখা।মুগ্ধ চোখ মুখ কুচকে বলে উঠে,

আজকেও উফফ!

মুগ্ধ কল রিসিভ করে হ্যালো বললো,

মুগ্ধ:হ্যালো।কে? আচ্ছা আপনি কথা বলেন না কেন ফোন দিয়ে হ্যা বোবা নাকি আপনি?বোবা হলেও তো একটু পুতপুত আওয়াজ করে তাও তো করেন না।নাকি বোবা ভূতে ধরছে আপনাকে কোনটা।শুনেন এরপর যদি কল দেন তাহলে একদম খবর করে দেবো।

কথা গুলো বলেই মুগ্ধ কল কেটে দিলো।বিগত এক সপ্তাহ ধরে এই নাম্বারটা থেকে কল আসে কিন্তু কেউ কথা বলেনা।প্রথমে মুগ্ধ ভাবতো হয়তো তাকে কেউ চেতানোর জন্য এমন করছে কিন্তু প্রত্যেকদিন কল আসে কিন্তু কেউ কথা বলেনা।মুগ্ধ একদিন রেগে কল ধরছিলোনা কিন্তু ফোনদাতা ফোন দিয়ে যাচ্ছিলো তো দিয়েই যাচ্ছিলো।শেষমেষ বাধ্য হয়ে কল রিসিভ করে মুগ্ধ সেই চুপ থাকে।তাই মুগ্ধ এর নাম দিয়েছে বোবা ভূত।মুগ্ধ ফোন হাত থেকে রাখতে যাবে দেখে ফোনে বোবা ভূতের ম্যাসেজ আসছে,

বোবাভূত:আগামিকাল নীল জামাটা পরে আসবা কলেজে ওকে।

মুগ্ধ ম্যাসেজ দেখে অবাক।বোবা ভূত দেখি কলেজ ও চিনে।কিন্তু এই বেটার কথা আমি শুনুম কেন পরমুনা নীল জামা হুহ।মুগ্ধ নিজের মনে মনে এসন আওড়াতে আওড়াতে নিচে চলে আসলো।

রুহি বসে বসে আচাড় খাচ্ছে।রুহিকে আচাড় খেতে দেখে মুগ্ধ ওর পাশে এসে বসে বলে,

মুগ্ধ:উহুম উহুম কি আমাদের বাসায় কি জুনিওর মেহের আসছে নাকি।
রুহি মুগ্ধের কথা শুনে লজ্জা লাল হয়ে যায়।রুহিকে লজ্জা পেতে দেখে মুগ্ধ খুশি হয়ে বলে,

মুগ্ধ:ভাবিপু সত্যি?
রুহি:হুম🙈।
মুগ্ধ:ইয়েস আমি ফুপি আম্মু হবো।উফ আমার এখোনি কি যে ভাল্লাগছে।ভাইয়াকে জানাবে কখন?
রুহি:বাসায় আসলেই।
মুগ্ধ:আচ্ছা।

কথা বলার মাঝে মেহের বাসায় আসে।হাতে তার দুই প্যাকেট ছানার মিষ্টি।বাসায় ডুকে মিষ্টি গুলো রেখে রুহিকে কোলে তুলে নেয় মেহের।রুহিতো লজ্জা শেষ🙆‍♀️।মুগ্ধ মুখ টিপে হাসছে।সে আসতে করে রুমে চলে আসলো।

মেহের রুহিকে কোল থেকে নামিয়ে কপালে চুমু দিয়ে বললো,

মেহের:ধন্যবাদ আমাকে এতো বড় উপহার দেওয়ার জন্য।
রুহি:তুমি!
মেহের:তোমার রিপোর্ট ডাক্তার আমার কাছে পাঠিয়েছে আমি আগেই জেনেছি।
রুহি:ভালোবাসি।
মেহের:ভালোবাসি বউ।

মুগ্ধ নিজের রুমে হাসতে হাসতে চলে আসলো।আজকে তার ভাই কত খুশি।ইসস তার ও এরকম হ্যাপি একটা ফ্যামিলি হতে পারতো। কিন্তু তার ভাগ্যে হয়ত সেই সুখ নেই।মুগ্ধ একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।টেবিলে রাখা মায়ের ফোটো ফ্রেমটা বুকে জরিয়ে ধরে শুয়ে পড়লো।যখন মুগ্ধ ছোট ছিলো তখন খেলতে গিয়ে ব্যাথা পেলে কাঁদতে কাঁদতে মায়ের কোলে মুখ লুকাতো।রাতে মা তাকে ভাইকে গল্প শুনিয়ে ঘুম পাড়াতো।কত আদর করতো।কিন্তু মাকে আল্লাহ নিয়ে গেলো।মুগ্ধ মায়ের কথা ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে গেলো।মেহের ফ্রেশ হয়ে এসে বোনের রুমে দেখে মুগ্ধ ঘুম।মায়ের ফোটো ফ্রেম বুকে জরিয়ে ঘুমিয়ে গেছে।মেহের আসতে করে ফোটো ফ্রেমটা সরিয়ে কাথা গায়ে দিয়ে দিলো।ড্রিম লাইয় জ্বালিয়ে মুগ্ধের কপালে একটা চুমু দিয়ে চলে গেলো।

সকালে,

মুগ্ধ উঠে নামাজ পরে নিলো।হালকা পড়া পরে রেডি হলো কলেজের জন্য।একটা হলুদ কালারের কূর্তি পরলো সাথে নেবিব্লু কালারের স্ক্রাফ বাদলো মাথায়।রেডি হয়ে নিচে এসে তাড়াতাড়ি নাস্তা করে বেরিয়ে পরলো।আজকে রিকশা করে যাবে মুগ্ধ।মেহেরকে খুব কষ্টে রাজি করিয়েছে।মেহেরতো ওকে একা ছাড়তেই রাজিনা।তবুও খুব কষ্টে রাজি করিয়ে এসেছে।মুগ্ধ রোডে দাঁড়িয়ে রিকশা খুজতেছে গতকাত রাতে বৃষ্টি হইছে তাই রোড সব কাদা পানিতে ভোরা।মুগ্ধ এক কোণায় দাঁড়িয়ে রিকশা খুজতেছে তখন একটা গাড়ি একদম ওর পাশ থেকে এসে ওর জামায় কাদা ছিটিয়ে দিলো।মুগ্ধ তা দেখে অবাক হয়ে রেগে চিৎকার করে বলে,

মুগ্ধ:এই চোখে দেখে গাড়ি চালাতে পারেন না। আমার জামাটা নষ্ট করে দিলেন।

মুগ্ধের চিৎকার শুনে গাড়িওয়ালা গাড়ি থামিয়ে বেরিয়ে আসে গাড়ি থেকে।গাড়ি থেকে সাদাফকে নামতে দেখে আরো অবাক হয় মুগ্ধ।একটু অভিমান ও হচ্ছে এই এক সপ্তাহে সাদাফ আর একবার ও আসেনি ওকে দেখতে সাদিয়া সাদিয়ার বাবা মা এসেছিলো কিন্তু সাদাফ আসেনি।সাদাফ চোখের সানগ্লাসটা খুলে পকেটে রেখে মুগ্ধের দিকে এগিয়ে এসে বলে,

সাদাফ:ইইইইই যা আপনার ড্রেসতো নষ্ট হয়ে গেলো মিস মুগ্ধ।এখন কি হবে।
মুগ্ধ:আপনার জন্যই তো হলো।গাড়ি দেখে শুনে চালান না কেন স্যার।
সাদাফ:ইস আমি সরি রিয়েলি সরি।এক মিনিট দাঁড়ান।

সাদাফ আবার নিজের গাড়ির কাছে গিয়ে গেট খুলে একটা ব্যাগ বের করলো তারপর আবার মুগ্ধের কাছে এসে ব্যাগটা হাতে দিয়ে বললো,

সাদাফ:এইখানে একটা ড্রেস আছে।এটা সাদিয়ার জন্য নিছিলাম এখন আপনি এটা চ্যাঞ্জ করে পরে নেন।

মুগ্ধ:আমি কি এটা এখানে চ্যাঞ্জ করবো।এখানে কই আছে চ্যাঞ্জ করার জায়গা?

সাদাফ:মিস মুগ্ধ আপনি মনে হয় চোখে কম দেখেন আপনার হাতের পাশেই তো একটা মল।ওখানে গিয়ে চ্যাঞ্জ করে নেন।

মুগ্ধ সাদাফের কথা শুনে পাশে তাকিয়ে দেখে আসলেই একটা শপিংমল মুগ্ধ তাড়াতাড়ি সেখানে গিয়ে চ্যাঞ্জ করে নিলো।একটা নীল রং এর কামিজ।মুগ্ধ চ্যাঞ্জ করে বেরিয়ে আসে। সাদাফ তখন রাস্তায় গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়ানো।মুগ্ধকে দেখে ঠিক হয়ে দাঁড়ায়।নীল জামার সাথে নীল স্কাফ কোনো সাজ নেই তবুও দেখতে ভালো লাগছে।সাদাফ মুচকি হাসি দেয়।মুগ্ধ এসে দাঁড়াতেই সাদাফ একটা রিকশা ঠিক করে দেয় তারপর মুগ্ধের দিকে তাকিয়ে বলে,

সাদাফ:সাদু নানা বাসায়।ও কলেজে আসবেনা কিছুদিন।তো এখন কয়েকদিন বান্ধুবিকে ছাড়া ক্লাস করতে হবে।নেন এখন যান।আর হ্যা সাবধানে আবার কারো গাড়ি দিয়ে কাদা মাখাইয়েন না।

মুগ্ধ সাদাফের কথা শুনে রাগে গজগজ করতে করতে রিকশায় উঠলো।

নিজেই কাদা ছিটালো।আমার দেড়ি করালো।আর এখন বলে সাবধানে যেতে।দেইখেন আপনার কপালে একটা সাতচুন্নি জুটবে হুম।

বকবক করতে করতে মুগ্ধ চলে যায়।আর সাসাফ সেখানে দাঁড়িয়ে হেসে বলে,

“যতোটা মুগ্ধতা নিয়ে আমি তোমার দিকে তাকিয়ে তোমাকে দেখি মেহুরানী,ততোটা মুগ্ধতা নিয়ে আমি ওই দুর আকাশের দিকেও তাকাইনি”।

মনে মনে কথাটা বলে সাদাফ গাড়ি নিয়ে চললো কলেজের পথে।

🌻
নিজের রুমে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে আরিশ।তার জীবনের সব কিছু এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে।তার নিজের অংশ পৃথীবিতে আসার আগেই চলেগেলো।এখন বিজনেসে লোস শুরু হয়েছে।সব দিক থেকে সে কেমন শেষ হয়ে যাচ্ছে।একসপ্তাহ আগেও সব কত ভালোছিলো বাচ্চাটাকে নিয়ে আরিশ কত এক্সসাইটেড ছিলো।কিন্তু সব শেষ হয়ে গেলো।এক সপ্তাহ আগে সায়মা ওর মায়ের বাসায় যাওয়ার পরের দিন ওর মা কল করে জানালো সায়মা ওয়াশরুমে পা পিছলে পরে গেছে এখন হাসপাতালে।আরিশ দ্রুত হাসপাতালে যায় কিন্তু ততোখনে সব শেষ বাচ্চাটা নষ্ট হয়ে গেছে জানায় ডাক্তার।সায়মা অনেক কেঁদেছিলো আরিশের হাত ধরে আর মাফ চেয়েছে।আরিশ অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে সায়মাকে সামলেছে।এরপর সায়মা ওর মায়ের কাছেই আছে।ওখানে থাকলে সায়মা নরমাল থাকবে আরিশের মনে হয়।এরপর এখন বিজনেসের লোস এতো টাকার লোস হয়ে গেলো এখন কিভাবে কি করবে সে কিছুই বুজতে পারছেনা।সব এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে তার।

নিজের রুমে আয়েস করে বসে কফি খাচ্ছে সায়মা আর সালমা।অন্তত একটা ঝামেলা মিটলো।এই বাচ্চার ঝামেলা না মিটলে সায়মাকে আরিশ তো চোখের আড়াল করতোই না।এখন ফাইনালি না আছে বাচ্চা আর না এখন আরিশ সায়মাকে চোখে চোখে রাখবে।

সায়মা:উফ মা তুমি বাঁচিয়ে দিলা।হাপিয়ে গিয়েছিলাম এই প্রেগন্যান্ট হবার নাটক করতে করতে।
সালমা:হুম এখন আর আরিশ তোকে পাহারা দেবেনা।
সায়মা:হুম তো কিছু ভাবলে সামনে কি করবে?
সালমা:ভাবছি কি করবো।তোর বাপ তো আজ রাতে আসছে।
সায়মা:অহ আচ্ছা।
সালমা:হুম।

মেহের বাসায় আজকে কারন আজ তার কোনো জরুলি কাজ নেই।মেহের বসে কাজ করছিলো তখন বাসার দাড়োয়ান আসলো।

দাড়োয়াম:স্যার আপনার জন্য চিঠি আসছে।
মেহের:আমার জন্য?
দাড়োয়ান:জি স্যার আপনার জন্য।
মেহের:কে দিলো?
দাড়োয়ান:জানিনা পোষ্টমেন আইসা দিয়া গেলো।
মেহের:আচ্ছা দেও আমাকে।
দাড়োয়ান:এই লোন।
দাড়োয়ান মেহেরকে চিঠি দিয়ে চলে আসলো।মেহের চিঠির খামে দেখলো কিছু লেখা নেই।তাই খাম খুলে চিঠি বের করলো।চিঠিটা খুলতেই অবাক হয়ে গেলো মেহের।

#চলবে

🙆‍♀️।💁‍♀️🖤

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here