গল্পের নাম : শ্রাবনের মেঘ
লেখিকা : ফারিয়া
পর্ব : ১০
🍂
পরেরদিন সকালে দেরিতে উঠেছে কারন, অনেক রাত করে ঘুমিয়েছে। সিফাত সাহেব এবং মাহিন সাহেবের ব/কু/নিতে সবাই ভয়ে আছে। অনুষ্ঠানের দিন সবাই দেরিতে উঠছে এবং রাতে সময়মতো ঘুমায়নি জেনে রেগে আছে তারা। একটু পরে কলিংবেলের আওয়াজে দরজা খুলতেই শেফালী বেগম ঘামতে লাগলো, কারন দরজার ওপারে দাঁড়িয়ে আছে তানজিলা বেগম, রিশান এবং রিশা। উনি মেকি হেসে বললেন,
” আরে তানজু আয়, তোরই অপেক্ষা করছিলাম ”
তানজিলা বেগম বললেন,
” হ্যাঁ আপা, তুই তো অপেক্ষা করবিই। কথা দিয়ে তো কথা রাখতে শিখিস নি, সেই ছোট্ট থেকে আমরা কথা দিয়ে এসেছিলাম। আর শেষে এসে কি করলি তুই? ”
শান্ত এসে বললো,
” যা বলার ভিতরে এসে বলো খালামনি, বাড়িতে অনেক কাজ। এখানে সিনক্রিয়েট করার চেষ্টা করো না, জানোই তো বিয়েটা শ্রাবনের। শ্রাবনের রাগ সম্পর্কে আশা করি বুঝিয়ে দিতে হবে না তোমায় ”
তানজিলা বেগম মুখ কালো করে ভিতরে এসে বসলো, রিশান শ্রাবনকে দেখতে পেয়ে কাছে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
” আরে আমাদের বরমশাই যে! ব্যাপার কি ব্রো? আজ তোমায় বেশীই সুন্দর লাগছে। বিয়েতে নাকি মেয়েদের উজ্জ্বলতা বেড়ে যায়, এখন দেখছি তোমারই উজ্জ্বলতা বেড়ে গিয়েছে। তা আমার ভাবি সাহেবা কোথায়? দেখি কোন রাজকন্যার প্রতি আসক্ত তুমি ”
শ্রাবন রিশানের মাথায় আলতো করে থা”প্প”ড় দিলো। সেসময় সিড়ি দিয়ে নিচে নামছিলো মেঘা, শ্রাবন বললো,
” ওইযে তোর ভাবি সাহেবা, আমার স্বপ্নের রাজকন্যা ”
রিশান তাকিয়ে যেনো থ হয়ে গেলো। গোলাপী শাড়িতে এ যেনো এক অপ্সরী, কেনো শ্রাবনের আগে তার সাথে দেখা হলো না এই অপ্সরীর। কিন্তু, এখন সে তার ভাবি। সে এগিয়ে গিয়ে বললো,
” আসসালামু আলাইকুম ভাবি সাহেবা, আমি আপনার খালাতো দেবর রিশান ”
মেঘা হেসে বললো,
” ওয়ালাইকুম আসসালাম, আমি আপনার খালাতো ভাবি + আপনার ইশা খালামনির একমাত্র মেয়ে মেঘা ”
রিশান ভাবলো, যেমন নাম তেমনই রুপ। মেঘের মতোই স্বচ্ছ, সে বললো,
” ভাবি, আমি আপনার সম্পর্কে ছোট। আমায় তুমি করে বলবেন প্লিজ ”
মেঘা মাথা নাড়ালো, শ্রাবন এসে তাদের সাথে জয়েন করলো। ওদিকে শান্ত এবং রাজ লাইটিংয়ের দিকটা দেখছে, ওদের সবার মাঝেই আন্তরিকতা তৈরি হয়ে গিয়েছে। হঠাৎ শেফালী এবং তানজিলা বেগমের উচ্চস্বর শোনা গেলো, সবাই সেদিকে এগিয়ে গেলো। তানজিলা বেগম বলছে,
” এই বিয়ে আমি হতে দেবো না আপা, আমার মেয়েটা শ্রাবনকে খুব ভালোবাসে। তাকে ছাড়া নিজের ক্ষ”তি করতেও দ্বীধা করবে না, তুই তো জানিস ও কেমন জে”দি ”
শেফালী আহম্মেদ অনেক্ষন ধরে তাকে ভালোমতো বোঝানোর চেষ্টা করছিলেন যে, ‘ বিয়েতে যদি ছেলেমেয়ে উভয়ের মত না থাকে, তাহলে সুখী হওয়া যায় না। জোর করে ভালোবাসা হয় না, আর সারাজীবন থাকার জন্য আন্ডারস্ট্যান্ডিং লাগে। শ্রাবন রিশাকে সহ্য করতে পারে না, বিয়ে হলে ওরা কেউ সুখী হতো না। আর শ্রাবনের তো বিয়ে হয়েই গেছে৷ জন্ম, মৃত্যু এবং বিয়ে সব তো সৃষ্টিকর্তার হাতে, এখানে কারো আপত্তি করা ঠিক নয়। ‘
কিন্তু এবার শেফালী বেগমের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গিয়েছে, উনি কড়া গলায় দিলেন এক ধ”ম”ক। শ্রাবনসহ সবাই অবাক হয়ে গিয়েছে, কারন শেফালী আহম্মেদ সহজে রাগ করেন না। আর নিজের বোনের প্রতি তার ভালোবাসা অসীম, সেই বোনকে আজ তিনি ধ”ম”ক দিয়েছেন। তিনি বলে উঠলেন,
” ব্যাস, অনেক্ষন ধরে তোকে বোঝানোর চেষ্টা করছি তানজিলা। তোর ওই মেয়েকে আমার নিজেরও পছন্দ নয়, তার পোশাকের ধরন দেখেছিস? তাকে তো কয়েকটা ছেলের সাথে দেখেছি আমি। ওসব আমি বলতে চাই না, আমার ছেলের পছন্দ খারাপ নয়। আমার ছেলে যাকে বিয়ে করে সুখী থাকবে, আমি তার সাথেই বিয়েতে রাজী। আর আমি কথা দিয়ে কথা রাখার চেষ্টা করি, আমি তোর সাথে তাল মিলিয়েছিলাম। কারন, শ্রাবন রিশাকে সহ্য করতে পারে না। তুই তো কোনো কথা রাখিস নি, ভেবেছিলাম পুরোনো কথা তুলবো না। কিন্তু, তুই বাধ্য করলি। তোকে শেষবার বলছি, কোনো প্রকার অশান্তির চেষ্টা করলে আমি ভুলে যাবো তুই আমার বোন। কোনো প্রকার ক্ষ”তি করার চেষ্টা করলে, ফল ভালো হবে না। এই বিয়ে সহ্য করতে না পারলে, তুই যেতে পারিস বাধা নেই ”
তানজিলা বেগম অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো, কারন যে বোন তাকে আ”চ”ড় লাগতে দেয় নি, আজ তাকে সবার সামনে অ”প”মা”ন করলো। তিনি কিছু না বলে চলে গেলেন, রিশাও তার সাথে গেলো। রিশান এসে বললো,
” খালামনি, আম্মু যেতেই পারে। তবে, আমি কিন্তু আমার ভাইয়ের বিয়েতে থাকবো। আমায় থাকতে দেবে না? ”
শেফালী আহম্মেদ হেসে রিশানের গালে হাত রেখে বললেন,
” আমি জানি বাবা, তুই তোর মায়ের মতো না৷ তুই এখানে সারাক্ষন থাক, আমরা খুশী। যা ভাইয়ের বিয়েতে মজা কর ”
বাকিরা এখনো অবাকের রেশ কাটাতে পারে নি, ইফতি বললো,
” ওপস, মামনি এটা কি তুমি? ”
শেফালী আহম্মেদ চোখ ছোট করে সবার দিকে তাকিয়ে বললো,
” তোরা সবাই কি সারকাস দেখছিস নাকি? কি মনে হয়, আমি খুব নরম? নাহ, আমি অন্যায়ের প্রশ্রয় দেই না কখনোই। একটা মানুষ কতো সহ্য করে বল, ও গিয়েছে আমি খুব খুশী। ওর মতো বোনের প্রয়োজন নেই আমার, আমার বোন আছে তো। ইশাই তো আমার বোন ”
ইশা আহম্মেদ জড়িয়ে ধরলো শেফালী আহম্মেদকে৷ তিনি আবারও বলে উঠলেন,
” এই তোরা এখানেই দাঁড়িয়ে আছিস কেনো? বিয়ে বাড়ির কতো কাজ বাকি আছে, ভুলে গিয়েছিস? এখন যাবি নাকি আমি ঝা”ড়ু নিয়ে আসবো ”
এই কথা বলে উঠতে নিলেই বাকি সবাই দৌড়ে পালালো। যে যার মতো কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।
🍂
বিকালের দিকে মেঘাকে সাজানো হলো, আত্নীয়রা অনেকে চলে এসেছে। ছাদে পাশাপাশি হলুদ লাগানো হবে ওদের। আজ ছেলেরা বেগুনী রঙের পাঞ্জাবী এবং মেয়েরা বাসন্তী রঙের শাড়ি সাথে ফুলের গয়না পড়েছে। দুজনকে পাশাপাশি বসানো হয়েছে, শ্রাবন একটু হলুদ নিয়ে সবার আগচরে মেঘার হাতে লাগিয়ে দিয়ে কানে কানে বললো,
” আমার মেঘপরীকে আমিই সবার আগে হলুদ দিলাম, বিয়ে তো মানুষ একবারই করে। তাই একটু মজা না করলে হয় নাকি? ”
মেঘা মুখ বাকালো। সবাই একে একে হলুদ লাগাতে এলো, তবে নিশি এবং ইফতি কাকতালীয় ভাবে একই সময়ে এলো। কে আগে দিবে এই নিয়ে কিছুটা ঝগড়া হতেই, শ্রাবন ধ”ম”কে বললো,
” থামবি তোরা? একই সাথে দিয়ে যা “দুজনে একসাথে দিয়ে মুখ বাকিয়ে গিয়ে বসে পড়লো, পাশাপাশি জায়গায় বসায় বাতাসে নিশির চুলগুলো ইফতির মুখে পড়লো। রেগে কিছু বলার আগেই সুক্ষ্ম এক মিষ্টি ঘ্রানে ইফতি চুপ রইলো এবং ভাবলো, ‘ একটা মানুষের চুল থেকে এতো মিষ্টি ঘ্রান কি করে আসতে পারে। ‘ রেশমি চুলগুলোর ঘ্রানের প্রেমে পড়ে গেলো ইফতি, কিন্তু এটা কাউকে বুঝতে দেওয়া যাবে না৷ হলুদের অনুষ্ঠান শেষে সবাই নাচগান করে যে যার ঘরে গিয়ে ঘুমালো। কাল সকালে সবাই রিসোর্টে যাবে, হলুদ এবং মেহেন্দী বাড়ির ছাদে হলেও, বিয়েটা রিসোর্টের কমিউনিটি সেন্টারে হবে। ‘ হৃদমোহন ‘ রিসোর্টটি নদীর পাশেই, ভিউগুলো খুবই সুন্দর।
🍂
সকালবেলা সবাই গাড়ি করে রিসোর্টে চলে যাচ্ছে। ওখানে গিয়ে আবারও হলুদের অনুষ্ঠান হবে। বড়রা এক গাড়িতে, আত্নীয়রাও অন্য গাড়িতে। শ্রাবন, ইফতি, শান্ত, মেঘা, নিশি, রাজ ইত্যাদি সবাই এক গাড়িতে। প্রচন্ড মজা করতে করতে সবাই যাচ্ছে। রিসোর্টে পৌছে দেখলো, ওদের ওয়েলকাম করার জন্য ম্যানেজমেন্ট টিম দাঁড়িয়ে আছে, উপরেই লিখা আছে ‘ Srabon weds Megha ‘। লাল রঙের ফিতা দেওয়া আছে, শ্রাবন মেঘা এগিয়ে এলো। গোলাপের পাপড়ির উপরে কেচি রাখা হয়েছে। শ্রাবন মেঘাকে ইশারা করলো সেটা হাতে নেওয়ার জন্য। দুজনে একসাথে কা”ট”লো। তখনই বিশ্ব দুষ্টু শাফিন বলে উঠলো,
” আজ একটা বউ নেই বলে, এসব ফিতা কা”ট”তে পারি না ”
সবাই হাসলো, হঠাৎ পিছন থেকে এক মধ্য বয়স্ক লোক বলে উঠলো,
” তবে রে? শ্রাবনের বিয়ের পর তোর বিয়ের শখ আমি মেটাবো ”
শাফিন নিজের বাবার কন্ঠ শুনতে পেয়ে শুকনো ঢোক গিলে বললো,
” হে হে, আমি মজা করছিলাম আব্বু। চলো ভিতরে যাই ”
শাফিন শ্রাবনের কানে কানে বলছে,
” ব্যাডা, আমার বাপরে দাওয়াত দিছোস বলবি না আমারে? ”
শ্রাবন উচ্চশব্দে হেসে বললো,
” আমার মামাকে ছাড়া আমি কি করে বিয়ে করি বল? ”
শাফিন পেচার মতো মুখ বানিয়ে রাখলো। বিকেল হতেই,
চলবে
( বিয়েটা দিয়ে দিবো, নাকি আরও পেচ লাগাবো পাঠক?)