সঞ্চারিণী পর্ব -৩৯+৪০

সঞ্চারিণী
আফনান লারা

৩৯.
রশ্নি এবার চরম রেগে গেছে।মেধার হাত মুছড়ে ধরতে চাইলো কিন্তু পারলোনা।মেধাকে সে ছুঁতে পারবেনা।
মেধা কপাল কুঁচকে চলে এসেছে ওখান থেকে।শাওনের কোনো নড়চড় নেই।চিৎ হয়ে এখনও শুয়ে আছে।
মেধা অনেকক্ষণ ধরে চুপচাপ ওর পাশে বসে ড্রেসিং টেবিলে করা কাঠের ঝুমকো গুনছিল।ঝুমকো গুনা শেষ বলে শাওনের পিঠ ঝাঁকিয়ে বললো,’আমাকে না খাইয়ে মারবেন নাকি?আপনি থাকেন।আমার হাতে টাকা আছে।নিজেই নিজের খাবার কিনতে পারবো’

কথাটা বলে মেধা দরজা খুলে চললো হোটেলের খাবারের সাইড কোন দিকে তা জানার জন্য।
বার্গার দুটো আর স্যান্ডউইচ কিনে ফিরে আসার সময় একজনের গলার আওয়াজ পেয়ে থেমে পেছনে তাকালো সে।দেখতে রকির মতন।লোকটা হেঁটে চলে যাচ্ছে হোটেলের একটা রুমের দিকে।মেধাও পিছু নিলো।লোকটা হাঁটার গতি বাড়িয়ে দিয়েছে এবার।তাই মেধা আরও জোরে ছুটলো।অনেকদূর যেতে যেতে খেয়াল করলো লোকটা এবার আস্তে হাঁটছে।মেধা খাবারের প্যাকেট এক হাতে নিয়ে কোমড়ে হাত দিলো গান নিবে বলে পরে মনে আসলো গান সে ফেলে এসেছে।ঢোক গিলে চুপ করে দাঁড়িয়ে বোঝার চেষ্টা করলো লোকটা আসলে কি করতে চায়।
লোকটা পেছনে তাকালো না।চাবি ঘুরিয়ে রুমে ঢুকে গেছে।মেধা রুমের সামনে এসে প্যাকেট হাতিয়ে নিজের ফোন নিয়ে শাওনকে কল করলো।শাওন ঘুম ঘুম চোখে ফোন নিয়ে রিসিভ করতেই মেধা ফিসফিস করে বললো রুম নাম্বার ২১০এ চলে আসতে।রকিকে পেয়ে গেছে।শাওন এক ঝটকায় উঠে টি শার্ট পরতে পরতে বেরিয়ে পড়লো।ছুটতে ছুটতে পাঁচ মিনিটে এসে গেলো ২১০এর সামনে।কিন্তু সেখানে মেধা ছিলনা।ফোন ও ধরছেনা।
শাওন দেরি না করে দরজা ধাক্কানো শুরু করে দিয়েছে।
দশ মিনিট ধরে দরজা ধাক্কানোর পর একটা লোক দরজা খুলে সাথে সাথে শাওনকে এক টানে ভেতরে নিয়ে আসলো।শাওন ভেতরে এসে দেখলো লোকটা মেধাকে চেয়ারের সাথে বেঁধে বসিয়ে রেখেছে আগে থেকে।রীতিমতন শাওনকেও বাঁধা শুরু করেছে লোকটা।বিশাল দেহের মানুষ।তবে কেমন যেন উজবুক টাইপের।
শাওনের হাত বাঁধতে বাঁধতে বললো,’শুন ব্যাটা!তোর গার্লফ্রেন্ডরে আমার অনেক ভালো লেগেছে।ভেবেছিলাম চেয়ারে বসিয়ে রেখে হুমকি ধামকি দিয়ে আমাকে বিয়ে করতে রাজি করাবো।কিন্তু সে তখন থেকে রাক্ষুসে চাহনিতে আমার দিকে চেয়ে আছে।যেন গিলে খাবে।মেয়ে মানুষের চোখ হয় কোমলতায় ভরপুর।তাকালেই মায়ায় পড়ে যাবার মতন হওয়া চাই।আর এই মেয়েটা মনে হয় যেন চোখ দিয়ে আমায় গ্রাস করছে।এগুলো মেয়ে পুলিশদের মানায়।।কত বড় সাহস!!কোথাকার কোন অপরিচিত লোককে ফলো করতে করতে একেবারে রুম অবধি চলে আসলো।আমাকে তো চেনে না।একেবারে ধরে বেঁধে রেখেছি।পাখি যাবে কই??
তো তুমি কেন আসলে জানিনা।নিরাপত্তার খাতিরে তোমায় ও বাঁধতে হলো।
চুপচাপ বসে আমার আর আমার হবু বউয়ের রোমান্স দেখো’

শাওন মেধার দিকে কপাল কুঁচকে ইশারা করলো
ও এমন চুপ হয়ে আছে কেন সেটা।
মেধা লোকটার দিকে তাকিয়ে আছে।লোকটা হোটেলের রুমের মিনি ফ্রিজ থেকে ড্রিংক আনতে গেছে।

-‘ভাবছি এই বলদটার শরীরের কোন জায়গায় লাথি মারবো ‘

শাওনের কাশি উঠে গেছে কথাটা শুনে।কাশতে কাশতে বললো,’থাক লাথি মারতে হবেনা।আমার উপর ছেড়ে দাও’

-‘আমার কাজ আমি নিজেই পারি।এতক্ষণ অনেক পুতুপুতু করেছে এই ছেঁসড়াটা।
ওকে তো নিজ হাতে মেরে তারপর যাব।বিরক্তিকর একটা মানুষ!’

-‘একে তুমি রকি ভেবেছিলে?যতদূর জানি তোমার চোখ তো ধোকা দেওয়ার মতন না’

-“আরে ওটা রকিই ছিল।এই লোকটার রুমেই ছিল।রকি হয় এরে চেনে নাহয় অন্য ব্যাপার আছে।জানালা দিয়ে পালিয়েছে বোধ হয়’

-“তোমরা দুজন আমার রুম মেটের কথা বলছো নাকি ফুসর ফুসর করে??তারে আমি চিনিনা।এই ডাবল সিটের দাম বেশি বলে আমি অন্য বেড নিতে চাইছিলাম কিন্তু কোথা থেকে ঐ লোক এসে বললো সে ৫০% টাকা দিবে।আমার সাথে থাকবে।
আমিও রাজি হয়ে গেলাম।এমন সোনায় সহাগা পাওয়া যায় নাকি।কিন্তু বুঝলাম না এই মেয়েকে আমি যখন টেনে আনছিলাম ঠিক তখন লাফ দিয়ে উঠে জানালা দিয়ে পালিয়েছে সে।’
——
লোকটা কোকের বোতল ফ্লোরে রেখে গালে হাত দিয়ে বিছানায় গোল হয়ে বসে বললো,’কি সুন্দর ফিগার।তার উপর জর্জেটের শাড়ী পরা।খোলা চুল। উফ!যেন খাবারের তোড়া!’

মেধা রাগে ফুলছে।শাওন মিটমিট করে হেসে হাসিটা একটু দমিয়ে বললো,’আহা আহা!!তারপর?’

-“তবে তোমায় দেখে মনে হয় এই মেয়ের চয়েস আছে।তুমি যেমন সুন্দর।তোমার গার্লফ্রেন্ড ও তেমনই সুন্দর।যাকে বলে চোখ ধাঁধালো’

-‘ওহহ তাই বুঝি?’

-‘সে যাই হোক।তোমার আর এই মেয়েকে বিয়ে করা হবেনা।কারণ একে আজ আমি বিয়ে করবো।হাহাহাহাহাহাহ’

মেধা হাতের রশির দিকে তাকিয়ে শাওনের দিকে ফিরলো।শাওন মজা নিচ্ছে।
লোকটা হঠাৎ উঠে এসে মেধার হাত খুলে ওকে পাশে বসিয়ে বললো,’নাও কোক খাও।হা করো ‘

মেধা গ্লাসটা ধরে উপর করে লোকটার মাথায় ঢেলে দিয়ে বললো,’*****তুই খা!ছেঁসড়া’

শাওনের হাত এখনও বাঁধা বলে সে চুপ করে মেধার আর লোকটার মারামারি দেখছে।বিছানায় ফেলে মনমত মেরে তাকে অজ্ঞান করে মেধা বিছানা থেকে নেমে বললো,’আপনাকে এমনই রাখবো।মজা নিচ্ছিলেন না?’

-‘তো আর কি করবো বলো।লোকটার কথা অনেক মজাদার ছিল।কি সুন্দর বর্ণনা দিলো তোমার।খাবারের তোড়া।আহা!!’

-‘আমিও দিই তাহলে বর্ণনা।
আহা কি সুন্দর ছেলে!!পাগলের মতন লাভ করে একটা ভূতকে।আহা কি চোখের ঝলক!আর সে ভালোবাসে ভূতুড়ে এক মেয়েকে।আহা আহা’

‘-হইছে আর মজা নিবানা।আমার হাত খুলো’

মেধা মুখ এগিয়ে এনে ফিসফিস করে বললো,’মেধাকে ভাল্লাগেনা?কাকে ভাল্লাগে?’

-…….’

-‘থাক বলিয়েন না।আপনার রশ্নি এসে নাহলে গলা চেপে ধরবে।হাত খুলে দিচ্ছি আজকের মতন।

হাত খুলে দিয়ে মেধা চলে গেছে।
শাওন ঐ লোকটাকে দেখতে দেখতে হোটেলের নিচে চলে আসলো।সিসি ক্যামেরায় হোটেলের বাহিরের অংশ দেখবে।রকি কোনদিকে গেছে সেটা জানা জরুরি।
দেখতে পেলো সে একটা কারে উঠে চলে গেছে।কারটার নাম্বার দেখা গেলোনা।
নুহাশের সাথে কথাগুলো কল করে শেয়ার করে সোজা মেধার কাছে আসলে সে।মেধা টিভি দেখতে দেখতে বার্গার খাচ্ছিল।শাওন ওর পাশে বসে বললো,’তো চোখ ধাঁধালো সুন্দরী!! নাচ টাচ পারো নাকি?’

মেধা বাঁকা চোখে চেয়ে বললো,’মদ খেয়েছেন?’

-“না।নেশাখোরের একটিং করছি’

মেধা দাঁত কেলিয়ে বিছানার উপর দাঁড়িয়ে হাত থেকে বার্গার ছেড়ে দিলো শাওনের হাতের উপর।তারপর শাড়ীর কুচি ধরে বললো,’টিকাতুলির মোড়ে একটা হল রয়েছে..’

শাওন হাসতে হাসতে শেষ।বার্গারে কামড় দিয়ে বললো,’তারপর!’

-“তারপর কি করতে হয় যেন?’

-“ঘুরো গোল গোল’

-‘ও তাই তো’

মেধা কোমড়ে হাত দিতেই শাওনের ফোনে একটা কল আসলো।সাজিদের।
আশার আর রেদোয়ানের ডেড বডি নাকি মর্গ থেকে গায়েব।
শাওনের মেজাজ গেলো বিগড়ে।গার্ডের কথা জিজ্ঞেস করে জানতে পারলো গার্ডকে বেহুশ করে লাশ চুরি করা হয়েছে।
মেধা বসে পড়ে বললো কি হয়েছে।শাওন ওকে সবটা জানিয়ে বিছানা থেকে নেমে বললো,’আর বসে থাকা যাবেনা।কেসটা আরও ক্রিটিকাল হয়ে যাচ্ছে’

-‘আমার নাচ দেখবেন না?’

-‘রকিকে ধরতে তোমার নাচ কাজে লাগবে।আপটার অল সে তোমার জন্য একটু হলেও পাগল ছিল’

-‘ওর সামনে আমি নাচলে আমার নাচের প্রতিটা স্টেপের সাথে সাথে ওর শরীরের একেকটা অংশ ক্ষতবিক্ষত হবে।’

-‘থাক আমার ওয়াইফের নাচ আমিই দেখবো।আর নেশাখোর হয়ে যাব’

মেধা তার ব্যাগ থেকে জিন্স আর টিশার্ট বের করতে করতে বললো,’আপনার আজ কি হয়েছে বলুন তো?হঠাৎ আমার প্রতি এত ইন্টারেস্ট? ঐ বলদ লোকটার কথায় আপনার মন ধরেছে??’

-“হুম।তাকিয়ে দেখলাম আমার বিয়ে করা বউটা দেখার মতন সুন্দর’

মেধা ব্রু কুঁচকে বললো,’মানেহহহ?আপনার কি হয়েছে সত্যি করে বলবেন?’

শাওন দেয়ালে হাত রেখে মেধার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললো,’ডিপ্রেশন থেকে বের হবার একটু চেষ্টা।আমি আবার ডিপ্রেশনে চলে গেলে কাজে মন বসাতে পারিনা’

মেধা শাওনের ঘাঁড়ে হাত রেখে বললো,’তাহলে তো মেধাকে আপন করে নিতে হয় আপনাকে। ডিপ্রেশন বাপ বাপ করে পালাবে।আই গ্যারান্টি!!’

-‘হাহা।তাই নাকি??ইউ গ্যারান্টি??’

-‘ঐ দেখেন রশ্নি!’

শাওন পেছনে তাকাতেই মেধা ওর হাতের তলা দিয়ে ছুটে চলে গেলো ওয়াশরুমে।চেঞ্জ করে আসবে বলে
এরপর দুজনে অফিসের পোশাকে বেরিয়ে গেলো হোটেল থেকে।কাজ হলো মর্গে যাবে।কেস ফাইনাল হলোনা।তার আগে লাশই গায়েব।সিসি ক্যামেরায় কিছু দেখায়না।কি এক ঝামেলা।রকি এরকম লুকোচুরি করে কতদিন পার করতে পারবে??সঞ্চারিণী
আফনান লারা

৪০.
মর্গে এসে শাওন আর মেধা দুজনেই টেনসনে পড়ে গেলো এই ভেবে যে রেদোয়ানের লাশ গায়েব হয়েছে কেন।রেদোয়ানকে তো মেধা মেরেছিল তাহলে তার লাশ গায়েব করে রকির কি লাভ?কি বুঝাতে চাচ্ছে সে?
দুজনে সোজা এখন রেদোয়ানের বাসায় এসেছে।আচমকা একই সময়ে গিয়াস স্যারও এসে হাজির।যা বোঝা গেলো টিমের সবার উপর তিনি অসন্তুষ্ট । এখন পর্যন্ত কেসের কোনো বিহিত হলো না বলে তিনি খুব রেগে আছেন।অন্তত রকিকে ধরতে পারলেও মনকে বুঝাতে পারতেন খুনীকে ধরা হয়েছে।তাও হলোনা।
শাওন বললো সে আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই রকি বাংলাদেশের যে কোণায় থেকে থাকুক না কেন তাকে খুঁজে বের করে আনবে।
মেধা ও মাথা নাড়ালো।এখানে উপস্থিত কেউ জানেই না খুনী তাদের পাশেই দাঁড়িয়ে আছে।
শাওন টিম আকারে সবাইকে ভাগ করে দিয়েছে।ঢাকায় নুহাশ,নিতু মিলে জায়গায় জায়গায় খুঁজে বেড়াবে।ঢাকার বাহিরেও বাকিদের পাঠানো হয়েছে।শাওন আর মেধা ঠিক করে নিলো তারা সাভারে রকির বাসার উপর নজর রাখবে।হতে পারে সে ওখানেই এসেছে।কারণ রকি ঠিক সেটাই করে যেটা বাকিরা ভাবতেই পারে না।শাওনের বুদ্ধিতে তারা দুজন সাভারে রকির বাসায় এসে হাজির।একটা দোকানে অন্য পোশাকে দুজনেই বসে আছে।রকি আসলে ঝাঁপটে ধরবে।
দু তিনবার চা নাস্তা খাওয়া শেষ তাদের।মেধা শাওনের কাঁধে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে আর ধৈর্য্য ধরতে না পেরে। এত রাত হয়ে গেলো রকির কেনো খবর নেই।শাওন ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে আর মেধার দিকে তাকাচ্ছে।মেধা কেমন যেন ব্যবহার করছে আজ।আগে গায়ে ঘেঁষে বসতো না আর এখন একেবারে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে।হয়ত ঘুমের ঘোরে তার খবর নেই সে কি করছে।চোখ খুলেই নিশ্চয় এক ঝটকায় সরে যাবে।
এসব ভেবে তাচ্ছিল্য করে হাসলো সে।মেধার ঘুম ভেঙ্গে গেলো শাওনের শার্টের সাথে খোঁচা লেগে।
দুচোখ মেলতেই শাওনের থুঁতনি নজরে আসলো সবার আগে।ছোট ছোট দাঁড়ি লেপটানো থুঁতনির নিচের ভাগ।
মেধা ঘুম কাতুরে চোখে চেয়ে আছে সেদিকে।শাওন যা ভেবেছিল তার উল্টোটা হচ্ছে আজ।মেধা মুগ্ধতায় ডুব দিয়েছে আবারও।মুগ্ধতায় হারিয়ে শাওনকে সে গভীর চোখে পরোক করছে।এরই মাঝে হঠাৎ রশ্নির কথা মাথায় আসতেই ঠিক হয়ে বসলো সে।শাওন বিসকিট চিবোতে চিবোতে বললো,’কি?ঘুম শেষ?আর ঘুমাবেননা ম্যাডাম??

-“আমাকে আগলে রাখতে ভালো লাগছিল আপনার?তাহলে কোলেই নিন।
চেয়ারে বসে বসে কোমড়ে ব্যাথা হয়ে গেলো’

-‘এ্যাহ!মামার বাড়ির আবদার।নিজের দিকে তাকিয়ে দেখেছো?মুটকি একটা!’

-‘আমি মুটকি?’

-‘চুপ চুপ।ওটা রকি কিনা দেখো তো।ঐ যে ক্রস করলো মাত্র’

মেধা সামনে তাকালো।রকির মতন দেখতেই অনেকটা।বিদ্যুৎয়ের গতিতে সে চলে গেছে দালানের ভেতর।শাওন আর মেধাও ছুটেছে।তাদের আগেই রকি হুডি টেনে লিফটে উঠে গেছে।
শাওন আর মেধা দেরি না করে সিঁড়ি দিয়েই উপরে উঠা শুরু করেছে।
ছুটে এসে রকির ফ্ল্যাটে এসে দেখলো ব্যাটা দরজা বন্ধ করে ফেলেছে ওরা আসার আগেউ।শাওন বুদ্ধি করলো করিডোর যেখানে শেষ সেখানে যে বারান্দাটা আছে ওটা দিয়ে দুজনে রকির বাসায় ঢুকবে।মেধাও সাঁই দিলো।দুজনে বারান্দায় নেমে দরজার কাছে এসে দেখার চেষ্টা করলো রকি ভেতরে কি করছে।রকি টিভি অন করে পপকর্ণ ভাজতে রান্নাঘরে এসে চুলায় পাতিল বসিয়ে তাতে তেল নুন দিয়ে নাড়ছে আর আরেক হাতে থাকা ভুট্টাতে ফু দিচ্ছে।
শাওন ফিসফিস করে বললো,’বারান্দার দরজা তো ভেতর থেকে লক করা।তোমার কাছে ববি পিন আছে?’

-‘ববি পিন দিয়ে লক খুলেন?আপনি খুব ব্যাক ডেটেড।সরুন তো’

মেধা হাত ঘুরিয়ে দু তিনটা চাপ দিতেই দরজা খুলে গেছে।শাওন হা করে তাকিয়ে আছে দরজার দিলে।মেধা পকেটে হাত ঢুকিয়ে বললো,’হেহে!!সঞ্চারিণীরা অনেক কিছু সঞ্চার করতে পারে।বুঝলেন?এখন চলুন।পেছন থেকে ধরবো রকিকে’

দুজন মিলে রান্নাঘরে এসে দাঁড়ালো গান তাক করে।কিন্তু সেখান থেকে রকি উধাও।তাড়াহুড়ো করে তারা ফ্ল্যাটের বাকি রুম গুলো সার্চ করতে গিয়ে দেখলো সেখানেও নেই।
রকি একটা বুদ্ধি এঁটেছে শাওন আর মেধাকে ফ্ল্যাটে আটকে রাখতে বাসা থেকে বেরিয়ে বাহিরে দিয়ে লক করে গেছে।মেধা আর শাওন বারান্দায় এসে অসহায়ের মতন তাকিয়ে আছে সেই জায়গাটার দিকে যেটা দিয়ে টপকে তারা বারান্দায় পা রেখেছিল।লাফ দিয়ে আসা সম্ভব হলেও যাওয়া অনেক কঠিন মনে হচ্ছে।দুজনে এখন উপায় না পেয়ে ভাজা পপকর্ন নিয়ে ধপ করে ফ্লোরে বসে টিভি দেখছে।রকি কিরকম বোকাটা বানালো তাদের।
শাওন রেগে টিভির স্ক্রিনে রিমোট ছুঁড়ে মেরে বললো,”নিজেকে অফিসার বলতে ঘৃনা হচ্ছে।ট্রেনিংয়ে যেতে হবে আমায় যা বুঝলাম।এত বছর ধরে কেস সলভ্ করছি আর এখন এই কেসে এসে বারবার বোকা বনে যাচ্ছি।আশ্চর্য!!বিশ্বাস করো,একবার যদি ঐ রকিকে আমি পাই।তিলে তিলে শোধ নেবো।আমাকে অনেক খাটিয়েছে।’

মেধা পপকর্ন খেতে খেতে বললো,’লবণ বেশি দিয়ে ফেলেছে।এখন বলেন বের হবো কি করে?’

-“কেন?তুমি না সঞ্চারিণী?? সব দরজা খুলতে পারো।তো খুলো এই দরজা’

-“দিলাম তো কয়েকটা ঘুষি।তাও খুলছেনা আমি কি করবো?আপনি চেষ্টা করে দেখুন।আপনি না সিনিয়র অফিসার?’

-“আমি চেষ্টা না করে বসে আছি??একটা মানুষ ও ফোন ধরছেনা!কাকে কল করে বলবো আমরা বিপদে পড়েছি?’

-‘তাহলে আমি যাই রকির রুমে ঘুমাতে।আপনি বসে বসে কল করুন’

মেধা পপকর্ন খেতে খেতে রকির রুমে গিয়ে পাঁচ সেকেন্ড পর চেঁচিয়ে উঠলো।রকির রুমে পোকামাকড় ধরেছে ওর সবকটা বাসি কাপড়ে।
তেলাপোকা দেখে মেধা ভয় পেয়ে গেলেও নিজেকে শক্ত করে আবার বের হয়ে আসলো।শাওন এদিকে আসতে আসতে বললো,’লাশ গুলো ওখানে নাকি?’

-‘না কিছুনা।আমি বরং সোফায় ঘুমাই’

-‘একদম না।
সোফায় আমি ঘুমাবো।তুমি গিয়ে রকির রুমে ঘুমাও’

-‘না।আমি মেয়ে বুঝেন না কেন।???
এত তেলাপোকার সাথে আমি ঘুমোতে পারবোনা।’

শাওন দরজা খুলে নিজে গিয়ে দেখলো সত্যি রুমটা থাকার উপযোগী না।
ওদিকে মেধা সোফায় শুয়ে পড়েছে।বাকি রুমটা লক করা।অনেক্ষণ চেষ্টা করেও রুম খুলতে পারলোনা সে।
মেধা আড় চোখে তাকিয়ে দেখছে শাওন কি করে।শাওন কোনো উপায় না পেয়ে মেধাকে চাপিয়ে ওর পাশে শুয়ে পড়লো লম্বা হয়ে।মেধা কিল মেরে বললো,’এসব কি??সরুন।এই টুকুন সোফায় আপনি আমার সাথে ঘুমাবেন?’

-‘আর উপায় নেই।আরেকটু যাও।আমি পড়ে যাব’

-‘পড়ুন।আমার কি’

শাওন মেধাকে ঝাপটে ধরে শুয়ে পড়লো।মেধা তার হাত দুটো নাড়াতে পারছেনা।মূর্তির মতন শুয়ে আছে সে।হাতে রশি না থাকার পরেও মনে হচ্ছে তাকে বেঁধে রাখা হয়েছে।শাওন ওর দিকে তাকিয়ে বললো,’ঝাপটে ধরার কারণ হলো আমি যেন পড়ে না যাই।অন্য কিছু ভাববেনা’

মেধা মাথা তুলে বললো,’কেমন অফিসার আপনি?কোনো কাজ পারেন না’

-‘তুমি পারো মনে হয়?ওহ তুমি তো খুনই করে বসে আছো।’

মেধা ফিসফিস করে বললো,’রশ্নি রেগে যাবেনা?এরকম যে শুয়ে আছেন?’

-“রাগ করলে আমার কিছু করার নাই।রাত অনেক হয়েছে।ঘুমানোটা আগে জরুরি।নাহলে কাল সকালে কাজ করার জন্য আমি সবল থাকবোনা’
——–
দুজনে এখন একসাথে ছাদের দিকে চেয়ে আছে।শ্বাস নিশ্বাসের স্বল্প আওয়াজটাও শোনা যাচ্ছে স্পষ্টতায়।মেধা আড় চোখে তাকালো।শাওন ও।তারপর আবারও ছাদ দেখতে ব্যস্ত হয়ে গেলো দুজন।
শাওন তার হাতটাকে মেধার মাথার উপর দিয়ে নিয়ে রাখলো।চাপা পড়ে ব্যাথা হয়ে গিয়েছিল তাই।মেধার আরাম লাগলো তাতে।সে তখনকার মতন ঘুমিয়ে পড়েছে এই টুকুতেই।
তফাৎ হলো তখন শাওনের ঘাঁড়ে মাথা রেখেছিল আর এখন বুকে।শাওনের মনে হলো তার ও ঘুম আসছে।মেধা তার বুকে মাথা রেখেছে তা ভেবেই তার ও চোখ জুড়ে ঘুম নেমে আসছে।।
সারারাত দুজনে একই রকম ভাবে ছিল।একটুও নড়চড় হয়নি।সকাল সকাল শাওনের আগে ঘুম ভেঙ্গেছিল।নড়তে গিয়ে মনে পড়ে গেলো তার বুকের সম্পূর্ন জায়গা দখল করে রেখেছে মেধা।
মাথা তুলতে গিয়েও পারলোনা শাওন।
-‘মেধা ও মনে হয় জেগেছে।তবে চোখ খোলেনি।নড়াচড়া করছে।চোখ খুললেই আগের মতন সরে যাবে।তবে এখন যেই অবস্থায় আছে।সরতে গিয়েও পারবেনা যতক্ষণ না আমি সরবো’

মেধা চোখ খুলে শাওনকে দেখে আবার চোখ বন্ধ করে বললো,’শীত করে’

শাওন অবাক হয়ে তাকালো।
-‘শীত করে মানে??মেধার কি অস্বস্তি হলোনা?আরও বলছে শীত করে।মানে কি করবো আমি?’

চলবে♥

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here