#সম্পর্কের__দেয়াল
#পঞ্চম__পর্ব
|#Writer_Anahita_Ayat|
গভীর রাত! সারাদিন চারদিকে কতো মানুষের কলকাকলি যানবাহনে সৃষ্টি কোলাহল সব কিছু পেরিয়ে শেষে আসে এই গভীর নিরব নিস্তব্ধ রাত। চারদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার। হঠাৎ করে এই স্বপ্ন টা দেখে মা বলে চিৎকার দিয়ে উঠে বসে রিধি। এটা শুধু স্বপ্ন নয় এ যেনো এক ভয়ংকর দুঃস্বপ্ন। রিধি ভয় পেয়ে ঘেমে একাকার হয়ে গেছে।গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। রিধির চিৎকারে আচমকা পাভেলের ও ঘুম ভেঙ্গে যায়। সে ও এক প্রকার ভয় পেয়ে যায়। তাড়াহুড়ো করে লাইট জ্বালিয়ে বললো,
‘কি হয়েছে রিধি?’
রিধি পাভেল কে কিছু না বলে উঠে বন্ধ দরজার দিকে অগ্রসর হতে থাকে। পাভেল তা লক্ষ্য করে। ভ্রুঁ কুঁচকে বললো,
‘কোথায় যাচ্ছো তুমি? আরে আজব কিছু না বলে এভাবে….
রিধি দরজা খুলে সোজা পাভেলের মায়ের রুমে যায়। রিধির পেছন পেছন পাভেল ও আসে। পাভেলের মায়ের দরজা হালকা লাগানো ছিলো রিধি দরজা খুলে ভেতরে যায়। রিধির হাতের ফোন টায় ফ্লাসলাইট অন করে দেখলো তিনি গভীর ঘুমে মগ্ন। পাভেল এখনো কিছু বুঝতে পারছে না। রিধি স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো আর বুঝলো সারাদিন এতসব ভাবার কারণের এমন দুঃস্বপ্ন দেখেছে।রিধি রুম থেকে বেরিয়ে যায়। পাভেল কে কিছু বলছে এমন একটা ভাব যেনো পাভেল কে পাত্তাই দিচ্ছে না। রিধি এক গ্লাস পানি খেয়ে নিলো। পাভেল এবার বিষয় টা কিছু টা আঁচ করতে পারছে!
‘কোনো স্বপ্ন দেখেছিলে?’
‘হ্যাঁ!’
‘কি?’
‘ওই যে বললে স্বপ্ন স্বপ্নই। ঘুমাও!’
রিধি ওয়াশরুমের দিকে যাচ্ছে। পাভেল বাঁধা সৃষ্টি করে বসলো!
‘তুমি ঘুমোবে না?’
‘আমার আর ঘুম হবে না!’
পাভেল আর কিছু বললো না। মনে মনে শুধু বললো,’অসহ্য..!’
রিধি তাহাজ্জুদ নামাজ পড়লো আর আল্লাহর কাছে কাঁদতে কাঁদতে চাইলো পাভেল আর রিমির জন্য যাতে তার কোনো আপন জন কে হারাতে না হয়। আর আল্লাহ যেনো সঠিক পথ টা দেখিয়েই দেন। বাকি রাত না ঘুমিয়েই কাটিয়ে দেয় রিধি। সকাল হতেই রিধির মনে হতে থাকলো রিমি আর পাভেল কে এবার বাঁধা দেওয়া উচিত নাহলে পরে রিমির বিয়ের পর আরো খারাপ কিছু হয়ে যাবে।
রিমি ফজরের নামাজ শেষ করে প্রতিদিন কার মতো সকালের নাস্তা তৈরি করতে চলে যায়। পাভেলের মায়ের ঘুম আজকে খুব ভালো হওয়ায় তিনি নামাজ পড়তে ও উঠতে পারেন না। উনার ঘুম ভাঙ্গল সাড়ে আটটা নাগাদ। রান্নাঘরে এসে দেখে সব কাজ শেষ।
‘রিধি তুই কেন করতে গেলি আমি না বলেছি এবার থেকে তুই শুধু রেস্ট নিবি কোনো কাজে হাত দিবি না!’
‘সেটা পরে দেখা যাবে…
‘আমার ও যে আজ কোথা থেকে এতো ঘুম আসলো ধুর!’
‘ভালো ঘুম স্বাস্থ্যের জন্য ভালো হিহি!’
‘তুই কি আজ ঘুমাস নি?’
‘হ.হ্যাঁ!’
‘চোখ কেমন ফোলা ফোলা লাগছে তাহলে কি কেঁদেছিস? কেন কাঁদলি পাভেল কিছু বলেছে এক্ষুনি বল…
‘আহা মা এতো উদ্বিগ্ন হচ্ছেন কেন! কেউ কিচ্ছু বলে নি!’
‘সত্যি?’
‘হ্যাঁ!’
‘আপনি নাস্তার টেবিলে বসুন আমি সবাই কে ডেকে নিয়ে আসি!’
‘আচ্ছা সাবধানে!’
রিধি হাসলো। এই মা তাকে ভীষণ ভাবে তার মায়ায় ফেলে দিচ্ছেন দিন দিন। রাতের স্বপ্ন টার কথা মনে পড়তে বুকের ভেতর ছ্যাত করে উঠছে। রিমি একবার এই কাজ করার দুঃসাহস দেখিয়েছে ভবিষ্যতে যে করবে না তার গ্যারান্টি নেই ওদের একটা না একটা বিহিত করা অতিব জরুরি। রিধি পাভেল কে ডেকে তোলে মায়ের রুমে এসে দেখলো রিমি পর মা দুজন ই ঘুমে। রিধির মায়ের ঘুম পাতলা থাকায় ভেঙ্গে যায়।
‘এই রিমি উঠ.. আম্মু উঠুন নাস্তার টেবিলে আমার আরেক মা অপেক্ষা করছেন!’
সবাই নাস্তা করে নেয়। রিমি একদম কোনো চান্স ই পেলো না পাভেল কে তাকে দেখতে আসার কথা জানানোর। পাভেল অফিসে চলে যায়। রিমি ধ্যাত বলে নিজের রুমে চলে যায়। পাভেলের মায়ের সাথে রিধির মা বসে কিছুক্ষণ কথা বলেন।
যাওয়ার সময় হওয়ায় রিধি রিমির রুমে যায়।
‘রিমি রেডি হয়ে নে আম্মু ও রেডি হচ্ছেন!’
‘এতো বলা লাগবে না যাও তো!’
‘এমন করছিস কেন?’
‘তো আর কেমন করবো?’
‘আমি কি করেছি?’
‘তুই কিচ্ছু করেছিস বলেছি আমি যা তো প্লিজ! ভালো লাগে না!’
‘আমাকে?’
রিমি চুপ করে একবার চোখ রাঙিয়ে রিধির দিকে তাকায়।
‘মেয়ে যখন হয়েছিস বিয়ে তো করতে হবে তাই না পাগলী বোন আমার!’
রিধি নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করেই এটা বলেছে। এই কথাটা বলে রিধি হেসে চলে রিমি ক্ষিপ্ত হয়ে বলল,
‘আমি তোর আর তোদের কেউ ই না.. হাহ!’
রিধির মা আলাদা রুমে রেডি হচ্ছিলো বাড়ি যাওয়ার জন্য। রিধি আসলো। রিধি কে চিন্তিত দেখে তিনি বললেন,
‘কি হয়েছে তোর?’
রিধি তার আম্মু কে খারাপ স্বপ্ন টার ব্যাপারে সব খুলে বললো।
‘আম্মু আমার মনে হচ্ছে রিমির বিয়ে টা হওয়ার আগে ওর আর পাভেলের বিষয় টা সমাধান করা উচিত! পরে আমরা যেমন ভাবছি তার বিপরীত ও তো হতে পারে তাই না?’
‘তো কিভাবে সমাধান করবি? ওরা যদি নিজের ভুল স্বীকার না করে উল্টো তোকে তোর শাশুড়ির কাছে খারাপ বানিয়ে দেয় তখন তো তুই খারাপ হয়ে যাবি আর ওরা ভালো!’
‘তাহলে হাতেনাতে ধরলেই তো হয়!’
‘দেখ আমরা যেটা চাই সেটা কখনো হয় না হয় উল্টো টা। তুই প্রমাণ ছাড়া কিছু করতে পারবি না। প্রমাণ জোগাড় করতে হলে তোকে অপেক্ষা করতে হবে এর আগেই যদি রিমি কিছু একটা করে ফেলে দেখ ওকে আমি বিশ্বাস করতে পারছি না। তার চেয়ে ভালো আমরা যেটা চাচ্ছি ওটাই হতে দে!’
‘কিন্তু মা পরে তো আরো ক্যাচাল বাড়বে….
‘দেখা যাবে কি হয়। কিন্তু এখানে রিমি থাকলে তুই সেইফ না!’
রিধি চুপ থাকলো। রিমি কে ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও যেতে হচ্ছে। দুজন ই রেডি হয়ে পাভেলের মায়ের কাছ থেকে বিদায় নিতে আসে। বোন কে দেখতে আসবে সেখানে রিধি না গেলে কেমন দেখায় তাই পাভেলের মা রিধি কে ও যেতে বলেছেন। রিধি যখন বাঁধা দিয়ে বসলো ‘মা আপনি একা এ বাড়িতে…
‘আমি সব সামলে নিতে পারবো আর একা কই তুই যা তো!’
রিধির মা বললো ‘বেয়ান আপনি সহ গেলে ভালো হতো না?’
‘আমি ও চলে গেলে বাড়ি টা কে দেখবে। এখন রিধি যাক পরে সময় করে আমি ও যাবো!’
‘সময় আর কখন!’
‘আরে যাবো যাবো রিধি পাভেল কি দুপুরে ওখানে যাবে?’
‘হ্যাঁ মা!’
‘আচ্ছা ঠিক আছে সাবধানে যাস কেমন!’
রিধি পাভেলের মা কে সালাম করে নিজের মা কে। রিমির ও করতে হলো অনিচ্ছুক থেকেও। কারণ সম্মানের ব্যাপার। মনে মনে রুমি এসবে প্রচুর বিরক্ত। ন্যাকামি তে তার গা জ্বলছে।
বাড়িতে এসেই রিমি পাভেল কে একের পর এক কল দিতে শুরু করে কিন্তু বার বার একি কথা পাভেলের ফোন বন্ধ বলছে। রাগে মাথায় আগুন ধরার উপক্রম। ফোন টাই বিছানার উপর সজোরে আছাড় মারে। অবশ্য এতে ফোনের কিছুই হলো না। রিমি চেঁচিয়ে বলে দিলো ‘সন্ধ্যার আগে আমাকে যেনো কেউ না ডাকে!’ অন্যদিকে রিধি ও নজর দারি তে রাখে রিমি কে।এদিকে পাভেলের ফোন আজকে রিধি ই রেখে দেয়। যাতে রিমি কে দেখতে আসার খবর টা পাভেলের কানে কোনো ভাবেই না যায়। যখন পাভেল জানবে তখন কিছু টা দেরি হয়ে যাবে ফলে পাভেল রিমির বিয়ে ঠেকাতে পারবে না। যেহেতু রিমি পাভেল উভয়েই তাদের অবৈধ সম্পর্কে লিপ্ত তাহলে দুজন ই চেষ্টায় থাকবে বিয়ে ঠেকানোর তাই রিধি চালাকি করে এটা করেছে। শাশুড়ি মা কে ও মিথ্যা বলে এসেছে যে পাভেল জানে।
পাভেল ও রিমির সাথে রিধির মা আসায় তেমন কথা বলতে পারেনি ভাবলো অফিস ই একমাত্র যেখানে আরামসে কথা বলা যাবে। ভাবতে ভাবতে ফোন নিতে গিয়ে দেখে তার সঙ্গে ফোন নেই।
‘তার মানে ফোন আমি বাড়িতে ফেলে এসেছি ধুর!’
অফিসে কাজ পড়ে যায় আর্জেন্ট। তাই পাভেল ফোনের কথা বেমালুম ভুলে যায়। রিমি কে দেখতে আসবে সন্ধ্যা ৭ টায়। পাভেল অফিস শেষে বাড়ি ফিরে ৬ টায়। পাভেলের মা পাভেল কে দেখে ভারী অবাক হন!
‘কিরে পাভেল তুই রিধিদের ওখানে যাস নি?’
‘মানে কেন?’
‘যেভাবে বলছিস যেনো ভাজা মাছ টা উল্টে খেতে পারিস না। রিমি কে যে আজ দেখতে আসবে ওখানে তো তোর ও থাকা জরুরি তুই যাস নি কেন?’
‘কিহহহ রিমি কে দেখতে আসছে?’
‘দেখ নাটক করবি না। রিধি তো বললো তুই দুপুরেই ওখানে যাবি!’
‘আমি তো জানতাম ই না!’
‘ফাজিল একদম মিথ্যে বলবি না। তুই তো ভুলো মনা তাই হয়তো ভুলে গেছিস এক্ষুনি এখানে চলে যা।’
পাভেল পুরাই বেক্কল হয়ে যায়। রিমি কে দেখতে আসার মানে কি?
‘কি হলো দাঁড়িয়ে আছিস কেন?’
‘আমার ফোন টা বাড়ি তে ফেলে গেছি!’
‘আমি এনে দিচ্ছি!’
পাভেল তার মায়ের হাত থেকে ফোন নিয়ে বাড়ি থেকে তাড়াহুড়ো করে বের হয়। পাভেলের মা বললেন, ‘এখন এতো তাড়াহুড়ো করছিস কেন?’
‘আরে মা তুমি ঠিক বলেছো আমি ভুলে গেছি হয়তো। এখন তাড়াতাড়ি না গেলে উনারা কি ভাববে বলো!’
‘ঠিক আছে দেখেশুনে যাস!’
পাভেল তার মাকে কিছু বললো না। মূলত রিমি কে দেখতে আসছে বলায় মাথায় বাজ পড়েছে তার। রিধি তাকে বলেনি নাকি সে ভুলে গেছে নিজেই বুঝতে পারছে না। রিমি কে কল দেওয়ার জন্য ফোন টা নিতেই দেখে ফোনের চার্জ ই নেই। ফোন টা অন হতেই আবার অফ হয়ে গেছে। পাভেলের মেজাজ এবার চরম আকারে খারাপ হয়ে যায়…..!
চলবে_______________
(পাভেলের মা বেঁচে আছেন হিহি…)