সভ্যতার_সভ্য পর্ব শেষ

#সভ্যতার_সভ্য
#শেষাংশ [ ১৮+ কন্টেন্ট এলার্ট ]
#NishchupSpriha
==============
আজ সভ্য দেশে আসছে… আচ্ছা ও কত দিন পর আসছে? তিন বছর…! হ্যাঁ প্রায় তিন বছর পর দেশে আসছে…

এখন সত্যি সংস্কৃতি-সমৃদ্ধি দৌড়য়। দুজনেই হয়েছে হুবহু বাপের মত। কোন অংশে বাপের থেকে কম না। ছোটবেলায় সভ্য যেমন আমাকে জ্বালিয়েছে। এখন তার মেয়েরা বাড়ির সবাইকে জ্বালায়।

মাম্মাম আর ছোটমা, দুজনেই সারাদিন ওদের দুজনের পিছনে পড়ে থাকে। আমাকে কিছুই করতে হয় না। ওদের সব আবদার ওদের নানু-দাদুর কাছে… সাথে সভ্য তো আছেই। এত দূরে থাকার পরেও মেয়ে দুটো আমার থেকে বেশি তাদের বাবার ভক্ত হয়েছে। সারাদিন বাবা বাবা করে বাড়ি মাথায় তুলে রাখে। ভিডিও কলে দুই বোনের ঝগড়া লেগে যায় কে আগে বাবার সাথে কথা বলবে।

আর সভ্য? এখন সে আমার থেকে বেশি তার মেয়েদের সঙ্গে কথা বলার জন্য পাগল। তাদের তিন জনের ভিডিও কলে আমি আউট সাইডার..!

শীত পড়েছে.. এমন একটা শীতেই তো ও আমাদের রেখে গিয়েছিল…!

সভ্য আসবে জন্য আজ অনেক আত্নীয়-স্বজন এসেছে আমার ফ্লাটে। বাপি-মাম্মাম, ছোটবাবা-ছোটমার সাথে অনেকেই এয়ারপোর্টে যাচ্ছে ওকে রিসিভ করতে। সবার সঙ্গে আমার দুই মেয়েও যাচ্ছে তাদের বাবাকে আনতে। কিন্তু আমি যাবো না.. ওর কথা ভাবতেই কেমন একটা লজ্জা লজ্জা ভাব আমাকে আচ্ছন্ন করে ফেলছে।

যেখানে আমি চা, কফি আর হালকা নাস্তা ছাড়া কিছুই বানাতে পারতাম না। রান্না ঘরে যেতাম শুধু খাওয়ার জন্য। কালে ভাদ্রে শখ করে এই ওই ডিশ বানানোর চেষ্টা করতাম। সেখানে আজ প্রায় সারাদিন আমি রান্না ঘরে ছিলাম, সভ্যর প্রিয় খাবার গুলোর মধ্যে কয়েকটা নিজ হাতে কারো সাহায্য ছাড়া একা একা রেঁধেছি। এই তিন বছরে নিজের এত পরিবর্তন দেখে আমি নিজেই অবাক…!

সভ্যর পছন্দের ইলিশ পোলাও ও মোরগ পোলাও দুটোই করেছি, সাথে ওর পছন্দের মাছের ডিম ভুনা, চিংড়ির দোপেঁয়াজা, গরুর মাংস ভুনা, ডিম ভুনা, মুরগি ভুনা, কাবাব, ছোট মাছ ভাজি, ফুলকপি আলুর সবজি আর ডেসার্ট হিসেবে পায়েস এবং জর্দা আর ওর অতি প্রিয় ফ্রুট কাস্টার্ড..! ওর অতি পছন্দের দুটি পিঠা, নারিকেল পুলি ও ঝাল মাংস পিঠাও বানিয়েছি।

ঘন্টাখানেক হল সভ্য এসেছে। সবাই ড্রইংরুমে ওকে ঘিরে বসে আছে। বিভিন্ন গল্প করছে। আর আমার দুই গুণবতী তনয়া! তারা দুজনেই বাপের গলা ধরে ঝুলছে। মনে হচ্ছে সভ্য তাদের যক্ষের ধন। কে আগে বাবার কোলে চড়বে, এটা নিয়েও দুজনের মধ্যে বেশ কয়েকবার ঝগড়া হয়ে কান্নাকাটি অবধি হয়ে গেছে। অবশেষে সভ্য দুজনকেই কোলে নিয়ে সবার সাথে কথা বলছে। তারা দুজনেই সভ্যর গলা জড়িয়ে ধরে, ওর দুই কাঁধে দুজনেই মাথা রেখে চুপ করে আছে। অথচ ওদের দুজনকে কখনোই কোলে নেওয়া যায় না। তারা কোলে থাকবেই না… সারাদিন দু’জনের দৌড়াদৌড়ি লেগেই থাকে।

আমি দূর থেকেই সভ্যকে দেখছি শুধু… যতবার চোখাচোখি হয়েছে, ততবারই ও ঠোঁট বাকিয়ে একটা হাসি দিয়েছে।

ওর ওই হাসি দেখে আমি সঙ্গে সঙ্গে চোখ সরিয়ে নিয়েছি… ওর হাসিতে কিছু একটা ছিল। আমি জানি না কেনো যেন ওর হাসিটা দেখলেই আমার সর্বাঙ্গে একটা লজ্জা লজ্জা ভাব ছড়িয়ে পড়ছিল।

সংস্কৃতি-সমৃদ্ধি সাধারণ রাত সাড়ে দশটার মধ্যেই ঘুমোয়। কিন্তু আজ নয়টার একটু পড়েই ক্লান্ত হয়ে, সভ্যর কোলেই ঘুমিয়ে পড়লো। বাবা আসার খুশিতে আজ সারাদিন দুজনে মিলে অনেক দৌড়োদৌড়ি করেছে। আজ দুপুরে খাওয়ার পরেও ঘুমোয়নি।

তাদের দুজনার কথা ছিল,
— ‘আমি ঘুমোলে, আমাকে রেখে সবাই বাবাকে আনতে চলে যাবে, তখন আমি সবার আগে বাবার কাছে যেতে পারবো না.. ও ( একে অপরকে) আগে বাবার কোলে উঠে যাবে…’

সভ্য ওদের দুজনকে মাম্মাম আর ছোটমার রুমে শুইয়ে দিয়ে এসে সবার সাথে খেতে বসলো।

সংস্কৃতি-সমৃদ্ধি দুজনেই ঠিক করে নিয়েছে একদিন একজন দাদুদের সাথে থাকবে, অন্যজন নানুদের সাথে থাকবে। আবার পরের দিন তা এক্সচেঞ্জ হয়ে একজন দাদুদের কাছে যাবে, অন্যজন নানুদের কাছে যাবে। ওদের দুই বছর বয়স থেকে এই নিয়ম চলে আসছে।

আত্নীয়-স্বজন অনেকেই আগে চলে গিয়েছিল, শুধু আমাদের কাজিন গ্রুপ এখনো আছে। বড়দের বিদায় দিয়েই বাপি-মাম্মাম, ছোটমা-ছোটবাবা শুয়ে পড়েছে। রাত এগারোটার মধ্যেই তারা ঘুমিয়ে পড়ে।

আমাদের বিশাল কাজিন গ্রুপের সবাই রাত বারোটার মধ্যেই খেয়েদেয়ে চলে গেলো। চলে গেলো মানে একপ্রকার জোর করেই ওদের বের করে নিয়ে যাওয়া হল। রুশাপু আর ফাইয়াজ ভাইয়া সবাইকে জোর করে নিয়ে, রাত পৌনে বারোটার মধ্যে আমাদের ফ্লাট থেকে চলে গেলো…

আমি একবার রুশাপুকে বলেছিলাম,
— ‘আজ সবাই একসাথে থাকি আপু। সবাই মিলে একসাথে প্রচুর আড্ডা দিবো।’

রুশাপু জবাবে আমার মাথায় হালকা চাপড় মেরে বলেছে,
— ‘গাধী তো সারাজীবন গাধীই থাকবি। খালামণি-খালুরা তো ঘুমিয়েছেই, তারা তো আর উঠবে না। আর তোর মেয়ে দুটোও তো মা শা আল্লাহ্‌! এক ঘুমে রাত পাড়! মিমের বাচ্চা গুলোর মতো তো আর রাতে উঠে জ্বালায় না… এই সুযোগে দুজনকে পরস্পরের সঙ্গে একান্ত মুহূর্তে কিছু সময় কাটানোর জন্য সুযোগ করে দিচ্ছি.. কোথায় থ্যাংকস দিবি.. তা না করে ঘ্যান ঘ্যান শুরু করেছিস? এমনি কি তোকে আহাম্মক বলি? কয়জন এমন সুযোগ পায় বল?’

রুশাপুর এমন জবাবে আমি লজ্জা পেয়ে মাথা নুইয়ে ফেলেছিলাম।

তবুও বলেছিলাম,
— ‘এসবের দরকার নেই আপু। তোমারও থাকো..আমার কাজ শেষ করে সবাই মিলে আড্ডা দেই..’

আমার কথা শুনে আপু ধমকে উঠে বলেছে,
— ‘মোটেও না..বেশি জানিস তুই?’
তারপর নরমস্বরে বলেছে,
— ‘আজ শুধু তোর আর সভ্যর একান্তে সময় কাটানোর সময়। এই সময়ে তোদের মধ্যে অন্য কারো উপস্থিতি একদম অগ্রহণযোগ্য.. এই সময়টা একান্তই তোদের, বুঝেছিস? সভ্যর এখন তোকে প্রয়োজন… এই সময়টা তোদের.. সভ্য নিডস ইউ নাও। এতদিন পর ও এসেছে.. এটা তোর দায়িত্ব ওকে সময় দেয়া এবং সাথে থাকার। চিয়ার আপ সোনা। আর ঘ্যান ঘ্যান করবি না তো। যা সর..’

এরপর আমি এত করে বলার পরেও শুনলো না।

সভ্য চলে যাওয়ার তিন মাস পর যে রুশাপু-ফাইয়াজ ভাইয়ারা চলে গিয়েছিলো, তারপর তারাও আর দেশে আসেনি। সভ্য আসবে শুনে ওরাও কয়েকদিন আগে দেশে এসেছে। ফাইয়াজ ভাইয়া আর রুশাপুর ফ্লাটও আমাদের অ্যাপার্টমেন্টে… শুধু ফ্লোর আলাদা।

সবাই চলে যাওয়ার পর দরজা লক করে, পিছন ফিরে দেখি সভ্য দেয়ালে হেলান দিয়ে মুখে হাসি নিয়ে আলাদা এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

ওর পড়নে ক্রিম কালার শার্ট, তার উপর বাদামি রংয়ের জিপার সিস্টেম জ্যাকেট, যার জিপার সম্পূর্ণ খোলা আর হালকা ধূসর জিন্স।

আমি ওর দিকে তাকিয়ে একটু হাসার চেষ্টা করলাম, কারণ ওর ওই আলাদা দৃষ্টি আমার ভিতরে তোলপাড় তৈরি করছে। এক অচেনা অদ্ভুত শিহরণ সম্পূর্ণ শরীর জুরে বয়ে বেরাচ্ছে।

আমি ওর পাশ কাটিয়ে রান্না ঘরে চলে এলাম। ধোয়া প্লেট আবার ধোয়া শুরু করলাম.. আসলে করার মতো কিছুই নেই, আমি শুধু ওর দৃষ্টির আড়াল হতে চাচ্ছিলাম। কিন্তু বিধি বাম..! পিছন ঘুরতেই দেখি সভ্য কিচেন ক্যাবিনেটে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

হঠাৎ ওকে দেখে চমকে উঠলাম। দ্রুত নিজেকে সামলে নিয়ে, স্বাভাবিক কন্ঠে প্রশ্ন করলাম,
— ‘তুমি এখানে? তোমার কিছু লাগবে, সভ্য?’

আমার প্রশ্নের জবাবে ও মুখে কিছু না বলে, মৃদু হেসে, উপরনিচ মাথা ঝাঁকিয়ে হ্যাঁ বুঝালো।

আমি আবার প্রশ্ন করলাম,
— ‘তোমার চা বা কফি কিছু লাগবে, সভ্য? খাবে? বানিয়ে দিবো?’

আমার কথা শুনে ও এবার সোজা হয়ে দাঁড়ালো। ভ্রু নাচিয়ে মৃদু হেসে বললো,
— ‘না.. আমার অন্য কিছু লাগবে না… যা লাগবে তা আমি নিজেই নিয়ে নিতে পারবো… এবং সেটা তুমি না চাইলেও নিবো… জোর করেই নিবো… আমি আর অপেক্ষা করতে পারছি না।’

সভ্যর এমন কথা শুনে আমার কান গরম হয়ে গেলো। এই ছেলে জীবনে সভ্য হবে না।

বিরবির করে বললাম,
— ‘শুরু হয়ে গেলো অসভ্যের অসভ্যতামি.. ‘

আমাকে বিরবির করতে দেখে ও ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করলো,
— ‘কি হয়েছে? কি বিরবির করছো?’

ওর কথা শুনে আমি ওর দিকে তাকিয়ে একটু হাসার চেষ্টা করে ডানে-বামে মাথা নাড়িয়ে কিছু না বুঝালাম।

সভ্য একপা দু’পা করে এগিয়ে এলো আমার দিকে। ওকে এভাবে এগিয়ে আসতে দেখেই আমার বুকের ভেতর রক্ত ছলকে উঠলো। আমি যে পিছনে সরে যাবো সেই উপায়ও নেই, কারণ আমার পিছনেই সিংক..!

সভ্য আমার কাছে এসে একদম আমার কাছ ঘেঁষে দাঁড়ালো, ওর একহাত আমার কোমরে রেখে, অপর হাত দিয়ে গালে পড়ে থাকা চুলগুলো কানের পেছনে গুঁজে দিলো।

এতদিন পর সভ্যকে নিজের এতটা কাছে দেখে আমার হাত,পা সব ঠান্ডা হয়ে কেমন শিরশির করছিলো। ওর থেকে সরে আসার চেষ্টা করতেই ও কোমর চেপে ধরে আরো কাছে টেনে নিলো। তারপর মাথা নুইয়ে এসে আমার কপালে গভীরভাবে অধর স্পর্শ করলো। আমি ওর দিকে তাকাতেই ও ঝট করে আমার ঠোঁটের উপরে চুমু এঁকে দিলো।

এতদিন পর হঠাৎ এভাবে ওর ঠোঁটের স্পর্শ পেয়ে আমি হতভম্ব চোখে ওর দিকে তাকালাম। আমাকে এভাবে তাকাতে দেখে ও আবার চট করে একটা চুমু খেলো।

সভ্য হাসছে.. আমি ওর হাসি দেখতে লাগলাম। একজন মানুষের হাসি এত মারাত্মক সুন্দর কিভাবে হতে পারে? এবার আমার সম্পূর্ণ মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু হলো ওর ঠোঁট..! আমার কি হলো আমি জানি না… আমি আর দেরি না করে বেহায়া নির্লজ্জের মতো চট করে ওর ঠোঁটে চুমু খেলাম। চুমু খেয়ে সরে যাবার আগেই, ও চেপে ধরে আরো নিবিড়ভাবে চুমু খেতে লাগলো।

ওর এমন হামলে পড়ে চুমু খাওয়ার কারণে আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে। আমি ধাক্কা দিয়ে ওকে আমার থেকে সরানোর চেষ্টা করলাম। কিন্তু ওকে আমার থেকে একবিন্দুও সরাতে পারলাম না, বরং ও আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে চুমু খেতে লাগলো।

এভাবে কতক্ষণ সময় পার হয়েছে দু’জনের কেউই জানি না। একসময় হাঁপিয়ে উঠে ও যখন আমাকে ছেড়ে দিল.. তখন আমি প্রাণ ভরে শ্বাস নিতে লাগলাম। আর কিছুক্ষণ এভাবে থাকলে অক্সিজেনের অভাবে নিশ্চিতভাবে আমি মারা যেতাম।

সভ্য পানি খাচ্ছে আর আমি বড় বড় শ্বাস নিচ্ছি। সত্যি আর কিছুক্ষণ এভাবে থাকলে, দম বন্ধ হয়ে আমি নির্ঘাত মারা যেতাম।

আমি ওর পাশ কাটিয়ে চলে আসার সময়, আকস্মিক হ্যাঁচকা টান মেরে ও আবার আমাকে নিজের সঙ্গে মিশিয়ে নিলো, তারপর ঠেলে নিয়ে দেয়ালের সাথে ঠেসে ধরলো।

আমি কিছু বুঝে ওঠার আগে, সব কিছু এত দ্রুত হলো যে আমি কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলাম।

ও আমার চোখের দিকে তাকিয়ে ফিসফিস করে বললো,
— ‘আ’ম নট ডান হেয়ার, ওকে?’

তারপর আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই আমার নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরলো। কামড়টা এতটাই জোরে ছিল যে আমার চোখে পানি চলে এলো। ব্যথা পেয়ে আমি ওকে সরিয়ে দেয়ার জন্য ধাক্কানো শুরু করলাম। আমার মনে হচ্ছিলো আমার ঠোঁট একদম ছিড়ে যাবে। কিন্তু হায়! ওকে নিজের থেকে এক ইঞ্চিও সরাতে পারলাম না। ও ছেড়ে দিতেই আমি দুইহাতে ঠোঁট চেপে ধরে, কটমট দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকালাম। ব্যথায় কিছু বলতেই পারলাম না। আমাকে এভাবে তাকাতে দেখে ও হেসে দিলো।

ওর হাসি দেখে আমি ঠোঁট থেকে হাত সরিয়ে, ঝাঁজিয়ে উঠে বলতে চাইলাম,
— ‘ই..উ—–‘
শেষ করার আগেই ও ঝট করে আমার ঠোঁটে চুমু খেয়ে ফিসফিসিয়ে বললো,
— ‘আ’ম নট ফিনিশড ইয়েট। আই ওয়ান্ট মোর.. চাই মানে চাই.. তিন বছর! কম সময় না.. এত সহজে আমার হবে না। এত তাড়াতাড়ি আমি ছাড়ছি না, সুইটহার্ট.! এটা ছিল শাস্তি.. আমার সাথে ঝগড়া করার… আমার থেকে দূরে সরে থাকার।’

আমি বলতে চাইলাম, ‘আমি দূরে রেখেছি? নাকি নিজে মেয়েদের ছাড়া কিছু বুঝিস না।’

কিন্তু বলতে পারলাম না, তার আগেই আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো.. আমি আবার ধাক্কানো শুরু করলাম.. কিন্তু ওই যে! আমি তো কখনোই অসভ্যটার সাথে পেরে উঠিনি!

নিজেকে ধাতস্থ করে, কিছুক্ষণ পর আমিও ওর আহ্বানে সাড়া দিতে লাগলাম।

দু’জনার ঘন নিঃশ্বাসের শব্দে চারপাশের আবহাওয়া ভারী হয়ে উঠেছে… আমি সভ্যর পায়ের উপর পা রেখে দুইহাতে ওর কাঁধ জড়িয়ে ধরে, ওর চুল আকড়ে ধরলাম। ও শক্ত করে আমার কোমর চেপে ধরে ওভাবেই আমাদের বেডরুমের দিকে যেতে লাগলো।

ভোর বেলা নিজেকে সভ্যর নগ্ন বুকে আবিষ্কার করলাম। নড়তে না পেরে বুঝতে পারলাম ও আষ্টেপৃষ্ঠে আমাকে জড়িয়ে ধরে আছে। মাথা তুলতেই দেখলাম ও গভীর ঘুমে মগ্ন… চোখে মুখে প্রশান্তির আভাস।

আমি আবার দুইহাতে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ওর বুকে মুখ গুঁজতেই চোখে পড়লো আমার উইক পয়েন্ট..! আমি আর এক সেকেন্ড দেরি না করে সেখানে ঠোঁট ছোঁয়ালাম।

ফর্সা রোমশ বুক, আর বুকের উপরে ডানপাশে তিলটা! যেখানে আমি চুমু খেয়েছি কয়েক হাজারবার.. না লক্ষবার পার হয়ে গেছে হয়তো..! তিলটা দেখেই আমার আগের কথা মনে পড়ে গেলো..

ওর শার্টের বোতাম খোলা থাকলেও তিলটা দেখা যায়। যারজন্য আমি ওর শার্টের বোতাম কখনো খোলা রাখতে দিতাম না। আমার সম্পদ অন্য কেউ কেনো দেখবে? কিন্তু সে তো অসভ্য..! বেহায়াটা অন্য সময় শার্টের বোতাম লাগিয়ে রাখলেও.. আমাকে বিরক্ত করার জন্য ঠিক আমার সামনে এসে বোতাম খুলে দিতো।

আগের কথা মনে পড়তেই আমার হাসি পেল… কতটা ফাজিল..!

আমি একটু উঁচু হয়ে ওর চিবুকে চুমু খেলাম। তারপর হাত ডুবিয়ে দিলাম ওর চুলে… ওর চুল গুলোও আমার পছন্দের একটা জিনিস..! ক্যাডেটে থাকতে তো ওর চুল সব সময় ছোট করেই কাটা থাকতো। সেই অভ্যাসটা এখনো আছে.. এই যে এত সুন্দর চুল! হয়তো আজই কেটে ফেলবে…

চুলে হাত বুলিয়ে দিতেই ও আমার গলায় মুখ গুঁজে আরো নিবিড়ভাবে জড়িয়ে ধরলো।

আমি হেসে ফেললাম.. এটা নতুন না.. ঘুমন্ত অবস্থায় ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেই ও আমার গলায় মুখ গুঁজে দেয়… এই অভ্যাস এখনো আছে…!

আমি সাবধানে নিজেকে ওর থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে উঠে পড়লাম। আসলে ঘুম না ধরলে আমি একদম শুয়ে থাকতে পারি না।

ফোন হাতে নিয়ে দেখি কেবল 5:49 am. এই ঠান্ডায় এত সকালে কেউ উঠবে না। সংস্কৃতি-সমৃদ্ধি উঠতে উঠতে নয়টা পার হয়ে যাবে.. আর বাপি-মাম্মাম, ছোটমা-ছোটবাবা ফজর পড়ে আবার শুয়েছে। তারাও নয়টার আগে উঠবে না।

আমি একটা হট শাওয়ার নিয়ে রান্না ঘরে চলে এলাম নাস্তা বানানোর জন্য। কালকের অনেক খাবার এখনো আছে, গরম করতে হবে। সাড়ে ছয়টার মধ্যেই রেহানা আপা চলে আসবে।

সকালের নাস্তার জন্য আমি আর রেহানা আপা মিলে রুটি, পরোটা দুটোই করলাম। সাথে ডিম ভাজি, আলুভাজি আর আলু ফুলকপির সবজি। সংস্কৃতি-সমৃদ্ধি – র জন্য আলাদা ঝাল ছাড়া আলু ভাজি আর ডিমপোচ।

এছাড়াও ভুনা খিচুরি, ইলিশের দোপেঁয়াজা আর সিদল ভর্তা। সিদল সভ্যর অতি পছন্দের একটা খাবার এবং আমিও অনেক ভালোবাসি সিদল। খাওয়ার সময় কালকের গরুর মাংস গরম করে নিলেই হবে।

সবকিছু গোছগাছ করে, ফ্রেশ হয়ে.. রেহানা আপাকে বিদায় দিয়ে রুমে এলাম। রেহানা আপা দুপুরে আবার এখানে আসবে.. এখন উনি আরো দুই বাড়িতে কাজে যাবে।

রুমে এসেই দেখি সভ্য বিছানায় উপুড় হয়ে ঘুমোচ্ছে। আমি ওর কাছে যেয়ে বসে, পা কম্বলের ভিতরে ঢুকিয়ে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলাম।

সভ্য একটু নড়েচড়ে চোখ খুলে আমার দিকে তাকালো। আড়মোড়া ভেঙ্গে ঘুমস্বরে হেসে বললো,
— ‘গুড মর্নিং, জান।’

ওর কথা শুনে আমিও হেসে বললাম,
— ‘গুড মর্নিং টু ইউ ট—‘
কথা শেষ করার আগেই এক হ্যাঁচকা টানে ও আমাকে নিজের কাছে টেনে নিলো।

আমি চমকে উঠে ওর দিকে তাকালাম।

অবাক হয়ে প্রশ্ন করলাম,
— ‘কি করছো কি, সভ্য?’

ও হেসে আমাকে একদম ওর সাথে লেপ্টে নিলো, তারপর কপালে গাঢ় এক চুমু খেয়ে, অন্য এক দৃষ্টিতে আমার চোখের দিকে চেয়ে রইলো। ও মুখে কিছু না বললেও আমি ওর এমন দৃষ্টির অর্থ বুঝে গেলাম।

ঘড়ির দিকে তাকিয়ে সময় দেখে নিলাম। দুইহাতে ওর গলা জড়িয়ে ধরে ওর চিবুকে, নাকের ওপরে আলতো করে চুমু খেয়ে নিচুস্বরে বললাম,
— ‘ইট’স এইট ফোর্টি সিক্স ইন দ্যা মর্নিং.. ‘

আমার কথা শুনে ও দুহাতে আমার কোমর জড়িয়ে ধরে ঘুম ঘুম কণ্ঠে বললো,
— ‘তো?’

— ‘এখন?’

— ‘ইয়েস।’

— ‘নো ওয়ে..’

— ‘সেটা তোমার আগে ভাবা উচিত ছিল। অন্ততপক্ষে গোসলের পর আমার কাছে আসা উচিত হয়নি।’

ওর এমন কথা শুনে আমি ভ্রু কুচকে বললাম,
— ‘আর কিছুক্ষণের মধ্যে সবাই উঠে যাবে..’

ও ফিসফিস করে বললো,
— ‘আই ডোন্ট কেয়ার..’

— ‘কিন্তু আমি তো করি..’

— ‘তোমাকেও করতে হবে না…’

ওর এমন কথা শুনে আমি এবার বললাম,
— ‘এই ঠান্ডায় বারবার গোসল করলে, আমার নিউমোনিয়া হয়ে যাবে..’

ও আগের মতোই ফিসফিস করে বললো,
— ‘কিচ্ছু হবে না… গরম পানি আছে… দুজনে একসাথে করবো…’

— ‘আমি একবার করেছি..’

আমার কথা শুনে ও এবার বিরক্তি নিয়ে বললো,
— ‘ওউফ! সুইটহার্ট! প্লিজ ডোন্ট ডিস্টার্ব মি, জান… ‘
বলেই আমার গালে, কপালে, নাকে, চোখে, ঠোঁটে, গলায়, কাঁধে ছোট ছোট করে আলতোভাবে চুমু এঁকে দিতে লাগলো।

আর আমি সভ্য নামক এক অতল সমুদ্রে ডুবে যাচ্ছিলাম।
===============
[ কয়েক বছর পর…]
===============
আমি বসে বসে শুধু ওদের তিন বাবা মেয়ের কাহিনী দেখছি আর হাসছি। আমার মুখের দিকে সভ্য অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে… ইশ্! বেচারা সভ্য…!

নিউইয়র্কে ডাক্তারদের এক সেমিনার শেষে আজ একমাস পর সভ্য দেশে এসেছে। মোট ৯৫ টি দেশের ডাক্তারদের নিয়ে নিউইয়র্কে প্রায় এক মাসব্যাপী এই সেমিনার হয়েছে। যেখানে সভ্য এবং ওর কিছু কলিগ ইনভাইটেড ছিল।

আজ সভ্যকে রিসিভ করতে আমরা তিন মা-মেয়ে মিলে এয়ারপোর্টে গিয়েছিলাম। সভ্যকে বের হতে দেখেই আমার দুই মেয়ে দৌড়ে যেয়ে ওকে জাপটে ধরেছে। সেই যে ধরেছে এখনো ছাড়ার নাম নেই। বাসায় এসে শুধু ওকে ফ্রেশ হওয়ার জন্য একটু সময় দিয়েছিল.. পরে আবার ধরেছে।

সভ্য আমাকে বললো,
— ‘সভ্যতা, তুমি এদের ঘুম পারাওনি কেনো?’

আমি আমার হাসি আটকে বললাম,
— ‘আজ তুমি আসবে.. আর ওরা ঘুমোবে? সেটা অবিশ্বাস্য.. বুঝতে হবে এরা তোমারই মেয়ে.. ইশ্! আমার মেয়ে দুটো একমাস বাবাকে কাছে না পেয়ে, বাপের শোকে কেমন কাতর হয়ে গেছে দেখো!’
বলেই আমি আবার হেসে ফেললাম।

আমাকে হাসতে দেখে ও বললো,
— ‘হেসে নেও যত পারো হেসে নাও.. আমাকে যাস্ট ফ্রি হতে দাও.. তারপর বুঝাবো আমার উপর হাসার ফল..!’

তারপর মেয়েদের উদ্দ্যেশ্য করে বললো,
— ‘মা গুলা আমার! তোরা তো বাপের শোকে কাতর, আর তোদের বাপ যে বউয়ের শোকে পাথর! বুঝতেছিস না কেন মা..!’

সভ্যর এমন কথা শুনে এবার আমি হা হা করে হেসে ফেললাম।

অবশেষে সভ্য ওদের ঘুম পাড়িয়ে রাত বারোটার একটু পরে রুমে এলো। আমি ওর জন্যই অপেক্ষা করছিলাম। ও এসেই ফ্রেশ হয়ে আমার কপালে চুমু খেয়ে, জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়লো।

আমি ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে ডাকলাম,
— ‘সভ্য….’

ও আমার গলায় মুখ গুঁজে, ছোট করে জবাব দিলো,
— ‘হুঁ!’

আমি বললাম,
— ‘একটা কথা বলার ছিল..’

ও চোখ বন্ধ রেখেই বললো,
— ‘বলো শুনছি…’

আমি একটু থেমে বললাম,
— ‘সভ্য, বলছিলাম কি — ‘

আমার কথার মাঝেই ও আমার দিকে তাকালো। ওকে তাকাতে দেখে আমি থেমে গেলাম।

একটু থেমে আবার বললাম,
— ‘সভ্য, আমি— ‘

আমি আর কিছু বলার আগেই, ও আমার চিবুকে একটা চুমু খেয়ে বললো,
— ‘আমি জানি, সোনা। তোমাকে কিছু বলতে হবে না।’

আমি অবাক হয়ে বললাম,
— ‘কি জানো তুমি?’

আমার কথা শুনে ও হেসে আমার নাক আলতো করে কামড়ে দিল। আমি বললাম, ‘‘ছিহ্..!’’

ও হেসে আমার নাকের ওপরে চুমু খেয়ে বললো,
— ‘ফোর উইকস এন্ড থ্রি ডেইজ’স রানিং..’

ওর কথা শুনে আমি বিস্মিত হয়ে, প্রশ্ন চোখে ওর দিকে তাকালাম। ও হয়তো আমার প্রশ্ন বুঝতে পারলো।

আমার ঠোঁটের উপরে আলতো করে চুমু খেয়ে বললো,
— ‘আমার একটা ফাইল রাখতে যেয়ে রিপোর্ট দেখেছি.. ‘
বলেই আমার চিবুকে চুমু খেলো।

আমি এবার প্রশ্ন করলাম,
— ‘তুমি খুশি হওনি, সভ্য?’

— ‘কেনো খুশি হব না কেনো?’

— ‘মানে এর আগের বার তো… মানে…’

আমার কথা শুনে ও নিবিড়ভাবে অধরচুম্বন করে বললো,
— ‘আমি খুশি জান.. অনেক বেশি খুশি… যা বলে বুঝানোর ভাষা আমার নেই… আগের সিচুয়েশন এখন নেই… আগের বার তোমার যে সমস্যা ছিল এখন তা নেই…’

সভ্যর কথা শুনে খুশিতে আমার চোখে পানি চলে এলো… আমি ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ওর বুকে মুখ গুঁজে দিলাম।

সভ্যও আমাকে জড়িয়ে ধরে, মাথায় চুমু খেয়ে কানের কাছে নিচুস্বরে বললো,
— ‘ভালোবাসি..’

ওর কথা শুনে আমি ওর বুকে চুমু খেয়ে ফিসফিস করে বললাম,
— ‘ভালোবাসি সভ্য ভালোবাসি…’
বলেই ওর বুকে মুখ গুঁজে দিলাম।
================
[ A few years later ]
================
লকডাউনে আমরা ঢাকায় আটকে গেছি। আমার ভার্সিটি, বাচ্চাদের স্কুল বন্ধ থাকলেও সভ্যর ছুটি নেই। আজ নয়দিন পর ও বাসায় এসেছে।

বাচ্চাদের ঘুম পাড়িয়ে আমি কিচেনে গেলাম। রাতের খাবারের পর সিংকে রাখা এঁটো প্লেট গুলো ধুচ্ছে সভ্য। আমি যেয়ে পেছন থেকে ওকে জড়িয়ে ধরে ওর পিঠে মুখ ঘোষলাম।

সভ্য হেসে বললো,
— ‘কাজ করছি।’

আমি ওকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে, ওর পিঠে মাথা রেখে বললাম,
— ‘তো?’

ও বললো,
— ‘এভাবে কাজ করা যায়?’

আমি ওর পিঠে হালকা একটা কামড় দিয়ে বললাম,
— ‘তুমি যখন করো..’

ও হেসে বললো,
— ‘শাস্তি দিচ্ছো?’

আমি ওর পিঠে মুখ গুঁজে, বড় করে শ্বাস টেনে বললাম,
— ‘ভাবতে পারো..’

আমার কথা শুনে ও পেছন মাথা নুইয়ে তাকালো। ও তাকাতেই আমি চট করে ওর ঠোঁটে চুমু এঁকে দিলাম।

সভ্য হেসে বললো,
— ‘আমি ধরলে পারবে তো?’

আমি আবার ওর পিঠে মুখ ঘোষে বললাম,
— ‘আমি ভয় পাই না..’

সভ্য আর কিছু না বলে, হাসলো শুধু। আমি ওভাবেই ওর পিঠে মুখ গুঁজে, শক্ত করে ওকে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে রইলাম। কিছুক্ষণ পর সভ্য আমার হাত ছাড়িয়ে পেছনে ঘুরে দাঁড়ালো।

একহাতে আমার কোমর জড়িয়ে ধরে কাছে টেনে নিল, অন্য হাতে গাল ছুঁইয়ে বললো,
— ‘কি হয়েছে?’

আমি ডানে-বামে মাথা নাড়িয়ে কিছু না বুঝালাম।

ও হেসে আমার কপালে চুমু খেয়ে বললো,
— ‘কিছু না হলে, তুমি কখনোই নিজে থেকে আমার কাছে আসতে না।’

এবার আমি বললাম,
— ‘বাপি-মাম্মাম, ছোটবাবা-ছোটমা ওদের মিস করছি..!’

সভ্য আবার আমার কপালে চুমু খেয়ে বললো,
— ‘আমি তো বলেছিলাম জান বাসায় চলে যাও। তোমার ভার্সিটি বন্ধ, বাচ্চাদের স্কুল বন্ধ। তুমি এখানে যেমন ক্লাস নিচ্ছ, তেমন ওখান থেকেও তো অনলাইনে তোমার ভার্সিটির ক্লাস নিতে পারবে.. সংস্কৃতি-সমৃদ্ধি ওখান থেকে অনলাইনে ক্লাস করতে পারবে। শৌর্যও ওর দাদু নানুদের খুব করে মিস করে। তুমি বরং বাসায় চলে যাও।’

ওর কথা শুনে আমি ওর চিবুকে চুমু খেয়ে বললাম,
— ‘আমরা চলে যাবো.. আর তুমি? আমাদের ছাড়া থাকতে পারবে? বাসায় এলে তো বাচ্চাদের ছাড়া কিছু বুঝো না। বাচ্চাদের চোখের আড়াল হতেই দাও না.. তখন কিভাবে থাকবে? তুমি যে মাঝে মাঝে বাসায় আসো, তখন কি হবে? একা একা সব কিছু করতে পারবে?’

আমার কথা শুনে ও আমার নাকের উপরে চুমু খেয়ে বললো,
— ‘হুঁ, পারবো।’

— ‘সকালে তোমার ব্রাশেও আমাকে পেস্ট লাগিয়ে দিতে হয়।’

— ‘তুমি আছো জন্য অলস হয়ে গেছি। ভুলে যেয়ো না আমি সিসিআর এর স্টুডেন্ট।’

— ‘বাসায় একা একা ভালো লাগবে?’

— ‘হসপিটালেই থাকবো..’

— ‘কোন দরকার নেই..’

— ‘এইযে মন খারাপ করছো এখন..’

— ‘কোথায় আমি মন খারাপ করেছি? আমি যাস্ট মিস করছিলাম।’

সভ্য হেসে ফেললো। তারপর বললো,
— ‘ঈদে বাড়ি যাই চলো.. ছুটি আছে কয়েকদিনের..’

সভ্যর কথা শুনে আমি উচ্ছসিত কণ্ঠে বললাম,
— ‘সত্যি?’

ও হেসে আমার মাথায় চুমু দিয়ে বললো,
— ‘হুঁ, সত্যি..’

— ‘আচ্ছা, দাঁড়াও.. আমি এক্ষুনি বাসায় ফোন করে জানাচ্ছি..’

— ‘এখন সবাই ঘুমোচ্ছে.. ‘

— ‘ওহ্! তাই তো! ভুলেই গিয়েছিলাম! তাহলে কাল সকালে ফোন করবো।’

ও হেসে জিজ্ঞেস করলো,
— ‘বাচ্চারা কোথায়?’

আমি বললাম,
— ‘ঘুমোচ্ছে..’

ও আবার জিজ্ঞেস করলো,
— ‘শৌর্য কোথায়?’

আমি বললাম,
— ‘বোনদের সাথে ঘুমোচ্ছে.. দেখো যেয়ে দুই বোন দু’পাশে থেকে ভাইয়ের দু’হাত ধরে ঘুমোচ্ছে..’

সভ্য হেসে বললো,
— ‘খুব ভালোবাসে ভাইকে..’

আমিও হেসে বললাম,
— ‘হুম.. ভাইও খুব ভালোবাসে দুই বোনকে। বোনেরাও ভাইকে অনেক আদর করে।’

সভ্য আবার বললো,
— ‘এখন যে বাচ্চাদের বাবারও আদর চাই..’

আমি ওর থেকে সরে যেতে চেয়ে বললাম,
— ‘সামাজিক দূরত্ব বজ্জায় রাখো…’

আমার কথা শুনে সভ্য হেসে দিলো। তারপর ঝট করে আমাকে পাঁজাকোলা করে তুলে বললো,
— ‘আমাকে পাগল করে এখন সামাজিক দূরত্ব হচ্ছে? চলো তোমাকে সোশাল ডিসটেন্স শেখাচ্ছি.. ‘

আমি ওর গলা জড়িয়ে ধরে ফিসফিস করে বললাম,
— ‘অসভ্য… ‘

ও হেসে মাথা নুইয়ে আমার ঠোঁটে চুমু খেয়ে বললো,
— ‘ভেরি ট্রু..’
তারপর কপালে চুমু খেয়ে বললো,
— ‘ভালোবাসি, সুইটহার্ট।’

ওর কথা শুনে আমি বললাম,
— ‘আমিও..’

আমার কথা শুনে ও ভ্রু কুচকে, চোখ ছোট ছোট করে প্রশ্ন করলো,
— ‘কাকে?’

ওকে এভাবে তাকাতে দেখে আমি হেসে ফেললাম। বললাম,
— ‘একটা অসভ্যকে.. খুব করে ভালোবাসি।’

আমার কথা শুনে ও-ও হেসে ফেললো। বললো,
— ‘আ’ম অলসো লাভ ইউ সুইটহার্ট… লাভ ইউ স্যো মাচ..’
বলেই বেডরুমের দিকে যেতে লাগলো।

যেতে যেতে বলতে লাগলো চলো তোমাকে অসভ্যের অসভ্যতা দেখাচ্ছি।
======
পরিশিষ্টঃ
আজ অনেক দিন পর আমি আর সভ্য বসে আছি আমাদের প্রিয় বারান্দায়। ঠিক আগের মতো করেই বসে আছি.. সভ্য দোলনায় আর আমি ওর কোলে… একটা সময় এটাই ছিল আমাদের প্রেম করার নিরাপদ এবং একমাত্র স্থান।

এখন বদলে গেছে সময়.. বদলে গেছে অনেক কিছু… এখন আর আমরা সেই অবুঝ কিশোর-কিশোরী নই। দু’জনেই আজ প্রাপ্তবয়ষ্ক নারী-পুরুষ। দুজনে মিলে জীবনের অনেক গুলো পথ একসাথে পাড়ি দিয়ে এসেছি।

আগে যখন এখানে বসতাম, তখন কেউ দেখে ফেলার ভয় থাকতো। এখন এখানে সারারাত বসে থাকলেও কেউ দেখে ফেলার ভয় নেই।
আগে যখন সভ্য ক্যাডেটে থাকতো, তখন আমি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতাম ওর বাসায় আসার। ও এলেই সবাই ঘুমানোর পর এখানেই আমাদের প্রেম শুরু হত।

এই বারান্দায় আমাদের দুজনের অনেক স্মৃতি রয়েছে। এই তো কিছুদিন আগের কথাই তো, এখানে এভাবে বসেই কত রাত ভোর হয়েছে টের পাইনি। ভোরের আলো ফোটার পরে যে যার যার ঘরে গেছি। এখানে বসেই তো ওর ক্যাডেটের গল্প শুনতাম..! কত কত স্মৃতি রয়েছে এই বারান্দার সাথে আমাদের..! এখানে কাটানো প্রতিটা মুহূর্ত মনের গহিনে বাক্সবন্দি হয়ে আছে।

আমি সভ্যর বুকে মাথা রেখে বসে আছি। চারপাশে নিস্তব্ধ নিরবতা…

নিরবতা ভেঙ্গে আমিই ওকে ডাকলাম,
— ‘সভ্য..!’

ও ছোট করে জাবাব দিলো,
— ‘হুঁ..’

আমি বললাম,
— ‘তোমার মনে আছে আগে আমরা এখানে এভাবেই বসে থাকতাম?’

ও বললো,
— ‘হুঁ, সব মনে আছে…’

— ‘দিনগুলো খুব দ্রুত চলে গেলো তাই না? সেদিনই আমাদের প্রেম শুরু হল… ‘

— ‘আর আজ আমরা তিন বাচ্চার বাপ-মা…’

— ‘সভ্য..’

— ‘হুঁ, জান.. বলো.. শুনছি..’

— ‘ইউ আর ইন ইয়োর থার্টি টু অনলি।’

— ‘স্যো?’

— ‘ইউ আর স্টিল কোয়াইট হ্যান্ডসাম.. যাকে বলে মেয়েদের মাথা ঘুরিয়ে দেওয়া হ্যান্ডসাম… তোমাকে দেখে মেয়েরা টাস্কি খায়। ইভেন আগামী বিশ বছরেও এমনই থাকবে তুমি। ম্যান ইউ ক্যান স্ন্যায়ের এনিবডি উইথ ইয়োর অ্যাট্র‍্যাক’টিভ বডি ফিটনেস এন্ড ইয়োর চার্মিং স্মাইল…’

— ‘স্যো, আর ইউ জেলাস?’

— ‘নো, নট দ্যাট..’

— ‘তাহলে?’

— ‘ভয় হয়.. ‘

এবার ও আমার মুখ ওর দুইহাতের তালুতে আঁজলা করে ধরে বললো,
— ‘কিসের ভয়?’

— ‘নাও আ’ম থার্টি ফাইভ..’

— ‘তো?’

— ‘আমি বুড়ি হয়ে যাচ্ছি…’

— ‘কে বলেছে?’

— ‘কেউ না.. আমি জানি..’

— ‘সুইটহার্ট, ইউ আর স্টিল ইয়াং এন্ড বোল্ড..’

— ‘আমার ওয়েট গেইন করেছে.. আরো করবে.. নিজের যত্ন নেওয়ার সময় পাইনা.. আর কিছুদিন পর তুমি আর আমাকে ভালোবাসবে না..’

সভ্য আমার মুখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে, নিবিড়ভাবে অধরচুম্বন করে বললো,
— ‘তোমার চুল প্রতিটা পেকে সাদা হয়ে যাওয়ার পরও তোমাকে ভালোবাসবো… তোমার সব দাঁত পড়ে যাওয়ার পরও ভালোবাসবো… বয়সের কারণে তোমার স্কিনে ভাঁজ পড়ে গেলেও আমি ভালোবাসবো… ওয়েট গেইন করে ‘‘গিনেস বুক অব ওয়াল্ড রেকর্ড’’ – এ নাম উঠলেও ভালোবাসবো.. ইভেন তখন আরো বেশি ভালোবাসবো.. আমাকে আর হাড্ডি জড়ায় ধরে কষ্ট পেতে হবে না…’
বলেই ও হেসে ফেললো।

আমি ওর কাঁধে চাপড় মেরে বললাম,
— ‘আমি মজা করছি না সভ্য.. আ’ম সিরিয়াস..’

— ‘আ’ম অলসো সিরিয়াস, সুইটহার্ট.. ‘

আমি ওর গালে চুমু খেয়ে বললাম,
— ‘সভ্য.. সারাজীবন আমাকে এভাবেই ভালোবাসবে তো?’

সভ্য মাথা নেড়ে, নরম গলায় বললো,
— ‘আই প্রমিস ইউ সুইটহার্ট, আই’ল লাভ ইউ ফরএভার.. আই’ল লাভ ইউ টিল মাই লাস্ট ব্রিদ.. সারাজীবন এভাবে ভালোবাসবো.. সারাজীবন.. জনমভরে…’

সভ্যর কথা শুনে আমার চোখে পানি চলে এলো.. সাথে সাথে ও আমার চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো,
— ‘বললাম তো ভালোবাসবো… তবুও কাঁদছ কেনো?’

আমি ফিসফিস করে বললাম,
— ‘ভালোবাসি সভ্য.. খুব করে ভালোবাসি..’

আমার কথা শুনে ও হেসে আমার কপালে, গালে, নাকে, ঠোঁটে, চিবুকে চুমু খেলো.. একটা করে চুমু খাচ্ছিলো, আর বলছিলো ভালোবাসি..

আমি হেসে ফেললাম। আমাকে হাসতে দেখে ও আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,
— ‘ভালোবাসি জান.. ‘
বলেই ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো।

নিবিড়ভাবে চুমু খেতে লাগলো.. শুষে নিতে লাগলো সকল শুধা। আমি ওর বুকের কাছের গেঞ্জি খামচে ধরে ওর আহ্বানে সারা দিতে লাগলাম…

আর কি চাওয়ার আছে জীবনে? জীবনের সকল সুখ পেয়ে গেছি… এই মুহূর্তে আমার মৃত্যু হলেও আমার কোন আফসোস থাকবে না…. আমার এখন থেকে শুধু একটাই চাওয়া… মৃত্যুর আগ পর্যন্ত যেনো এভাবেই ওর বুকে থাকতে পারি——
———
সমাপ্ত
———
আমি জানি আমি অনেক বাজে আর ফালতু লিখেছি…😑 তবুও যারা পড়েছেন তাদের খুব খুব খুব করে ধন্যবাদ….
=======
ধন্যবাদ — 😊😊😊
Nishchup Spriha-নিশ্চুপ স্পৃহা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here