সঞ্চারিণী
আফনান লারা
৫১.
শাওন ঘুমিয়ে পড়েছে কয়েক মিনিট হলো।মেধা ওর দিকে চেয়ে ভাবছিল রশ্নির কথা।রশ্নি যে আর কখনও ফিরবেনা এমন কোনো গ্যারান্টি কি আদৌ আছে??শাওন চাইলেই রশ্নিকে আবার নিয়ে আসতে পারে।
-‘মাঝে মাঝে আশ্চর্য হতে হয় শাওন যার সাথে প্রতিনিয়ত কথা বলতো ঠিক সেই মানুষটার সঙ্গে আমি নিজেও কথা বলতে পেরেছি,তাকে দেখেছি।আর এখন শাওন কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছে বলে আমিও তাকে দেখছিনা।এটা ভ্রম নাকি অন্যকিছু তা তো জানিনা।
তবে আমি চাইনা সেই ভ্রম আবার ফিরে আসুক
জীবনটা যেমন চলছে তেমনই চলতে থাকুক।রেশারেশির দরকার নেই।’
নুহাশের কল এসেছে।শাওন ঘুমে বলে ফোনটা মেধাই ধরেছে।
নুহাশ জানালো রকিকে হসপিটাল থেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে,সাজিদ আর মিলনের চোখে ধোকা দিয়ে।
মেধা তৎক্ষনাৎ ফোন রেখে ছুটে গেলো তার রুমে।শাড়ী পাল্টে কোট পরে বেরিয়ে পড়তে হবে।আজকে যত কিছু হয়ে যাক না কেন রকিকে আগের জায়গায় এনে তারপর সে বাসায় ফিরবে।এই রকি অনেক বাড় বেড়েছে।নিশ্চয় নতুন শত্রু তাকে নিয়ে নিরুদ্দেশ হয়েছে।একসাথে দুটোকে ধরতে হবে আজ।
শাওন এপাশ করে হাত বাড়িয়ে মেধার জায়গা শূন্য দেখে চট করে উঠে বসলো।চোখ ডলতে ডলতে পুরো রুমটাতে চোখ বুলিয়ে বিছানা ছাড়লো সে
মেধা কোথায় তা ভাবতে গিয়ে নিজের ফোনটাকে আরিফার টেবিলের উপর পেলো সে।ফোন পকেটে ঢুকিয়ে রুম থেকে বের হতেই দেখলো মেধা দরজা খুলে বেরিয়ে যাচ্ছে।শাওন ওর পথ আটকিয়ে জানতে চাইলো কি হয়েছে।মেধা সবটা বলতেই শাওন রেগে বললো,’তাই বলে এত রাতে তুমি একা চললে?মাথা ঠিক তো তোমার?
-‘একজন অফিসার আরেকজনের মুখ চেয়ে বসে থাকেনা।আমার যেটা দায়িত্ব সেটা তো পূরণ করতেই হবে।তাছাড়া আপনি খবর পেলে পরে আসতেনই।এরকম চিন্তার কি আছে?আমার হাত ছাড়ুন।আমাকে যেতে হবে’
-“শোনো!এখন তুমি শুধু অফিসার নও।আমার স্ত্রী।আমি জেনেশুনে তোমাকে বিপদের দিকে কিভাবে ঠেলে দিই?আমার জন্য পাঁচটা মিনিট অপেক্ষা করো।আমি তোমার সঙ্গে আসবো’
-‘বিপদ এর আগেও দেখেছিলাম।
নিজেকে বাঁচাতে পারি নি??পেরেছি।তাহলে এখন আপনার কিসের ভয়?’
-‘সবসময় পরিস্থিতি একই দিশায় চলেনা মেধা।বাচ্চামো করবানা।তোমাকে বললাম দাঁড়াও।আমি আসছি।শুধু গায়ের জামাটা বদলাবো।এরকম তাড়াহুড়োর কিছু নেই’
মেধা বিরক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো।শাওন ছুটে গিয়ে আলমারি থেকে অফিসের কোটটা নিয়ে পরতে পরতে থমকে গেলো।ঘাঁড় ঘুরিয়ে পেছনে তাকাতে গিয়েও তাকালো না।হাত চলছে তার।কোটের বোতামে হাত বুলাতে বুলাতে একটা কথা চিন্তা করলো।সে আর মেধা তৈরি হয়ে বাসা থেকে বের হচ্ছে এটা নিশ্চয় পাশের বিল্ডিং থেকে আমাদের নতুন শত্রু লক্ষ করছে?
তাহলে আমরা কেন মাটি খুঁড়ছি?কেঁচো তো উপরেই আছে।কেউটে বের হবার আগে কেঁচোকে বদ করা যাক!!
কোটটা পরে শাওন মেধার সামনে এসে দাঁড়ালো।মেধা ছুটতে ছুটতে বললো,’রকিকে উদ্ধার করতে হবে।এমন ও হতে পারে নতুন শত্রু তার সার্থে ওকে মেরে দিলো।গিয়াস স্যারকে তখন কি জবাব দেবো আমরা?’
-‘মেধা তুমি সোজা হসপিটালে যাবে’
-“সেকি!আপনি যাবেননা?’
-‘আমার একটা কাজ আছে তুমি হসপিটালের দিকে যাও।আমি বাসার দিকে যাচ্ছি জরুরি কাজ মনে পড়েছে।’
-‘তাহলে আমার সঙ্গে এই রাস্তায় আসলেন কেন?’
-‘শর্টকাটে আবার যাব তাই।তুমি যাও।’
মেধা চলে গেলো।শাওন অন্য রোড দিয়ে তাদের বাসার সামনে এসে দাঁড়ালো আবার।তারপর সামনের দালানটায় ঢুকে গেলো।দরজা দিয়ে না গিয়ে বারান্দা থেকে যেতে হবে।বারান্দা যেন খোলা থাকে এই ভেবে তাদের বাসার ফ্লোরের ঠিক বিপরীত দালানটার ফ্লোরে এসে সে থামলো।বারান্দা চেক করে বুঝলো তাদের মত খোলামেলা তবে মোটা কাপড় দিয়ে তা ঢেকে রাখা।শাওন বারান্দার পাশে এসে নিচে তাকিয়ে ঢোক গিললো।পড়লে আর হাঁড়ও খুঁজে পাওয়া যাবেনা।মোটা কাপড়টা একটুখানি সরাতেই সে রকিকে দেখে চমকে গেলো।তার মানে রকি এখানে আছে।যেমনটা ভেবেছিলাম সেটাই হলো।কিন্তু রকির সাথে যে থাকার কথা তাকে দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে মনে হয়।তা নাহলে তীরে সে তরী ডোবার মতন হাল হবে।আজকে এর শেষ দেখে ছাড়বো।
রকি ল্যাংড়ার মতন হেঁটে এক সোফা থেকে অন্য সোফাতে গিয়ে বসছে।হাতে পপকর্নের বাটি।দশ পনেরো মিনিট পর পপকর্নের বাটি রেখে বারান্দার দিকে আসলো সে।মোটা কাপড়টা একটুখানি সরিয়ে শাওনদের বারান্দার দিকে তাকিয়ে রইলো।শাওন যে তার ঠিক পাশেই দাঁড়িয়ে ছিল তা সে একটুও টের পায়নি।সিগারেট ধরিয়ে রেলিংয়ে হাত রেখে বললো,”মেধা দেখা দাও!!’
শাওনের মন চাইলো ওর মুখটা দুমড়ে মুছড়ে দিতে।তাও রাগটাকে দমিয়ে অপেক্ষায় রইলো এই কেসের আসল মুখের।রকি চলে গেছে সেসময়ে।গিয়ে আবার আগের মতন পপকর্ন খেতে খেতে টিভি দেখতে লাগলো।
অনেকক্ষণ অপেক্ষা করেও শাওন রকি ছাড়া আর কারোর দেখা পেলোনা।তার মানে বাসায় রকি একা এখন।তাহলে ঐ লোকটা কোথায় গেলো?এখানে তো তার থাকার কথা।’
—–
-‘দেখো নুহাশ!!সিসি ক্যামেরায় ঐ লোকটাকে দেখা গেলো।ঐ যে ইয়েলো হুডি পরা’
-‘হুম দেখা তো যাচ্ছে তবে মুখটা স্পষ্ট না।গালে এত দাঁড়ি যে স্কেচ তৈরি করলেও আমরা সামনা সামনি তাকে দেখে চিনতে পারবোনা।’
-‘হাত দেখেছো সাজিদ??’
-‘হুম মেধা।এরকম ফর্সা হাত হয়তোবা রেদোয়ানের বংশের কেউ হতে পারে।
কারণ রেদোয়ান অনেক অনেক ফর্সা ছিল। তার পরিবারের কেউ এত কারসাজি করছেনা তো?রেদোয়ানের ভাই, বোন,বন্ধুবান্ধব কতজন হতে পারে সেই রেকর্ড আছে তোমাদের কাছে?’
মিলন হাত ভাঁজ করে কপাল কুঁচকে বললো,’রেদোয়ান যদি না মরে পলাতক হতো তাহলে আমি বলতাম ছবির এই লোকটা রেদোয়ান।কারণ বডি আর হাঁটাচলার স্টাইল বলে দিচ্ছে এটা রেদোয়ান।টিভিতে অনেকবার দেখেছিলাম তাকে’
মেধা তাচ্ছিল্য করে বললো,’তা কি করে হয়?এই কেসের মূল ভিক্টিম হলো রেদোয়ান নিজে।এখন সে আসবে কি করে?হয়ত তার বংশের কেউ হতে পারে।তার ভাই হতে পারে।দুই ভাইয়ের হয়ত হাঁটা চলা একই রকম।রেদোয়ান হবে কেন?রাত করে নেশা করেছো নাকি?
মনে মনে মেধা বললো,’আমি নিজে ওরে মেরেছি।ওর মরার সার্টিফিকেট টাও আমার লাগবেনা।মিলন যত ছাগল মার্কা কথা বলে!’
নুহাশের ফোন বাজলো।টিম নিয়ে সবাইকে ওর বাসায় আসতে বললো শাওন।নুহাশ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো অফিসে এত কাজ পড়ে আছে।তারা এখন শাওনের বাসায় যাবে কেন।শাওন বললো রকিকে পাওয়া গেছে।
সবাই চলে গেলেও মেধা গেলোনা।তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বারবার করে দেখছে সে।মিলনের কথাগুলো কানে বাজছে তার।
নিজের মনকে শান্ত করে টেবিলের উপর থেকে পানির গ্লাস হাতে নিতেই সামনে স্টিলের পাতে একজনের প্রতিবিম্ব দেখে পেছনে তাকালো মেধা।কেউ একজন সরে গেলো।গ্লাস হাতে নিয়েই ছুটলো সে বাহিরের দিকে।একটা লোক হন্তদন্ত হয়ে চলে যাচ্ছে।মেধাও তার পিছু নিলো।
অনেক রাত বলে হসপিটালে যেসব কর্মচারী ছিল সবাই শুয়ে পড়েছে নিচে বিছানা পেতে।অনেকটা নির্জন হয়ে আছে সব করিডোরগুলো।হসপিটালে ছিঁটানো এরোসলের গন্ধ আর ঠাণ্ডা পরিবেশে ভয়টা একটু বেশিই লাগছে।তাও ভয়কে তোয়াক্কা না করে মেধা লোকটার পিছু নিয়েছে।
——
-‘এই রকিরর মধ্যে কি সোনারুপা লুকিয়ে আছে?যতবার তারে ধরে আনি ততবার হাত ফসকে চলে যায়।বুঝলাম না রেদোয়ান বেশি কোটিপতি ছিল নাকি তার এই দূর সম্পর্কের ভাই কোটিপতি।পুরো কেস জুড়ে এর পিছু নিতে হয়েছে আমাদের সকলকে।ভাই একটু কও তো,রেদোয়ান কি সব সম্পত্তি তোমার নামে লিখে দিছে?নাকি ওর ফুলদানি গুলো তোমার নামে করে দিছে?তোমার এত দাম ক্যান বলোতো?’
রকি শাওনের হাতে দু চারটা ঘুষি খেয়ে আধ মরা হয়ে সোফায় বসে আছে।নুহাশের কথার জবাবে কিছু বললোনা।শাওন পায়ের উপর পা তুলে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে বললো,’এর মুখ থেকে স্বরবর্ণ ও বের হবেনা এখন।বাক্যগঠন তো দূরে থাকুক।আমার এখন জানা দরকার দ্বিতীয় ব্যাক্তিটা কে যে ওকে আমাদের অফিসারদের চোখে ধুলো দিয়ে নিয়ে আসতে পারলো?
কত বড় গাধা ভেবে দেখেছো?আমার বাসার সামনের বাসায় রেখেছে তাকে।ভাবলো আমি এত সহজ একটা বিষয় হয়ত কল্পনা করতে চেয়েও করবোনা।
একটা কাহিনী মনে পড়ে গেলো।চোর যাতে বুঝতে না পারে স্বর্ন অলঙ্কার কোথায় লুকানো তাই সব একটা বক্সে পুরে বক্সটাকে মরিচের ডিব্বায় রেখে দিয়েছিল বাড়ির মালিক।চোর সারা বাসায় চুরি করে যাওয়ার সময় তার মনে পড়লো বউ বলেছিল বাসায় মরিচ শেষ।বাড়ি ফেরার সময় যেন মরিচ নিয়ে আসে তাই সে মালিকের ঘর থেকে মরিচের ডিব্বাটাও সাথে করে নিয়ে গেলো।
এখন কাহিনীটা সেরকম হয়ে দাঁড়ালো।তারা আমাদের বাসার সামনের বাসায় অবস্থান করলো আর ভাবলো আমরা হয়ত কল্পনাও করতে পারবোনা তারা আমাদের এত কাছে থাকতে পারে।হলো তো?অতি চালাকের গলায় দড়ি!! চালাক মরে পানিতে পড়ি!!!’
.
নুহাশ হাসতে হাসতে রকির পাশ থেকে পপকর্ণের বাটিটা নিয়ে শাওনের পাশে এসে বসলো।শাওন দরজার দিকে তাকিয়ে হাতের ঘড়িতে চোখ রেখেছে।চিন্তিত হয়ে জিজ্ঞেস করলো মেধা আসছেনা কেন।নুহাশ জানালো মেধা এখনই এসে পড়বে।
তাও শাওনের কেমন যেন ওর জন্য অনেক চিন্তা হলো।তাই সবাইকে রকির কাছে বসিয়ে সে বের হলো হসপিটালে যাবে বলে।সঞ্চারিণী
আফনান লারা
৫২.
অজ্ঞাত ব্যাক্তির গায়ে হলুদ হুডি নজরে পড়তেই মেধার আর বুঝতে বাকি নেই এই সেই মানুষ যাকে সিসি ক্যামেরায় নজরবন্দী করা হয়েছিল।
লোকটার পিছু নিতে নিতে মেধার বার বার মনে ভয় জাগ্রত হচ্ছিল এই ভেবে যে এটা আসলেই কি রেদোয়ান??
হাঁটা চলা আর স্কিন কালার বলে দিচ্ছে এটাই রেদোয়ান।কিন্তু তা কি করে হতে পারে।আশার মৃত্যুর পর যে লোকটা অট্টহাসি হাসছিল সে তো রেদোয়ানই ছিল।তাঁর বেশ মনে আছে ঐ লোকটাকেই সে ধাক্কা মেরে বদ করেছিল।তাছাড়া রেদোয়ানের লাশ নিয়েই তো তারা এতদিন কত পরীক্ষা নিরীক্ষা করে আসছিল।সেই মৃত ব্যাক্তি জীবিত কি করে হলো?
যতদূর জানা আছে রেদোয়ানের কোনো জমজ ভাই নেই।ভাই থেকে মনে পড়লো।রেদোয়ানের ভাই না তো এই লোকটা??
হয়ত হাঁটাচলা দুজনের এক।চেহারা তো দেখা যাচ্ছে না মোটেও।
খুব দ্রুত গতিতে জনমানবশূন্য পথ কেটে হেঁটে চলেছে তারা।ভুলেও পেছনে তাকাচ্ছেনা লোকটা।যদি একবার পেছনে তাকাতো তাহলে সব রহস্য এখানেই শেষ হতো।যদি এটা রেদোয়ানই হয় তবে যা করার তাই করবে মেধা।রেদোয়ানকে আরও একবার সে মারবে।এবার আর তার সুস্থ হয়ে আরও একবার ফিরে আসার চান্স থাকবেনা।আশার মৃত্যুর বদলে রেদোয়ানের মৃত্যু অনিবার্য!
এসব ভেবে ক্ষোভ নিয়ে মেধাও তার হাঁটার গতি বাড়িয়ে দিয়েছে।আজ আরও একবার সে হাতটাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করবে।আজ তার হাতের অস্ত্র ধোকা দেবেনা কিছুতেই।এই কেসের শেষ দেখে ছাড়বে সে।
চলতে চলতে নির্জনের চেয়ে নির্জনতর পথে ঢুকে পড়েছে তারা।সামনের লোকটা যেদিকে নিয়ে যাচ্ছে মেধা ঠিক সেদিকেই যাচ্ছিল,তার চোখ আর মনযোগ দুটোই ছিল ঐ লোকটার মুখ দেখার উপর।অথচ লোকটা ছল করে তাকে ঠিক কোন জায়গায় নিয়ে এসেছে তা সে হয়ত মনোযোগ হটালেই বুঝতে পারতো।
একটু থেমে বুদ্ধি করে রেদোয়ানের নাম ধরে ডাকলো সে।লোকটা থেমে গেলো।মেধার বুকের ভেতর কেঁপে উঠেছে।তাহলে কি সত্যিটা সত্যি হয়েই দাঁড়ালো?এ হতে পারেনা।নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছেনা সে।
লোকটা একটু থেমে আবারও হাঁটা শুরু করেছে।মেধার চোখকে ফাঁকি দিয়ে সে এই নির্জন পথ থেকে হঠাৎ নিরুদ্দেশ হয়ে গেলো।মেধা ডানে বামে তাকিয়ে কোথাও দেখতে পেলোনা তাকে।
—–
-‘সিসি ক্যামেরাতে হসপিটালের বাহিরে অবধি দেখা গেলো মেধা ঐ আগন্তুকের পিছু নিয়ে এই রোড দিয়েই গিয়েছিল।লোকটা সেই যে রকিকে কিডন্যাপ করেছে।এখন রকিকে মেরে ফেললেও তার মুখ দিয়ে কথা বের করানো সম্ভব নয় শাওন।তাহলে মেধা কই সেটা আমরা জানবো কি করে?’
-‘আমি আর অপেক্ষা করতে পারবোনা।মেধাকে খুঁজতে আমি যাচ্ছি।তোমরা রকির মুখ থেকে কথা বের করতে পারো কিনা দেখো।’
——
মাথায় প্রচণ্ড আঘাত পেয়ে অজ্ঞান হয়েছিল মেধা।
মাথায় ব্যাথা দেওয়া ব্যাক্তি পেছন থেকে আঘাত হেনেছে।চোখ খোলার পর একটা নিস্তব্ধ ঘরে নিজেকে দেখতে পেলো সে।
টিনের ঘর।আশপাশ থেকে ব্যাঙের আওয়াজ ভেসে আসছে কানে।যেন সবেমাত্র বৃষ্টি হয়েছে।
হাত পা বাঁধা বলে মেধা শোয়া থেকে ঠিক করে উঠে বসতেও পারলোনা।
মাথা তুলে এদিক সেদিক দেখছে এখন।একটা কম পাওয়ারের লাইট জ্বলছে মাথার উপর।মাথা মাটিতে ঠেকানো ছিল বলে মাটিতে মাথার রক্ত পড়ে শুকিয়েও গেছে।তার মানে বেশ অনেক সময় ধরে মেধা এখানে এমন অবস্থায় ছিল।
উঠার চেষ্টা বৃথা।হাত পিঠের উপর নিয়ে বাঁধা হয়েছে।রেদোয়ানের একমাত্র চাওয়া যে মেধার মৃত্যু তা আর বুঝতে বাকি নেই ওর।পাশ থেকে দুজন মানুষের কথা শুনা গেলো।তবে কি বলছে তার কিছুই বুঝলোনা সে।তবে এইটুকু বুঝলো যে কথা শেষ এখন দরজা খুলছে তারা।সঙ্গে সঙ্গে মেধা চোখ বন্ধ করে নিলো।ভেতরে কয়েকজন ঢুকে দাঁড়িয়ে অনেকক্ষণ ধরে মেধাকে দেখেছে।শেষে একজন বললো,’জ্ঞান ফিরলেও কি না ফিরলেও কি!বস ঐ ডোবায় ফেলে আসবো এরে”?
-‘নাহ!আমি তো নিজের হাতে ওকে মারার জন্য এনেছি।তোমাদের সেই সুবর্ন সুযোগ দেবোনা।ওর জ্ঞান ফিরুক।তাছাড়া রকির উপহার হলো জ্যান্ত মেধা।বেচারা আমার জন্য অনেক লড়েছে।তার গিফট তো তাকে বুঝিয়ে দিতে হবে।
তোমরা কড়া পাহারায় রাখবে।একজন এখানেনবসে থাকো।আর বাকিরা বাহিরে পুরো ঘর পাহারা দেবে।আমি একটা কাজ সেরে আসছি।’
বসের কথা মতন একজন মেধার সামনে চেয়ার টেনে বসে গেলো.
আর বাকিরা বাহিরে অপেক্ষা করতে লাগলো।মেধা আস্তে করে চোখ খুললো।এখন খুলতোনা,সিগারেটের গন্ধ পেয়ে নিশ্চিন্ত হয়ে চোখ খুলেছে।
তার ধারনা ছিল সামনের ব্যাক্তি সিগারেট খেতে ব্যস্ত থাকবে।ঠিক তাই হলো।লোকটা সিগারেট মুখে দিয়ে সিগারেটের প্যাকেটটা উল্টে পাল্টে দেখছিল।মেধা ভাবলো কি করলে খবর তাদের বস অবধি যাবেনা।সাধারণ কর্মচারী এগুলোকে কাবুতে আনা দু মিনিট ব্যাপার।হুডি পরা লোকটা চলে গেছে নাকি রয়ে গেছে তা ভেবে মনে সংশয় কাজ করছিল ওর।তাই আরও দশ মিনিট সে চোখ বুজে থাকলো।
চেয়ারে বসে থাকা লোকটা এবার ফোন টিপছে।
দশ মিনিট অপেক্ষা করে মেধা এবার মাথা তুলে তাকালো ইচ্ছে করেই।লোকটা ফোন রেখে মেধার দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্য করে হেসে ফোনটা পুনরায় হাতে নিলো।
মেধার মুখে কোনোকিছু দিয়ে বাঁধা ছিলনা।তাই সে মুখটাকেই অস্ত্র বানাবে বলে ঠিক করে নিয়েছে।লোকটাকে টার্গেট করে সে বলা শুরু করলো এমন কিছু প্রাসঙ্গিক কথাবার্তা যা শোনামাত্র লোকটার গায়ে জ্বালা ধরবে।
কথাগুলো ছিল এমন—
-‘আপনি কে আমি জানিনা।তবে আপনার ভবিষ্যত আমি বলে দিতে পারি।ঐ যে লোকটা আপনাদের হায়ার করেছে সে আমাকে মারার পর আপনাদের সবাইকে এক এক করে মারবে’
মেধার কথা শুনে লোকটা ফোন থেকে মাথা তুলে বললো,’তাতে তোমার কি?’
-“আমার হয়ত কিছুনা তবে একটা কথা ভেবে দেখেছেন?আপনি যদি আমাকে ছেড়ে দেন আজ আপনি বেঁচে যাবেন।আর যদি না ছাড়েন তাহলে আপনিও মরবেন।জেনেশুনে মৃত্যুর মুখোমুখি হওয়া তো একপ্রকার আত্নহত্যা তাই না?
আর আত্নহত্যা যে করে তার তো পরকালেও শান্তি হবেনা’
-‘আমার জীবন নিয়ে তোমায় ভাবতে হবেনা।এটা আমার ডিউটি।আর আমরা তো বসের কোনো ক্ষতি করিনি তাহলে বস আমাদের কেন মারবে?’
-“আমাকে মারার পর এই কেস ক্লোজড্ হয়ে যাবে।তো এই কেসের সঙ্গে যুক্ত সবাই যদি বেঁচে থাকে তাহলে তো সব তথ্য ফাঁস হয়ে যাবে।জেনেশুনে আপনাদের বসের মতন এমন একজন চতুর ব্যাক্তি কেন ভুল করবে?’
লোকটা মুখ গম্ভীর করে মেধার দিকে তাকিয়ে বাহিরে চলে গেলো হনহনিয়ে।মেধার একবার মনে হয়েছিল না জানি ফোন করে রেদোয়ানকে জানিয়ে দেয় তার জ্ঞান ফিরেছে।কিন্তু না তা হয়নি।লোকটা তার সহযোগী একজনের সঙ্গে মেধার বলা কথাগুলো নিয়ে আলাপ করলো।সহযোগী হেসে উড়িয়ে দিলো ব্যাপারটা এরপর ভেতরে এসে বললো,’এমন বোকা বানিয়ে পালানোর কথা ভাবছো মামণি?’
মেধা বাঁকা হাসি দিয়ে বললো,’আমাকে ভয় লাগে তোমাদের? সুঠাম দেহী পুরুষ তোমরা।রেদোয়ান যে তোমাদের মেরে ফেলবে সেটা পর্যন্ত বিশ্বাস করছোনা।
অথচ আমার হাত পা বেঁধে রেখেছো।এতই দূর্বল তোমরা?এই তোমাদের পুরুষত্ব? ‘
লোকগুলো এবার রেগে গেলো।একেবারে তাদের ক্ষমতা নিয়ে কথা বলা তাদের সহ্যই হলোনা।চরম ক্ষেপে গেলো তারা।এগিয়ে আসলো আঘাত করবে বলে ঠিক সেসময়ে সেখানে সেই হলুদ হুডি পরা লোকটা এসে দাঁরালো।তাদের দুজনের পথ আঁটকে ইশারা করলো চলে যাবার জন্য।এরপর পেছনে তাকালো
বাতির আলোয় রেদোয়ানের মুখটা স্পষ্ট দেখা গেলো।মেধা নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছেনা।রেদোয়ান চেয়ারে এসে বসলো।তারপর মুচকি হেসে মেধাকে ধরে শোয়া থেকে বসিয়ে দিলো।
মেধা অবাক চোখে তাকিয়ে আছে।রেদোয়ান হাসলো কিছুক্ষণ তারপর হাত নাড়িয়ে বললো,’আমি রেদোয়ানের জমজ ভাই নই।আমি রেদোয়ান নিজেই’
মেধা চুপ করে শুধু দেখছে।রেদোয়ান আবার বললো,’ভাবলে মৃত ব্যাক্তি আসলো কি করে।এই তো লাশ নিয়ে কত কি করলাম।খুনী হয়ে অফিসার সাজলাম কিন্তু এই লাশ জিন্দা হলো কি করে?এগুলোই তো ভাবছো তাইনা?’
মেধা শক্ত চোখে তাকিয়ে দম ফেলে বললো,’ঐ লাশটা কার?’
রেদোয়ান হাত ভাঁজ করে হেলান দিয়ে বললো,’আসলে হয়েছে কি আমি নিজেও জানিনা।অজ্ঞাত ব্যাক্তি।দেখতে আমার মতই!!
তার চেহারাটাও আমার মতন করতে কত টাকা খরচ করে প্লাস্টিক সার্জারী করিয়েছিলাম তা যদি তুমি জানতে।অবশ্য এখন তো জানলে।
তোমার প্ল্যান সেই লেভেলের ছিল।কিন্তু তুমি হয়ত জানতে না, যার বাসায় এসে কারসাজি করছো সেই বাসার মালিক মানে আমি তোমার মতন মেয়েদের মাথায় কি চলে তা আগাম জেনে ফেলি।কত মেয়ে দেখলাম!!!একটা কথা কি জানো?আমার বাড়িটার দেয়াল পর্যন্ত আমাকে জানান দেয় সেখানে প্রতি মূহুর্তে কি ঘটে।
আমার আশা,আহারে তার কথা কি বলবো!!আমার সুইটহার্ট আশা,!!আমার স্ত্রী!!!
সে কি করছে না করছে,কার সাথে কথা বলছে কি বলছে এসব তো আমার জানার বাহিরে ছিল না।বরং জানার মধ্যেই ছিল।শুধু এই কথাটা তুমি জানলে না।কত বোকা তুমি!তোমার জন্য আফসোস হয়’
চলবে♥