পর্ব-৩
#সাদা_ফুল
#ফারিয়া_আক্তার_নূপূর
৪.
স্কুল থেকে ফিরার পর থেকেই শুভ্রতা আর শুভ মায়ের পিছু পিছু ঘুরছে শাড়ি এবং পান্জাবি কিনে দেওয়ার জন্য। আগামীকাল মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে স্কুলে খুব বড় করে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে । ইউনিয়ন পরিষদ থেকেও মানুষ আসবে যার কারনে ড্রেস কোড হিসেবে মেয়েদের লাল শাড়ি এবং ছেলেদের সবুজ পান্জাবি নির্ধারণ করা হয়েছে। বেলা গড়িয়ে এখন সন্ধ্যা, শুহানা বেগম বেশ কয়েকবার ধমক দিয়ে মানা করেছেন তার ভাষ্যমতে এসবে টাকা খরচ করা মানে অপচয় যাওয়ার হলে স্কুল ড্রেস পরে যাও নইলে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। শুভ্রতা মায়ের মানা করার পরে আর কিছু না বললেও শুভ এখনো বায়না করছে।বিরক্ত হয়ে শুহানা বেগম বেশ রাগান্বিত কন্ঠে বললেন,
‘দুপুর থেকে শুরু করছোস! টাকা কি গাছে ধরে কইলেই পাইরা দিবো।’
‘পান্জাবি না কিনে দিলে আমি যামু না স্কুলে খামুও না’।
‘না গেলে না যাবি। নবাবের বংশ আইছে পান্জাবি না দিলে খাইবো না’।
শুভ রাগ দেখিয়ে নিজের ঘরের দরজা সজোরে শব্দ করে লাগিয়ে শুয়ে পরে। সেদিকে একবার তাকিয়ে জাহানারা বেগম বলেন,
‘এতবার কইরা কইতাছে শুহানা,কিইনা দাও। হুদাই বকতাছো।’
‘ আম্মা সামনের মাসে আপনারে ডাক্তারের কাছে নিতে হইবো তার জন্যও তো টাকা হাতে রাখার দরকার। এসব কাজ ছাড়া জিনিসে টাকা খরচ কইরা কি লাভ আছে বলেন’।
জাহানারা বেগম আর কিছু বললেন না ডায়াবেটিস হওয়ার কারনে প্রতি মাসেই ওষুধের খরচ লাগে। শুভ্রতা পড়ার টেবিল থেকে উঠে এসে মায়ের দুহাত ধরে বলে,
‘আম্মা আমার শাড়ী লাগবে না তুমি ওরে কিনে দাও। ক্লাস ক্যাপ্টেন ও,না গেলে স্যাররা বকবে।’
শুহানা বেগম মেয়ের দিকে তাকিয়ে কিছু বললেন না। তার ভিতরও কষ্ট হচ্ছে ছেলেমেয়েকে এভাবে বকে। সংসারে শুভ্রতার বাবাই একমাত্র আয়ের উৎস। বাজারে কসাই হিসেবেই পরিচিত উনি। একজন মানুষের টাকা দিয়েই সংসার খরচ ওষুধপত্র বাচ্চাদের পড়ালেখার খরচ সব চলে। তারওপর বর্তমানে জিনিসপত্রের যা দাম।
–
ফজরের নামাজের জন্য পরিবারের সবাইকে ঘুম থেকে উঠার জন্য ডাক দেন রহমান মিয়া। শুভ্রতা ঘুম থেকে উঠতেই চোখ যায় বিছানার পাশে থাকা প্যাকেটের দিকে। মূহুর্তেই মুখে হাসির রেখা ফুটে উঠে বুঝতে আর বাকি থাকে না প্যাকেটের ভিতর জিনিসটা কি। প্যাকেটা নিয়েই দৌড়ে চলে আসে বারান্দায় বাবার কাছে ততক্ষণে শুভও চলে আসে হাতে তারও একটি প্যাকেট । ছেলেমেয়েকে দেখে মগ থেকে পানি নিয়ে মুখে দিয়ে রহমান মিয়া বলেন,
‘কাল রাইতে না খাইয়া ঘুমাইছো ক্যা তোমরা?’
শুভ্রতা বাবাকে জড়িয়ে ধরে বলে,
‘আমার আব্বা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বাবা’।
শুভও একিসাথে বলে উঠে
‘আমার বাবাও’।
‘তোর আর আমার বাবা তো একই হাধারাম’
শুভ হিহিহি করে হেসে উঠে। ছেলেমেয়েকে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু খান রহমান সাহেব দরজা থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে সব কিছুই দেখলেন শুহানা বেগম। রাতে উনিই কল করে শাড়ি পান্জাবি আনতে বলেছিলেন স্বামীকে। রহমান সাহেব শুভকে নিয়ে মসজিদে চলে যায় নামাযের জন্য নামায শেষে গরু জবাই দিয়ে তা আবার বাজারে নিবেন। যাওয়ার আগে শুহানা বেগমকে বলেন,
‘পোলা মাইয়া যাতে কহনো অভাব না বুঝতে পারে তা তোমারে আগেও কইছি শুহানা। ওগো রে এমনে আর বকবা না’।
–
কাল অনেকটা রাত করেই বাড়ি ফিরে তীব্র ।অবশ্য বিকেলেই ঢাকা থেকে গ্রামে এসেছে। প্রতিবছরই গ্রামের স্কুলে বেশ বড় করে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় যার সুবাদে স্কুলের প্রাত্তন ছাত্রদের মধ্যে তীব্রেরও আসতে হয়। সেজন্যই বিকেলে এসে বাড়িতে ক্যামেলিয়াকে রেখে আবার এসে স্কুলের মাঠ শহীদ মিনার সাজানোর কাজে লেগে পরে।
–
সকাল ৬টা। শুভ্রতাকে জাহানারা বেগম গ্রামীনভাবে শাড়ী পরিয়ে দিয়েছেন আর দুটো বেনুনি করে দিয়েছেন। লায়লা শুভও তৈরী হয়ে এসেছে । প্রভাতফেরি ৭টা বাজে শুরু হবে।শাড়ীর সাথে লাল চুড়ি পরে নেয় শুভ্রতা আর একটু হাল্কা লাল লিপস্টিক। ড্রয়ারে রাখা একজোড়া নূপুর নিয়ে বারান্দায় বসে পরতে থাকে। শুহানা বেগম রান্না ঘর থেকে বলেন,
‘নূপুরের ঘুঙুর গুলা খুলে রাখ নয়তো আওয়াজ হবে’।
মায়ের দিকে তাকিয়ে একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে শুভ্রতা বলে,’ আচ্ছা আম্মা’। শুহানা বেগম মেয়ের দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। ঈষৎ হলদে গায়ের রঙে লাল রঙটা যেনো ফুটে উঠেছে। বয়স যেন একটু বেড়ে গেছে শাড়ী পরাতে। কিশোরী থেকে যুবতী এক রূপ ফুটে ওঠেছে, রহমান মিয়ার উঠানে বিচরণ চলছে আজ
লাল টুকটুকে পুতুলের।
চলবে…
[শুভ্রতাকে সবাই কল্পনা করে দেখুন আজ হিহি। নিশ্চয়ই পুতুলের মতো লাগছে। হ্যাপি রিডিং ]