#সাইকো_বর
#writer_Tabassum_Tajnim
#part 9
এইটা তো মেঘের কন্ঠস্বর না। তাহলে কে?? হয়তো বা পরিচিত কেউ,, কিন্তু আমি তো আর মিস নাই। এই কথাটা যেনেও মিস ডাকলো। দাড়া দেখাচ্ছি মজা।। আমি পিছনে ঘুরলাম। পিছনে ঘুরে আমার চোখ তিন চার গুন বড়ো বড়ো হয়ে গেলো
জোহান!!!!
ব্লু টি শার্ট আর জিন্স পড়া জোহান দাড়িয়ে আছে। জোহানকে দেখে আমি তো অবাক। জোহান হাসছে।।ওর হাসিটাও অনেক সুন্দর।কতদিন পর ওর সাথে দেখা। তবে মাঝে মাঝে ফেসবুকে কথা হতো। জোহান আমার দিকে এগিয়ে আসলো।
জোহান— কি ম্যাডাম, দেখেও চলে যাচ্ছেন।
অথৈ— আরে না,, আমি তোমাকে দেখি নি।দেখলে তোমার সাথে কথা না বলে যেতাম নাকি।।
জোহান হেসে দিলো।
জোহান— হুম। আমি জানি। তো কেমন আছো??
অথৈ— ভালো। তুমি?
জোহান– হুম ভালো।। তো মার্কেট করতে আসা হয়েছিলো বুঝি।।
অথৈ— হুম।
জোহান— আচ্ছা চলো তো,, আমি ও একটা শাড়ি কিনবো। কিন্তু পছন্দ হচ্ছে না। তুমি পছন্দ করে দাও প্লিজ।
জোহান কথাগুলো বলেই আমার হাত ধরে দোকানে ঢুকলো। আমি আমার হাত ছাড়াবার চেষ্টা করছি। আর এদিক ওদিক তাকাচ্ছি। মেঘ যদি দেখে তাহলে অনেক জামেলা করবে।সোজাসুজি বলতেও পারছি না হাত ছাড়তে।
দোকানে ঢুকে জোহান আমার হাতটা ছেড়ে দিলো। তারপর তিনটা শাড়ি হাতে নিয়ে আমার সামনে ধরলো।
জোহান— বলো এই তিনটা থেকে কোনটা নিবো?
তিনটা শাড়িই সুন্দর তারপর ও একটা নিলাম।
অথৈ— এটা নিতে পারো।। ভাবিকে ভালো মানাবে।
আমার কথা শুনে জোহান হেসে দিলো। আমি আবার হাসির কি বললাম।।
জোহান— তুমি এখনো খুব ভালো মজা করো। ভাবি…
বলতে বলতে জোহান আবার হেসে দিলো।
অথৈ— হাসছো কেনো?? তাহলে কার জন্যে শাড়ি কিনতে আসছো?
জোহান— আমি আমার বড়ো বোনের জন্য শাড়ি কিনতে আসছি। আর তুমি কি না,,,
অথৈ— সরি, বুঝতে পারি নাই। তো ভাবি,,,
জোহান— আমি তো বিয়েই করি নাই। ভাবি আসবে কোথা থেকে।
ওহ্ এই জন্যেই হাসছে। আমিও হেসে দিলাম। হাসতে দুজন দোকান থেকে বেরিয়ে আসলাম। বাইরে এসে আমার হাসি মিলিয়ে গেলো। মেঘ দাড়িয়ে আছে। তার চোখে অনেক রাগ দেখতে পাচ্ছি। বুঝতেই পারছি, আমার সাথে জোহানকে দেখে, ওর এই রাগ।
মেঘ— কখন থেকে খুজছি তোমাকে
আর তুমি কিনা,,,,
দাঁতে চেপে দাঁত চেপে বললো।
জোহান একবার আমার দিকে আর একবার মেঘের দিকে তাকাচ্ছে।
জোহান— অথৈ,,, কে ওনি??
আমি জোহানের দিকে তাকালাম একবার। তারপর আবার মেঘের দিকে।
অথৈ— আমার স্বামী।
জোহান আমার দিকে হা করে তাকিয়ে থাকলো
জোহান— ঐ,, তুমি কবে বিয়ে করলে?? আমাকে তো বলো নি?
অথৈ— এই তো কিছু দিন।
জোহান মেঘের দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো।
জোহান— হাই,, আমি জোহান,, অথৈয়ের ফ্রেন্ড।
জোহান আমার দিকে তাকিয়ে হেসে বললো।
মেঘ একবার আমার দিকে তাকিয়ে আবার জোহানের দিকে তাকালো, তারপর হাত মিলালো।
মেঘ— চলো, এবার যাওয়া যাক।
আমার দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে। আমিও মেঘের পিছুপিছু হাটতে শুরু করলাম।হঠাৎ পিছন থেকে কেউ আমার হাত ধরলো। আমি তো ভয়ে শেষ। মেঘ পিছনে ঘুরে আরও রেগে গেলো। কিন্তু কিছু বললো না। আমি পিছনে ঘুরে দেখি জোহান আমার হাত ধরে রেখেছে।
জোহান— কি ম্যাডাম। আপনার শপিং ব্যাগটা তো নিলেন না।।
উফফ্, ভয়ের জন্যে তো মনেই ছিলো না। আমার ব্যাগটা জোহানের বোনের শাড়ি কিনার সময় ওর হাতে দিয়েছিলাম। আমি ওর হাত থেকে ব্যাগটা নিয়ে আবার পিছনে ঘুরবো, তখন আবার হাত ধরলো। আমি মেঘের দিকে তাকালাম। মেঘ তো রেগেমেগে আগুন হয়ে যাচ্ছে। আমি আবার ভয়ে ভয়ে পিছনে ঘুরলাম।
জোহান— ঐ, তুমি কেমন গো,৷ বাসার ঠিকানা না দিয়েই চলে যাচ্ছো।।মাঝে মাঝে তো যেতে পারবো।
আমি একবার মেঘের দিকে তাকালাম। তারপর বাসার ঠিকানাটা দিলাম। মুখের উপর না করতে পারলাম না। জোহানের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসলাম।
মেঘ গাড়ি ড্রাইভ করছে। কিন্তু সেটা অনেক জোরে।। আসার সময় এত স্পিড ছিলো না। এখন রাগে এতো স্পিডে চালাচ্ছে।। আমি তো ভয়ে একে বারে কাঁদো কাঁদো ভাব।
বাসার সামনে গাড়ি থামালো। আমি গাড়ি থেকে নামতেই আমার হাত ধরে টেনে টেনে রুমে নিয়েযাচ্ছে। এই নরমাল বিষয় টা নিয়ে মেঘ এখন অনেক রিয়েক্ট করবে। আমি বুঝতে পারছি।। কিন্তু কিছুই করার নেই আমার।
রুমে নিয়ে মেঘ আমাকে ফেলে দিলো। আমি ফ্লোরে ছিটকে পড়লাম। অনেক ব্যাথা পেয়েছি।
মেঘ— জোহান!!! এই জোহানের সাথে দেখা করার জন্যই কি তুমি মার্কেট করতে গিয়েছিলে।।।
আমাকে ফ্লোর থেকে টেনে তুলে বলল মেঘ।
অথৈ— কি বলছো, তুমি এই গুলো। ওর সাথে তো আমার মার্কেটে হঠাৎ করে দেখা হয়ে গেছে।
মেঘ— থাক আমাকে আর বুঝাতে হবে। যা দেখার আমি দেখে নিয়েছি।
অথৈ— কি দেখেছো তুমি??
মেঘ— বলো, কতদিন ধরে চলছে এসব? বিয়ের আগে থেকেই ছিলো, নাকি বিয়ের পর থেকে???
কি বলছে এইগুলো মেঘ।।
অথৈ— মানে কি,,,, তুমি যা ভাবছো সে রকম কিছুই না,,,
কথাগুলো বলতে বলতে আমি মেঘের হাত ধরলাম।মেঘ ওর হাতটা সরিয়ে নিলো।
মেঘ— আচ্ছা,, তাই নাকি।। তাহলে ও কেনো তোমার হাত ধরলো? কেনো তোমাকে টেনে নিয়ে দোকানে ঢুকলো? কেনো তুমি ওর সাথে হেসে হেসে কথা বলছিলে?
অথৈ— মেঘ, ও আমার বন্ধু। আমরা একে অপরকে অনেক দিন ধরে চিনি। আমি বুঝতে পারছি না, এই সাধারন বিষয়গুলো নিয়ে তুমি এমন রিয়েক্ট কেনো করছো???
মেঘ— ওহ্ আচ্ছা,, সাধারণ বিষয় এইগুলো। তাহলে আমি যখন জিজ্ঞাস করেছিলাম জোহান কে তখন কেনো বলো নি???
অথৈ— তখন বলার সুযোগ হয় নি।
মেঘ আমার দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকালো। ওর তাকানো দেখেই আমার গলা শুকিয়ে গেলো।
মেঘ— আমি এতো কিছু জানি না,, আর কিছু শুনতেও চাই না। আমি তোমাকে বলেছিলাম, তোমাকে টাচ করার শুধু আমার,, আর যদি অন্য কেউ টাচ করে তাহলে,,,
তাহলে,, কি করবে এখন মেঘ,,।। বুঝতে পারছি না। হঠাৎ মেঘ একটা গ্লাস ফ্লোরে ফেলে দিলো। গ্লাসটা ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে গেলো।
অথৈ— কি করছো??.. তুমি
মেঘ কিছু বললো না,, ফ্লোর থেকে একটা কাচের টুকরো তুলে নিলো।
মেঘ আমার দিকে এগিয়ে আসছে,, কি করবে কিছুই বুঝতে পারছি না। আমি এক জায়গায় দাড়িয়ে আছি।
মেঘ— আমি না করা সত্ত্বেও জোহান তোমার হাত ধরে কি করে??
আমি কিছুই বলছি না, কারণ এখন মেঘকে কিছু বললে শুনবে না।
মেঘ— বলো,,,
জোরে ধমক দিয়ে বললো,,। মেঘ আমার হাতটা ধরলো,,
মেঘ— সেদিনের টা ভূলে গেছো না,,, আবার মনে করাতে হবে,,,
মেঘ আমার হাতে কাঁচের টুকরো টা দিয়ে একটা জোরে টান দিলো,,। আমি আর চুপ থাকতে পারলাম না। চিৎকার করে উঠলাম, হাতটা টান দিয়ে ছাড়াতে চাইলাম, কিন্তু পারলাম না, মেঘ অনেক শক্ত করে ধরে আছে।
মেঘ— এখন কেনো হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছো।
আরও দুই বার হাত টা কাটলো। চারবার যখন কাচের টুকরো টা লাগাবে তখন হাতটা ছাড়াতে সক্ষম হলাম। হাতটা চেপে ধরলাম, অনেক ব্লিডিং হচ্ছে।
অথৈ— মেঘ, তুমি পুরো পাগল হয়ে গেছো।
কথাটা শেষ করতে পারলাম না, মেঘ আমাকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলো। আমার গলায় কাছের টুকরোটা হালকা চেপে ধরলো।
মেঘ— এখন হাত কেটেছি। পরেরবার এই ভুল করলে,, গলা কেটে দিবো।
আমি কিছুই বলতে পারছি না,, চোখ দিয়ে গড়িয়ে পানি পড়ছে।
মেঘ আমাকে ছেড়ে দিলো। কাচের টুকরো হাতে রেখেই ও মুঠো বন্ধ করলো। কাচের টুকরো টা হাতের মুঠোর মধ্যেই ভেঙে গেলো।
চলবে,,,
( ভূল হলে মাফ করে দিবেন)