#সাইকো_বর
#Writer_Tabassum_Tajnim
#part_11
জোহান!!!! জোহান এখানে আসবে কিভাবে,, ওহ, মনে পড়েছে, আমিই তো কালকে ঠিকানা দিয়ছিলাম। অনেক বড় ভূল করে ফেলেছি।মেঘ যদি জানতে পারে জোহান এসেছে,, তাহলে আরও বড়ো ঝামেলা করবে। এই জোহান কি আমাকে শান্তিতে থাকতে দিবে না।
উফফ্,,,
বৃষ্টি— এই ভাবি,, চলো।।
অথৈ— হুহ্,,, চলো।
আল্লাহ গো রক্ষা কইরো আমারে। জোহানের বাচ্চা তোরে যে আমি কি করমু। মনে মনে বকতে বকতে নিচে গেলাম। জোহান সোফায় বসে মার সাথে কথা বলছিলো। আমি যেতেই জোহান আমার দিকে তাকিয়ে হেসে দিলো। ঢং,,, দেখে আর বাঁচি না।
জোহান— অথৈ,, তোমাকে না বলেই তোমার বাসায় এসে পড়লাম। কিছু মনে করো নি তো,,,
হাসবো না কাদবো বুঝতে পারছি না। জোর করে একটু হাসলাম।
জোহান— আসলে তোমার নতুন মোবাইল নাম্বার টা নেই। তাই জানাতে পারি নি। আচ্ছা তোমার এখনের নাম্বার টা দিও।
আমার শাশুড়ি উঠে উপরে চলে গেলো। না জানি ওনি কি ভাবছেন, আহারে খালি অশান্তি। আমি আর বৃষ্টি সোফায় বসে জোহানের সাথে কথা বলছিলাম। হঠাৎ জোহান আমার হাতটা দেখালো।।
জোহান— অথৈ,, কি হয়েছে তোমার হাতে,?
অথৈ— কেটে গেছে…
জোহান— কিভাবে কাটলো??
উফফফফ,, কি আর বলবো,, তোর জন্যই হয়েছে। কালকে যদি তোর সাথে দেখা না হয়তো তাহলে আমার সাইকো আমার হাত ও কাটতো না,, আর নিজের হাতও কাটতো না।।
অথৈ— ঐ,, পা পিছলে, ভাঙ্গা কাচের টুকরোর উপর পড়ে গেছিলাম আর কি।
জোহান আমার দিকে ভ্রু কুচকে তাকালো।তারপর মাথাটা নিচে নামিয়ে হেসে দিলো।
জোহান— অথৈ,, এত কেয়ারলেস তুমি।।
আমার জোহানের সাথে কথা বলতে একদম ভালো লাগছে না। কোনো একটা বাহানায় এখান থেকে উঠতে চাচ্ছিলাম।
অথৈ— জোহান,, চা খাবে??
জোহান— চাআআআ,,,, হুম আনতে পারো।
আমি উঠে চা বানানোর জন্য যাচ্ছি। হঠাৎ পিছন থেকে বৃষ্টি আমায় ডাকলো।
বৃষ্টি— ভাবি তুমি বসে গল্প করো, আমি চা বানিয়ে আনছি।
হ,, আমি বসে গল্প করি,, আর মেঘ এসে দেখুক,, তারপর আরোও ঝামেলা করুক।
অথৈ— আরেহ্ না,, তুমি জোহানের সাথে গল্প করো। আমি চা বানিয়ে আনছি।
কথাটা বলে আমি আর দেরি করলাম না,, রান্না ঘরে চলে গেলাম। তারপর চা বানিয়ে নিয়ে আসলাম। বৃষ্টি আর জোহানের জন্য চা আনলাম। চা নিয়ে এসে যা দেখলাম তাতে আমার হাত পা কাঁপা শুরু করে দিছে।
মেঘঘঘ,,, বসে আছে সোফায়।।। আর আমার দিকে সেই ভয়ানক ভাবে তাকিয়ে আছে। মনে মনে আল্লাহ কে ডাকছি।
আমার হাত কাপা দেখে বৃষ্টি উঠে, মেঘ আর জোহান কে চা দিলো। জোহান চা খেলেও মেঘ খেলো না। আমি মেঘের থেকে একটু দূরে দাড়িয়ে আছি। মেঘ একটু পর পর আমার দিকে তাকাচ্ছে, আবার জোহানের দিকে তাকাচ্ছে।
মেঘ— তা, কি মনে করে আসলেন,, জোহান?
জোহান— এই রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলাম, হঠাৎ মনে পড়লো, অথৈ তো এই জায়গার কথাই বলেছিলো। তাই ভাবলাম একটু দেখা করে যাই। এখন থেকে কিন্তু আমি মাঝে মাঝেই আসবো।
মেঘ আমাকে একবার দেখলো।
মেঘ— হ্যা, অবশ্যই। মাঝে মাঝে কেনো? প্রতিদিনেই তো আসতে পারেন? এই রাস্তা দিয়েই তো মনে হয় প্রতিদিন যান।
দাঁতে দাঁত চেপে বললো মেঘ।
জোহান— আচ্ছা আজকে তাহলে উঠি,, অন্য কোনোদিন আসবো।
মেঘ— আচ্ছা।আরেক দিন অবশ্যই আসবেন। আসলে আমাদের ভালো লাগবে।। আমাদের জন্য না আসলেও অথৈয়ের জন্য আসবেন।
মেঘ আমার দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললো।
জোহান চলেই যাচ্ছিলো। হঠাৎ করে পিছনে ঘুরলো।
জোহান— অথৈ তোমার নাম্বার টা তো দিলে না।
মেঘ ভ্রু কুচকে তাকালো।
বৃষ্টি— আমি বলছি, লিখুন।।
আমি কিছু বলার আগেই বৃষ্টি বলে ফেললো। উফ বৃষ্টি, কি করলা এইটা। মেঘ বৃষ্টির দিকে এমন ভাবে তাকালো যেনো, বৃষ্টি কে এখনি মেরে ফেলবে। বৃষ্টির উপর যত রাগ সব আমার উপর এসে পড়বে।। জোহান চলে গেলো।
মেঘ জোহানকে বিদায় দিয়ে চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে একটা চুমুক দিলো।
মেঘ— চা টা তো ঠান্ডা হয়ে গেছে। যাও আরেক কাপ চা বানিয়ে নিয়ে আসো।
বাহ্, এখন নাকি চা খাবে।।যাই চা বানিয়ে নিয়ে যাই এখন।রান্না ঘরে গিয়ে চা বানিয়ে রুমে নিয়ে গেলাম। মেঘ ফ্রেশ হয়ে মাত্র ওয়াশরুম থেকে বেরুলো। আমাকে এক নজর দেখলো।
মেঘ— এক কাপ চা বানাতে এতো দেরি হয় কেনো??
আমার হাত থেকে চা টা নিলো। একটা চুমুক দিয়ে চা টা আমার গায়ে ছুড়ে মারলো।
অথৈ— এসবের মানে কি মেঘ????
রাগটা আর কন্ট্রোল করতে পারলাম না। একটু জোরেই বলে ফেললাম। মেঘ আমাকে দেয়ালের সাথে মিশিয়ে আমার হাত দেয়ালের সাথে চেপে ধরলো। হাতে অনেক ব্যাথা পাচ্ছি। কাটা হাতটাতে তো আরও বেশি। হয়তো ব্লিডিং ও হচ্ছে।
মেঘ— চুপপপপ,,,,একদম জোরে কথা বলবা না, আমার সাথে। আমিও তো জানতে চাই কি হচ্ছে এসব???
মেঘ কিসের কথা জানতে চাইছে? জোহানকে দেখে আবার সাইকো হয়ে গেছে।
অথৈ— মেঘ ছাড়ো,,, আমি ব্যাথা পাচ্ছি।। বলেই ওকে সরিয়ে দিলাম।
মেঘ আবার আমায় চেপে ধরলো।।
মেঘ— আমি ধরলেই ব্যাথা পাও।কই জোহান যখন কালকে হাত ধরছে,, তখন তো বলো নাই আমি ব্যাথা পাচ্ছি। ও বুঝতে পারছি, তুমি জোহানকে ভালবাসো তাই বলো না।।
নাহ্, আমাকেই মেঘকে বুঝাতে হবে। হাল ছাড়লে চলবে না।
অথৈ— মেঘ,,, তুমি এইগুলা কি বলেছো?? বিশ্বাস করো এমন কিছুই নেই। কেনো বলছো এইগুলো?
বলতে বলতে আমি কেঁদে দিলাম।। আমি হঠাৎ কেঁদে ফেলায় মেঘ নিজেও একটু অপ্রস্তুত হয়ে পড়েছে, সেটা ওর চোখ মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে।
কিন্তু আমাকে ছাড়লো না।
মেঘ— ঐ, একদম কাঁদবে না। কিছুই নেই না,, আমি যা ভাবছি এমন কিছুই নেই তাই তো।। এই তাহলে জোহানকে তোমার ফোন নাম্বার দিলা কেন???
ওহ,,,ফোন নাম্বার নিয়েছে বলে সাইকো সাহেবের জ্বলছে।। আমি তো নাম্বার দেই নাই, বৃষ্টি দিছে।।
বৃষ্টি বইন কি করলা এইটা,, তোমার জন্য এখন আমি বকা শুনছি।।এখন শাড়ি চেঞ্জ করতে হবে।এই সাইকোর সাথে কথা বলে লাভ নাই। আর এখন বললে আমাকে ছাড়বে না। কি করি??? বুদ্ধি পাইছি,,,,
পা দিয়ে জোরে মেঘের পায়ে লাথি দিলাম।
মেঘ— আহ্,,,
আমাকে ছেড়ে দিয়ে পায়ে হাত বুলাতে বুলাতে আমার দিকে তাকালো। আমার তো ভয় হচ্ছে,, আমি এইটা কি করলাম, শিউর মাইর আছে কপালে এখন ।।
অথৈ— স স,,,
মেঘ— তুমি আমাকে,,,,, তোমাকে তো আজকে….
বলতে বলতে আমার কাছে আসছিলো মেঘ।
বৃষ্টি— ভাইয়া আম্মু তোমাকে ডাকছে।
বৃষ্টি দরজার বাইরে থেকে বললো। বৃষ্টির চলে আসাতে আমি ও আজকে বেঁচে গেছি। বৃষ্টি বইন তোমাকে এত্তগুলা উম্মাহহহহ।।
মেঘ— আসছি।।
বৃষ্টি চলে গেলো। মেঘও চলে যাচ্ছিলো, হঠাৎ আমার নজর পড়লো টেবিলের উপর রাখা চায়ের কাপটাতে
অথৈ— একটু দাঁড়াও তো,,,
মেঘ দাড়িয়ে পড়লো। আমি দৌড়ে চায়ের কাপটা নিয়ে মেঘের কাছে গেলাম। তারপর মেঘের হাতে চায়ের কাপটা ধরিয়ে দিলাম। মেঘ ভ্রু কুচকে চায়ের কাপটা দেখলো, তারপর আমার দিকে জিজ্ঞাসু চোখে তাকালো,,,,
অথৈ— যাওয়ার সময় কাপটা নিচে রেখে এসো।।
মেঘ আমার দিকে এমন ভাবে তাকালো যেনো আমাকে খুন করে দিবে ।আমি আর এক সেকেন্ড ও দাড়ালাম না। যত তারাতারি মেঘের সামনে থেকে যেতে পারবো ততই মঙ্গল। তাই তারাতারি ওয়াশরুমে চলে গেলাম। শাড়িটা চেঞ্জ করতে হবে।
শাড়ি চেঞ্জ করে ওয়াশরুম থেকে বেরুলাম। কুচিগুলো ঠিক করতে করতে হাটছি হঠাৎ কার সাথে যেনো ধাক্কা খেলাম। মাথা উপরে তুলতেই দেখি মেঘ। অনেক বিরক্ত হয়ে জোরে একটা ধাক্কা দিলাম। মেঘ অনেকটাই পিছিয়ে গেলো।
অথৈ— এই ভাবে সামনে দাড়িয়ে থাকো কেনো?? চোখে দেখতে পাও না নাকি??
কথাগুলো বলে আবার কুচি ঠিক করায় মনোযোগ দিলাম। হায় হায় আমি আজকে কি করছি এইসব,,, আমি তো ধাক্কা মারলাম, লাথি দিলাম,, আর,,, ভয়ে ভয়ে সামনের দিকে তাকালাম,, মেঘ দাড়িয়ে দাড়িয়ে আমাকে দেখছে।।
চলবে,,,