#সবটাই_তুমিময়
#লেখনিতে-মিথিলা মাশরেকা
পর্বঃ৩৬
সাদা মেঘের ভেলা নীল আকাশে ভেসে বেড়াচ্ছে।শরতের এ স্নিগ্ধতা মনপ্রান জুরিয়ে দেয়।দরজার সামনে সিড়িতে বসে মুক্ত আকাশের ওই সাদা পেজা তুলোর মতো উড়তে থাকা মেঘ দেখে দেখে চরম স্বস্তিতে মন ভরিয়ে তুলছি।বাসার ভেতরে অনেকগুলো কন্ঠস্বর।গ্রাম থেকে চাচ্চু,চাচীআম্মা,চাচাতো বোন আসফি এসেছে।নানীমা,একমাত্র মামা,মামীমা,তাদের দুটো জমজ ছেলে শাকিল,শিহাব ভাইয়া,খালামনি,তার মেয়ে তনিমা আপু,ওরাও এসেছে।আজ বাদে কাল বিয়ে।সবে শপিং করে ফিরলো সবাই।ওগুলোই দেখছে সবাই মিলে।
এতোক্ষন ওখানে বসেই দেখছিলাম সবটা।আমার দাদুবাড়ি,নানুবাড়ির সংস্কৃতির মধ্যে যে অনেকটাই তফাৎ,তা বুঝতে খুব একটা কষ্ট হলো না।প্রায় জিনিসেই নানু,দাদীমার মাঝে তর্ক।পরপরই আদুরে গলায় বেয়াইন ঠিকই করেছেন বলে মিটিয়ে নিচ্ছে ওরাই।এই অনাথ মেয়েটার এখন কতো স্বজন!মনিমা আর আমার এই ছোট্ট পৃথিবী,এখন ভরপুর।আত্মীয়স্বজনে।দুফোটা আনন্দঅশ্রু বেরিয়ে এলো।সবটাই অঙ্কুরের জন্য।হাতের দিকে তাকালাম।আংটিটা।এরমধ্যে ফোন বাজতেই স্ক্রিনে অঙ্কুরের নাম্বার।মুচকি রিসিভ করলাম কলটা।উনি বললেন,
-কি করছিলে?
-তেমন কিছু না।
-আমি বলবো?
-আপনি কি বলবেন?
-তুমি কি করছিলে।
-আপনি জানেন?আমি কি করছিলাম?
-কোনো সন্দেহ?
-বেশ!বলুন।
-হাতের আংটিটা দেখে মুচকি মুচকি হাসছিলে।
বিস্মিত হলাম।উকিঝুকি দিয়ে চারপাশটা দেখে নিলাম।নাহ্!কেউ নেই কোথাও।উনি বললেন,
-ডোন্ট প্যানিক।যাইনি ওখানে।ফিল করতে পারছিলাম,তুমি আমাকেই মিস করছো।তাইতো কল করলাম।আর আপাতত আমার নিদর্শন বলতে ওই আংটিটাই আছে তোমার কাছে।তাই বলে দিলাম।
মুচকি হাসলাম।উনি বললেন,
-ভালোবাসি অদ্রি।
এই দুটো শব্দ!এরা যথেষ্ট,আমার ধ্যানজ্ঞান কেড়ে নেওয়ার জন্য।কাপাকাপা কন্ঠে কিছু বলতে যাওয়ার আগেই কেউ পানি ছুড়ে মারলো।কোনোমতে ফোনটা বাচিয়ে সাইডে রাখলাম।ঠিকমতো তাকিয়ে দেখি ওয়াটার বল হাতে আস্থা দাড়িয়ে।পাশে তানহা,তনিমাপুও আছে।এরা বাকিসবের সাথে শপিংয়ে বেরোলেও,এতোক্ষনে ফিরছে।উঠে দাড়িয়ে কোমড়ে হাত রেখে বললাম,
-এটা কি হলো?
সাথেসাথে তানহা আর তনিমাপু ওয়াটার বল ছুড়ে মারলো।পেছন থেকে আসফি আমার মোবাইলটা কানে নিয়ে বলতে লাগলো,
-আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া,আমি আপনার শ্যালিকা উরফ্ আপনাদের প্রেমকাবাবের হাড্ডি।বউয়ের সাথে পরে প্রেম করিয়েন।এখন সে বিজি আছে।আল্লাহ হাফেজ!
কল কেটে ফোন নিয়ে ভোঁ দৌড় লাগালো ও।বাসার ভেতরে ঢুকে দরজা লক করে দিয়েছে।ইতিমধ্যে তানহা,আস্থা,তনিমাপু ওয়াটার বল ছুড়াছুড়ি শুরু করেছে।আস্থা বললো,
-আন্নু?স্পেশালি তোর বিয়ের জন্য ওয়াটার বল কিনেছি।সবগুলো তোর উপর ফাটবে আজ ইয়ার!
-তাই না?
ওড়না বেধে একহাতে রঙ আরেকহাতে ওয়াটার বল নিয়ে ছুটলাম ওর পিছনে।দৌড়ে ছাদে চলে এসেছে তিনজনই।আমিও আসলাম ওদের পিছু পিছু।ছাদে এসে হা হয়ে গেলাম একপ্রকার।একপাশে ওয়াটার বল,অনেক রঙের আবির,আবির গোলানো পানি!মাথায় হাত দিয়ে বললাম,
-এসব কি করেছিস তোরা?
-বেস্টুর বিয়ে উপলক্ষে!
-এগুলো দাদু দেখলে তোর খবর আছে আস্থা!
-কি দেখলে কার খবর আছে?
দাদুসহ বাসার সবাই ছাদে এসেছে।আস্থা,তানহা,তনিমাপু সিরিয়ালে দাড়িয়ে ঢেকে দিয়েছে ওগুলো।তিহান কিছু মরিচবাতি নিয়ে এসে ছাদে রেখে বললো,
-দাদু?শাকিল ভাইয়া,শিহাব ভাইয়া,কাকু,মামু ওরা ডেকোরেটরকে বুঝাতে পারছে না।আপনি একটু যাবেন প্লিজ?
তৃপ্তি নিয়ে তাকিয়ে রইলাম ওরদিকে।যদিও ও তাকায়নি একবারও।তানহার দিকে তাকতেই মৃদ্য হাসলো ও।লাজুকতা,সফলতার সংমিশ্রনের হাসি।চাচীআম্মা বললো,
-হ্ হ্যাঁ বাবা,যান না।যান আপনি?আমরা আহানিতাকে এখানে বসে মেহেদী দিয়ে দেই।
আস্থা দাত কেলিয়ে বললো,
-যাও না দাদু?যাও?নিজের রায়বাহাদুর উপাধীটা কোথাও তো কাজে লাগিয়ে আসো?
সবাই বড়বড় করে তাকালো ওর দিকে।ও ফোকলা হেসে বললো,
-আ’ম জোওওকিং!
দাদু কিছু না বলে তিহানের সাথে চলে গেলো।শ্বাস নিলো সবাই।বুঝলাম এটা তানহা ইচ্ছে করেই তিহানকে দিয়ে করালো।তিহান দাদুকে সিড়ি অবদি দিয়ে মিউসিক সিস্টেমে “কিউটিপাই” গান চালু করে দিয়ে গেলো।আর তানহা বসে গেলো আমার হাতে মেহেদী দিতে।আর বাকিসব ওয়াটার বল,আবির,স্প্রে গানে রঙিন পানি নিয়ে মেতেছে।সবার সাথে দেখলাম চাচীআম্মা,আসফি,দাদীমাও বেশ মজাই করছে।মুগ্ধ চোখে সবার আনন্দটা দেখছিলাম।আমার পরিবারের আনন্দ!
.
রাতে ডিনার শেষে সবাই যার যার মতো ঘুমোতে চলে গেছে।ড্রয়িংয়ে মেঝেতে বিছানা করা,মনিমার ঘরে বেড,মেঝেতেও ঘুমিয়েছে সবাই।এদিকে আমার রুমে আমি,আস্থা,তানহা,তনিমাপু আর আসফি।তানহা,আমি আর তনিমাপু মিলে ঘুমোনোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম,এরমধ্যে আস্থা,আসফি রুমে ঢুকলো।আসফি বললো,
-এটা কি হলো বলোতো আহানিতাপু?কাল তোমার বিয়ে,আর আজ দাদু হলুদ সন্ধ্যা করতে দিলো না?
আস্থা ভেঙচিয়ে বললো,
-হ্যাঁ হ্যাঁ,নাতনি তো শুধু তারই আছে!বিয়ে তো শুধু তার নাতনিরই হবে পৃথিবীতে!কাল বিয়ে,আজ নাকি হলুদসন্ধ্যা করলে তার নাতনি অসুস্থ্য হয়ে যেতো!টায়ার্ড হয়ে যেতো!যত্তোসব আদিক্ষেতা!হুহ!
তানহা বললো,
-ছাড় আস্থা!যা হয়নি,হয়নি!ওসব নিয়ে আর ঝামেলা করিস না!তাছাড়া বলেছে তো,কাল গোসলের আগে হলুদ ছোয়াতে।তখনই করে নিস তোদের হালদি সেরিমনি!
তনিমাপু বললো,
-দাদু তো গ্রামের মানুষ,তোমরা তো শহুরে।সে এসব বললো,আর তোমরাও মেনে নিলে?এটা তো তোমাদের দোষ!
-মানি নি তো!উই হ্যাভ প্রক্সি প্লান!
বড়বড় চোখে তাকালাম ওর দিকে।ও চুড়েলের মতো হাসছে।কপাল কুচকে বললাম,
-ক্ কি করবি কি তুই আস্থা?
ও ওভাবেই হাসছে।তীক্ষ্ম চোখে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করছিলাম ওকে।এরমধ্যে আসফি বলে উঠলো,
-ট্যান ট্যানাআআআআন!
ওরদিকে তাকিয়ে হা হয়ে গেলো আমার মুখ।ওর দুহাতে ওয়াইনের বোতল।একটা আরেকটায় ঠেকিয়ে ঠেকিয়ে ঠুসঠাস সুর তুলেছে।তনিমাপু বিছানা থেকে উৎসুকভাবে বললো,
-উয়াওওও!গার্লস্ পার্টি!
-কিহ্?কোনো পার্টিফার্টি নেই তনিমাপু!এইসব দাদু জানলে কাল আমার সাথে তোমরাও বাসাছাড়া হবে!এই আসফি?দাও ওগুলো!
আমি আসফির দিকে এগোচ্ছিলাম।তনিমাপু বিছানা ছেড়ে উঠে এসে সরিয়ে দিলো আমাকে।বললো,
-আবে বিয়ের কনে,কনের মতো থাকো বুঝলে?
তারপর আসফির গাল টিপে দিয়ে বললো,
-কিরে?সাইজে তো ছোটাসা!দিমাগ তো ঠাই কিলো কা দেখছি!সেই একটা কাজ করেছিস!
আসফি আরো ভাব নিয়ে দাড়ালো।আস্থা এসে বললো,
-ইহ!ওকে কেনো বলছো?এসব দেখেছে কোনোদিন ওর দাদুর আমলে ওই গ্রামে?এই আসফি?এটা তো আমার প্লান!আমিই তো শপিংয়ের মাঝে লুকিয়ে টুকুস করে জিনিসটা এনেছিলাম।তুমি কেনো ক্রেডিট নিচ্ছো?
-আরে ক্রেডিট ডেবিটের হিসাব ছাড়!যা মনিমার রুম থেকে মিনিগ্লাসগুলো নিয়ে আয়!
তানহার কথায় বিস্ফোরিতো চোখে ওরদিকে তাকালাম।ও একটা ফোকলা হাসি দিলো।আজ আবারো প্রমান হয়ে গেলো,যে যতই সভ্য সাজুক,এই বিষয়ে সব এক মৌচাকের মৌমাছি।এ মধু কেউই হাতছাড়া করবে না।আস্থা বললো,
-তনিমাপু?তুমি যাও!ও ঘরে দাদু দাদীমা ঘুমায়।আমার ভয় করে।আমি বাকিসব সাইডফুডস্ আনছি!
দুজনেই বেরিয়ে গেলো।ক্যাবলাকান্তের মতো সবটা দেখছি শুধু।একটুপরই এসে রুমে ঢুকলো।সবকিছুই এনেছে।তানহা বললো,
-লাগা লাগা!দরজা লাগা আস্থা!
ওগুলো রেখে আস্থা সবে দরজা লাগাতে যাবে,মামীমা,চাচীআম্মা,খালামনি তিনজনই দরজায় এসে দাড়ালো।আমার দম আটকে গেছে।এবার এই চারজনই উদুম ক্যালানি খাবে এই মা পার্টির হাতে।বের করে দেবে ওদের গার্লস্ পার্টি!হুরমুড়িয়ে চাদর মাথায় দিয়ে শুয়ে পরলাম।আওয়াজ আসলো,
-শুয়ে পরলে কেনো আহানিতা?আমরাও তো আসলাম পার্টি করতে!
মামীমার কথায় লাফিয়ে উঠে বসলাম আমি।ওরা তিনজনই রুমে ঢুকেছে।হাসিমুখে এসে বিছানায় বসলো তিনজনই।আমরা রীতিমতো শকে আছি।তনিমাপু বললো,
-ইয়ে,আম্মু?ত্ তোমরা এখানে কেনো?
খালামনি একটুকরো লেবু মুখে পুরে বললো,
-আস্থা কিচেনে গিয়ে এইসব খুজতে তান্ডব শুরু করে দিয়েছিলো।ঘুম ভেঙে গেলো।তাই ভাবলাম,বাসায় আমরাও তো মেয়েই,তোদের পার্টিতে জয়েন করি।যাইহোক,ওসব বাদ!এখন শুরু কর তোরা!
সবাই আরো উত্তেজিত হয়ে গেছে।আমি কিঞ্চিত জোর করে হাসি ফুটালাম মুখে।বিষয়টা হজম হচ্ছিলো না।দরজা লাগিয়ে আস্থা আমাকে চোখ মেরে বললো,
-আন্নু বেব?কাল তেরি শাদী হ্যায়!আজ?আজাদি হ্যায়!
তানহা উঠে গিয়ে গ্লাসে ওয়াইন ঢালতে ঢালতে বললো,
-লেটস্ পার্টি গার্লস্!!!
মুখ দিয়ে শ্বাস ছাড়লাম আমি।আসফি অডিও স্পিকারে গান ছেড়েছে।ওরা ড্রিংক করছে,গানের তালে দুলছে,নাচছে,মামী,চাচীআম্মাদেরও নাচাচ্ছে,তারাও নাচছে।মাথার উপর বালিশ নিয়ে বসে বসে দেখছি শুধু।এই শব্দ যদি একফোটাও রুমের বাইরে যেতো,বাসার বাকিসব এসে এদের কি অবস্থা করতো তা ভাবতেই কাশি উঠে যাচ্ছে আমার।এবার আস্থা আমাকে টেনে তুলে দাড় করালো।একগ্লাস এগিয়ে দিয়ে বললো,
-আজ তুই না খেলে খবর আছে তোর!সবাইকে বলে দেবো,অঙ্কুর ভাইয়ার সাথে অনেক আগেই বিয়ে হয়ে গেছে তোর!
হুশে নেই ও!একসেকেন্ড দেরি না করে গ্লাসটা ছিনিয়ে নিয়ে পুরোটা শেষ করে দিলাম।গান চলছেই।ধপ করে বিছানায় বসে পরলাম।মাথা ঝাড়া মারলাম বেশ কয়েকবার।নাহ্!খুব বেশি চড়ে নি!তানহা বললো,
-তুই পাগল আন্নু?ইটস্ জাস্ট ফর এন্জয়মেন্ট!মাতাল হবি না!চিল!
এবার বিষয়টা মজাই লাগলো।তনিমাপু বেশ ছেলেছেলে ভাব ধরে গাইছে,
-পাড়াতে মাঝরাতে পরেছে হুড়োহুড়ি….
কলির পুরোটা গাইলো ও।আমি আরেকগ্লাস শেষ করে আস্থাকে বললাম,
-দেখ আস্থা?তনিমাপুকে এক্সাক্টলি রোহান ভাইয়ার মতো লাগছে না?
ও হা করে মুগ্ধচোখে তাকিয়ে রইলো তনিমাপুর দিকে।যেনো সত্যিই তাই ঘটছে ওর চোখে।আমি আর তানহা হেসে দিলাম।আস্থা চোখ টিপে উঠে গিয়ে সোজা তনিমাপুর ওড়না ধরে গাইলো,
-তুমি দেখিয়াও দেখলা না,
তুমি শুনিয়াও শুনলা না,
তুমি জ্বালায়া গেলা মনের আগুন
নিভায়া গেলা না!
হাসতে হাসতে বিছানায় গড়াগড়ি দিচ্ছি আমরা।মা জননীরাও হাসছে।কিন্তু দরজায় নক হওয়ার শব্দ আসতেই পিনপতন নিরবতা।এখন কে আসবে?কোনোভাবে সাউন্ড বাইরে যায়নি তো?ড্রিংকয়ের পুরো ট্রে টা খাটের নিচে ঢুকিয়ে সবাই ধুপধাপ শুয়ে পরলাম।খালামনি এগিয়ে গিয়ে আস্তেকরে দরজা খুলে দিয়ে বিস্ময়ে বললো,
-মা তুমি?
আবারো উঠে বসলাম সবগুলো।নানীমা?পেছন থেকে দাদীমা বলে উঠলো,
-আমিও আছি।
এবার সবগুলোর গলাই শুকিয়ে গেছে।দাদীমা,নানীমা রুমে ঢুকে গম্ভীরভাবে তাকিয়ে রইলো সবার দিকে।তারপর বিছানার নিচ থেকে ট্রে বের করে দুটো গ্লাসে ঢেলে দুজনের গ্লাস ঠেকিয়ে বললো,
-চিয়ারস্!
তারপর আস্থাকে অডিও স্পিকারের কাছে টেনে নিয়ে গিয়ে ওটা দেখিয়ে বললো,
-মিউজিক!
ব্যস!আর কোনো কথাই নেই!গান ছেড়ে আবারো সবাই মজা করতে লাগলো।দাদীমা ঠেলে তুলে দিলো আমাকেও।”তুনে মারি এন্ট্রিয়ান” গানটা বাজছিলো।আস্থা,তনিমাপু ছেলেদের স্টাইলে নাচছে,আমি আর তানহা মিলে মেয়েলি ভাব নিয়ে ইগ্নোর করছি ওদের।গানের শেষ পর্যায়ে আস্থা আমাকে উল্টোদিকে জরিয়ে ধরে গালেই চুমো দিয়েছে।সঙ্গেসঙ্গে কেউ একজন চেচিয়ে বলে উঠলো,
-আস্থাআআআআ!খবরদার যদি আমার বউকে কিস করেছো তো!
#চলবে…
[ প্রথমেই আমি ক্ষমাপ্রার্থী।মুসলিম বিয়েতে এসব ইভেন্ট হয় না জেনেও এই ইভেন্টগুলো গল্পে এড করেছি বলে।তবে এগুলো প্রোমোট করার জন্য কিন্তু একদমই লিখিনি।গল্প!আপনাদের একটু আনন্দ দেওয়ার চেষ্টা,তাই লিখেছি।অবশ্য বাস্তবেও যে আমাদের দেশে ঘটছে না এমনটাও কিন্তু নয়।যাইহোক,আশা করবো “গল্পের” এই ইভেন্টগুলো সিরিয়াসলি নিয়ে কেউ হার্ট হবেন না।এগুলো কারো ব্যক্তিমনে আঘাতের কারন হলে আবারো ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।সরি।
হ্যাপি রিডিং টু অল♥ ]#সবটাই_তুমিময়
#লেখনিতে-মিথিলা মাশরেকা
পর্বঃ৩৬
সাদা মেঘের ভেলা নীল আকাশে ভেসে বেড়াচ্ছে।শরতের এ স্নিগ্ধতা মনপ্রান জুরিয়ে দেয়।দরজার সামনে সিড়িতে বসে মুক্ত আকাশের ওই সাদা পেজা তুলোর মতো উড়তে থাকা মেঘ দেখে দেখে চরম স্বস্তিতে মন ভরিয়ে তুলছি।বাসার ভেতরে অনেকগুলো কন্ঠস্বর।গ্রাম থেকে চাচ্চু,চাচীআম্মা,চাচাতো বোন আসফি এসেছে।নানীমা,একমাত্র মামা,মামীমা,তাদের দুটো জমজ ছেলে শাকিল,শিহাব ভাইয়া,খালামনি,তার মেয়ে তনিমা আপু,ওরাও এসেছে।আজ বাদে কাল বিয়ে।সবে শপিং করে ফিরলো সবাই।ওগুলোই দেখছে সবাই মিলে।
এতোক্ষন ওখানে বসেই দেখছিলাম সবটা।আমার দাদুবাড়ি,নানুবাড়ির সংস্কৃতির মধ্যে যে অনেকটাই তফাৎ,তা বুঝতে খুব একটা কষ্ট হলো না।প্রায় জিনিসেই নানু,দাদীমার মাঝে তর্ক।পরপরই আদুরে গলায় বেয়াইন ঠিকই করেছেন বলে মিটিয়ে নিচ্ছে ওরাই।এই অনাথ মেয়েটার এখন কতো স্বজন!মনিমা আর আমার এই ছোট্ট পৃথিবী,এখন ভরপুর।আত্মীয়স্বজনে।দুফোটা আনন্দঅশ্রু বেরিয়ে এলো।সবটাই অঙ্কুরের জন্য।হাতের দিকে তাকালাম।আংটিটা।এরমধ্যে ফোন বাজতেই স্ক্রিনে অঙ্কুরের নাম্বার।মুচকি রিসিভ করলাম কলটা।উনি বললেন,
-কি করছিলে?
-তেমন কিছু না।
-আমি বলবো?
-আপনি কি বলবেন?
-তুমি কি করছিলে।
-আপনি জানেন?আমি কি করছিলাম?
-কোনো সন্দেহ?
-বেশ!বলুন।
-হাতের আংটিটা দেখে মুচকি মুচকি হাসছিলে।
বিস্মিত হলাম।উকিঝুকি দিয়ে চারপাশটা দেখে নিলাম।নাহ্!কেউ নেই কোথাও।উনি বললেন,
-ডোন্ট প্যানিক।যাইনি ওখানে।ফিল করতে পারছিলাম,তুমি আমাকেই মিস করছো।তাইতো কল করলাম।আর আপাতত আমার নিদর্শন বলতে ওই আংটিটাই আছে তোমার কাছে।তাই বলে দিলাম।
মুচকি হাসলাম।উনি বললেন,
-ভালোবাসি অদ্রি।
এই দুটো শব্দ!এরা যথেষ্ট,আমার ধ্যানজ্ঞান কেড়ে নেওয়ার জন্য।কাপাকাপা কন্ঠে কিছু বলতে যাওয়ার আগেই কেউ পানি ছুড়ে মারলো।কোনোমতে ফোনটা বাচিয়ে সাইডে রাখলাম।ঠিকমতো তাকিয়ে দেখি ওয়াটার বল হাতে আস্থা দাড়িয়ে।পাশে তানহা,তনিমাপুও আছে।এরা বাকিসবের সাথে শপিংয়ে বেরোলেও,এতোক্ষনে ফিরছে।উঠে দাড়িয়ে কোমড়ে হাত রেখে বললাম,
-এটা কি হলো?
সাথেসাথে তানহা আর তনিমাপু ওয়াটার বল ছুড়ে মারলো।পেছন থেকে আসফি আমার মোবাইলটা কানে নিয়ে বলতে লাগলো,
-আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া,আমি আপনার শ্যালিকা উরফ্ আপনাদের প্রেমকাবাবের হাড্ডি।বউয়ের সাথে পরে প্রেম করিয়েন।এখন সে বিজি আছে।আল্লাহ হাফেজ!
কল কেটে ফোন নিয়ে ভোঁ দৌড় লাগালো ও।বাসার ভেতরে ঢুকে দরজা লক করে দিয়েছে।ইতিমধ্যে তানহা,আস্থা,তনিমাপু ওয়াটার বল ছুড়াছুড়ি শুরু করেছে।আস্থা বললো,
-আন্নু?স্পেশালি তোর বিয়ের জন্য ওয়াটার বল কিনেছি।সবগুলো তোর উপর ফাটবে আজ ইয়ার!
-তাই না?
ওড়না বেধে একহাতে রঙ আরেকহাতে ওয়াটার বল নিয়ে ছুটলাম ওর পিছনে।দৌড়ে ছাদে চলে এসেছে তিনজনই।আমিও আসলাম ওদের পিছু পিছু।ছাদে এসে হা হয়ে গেলাম একপ্রকার।একপাশে ওয়াটার বল,অনেক রঙের আবির,আবির গোলানো পানি!মাথায় হাত দিয়ে বললাম,
-এসব কি করেছিস তোরা?
-বেস্টুর বিয়ে উপলক্ষে!
-এগুলো দাদু দেখলে তোর খবর আছে আস্থা!
-কি দেখলে কার খবর আছে?
দাদুসহ বাসার সবাই ছাদে এসেছে।আস্থা,তানহা,তনিমাপু সিরিয়ালে দাড়িয়ে ঢেকে দিয়েছে ওগুলো।তিহান কিছু মরিচবাতি নিয়ে এসে ছাদে রেখে বললো,
-দাদু?শাকিল ভাইয়া,শিহাব ভাইয়া,কাকু,মামু ওরা ডেকোরেটরকে বুঝাতে পারছে না।আপনি একটু যাবেন প্লিজ?
তৃপ্তি নিয়ে তাকিয়ে রইলাম ওরদিকে।যদিও ও তাকায়নি একবারও।তানহার দিকে তাকতেই মৃদ্য হাসলো ও।লাজুকতা,সফলতার সংমিশ্রনের হাসি।চাচীআম্মা বললো,
-হ্ হ্যাঁ বাবা,যান না।যান আপনি?আমরা আহানিতাকে এখানে বসে মেহেদী দিয়ে দেই।
আস্থা দাত কেলিয়ে বললো,
-যাও না দাদু?যাও?নিজের রায়বাহাদুর উপাধীটা কোথাও তো কাজে লাগিয়ে আসো?
সবাই বড়বড় করে তাকালো ওর দিকে।ও ফোকলা হেসে বললো,
-আ’ম জোওওকিং!
দাদু কিছু না বলে তিহানের সাথে চলে গেলো।শ্বাস নিলো সবাই।বুঝলাম এটা তানহা ইচ্ছে করেই তিহানকে দিয়ে করালো।তিহান দাদুকে সিড়ি অবদি দিয়ে মিউসিক সিস্টেমে “কিউটিপাই” গান চালু করে দিয়ে গেলো।আর তানহা বসে গেলো আমার হাতে মেহেদী দিতে।আর বাকিসব ওয়াটার বল,আবির,স্প্রে গানে রঙিন পানি নিয়ে মেতেছে।সবার সাথে দেখলাম চাচীআম্মা,আসফি,দাদীমাও বেশ মজাই করছে।মুগ্ধ চোখে সবার আনন্দটা দেখছিলাম।আমার পরিবারের আনন্দ!
.
রাতে ডিনার শেষে সবাই যার যার মতো ঘুমোতে চলে গেছে।ড্রয়িংয়ে মেঝেতে বিছানা করা,মনিমার ঘরে বেড,মেঝেতেও ঘুমিয়েছে সবাই।এদিকে আমার রুমে আমি,আস্থা,তানহা,তনিমাপু আর আসফি।তানহা,আমি আর তনিমাপু মিলে ঘুমোনোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম,এরমধ্যে আস্থা,আসফি রুমে ঢুকলো।আসফি বললো,
-এটা কি হলো বলোতো আহানিতাপু?কাল তোমার বিয়ে,আর আজ দাদু হলুদ সন্ধ্যা করতে দিলো না?
আস্থা ভেঙচিয়ে বললো,
-হ্যাঁ হ্যাঁ,নাতনি তো শুধু তারই আছে!বিয়ে তো শুধু তার নাতনিরই হবে পৃথিবীতে!কাল বিয়ে,আজ নাকি হলুদসন্ধ্যা করলে তার নাতনি অসুস্থ্য হয়ে যেতো!টায়ার্ড হয়ে যেতো!যত্তোসব আদিক্ষেতা!হুহ!
তানহা বললো,
-ছাড় আস্থা!যা হয়নি,হয়নি!ওসব নিয়ে আর ঝামেলা করিস না!তাছাড়া বলেছে তো,কাল গোসলের আগে হলুদ ছোয়াতে।তখনই করে নিস তোদের হালদি সেরিমনি!
তনিমাপু বললো,
-দাদু তো গ্রামের মানুষ,তোমরা তো শহুরে।সে এসব বললো,আর তোমরাও মেনে নিলে?এটা তো তোমাদের দোষ!
-মানি নি তো!উই হ্যাভ প্রক্সি প্লান!
বড়বড় চোখে তাকালাম ওর দিকে।ও চুড়েলের মতো হাসছে।কপাল কুচকে বললাম,
-ক্ কি করবি কি তুই আস্থা?
ও ওভাবেই হাসছে।তীক্ষ্ম চোখে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করছিলাম ওকে।এরমধ্যে আসফি বলে উঠলো,
-ট্যান ট্যানাআআআআন!
ওরদিকে তাকিয়ে হা হয়ে গেলো আমার মুখ।ওর দুহাতে ওয়াইনের বোতল।একটা আরেকটায় ঠেকিয়ে ঠেকিয়ে ঠুসঠাস সুর তুলেছে।তনিমাপু বিছানা থেকে উৎসুকভাবে বললো,
-উয়াওওও!গার্লস্ পার্টি!
-কিহ্?কোনো পার্টিফার্টি নেই তনিমাপু!এইসব দাদু জানলে কাল আমার সাথে তোমরাও বাসাছাড়া হবে!এই আসফি?দাও ওগুলো!
আমি আসফির দিকে এগোচ্ছিলাম।তনিমাপু বিছানা ছেড়ে উঠে এসে সরিয়ে দিলো আমাকে।বললো,
-আবে বিয়ের কনে,কনের মতো থাকো বুঝলে?
তারপর আসফির গাল টিপে দিয়ে বললো,
-কিরে?সাইজে তো ছোটাসা!দিমাগ তো ঠাই কিলো কা দেখছি!সেই একটা কাজ করেছিস!
আসফি আরো ভাব নিয়ে দাড়ালো।আস্থা এসে বললো,
-ইহ!ওকে কেনো বলছো?এসব দেখেছে কোনোদিন ওর দাদুর আমলে ওই গ্রামে?এই আসফি?এটা তো আমার প্লান!আমিই তো শপিংয়ের মাঝে লুকিয়ে টুকুস করে জিনিসটা এনেছিলাম।তুমি কেনো ক্রেডিট নিচ্ছো?
-আরে ক্রেডিট ডেবিটের হিসাব ছাড়!যা মনিমার রুম থেকে মিনিগ্লাসগুলো নিয়ে আয়!
তানহার কথায় বিস্ফোরিতো চোখে ওরদিকে তাকালাম।ও একটা ফোকলা হাসি দিলো।আজ আবারো প্রমান হয়ে গেলো,যে যতই সভ্য সাজুক,এই বিষয়ে সব এক মৌচাকের মৌমাছি।এ মধু কেউই হাতছাড়া করবে না।আস্থা বললো,
-তনিমাপু?তুমি যাও!ও ঘরে দাদু দাদীমা ঘুমায়।আমার ভয় করে।আমি বাকিসব সাইডফুডস্ আনছি!
দুজনেই বেরিয়ে গেলো।ক্যাবলাকান্তের মতো সবটা দেখছি শুধু।একটুপরই এসে রুমে ঢুকলো।সবকিছুই এনেছে।তানহা বললো,
-লাগা লাগা!দরজা লাগা আস্থা!
ওগুলো রেখে আস্থা সবে দরজা লাগাতে যাবে,মামীমা,চাচীআম্মা,খালামনি তিনজনই দরজায় এসে দাড়ালো।আমার দম আটকে গেছে।এবার এই চারজনই উদুম ক্যালানি খাবে এই মা পার্টির হাতে।বের করে দেবে ওদের গার্লস্ পার্টি!হুরমুড়িয়ে চাদর মাথায় দিয়ে শুয়ে পরলাম।আওয়াজ আসলো,
-শুয়ে পরলে কেনো আহানিতা?আমরাও তো আসলাম পার্টি করতে!
মামীমার কথায় লাফিয়ে উঠে বসলাম আমি।ওরা তিনজনই রুমে ঢুকেছে।হাসিমুখে এসে বিছানায় বসলো তিনজনই।আমরা রীতিমতো শকে আছি।তনিমাপু বললো,
-ইয়ে,আম্মু?ত্ তোমরা এখানে কেনো?
খালামনি একটুকরো লেবু মুখে পুরে বললো,
-আস্থা কিচেনে গিয়ে এইসব খুজতে তান্ডব শুরু করে দিয়েছিলো।ঘুম ভেঙে গেলো।তাই ভাবলাম,বাসায় আমরাও তো মেয়েই,তোদের পার্টিতে জয়েন করি।যাইহোক,ওসব বাদ!এখন শুরু কর তোরা!
সবাই আরো উত্তেজিত হয়ে গেছে।আমি কিঞ্চিত জোর করে হাসি ফুটালাম মুখে।বিষয়টা হজম হচ্ছিলো না।দরজা লাগিয়ে আস্থা আমাকে চোখ মেরে বললো,
-আন্নু বেব?কাল তেরি শাদী হ্যায়!আজ?আজাদি হ্যায়!
তানহা উঠে গিয়ে গ্লাসে ওয়াইন ঢালতে ঢালতে বললো,
-লেটস্ পার্টি গার্লস্!!!
মুখ দিয়ে শ্বাস ছাড়লাম আমি।আসফি অডিও স্পিকারে গান ছেড়েছে।ওরা ড্রিংক করছে,গানের তালে দুলছে,নাচছে,মামী,চাচীআম্মাদেরও নাচাচ্ছে,তারাও নাচছে।মাথার উপর বালিশ নিয়ে বসে বসে দেখছি শুধু।এই শব্দ যদি একফোটাও রুমের বাইরে যেতো,বাসার বাকিসব এসে এদের কি অবস্থা করতো তা ভাবতেই কাশি উঠে যাচ্ছে আমার।এবার আস্থা আমাকে টেনে তুলে দাড় করালো।একগ্লাস এগিয়ে দিয়ে বললো,
-আজ তুই না খেলে খবর আছে তোর!সবাইকে বলে দেবো,অঙ্কুর ভাইয়ার সাথে অনেক আগেই বিয়ে হয়ে গেছে তোর!
হুশে নেই ও!একসেকেন্ড দেরি না করে গ্লাসটা ছিনিয়ে নিয়ে পুরোটা শেষ করে দিলাম।গান চলছেই।ধপ করে বিছানায় বসে পরলাম।মাথা ঝাড়া মারলাম বেশ কয়েকবার।নাহ্!খুব বেশি চড়ে নি!তানহা বললো,
-তুই পাগল আন্নু?ইটস্ জাস্ট ফর এন্জয়মেন্ট!মাতাল হবি না!চিল!
এবার বিষয়টা মজাই লাগলো।তনিমাপু বেশ ছেলেছেলে ভাব ধরে গাইছে,
-পাড়াতে মাঝরাতে পরেছে হুড়োহুড়ি….
কলির পুরোটা গাইলো ও।আমি আরেকগ্লাস শেষ করে আস্থাকে বললাম,
-দেখ আস্থা?তনিমাপুকে এক্সাক্টলি রোহান ভাইয়ার মতো লাগছে না?
ও হা করে মুগ্ধচোখে তাকিয়ে রইলো তনিমাপুর দিকে।যেনো সত্যিই তাই ঘটছে ওর চোখে।আমি আর তানহা হেসে দিলাম।আস্থা চোখ টিপে উঠে গিয়ে সোজা তনিমাপুর ওড়না ধরে গাইলো,
-তুমি দেখিয়াও দেখলা না,
তুমি শুনিয়াও শুনলা না,
তুমি জ্বালায়া গেলা মনের আগুন
নিভায়া গেলা না!
হাসতে হাসতে বিছানায় গড়াগড়ি দিচ্ছি আমরা।মা জননীরাও হাসছে।কিন্তু দরজায় নক হওয়ার শব্দ আসতেই পিনপতন নিরবতা।এখন কে আসবে?কোনোভাবে সাউন্ড বাইরে যায়নি তো?ড্রিংকয়ের পুরো ট্রে টা খাটের নিচে ঢুকিয়ে সবাই ধুপধাপ শুয়ে পরলাম।খালামনি এগিয়ে গিয়ে আস্তেকরে দরজা খুলে দিয়ে বিস্ময়ে বললো,
-মা তুমি?
আবারো উঠে বসলাম সবগুলো।নানীমা?পেছন থেকে দাদীমা বলে উঠলো,
-আমিও আছি।
এবার সবগুলোর গলাই শুকিয়ে গেছে।দাদীমা,নানীমা রুমে ঢুকে গম্ভীরভাবে তাকিয়ে রইলো সবার দিকে।তারপর বিছানার নিচ থেকে ট্রে বের করে দুটো গ্লাসে ঢেলে দুজনের গ্লাস ঠেকিয়ে বললো,
-চিয়ারস্!
তারপর আস্থাকে অডিও স্পিকারের কাছে টেনে নিয়ে গিয়ে ওটা দেখিয়ে বললো,
-মিউজিক!
ব্যস!আর কোনো কথাই নেই!গান ছেড়ে আবারো সবাই মজা করতে লাগলো।দাদীমা ঠেলে তুলে দিলো আমাকেও।”তুনে মারি এন্ট্রিয়ান” গানটা বাজছিলো।আস্থা,তনিমাপু ছেলেদের স্টাইলে নাচছে,আমি আর তানহা মিলে মেয়েলি ভাব নিয়ে ইগ্নোর করছি ওদের।গানের শেষ পর্যায়ে আস্থা আমাকে উল্টোদিকে জরিয়ে ধরে গালেই চুমো দিয়েছে।সঙ্গেসঙ্গে কেউ একজন চেচিয়ে বলে উঠলো,
-আস্থাআআআআ!খবরদার যদি আমার বউকে কিস করেছো তো!
#সবটাই_তুমিময়
#লেখনিতে-মিথিলা মাশরেকা
পর্বঃ৩৭
-আস্থাআআআআ!খবরদার যদি আমার বউকে কিস করেছো তো!
অঙ্কুরের গলার আওয়াজ শুনে আস্থা আমাকে ছেড়ে হুড়মুড়িয়ে পিছিয়ে দেয়ালে লেপ্টে দাড়ালো।আমি গালে হাত দিয়ে তব্দা মেরে দাড়িয়ে।রোবটের মতো ঘাড় ঘুড়িয়ে জানালায় তাকালাম।ব্যালকনির সাথের জানালার পর্দা মাথায় পেচিয়ে ড্যাবড্যাব করে আস্থার দিকে তাকিয়ে অঙ্কুর।উনি পর্দা ছেড়ে ঠিকঠাকমতো দাড়িয়ে আসফিকে ধমকে বললেন,
-ওই আসফি?দরজা খোলোহ্!
ছোটছোট চোখ করে আসফির দিকে তাকালাম।ও আমতা আমতা করে বললো,
-ইয়ে,তখন তোমার থেকে ফোন কেড়ে নিয়েছিলাম,তারপর অঙ্কুর ভাইয়ার সাথে আমার কথা হয়েছিলো।উনি বলেছিলেন,যদি তার কথা শুনি,আমার সাথে সেলফি উঠবেন।তার বিনিময়ে কিছুক্ষন আগে ফোন করে জানতে চাইলেন তুমি কি করো।তারপর এখানে এসে জানালাটা একটু খানি খুলে দিতে বলেছেন।এটুকোই যা।এরবেশি আমি কিছুই করি নি আহানিতাপু!বিশ্বাস করো!
দাদীমা,নানিমা,বাকিসবাই ঠোট টিপে হাসছে।দাদীমা চেহারায় একটু গম্ভীরতা এনে বললো,
-আসফি?আমরা আসছি।ঘুমোবো।দরজাটা লাগিয়ে দে!আর আন্নু?অঙ্কুরকে বল তোর দাদু জেগে যাওয়ার আগেই যেনো চলে যায়।নইলে কাল বিয়েটাই না বাতিল করে দেয়!
বড়রা বেরিয়ে গেলো।রাগ নিয়ে গটগট করে দরজা খুলে ব্যালকনিতে আসলাম।আসতেই অঙ্কুর আমার হাত চেপে ধরে বললেন,
-এই?তুমি আস্থার সাথে মিশবে না!ও…ওর সাথে মিশবে না তুমি!একঘরে তো একদমই ঘুমাবে না!দরকার পরলে আজই,এখনই আমার বাসায় নিয়ে যাবো তোমাকে!
হাত ছাড়িয়ে দাতে দাত চেপে বললাম,
-আর ইউ ম্যাড?আপনি এখানে কেনো?কিভাবে আসলেন?
-সকালে কথা বলতে দেয়নি আসফি!দেখবো না তোমাকে একবার?
কপাল চাপড়ালাম।উনি আবারো আমার হাত ধরে আরাম করে রেলিংয়ে চরে বসলেন।পিছনে তাকিয়ে দেখি তানহা,তনিমাপু হাসছে মুখ লুকিয়ে।আস্থা উকিঝুকি দিচ্ছে বাইরে।অঙ্কুরকে বললো,
-ভাইয়া?একাই এসেছেন?
-ন্যাহ্!রোহানও আছে।
-কই কই?
-গাড়িতে।
-ও।
মন খারাপ করে ফেললো ও।অঙ্কুর গম্ভীরভাবে বললেন,
-ড্রিংক করলে কেনো সবাই মিলে?এসবের কোনো দরকার ছিলো?
হাওয়ার মতো উবে গেলো সবগুলো।রুমে ঢুকে গেছে।আমি হতবাক হয়ে ওভাবেই দাড়িয়ে।উনি উঠে দাড়িয়ে আমার দুগাল ধরলেন।বড়বড় চোখে তাকিয়ে আমি।অঙ্কুর আমার কপালে ঠোট ছুইয়ে বলে উঠলেন,
-ভালোবাসি অদ্রি।
কথাদুটো!চোখ নামিয়ে আস্তে করে বলতে বাধ্য হলাম,
-আমিও ভালোবাসি।
এটুক শুনেই রেলিং টপকে লাফ দিলেন উনি।আতকে উঠে কিনারায় এগোলাম।উনি মুচকি হেসে বললেন,
-এমন একটা ভাব করছো যেনো বহুতল ভবন তোমার?
সরু দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেই উনি শব্দ করে হেসে দিলেন।পকেটে দুহাত গুজে পেছোতে পেছোতে বললেন,
-আই ওয়াজ জোওওওকিং!সকালের অপুর্ন কথাটা শুনতে এসেছিলাম।বলে দিয়েছো!ভালোবাসো!আমিও ভালোবাসি তোমাকে অদ্রি!ভালোবাসি!
মাঝরাতে মাঝরাস্তায় এতো জোরে চেচিয়েছেন উনি।আমিই ভয়ে চোখ বন্ধ করে নিলাম।খানিকটা সময় পর চোখ খুলে দেখি,পরিবেশটা তখনও স্বাভাবিক।অঙ্কুর চলে গেছেন।একটা স্বস্তির শ্বাস ফেলে ভেতরে ঢুকলাম।চাদর জরিয়ে শুয়ে পরেছে সবগুলো।তনিমাপু বললো,
-ড্রিংক করার কি শাস্তি ছিল আহানিতা?
-কি আবার?রোমান্টিক অত্যাচার!
আস্থার কথায় অগ্নিদৃষ্টি ছুড়লাম।রাগ নিয়ে বললাম,
-তোকে এ ঘরে ঘুমোতে মানা করেছেন অঙ্কুর!শেইমলেস মেয়ে একটা!
-গালে চুমো খেয়েছি।সেটাও একটা মেয়ে হয়ে মেয়েকে।আর তোর বর একটা ছেলে হয়ে যে গার্লস্ পার্টিতে উকি দিলো তারবেলায়?তো শেইমলেস কে হলো?আমি?না তোর বর?
শুয়ে পরলো ও।তানহা তনিমাপু হাসছে।বিষয়টা এড়াতে আসফিকে ঝাড়তে ঝাড়তে রাত কাবার করে দিলাম।
.
বিয়ে!সকাল থেকে মুগ্ধচোখে বাসার সবার ব্যস্ততা দেখে চলেছি।বিয়ের দিন একটা মেয়ের চোখে এতো মুগ্ধতা মানায় কিনা,জানি না।তবে আটকাতে পারিনি নিজেকে।দুটো ভাই,দুটো বোন,দুটো বান্ধবী,চাচ্চু,মামা,চাচীআম্মা,মামীমা,খালামনি,দাদীমা,নানীমা সবই আছে আমার।এ নিয়ে চোখের মুগ্ধতা কাটছেই না কোনোমতে।কেউ এদিক দৌড়াচ্ছে এদিকটা গোছাবে বলে,কেউ ওদিক ছুটছে,ওদিকটা সামলাবে বলে।
দাদীমা নানীমা বাদে মেয়েরা বাকি সবাই হলুদ শাড়ি পরেছে।আস্থা,তিহানের বাবা মাও এসেছে।ত্বোহাকে দেখলাম আসফির সাথে।শুধু তিহানকে দেখি নি।তিহানের মা আমাকে বাঙাল করে হলুদ শাড়ি পরিয়ে দিলো।উচুতে করা খোপায় গাদাফুল মোড়ানো।সামনের কিছু চুল দুপাশে কার্ল করে ছেড়ে দিলো আস্থা।ঠোটে লিপস্টিক,পায়ে আলতা পরিয়ে বসানো হলো আমাকে।ফুলের গয়নায় সাজাতে চেয়েছিলো ওরা,মানা করেছি।আপাতত গয়না বলতে মনিমার দেওয়া গলার সরু চেইনটা,আর অঙ্কুরের দেওয়া আংটি আর কোমড়ে আটকানো সরু বিছা।আস্থার আম্মু এসে চশমাটা খুলে দিয়ে বললো,
-আজ পরতে হবে না।
আস্থা ওটা কেড়ে নিয়ে আবারো আমার চোখে পরিয়ে দিলো।তানহা বললো,
-অঙ্কুর ভাইয়া বারবার করে বলে দিয়েছে,চশমাটা যেনো থাকে।তার বউয়ের নাকি লেন্স ব্যবহার নিষিদ্ধ!
মাথা নিচু করে নিলাম।সবসময়,সবজায়গায় এভাবে তার অনুপস্থিতিতেও উপস্থিতির অনুভুতি,লজ্জায় ফেলে দিচ্ছে আমাকে।নানীমা এগিয়ে আমার থুতনি ধরে বললো,
-কিরে?এখন তো হলুদ,লাল হচ্ছিস কেনো?
সবাই হাসাহাসি করতে লাগলো।এরমধ্যে রোহান ভাইয়া,তার সাথে তার সমবয়সী একজন,একজন মহিলা আসলেন।বিয়ের আনুসাঙ্গিক জিনিসপত্র দিতে হয়তো।পেছনে মডেল রাইতাসহ আরো দুজন মেয়ে।রাইতাকে দেখে মোটামুটি সবাই শকে আছে।সৌজন্যতা দেখাতে ব্যস্ত হয়ে পরলো সবাই।রোহান ভাইয়া আমাকে দেখিয়ে ভদ্রমহিলাকে বললেন,
-আম্মু?এই যে,অঙ্কুরের বউ!
সালাম দিলাম ওনাকে।আন্টিটা এগিয়ে আমার থুতনি ধরে হাসিমুখে বললেন,
-সুন্দর মানাবে আমাদের অঙ্কুর আর তোমাকে।আফরা ভাবির পছন্দের তারিফ করতে হয়।
রাইতা এগোলো।আমার সামনে দাড়িয়ে বললো,
-এএসএ’র হবু বউ,আমাকে চিনেছো?ওই যে,মাঝরাতে তোমার হবু বরকে যে কল দিতো,সেই মেয়েটা!
ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলাম শুধু।সে হেসে দিয়ে বললো,
-আসলে এএসএ’ই বলেছিলো ওইসময় কল করতে।জানোনা,কতো কষ্টে চার চারবার এলার্ম বাজিয়ে ঘুম ভাঙিয়ে অতোরাতে কল করেছিলাম তোমার হবু বরকে।
তারপর তানহার দিকে তাকিয়ে বললো,
-হেই!হোয়াটস্ দিজ গাইস?গায়ে হলুদ,অথচ ফুলের গয়নায় সাজাও নি কেনো আহানিতাকে?
রোহান ভাইয়া বললেন,
-হ্যাঁ তাইতো!আম্মু তুমি তো….
আন্টির দিকে তাকাতেই উনি থেমে গেলেন।আস্থা মাথায় কাপড় দিয়ে ওনার সাথে লাজুকলাজুকভাবে হেসে হেসে কথা বলছে।একটা শুকনো ঢোক গিললাম আমি।রোহান ভাইয়া চোয়াল শক্ত করে এগিয়ে গিয়ে বললেন,
-আম্মু?ওর সাথে কিসের কথা তোমার?
-ওমা।এতো মিষ্টি একটা মেয়ে।কথা বলতে পারবো না?
-না পারবে না।তুমি জানো,সেদিন ফুপির সাথে যে মেয়ে দেখতে গ্…
-সেটা আস্থাই!তাইতো?জানি আমি।বলেছে ও আমাকে।এতো ভালো একটা মেয়েকে রিফিউজ করে এসেছিস!তোর,তোর বাবা,তোর ফুপির দ্বারাই সম্ভব এটা!একই বংশোদ্ভোৎ কিনা!
-আম্মু!
-কি আম্মু?আমি বলে দিচ্ছি,আস্থার সাথে ভালোভাবে বিহেভ করবে তুমি রোহান!কোনোদিন যেনো না শুনি ওকে কড়া গলায় কিছু বলছো।
রোহান ভাইয়া থেমে গেলেন।আস্থার বাকা হাসি বলে দিচ্ছে,বেশ ভালোমতোই আন্টিকে হাত করে নিয়েছে এটুকো সময়ে।আসফি শরবত এনে দিচ্ছিলো রাইতাকে।আমার দিকে ফিরতে গিয়ে রাইতার ধাক্কায় তার কিছুটা শাড়ির পাড়ে পরেছে।রাইতা ব্যস্তভাবে বললো,
-ওপস্!সরি সরি আহানিতা!এক্সট্রেমলি সরি।একদমই খেয়াল করি নি!
-ইটস্ ওকে।আপনি ব্যস্ত হবেন না প্লিজ।বেশি লাগেনি তো।একটু…
-না না!যেটোকোই লাগুক।আ’ম ফিলিং গিল্টি।তুমি…তুমি এক কাজ করো!রুমে গিয়ে একটু ক্লিন করে আসো।
-আরে না।এটা তো শুরু পাড়ের দিকে…
-কোনো কথা না।ছবিতে একটু এদিকসেদিক দেখালে এএসএ আমাকে খুব শুনাবে।তুমি প্লিজ যাও রুমে।একটু ক্লিন করে আসো।প্লিজ!
ইতস্তত করে বললাম,
-আ্ আচ্ছা বেশ।যাচ্ছি।
রাইতা বড়সড় হাসি দিলো।ওর অদ্ভুত ব্যবহার অবাক করে দিচ্ছিলো আমাকে।একবার বিষয়টা নিয়ে সন্দেহ উকি দিলো মনে।কাজটা কি ও ইচ্ছে করেই করলো?করলে করেছে।অনুষ্ঠান সুষ্ঠভাবে হোক,এটাই চাই আমি।তাই শাড়ি ধরে রুমের দিকে এগোলাম।সবাই ওখানকে রাইতাকে নিয়ে ব্যস্ত।রুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে পেছন ফিরতেই রীতিমতো আকাশ থেকে পরলাম আমি।
দুহাত বুকে গুজে রুমের দেয়ালে ঠেস দিয়ে দাড়িয়ে অঙ্কুর।পরনে হলুদ পান্জাবী,সাদা পায়জামা।হাতা গুটানো পান্জাবির,একহাতে সাদা ঘড়ি।ঠোট কামড়ে ধরে মুচকি হাসি নিয়ে আপাদমস্তক আমাকেই দেখে চলেছেন।মস্তিষ্ক তার কর্মক্ষমতা হারালো যেনো।দৃষ্টি তারদিকেই স্থির হয়ে রইলো।শাড়ি উচিয়ে ধরা হাতের মুষ্ঠি খুলে গেলো আপনাআপনি।পাথর হয়ে দাড়িয়ে রইলাম।সত্যিই অঙ্কুর এসেছেন?মনোভ্রম নয়তো?
আমার ভাবনার মাঝেই অঙ্কুর সোজা হয়ে দাড়ালেন।হুশ ফিরলো আমার।একপা এগিয়ে বিস্ময় নিয়ে বললাম,
-আপনি সত্যিসত্যি এসেছেন?
-হুম।
-কেনো?
-তোমায় দেখতে।তাছাড়া,আমি চাই,তোমার গায়ে হলুদটা আমিই আগে ছোয়াই।তাই…
-তাই বলে এ সময়,সোজা এ বাসায় চলে আসতে হবে?আ্ আর,এ রুমে কিভাবে ঢুকলেন আপনি?
-মাত্র চল্লিশ মিনিটের পথ,বাসাটায় আমার বউ আছে,আমি আসলে সমস্যা কি?আর সবাই যখন রাইতাকে নিয়ে,তোমার শাড়িতে শরবত লেগে যাওয়া নিয়ে ব্যস্ত ছিলো তখন রুমে ঢুকেছি।মাস্ক ছিলো,খেয়ালও করেনি কেউ ওতোটা।
ওনার সোজাসাপ্টা জবাব।মাথায় হাত দিয়ে দিশেহারার মতো বলতে লাগলাম,
-আর ইউ ম্যাড?এমন পাগলামি করে কেউ?এখন কে আসতে বলেছে আপনাকে?একটুপরেই তো বিয়ে!এখন আপনি এসেছেন এটা কেউ জেনে গেলে কি হবে?আপনাকে কেউ দেখে নিলে কি হবে বুঝতে পারছেন?দাদু দেখলে কি হবে?এক্ক্ষন চলে যান!এই বাসায় আর একদন্ড থাকছেন না আপনি।কিন্তু যাবেনই বা কিভাবে?হ্যাঁ,ব্যালকনি!কালকের মতো আজও…
হুট করেই একটানে দেয়ালে আটকে দিলেন উনি আমাকে।মুগ্ধতার এক গভীর চাওনি স্থির রেখে বললেন,
-হুশশশ্!বেশি কথা বলো তুমি।তবে আমি বেশি সময় নেবো না।ডোন্ট ওয়ারি।এরপরেও বেশি কথা বললে আমি কি করতে পারি,ডেমো দিয়েছি সেদিন রাইট?
নড়াচড়া থামিয়ে দিলাম আমি।মাথাও নামিয়ে নিয়েছি।অঙ্কুর আমার একহাত ছেড়ে দিলেন।সেহাতে শাড়ি খামচে ধরলাম।উনি গালে হলুদ ছোয়ালেন আমার।শিহরনে চোখ বন্ধ করে নিয়েছি।আমার হাতের পিঠেও হলুদ ছুইয়েছেন উনি।সামনের কোকড়ানো চুলগুলো খোপায় পেচিয়ে দিলেন।অতঃপর গলায় এক আঙুলের স্পর্শ।কেপে উঠলাম।চোখ খোলার সাহস লুপ্ত।গলায় সে এক আঙুলেই দুসেকেন্ড আকিবুকি করে বিউটি বোনে থামলেন উনি।হাত সরিয়ে নিয়েছেন।
আস্তেধীরে চোখ তুলে সবে তাকাবো,উনি শাড়ীর নিচে কোমড়েও চার আঙুলে একবার স্লাইড করেছেন।চোখ খিচে বন্ধ করে নিলাম আবারো।
আরো লেপ্টে গেছি দেয়ালে।সে স্পর্শও দুসেকেন্ডের বেশি স্থায়ী ছিলো না।অঙ্কুর ছেড়ে দিলেন আমার হাত।অনুভব হলো সরে দাড়িয়েছেন উনি।চোখ মেললাম।সত্যিই সরে দাড়িয়েছেন উনি।ঠোট কামড়ে ধরে হেসে দু পা পিছিয়ে বললেন,
-ভীতু অদ্রি।
জানিনা কি হলো,একহাতে হলুদ তুলে নিয়ে এগিয়ে আরেকহাতে তার পান্জাবি খামচে ধরলাম।বুকের দিকের খোলা বোতামদুটোয় বুকের যতটুকো দৃশ্যমান,লাগিয়ে দিলাম হলুদ।পা উচিয়ে গালে গাল ঘষে তার গালেও হলুদ ছুইয়েছি।নেমে দাড়িয়ে একমুহুর্ত দেরি করিনি আর।নাইবা তারদিকে তাকিয়েছি।পান্জাবিটা ছেড়ে হাত ধরে টেনে ব্যালকনিতে এনে মাথা নিচু রেখে বললাম,
-অদ্রি ভীতু না!এখন আসুন আপনি!
বাধ্য বরের মতো রেলিং টপকে চলে গেলেন উনি।তাকাইনি আর তারদিকে।বাকা হাসিটা দেখলে আরো নুইয়ে যেতাম।জানি আমি।মুচকি হেসে বেডের দিকে তাকিয়ে আরেকদফা থমকে গেলাম।মায়ের সেই শাড়ি গয়নাগুলো।উপরে একটা চিরকুটে লেখা,
“তোমার আবেগ,আমার ভালোবাসা।দুটোই সযত্মে গুচ্ছিত ছিলো আমার কাছে অদ্রি।দিয়ে গেলাম।তোমার ভালোবাসায় মুড়িয়ে,এগুলোতেই সাজিও নিজেকে।হ্যাঁ,তোমার সে বধুবেশ,সে প্রেয়সীবেশ,আজ হবে আমাকে ঘিরে।আমাকে ভালোবেসে।”
চিরকুটসহ শাড়িটা বুকে আকড়ে ধরলাম।এটার কথা তো আমি ভুলতেই বসেছিলাম।সেদিন শাড়িগয়নাগুলো উনি নিয়ে নষ্ট করে দিয়েছেন এমনটাই ধারনা ছিলো আমার।নিজের ভাবনা আর কাজগুলোর কথা ভেবে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো।এরমধ্যেই দাদুর ডাক,
-আহানিতা?আর কতোক্ষন?
বাস্তবে ফিরে ওটা রাখলাম।গলা শাড়ীতে ঢেকে,হাত আচলে পেচিয়ে একছুটে বেরিয়ে আসলাম রুম থেকে।সবাই ভ্রুকুচকে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।জিভ দিয়ে ঠোট ভিজিয়ে বললাম,
-ওই আসলে…ইয়ে..মানে…শাড়িতে একটু আনকম্ফর্টেবল তো,তাই একটু বেশি সময় লেগে গেছে।
ওরা ওভাবেই তাকিয়ে।একটা শুকনো ঢোক গিললাম।মামীমা এগিয়ে এসে বললো,
-একি আহানিতা?গালে হলুদ কেনো তোমার?হলুদ তো শুরুই হয়নি।কে লাগালো তোমাকে হলুদ?
হচকিয়ে গেলাম।দাদুর ডাক শুনে ভয়ে এটা মোছার কথাই মাথা থেকে বেরিয়ে গেছে।জোর করে হেসে বললাম,
-আমিই!আমিই লাগিয়েছি।প্ প্রথমবার বিয়ে তো!এ্ এক্সাইটমেন্ট!এক্সাইটমেন্টে লাগিয়ে ফেললাম।
মামী হেসে আবারো বসিয়ে দিলো আমাকে।দাদু,ছেলেরা সরে গেলো।বড়রা ঠিকাছে,কিন্তু আস্থা,তানহা,আসফি বা রাইতা,কারো হাসিই সুবিধার লাগছিলো না।আস্থা ফিসফিসিয়ে বললো,
-তুই তোর শাড়িটা পরিষ্কার করতে গিয়েছিলি না?ওভাবেই এলি যে?আর এক্সাইটমেন্টটা কি তুই তোরই উপর খাটিয়েছিস?নাকি অন্য কারো উপর?সে আবার তোর উপর খাটিয়ে যায়নি তো?লাভ এক্সাইটমেন্ট!
বিস্ফোরিতো চোখে তাকালাম।তানহাও কানের কাছে এসে বললো,
-মিথ্যেটাও বলতে পারিস না ইয়ার!তবুও দেখ,তোর বাসার লোকজন কতো সুন্দর বিশ্বাস করে নিলো তোকে।এ যে তোর বরের ছোয়া,তোর লাল হওয়া গাল স্পষ্ট বলে দিচ্ছে।এএসএ চালাক জানতাম,কিন্তু এতো রোমান্টিক?আগে জানতাম না!বলতেই হচ্ছে,আসলেই সে অলরাউন্ডার!
মাথা নিচু করে চোখ বন্ধ করে রইলাম।এরা সবটাই জানে।সবাই আর কিছু না বলে নিজেদের মতো করে হলুদ ছোয়াতে লাগলো।লজ্জার লালাভ বর্নে ছেয়ে যাওয়া মনপ্রানের জন্য সে হলুদ রঙ ফিকে পরে যাচ্ছিলো,নাকি আরো গাঢ়বর্নে আমাকে জরিয়ে নিচ্ছিলো,কে জানে!
#চলবে…
#চলবে…
[