সন্ধ্যে নামার পরে পর্ব -১৫+১৬+১৭

#সন্ধ্যে_নামার_পরে 🔞
ফাতেমা তুজ জোহরা
পর্ব-১৫

কর্মব্যস্ত এক সকাল। পুলিশ অফিসার শাহিন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কনস্টেবলদের ইন্সট্রাকশন দিচ্ছেন মৃত দেহ সরিয়ে নিয়ে। পুরে এমন অবস্থা হয়েছে যে, একটা মানব দেহের অবয়ব কয়লাপিন্ড ছাড়া আর কিছুই বোঝার উপায় নেই। একমাত্র ফরেনসিক বিভাগের ডাক্তাররাই এটা বলতে পারবে যে দেহটি কার। পুলিশের চারপাশে অনেক মানুষের ভিড়। ভিড় ঠেলে জিনিয়া পুলিশের পাশে এসে দাঁড়ায়। পুলিশ অফিসার শাহিন জানতো না যে জিনিয়াকে মুক্ত করে দেয়া হয়েছে। জিনিয়াকে দেখে একটু অবাক হয় বটে। তবে নিজেকে স্বাভাবিক ভাবেই প্রদর্শন করলেন। জিনিয়া পুড়ে যাওয়া ঘরের ছাইয়ের দিকে তাকিয়ে বলল,

“ডেড বডি নিয়ে কি কিছু চিন্তা ভাবনা করছেন ?”

জিনিয়ার প্রশ্ন শুনে শাহিন ভ্রু কুঁচকে তাকালো। তারপর বলল,

“তুমি কি এখানে এসব জিজ্ঞেস করতে এসেছো ? পড়াশোনা নেই নাকি ?”

জিনিয়া শাহিনের এসব প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে বলল,

“চলুন আপনার হিসেব সহজ করে দিচ্ছি। ফরেনসিক ল্যাবে যাকে পাঠালেন সে ফাহাদ, আমার ভাই।”

আমার ভাই শব্দ দুটো জিনিয়া শাহিনের দিকে তাকিয়ে বলল। শাহিন বলল,

“এত শিওর কিভাবে হচ্ছো যে এই মৃত দেহ তোমার ভাই ফাহাদের ? আর তুমি বাড়ি ফিরেছো কখন ?”

জিনিয়া শাহিনের দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে নিয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে বলল,

“তার বন্ধীতেই আমার মুক্তি। আমি একটা টোপ ছিলাম মাত্র।”

শাহিন বলল,

“তুমি যে টোপ ছিলে সেটা স্পষ্টই ছিল। কিডন্যাপারদের তোমার মায়ের হুমকিধামকির জন্য ধরতে পারলাম না। তোমার মায়ের দোষেই তোমার ভাইকে হারালে।”

জিনিয়া দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,

“উঁহু, মায়ের দোষে নয়। ফাহাদ ভাই তার নিজের দোষেই এমন অকাল মৃত্যুকে দু’হাতে আহ্বান করে এনেছে।”

শাহিন বলল,

“আচ্ছা তোমাকে যারা কিডন্যাপ করেছে তাদের মুখ দেখেছো তুমি ?”

জিনিয়া বলল,

“আমাকে প্রশ্ন করে লাভ নেই। কারণ আমার কাছে কোনো ক্লু নেই। আমার মনে হয় এবার আপনার প্রস্তুতি নেয়া উচিৎ।”

জিনিয়ার কথায় শাহিনের মনে একটা ছাইচাপা দেয়া ভয় ছুটাছুটি করতে শুরু করলো। জিনিয়াকে বলল,

“কিসের প্রস্তুতির কথা বলছো তুমি ?”

জিনিয়া চলে যেতে যেতে বলল,

“এই মুহুর্তে যেটা ভাবছেন হয়তো সেটাই। আ’ম নট শিওর।”

জিনিয়ার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো শাহিন। এক কনস্টেবলকে ডাক দিয়ে এক বোতল পানি আনিয়ে ঢকঢক করে হাফ লিটার পানি সম্পূর্ণ পান করে ফেললো।

________

ক্লাস ফাঁকি দিয়ে প্রেমিকের সাথে ঘুরতে বের হয়েছিলো ষোড়শী কন্যা দোলনচাঁপা। কে জানতো জন্মদিনের সারপ্রাইজ দেবে বলে এই প্রেমিক তার গায়ে কালঙ্কের কালি মাখিয়ে সারপ্রাইজ দেবে ? যদি একটাবার আন্দাজ করতে পারতো এই বোকা মেয়েটা, তাহলে সে কি যেতো কোনো এক রুমের অন্ধকার কক্ষে। যেই প্রেমে দেহ ছোঁয়ার বাসনা পুড়িয়ে দেয় প্রেমিকের হৃদয়, সেই প্রেম কখনোই কারো কাম্য হতে পারে না। এ যে এক বিষাদী নদী।

দোলনের সাথে সোহেলের সম্পর্ক প্রায় বছর খানেকের। সময়কালটা এমন যে, কলেজের প্রথম দিক থেকেই দুজনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্কের সৃষ্টি হয়। দোলন ভিষণ ভালোবাসতো সোহেলকে। তাই সোহেলের প্রতিটা কথাই দোলনের কাছে অমৃতবাণী। খুব স্বাভাবিক ভাবেই তাদের সম্পর্ক এগোচ্ছিলো। তাই দোলনের মনেও কখনো ভয় জাগেনি কলঙ্কিত হবার। প্রায় সময়ই ওরা দুজন ঘুরতে বের হতো। অল্প সময়ের জন্য হলেও এটা ওদের রুটিনের মতোই ছিল। যখন সোহেল ঘুরতে যাওয়ার কথা বলতো তখন দোলন দ্বিমত করতো না। কারণ সোহেল সবসময় দোলনকে খোলামেলা, হাঁটাচলা বা বসে আড্ডা দেয়ার মতো জায়গায় নিয়ে যেতো। এবার ঘুরতে যাওয়া ছিলো একটু স্পেশাল। কারণ দোলনের জন্মদিন ছিল। ক্লাস ফাঁকি দিয়ে দোলন আর সোহেল বের হয়।

সোহেল দোলনের চোখ বেঁধে নিয়েছিল। দোলনের মনে খুশির স্রোত বইছিল সারপ্রাইজের কথা ভেবে। নিশ্চই সোহেল তাকে চোখ ধাঁধানো সারপ্রাইজ দেবে। দোলন আসলেই বেশ সারপ্রাইজ হলো যখন তার চোখের বাঁধন খোলা হলো। দোলন আবছা অন্ধকার ঘরে নিজেকে আবিষ্কার করলো। হাত-পা হুট করেই বরফ শীতল হয়ে জমতে শুরু করলো যখন সে দেখলো তার সামনে প্রায় ছয় থেকে সাতজন ছেলে। এখানের কেউই সোহেলের মতো সমবয়সী বলে মনে হয়নি দোলনের। দোলন ভয়ে সোহলের কাছাকাছি এসে দাঁড়ায়। সোহেল হেসে হেসে বলল,

“কি দোলনচাঁপা, ভয় পাচ্ছো ? কেমন লাগলো সারপ্রাইজ ?”

দোলন ভয়ার্ত স্বরে বলল,

“এটা কেমন ধরনের সারপ্রাইজ সোহেল ? এটা কি কোনো সারপ্রাইজ হতে পারে ?”

সোহেল বলল,

“মূল সারপ্রাইজতো এখনো বাকীই রয়ে গেলো। এটাতো জাস্ট প্রাথমিক অবস্থা।”

দোলন দরজার দিকে যেতে যেতে বলছিল,

“দরকার নেই আমার সারপ্রাইজের। আমি ফিরে যাবো।”

সোহেলের সাথে সাথে ঘরে আরো যারা ছিল সবাই এক চোট হেসে নিলো। তারপর সোহেল বলল,

“বিড়ালের চোখের সামনে এত্ত সুন্দর নাদুসনুদুস একটা ইঁদুর ঘুরে বেড়ালে কি বিড়াল থাবা না বসিয়ে থাকতে পারে ! আমিতো তবুও বছরখানেক নিজেকে সামলে রেখেছিলাম। দেখ রানা, তোদের দেয়া ডেয়ার ফুলফিল করতে আমার বছর লেগে গেলো এই মেয়েটার পিছনে। চল এবার এটা ডিসমিস করা যাক।”

দোলন কেঁদেই ফেলল। কেঁদে কেঁদে বলল,

“ভালোবাসতে না তাহলে আমাকে ? একটা মানুষ কিভাবে এতটা নিঁখুত অভিনয় করতে পারে বলো তো ? এভাবে তোমার প্রতি ভালোবাসা আর বিশ্বাসকে ধূলিসাৎ করে দিতে পারলে ? ”

বিছানায় বসে থাকা জামান ছেলেটা সিগারেটের ধোঁয়া উড়াতে উড়াতে বলল,

“ওর বাপ হলো জাত অভিনেতা। অভিনেতার ছেলে অভিনেতা হতে আর কতক্ষণ। এসব ভালবাসা আর বিশ্বাস ধুয়ে কি শরবত বানিয়ে খেয়ে ঠান্ডা হবে ?”

দোলন এতক্ষণে কাঁদতে কাঁদতে ফ্লোরে বসে পড়েছে। এক পর্যায়ে সোহেলের পা জড়িয়ে বলল,

“প্লিজ আমাকে ফিরে যেতে দাও। তোমার ডেয়ার চ্যালেঞ্জ ছিল প্রেমের অভিনয় করা, সেটাতে তুমি জিতে গিয়েছো। এখন প্লিজ আমাকে যেতে দাও।”

সোহেল দোলনের দুবাহু ধরে তুলে দাঁড় করিয়ে বলে,

“না সোনা, এখনো চ্যালেঞ্জ সম্পূর্ণ হয়নি। আজকে তুমি আমাদের জন্য এক সুস্বাদু কাবাব।”

হুট করেই দোলন পাশে থাকা এক কাঁচের বোতল হাতে তুলে দেয়ালে বারি মেরে একাংশ ভেঙে ফেলে। তারপর সোহেলের দিকে কিছুটা এগিয়ে বলল,

“আমাকে যেতে দাও। নয়তো আমি নিজেকে নিজেই শেষ করে দেবো।”

দোলনের পিছন থেকে যে একজন এগিয়ে আসছিলো দোলন তা খেয়াল করেনি। দোলনের হাত থেকে হুট করেই ভাঙা কাঁচের বোতলটা ছিনিয়ে নিয়ে পলক বলল,

“ওহো… এত তাড়া কিসের খুকুমণি ? নিজেকে যখন শেষ করেই দিতে চাচ্ছো তো আগে আমাদের হাতে নিজেকে সপে দাও। আমরা কিছুক্ষণ খেলাধুলা করি। তারপর যা ইচ্ছা তাই করো।”

এই বলে দোলনের কাঁধ থেকে স্কার্ফটা টান দিয়ে খুলে ছুঁড়ে ফেলে দেয় ঘরের কোনো এক প্রান্তে। দোলনকে নিয়ে যাওয়া হয় বিছানায়। অতঃপর, এক কালো অধ্যায়ের সূচনা। দোলন নিজেকে ছাড়ানোর আপ্রাণ চেষ্টা করেছিল। এতে কোনো লাভ হবে না জেনেও দোলন ছটফট করছিল। আর্তনাদ যেন চার দেয়ালের মাঝেই আটকে রইলো।

_________

আয়মান সকালের নাস্তা সেরে লতিফদের এলাকার উদ্দেশ্যে বের হয়ে গেলো। বের হওয়ার পূর্বে আদরিনী বউটার কপালে চুমু একে দিতে ভুল করেনি। এই এক চুমু যেন আয়মানের সারাদিনের কাজের এনার্জি লেভেল ঠিকঠাক রাখে।

লতিফদের এলাকায় গিয়ে লতিফদের বাড়ি থেকে একটু দূরে এক চায়ের দোকানে বসে আয়মান। এলাকার চায়ের দোকান মানে সবার বাড়ি পেটের খবর এখানে খুব তারাতাড়িই পাওয়া যায়। আয়মান একটা সুযোগ নেয়ার আশায় বসেছে। কোহিনূরকে রেপ কে বা কারা করেছে, সেই সম্পর্কে একটা তথ্যও যদি পাওয়া যায় তবে কেসটা এগিয়ে নিতে সুবিধা হবে। আয়মান চা খেতে খেতে আরো দু’তিনজন এসে বসলো চায়ের আড্ডায়। মেতে উঠলো নিজেদের খোশগল্পে। এই গল্পে দোকানদারও শামিল হয়। হঠাৎ দোকানদার একটা কথা বলে ফেলে। যা আয়মানের ইনভেস্টিগেশনের কাজে লাগবে।#সন্ধ্যে_নামার_পরে 🔞
ফাতেমা তুজ জোহরা
পর্ব-১৬

বিছানায় দোলনের আর্তনাদের সাথে খানিক রক্তের মাখামাখি যেন এখানে উপস্থিত থাকা প্রতিটা নরদেহে প্রফুল্লতা বাড়িয়ে দিচ্ছে প্রতি মুহুর্ত। কেন এই পৈশাচিক কর্মকাণ্ডের স্বীকার দোলন ? ভালোবাসা কি ভুল ছিল ? নাহ ভুল ছিল না। বরং ভুল মানুষটাকে ভালোবাসার মাশুল গুনতে হচ্ছে দোলনের। আমরা যখন গভীর ভাবে কাউকে ভালোবাসি, তখন তার ভুলত্রুটি বা ভালোমন্দ আমাদের চোখে পড়ে না। ভালোবাসা যেন এক প্রকার চোখের ছানি। ভালোবাসার মানুষটার জন্য মস্তিষ্কের প্রতিটা কোষ যেন লড়াই করে তাকে ভুল না বোঝার। কিছু ভালোবাসার মাশুল দোলনের মতোই দিতে হয়। কখনোবা স্বইচ্ছায়, আবার কখনোবা অনিচ্ছায়।

______

ফাইজা খুব সকালে হালকা নাস্তা করে ক্যারাটে প্রেকটিস করতে গিয়েছিল। এখন বাসায় ফিরে দেখলো আলাল এবং তার স্ত্রী রেসমি ইতোমধ্যেই ফিরে এসেছে। ওনাদের ফিরে আসা দেখে ফাইজার বেশ স্বস্তিবোধ হলো। “আম্মু” বলে হাসি মুখে ছুটে গেলো রেসমির দিকে। রেসমি জড়িয়ে ধরলো ফাইজাকে। তাদের আহ্লাদিত মুহুর্ত দেখে মনে হচ্ছে যেন, কত শত যুগ পড়ে যেন মা-মেয়ের সাক্ষাৎ পেয়েছে। রেসমি বলল,

“কিরে মা, গতকাল কোনো সমস্যা হয়নি তো ?”

ফাইজা মাথা ঝাকিয়ে বলল,

“উঁহু, একদম সমস্যা হয়নি। হাতের কাজ গতকাল ক্লিয়ার করে ফেলছি। তবে একটা কাজ এখনো বাকি।”

“ঠিক আছে তাহলে, একটার জন্য চিন্তা নেই। ধীরে স্বস্থিরে, ঠান্ডা মাথায় প্ল্যান করিস।”

“আম্মু, তুমি থাকতে আমার চিন্তা কিসের ? তোমার মাথায়তো বুদ্ধি গিজগিজ করে। নানুজান তোমাকে কি খাইয়ে বড় করেছিলো বলো তো ?”

“সেটা তোমার নানুজান বেঁচে থাকলে না হয় জিজ্ঞেস করা যেতো। যাও এখন ফ্রেশ হয়ে এসো। সবাই একসাথে খেতে বসবো।”

“আচ্ছা ঠিক আছে। এই যাবো, আর ছুটে চলে আসবো।”

ফাইজা ফ্রেশ হওয়ার জন্য নিজের ঘরে চলে গেলো। রেশমি নিজের কাজে মনোযোগ দেয়। রায়হান বসে বসে টিভিতে খবর দেখছিল। এক সাংবাদিক গড়গড় করে বলে যাচ্ছে,

“গৃহশিক্ষক নিজ ছাত্রীকে ধর্ষণ করার চেষ্টায় ব্যর্থ হলে ছাত্রীকে বালিশ চাপা দিয়ে মেরে ফেলে। তারপর মৃত্যু নিশ্চিত করতে চার হাত পায়ের শিরা কেটে ফেলে গৃহশিক্ষক সাদ্দাম।”

রেসমির কানে খবরটা পৌঁছালো। হাতে থাকা ফলের ছুরিটা ফলের মধ্যে খুব জোরে আঘাত করে ঢুকিয়ে দেয়। তারপর বিরবির করে বলে,

“এসব লোকদের কি দেখে একটা মেয়ের জন্য শিক্ষক হিসেবে রাখে লোকজন, তাও আবার গৃহশিক্ষক ? একজন যুবতি মেয়েকে কি আরেকজন মেয়ে শিক্ষক পড়াতে পারেনা ? এসব কুনজরের শিক্ষকদের চোখ উপড়ে ফেলা উচিৎ। গুটিকয়েক শিক্ষকের জন্য পুরো শিক্ষক সমাজ কলঙ্কিত।”

রায়হানকে রেসমি টিভি অফ করে খেতে আসতে ডাকলেন। খাবার টেবিলে আলাল সাহেবও যোগ দিয়েছেন। ইতোমধ্যে ফাইজায়ও চলে এসেছে। খাবার খাওয়া শুরু করার সময় আলাল সাহেব খুশি খুশি মনে বললে,

“দেখেছো বেগম সাহেবা, একসাথে খেতে বসলে কেমন পরিপূর্ণ পরিবার মনে হচ্ছে !”

রেসমি কিছুটা দুঃখভাব ফুটিয়ে বলল,

“পরিপূর্ণ আর হলো কই ? ছেলেটা এখনো বিয়ে করলো না। তোমার বয়স হয়েছে কিন্তু এখনো নিজের ব্যবসা নিজেই সামলাচ্ছো। ছেলেকে এত পড়াশোনা করিয়ে কি লাভ হলো যদি তোমার কাজের হাল না ধরে। সারাদিন ঘরে বসে থাকে। সারাদিন এভাবে বসে না থেকে তোমার সাথে গিয়ে একটু একটু করে কাজটা বুঝে নিলেও তো পারে। এই ছেলেকে এতদিন আগে বিয়ে দিলে এখন দুই বাচ্চার দাদি হয়ে যেতাম।”

আলাল সাহেব বলল,

“একদম ঠিক কথা বেগম সাহেবা। তোমার ছেলের তারাতাড়ি বিয়ে দাও। পরে দেখা যাবে যে কেউ তাকে মেয়ে দিতে রাজি হচ্ছে না। বিয়ে না করে চিরকুমার হয়ে থাকতে হবে।”

রায়হান খেতে খেতে রিলেক্স মুডে বলল,

“মেয়ে দিলে দিবে না দিলে নেই। এসব নিয়ে এত চিন্তা করার কিছু নেই। এখন আমার বিয়ে করার মোটেও ইচ্ছে নেই।”

রেসমি বলল,

“ইচ্ছে আছে কি নেই তা তো তোমাকে জিজ্ঞেস করছি না। নিজের খেয়াল তো কখনোই নিজে রাখো না। শোনো, বিয়ে হচ্ছে একটা রহমত। তাই রহমত পেতে চাও তো আর কাল বিলম্ব না করে বিয়ে করে ফেলো। নিজের পছন্দ থাকলে জানাও, নয়তো আমি নিজে গিয়ে পাত্রী খুঁজবো।”

ফাইজা বলল,

“আম্মু, রায়হান ভাইয়া মনে হয় কোনো বিষয়ে বেশ চিন্তিত। রাতে বাগানে গিয়ে সিগারেট খায়।”

হুট করে ফাইজা এই কথা বলে দেবে রায়হান তা আন্দাজ করতে পারেনি। রায়হান বাবা-মা’র আড়ালে ধুমপান করে। কিন্তু ফাইজা যে এখন এভাবে গোপন তথ্য ফাঁস করে দেবে রায়হান তা বুঝে উঠতে পারেনি। আলাল সাহেব এবং রেসমি দুজনেই রায়হানের দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকালেন। রায়হান সামনে থাকা পানি ভর্তি গ্লাসের পানি ঢকঢক করে সব পান করে ফেললো। রেসমি দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

“কথাটা কি সত্যি রায়হান ?”

রায়হান কোনো উত্তর না দিয়ে মাথা নিচু করে চুপ করে বসে রইল। নিরবতা সম্মতির লক্ষণ তা বুঝার বাকি রইলো না রেসমি বা আলাল কারোও। খাওয়া শেষে যে যার ঘরে চলে যায়। ফাইজা বিছানায় লম্বা হয়ে শুয়ে পড়েছে। খাবার খাওয়ার পর কেমন ক্লান্তি ভর করে পুরো দেহে। বাগানের দিকের জানালা খোলাই ছিল। হঠাৎ জানালার কপাটে আওয়াজ হয়। আওয়াজ পেয়ে ফাইজা উঠে বসে। কিন্তু কাউকে দেখতে পায় না। ফাইজা পুনরায় শুয়ে পড়ে। শুয়ে পড়ার পর আবারো জানালায় শব্দ হলে “কে ওখানে ?” বলে জোরে আওয়াজ করে ফাইজা। জানালার কাছে এগিয়ে গিয়েও কাউকে দেখতে পেলো না ফাইজা। কে ছিল জানালায় ?

_______

আয়মান শুনতে পেলো দোকানদার বলছিল,

“লতিফের বউডার জানি কি হইলো। সেই যে হাসপাতালে নিয়া গেলো, আর খবর নাই। লতিফ বাড়ি আসোনের আরো কিছুক্ষণ আগে সুমি গেলো ওই বাড়ি। মাইডাওতো কিছু কইলো না বউডা অসুস্থ কিনা।”

আয়মান দোকানদারকে জিজ্ঞেস করলো,

“এই সুমিটা কে ? কোথায় থাকে ?”

দোকানদার বলল,

“সুমিতো ওই পুব পাড়ার কাসেমের বউ। পুব পাড়ায় মুন্সিগো বাড়িতে থাকে। মুন্সি বাড়ি বইলাই সবাই ডাকে ওই বাড়িডারে। সবাই এক নামে চিনে।”

আয়মান বলল,

“সুমি লতিফদের বাড়িতে কখন গিয়েছিলো ?”

দোকানদার বলল,

“ভাই আমনে এত কথা জিগাইতাছেন কেন ? আফনারে তো আগে দেখছি বইলাও মনে হয়না।”

আয়মান পকেট থেকে নিজের আইডি কার্ড বের করে দেখালে দোকানদার আর কিছু বুঝুক না না বুঝুক, ছবি দেখে এটা বুঝেছে যে সামনে বসে থাকা লোকটি পুলিশ সদস্য। দোকানদার কিছুটা ভিত হলো হঠাৎ পুলিশ কেন তাকে প্রশ্ন করছে সেই ভয়ে। দোকানদার যখন স্যার বলে সম্বোধন করলো আয়মানকে তখন পাশে বসে থাকা লোকগুলো বাঁকা চোখে তাকালো আয়মানের দিকে। আয়মান দেখলো কিন্তু তাকালো না। দোকানদারের সাথে প্রশ্নোত্তর পর্বে মনোযোগী হলো। আয়মান তাকে জিজ্ঞেস করলো,

“এবার বলুন, লতিফ বাড়িতে ফেরার আগে ওদের বাড়ির ওদিকে কে কে গিয়েছিল ? এই রাস্তার মাথায় লতিফদের বাড়ি। এদিকে আর অন্য কোনো বাড়িঘর নেই। এখান দিয়ে যারা যাবে, তার মানে তারা লতিফদের বাড়িতেই যাবে। এখন ভালো করে ভেবে বলুন, ওদিকে কোন কোন ব্যক্তিকে যেতে দেখেছেন ?”

দোকানদার বলল,

“সুমি গেছিলো ওই বাড়ি। তয় বেশি দেরি করে নাই। ফিইরা আইসা আমার কাছে পানের খিলি চাইলো। দোকানে তখন পান আছিলো না। ওরে বসাইয়া রাইখাই বাড়িতে গেছিলাম পান আনতে। আমি না থাকোনের বেলায় আর কেউ আইছে কিনা হেইডা আমি জানিনা।”

আয়মান বলল,

“আচ্ছা ঠিক আছে। এখন আমাকে সুমির শ্বশুরবাড়িটা দেখিয়ে দিন। কোনো প্রশ্ন মনে হলে আবারো আসবো আপনার কাছে।”

আয়মান উঠে দাঁড়ালো। দোকানদার এক ছোট ছেলেকে ডেকে এনে বলে দিলো সুমিদের বাড়ি দেখিয়ে দিতে। ছোট ছেলেটার সাথে যেতে যেতে আয়মান টুকটাক আলাপ করলো। এই টুকটাক আলাপের মাঝে এমন কিছু কথা চাপা পড়ে গেলো, যা পরবর্তী সময়ে খেয়াল করলে আসল অপরাধীকে ধরতে পারবে আয়মান। এই অপরাধে কি সুমি জড়িত ? নাকি সুমিকে নাটকের একাংশে যুক্ত করেছে আসল অপরাধী ?

চলবে….#সন্ধ্যে_নামার_পরে 🔞
ফাতেমা তুজ জোহরা
পর্ব-১৭

অদ্ভুত ! এই দিনে দুপুরে জানালায় এসে কে বারবার বিরক্ত করছে ? জানালায় পুনরায় আওয়াজ হলে ফাইজা কিছু বলল না। চুপ করে ঘর থেকে বের হয়ে এলো। ধীর পায়ে জানালার বাহিরের দিকে গেলো। দেখলো একটা ছেলে লুকিয়ে আছে। মাঝেমধ্যে শব্দ করছে জানালায়। ফাইজা নিজেকে প্রস্তুত করে নিলো। তারপর সুযোগ বুঝে ছেলেটির উপর আক্রমণ করে বসলো। হাত পেঁচিয়ে ঘাড়ে চাপ দিয়ে ধরতেই ছেলেটি নিজের হার শিখার করাতে ফাইজা তাকে ছেড়ে দেয়। ছেড়ে দেয়ার পর হুট করে দুজন মিলে হাসতে শুরু করলো। ভাবছেন ছেলেটা কে ?

ছেলেটা হলো মিদুল। ফাইজাকে দেখতে এসে একটু মজা করে নিলো। তার অবশ্য কারণ আছে। মিদুল মাঝেমধ্যে এসে এরকম আরো কিছু অদ্ভুত কাজ করে ফাইজার রিয়েকশন আন্ড একশকন জানার জন্য। ফাইজা মিদুলকে নিয়ে ভেতরে গেলো। ফাইজা রেসমিকে ডাকলো,

“আম্মু দেখো কে এসেছে !”

রেসমি ফাইজার ডাকে বের হয়ে আসে। মিদুলকে দেখতে পেয়ে রেসমি ভিষণ খুশি হয়। মিদুল দৌঁড়ে রেসমির কাছে গেলে রেসমি মিদুলের কপালে চুমু খেয়ে জিজ্ঞেস করে,

“তা আমার আব্বাজান কেমন আছে ? এতদিন পর মেয়েকে মনে পড়লো বুঝি ?”

রেসমি বেগমের বাবার চেহারা নাকি ছিল মিদুলের মতো। তাই রেসমি মিদুলকে আব্বাজান বলেই ডাকে। ফাইজার মতো মিদুলকেও বেশ স্নেহ করেন, ভালোবাসেন। মিদুল মাঝে মধ্যেই ফাইজাকে দেখতে আসে। প্রথম দিকে ইতস্ততবোধ করলেও রেসমির স্নেহসুলভ আচরনে সেই দ্বিধা বলতে গেলে পুরোটাই কেটে গিয়েছে। ফাইজার মতো মিদুলও আম্মু বলে ডাকে রেসমিকে।

রায়হান তার ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ফাইজা, মিদুল আর তার মায়ের কাহিনি দেখছে। মিদুলকে রায়হান চেনে না। মিদুলের কথা তাকে বলাও হয়নি। সেকারণে রায়হান ভাবছে মিদুল হয়তো ফাইজার প্রেমিক হবে হয়তো। আসলে আমরা নেগেটিভ দিকটা আগে চিন্তা করি। রাস্তাঘাটে, বাসে বা রেসটুরেন্টে দু’জন ছেলেমেয়েকে একসাথে দেখলে আমাদের মস্তিষ্ক আগে প্রেমিক ভাবে। তারপর দেখা গেলো যে, ছেলেটি মেয়েটির বাবা বা ভাই বা কোনো মামা চাচা ইত্যাদি। রায়হানের মস্তিষ্কও এখন রায়হানকে এমন কিছু বোঝাচ্ছে। মিদুলকে নিয়ে রেসমি ড্রয়িংরুমের আরামদায়ক সোফায় বসে পড়লেন গল্পগুজবে। ফাইজা নুডলস রান্না করতে রান্নাঘরে গেলো। ফাইজার হাতে স্যুপ নুডলস মিদুলের পছন্দ। সুইটি থাকা সত্বেও ফাইজা নিজের ভাইয়ের জন্য তার পছন্দের নাস্তা বানাবে।

ফাইজা রান্নাঘরে চলে গেলে রায়হানও চুপ করে রান্নাঘরে চলে আসে। ফাইজা তখন চুলোয় পানি বসাচ্ছিলো। পিছনে কেউ এসেছে বুঝতে পেরে পিছন দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলো রায়হান পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। ফাইজা স্বাভাবিক ভাবে জিজ্ঞেস করলো,

“আপনার কি কিছু লাগবে ভাইয়া ?”

রায়হান মাথা ডান-বামে নাড়িয়ে নাবোধক জানালো। ফাইজা আর কিছু জিজ্ঞেস করেনি। কিন্তু কাজের সময় কেউ এভাবে পাশে দাঁড়িয়ে আছে সেটার জন্য কিছুটা অস্বস্তি বোধ হচ্ছে ফাইজার। ফাইজা মাংসের টুকরো কাটা বাদ দিয়ে রায়হানের দিকে তাকালো। রায়হানের মুখমন্ডলে অদ্ভুত এক ছাপ। এমন তখন হয়, যখন আমাদের পছন্দের বা ভালোবাসার কারো সাথে অন্য কাউকে দেখে হিংসে হয়। আমরা যখন ঈর্ষার সাথে এক চামচ অভিমান ঢেলে দিই, তখন মনের ভাব প্রকাশের ভঙ্গিমা পালটে যায়। রায়হানকে ফাইজা বলতে নিচ্ছিলো যে, “আপনি কি কিছু বলতে চাচ্ছেন ?” তার আগেই রায়হান বলল,

“ছেলেটা কে ?”

রায়হানের এমনতর কথা ফাইজার অদ্ভুত লাগলো। তবুও বলল,

“ওহ আচ্ছা, এই কথা। সে মিদুল, আমার ছোট ভাই। এই কথাটা তো আপনি আম্মুকেও জিজ্ঞেস করলে পারতেন। কোন কি সমস্যা আছে ?”

রায়হান “না কিছু না” বলে মুচকি হাসি দিয়ে রান্না ঘর থেকে চলে গেলো। যেতে যেতে ফাইজাকে বলে গেলো নুডলস একটু বেশি করে বানাতে। ফাইজা বিরবির করে বলল,

“লোকটা কি উচ্চ পর্যায়ের খাদক হলো নাকি ! কিছুক্ষণ আগেইতো খাবার খেলো। এখনো মনে হয় খাবারের হজম প্রক্রিয়াও শুরু হয়নি। এখন আবার তার নুডলস চাই। আসলে কি নুডলস এর জন্য এসেছে নাকি অন্যকিছু ?”

_________

দোলনকে যেই বাংলো বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো, ঠিক তার পিছনেই মাটি খুড়ছে জামান, সোহেল আর রাসেল। ঘরের ভেতর দোলনকে তখনো খুবলে খাচ্ছিলো মানবরুপী শকুন। কচি নারী দেহ যেন শুধু দেহই না, এ যেন এক বক্স সুস্বাদু কাবাব। যারা তারা খুব আয়েশ করেই খাচ্ছে। দোলনের দেহের কোনো কোনো অংশের চামড়া ছিলে রক্ত পড়ছে। এতে কার কিই বা আসে যায় ? দোলনের দেহে আর বিন্দু পরিমাণ শক্তি নেই। একের পর এক করে বা কখনো দলবদ্ধ হয়ে এই পাষবিক হিংস্রতা মেনে নেয়া কখনোই কারো পক্ষে সম্ভব না। বাক শক্তির সাথে সাথে যেন চোখের পানিও শুকিয়ে এসেছে। কাকে বলবে এই অভিযোগ ? কে দেবে এই শুকিয়ে যাওয়া চোখের পানির দাম ? কে করবে এই শুকনদের বিচার ? কেউ কোথাও নেই, কোন মানব নেই। এ যেন এক শুকুনদের গ্রহ। মানবরূপী শুকুনগুলো যেন রোজ মানুষ সাজার অভিনয় করে পুরো পৃথিবী চষে বেড়াচ্ছে।

সোহেল, জামান আর রাসেল ঘরে প্রবেশ করলো। দোলনের সঙ্গে তখন বাদল তার খেলা খেলছিলো। সোহেল বলল,

“আরে ব্যাটা, তুই একাইতো সব শেষ করে দিবি মনে হচ্ছে। একেবারেই সব খেয়ে দিবি নাকি ? ছাড় এবার। বাকীরাও চল কিছু খেয়ে নেই। আর হ্যা বাহিরের কাজ এখন আমিরা তিনজন কিছুটা করে আসছি। খাবার খাওয়া শেষে আরো তিজন গিয়ে করবি।”

একে একে সবাই মিলে ঘর থেকে বের হয়ে গেলো। এখন ঘর ভর্তি এক অদ্ভুত গন্ধে ছেয়ে রইলো। সব কয়টা ছেলেই ধুমপানে পারদর্শী। সাথে অন্যান্য গন্ধ তো রয়েছেই। চোখের পাতা যেন গ্লু দিয়ে আটকে রাখা হয়েছে, এমনই মনে হচ্ছে দোলনের। সবার কথা কানে পৌছালেও চেয়ে তাকানোর শক্তি নেই। তাকিয়েই বা কি হবে ? চোখ মেললেই দেখতে হবে কতগুলো জা…য়ারের সুন্দর মুখোশের আড়ালের বিভৎসতা। দোলন মনে মনে চাইছে এই মুহুর্তে ধ্বংস হয়ে যাক এ পৃথিবী নামক গ্রহ। নিজের সাথে সাথে ধ্বংস হয়ে যাক এই মানবরূপী সভ্য সমাজের পশুগুলোর।

___________

আয়মান সুমিদের বাড়ি পৌঁছালে ছোট ছেলেটা চলে আসে। সুমির স্বামী তখন উঠানে কাঠ কাটছিল। আয়মানকে দেখে কাঠ কাটা স্থগিত করে আয়মানের কাছে এসে তাকে বসতে দেয়। তারপর পরিচয় জিজ্ঞেস করলে আয়মান নিজের পরিচয় দেয় এবং সুমিকে জিজ্ঞাগাবাদ করতে চায় সেটাও জানায়। সুমিকে ডাকা হলে সুমি চারটা বিস্কিটের সাথে এক গ্লাস পানি নিয়ে বের হয়ে আসে। তারপর আয়মান-সুমির মধ্যে কথোপকথন চলে,

“মিসেস সুমি, আপনি লতিফের বাড়িতে গিয়েছিলেন ?”

“হ গেছিলাম, কিন্তু ক্যান ?”

“তা কেন গিয়েছিলেন ?”

“গেছিলাম কারণ কোহিনূর আমারে কইছিলো একখান মজবুত কইরা হাতপাখা বানাই দিতে। ওইটা বানানি শেষ হইছে বইলা পাখাটা দিবার গেছিলাম।”

“পাখা আপনাকে কেন বানিয়ে দিতে বলল ? কিনেই তো পাওয়া যায়। ওদের বাড়ি থেকে তো আপনার বাড়ি প্রায় দশ-পনেরো মিনিটের দুরত্ব।”

“স্যার, এইগুলা কি অদ্ভুত অদ্ভুত প্রশ্ন করতাছেন ? আমারে বানাই দিবার কইছে আমি দিছি, সোজা হিসাব।”

“আচ্ছা আপনি ও বাড়ি থেকে বের হয়ে এসে চায়ের দোকানে গিয়েছিলেন কেন ?”

“ওহ ওইডা, ফিরোনের সময় দোকানদার আমারে ডাক দিছিলো। গেছি পরে আমারে লতিফগো বাড়ির খোঁজখবর নিলো। পরে মনে অইলো বাড়িতে পান নাই তো পান নিয়া যাই। পাখা বানানির টাকাও আছিলো লগে। পরে হেই ব্যাডা আমারে খাড়া কইরা রাইখা পান আনতে গেছে। গেছে তো গেছে, ম্যালা সময় পর আইছে।”

“আপনি ওখানে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় কি কাউকে লতিফদের বাড়ির দিকে যেতে দেখেছিলেন ? আর এত সময় লাগালো কেন দোকানির ? দোকান থেকে কি তার বাড়ি অনেক দূর ?”

“না কাউরে তো যাইতে দেখি নাই। আর দোকানদারগো বাড়ি দূর কইতে গেলে বেশি দূর না। পাক্কা রাস্তা দিয়া গেলে আমাগো বাড়ি আইতে যতক্ষণ লাগছে, হেগো বাড়িতে যাইতে অতক্ষণই লাগবো। আর যদি ক্ষেত পাতাইল্লা লতিফগো বাড়ির পাশের ঝোপঝাড় দিয়া যায় তাইলে পাঁচ মিনিটের মতো লাগবো আরকি।”

আয়মান সামনে থাকা গ্লাসটা থেকে পানি খেয়ে উঠে দাঁড়ালো। তারপর বিদায় নিয়ে চলে এলো। দরকারে আবার আসবে সেটাও জানিয়ে গেলো।

চলবে….

আর কিছু কইতাম না। আপনারা লেখা নিয়ে কিছুই বলেন না।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here