সাবিহার বিয়ে পর্ব ৭+৮

সাবিহার বিয়ে”
পর্ব -৭-৮
সাবিহা

পর্ব -৭

সাবিহা দুপুরে ওর বান্ধবীর বাসায় গেল। বেল চাপতেই ওর বান্ধবীর মা খুলল – আরে আমাদের ডা. সাহেব যে।।। কি খবর মা কেমন আছ? এই বলে তিনি ওর পিছনে তাকালেন, বলল-জামাই কোথায়?? বলল-আন্টি উনি নেই আমি একা আসছি। -আচ্ছা মা ভিতরে আস। ও তো গোসলে তুমি বস। বসতে বসতে বলল-তোমার চেহারার একি অবস্থা? বিয়ের পর মেয়েরা আরও রূপসী হয়, তোমার গাল ভেঙে গেছে পুরো। -আসলে আন্টি, হসপিটালে অনেক প্রেশার যাচ্ছে। নিজের দিকে খেয়াল দেবার সুযোগ হচ্ছে না। -না মা তা বললে তো হয় না মা, মেয়েদের সব দিকে খেয়াল রাখতে হয়। পরে যখন বাচ্চাকাচ্চা হবে তখন কি হবে??? ও মনে মনে হেসে দিল ভাবল আর বাচ্চা!!! যে বাচ্চার বাবা হবে তারই তো ঠিক নেই। ভাবল যে ওর বান্ধবী আসুক তারপর একসাথে আন্টিকে জানাবে। ও বলল-আন্টি আমি মুমুর রুমে যাই খুব ক্লান্ত লাগছে। -আচ্ছা মা যাও। আমি বরং খাবার নিয়ে আসছি। ও রুমে ঢুকতে ঢুকতে মুমু বের হয়ে এল, ওকে দেখে সাবিহার কি হল নিজেও জানে না। হুঁ হুঁ করে জড়িয়ে ধরে কাদঁতে শুরু করল।আন্টি কিছু একটা টটের পেয়ে রুমে চলে আসল। মুমু আর ওর মা ওকে যতই সান্ত্বনা দিচ্ছে ওর কান্নার পরিমান আরও বাড়তে থাকল। পরে কিছু সময় পর ও যখন স্বভাবিক হয়ে এল তখন সব কিছু প্রথম হতে বলতে শুরু করল। মেহবুব কি রকম বিহেব করত,কেন এতদিন একসাথে ছিল, কাল কি কি হল,আজ সকালে কি হল সব। ওর কথা শুনতে শুনতে মুমু আর মুমুর মায়েরও চোখ ভিজে আসছিল। এক সময় তারাও এই বিয়ের পরিনতির কথা শুনতে শুনতে নিঃচুপ হয়ে গিয়েছিল। পরে আন্টি বলল-তুই একদম ঠিক কাজ করেছিস মা। অনেক সাহস দেখিয়েছিস। মুমু বলল-তুই আর ফিরে যাবি না ওই লোকটার কাছে। বিয়ের দিনই আমি ভাবছিলাম লোকটা একটা খাটাস। অন্য সময় হলে মুমুর এই কথায় ও হেসে দিত কিন্তু আজ সত্যি মনে হল মেহবুব আসলেই ওর সাথে অনেক অন্যায় করেছে। ও মনে মনে ভাবছিল যে আসলেই উনার একটা তিক্ত অতীত আছে আর তাই বলেই তিনি কোন মেয়েকে সহ্য করতে পারেন না, ববিয়ে করেছে ফ্যামিলির চাপে পড়ে। কিন্তু তাই বলে এত খারাপ আচারন!!!! যা তা বলে, যা মুখে আসে। সে কতটুকুই বা ওকে চিনে??? এক ফোঁটাও না। আর যেভাবে ওকে বিছানায় নেবার কথা বলছিল তার পর তো ওর মনে তার প্রতি প্রচণ্ড ঘৃনা জন্মেছে। আন্টি বলল-এমনিতেই ছেলেটার বয়স একটু বেশি, তোমার থেকে ওর ম্যাচিওরিটি আছে। ওর উচিৎ ছিল তোমার প্রতি ওর সহানুভূতি দেখানো। সংসার কি মুখের জিনিস!!? সাবিহা ভাবল-সহানুভূতি!!!!বিছানায় যেভাবে ছুড়ে মেরেছিল তাতেই ঐ লোকের সহানুভূতি প্রকাশ পেয়ে গেছি আমি। -আচ্ছা মা, তুমি শোও। আমি বিকালে তোমার মা বাবার সাথে কথা বলব। কি বিশ্রাম নিবে ও?শান্তিতে কবে ঘুমিয়েছে নিজেই জানে না। গত একটা মাস হয় সোফায় নাইলে রাতে ডিউটিতে চেয়ারে। সারাদিন কাজ শেষে যখন মাথাটা এলিয়ে দিত টেবিলে ভাবত এই জীবন কি চেয়েছিলাম!!? তবুও শুধুমাত্র মা বাবার কথা মনে করেই রাত পার করত। যদি ওর ডিউটি নাও থাকত তাও ওভার টাইম করত যাতে ও বাড়িতে যতটা সম্ভব কম সময় কাটানো যায়। তাও ভাবত যাক ওর মা বাবা তো ভাল আছে ও শান্তিতে আছে এই ভেবে। কিন্তু আজকেই তো তাদেরও বলতে হবে সব। কিভাবে তাদের মনমরা মুখ দেখবে!!? এই ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে গেল একসময়। ……. ওদিকে সাবিহা বাসা থেকে বের হয়ে আসার পর ওর জা আর ননদ মেহবুবের রুমে গেল। -ও কোথায় গেল মেহবুব? কিছুক্ষন আগে না ফিরল? -চলে গেছে, আমি বের করে দিয়েছি। -বাহ্ এই তো তুমি চাইতা, না?এখন খুশি খুব ও মেয়েটার লাইফ নষ্ট করে? -আমি কারও লাইফ নষ্ট করি নি। ও একটা ফালতু মেয়ে। বেহায়ার মত এখানে পরে ছিল। কতবার যেতে বলেছি কেন যায় নি? আর তুমি এর মধ্যে পরো না ভাবি,আমি কোন মেয়েকে কোনদিন মানব না আমার লাইফে। ভাবি আগে থেকেই ধারনা করেছিল যে মেহবুব সাবিহার উপর ওর নালিশের শোধ নিবে কিন্তু তাই বলে এভাবে বাসা থেকে বের করে দেবে!!? ও আর দেরি না করে ওর শাশুড়ির রুমে গেল তাদের সব বলল।মেহবুবের ভাইকেও ফোন দিল বাসায় আসার জন্য। ওর শাশুর শাশুড়ি তো রাগে অস্থির। তারা মেহবুবকে অনেক বকাঝকা করল শেষে ওর শাশুড়ি বলল-তুই আমার ছোট বউকে যেখান থেকে পারিস নিয়ে আয়, তুই আমার দিকে তাকিয়ে ওকে নিয়ে আয়। -তোমাদের দিকে তাকিয়ে ওকে বিয়ে করেছি কিন্তু ওকে আমি মেনে নিতে পারব না। ওর বাবা তখন বলল-অন্যের মেয়েকে তুমি রাস্তায় ফেলেছো এখন সাবিহার বাবার যে অপমান আমাকে সহ্য করতে হবে তা আমি কেন মেনে নিব??? তুমি বাসা দিয়ে বের হও। এই কথাটা মেহবুবের খুব লাগল। ওর সস্মান আজ ওই ফালতু মেয়ের জন্য খারাপ হল! ও তখন রাগে বাসা থেকে গাড়ি নিয়ে বের হয়ে এল। পাগলের মত গাড়ি চালাচ্ছে আর মদ খাচ্ছিল। সামনে কি আছে না আছে দেখছেই না, শুধু মাথার মধ্যে সাবিহার রাগ কিরবির করছে।
.
পর্ব -৮

মেহবুব গাড়ি চালাচ্ছে আর হর্ন দিয়ে
যাচচ্ছে। সামনে কে আছে না আছে
তা খেয়ালই নেই। মাথায় কোন হুশই ছিল
না একে তো সাবিহার উপর রাগ আরও সে
ড্রিংকস করছে।এরই মধ্যে ওর বড় ভাই
ফোন দিল।
-হ্যা ভাইয়া বল।
-তুই কোথায়? আর তোর গলা এমন
শুনাচ্ছে কেন?আমি বাসায় আসছি, তুই
তারাতারি আয় তো। আর হ্যা সাবিহাকে
যেখান থেকে পারিস নিয়ে আয়।
-সাবিহা আর সাবিহা। তোমরা কি পাইছ ওর
মাঝে???
– কি পাইছি তা তুই পরে বুঝবি। তুই ওকে
ফোন দে আর বাসায় নিয়ে আয়। আর
তুই ড্রিংকস করছিস না??
খবর দার গাড়ি চলাস না তাহলে -এই বলতে
না বলতেই ও পাশ হতে জোরে
আওয়াজ হল।
-হ্যালো মেহবুব, তুই ঠিক আছিস তো?
হ্যালো।
ওদিকে ভাইয়ের সাথে কথা বলতে
বলতেই মেহবুবের গাড়ি একটা কাভার্ড
ভ্যানের সাথে ধাক্কা খায়। সিট বেল্ট বাধাঁ
না থাকায় স্টিয়ারিং হুইলে খুব জোড়ে ওর
মাথা আছড়ে পড়ে।মূহুর্তের মধ্যে মাথা
থেকে গল গল করে রক্ত বের হতে
থাকে। মেহবুব যখন অজ্ঞান হবে
হবে দেখে এক পুলিশ কনস্টেবল
আর কিছু লোক ওর গাড়ির কাচেঁ ধাক্কা
দিচ্ছে। এর পরে আর কিছুই দেখে নি।
ও জ্ঞান হারায়।
মেহবুবের যখন জ্ঞান যায় তখন, ওর
ফোনটা চালুই থাকে। বাইরের লোকজন
গাড়ির কাঁচ ভেঙে ওকে বের করে
করে আর ফোন ধরে ওর ভাইকে
আসতে বেলে।ভাল য অ্যাকসিডেন্ট
এর জায়গাটা ওদের বাসা হতে দূরে না। ওর
ভাই ফোনে সেই কনস্টেবলকে
হসপিটালের অ্যাড্রেস দিয়ে ওখানে
নিয়ে যেতে বলে। হসপিটালে যখন
বাসার সবাই পৌছাল দেখল ওকে ওটিতে
নিয়ে গেছে। ওর মা মেহবুব মেহবুব
বলে কান্না কাটি করছে।ওর বাবা ওর সাথে
খারাপ আচারনের জন্য আপসোস
করছে বার বার। ওর ভাবি তাদের সান্তনা
দিতে গিয়েও পারছে না।
ওদিকে সাবিহা বেঘোরে ঘুমুচ্ছে,
এরই মধ্যে ওর ফোনটা বেজে উঠল
দেখে হসপিটালের ইমারজেন্সি হতে
ফোন। বলল-তাড়াতারি ওকে যেতে
হবে। ওদিকে মুমু ওকে যেতে দিতে
নারাজ।আন্টি বলল-মা তোর মন আর
শরীরের যে অবস্থা, কাজ দিয়ে
কয়দিন ছুটি নে। বলল-না আন্টি, কাজ
আছে দেখেই তো সব কস্ট গুলো
ভুলে থাকতে পারি, নিজের পায়ে নিজে
দঁাড়িয়ে আছি নইলে তো ত
মেহবুবের পায়ের নিচেই থাকতে হত।
নিজের সার্পোট নিজে করতে পারছি।
আন্টি বুজতে পারল, বলল-ঠিক আছে মা,
তুমি রাতে তারাতারি ফির। আমি তাহলে
তোমার মা বাবার সাথে তখন কথা বলব।
যখন মেহবুবের জ্ঞান ফিরল দেখে
হসপিটালের সাদা বিছানায় শোয়া। মাথাটা
প্রচণ্ড ব্যাথায় দগ দগ করছে, চোখও
খুলতে পারছে না।চোখ আধবোজা
অবস্থায় কোনরকম চারপাশটা দেখল।
ওর জ্ঞান ফিরছে দেখে নার্স ডা কে
খবর দিল। ডা এসে ওকে আবার ঘুমের
ঔষধ দিল।
নার্স যখন ওকে ঘুমের ইঞ্জেকশন
দিচ্ছিল ও তখন ডা. এর দিকে হা করে
তাকিয়ে ছিল। কারন সে ডা অন্য কেউ না
-সাবিহা!!!

চলবে,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here