#সম্পর্কের__দেয়াল
#Writer_AnaHita_Ayat_SumaiYa
#পর্ব__১৬
পাভেলের হাত থেকে ফোন টা পরে যায়। হতাশাগ্রস্থ হয়ে সে সোফার উপর ধফাস করে বসে পড়ে। রিমি তো খুব অবাক। বুঝে উঠতে পারলো না ঠিক ওর ক্ষণিকের মধ্যে কি হয়ে গেলো যে তাকে এতো নিরাশ দেখাচ্ছে।
‘পাভেল কি হয়েছে কোনো খারাপ খবর?’ দুই বাহু ধরে ধাক্কা দিয়ে কথা টা বলে সে। অপরদিকে যার দিকে সে প্রশ্ন ছুঁড়েছে ও ভাবলেশহীন মানুষ এর মতো একদম ঘাপটি মেরে মুখে তালা দিয়ে বসে আছে। কোনো উত্তর না পেয়ে ফের প্রশ্ন ছুঁড়তে হলো,
‘আরে চুপ করে থাকলে বুঝবো কিভাবে আমি তোমার কি হয়েছে? প্লিজ চুপ করে থেকো না বলো আমাকে কি হয়েছে!’
অনেক রিকোয়েস্ট এর পর মানুষ টা বুঝলো তার আর চুপ করে থাকা উচিত নয়। তাই বাধ্য হয়ে মুখ খুললো,
‘আমার.. (বলে একটু থামলো)
‘হ্যাঁ তোমার তারপর কি? বলো…
‘আমার চাকরি টা চলে গেছে রিমি!’
‘কিহহহ….
পাভেল চুপ করে থম মেরে রইল। রিমি কথা টা মস্তিষ্কে পৌঁছানোর পর, একের পর এক প্রশ্ন মনে জাগতে লাগলো। যেটা বেশি আসছে সেটা হলো,
‘হঠাৎ করে চাকরি চলে যাওয়ার মানে কি? কোনো রিজন তো অবশ্যই আছে তাই না! খুলে বলো আমাকে প্লিজ!’
‘রিজন তো তুমি!’
‘হোয়াট? পাভেল আর ইউ ম্যাড?’
‘না আমি পাগল নই। আর যা বললাম কোনো ভুল বলিনি!’
‘আজব! আমি না কিছু বুঝতে পারলাম না তুমি ঠিক কি বলছো! ক্লিয়ার করে বলবে সব?’
‘ঐ সেদিন বলেছিলাম না আমার অফিসের জরুরি একটা ডিল ফাইনাল করতে যেতে হবে।’
‘হুম তো…
‘তোমাকে নিয়ে আসতে গিয়ে আমি সেই মিটিং এ তো আর এটেন্ড করতে পারিনি। আমার মাথা থেকে সেদিন এই কথা টা বেরিয়ে গিয়েছিলো যে বস বলেছিলো এই ডিল কোম্পানির জন্য কতো টা গুরুত্বপূর্ণ। যদি কোনো ভাবে ওই ডিল হাত থেকে বেরিয়ে যায় তাহলে আমার চাকরি খুইয়ে ফেলার সম্ভাবনা আছে! আমি এই কথাটার গুরুত্ব দেই নি সেদিন অনেক টেনশন আর চাপের জন্য বেমালুম ভুলে গিয়েছিলাম সব!’
‘কিন্তু এখন…. এ্ এখন কি হবে পাভেল?’
‘আমার জানা নেই কি হবে!’
‘বস কে কোনো ভাবে বলে মানানির চেষ্টা তো করো!’
‘সম্ভব না। তিনি মুখের উপর না করে দিয়েছেন!’
‘এভাবে হুট করে চাকরি চলে গেলে আমরা খাবো কি? কিছু তো করা উচিত তাই না! করো না কিছু একটা!’
রিমির কথায় পাভেলের রাগ হলো কিছু টা। সে তাকে ধমক দিয়ে বললো,
‘তোমার মাথা আর মুন্ডু করবো আমি হ্যাঁ?’
‘পা…ভে…ল…
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পাভেল ভীষণ ভাবে ভেঙ্গে পড়ে। সুখের সময় স্পেন্ড করতে নিয়েছিলো আর ঠিক তক্ষুনি এই এত্তো বড় একটা স্যাড নিউজ। সব কিছু উলট পালট করে দেওয়ার জন্য তো এটা যথেষ্ট বটেই। পাভেল সেই এক ভাবে বসেই আছে আর রিমি অতিরিক্ত চিন্তা টেনশন আর পাভেলের ধমক খেয়ে কান্না শুরু করে দিয়েছে। পাভেল একটু বেশি ডিপ্রেস্ড কারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য একটা ভালো চাকরি অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আর এখন কার সময়ে একটা চাকরি ফের জোগাড় করা খুব জটিল কাজ। কারোই মাথায় আসছে না এখন কি হবে!
পাভেলের মা বাড়িতে এসে দেখে দুই জনার মন ভার। কিন্তু হওয়ার কথা ছিল উল্টো টা! তিনি কিছু টা আঁচ করতে চেষ্টা করলেন কি কিন্তু সফল হলেন না। তিনি সোজা রুমে চলে যান। মাথায় হাত দিয়ে কিছুক্ষণ বসে রইলেন। তারপর উঠে জলদি ফোন টা খুঁজতে থাককেন। সারা ঘর খুঁজে ও তিনি ফোন টা কে কোথায় না পাওয়ায় মাথা গরম হয়ে যায়। রুম থেকে নিচে বসে থাকা মানুষ দুটির উদ্দেশ্যে কথা ছুঁড়তে থাকেন,
‘আমার ফোন টা কই পাচ্ছি না? হঠাৎ করে ফোন টার কি পা গজিয়ে গেছে যে হেটে হেটে কোথাও চলে গেলো?’
তিনি চিল্লাতে চিল্লাতে নিচে আসেন। একে তো চাকরির টেনশন তার উপর পাভেলের মায়ের এই চিল্লানো মাথা খারাপ করে দেয়ার মতো অবস্থা। উনি একাই কথা বলে যাচ্ছেন ঠিকই কিন্তু কোনো উত্তর পাচ্ছেন না। এতে রাগ বাড়িয়ে দিলো যেনো,
‘চুপ করে আছিস কেন দুই জন?’
পাভেল উচু স্বরে বললো,
‘কি সমস্যা মা চিল্লিয়ে কানের পর্দা ফাটিয়ে দিবা দেখছি!’
‘তো তাহলে বোবার মতো বসে না থেকে জবাব দিলেই তো পারিস!’
‘কি জবাব দিবো?’
‘আমার ফোন কোথায়?’
‘নিজের খেয়াল ই রাখতে পারি না আবার তোমার ফোন…
‘কি বললি তুই?’
পাভেল উঠে হনহন করে চলে যায় দেখে রিমি এগিয়ে আসে মা কে সে বললো,
‘মা এখন ফোন দিয়ে কি করবেন?’
‘আমি আমার ফোন দিয়ে যাই করি না কেন সেই কৈফিয়ত কি এখন থেকে আমার তোকে দিতে হবে?’ (রেগে চোখ রাঙিয়ে বললেন)
‘আমি কিন্তু সেটা একবার ও বলিনি….
‘তুই কি বলতে চেয়েছিস আমি ভালো করেই বুঝেছি! আমি তো আর দুধের বাচ্চা না!’
‘মা আস্তে কথা বলুন আমি এক্ষুনি খুঁজে নিয়ে আসছি!’
‘শোন তুই আমাকে মা ডাকবি না। ওইসব দিয়ে পাভেল কে ভোলাতে পারলেও আমাকে তুই ভোলাতে পারবি না কথা টা কান খুলে শুনে রাখ! আমার ফোন নিয়ে আয় জলদি!’
রিমি দাঁতে দাঁত চেপে পাভেলের মায়ের দিকে তাকালে দুজনার চোখাচোখি হয়ে যায়।
‘কি হলো যাচ্ছিস না কেন?’
আর কোনো কথা না বলে হনহনিয়ে রেগে রিমি ও রুমে চলে যায়। সব ক টা রুম খুঁজে অবশেষে ফোন টা পায় সে। বিছানার উপর সজোরে একটা আছাড় মেরে নিজেই নিজেকে বলে বসলো,
‘এই বুড়ি টা বড্ড বেড়ে যাচ্ছে। পেয়েছে কি আমাকে হ্যাঁ? ভালো ভাবে কথা বলছি তাই বলে এই ভাষা এই ব্যবহার উনার? অতি বাড় মোটেও ভালো নয়!’
রাগ চরমে পৌঁছে যায়।
‘কন্ট্রোল রিমি কন্ট্রোল! এতো অল্পতে অতিষ্ঠ হয়ে গেলে তো চলবে না তোকে!'(মনে মনে)
চুপচাপ ফোন টা নিয়ে নিচে যায় সে। তার শাশুড়ি নিচে বসে সাপের মতো রেগে ফুঁসছেন। চোখে মুখে ক্রুদ্ধ দৃষ্টি। নিজেকে শান্ত করে কোমল কন্ঠে বললো,
‘এই নিন মা আপনার ফোন!’
‘কোথায় পেলি?’
‘আপনার রুমেই…
‘মিথ্যা বলবি না একদম।’
‘না সত্যি বলছি!’
‘তাহলে আমি পেলাম না কেন রে? খবরদার সাহস বাড়িয়ে আর কখনো আমার ফোনে হাত দিবি না!’
এই বলে পাভেলের মা সিড়ি বেয়ে তড়িঘড়ি করে নিজের ঘরের দিকে চলে যায়। উনার কথা শুনে বিপরীতে থাকা মানুষ টার মেজাজ প্রচন্ড খারাপ হয়ে গেলো। কারণ সে যতই ভালো চাচ্ছে ততই খারাপ মনোভাব প্রকাশ করছে এই মহিলা! হঠাৎ ফোনের পিছনে এমন গুরুতর ভাবে লাগল কেন এমন একটা প্রশ্ন মনে জেগে উঠলো। রিমি ও উনার পিছন পিছন উপরে যায়। পাভেলের মা কারো পায়ের শব্দ বুঝতে পেরে সেই ব্যক্তিটির মুখের উপর ঠাস করে দরজা বন্ধ করে দেয়। এতে করে রিমি বেশ অপমান বোধ করতে লাগল। তার এই বাজে বিহেব টা ঠিক ভাবে হজম করা গেলো না!
তাছাড়া পাভেলের মা ওদের দুজনের চিন্তিত মুখ দেখে একবার ও জিঙ্গেস ওবধি করে জানতে চায় নি যে কি হয়েছে? আসার পর থেকেই কেবল ফোনের পিছনে পড়ে আছে এটা সেটা কথা শোনাচ্ছে তাই হালকা একটা সন্দেহের কীট মনে জাগলো রিমির। তাই ঠিক করলো আজ যে করেই হোক তার শাশুড়ি মা ফোন দিয়ে করে টা কি সে অবশ্যই দেখবে! হোক সেটা যে কোনো ভাবে!
শাশুড়ি মায়ের কথা ছেড়ে এবার পাভেলের কথা ভাবতে লাগলো সে। গেলো কোথায় পাভেল? ফোন খোঁজার সময় তো রুম সব কটা খুঁজেছে কই কোথাও তো দেখে নি তাকে! তাই রুমে আবার না খুঁজে সে সোজা ছাঁদে চলে যায়। তার মতে এখানেই আছে এটলিস্ট সে বাড়ির বাহিরে তো যায় নি!
——————————–
পাভেলের মা দরজা বন্ধ করে বারান্দায় যান। আর দেরি না করে তিনি রিধির নাম্বারে কল দেওয়ার চেষ্টা করেন কিন্তু পারলেন না। ফোন যাওয়ার আগেই কেটে যাচ্ছে। বহু বার চেষ্টার পর ও যখন তিনি ব্যর্থ হলেন তখন হতাশ হয়ে এক পাশে রাখা চেয়ারের উপর বসে পড়েন। ভাবতে থাকেন কি করবেন এখন। তবে কি তিনি সারাজীবনের জন্য রিধি কে হারালেন। আর কখনো কি দেখা মিলবে না রিধির মুখ খানা। ভেতর থেকে একটা হাহাকার অনুভব করেন তিনি। মাথায় হাত দিয়ে চেয়ারের উপর বসে পড়েন সাথে সাথে!
রিধি কে হারানোর চাপা কষ্ট টা রূপ নেয় ভয়ানক এক রাগ হয়ে। তিনি এবার পাভেল আর রিমি কে খুঁজতে থাকে। বাড়ি টা শুনশান কারো কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে তিনি ছাদে চলে গেলেন। সেখানেই একসঙ্গে দুজন কেই পেয়ে গেলেন।
উনাকে ছাঁদে আসতে দেখে দুজনার মেজাজ আরো বিগড়ে যাওয়ার উপক্রম। তারা কোনো কথা বলবে তার আগেই তিনি বলা শুরু করলেন,
‘এবার খুশি হয়েছিস না তোরা? অবশ্য খুশি না হওয়ার মতো তো কিছু নেই তাই না। এবার তো তোদের দুই পা তুলে তাথা থই থই করে নাচা উচিত!’
এমনিতেই ডিপ্রেশনে চলে গেছিলো পাভেল তার উপর মায়ের এমন উদ্ভট কথার কোনো মানে কিছু বুঝে উঠতে পারলো না। পাভেল রেগে যাচ্ছে দেখে রিমি তাকে শান্ত করে নিজেই বললো,
‘এমন করে কেন বলছেন মা! আমরা নাচবো কেন চাকরি চলে গেছে পাভেলের এই সংবাদ শুনে কি কেউ নাচে?’
‘কিহহহ…
অনেক অবাক হলেন তিনি।
‘হ্যাঁ মা!’
কিছুক্ষণ চুপটি করে থাকার পর তিনি উচ্চস্বরে হো হো করে হেসে উঠলেন। উনার সামনে থাকা আরো দুজন ব্যক্তি তো হতভম্ব। মা কে কি জ্বিনে আছর করেছে এমন কিছু একটা চট করে মাথায় আসলো রিমির। দুজন কেই চুপ থাকতে দেখে উনি আবার বললেন,
‘তোদের বিনাশ শুরু হয়ে গেছে তাহলে? এটা তো হওয়ার ই ছিলো হাহাহা…’
‘মানে?’
‘তোরা রিধির সাথে অনেক বড় অন্যায় করেছিস। করেছিস অনেক বড় পাপ। সুখ স্বামী সন্তান সব কেড়ে নিয়ে বেচারি কে নিষ্য করে তোরা ভালো থাকবি ভেবেছিলি? তোদের জন্য ওরা বাড়ি পর্যন্ত ছেড়ে দিয়ে চলে গেছে আর তোদের দিয়ে গেছে অভিশাপ। আর সেই অভিশাপেই তোদের ধ্বংস অনিবার্য!’
রিধি রা বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে শুনে রিমি আর পাভেল রিতিমত শক্ড। চোখ দুটো কোটর থেকে বেরিয়ে আসার উপক্রম। পাভেল ই এগিয়ে এসে বললো,
‘কি বলছো মা তুমি? মাথা ঠিক আছে তোমার?’
‘আমি ঠিক ই বলছি। ওরা চলে গেছে সব ছেড়ে। এই তো চেয়েছিস! যা ওরা তোদের চাওয়া পূরণ করেছে!’
অন্যজন মায়ের এই কথার বিরোধ করে বললো,
‘মা আমরা এটা চাই নি!’
‘এই মেয়ে তুই চুপ থাক। আর পাভেল তোকে বলছি শোন আসমানের চাঁদ হাতে পেয়ে ও পায়ে ঠেলে আবর্জনার স্তূপে ফেলে দিয়েছিস।আর যাকে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চেয়েছিস সে একটা অভাগী অলক্ষ্মী!’
‘মা…
‘হ্যাঁ হ্যাঁ এই মেয়ে টা অলক্ষুনে। আজ তোর চাকরি খেয়েছে কাল দেখা যাবে আমার আর তোর জীবন ও খেয়ে দিয়েছে দেখিস তুই!’
মা ছেলের ভালো কথা কাটাকাটি হয়। মায়ের কথা গুলো বেশ অপমানজনক থাকায় রিমি কাঁদতে কাঁদতে বললো,
‘ঠিক আছে আমি যেহুতু সব সমস্যার মূল তাই আমি ই চলে যাচ্ছি। পাভেলের জীবন থেকে… আপনি খুশি থাকুন মা!’
পাভেল কিছু বলার আগে রিমি দৌড়ে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়। পাভেল আটকাতে নিলে তার মা তার পথে বাঁধা প্রদান করে। ছাঁদ থেকে রাস্তা স্পষ্ট দেখা যায়।রাস্তা দিয়ে পাভেল রিমি ছুটে চলে যাওয়ার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে দেখলো শুধু……!
চলবে___________________
সামনে কি হতে যাচ্ছে গেস করতে পারছেন কিছু?
মন্তব্যে জানাবেন! আপনাদের মন্তব্য মনোযোগ সহকারে পড়ে এই ক্ষুদ্র লেখিকা হিহিহি!