সম্পর্কের__দেয়াল পর্ব ১০

#সম্পর্কের__দেয়াল
#দশম__পর্ব
|#Writer_AnaHita_Ayat_SumaiYa|
রিমি আর পাভেল দুজন খুশি তে মগ্ন। রিমি এবার হাসি থামিয়ে রিধির সিগনেচার টা কে ভালো করে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখলো। তারপর বেশ উৎসুক হয়ে পাভেল কে জিঙ্গেস করল,
‘পাভেল?’

‘হু জান বলো!’

‘যতদূর জানি আপু তো এতো সহজে সিগনেচার করার মতো মেয়ে না তাহলে, এই ডিভোর্স পেপারে সিগনেচার কার?’

‘ওহ হো বউ তুমি কি আমাকে এতোই অকেজো ভাবো?’

‘একদমি না! কিন্তু এই ব্যাপার টা ঠিক মাথায় ঢুকছে না!’

‘শোনো এই কাজ তো আমি অনেক আগেই করে রেখেছিলাম। রিধির সিগনেচার আমার জানা ছিলো তার উপর একদিন রিধি খুব ব্যস্ত ছিলো। আমি গিয়ে বললাম যে তোমার নামে একটা ডিপোজিট করবো তোমার সিগনেচার দরকার। অন্য সিগনেচার করতে করতে রিধি না দেখে না শুনে এই পেপারে ও সিগনেচার করে দেয় ব্যাস হয়ে গেলো!’

রিধির নামে ডিপোজিটের কথা শুনে রিমি তো অবাক।
‘কিহ বললে তুমি ওর নামে ডিপোজিট করেছো?’

পাভেল হো হো করে উচ্চস্বরে হাসলো।
‘তুমি কি পাগল? ভালোবাসি তোমাকে আর ডিপোজিট করবো ওর নামে? কক্ষনো না! ফেইক ছিলো সব! কিন্তু এবার করবো রিয়েল!’

‘কার নামে?’

‘আমার বউ রিমি নাজনীন এর নামে বুঝলা?’

‘হুহ!’

রিমির মাথায় পাভেল নিজের মাথা ঠেকিয়ে হাসলো। তারপর আস্তে আস্তে ঘনিয়ে এলো সন্ধ্যা। দুজন কক্সবাজার বেশ উপভোগ করছে। তার উপর নতুন বিয়ে। সব মিলিয়ে একদম ঝাক্কাস একটা সময়। নিজেদের আনন্দঘন মুহূর্ত গুলো কে আরো রোমাঞ্চকর করে তুলতে এই কক্সবাজার দারুণ এক জায়গা। দুজন খুশি মনে এই সময় গুলো স্পেন্ড করছে। তাদের খুশির আজ সীমা নেই। রিমি বললো,

‘এখন আমার নিজেকে কি মনে হচ্ছে জানো?’

‘কি?’

‘এই পৃথিবীতে আমি ই শ্রেষ্ঠ সুখী মানুষ!’

‘এই যাহ আমাকে বাদ দিতে দিলে?’

‘না না তুমি ও আছো আমার সাথে!’

‘আছো নয় বলবা আছি থাকবো সব সময়!’

ভালোবাসার হাসি হাসলো রিমি। পাভেল কে আজ অন্যরকম সুন্দর লাগছে। দুজন দুজনার দিকে তাকালেই বুঝতে পারছে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত মোহ তাদের টানছে। আর এই মোহ তে পড়ে তারা সুখী মানুষ! তবে‌ একটাই প্রশ্ন তাদের কপালে এতো সুখ সইবে তো?

——————————-
সময় ও আজ মনে হচ্ছে খুব ধীর গতিতে চলছে। যেনো সে যেতেই চাচ্ছে না জোড় করা হচ্ছে তাকে যেতে। অথচ বলা হয়ে থাকে সময় ও স্রোত কারো জন্য থেমে থাকে না। কিন্তু আজ মনে হচ্ছে এই খারাপ সময় টা থেমেই আছে।দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া ক্ষত বিক্ষত জায়গা গুলো কে আরো থেকে থেকে সজীব করে দিচ্ছে। রিধি রিধির বাবা মা স্পষ্ট বুঝতে পারছে এই কাজ গুলো রিমি আর পাভেল এর সাজানো। সব বুঝে ও এখন আর কিছু করতে পারছেন না তারা। থানায় জিডি করতে যাওয়া আর হয় নি। হিতাহিত জ্ঞান বুদ্ধি হারিয়ে সবাই এখন নিষ্চুপ। পাভেলের মা ও জানেন না ঠিক কি বলা উচিৎ তার! রিধি নিজের রুমে যেতে চায়। পাভেলের মা বললো,
‘আয় আমি তোকে দিয়ে আসি!’

‘না মা আমি পারবো!’

‘আমার থেকে বেশি জানার বুস এখনো তোর হয় নি। কথা বাড়াবি না চল আয় আমার সাথে!’

রিধি কে তিনি ধরে রুমে নিয়ে গিয়ে বসিয়ে দেন আর বললেন,
‘তুই বস আমি এক্ষুনি আসছি!’

রিধি আস্তে আস্তে উঠে গিয়ে রিমির সিম টা ওয়ারড্রপের ভেতর আছে কিনা দেখতে গিয়ে দেখলো ওখানে কিছুই নেই! একেবারেই শূন্য! রিধি ভাবছে রিমি কিভাবে সিম টার কথা জানতে পারলো? তার তো জানার কথা নয়।

পাভেলের মা রিধি কে বসিয়ে রেখে খাবার নিয়ে আসতে যান রাত তো আর কম হয় নি। তিনি প্লেটে করে খাবার নিয়ে রুমে আসেন। রিধির খাবার দেখেই যেনো সাথে সাথে অনিহা চলে আসলো। তাই বাঁধা প্রদান করে বললো,
‘মা আমি খাবো না। আমার খেতে ইচ্ছে করছে না!’

‘তোকে খেতে কে বলেছে আমি খাইয়ে দিবো!’

‘মা…

‘একদম কোনো কথা নয়। যা হয়েছে হতে দে নিজের শরীরের খেয়াল হারালে চলবে? আল্লাহর উপর ভরসা রাখ দেখবি সব ঠিক হয়ে গেছে! তিনি আছেন তো সবার জন্য আর কি লাগে?’

‘মা কিচ্ছু ঠিক হবে না!’

‘কেন?’

‘আমি অনেক বড় ভুল করে ফেলছি মা!’

রিধি কান্নাকাটি আবার শুরু করে। পাভেলের মা বললেন,
‘দেখ রিধি এখন কিন্তু একদম ভালো হচ্ছে না!’

পাভেলের মা রিধির চোখের পানি মুছে দিয়ে রিধি কে খাইয়ে দিতে থাকেন। খাওয়ার মাঝখানেও কাঁদতে থাকলে রিধি কে ধমন দিয়ে চুপ করান। রিধির কান্না তিনি সহ্য করতে পারছেন না মোটেও। হাস্যোজ্জ্বল মেয়েটা কে কান্নায় মানায় না। একের পর এক ঝড় বয়ে গেলো এতো কষ্টে না কেঁদে থাকবেই বা কিভাবে। তিনি মনে মনে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন যেনো আল্লাহ সব ঠিক করে দেন। অথচ কোনো কিছুই আর ঠিক হবার নয়!

রিধি কে খাইয়ে দিয়ে ঔষধ ও খাইয়ে দেন। তারপর পরম যত্নে শুইয়ে দেন। রিধির এতো কিছুর পর ও মনে হচ্ছে তার এই মা টা এতো ভালো কেন? মন টা এতো ভালো যে এখন ও পর্যন্ত সব ঝড় ঝাপ্টা তেও তিনি তাদের পাশে সমানে আছেন। এতো ভালো মনের একজন অসাধারণ মানুষের ছেলে কিভাবে এতো নোংরা হয়ে পারে রিধি এই হিসাব টাই ঠিক মেলাতে পার না।রিধি আর ভাবতে পারছে না কিছু। জীবনের এই পর্যায়ে এসে মনে হচ্ছে আজ সে ভীষণ ক্লান্ত।

পাভেল মা মমতা জড়ানো কন্ঠে বললেন,
‘রিধি কোনো টেনশন দুশ্চিন্তা করবি না। যা হবে সকালে দেখা যাবে। এখন তুই ঘুমানোর চেষ্টা কর। আমি বেয়াই আর বেয়ান কে দেখছি। তুই একদম নিশ্চিন্তে ঘুমাতে!’

রিধি হা সূচক মাথা নাড়ায়। পাভেলের মা কি মনে করে যেনো রিধির কপালে চুমু এঁকে দেন। অতঃপর রিধি গালে হাত দিয়ে ‘ঘুমা’ বলে চলে যায়।
রিধি ভাবলো যদি একটা টাইম মেশিন থাকতো তাহলে সে অতীতে ফিরে যেতো। রাহুলের কাছে! আচ্ছা রাহুল কি তাকে অভিশাপ দিয়েছে? যার জন্য আজ তার সব কিছু ছন্নছাড়া? রাহুল কোথায় এখন? কেমন আছে সে? ভাবনার জগতে ডুবে গিয়ে রিধি হারিয়ে গেলো অতীতে……

★অতীত★
————–
রাহুল নামের একটা ছেলে রিধি কে ভালোবাসে। রিধির পেছনে এই নিয়ে ৩ বছর পড়ে আছে। কিন্তু রিধির উত্তর একটাই, ‘আমার বাবা মা মানবে না!’ রিধি প্রেম নয় বিয়ে করে সারাজীবন একসাথে থাকার চিন্তা করছিলো দেখে রাহুল খুব অবাক হয়। জবের জন্য চেষ্টা করতে থাকে সেদিন রিধি বলার পর থেকেই। জব টা হয়ে গেলে রিধির বাবা মায়ের কাছে প্রস্তাব দিবে এটাই একমাত্র লক্ষ্য। আজ ছেলেপক্ষ রিধি কে দেখে গেছে। যাওয়ার আগে আংটি ও পরিয়ে গেছে। মানে বিয়ে অর্ধেক ফাইনাল। রাহুল কে খবর টা রিমি ফোনে জানানো মাত্রই জবের ইন্টারভিউ ফেলে দৌড়ে চলে আসে সে। পাগলের মতো কান্নাকাটি করে রিধির বাবার পায়ে পড়ে রিধি কে ভিক্ষা চায় কিন্তু উনার মনে দয়া হয় নি। একটা বেকার ছেলের কাছে কোনো বাবা মা ই কোনো মেয়ে কে দিতে চাইবেন না এটাই স্বাভাবিক। রিধির বাবা মা ও সোজা না করে দেয়। বিনিময়ে রাহুল কে অনেক অপমান করে ও যখন দেখলো রাহুল যাচ্ছে না তখন রিধি কে তার বাবা মা মরার ভয় দেখায়। রিধি কাঁদতে কাঁদতে বলেছিলো,
‘চলে যান আমার জীবন থেকে। আমার জীবনে আমার মা বাবা ইই সব। আর কখনো আসবেন না আমার জীবনে!’

রিধির কথা গুলো রাহুল কে সেদিন হার্ট করে খুব। অপারগ হয়ে রাহুল রিধির জীবন থেকে অনেক দূরে চলে যায় সেই রাতেই। কোথায় গেছে সেই খোঁজ রিধি আর পায় নি।আজ পর্যন্ত তা অজানা ই রয়ে গেলো। আজ জানতে ইচ্ছে করছে ভীষণভাবে! আর তারপর চলে যায় অনেক গুলো দিন রিধি ও আস্তে আস্তে ভুলে যায় রাহুল কে, কেননা তাদের তেমন কোনো প্রেম ভালোবাসার সম্পর্ক ছিলো না। যা ছিলো একটা মোহ।সময়ের সাথে সাথে তা উবে গেছে। তবে আজ খুব করে মনে পড়ছে রাহুলের কথা!

—————————
ওদিকে দুঃখের ছায়া আর এদিকে রিমি আর পাভেল ডুবে আছে অবৈধ এক সম্পর্কে। মোহে পড়ে দুজন নিজেদের অবৈধ শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হয়ে আছে। পিতা মাথার অনুমতি বেতিত কোনো বিয়ে ইসলামে সম্পূর্ণ হারাম। তাহলে অবৈধ ই তো তাই না? যেখানে বিয়ে টাই হয় নি সেখানে সম্পর্কের বৈধতা পেলো কোথায়?

————————
নাদিম সম্পর্কে পাভেলের বন্ধু । যদিও আগে অনেক কাছের ছিলো বাট এখন যে যার যার কাজে ব্যস্ত থাকায় সেরকম করে আর কথা হয় না।। নাদিম ও কক্সবাজার আসে তার পরিবার কে নিয়ে। সকাল সকাল সমুদ্র সৈকতের অপরূপ দৃশ্য দেখতে তারা ও বের হয়। প্রায় ঘন্টা দুয়েক থাকার পর হোটেলের দিকে ফিরতে যাবে হঠাৎ নাদিম লক্ষ্য করলো সামনে থাকার একটা ছেলে কে তার চেনা চেনা লাগছে। ভালো করে দেখতেই মনে পড়লো আরে এতো পাভেল! কিন্তু পাভেলের সঙ্গে মেয়ে টা কে তো রিধি মনে হচ্ছে না। নাদিম পাভেলের বিয়ে তেও গিয়েছিলো রিধি কে দেখেছে ভালো করে।

নাদিম আরো ভালো করে ব্যাপার টা যাচাই করে দেখলো আসলেই সত্যি পাভেলের সঙ্গে রিধি নয় অন্য কোনো মেয়ে আছে। আশ্চর্য জনক লাগছে নাদিমের কাছে। তাদের দেখে মনে হচ্ছে তারা বেশ ক্লোজ। পাভেল কখনো মেয়েটি কে জড়িয়ে ধরছে। কখনো হাসছে। খুনসুটি গুলো নাদিম লক্ষ্য করলে সন্দেহ জাগে তার মনে। পাভেল ঐ মেয়েটার সাথে এতোই মগ্ন যে বন্ধু কেও খেয়াল করে নি।

নাদিম তাদের আড়াল থেকে ক্লোজ থাকা অবস্থায় কয়েক কপি ছবি তুলে নেয়। তারপর রিধির নাম্বার টা খুঁজতে থাকে। একবার পাভেলের এক্সিডেন্ট হয়েছিলো। নাদিম ই তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায় আর পাভেলের ফোন থেকে রিধির নাম্বার টা নিয়ে তাকে কল দিয়ে জানিয়েছিলো খবর টা। সেইদিন নাদিম রিধির নাম্বার রিধি ভাবী দিয়ে সেইভ করে রেখেছিলো। লিস্টে খুঁজতে খুঁজতে চট করে নাম্বার টাও পেয়ে গেলো সে। নাদিম আর দেরি না করে কল দেয় রিধি কে। অনেকক্ষণ ধরে কল রিং হওয়ার পরে ও কেটে যায়। এমন করে একবার, দুবার, তিনবার এবং শেষ চতুর্থ বারের কল টা রিসিভ হয়।

———————–
অপরিচিত নাম্বার থেকে কল আসতে দেখে রিধি একটু বিচলিত হয়। কল টা সঙ্গে সঙ্গেই তুললো,ওপাশ থেকে বিনয়ী কন্ঠে কেউ বললো,

‘আসসালামু ওয়ালাইকুম ভাবী আমি নাদিম পাভেলের বন্ধু! আমাকে চিনতে পেরেছেন?’

রিধি অবাক না হয়ে পারলো না। নাদিমের কল হঠাৎ?

‘ওয়ালাইকুম আসসালাম। ভাইয়া আপনি হঠাৎ ফোন দিলেন যে?’

‘ভাবী আপনার কন্ঠ এমন শোনাচ্ছে কেন কোনো সমস্যা হয়েছে কি?’

‘না ম্ মানে….

নাদিম বুঝলো রিধি বলতে চাচ্ছে না তাই জোড় না করে বললো,

‘আচ্ছা বলতে না চাইলে সমস্যা নেই। ভাবী যেই জন্য আপনাকে ফোন দিলাম সেটা বলি। আমি আপনাকে কিছু পিক সেন্ট করছি দেখুন তো পাভেলের সঙ্গে এই মেয়েটা কে?!…

রিধি আকস্মিক চমকে উঠে বললো….

‘পাভেললল…???

চলবে___________________(১৫১০ শব্দ)

তারপর এখন রিডার্সগন কি বলেন? রিমি আর পাভেল কে কি ইয়া লম্বা সুপারি গাছের উপর থেকে ঠাসস করে নিচে ফেলে দিবো?😜

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here