শ্রাবনের মেঘ পর্ব -০৪

গল্পের নাম : #শ্রাবনের_মেঘ
লেখিকা : ফারিয়া
পর্ব : ৪
আজ আহম্মেদ ভিলায় রান্নার তোড়জোড় চলছে। বাড়ির ছেলে আজ বাড়িতে আসবে বলে কথা। তিন ভাইয়ের মধ্যে কেউ একজন বেশী দিন বাইরে থাকলে যেনো বাড়িটি প্রান হারায়। আজ শ্রাবন বাড়ি ফিরবে। ওদের পৌছাতে বিকাল হয়ে গেলো। সবাই তাড়াতাড়ি ফেরার পর, কিছুক্ষনের মধ্যেই কলিংবেলের আওয়াজ পেতেই, শ্রাবনের মা গিয়ে দরজা খুললো। ছেলেকে দেখে জড়িয়ে ধরলো উনি। কিন্তু পাশে মেঘার দিকে চোখ পড়তেই বলে উঠলো,
” শ্রাবন, এই মেয়ে কে বাবা?”

শ্রাবন বললো,
” অনেক বড় কাহিনী, আগে ভিতরে ঢুকতে দাও, বলছি। ”

মেঘা তাকে সালাম করলো, এতে শেফালী খুব খুশি হল। কারণ এ যুগের মেয়েরা‌ পা লাগলেও সালাম করে না। সেখানে এমন ব্যতিক্রমধর্মী মেয়ে দেখে তার ভালো লাগলো। শ্রাবন মেঘার হাত ধরে ভিতরে ঢুকলো। মেঘা বুঝতে পারল এটা তার মা। মেঘা সবাইকে সালাম করলো। মেঘাকে সোফায় বসতে বলে শ্রাবন সব খুলে বললো। সব শুনে সবাই খুশী হলেও, শ্রাবনের মায়ের মুখটা মলিন হয়ে উঠলো। মেঘাকে উনার পছন্দ হয়নি তা নয়, মায়াবী মুখখানা সবারই মন কেড়ে নিতে বাধ্য। কিন্তু, নিজের বোনের মেয়েকে বউমা বানানোর খুব শখ তার। তাছাড়া বিয়ে না দিতে পারলে, তার জেদি বোনটি কি না কি করে বসে। তবুও, পরে এসব বলবে ভেবে উনি চুপ করেই রইলো। হটাৎ ইশা আহম্মেদ বলে উঠলো,
” তুমি কে মা? তোমার নাম কি? ”

মেঘা বলে উঠলো,
” আমার নাম মেঘা। ”

নামটি শুনে ইশা আহম্মেদের বুক ঢপ করে উঠলো, চোখ জ্বলে উঠলো। মেঘা লক্ষ্য করল বাকিদের মুখটা কেমন মলিন হয়ে উঠলো, তবে তার নাম শুনে এমন হওয়ার কারণ সে কিছুতেই বুঝে উঠতে পারে না। শ্রাবন বলে উঠলো,
” মা আমি অফিসে যাব, ততক্ষণ ওকে আর কোন প্রশ্ন করোনা। ও অনেক টায়ার্ড আমি এসে বাকি কথা হবে। ওকে আমার রুমটা দেখিয়ে দাও। ”

শেফালী আহম্মেদ আমতা আমতা করে বলে উঠলো,
” তোর রুমে কেনো বাবা? ”

শ্রাবন বিরক্তি নিয়ে বলল,
” মা, ও আমার স্ত্রী। আমার সবকিছুতে তার পূর্ণ অধিকার রয়েছে, আর তোমরা মানো বা না মানো, সে আমার স্ত্রী। সে আমার অর্ধাঙ্গিনী, মানে আমার অর্ধেক অংশ। ”

শেফালী আহম্মেদ মনে মনে ভাবলো, এই মেয়ে এখনই তার ছেলেকে ব/স করে ফেলেছে। সে আর কিছু না বলে, মেঘাকে শ্রাবনের রুমটা দেখিয়ে দিলো। রুমে ঢুকতে মেঘা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল, এত বড় এবং এত সুন্দর আলিশান রুম সে কখনো দেখেনি। গ্রামের বাইরে খুব একটা যাওয়া হয়নি তার, কখনো যেতে চাইলেও তার বাবা তাকে যেতে দেয়নি। এই ঘরের একপাশে রয়েছে বড় বিছানা, ড্রেসিং টেবিল ,আলমারি, সো ফা এবং এছাড়াও আর অনেক কিছুই রয়েছে। রয়েছে একটি ওয়াশরুম, একটি বড় বেলকনি। বামে তাকাতেই দেখল দেয়ালে শ্রাবনের কয়েকটি হাস্যজ্জল ছবি রয়েছে। তার কালো রংয়ের গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে, পা দুটো ক্রস স্টাইলে সাদা শার্ট এবং কালো প্যান্ট ইন করে পড়ে চোখে একটি কালো চশমা, ছবিতে এত সুন্দর লাগছে এটা বলার মত নয়। আরেকটি ছবিতে সমুদ্রের পাড়ে দাঁড়ানো ব্লু রংয়ের শার্ট, হাতা ফোল্ড করা, চুলগুলো কপালে পড়েছে। কিছুক্ষণের জন্য মুগ্ধতার আবেশ ঘিরে ধরল মেঘাকে। ফ্রেশ হয়ে এসে বিছানায় শুতেই এক রাজ্য ঘুম এসে পাড়ি দিলো মেঘার চোখে।
🍂
শ্রাবন অফিসে ঢুকতেই সবাই তাকে বাহবা দিতে লাগলো। অনেক বড় বড় কেস শ্রাবন‍ই সমাধান করে। এটা আজ নতুন নয়, এর আগে অনেক বড় বড় কেস সমাধান করতে সক্ষম হয়েছে সে। তাই তার উপরই বেশি ভরসা করা অফিসের বস। বসের কেবিনে গিয়ে নক করতেই, তিনি বলে উঠলেন,
” আরে ইয়ং ম্যান, প্লিজ কাম। তোমার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। ”

শ্রাবন মুচকি হেসে ঢুকলো। বস আবার বলা শুরু করলেন
” আমি অনেক খুশি হয়েছি তোমার প্রতি, ওয়েল ডান। আমি জানতাম তুমি পারবেই। এই সুবাদে আগামী সাতদিন তোমার ছুটি। যাও গিয়ে নিজেকে রিফ্রেশ করে এসো। তারপরে নতুন মিশনে তোমায় পাঠাবো। ”

আরো কিছুক্ষণ কথা বলে শ্রাবন বাড়ি চলে গেল। রুমে যেতে দেখলেও মেঘা ঘুমিয়ে রয়েছে, পরনের নীল সাদা শাড়ি। চুলগুলো মুখে এসে পড়েছে, চুলগুলো সরিয়ে দিল কপালে একটি ভালোবাসার চিহ্ন একে দিল। তারপর ফ্রেশ হয়ে এসে, মেঘাকে ডেকে তুললো। হুট করে তাকে দেখে মেঘা ভয় পেয়ে গেল। মেঘা বলল,
” অনেকক্ষণ ঘুমিয়েছি? আসলে অনেক ক্লান্ত ছিলাম, তাই কখন ঘুমিয়ে পড়েছি নিজেও জানিনা। অনেকটা সময় পেরিয়ে গিয়েছে তাই না? ”

মেঘা খুব ইতস্তত করতে লাগলো। ‌ শ্রাবন তাকে অভয় দিয়ে বলল,
” আরে ব্যাপার না চলো নিচে চলো, আবারো বিয়ে নিয়ে কথা আছে মেঘ পরী। ”

আবারো বিয়ের কথা শুনে মেঘা লজ্জা পেল। এদিকে শ্রাবন মুগ্ধ চোখে তার প্রেয়সীর লজ্জা মাখা মুখটি দেখলো। দুজনে নিচে নামলো, শ্রাবনের মা শেফালী‌ বলে উঠলেন,
” শ্বশুরবাড়িতে এসেই এমন প্রথম দিনে যা দেখলাম, সারাটি জীবন মনে হয় নবাবজাদির মতই কাটাবে। তা মহারানী ঘুম হয়েছে আপনার? ”

মেঘা মাথা নিচু করে রইল, শ্রাবন বুঝতে পেরে বলল,
” এসব কেমন কথা মা? তখন আমি খেয়ে বেরোইনি, সে খেয়েছিল? এসব তো একবারও শোনোনি। তাছাড়া তুমি এমন কেন করছো এই বাড়িতে তো একটা মেয়েরই অভাব ছিল, ওকে কি নিজের মেয়ে ভাবা যায় না? ”

শেফালী বলে উঠলো,
” রাতে আমার রুমে এসো, এই নিয়ে আলোচনা আছে। এখন চলো খেতে চলো। ”

সবাই খেতে গেল, সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলে। তারপর বলা শুরু করল,
” দেখো তোমরা, যদিও মেঘা এখনো ছোট এবং সদ্য কলেজে পড়ুয়া। তাই ওকে আমাদের সেভাবেই ট্রিট করা উচিত। কালকে কলেজে ভর্তি করে দেবো, গ্রামে থাকতে বলেই ওর ম্যানার নেই এমনটা ভেবোনা। গ্রামে বড় হলেও তার যথেষ্ট ম্যানার রয়েছে, আশা করি তোমাদের সাথে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে পারবে। বিয়েটা কিভাবে হয়েছে তা আমি বলেছি, যদিও তোমরা দেখনি এবং অনুষ্ঠানিকতা হয়নি, তাই পুনরায় এই বিয়েটা করতে হবে। যতদিন ওইখানেই থাকবে এবং তোমরা ডেট ঠিক করো। ”

সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিল, আগামী সপ্তাহে তাদের বিয়ে। বাড়ির ছেলের বিয়ে বলে কথা, তাই সবার মধ্যে আনন্দ দেখা গেল শুধু শেফালী ছাড়া। কারণ, তিনি বোন নিয়ে চিন্তিত। তবে তার ছেলের সুখই তার কাছে সুখ, যদি সে সুখে থাকে তাহলে তার বোন চলে গেলেও আফসোস নেই। এই অব্দি অনেক বার বিভিন্নভাবে ধো/কা খেয়েছে বোনের থেকে। তবে একমাত্র বোন বলে, প্রতিবারের ক্ষমা করেছে তিনি। খুব ছোটবেলায় মা মা/রা যাওয়ার পর, বোনকে নিজ হাতে মানুষ করেছিলেন তিনি। তাই এত মায়া। তবে আল্লাহ যা করেন, ভালোর জন্যই করেন। মেঘা মেয়েটি ও খারাপ নয়, ওকে দেখে কেন জানি মনে হয় এর আগে ওকে দেখেছে। উনি আর কিছু না ভেবে, ঘুমাতে চলে গেল। মায়ের কথা মতো শ্রাবন রাতে মায়ের রুমে গেল। তাকে দেখেই শেফালী বলে উঠলো,
” শ্রাবন, বাবা এই মেয়েকে না বিয়ে করে ডিভোর্স দেয়া যায় না? বিয়েটা তো হুট করেই হয়ে গিয়েছে। মেয়েটির সম্পর্কে পুরো ডিটেলস না জেনেই বিয়ে করাটা কি ঠিক? ”

ডিভোর্সের কথা শুনে শ্রাবন রেগে গেল এবং বলল,
” কি সব কথা বলছো মা? মেয়েটির সম্পর্কে আমি সবকিছু জানি। ‌ আর ও তো রুপ বা গুণে কম নয়, তাহলে তোমার আপত্তি কোথায়? তোমার বোনের মেয়ের থেকে অন্তত নম্র ,ভদ্র‌ এবং মার্জিত রয়েছে। ”

শেফালী বলে উঠলো,
” তুমি ডিটেকটিভ হওয়ার যোগ্যতা রাখো, তুমি ঠিক হয়ে ধরেছ আমি এই কারণেই আপত্তি করছিলাম। তুমি তো জানো তোমার খালা কত জে/দি।‌ তুমি যখন গ্রামে গিয়েছিলে, তখন ওরা আবার এসেছিল তোমাকে বলা হয়নি তুমি মিশনে আছো তাই। যাতে তোমার মনোযোগ না হারায় তাই, এসব শুনে সে কি করবে তা ভাবছি। ‌”

রিশাকে শ্রাবনের কখনোই পছন্দ নয়, ওর মাঝে ভদ্রতার অভাব রয়েছে। সারাদিন ফ্রেন্ড, পার্টি এবং ওয়েস্টার্ন স্টাইল এ চলাফেরা করে।‌ ছেলেদের সঙ্গে টাইমপাসের সম্পর্ক রয়েছে, শ্রাবন সব প্রমাণ নিয়ে রেখেছে। সে ভালোমতো জানে তার মায়ের খুব একটা পছন্দ নয়, তবে নিজের একমাত্র বোনের দিকে চেয়ে রাজি হয়েছিল। সে তার মাকে অভয় দিয়ে বলে,
” তুমি চিন্তা করো না মা, আমি সামলে নেব। তবে এই কারণ ছাড়া, মেঘাকে মেনে নিতে তোমার আপত্তি আছে? ”

এমন কথা শুনে শেফালী আশ্বস্ত হল,‌ যেহেতু শ্রাবন বলেছে তাই সে সবটা সামলে নেবে এই বিশ্বাস রয়েছে। আর মেঘাকে মেনে নিতে তার আপত্তি নেই। তাই সে আপত্তি নেই জানালো। শ্রাবন খুশি মনে মায়ের রুম থেকে চলে গেল, মাহিন সাহেব এবং সিফাত সাহেব নিচে গল্প করছে। শ্রাবন ঘরে গিয়ে দেখল মেঘা বেলকনিতে দাঁড়িয়ে এক মনে আকাশের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। সে গিয়ে মেঘার পাশে দাঁড়ালো,‌ পাশে কারো উপস্থিতি টের পেতেই মেঘা তাকালো। শ্রাবন বলে উঠলো,

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here