#সাইকো_বর
#Writer_Tabassum_Tanjim
#Part _6
মেঘ আমার দিকে এমনভাবে তাকালো যেনো ও হাফ ছেড়ে বাচলো।বৃষ্টি এই অবস্থায় দেখলে আমি নিজেও অসস্থিতে পড়তাম।।
বৃষ্টি মেঘকে কফি দিয়ে আমার পাশে বসে গল্প করতে লাগলো। মেঘ কফি শেষ করে গোসলে গেলো।। জোহান কে আর বলা হলো না।।
বৃষ্টির সাথে গল্প করলেও আমার মাথায় এক চিন্তা ঘুরঘুর করছে,, মেঘ জোহানকে চিনলো কিভাবে?? আর জোহানের কথায় বা জিজ্ঞাস করলো কেনো? আর মেঘ কেনোই বা বৃষ্টিকে বললো ও যাকে ভালোবাসতো আমি সেই মেয়ে নই। তাহলে কি অন্য কেউ ছিলো, যাকে মেঘ আমার আগে ভালোবাসতো!! কিন্তু ও তো আমাকে সাত বছর ধরে বলছে যে ও আমাকে ভালোবাসে।।
“ভাবি,, এই ভাবি, কি ভাবছো তুমি?”
বৃষ্টির ডাকে আমি আমার চিন্তা জগৎ থেকে ফিরে আসলাম।।
অথৈ— হুম,, কিছু না,, আচ্ছা বৃষ্টি তুমি তখন কোন মেয়ের কথা বলছিলে, কাকে তোমার ভাইয়া ভালোবাসতো???
বৃষ্টিকে জিজ্ঞাস করেই ফেললাম, কারন আমার জানতে খুব ইচ্ছা করছে।
বৃষ্টি আমার দিকে অনেক্ষন আমাকে দেখলো।
বৃষ্টি— জানি না ভাবি, তবে ভাইয়া তাকে ভাইয়া অনেক ভালোবাসতো। তাকে বারবার প্রপোজ করার পরেও সে নাকি ভাইয়া কে ফিরিয়ে দিয়েছে। তাকে না পাওয়ার যন্ত্রণা ভূলে থাকতে ভাইয়া সব রকমের নেশায় ডুবে থাকতো। আর ওর মুখের হাসিটা চলে গেলো,, কান্না করতো সারাদিন। আমার ভাইটাকে অনেক কষ্ট দিয়েছে। আর ভাইয়ার এইসব কাজ কর্ম দেখে আমার মা বাবা কষ্ট পেতো, তারাও কান্না করতো,,।
আমি বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে ওর কথাগুলো শুনছি।।
বৃষ্টি—ভাইয়াকে বিয়ে দেয়ার অনেক চেষ্টা করেছে মা বাবা। কিন্তু ভাইয়া ঐ মেয়েটাকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করবে না, জানিয়ে দিলো। তারপর ভাইয়া আস্তে আস্তে বাবার ব্যবসা দেখাশুনা করতে লাগলো। হঠাৎ একদিন এসে বললো, সে বিয়ে করবে,,তোমার কথা বললো।
আমি বৃষ্টির চোখের দিকে তাকালাম, মনে হলো বৃষ্টি সেই মেয়েটাকে অনেক ঘৃণা করে,,
বৃষ্টি— আমার ভাইয়াকে যে কষ্ট দিয়েছে, তাকে আমি কোনো দিনও ক্ষমা করবো না, তার কপালে অনেক দুঃখ আছে,সে জীবনেও সুখী হতে পারবে না, তুমি দেখো ভাবি।।
এই মেয়েটা তো আমাকে অভিশাপ দিচ্ছে,,আমি নাকি জীবনেও সুখী হতে পারবো না, গাধীটা তো জানে না আমিই সেই মেয়ে।। এখন যদি বলি আমিই সেই মেয়ে, তাহলে হয়তো আমার কপালে অনেক দুঃখ আছে। আমি নিজের অজান্তেই সবাইকে কষ্ট দিয়েছি। অথচ ওরা অনেক ভালো,আমাকে অনেক ভালোবাসে।
কিন্তু মেঘ কি এখনো আমায় ভালোবাসে??
বৃষ্টি — ভাবি, আমি এবার যাই।
বৃষ্টি চলে গেলো।
এখন আমি বুঝতে পারলাম কেনো মেঘ বলে নি যে আমিই সেই মেয়ে। ওরা আমাকে খুব ঘৃণা করে।।
মেঘ কিন্তু অনেকক্ষণ হলো ওয়াশরুমে গেছে,, এখনো বের হয় নি। এতক্ষণ লাগে নাকি গোসল করতে,, আমি ওয়াশরুমের দরজায় টোকা দিলাম দুই তিনটা,
অথৈ— কি ব্যাপার,, এতক্ষণ লাগে নাকি গোসল করতে, কি করছো ওয়াশরুমে??
মেঘ ওয়াশরুমের দরজা খুলে এক টানে আমাকে ভিতরে নিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলো।
মেঘ— কি ব্যাপার,, আমাকে মিস করছিলে নাকি??
আমি কিছু বলতে যাচ্ছিলাম, কিন্তু মেঘকে দেখেই সব এলোমেলো হয়ে গেলো।। আমি ওকে দেখছি,, মেঘ কিন্তু অনেক সুন্দর, ওকে তো আমি সাত বছরে ভালোভাবে দেখিনি,, দেখলে তাহলে হয়তো ওর সাথে রিলেশনটা হয়েই যেত।
মেঘ— ঐ মেয়ে,, কি দেখছো এমন করে?? জীবনে কোনোদিন আমাকে দেখোনি নাকি??
মেঘ আমার চোখের সামনে তুড়ি মেরে বললো।।
এতক্ষনে খেয়াল করলাম আমি নিজে ভিজে গেছি।। ঠান্ডা লাগছে।।এই শীতের মধ্যে তাও আবার ঠান্ডা পানি,, আমি তো কাঁপতে লাগলাম।।
অথৈ— ছাড়ো,,, ঠান্ডা লাগছে।।
বলেই আমি বেরোনোর জন্য পা বাড়াতেই মেঘ আমাকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলো। ঝরণাটা আরো জোরে ছাড়লো,, পানি পড়ছে,,
অথৈ— কি হচ্ছে এটা,, আমার ঠান্ডা লাগছে, ছাড়ো।।
মেঘ আমার মুখের উপর পড়া ভিজে চুল গুলো সরিয়ে দিয়ে,, আমার ঠোটের উপর ওর ঠোট চেপে ধরলো। আমি বাধা দিলাম না।। হঠাৎ আমার ঠোটে কামড় মারলো,, আমি ওকে জোরে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলাম।।ইচ্ছে করছিলো,, দুই গালে দুই টা চড় মারি,, কিন্তু পারলাম না।। আমি যতই চায়ছি,, তাকে আপন করে নিতে, ততই সে কষ্ট দিচ্ছে। জানোয়ার,, কোন দেশের,,।
ও যদি আমার সাথে এরকম বিহেভ করতে থাকে তাহলে আমি এই সম্পর্কটার ইতি টানতে বাধ্য হবো।,,
আমি ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসলাম,, একেবারে ভিজে গেছি। চেঞ্জ করে নিলাম।। ভিজা চুলগুলো ভালো করে মুছে দিলাম।। ঠোটটা কেটে গেছে,, চেপে ধরে রাখলাম।।
আমি চাইছি,, আমাদের সম্পর্কটা টিকিয়ে রাখতে,, বিয়ে হয়ে গেছে যেহেতু,, তাই বিয়েটা টিকিয়ে রাখায় ভালো,,। কিন্তু ও তো প্রতিশোধের নেশায় ডুবে আছে। এভাবে কি সম্পর্ক টিকে থাকবে। কিন্তু আমি আমার সবরকম চেষ্টা করবো,, এই সাইকো কে ভালো করতে,, তার মনে আবার জায়গা করে নিতে।।
একটু পর চুল নাড়তে নাড়তে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসলো মেঘ। এসেই আমার মুখটা ওর দিকে ঘুরিয়ে নিলো,, তারপর কাটা ঠোট টাতে আঙ্গুল বুলাতে লাগলো,,
মেঘ— খুব ব্যাথা পেয়েছো, না?
খুব কান্না পাচ্ছে এখন,, প্রত্যেকবার কষ্ট দিয়ে আবার কষ্টে সমবেদনা জানাতে আসে,, তখন যে কি করতে ইচ্ছা হয়,, বুঝতে পারি না।। উফফ্ আমি আর এই সাইকোর সাথে থাকতে পারবো না।।
অথৈ— নাহ্,, এটা তো কোনো কষ্টই না,, তোমার মতো সাইকোর সাথে আমার সারা জীবন থাকতে হবে এটা ভাবলেই,,,,,
আর বলতে পারলাম না।। ও আমার একটা হাত পিছনে চেপে ধরলো,,
মেঘ— এই,, কি বললা তুমি?? হুম, আমি সাইকো??
দাতে দাত চেপে বললো মেঘ,
আমি আর কিছু বললাম না।।
মেঘ— কি হলো,, বলছো না কেনো??
অথৈ— তুমি এমন করো কেনো?? এই ভালো ব্যবহার করো,, আবার এই খারাপ ব্যবহার করো?? কেনো??
মেঘ হেসে দিলো,,
মেঘ— আমি তোমাকে কোনো দিন ও ক্ষমা করতে পারবো না,, তোমাকে দেখলেই আমার কষ্টের কথা মনে পড়ে যায়,, সবার সামনে তোমার ভাই আমাকে মেরেছিলো, শুধু তোমার জন্য,।
অথৈ— তাহলে তো কষ্ট দিলেই পারো। কষ্ট দিয়ে আবার কেনো যত্ন করতে আসো,,
মেঘ— তুমি অসুস্থ হয়ে গেলে তো আর কষ্ট দিতে পারবো না,, তাই যত্ন করে সুস্থ করে তুলি।
মেঘ কথাগুলো বলে আমাকে ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে দিলো।।
তারপর চেঞ্জ করে নিচে চলে গেলো।।
আর কফি হাতে নিয়ে একটু পর ফিরে এলো।।
এসেই ল্যাপটপ নিয়ে বসে পড়লো, আর আমি বিছানায় শুয়ে শুয়ে কাঁদতে লাগলাম। আমি কি এর সাথে সারা জীবন থাকতে পারবো???
মেঘ— অথৈ, অথৈ,, উঠো খেতে ডাকছে??
উফফ্ আর কতো নাটক দেখবো,, এই মাত্র কতকিছু বলে গেলো,,হাত মুচড়ে দিলো, আবার এখন খাওয়ার জন্য ডাকছে।। খাবো না আমি,,
অথৈ— আমি খাবো না।
মেঘ— ওকে,,
চলে গেলো, কি মানুষ, দ্বিতীয় বার খাওয়ার জন্য বললো না পর্যন্ত।। বলার দরকার ও নাই, আমি খাবো না।।
মেঘ খাওয়া দাওয়া করে রুমে এসেই শুয়ে পড়লো,, শুয়েই আমাকে জড়িয়ে ধরলো। আমি নিজেকে ছাড়িয়ে নিলাম। আবার জড়িয়ে ধরল,, এবার ধাক্কা দিয়ে ওকে দূরে সরিয়ে দিলাম তারপর সোফায় গিয়ে শুয়ে পড়লাম।
মেঘ উঠে গিয়ে আমাকে কোলে নিয়ে বিছানায় ছুড়ে ফেলে দিলো।
মেঘ— বিছানা থেকে উঠে গেলে কেনো???
অথৈ— তোমার যখন ইচ্ছা হবে তুমি আমার গায়ে হাত তুলবে, বকবে, আবার যখন ইচ্ছা হবে ভালোবাসবে। আমাকে কি তোমার হাতের পুতুল পেয়েছো??
মেঘ— হুম,, আমার যখন যা ইচ্ছা হবে আমি তখন তাই করতে পারবো তোমার সাথে।। আমার অধীকার আছে তোমার উপর, তোমার এই শরীরের উপর।
মেঘ বিছানায় শুয়ে পড়লো। কিন্তু এবার ও অন্য দিকে মুখ করে শুয়ে পড়লো।।
আর আমি শুয়ে শুয়ে কাঁদতে লাগলাম।।
চলবে,,,
(ভূল হলে মাফ করে দিবেন)