সঞ্চারিণী পর্ব -৫৩+৫৪

সঞ্চারিণী
আফনান লারা

৫৩.
-‘জানো আমি আশাকে অনেক ভালোবাসতাম।আসলে বুঝোই তো সবসময় এক জিনিস ভালো লাগেনা।মাঝে মাঝে টেস্ট বদলাতে হয়।কিন্তু আমি তো ওকে ছাড়ার কথা কখনও বলিনি।ও থাকুক না।সমস্যা কি??
কিন্তু না!মেয়েদের এই এক সমস্যা। সে চায় সব ভালোবাসা সে একা পাবে।আরে বাকি মেয়েদের ও তো দিতে হবে তাইনা?
এই যে আমি এতবড় একজন বিজন্যাস ম্যান হলাম সেটা কি বসে শুয়েই হলাম?কত দিনরাত পরিশ্রম করে আমার এমন একটা পজিশন আসছে। দিনের কাজ শেষে রাতে একটু টেনসন ফ্রি থাকতে চাই।একটু মনোরঞ্জন চাই।তা না আমাকে সে কোনো মেয়ের দিকে তাকাতেও দিবেনা।আরে ভাই আমি কোটি কোটি টাকা কামাই।আমার তো চারপাশে মেয়ে থাকতে হবে তাহলে তো বোঝা যাবে আসলেই আমার টাকার পাওয়ার আছে।আর আশা কি চায়!!
সে ছাড়া কেনো মেয়ে থাকতে পারবেনা।কিছু না কিছু হলেই কান্নাকাটি শুরু করে।এভাবে তো জীবন চলেনা।
রাগ ওঠে।হাত ওঠে!!আবার এসব গিয়ে বাহিরের মানুষকে বলে দেয়।কেমন হয় বলোতো??আমি কি বেশি টর্চার করতাম ওরে?
মেরে তো ফেলতাম না।এমন মার মারতাম যেন দু তিনদিনেই ঠিক হয়ে যায়।আর সে কি করলো বাহিরের একটা মেয়েকে ধরে আমার নামে বিচার দিলো।বাহ বাহ।আমার রাগ হওয়াটা স্বাভাবিক নয় কি?
আমি দেখতে চাইলাম সে ঠিক কি করে।ওমা সে দেখি আমার বাড়িতে থেকে আমার বিরুদ্ধেই প্রমাণ জোগাড় করতে দিন রাত এক করছে।
যাই হোক রেদোয়ান কখনও পথের কাঁটা রাখেনা।হয় কাঁটা সরায় আর নাহয় কাঁটা সমেত রাস্তা উপড়ে ফেলে।
আমি তো শুধু আশাকে মারতাম।তোমার কি দরকার ছিল এর ভেতরে প্রবেশ করার?তোমার জীবনের মায়া নেই?
হয়ত তোমার নেই,কিন্তু আমার কাছে জীবনের মায়া আছে।রকিকে যেভাবে জব্দ করেছিলে সে খবরটাও আমার কানে এসেছিল।রকির জন্য পাগল হয়না এমন মেয়ে এর আগে একটাও আমি দেখিনি।কিন্তু তোমাকে দেখলাম এত কিছু রেখে জাস্ট চাকরির জন্য রিস্ক নিলে।ঠিক ঐ সময় ধরে সন্দেহের খাতা খুলেছে।একটা মেয়ে আমার পি.এ হবার জন্য কেন এত কষ্ট করবে??
তোমাকে আমি অনেক আগেই ধরতে পেরেছি।শুধুমাত্র না বোঝার ভান করে ছিলাম।আমি এটাও জানতাম প্রয়োজনে তুমি আমাকে মেরে ফেলতেও পারবে।সেটাই হলো।রাগে ক্ষোভে মেরে ফেললে আমায়।ওপস সরি!আমার মতন দেখতে একজন অপরিচিত লোক!কিন্তু সে মরেনি।আমিই তাকে মারলাম।রেদোয়ানের একটা লাশ তো লাগবে তাইনা?
যাই হোক তোমাকে এর শাস্তি পেতে হবে।আমার যে রাগ তুমি উঠিয়েছিলে আমি পারতাম এখনই তোমাকে মেরে শোধ তুলতে।কিন্তু তা করছিনা কারণ আমার ভাই রকি তোমাকে চেয়েছে।
তোমাকে মারবো এটা ঠিক তবে এখন না।সময় আসুক।আগে রকি তার উপহারটা গ্রহণ করুক।রকিকে বাসায় রেখে এসেছিলাম।
গিয়ে দেখতে হবে।তাছাড়া তোমার হাসবেন্ড দ্যা গ্রেট শাওন তো আসতে চলেছে তোমার খোঁজে।তবে সে কখনও জানবে না এই ঠিকানা কোথায়।আমি রকির সাথে কন্ট্যাক্ট করে আসছি।তুমি রেস্ট নাও কেমন?’
——–
-‘শাওন??মেধার কি শরীর খারাপ??কি হয়েছে বল বাবা।আমাদের ও তো জানার অধিকার আছে’

রুম থেকে বেরিয়ে শাওন ভেজা হাত মুছতে মুছতে বললো,’না তেমন কিছুনা না।আসলে জানোই তো আমরা কাল রাতে মিশনে গিয়েছিলাম।সেখানে হালকা পাতলা চোট পেয়েছে মেধা।ঠিক হয়ে যাবে’

-“সেকি!!কোথায় চোট পেয়েছে?দেখি সর আমি দেখবো’

শাওনকে সরিয়ে মা হনহনিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়লেন।মেধা বিছানার সাথে হেলান দিয়ে বসেছিল।মা ওর পাশে বসে মাথায় বুলিয়ে বললেন,’কই ব্যাথা পেয়েছো মা?’

মেধা শাওনের দিকে এক নজর তাকিয়ে আবার মায়ের দিকে চেয়ে মৃদু হেসে বললো,’তেমন কিছুনা।হালকা ব্যাথা পেয়েছে। দাগ ও নেই।কাল সকাল অবধি সেরে যাবে’

-“আমি তো বাপু ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।সত্যি শাওন তুইও না।যেভাবে আসার পর থেকে দরজা বন্ধ করে ছিলি আমি তো ভাবলাম মেধার না জানি কি হয়েছে”

শাওন হাসার চেষ্টা করে মাকে ধরে বললো নাস্তা করবে।মা দেরি না করে চলে গেলেন নাস্তার আয়োজন করতে।উনি যাবার পরেই মেধা পা থেকে চাদর সরিয়ে নিলো।স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে চোখ বন্ধ করে রইলো কিছুক্ষণ ।শাওন ওর পাশে বসে পায়ের দিকে তাকিয়ে আছে।কাল রাতে একটা বিশাল ঝড় বয়ে গেছে।
(ঝড়টার ব্যাখ্যা শেষ পর্বে আসবে।)
মেধার চোখ থেকে কাল রাতের ঝড়ের দৃশ্য সরছেনা।থেমে থেমে কেঁপে উঠছে সে।গোটা একটা দিন কেটে গেছে।
খবরে দেখাচ্ছে রেদোয়ানের লাশ পাওয়া গেছে।একমাত্র খুনী রকি।
সে ও নিখোঁজ।আজ থেকে এই কেস বন্ধ থাকবে বলে ঘোষণা দিয়েছে ক্রাইম ব্রাঞ্চ অফিসার শাওন আর মেধা,সাজিদ, মিলন।
শাওন মেধার হাত ধরতেই মেধা হঠাৎ ভয় পেয়ে কেঁপে উঠলো।শাওন বুঝতে পেরেছে ও এখনও কাল রাতের ঘটনা ভুলতে পারেনি।তাই সে একটু এগিয়ে এসে ওর পাশে বসে কাঁধে হাত রেখে চেপে ধরলো ওকে।
দুজনে চুপ হয়ে বসে আছে।সোফার রুম থেকে বারবার টিভিতে দেখানো খবরটা শোনা যাচ্ছে। মেধা শাওনের দিকে ফিরে ওর বুকে মুখ লুকিয়ে নিঃশব্দে কেঁদে ফেললো।শাওন মেধার চুলে হাত বুলাতে বুলাতে বললো,’ভুলে যাও সব।যত জলদি ভুলবে ততই ভালো থাকবে’

-“আমার ভালো লাগছেনা কিছু।সব চোখের সামনে ভাসছে।মনে হয় বাঁচবোনা।’

-‘সঞ্চারিণীদের মুখে এমন কথা মানায়?শুয়ে পড়ো।সারাদিনে তো একবারও ঘুমাওনি।আমি গিয়ে নাস্তা নিয়ে আসি।ওঠার চেষ্টা করোনা।’

শাওন চলে যাবার পর মেধা ফোন হাতে নিলো। সব জায়গায় এক খবর।
রেদোয়ানের লাশ একটা জায়গায় মিলেছে।সেই আগের লাশ।সিঁড়ি থেকে পড়ে মৃত্যু বলে মেনে নেওয়া হয়েছে।
মেধা আয়নার দিকে ফিরে বসলো।কাল ঝড়টা যেন তার উপর এসে আছড়ে পড়েছিল।শাওন না থাকলে কাল কি যে হতো ভাবতেই গা শিউরে ওঠে।
বলতে গেলে কাল শাওন ওর জীবন বাঁচিয়েছে।কিন্তু এ কেমন বাঁচা???
না জানি কতদিন এই বোঝা ঘাঁড়ে চেপে থাকবে।

শাওন নাস্তা এনে টেবিলে রেখে বললো,’ও হো তুমি তো নামতে পারবেনা’

মেধা বলতে চাইলো খাবার ওর সামনে দিয়ে যেতে।কিন্তু তার আগেই শাওন এসে ওকে কোলে তুলে নিলো হঠাৎ।মেধা আশ্চর্য হয়ে প্রশ্ন করলো কেন শাওন এমন করছে।শাওন জবাবে বললো, ‘কিছু কিছু আঘাতের একমাত্র ঔষুধ ভালোবাসা।’

এরপর মেধাকে চেয়ারে বসিয়ে হাঁটুগেড়ে বসে ওর হাত জোড় করে ধরে বললো,’তোমাকে বিয়ের পর থেকে হয়ত ভালোবাসাটাই দেওয়া হয়নি।তবে এখন মনে হয় ঐ ভালোবাসাটার বড্ড দরকার।সেটা হলেই তুমি আর আমি বাকি জীবনটা সুন্দর করে কাটাতে পারবো।আমাদের এখন কয়েক শব্দের সেই ভালোবাসাটা বাস্তবিক রুপে চাই।’

মেধা শাওনের শুস্ক চুলে হাত বুলিয়ে মাথা নাড়ালো।শাওন দুষ্টুমি করে বললো,’শুধু আমি ভালোবাসলে হবে?আপনি বুঝি এভাবেই কথা এড়িয়ে যাবেন?’

মেধা বিসকিট নিয়ে শাওনের মুখে পুরে দিয়ে বললো,”আমি তো অনেক আগে থেকেই ভালোবেসে এসেছি।প্রকাশ করলাম কই?’

-“তাই নাকি।আহারে তবে সেই ভালোবাসা আমার গায়ে মাখলোনা কেন?’

-“মাখালেই মাখে’
——
নাস্তা শেষ হবার পর একটু রেস্ট নিতে যাওয়ার সময় হলোনা তাদের।বাকি অফিসাররা সবাই এসে হাজির শাওনের বাসায়।সবাই মেধাকে দেখতে এসেছে।কালকে রাতে পায়ে ব্যাথা পেয়েছিল সে।সেটা সব অফিসার জানে।সবাই হাতে হাতে ফুল নিয়ে হাজির।রুমটাকে ফুল দিয়ে ভরিয়ে আড্ডা,হাসি সব শেষ করে রাতটাকে আরও সুন্দর করে দিয়ে তারা যে যার বাড়িতে চলে গেছে।
রুমটা এখন ফুলে সজ্জিত বাসর হয়ে আছে।মেধা একটা হলুদ গোলাপ উল্টে পাল্টে দেখছিল।সেসময়ে শাওন ঢুকলো রুমে।দাঁত কেলিয়ে দরজা বন্ধ করতে করতে বললো,’আমার পেট ব্যাথা হয়ে গেছে হাসতে হাসতে।নুহাশটা এত হাসাইতে জানে!’

মেধা কিছু বললোনা
শাওন ফুলের তোড়াগুলোকে এক পাশ করে রেখে মেধার পাশে বসে ওর হাত থেকে গোলাপটা টেনে কুচি কুচি করে উপরের দিকে ছুঁড়ে মেরে দাঁত কেলিয়ে তাকালো আবার।
মেধা ব্রু কুঁচকে বললো,’এটা কি হলো?এমন কেউ করে ফুলের সাথে?’

-‘বকছো কেন?আমি তো একটু বাসর সাজালাম।বাসর তো সব গোটা ফুল দিয়ে হয়না।কিছু কিছু ফুলের পাপড়ি ছিঁটানো থাকতে হয়”

-‘কোথাকার পাপড়ি,কিসের বাসর?’

-“ওমা!বাসর চিনোনা?বুঝাই বলতাম?”

মেধা বোকার মতন বললো,’হুম।বুঝান’

শাওন এক ধাপ এগিয়ে আসতেই সমস্ত হুশ আসলো মেধার।সে একটু সরে বসে বললো,’আচ্ছা আচ্ছা বুঝছি।বুঝাইতে হবেনা।সুন্দর করে বললেই পারতেন।যেভাবে মজার ছলে বললেন আমি তো ভাবলাম কি না কি।বুঝছি তো।ওমন করে তাকিয়ে আছেন কেন আজব!’

-‘বুঝছো যখন!!তাকাবো না কি করবো?কচি খুকি?কিছু বোঝোনা?’

মেধা শাওনের গায়ে কিল বসিয়ে দিয়ে পায়ে হাত দিয়ে বললো,’আমার পায়ের অবস্থা দেখছেন?’

-“আমাকে বাহানা দিতে হবেনা।কাল তোমার এই পায়ের তাজা ব্যাথা নিয়ে তুমি এক মাইল দৌড়াইছিলা।আমার বেশ মনে আছে।এখন আমার প্রেমের সময় আসায় বাহানা সপছো??
তা মানছিনা।আন্দোলন করবো বলে দিলাম’

-‘আন্দোলনের স্লোগান কি হবে?’

-“যাকে কেউ ছুঁতে পারেনি,সেই সঞ্চারিণীকে আমি ছুঁতে চাই!!ছুঁতে চাই’
সঞ্চারিণী
আফনান লারা

৫৪.
রেদোয়ান ভেবেছিল মেধাকে শাওন কখনও খুঁজে পাবেনা।সেটা অবশ্য ঠিকই ভেবেছিল।শাওন ওকে নিজ থেকে খুঁজে পায়নি প্রথমে।কিন্তু মেধা তো সঞ্চারিণী।
সঞ্চারিণীদের কেউ আটকে রাখতে পারে নাকি?
তাদের তো কাজই হলো সঞ্চার করে বেড়ানো।তাকে কি আর বন্দী করে রাখা যায়?মেধা কৌশলে ঐ ঘর থেকে বেরিয়ে নিজেকে আবিষ্কার করলো একটা নির্জন জায়গায় যেখানে দূর দূরান্তেও গাছপালা ছাড়া নজরে কিছুই আসেনা।তাই যদি হয় তবে এখানে আর যারা এসেছে তারা কিভাবে এসেছে?
রেদোয়ানের রাখা লোকগুলো সব দূরে বসে চা পান করছিল।ঠিক সেসময়ে মেধা বেরিয়ে পড়েছে।পা ব্যাথা হওয়া পর্যন্ত সে ছুটেছে।পথের কোনো শেষ সে পাচ্ছেনা।যতদূর চোখ চায় শুধু গভীর জঙ্গল।একটা না একটা তো পথ থাকার কথা তা নাহলে তো এখানে যারা এসেছে তারা বের হতেই পারবেনা।
অনেকটা সময় দৌড়ে,হেঁটে যাবার পর মেধা নির্জন জায়গায় নির্জন মাটির পথ পেলো।অন্ধকারে ছুটছিল।পথ চিনেছে একটুখানি আলো দেখে।
ভয়ে ভয়ে পা ফেলে পথে এসে দেখলো মাটির পথ যেখানে শেষ সেখান থেকে গাড়ী চলাচলের রাস্তা পড়ে।একটা পুরোনো টিনের ঘরের বাহিরে আলো জ্বলছিল।
অন্ধকারে এতটা পথ আসতে মেধার ভয় লাগেনি।একমাত্র ভয় রেদোয়ানের সামনে ধরা না পড়ার।শাওনকে জানাতে হবে রেদোয়ান মরেনি।
এক বিপদ গিয়ে আরেক বিপদ ধরা দিয়েছে হঠাৎ।
এই পথটাও শেষ হবার নাম নিচ্ছেনা।একটা গাড়ী তো দূরে থাক একটা মানুষ ও নজরে আসলোনা।এভাবে কতদূর যেতে হবে?ঠিক কতদূর গেলে একটা ঠিকানা পাওয়া যাবে?
অনেকটা পথ হেঁটে আসার পর একটা কার দেখে মেধা হাত উঠালো হেল্পের জন্য।
হাত উঠিয়ে হেল্প চাওয়ার পর মেধার মাথায় আসলো এটাতো রেদোয়ান বা তার সহযোগীদের কারও হতে পারে।
এটা ভেবে মেধা পাশের একটা গাছের পেছনে লুকিয়ে পড়লো তৎক্ষনাৎ।কার থেকে দুই তিনটা ছেলে বের হয়ে দাঁড়িয়েছে।দেখে নেশাখোর মনে হয়।
মেধা কারের আলোতে সবার মুখ দেখে বুঝতে পারলো এরা কেউই রেদোয়ানের সহযোগী বা সে নিজে না।কিন্তু তারপরেও মেধা ঐ ছেলেগুলের সামনে গেলোনা।লুকিয়ে থাকলো গাছের পেছনে।
যেরকম হেলেদুলে কথা বলছে।মেধাকে একা পেলে তারা হাতছাড়া করবেনা।এখন গায়ে সেই শক্তি নেই যে একসাথে ৩টা ছেলের সঙ্গে সে লড়বে।এইভেবে মেধা আড়ালেই থেকে গেলো।ছেলেগুলো অনেক খোঁজাখুঁজি করেও না পেয়ে চলে গেছে।ঠিক দশ মিনিট পর আরেকটা গাড়ী দেখলো মেধা।জিপ টাইপের।
সন্দেহ মাথায় রেখে মেধা আগের মতন হাত বাড়িয়ে গাড়ী থামাতে বলে চটজলদি আবার লুকিয়ে পড়লো।জিপটা থামলো।ভেতর থেকে কে নেমেছে তা দেখা যাচ্ছেনা কারণ লোকটা অন্যদিকে মুখ করে পেছনের রোড দেখছে।মেধা একটু এগিয়ে গেলো দেখার জন্য ঠিক সেময়ে ওকে পেছন থেকে কেউ একজন টান দিয়ে সরিয়ে নিলো।
মেধার ভয়ে গলা শুকিয়ে গেছে।বুকের ভেতর ধুকধুক করছে।শাওন ওকে টেনে নিয়ে এসেছিল।ওর মুখে হাত রেখে ফিসফিস করে বললো,’ওটা রেদোয়ান’

মেধা মাথা নাড়িয়ে বললো,’আমিও জানি।আপনি জানলেন কি করে?’

-‘আমার সাথে ওর দেখা হয়েছে এখান থেকে এক কিলোমিটার পথ আগে।আমাকে দেখে পালিয়ে এদিকে এসেছে।আমার গাড়ী নষ্ট বলে আমি হেঁটে এদিকে আসছিলাম বনের ভেতর দিয়ে,ভাবলাম শর্টকাটে গিয়ে যদি ধরতে পারি।তখন তোমায় দেখলাম জিপটাকে থামালে মাত্র।’

-‘রেদোয়ান আমাকে মারতে চায়।প্রয়োজনে আপনাকে মারলেও দ্বিধান্বিত হবেনা’

-‘আমাদের এই জায়গায় থাকাটা ঠিক নয়।হসপিটালের পেছনের একটা ফার্মেসীর সিসি ক্যামেরায় দেখা গিয়েছিল তোমাকে যে গাড়ীতে করে ওরা নিয়ে এসেছে।ঐ গাড়ীর লোকেশান জেনে আমি এতদূর আসতে পারলাম।অনেক সময় লেগে গেলো ইতোমধ্যে’
—–
রেদোয়ান ফোনের আলো জ্বালিয়ে এদিকে আসছিল মাঝে পথে থেমে গিয়ে ফোন করে কার সাথে কথা বলে রাগ দেখিয়ে জিপে একটা লাথি মারলো।
মেধার পালিয়ে আসার কথা তার কানে পৌঁছে গেছে।শাওন আর মেধা চুপ করে দাঁড়িয়ে রেদোয়ানকে দেখছে।

দু মিনিট পর রেদোয়ান জিপে উঠে চলে গেলো সামনের দিকে।শাওন আর মেধা রোডে চলে এসেছে এবার।

-‘ আমাদের তো পালানো উচিত না শাওন!আমরা অফিসার!রেদোয়ান একজন খুনী।ওকে তো ধরতে হবে’

-‘আমার রিভলভার ফেলে এসেছি কোথায় জানিনা।তোমার কাছেও তো নেয়??রেদোয়ানের ভাঁড়া করা লোক অনেক।এতজনের সাথে আমরা খালি হাতে মারপিটে পারবোনা।
শুট করে বসবে!’

-“রেদোয়ানকে হাত ছাড়া করার মানে বুঝেন??ওরা যেভাবে গা ঢাকা দিয়ে থাকতে পারে।কেসটা আরও কতদূর যাবে?আজকে সুবর্ণ সুযোগ এই কেসের অন্তিম পর্ব শেষ করার।’

দুজনে ভাবছিল কি করে কি সিদ্ধান্ত নেবে ঠিক সেসময়ে রেদোয়ানের জিপ ওদের সম্মুখে এসে থেমেছে।মেধা আর শাওন সেদিকে তাকিয়ে দেখছে কি করে সে।রেদোয়ান গাড়ী থেকে হাত তালি দিতে দিতে নেমে তার সঙ্গে হেলান দিয়ে দাঁড়ালো।হাসতে হাসতে বললো,’বাহহহ!কানের সাথে মাথাও এসে গেলো।আমার আর অহেতুক পরিশ্রম করতে হলোনা।বাহ বাহ’

শাওন এগিয়ে গিয়ে রেদোয়ানের গলা চেপে ধরে বললো,’চলো!!জেলের ভাত খাবে।প্রচুর লুকোচুরি খেলা খেলেছো’

রেদোয়ানের কোনো রিয়েকশান না দেখে শাওন পেছনে তাকিয়ে মেধাকে দেখলো।মেধা ও এগিয়ে এসে বললো,’কিসের বলে এমন চেয়ে আছো??তোমার দিন শেষ।আশাকে মারার শাস্তি এবার তুমি পাবে।’

-‘আচ্ছা আমি বরং মেধার প্রশ্নের উত্তর দেই??আমার কোনো রিয়েকশান নাই কেন জানো?
কারণ আমার দিন শেষ হবেনা,তোমাদের দিন শেষ হবে।আমি কিন্তু আজ একা নই,তোমরা একা।’

ঠিক সেই মূহুর্তে কয়েকটা গাড়ী এসে থামলো।রেদোয়ানের ভাঁড়া করা সমস্ত লোকেরা এসে চারিদিকটা ঘিরে দাঁড়িয়েছে।শাওন হাত কচলাচ্ছে।প্রথমে শাওনই মারামারি লাগিয়েছিল।
বিপত্তি ঘটলো অন্য কারণে। রেদোয়ান হঠাৎ মেধার হাত ধরে টানা ধরেছিল।কিন্তু সে জানতোনা মেধা হুশে থাকলে ওর সাথে জবরদস্তী করা অসম্ভব। ঠিক তাই হলো।মেধার মারামারি দেখে শাওনই তার মার থামিয়ে দিয়েছে।মেধার হাতে রেদোয়ানকে মার খেতে দেখে সে হাসা ধরলো কিন্তু তারা দুজনেই জানতোনা রেদোয়ান ক্যারাটে জানে।সে হুডি খুলে এবার মেধার উপর আক্রমণ করলো।
দুজনের লড়াই চলছিল।ওদিক দিয়ে শাওন বাকিদের জন্য মেধার কাছেও আসতে পারছিলোনা।লোকসংখা এত বেশি ছিল যে এবার অর্ধেক লোক গিয়ে মেধাকে আটকে ধরেছে।কারণ রেদোয়ান যেমন ক্যারাটে জানতো মেধা ক্যারাটে,আর বক্সিং দুটোই জানতো।তার সাথে শেষের দিলে রেদোয়ান নিজেই পারছিলোনা।
রেদোয়ানকে রক্ষা করতে মেধার দুহাত ধরে দুজন মিলে ওকে থামিয়ে দাঁড়ালো।রেদোয়ান হাত ঝাড়তে ঝাড়তে বললো,’কি তেজ!!’
.
শাওন তার আশেপাশের গুলোকে যত মারছে তত তারা সংখ্যায় আরও বাড়ছে।পুরো তৈরি হয়ে এসেছে রেদোয়ান।
মারামারির এক পর্যায়ে শাওন পেছনে তাকিয়ে খেয়াল করলো রেদোয়ান একটা গাছের ঢাল হাতে এগিয়ে যাচ্ছে মেধার দিকে।শাওনের অন্যমনস্ক ভাব লক্ষ করে কয়েকজন মিলে ওকে ঝাপটে ধরে ফেললো সেই সুযোগে।
মেধা চুপ করে রেদোয়ানকে এগিয়ে আসতে দেখছে।
রেদোয়ান সবার আগে আঘাত করেছিল মেধার পায়ে।
এক বার দুবার করে তিন চারবার।মেধার অজ্ঞান হবার মতন অবস্থা হলো।
নির্জন একটা জায়গায় শাওন যেটা ভেবেছিল সেটাই হচ্ছে।আর মেধা যেটা ভেবেছিল তার উল্টোটা।তারা দুজন এতগুলো মানুষের সাথে পেরে ওঠার কথানা।
মেধাকে কষ্ট পেতে দেখে শাওনের সহ্য হচ্ছিলো না।কোনোমতে নিজেকে ছাড়িয়ে এদিকে আসতে নিতেই লোকগুলো মেধার হাত ছেড়ে শাওনকে আটকাতে ছুটলো।মেধা পায়ে হাত দিয়ে শাওনের দিকে তাকিয়ে আস্তে করে বলছে,’সে ঠিক আছে।’
ওদিকে রেদোয়ান ফোন নিয়ে রকিকে কল করছে বারবার।
সাজিদ আর মিলন মিলে রকিকে নিয়ে এই পথেই যাত্রা হয়েছিল,রকিকে একা রাখা রিস্ক মনে করে।
—-
-‘রকি কাম অন!কল পিক করো।তোমার উপহার আমার সামনে যন্ত্রনায় ছটফট করছে!!এই মূহুর্তে তার লড়ার কোনো গতি নাই।জলদি এসে গ্রহণ করো।নাহলে আমার হাত চুলকায়।এরে মেরে একটু রেস্ট নেবো।এই দেশে আর থাকা হবেনা।মালদ্বীপ চলে যাব।এ্যামিলির ছোটবোন আমার অপেক্ষা করছে।’
—-
তারা সবাই এতক্ষণ রেদোয়ানের জিপের আলোয় মারামারি করছিল।শাওন হঠাৎ মারামারির পালা শেষ করে তার আশেপাশের লোকগুলোকে প্রতিহত করে রেদোয়ানের পকেট থেকে রিভলবারটা ছিনিয়ে নিয়ে জিপের দুইটা লাইটে শুট করে দিলো।মূহুর্তেই জায়গাটা অন্ধকারে পরিণত হয়েছে।রেদোয়ান তাড়াহুড়ো করে ফোনে ফ্ল্যাশ অন করতেই দেখলো বাকি কজন লোক উপস্থিত থাকলেও শাওন আর মেধাই উধাও।
রেগে মেগে চেঁচিয়ে সে বললো,’ফাইন্ড দেম’
চলবে♥

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here