#সমাপ্তির_পূর্ণতা
লেখনীতে: #নুরুন্নাহার_তিথি
#পর্ব-৭
বিভান ড্রইং রুমে যেয়ে মা কে জিজ্ঞাসা করে,
–মা, অদ্রি কোথায়?
বিভানের মা চুপ করে আছে ছেলের কথা শুনে। রিমু মুখ খুলবে কিছু বলার জন্য তার আগেই বিভান তার ভাবির দিকে হাত দিয়ে চুপ করতে বলে।
–বলো মা, অদ্রি কই? তোমরা কি করেছো যে অদ্রি বাড়ি ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়েছে?
বিভানের মা কিছুটা অবাক হলেও রিমু ও শিমুর মুখ দেখে মনে হচ্ছে তারা কিছুটা ভয় পাচ্ছে। বিভানের মা এবার বলে,
–অদ্রি কেন চলে গিয়েছে সেটা অদ্রিকে জিজ্ঞাসা করো।
শিমু কথার মাঝে ফোড়ন কেটে বলে,
–তোমার বউ কেনো চলে গিয়েছে তা আমরা কিভাবে জানবো? যাওয়ার আগে এই দেখো ডিভোর্স পেপারে সাইন করে গিয়েছে। এসব মেয়েদের আমার খুব জানা আছে! এরা নিজেদের স্বার্থ হাসিল না হলে সব কিছু করতে পারে। যখন দেখল নিজে বাচ্চা জন্ম দিতে পারছে না তখনই নিজের থেকে কেটে পড়লো যাতে সব দোষ আমাদের পরে।
রিমু সেও নিজের বোনের কথায় তাল মিলিয়ে বলে,
–অদ্রি ইচ্ছে করেই এতদিন তার সমস্যার কথা জানায় নি, যাতে সে তোমাকে আরো বশ করে নিতে পারে। এই মেয়েটাকে আমার প্রথম থেকেই ভালো লাগতো না। এই মেয়ে যে সুবিধার না তা বোঝাই যাচ্ছিল। আজকে মা একটু কথা শোনানোতে ডিভোর্স পেপারে সাইন করে চলে গেল। অন্যান্য মেয়েদের দেখো, মাটি কামড়ে শ্বশুরবাড়িতে পড়ে থাকে আর এই মেয়ের দেমাগে যেন মাটিতে পা পড়ে না।
বিভান চোখ বন্ধ করে এতক্ষন শুনলো এরপর সামনের টি টেবিলে কিছুটা জোরে লাথি দিয়ে সরায় এতে সোফায় বসে থাকা তিনজন হকচকিয়ে যায়। বিভান তার ভাবিকে উদ্দেশ্য করে বলে,
–ভাবি, আপনি আমার বড় ভাইয়ের বউ। বড় ভাইয়ের বউ হিসাবে আমি আপনাকে সম্মান করি। আপনার সাথে আমার সম্পর্ক শুধু দেবর-ভাবী, এর থেকে বেশি কিছু না পূর্বে ছিল আর না পরবর্তীতে হবে। আমি যেমন আপনার ও ভাইয়ের সম্পর্কের মধ্যে নাক গলাই না ঠিক আপনার কাছ থেকে আমি এটাই আশা করব আপনি আমার আর অদ্রির সম্পর্কের মাঝে নাক গলাবেন না।
রিমুর মুখ অপমানে থমথমে ভাব। এবার বিভান শিমুকে উদ্দেশ্য করে বলে,
–শিমু, তুমি কি করছো সেটা আমি পুরোপুরি না জানলেও আন্দাজ করতে পারি। তোমার বোন যখন আমাদের বাড়ি ছেড়ে আমার ভাইকে নিয়ে ভিন্ন হয়ে গেল, সেখানে তোমার কি এই বাড়িতে প্রতিনিয়ত আসাটা মানায়! এটাতো বেমানান দেখায় তাই না? কিন্তু তোমার কাছে কি বেমানান লেগেছে? না! তোমার বোন এ বাড়িতে না থাকা সত্বেও তোমার যাতায়াত ছিল। যেখানে তোমার বোন এই বাড়িতে থাকা অবস্থায় তুমি এই বাড়িতে আসলে তোমার বোনের রুমে দরজা বন্ধ করে থাকতে সেখানে তুমি তোমার বোন ব্যাতিত এসে আমার মায়ের সাথে কথা বলতে তার রুমে দরজা বন্ধ করে রাখো। যেখানে তোমার বড় বোনের আমার মায়ের প্রতি কোনো দয়া-মায়া নেই সেখানে তোমার এত দয়া-মায়া দেখানোটা কি এমন হয়ে যায় না যে,
” মায়ের চেয়ে মাসির দরদ বেশি! ”
শিমুকে এভাবে কথা শোনানোতে রিমু ক্ষেপে উঠে বলে,
–বিভান, তুমি কিন্তু আমার বোনকে অপমান করছো। তোমার বউ চলে গেলে আমার বোনের কি দোষ? শিমু কি বলেছে তোমার বউকে চলে যেতে? তোমার বউ সারাদিন বাহিরে বাহিরে থাকে, তো সে তোমার মা কে সময় দিতে পারে না। মা সারাদিন বাসায় একলা থাকে তাই শিমু এসে তার সাথে একটু সময় কাটায়।
বিভান তার ভাবীর কথায় তাচ্ছিল্য হাসে। এরপর বলে,
–আসলেই কি সময় কাটাতে আসে? নাকি আসে আমার অদ্রির নামে মায়ের কানে কিছু বলতে! যাই হোক আপনাদের বলে আমার লাভ নেই। আপনি আমার বড় ভাইয়ের বউ আর আপনার বোন আমার বড় ভাইয়ের শালী। আপনাদের সাথে আমার সম্পর্ক এতোটুকুই।
এবার বিভান তার মা কে নরম ও ব্যাথিত সুরে বলে,
–মা, অদ্রি কোনোদিন তোমাকে শুধু শাশুড়ি ভেবে দেখেনি, সে তোমাকে নিজের মায়ের মতো দেখেছে। তুমি কি বলতে পারবে, অদ্রি তোমার সাথে কোনদিনও উচ্চস্বরে কথা বলেছে বা তোমার কথার কোন দিনও খারাপ জবাব দিয়েছে? অদ্রি সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত একটানা কাজ করে অফিসে। ওদের অফিসে কেউ বসে বসে বেতন পায় না। সকালে যাতে তোমার কষ্ট না হয় তাই অফিসে যাওয়ার আগে রান্না শেষ করে যায়। অদ্রি যাওয়ার পর তো কাজের বুয়াই আসে। এরপর সারাদিন ক্লান্ত হয়ে এসে রাতের বেলা আবার রান্না করে। এটা বলব না যে, তুমি অদ্রিকে সাহায্য করো না! তুমিও রাতের বেলা অদ্রিকে সাহায্য করো। সত্যি বলতে, অদ্রি থাকাতেই আমি তোমার ও অদ্রির মধ্যে সামঞ্জস্যতা বজায় রাখতে পেরেছি।
তোমাকে এখন এসব কথা বলে হয়ত লাভ নেই কারণ তোমাকে এরা অদ্রির নামে যা বুঝিয়েছে তাতে তুমি ঠিক-ভুল বিবেচনা করতে পারছো না।
বিভান কথাগুলো শেষ করে আর সেখানে দাঁড়ায় নি। চলে গেছে বিভান নিজের রুমে। বিভান হয়তো অদ্রিকে খুঁজতে বের হতো তবে, যে সেচ্ছায় নিজেকে আড়াল করে তাকে শত খুঁজেও পাওয়া যায় না।
আরো দুই-তিন দিন কেটে গেছে। বিভান এখন ঠিক সময়ে বাড়িতে আসে না। অদ্রি তাদের রুমটাকে যেভাবে রেখে গেছে সেভাবেই বিভান রেখে দিয়েছে। আর কাউকে রুমের ভেতরে ঢুকতে দেয়নি। সকাল বেলা না খেয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়, রাতেও বাহির থেকে খেয়ে তারপর বাসায় ফিরে। শিমু ও রিমু ইদানিং বিভানের মায়ের সাথে খুব ভালো ব্যবহার করছে। শিমু চায় বিভানের সাথে অদ্রির ডিভোর্সটা হওয়ার পর বিভানকে তার মায়ের মাধ্যমে বাধ্য করে বিয়েটা করতে কিন্তু বিভান যে এখনো ডিভোর্স পেপারে সাইন করেনি।
—-
আর এদিকে, অদ্রি ওই বাড়িতে কি হচ্ছে? কে কার সাথে কি কথা বলছে? সব শুনতে পাচ্ছে। অদ্রি ওই বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসার আগে রিমু ও ইভানের রুমের ভিতরে কয়েকটা মাইক্রোচিপ লাগিয়েছে আর গেস্টরুমেও কয়েকটা লাগিয়েছে। ধরতে গেলে সব রুমেই মাইক্রোচিপ লাগানো। অফিস থেকে সাত দিনের ছুটি নিয়েছে সে। শাশুড়ি ও নিজের রুমে এবং ড্রয়িং তো হিডেন ক্যামেরা লাগানো আছেই সেই সাথে গেস্টরুমেও একটা হিডেন ক্যামেরা লাগিয়েছে।
আদ্রি তার নিজের বাবা-মার কাছেও যায়নি।
শুক্রবার, সাপ্তাহিক ছুটির দিন। বিভানের কাছে দিনটা বিষাক্ত লাগছে কারণ সারাদিন তাকে বাসায় থাকতে হবে। সকাল নয়টা বাজে বিভান এখনো নাস্তার জন্য ডাইনিংয়ে যায়নি। ইভান তার ভাইকে কয়েকবার দরজার বাহির থেকে ডেকে গেছে। ইভান আর বেশি জোর করেনা। শেষে বিভানের মা আসে বিভানকে ডাকতে। বিভান বাধ্য হয় দরজা খুলতে।
দরজা খুলার পর বিভানের মায়ের সাথে শিমুও রুমের ভিতরে প্রবেশ করে। শিমুকে নিজের রুমে দেখে বিভান বিরক্তিকর শব্দ উচ্চারন করে। বিভানের মা বিভানকে বলে,
–দেখ বিভান, অদ্রি চলে গেছে। কোথায় গেছে আমরা তা জানি না। তাছাড়া অদ্রি তো স্বেচ্ছায় বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে। আমরা কেউ তাকে বাড়ি ছাড়তে বলিনি। এখন তোর জীবনটা কি এভাবে থেমে থাকবে?
শিমু কথার মাঝে ব্যঙ্গ করে বলে,
–দেখো আবার কারো সাথে চলে গেছে কিনা! যা মেয়ে বাবা! বাচ্চা তো হবে না এখন কারো বেড পার্টনার হতেই পারে সে!
বিভান শিমুর বলা প্রতিটা শব্দের জন্য রাগে বিভান শিমুর গালে সজোরে থাপ্পর দিয়ে বসে।
শিমু হতভম্বের মতো গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে চোখ গোল গোল করে। বিভানের মা নিজেও অবাক হয়ে গেছে তার ছেলে এভাবে থাপ্পর মারাতে। বিভানের মা তার ছেলেকে বলে,
–বিভান! তুই এটা কি করলি! তুই শিমুকে থাপ্পর দিলি!
–কেনো মা! তোমার সামনে সে আমার বউকে নিয়ে আজেবাজে খারাপ কথা বলল, তুমি শুনতে পাওনি? থাপ্পরটাতো তোমার মারা দরকার ছিল। কিন্তু ভাবি ও তার বোন মিলে তোমার মাথা এমনভাবে নষ্ট করেছে যে তুমি তাদের অন্যায় আর খারাপ কাজ গুলো দেখছো না। কিন্তু আমার মাথাটাতো নষ্ট হয়নি! তাই আমি বিবেচনা করতে জানি কে ভুল কে ঠিক।
বিভান তার মা কে কথাগুলো বলে নিজের রুম থেকে বেরিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। আর শিমু এদিকে বিভানের মায়ের সামনে ন্যাকা কান্না জুড়ে দেয়।
–দেখলে আন্টি, তোমার ছেলেকে ওই মেয়ে কিভাবে বশ করেছে! আমাদের সত্য কথা এখন তোমার ছেলের কানে লাগে না।
বিভানের মা শিমুকে সান্ত্বনা দিতে বলে,
–তুমি চিন্তা করো না শিমু। আমি আমার ছেলের সাথে তোমার বিয়ে দেবো। একদিন না একদিন বিভান নিজের ভুলটা বুঝতে পারবেই।
শিমু বিভানের মায়ের কথায় শয়তানি হাসি দেয় যা বিভানের মায়ের অগোচরে রয়ে যায়।
_____অদ্রি টিভির স্ক্রিনের সামনে বসে উচ্চস্বরে হেসে ওঠে।
–আমি চলে গেছি, এটাকে তোমাদের জয় ভাবছো শিমু আর রিমু ভাবিইইই! আমাকে এতো হালকা ভাবে নেওয়া উচিত হয়নি তোমাদের।
আবার সগোউক্তি করে বলে,
–আমি যেমন মরতে পারি তেমন মারতেও পারি। জাস্ট ওয়েট এন্ড ওয়াচ। ওয়েট ফর মাই নেক্সট স্টেপ।
চলবে ইনশাআল্লাহ,
ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। কার্টেসি ছাড়া দয়া করে কপি করবেন না। রিচেক করা হয়নি।