সুঁই সুতোর আসক্তি পর্ব -১৭+১৮

#সুঁই_সুতোর_আসক্তি
#পর্বঃ১৭
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি

কলেজের গেটের কাছাকাছি যখন কায়াসা পৌঁছে যায় তখন কোইন্সিডেন্টাললি আদ্রিকও তখনই কলেজে এসে পৌঁছায়।কায়াসা সাইড হয়ে আদ্রিককে ভিতরে যাওয়ার জায়গা করে দেয়।

” না তুমি আগে যাও,সমস্যা নেই।”

” কিন্তু আপনি আমার স্যার।”

” সমস্যা নেই যাও।”

কায়াসাও আর কোন কথা না বলে ভিতরে ঢুকে পড়ে।কায়াসার পেছন পেছন আদ্রিকও ঢুকে।

” তুমি কি সবসময় এই সময়ে আসো নাকি?”

” না,আমার আসার কোন নিদিষ্ট সময় নেই।কোনদিন তাড়াতাড়ি আসি তো কোনদিন ধরে করে।”

” ও আচ্ছা।তুমি তো ফ্রেসার তাই না?”

” হুম,ফার্স্ট ইয়ার।”

” আচ্ছা।আচ্ছা মিস ইডিয়টে তোমার সেই প্রেমিক কি তোমার ক্লাসে কেউ?”

কায়াসা আদ্রিকের কথা শুনে বুঝতে পারে সে আসলে এশানের কথা বলছে।

” না সে আমার ক্লাসে না।আর থাকবেই বা কোথা থেকে এরকম তো কেউ নেই।”

” তাহলে ওই মেসেজ?”

” ওটা হয়তো কেউ আপনার সাথে প্রেঙ্ক করেছে।”

” আচ্ছা ঠিক আছে তুমি তোমার ক্লাসে যাও।”

” ওকে স্যার।”

ক্যাম্পাসের মাঝে এসে আদ্রিক আর কায়াসা দুজন দুইদিকে চলে যায়।

করিডোর পার করে কায়াসা যখন সিঁড়ি দিয়ে উঠবে তখন কেউ তার সামনে এসে দাঁড়ায়।কায়াসা সাইড করে চলে যেতে চাইলেও মানুষটা আবারো তার পথ আটকে দাঁড়া।কায়াসা বিরক্ত নিয়ে মাথা তুলে দেখে জেমি তার দিকে তাকিয়ে আছে।

” কি?নতুন স্যারের সাথে এতো কি?আজই তো উনি এলেন।”

” সেটা আপনি জেনে কি করবেন?

কায়াসার কথার উওর না দিয়ে জেমি বলে,
” শুনলাম নতুন স্যারটা নাকি তোমার আগে থেকে পরিচিত।তো প্রথম দিনই কি নতুন স্যারকে পটানোর ট্রাই করছো নাকি আগে থেকেই তোমাদের মাঝে চক্কর চলছে?”

” কিসব বাজে কথা বলছেন আপনি?” রেগে বলে কায়াসা।

” আরে আরে কুল ডাউন,এতো হাইপার হচ্ছো কেন?হতেও তো,বর্তমানে তো কত কিছুই হয়।এমন ওতো হতে পারে উনি তোমার বয়ফ্রেন্ড আর তুমিই ওনাকে এখানে জয়েন হতে বলেছো।যাতে তোমরা আরো কাছাকাছি থাকতে পারো।কি ঠিক বলছিতো আমি?”

” বাজে কথা বলা বন্ধ করুন।সবাইকে নিজের মতো ভাববেন না।উনাকে আমি আগে থেকে চিনলেও তাতে আপনার কি?নিজের কাজে মন দিন,অন্যের কাজে মন দিতে হবেনা।”

কথাগুলো বলে জেমির সাইডে দিয়ে চলে যায় কায়াসা।কিন্তু কায়াসার জবাবে জেমি মোটেও খুশি নয়।জেমি চেয়েছিল কায়াসাকে কথা শুনাতে কিন্তু এখানে কায়াসা উল্টো তাকে শুনিয়ে দিলো।

ক্লাসে এসে কায়াসা দেখে ইতি আর আরোহী আগে থেকেই চলে এসেছে।কায়াসা হাসিমুখে তাদের কাছে গিয়ে বসে।কিছুক্ষণ পর ক্লাসে টিচার আসে আর সবাই চুপ হয়ে যায়।

কায়াসা আর আরোহী এসে ওয়াশরুমে।মূলত কায়াসাই ওয়াশরুম এসেছে,তবে সে আসার সময় জোর করে আরোহীকেও নিয়ে এসেছে।

” আরু তুই সত্যি করে আমাকে একটা কথা বলতো।”

” কি কথা?”

” একদম মিথ্যা বলবিনা কিন্তু।”

” আরে বাবা তোকে শুধু শুধু আমি মিথ্যা বলতে যাবো কেন?তুই বল কি বলবি।”

” কাল ইতুর সাথে তুই পার্কে গিয়েছিলিস?”

” হ্যাঁ তুই চলে যাওয়ার পর আমরা পার্কে গিয়েছিলাম।তুই আবার এটার জন্য রাগ করিসনি তো?আরে প্লিজ রাগ করিস না।দেখ তুই তো চলে গিয়েছিলি।তোকে কত বললাম থাক কিন্তু তুই না চলে গেলি।আচ্ছা ঠিক আছে পরের বার আমরা তিনজন মিলে পার্কে ঘুরতে যাবো।”

” আমি এই বিষয়ে কিছু বলছিনা ইতু।আমি অন্যকিছু জানতে চাইছি।”

” কি?”

” পার্কে যাওয়ার পর ইতু কোথায় গিয়েছিলো?”

” ইতু তো ওর বাড়ি চলে গিয়েছিল।”

” আর তুই?”

” আমি তো…….”

” কি হলো থেমে গেলি কেন বল তুই কোথায় গিয়েছিলি?শোন আরু আমি ঘুরিয়ে কথা বলতে পছন্দ করিনা তাই সোজাসুজি বলছি।আমি কাল সন্ধ্যাবেলা তোকে বাইরে দেখিছি,তাও একটা ছেলের সাথে।এবার সত্যি বলে বল তুই কাল কোথায় ছিলিস?”

” আরে তুই হয়তো…….”

” না আমি ঠিকই দেখেছি।ওটা তুই ছিলিস আর পড়নে সেই শাড়িটা ছিল যেটা তুই কাল কলেজের প্রোগামে পড়ে এসেছিস।”

” আসলে ওটা আমার ভাই ছিল।আসলে আমাদের কাল একটা ফাংশন ছিল তো,তো ওখানেই গিয়েছিলাম।হয়তো বাড়ি ফেরার সময় তুই আমাদের দেখাচ্ছিস।”

” সত্যি তো?”

” হ্যাঁরে বাবা সত্যি।তোকে আমি মিথ্যা বলতে যাবো কেন?”

” আচ্ছা ঠিক আছে।” যদিও বা কায়াসার আরোহীর কথা বিশ্বাস হয়নি তাও সে আর কিছু না বলে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসে।কায়াসা চলে যেতেই আরোহী একটা স্বস্তির নিশ্বাস নেই।

ওয়াশরুম থেকে ক্লাসে এসে কায়াসা দেখে স্যার চলে এসেছে তবে এটা দেখে কায়াসা মোটেও ভয় পায়না।

” মে আই কাম ইন স্যার?”

” ইয়েস কাম ইন।”

কায়াসা মাথা নিচু করে চুপচাপ নিজের সিটে গিয়ে বসে পড়ে।সে ব্যাগ থেকে বই খাতা বের করে মাথা উঁচু করে দেখে টিচারটা আর কেউ নয় বরং আদ্রিক।আদ্রিককে দেখে কায়াসা মনে মনে কিছুটা বিরক্ত হয়।

” এই আজাইরা লোকটা কেন আমাদের ক্লাসে পরলো?আ….অসহ্য।” মনে মনে আদ্রিককে কয়েকটা গালি দিয়ে পড়াই মনোযোগ দেয় কায়াসা।

কিছুক্ষণ আগে আদ্রিককে গালি দিলেও আদ্রিকের পড়ানোর ধরণ কায়াসার কাছে এখন বেশ ভালো লাগছে।সে খুব সুন্দর সহজেই স্টুডেন্টদের পড়া বুঝি দিচ্ছে।শুধু কায়াসা না প্রায় সব স্টুডেন্টই মন দিয়ে তার পড়া শুনছে।কিন্তু কয়েকটা লিচু টাইপের মেয়ে পড়া না গিলে চোখ দিয়ে ওনাকে গিলছে।মেয়েগুলোর কাজ দেখে কায়াসা কপাল কুঁচকে যায়।

” আল্লাহ মালুম এরা কলেজে পড়তে আসে নাকি টিচারদের দেখতে আসে।” বিরবির করে বলে কায়াসা।
.
.
.
স্টুডেন্টকে পড়িয়ে মাত্রই স্টুডেন্টের বাসার থেকে বের হয়ে নিচে নেমেছে কায়াসা।হঠাৎ কেউ তাকে পেছন থেকে ডাকে।

” এইযে টিচার ম্যাডাম।”

কায়াসা পেছন ফিরে দেখে স্টুডেন্টের বড়ভাই তাকে ডাকছে।ছেলেটাকে দেখে কায়াসা মুখে বিরক্ত প্রকাশ না করলেও মনে মনে সে প্রচুর বিরক্ত।প্রথমদিন থেকেই এই ছেলেটাকে তার একদম পছন্দ না।কেমন করে যে সে তার দিকে তাকাই।ছেলেটার সাথে কায়াসা বড়জোর ৩/৪ বার কথা বলছে তাও ছেলেটা নিজে থেকে বলছে বলে।ছেলেটার নাম ইমন।কায়াসা ইমন সম্পর্কে তেমন একটা কিছু জানেনা তবে তার আচার ব্যবহারে সে এতটুকু বুঝে গিয়েছে ছেলেটা এক নম্বরের ফ্লাটবাজ আর লুইচ্চা।তবে কায়াসার স্টুডেন্ট আর তার মা অনেক ভালো।

” কি টিচার ম্যাডাম কেমন আছেন?অনেকদিন পর দেখা হলো।”

” জ্বি আলহামদুলিল্লাহ।”

” আমাকে জিজ্ঞেস করবেনা আমি কেমন আছি?” কায়াসা কিছু বলবে তার আগেই ইমন আবারো বলে, ” আচ্ছা জিজ্ঞেস করতে হবেনা আমিই বলে দিচ্ছি।আমি ভালো ছিলাম আর এখন তো আরো বেশি ভালো আছি।” অদ্ভুতদৃষ্টিতে কায়াসার দিকে তাকিয়ে শেষের কথাটা বলে সে।

” জ্বি আপনি কি কিছু বলবেন?”

” খুব তাড়া আছে নাকি টিচার ম্যাডাম?”

” আসলে আমার বাসায় কাজ আছে।আমারো পড়াশোনা করতে হয়।”

” ও হ্যাঁ।তা বাসায় একা থাকো নাকি?”

” না।আমার ফ্রেন্ড থাকে আমার সাথে।” কায়াসা ইচ্ছে করে মিথ্যা কথা বলছে।কারণ সে কিছুটা হলে ইমনের উদ্দেশ্য বুঝতে পারছে।

” কিন্তু আমি যে শুনলাম তুমি নাকি একা থাকো।”

” হ্যাঁ আগে থাকতাম কিন্তু এখন ফ্রেন্ডের সাথে থাকি।”

” ও আচ্ছা।” অন্যমন্সক হয়ে বলে ইমন।

” আচ্ছা আপনি কি কিছু বলবেন?নাকি আমি যাবো?”

” এই নাও।”

” কি এটা?”

” নিজেই দেখো।আবার এটা ভেবোনা আমি দিয়েছি।আম্মু দিয়েছে এটা।”

কায়াসা বুঝতে পারে এটা তার বেতন।কায়াসা হাত বাড়িয়ে খামটা ইমনের হাত থেকে নিয়ে নেয়।কিন্তু এই ফাঁকেই কৌশলে কায়াসার হাত ছুঁয়ে দেয় ইমন।ইতস্তত হয়ে কায়াসা তাড়াতাড়ি হাত সরিয়ে নেয়।

” আচ্ছা আমি আসছি।”

” চলো আমি তোমাকে ড্রপ করে দিচ্ছি।”

” না তার দরকার নেই।আমি ঠিক আছি।”

কায়াসা আর কোন কথা না বলে দ্রুত একটা রিকশা ডেকে তাতে উঠে পড়ে।এদিকে আজো দূর থেকে কেউ কায়াসার উপর নজর রাখছিল আর তার ছবি তুলছিল।
#সুঁই_সুতোর_আসক্তি
#পর্বঃ১৮
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি

এখন প্রায় রাত দুটো বাজে।রাস্তা প্রায় ফাঁকা,তবে মাঝে মাঝে দু-একটা গাড়ি দেখা যাচ্ছে।ফাঁকা রাস্তায় জলন্ত সিগারেট হাতে বাড়ি ফিরছে ইমন।এসময় সে মোটেও ভালো কাজের জন্য বাইরে নেই।সিগারেটে টান দিয়ে ধোঁয়া ছেড়ে আবারো পুনরায় টান দিচ্ছে ইমন।তার মনে এখন অনেক আনন্দ কিন্তু সে তো আর জানেনা এই আনন্দ বেশিক্ষণ স্হায়ী হওয়ার নয়।হঠাৎ পেছন থেকে দুটো লোক এসে ইমনের মুখ একটা কালো কাপড় দিয়ে ঢেকে তাকে এলোপাতাড়ি মারতে শুরু করে।তারা তাকে এতো মারে যে মার খেয়ে তার অবস্থা পুরোই বেহাল।কিন্তু লোকগুলো মারা বন্ধ করেনা।কিছুক্ষণ পর একটা লোক এসে ইমনের বামহাতটা মুচরিয়ে দেয়।যাওয়ার আগে লোকগুলো ইমনের ফোন আর মানিব্যাগ নিতে ভুলে না।

পরেরদিন,

স্টুডেন্টের বাসার সামনে এনে কায়াসা দেখে বাসায় তালা মারা।

” এরা আবার কোথায় গেলো?থাকবেনা যে তা আমাকে বললোও না।”

কায়াসা ফোন বের করে স্টুডেন্টকে ফোন দেয়।

” হ্যালো আনিকা।(স্টুডেন্টর নাম)”

” হ্যাঁ ম্যাডাম।”

” কোথায় তোমরা?তোমাদের বাসায় তালা মারা দেখছি।বেড়াতে গিয়েছো নাকি?”

” না ম্যাডাম।আমরা বেড়াতে যাইনি আমরা হসপিটালে এসেছি।”

” হসপিটালে কেন?তুমি অসুস্থ নাকি?”

” না ম্যাডাম।আসলে কালকে রাতে কারা যেন ভাইয়াকে মেরেছে আর তার হাতও ভেঙে দিয়েছে।সাথে ফোন আর টাকাও নিয়ে গিয়েছে।এখন আমরা ভাইয়ার সাথে হসপিটালে আছি।”

” আচ্ছা ঠিক আছে।আর তোমরা আসলে আমাকে ফোন দিয়ো,আমি সেদিনই আসবো।”

” আচ্ছা ম্যাডাম।”

কায়াসা হাঁটতে একটা শপিং মলে চলে আসে।যেহেতু তার এখন তেমন কোন কাজ নেই আর তার কিছু জিনিসেরও প্রয়োজন ছিল কায়াসা একটা শপে ডুকে পড়ে।

নিজের প্রয়োজনীয় জিনিস কিনে কায়াসা শপিং মলের বাকি দোকানগুলো দেখতে থাকে।হঠাৎ করে কায়াসার চোখ পড়ে একটা পুতুলের দোকানে।একটা সাদা-কালো রঙের টেডিবিয়ার দেখতে পাই কায়াসা।সে তাড়াতাড়ি দোকানটার সামনে এসে দাঁড়ায় তবে ভেতরে যায় না।কারন বাইরে থেকেই টেডিটাকে দেখা যাচ্ছিল।

” এইযে টেডি কেমন আছো?এভাবে আমার দিকে কি দেখছো?যাবে নাকি আমার সাথে?কিন্তু সরি আমি যে তোমাকে নিয়ে যেতে পারবোনা।কারণ তোমাকে আমার সাথে নিয়ে যেতে হলে লাগবে অনেক মানি কিন্তু সেই মানিটা আমার কাছে এখন নেই।তাই সরি পান্ডা রঙের টেডিবিয়ার।” নিজে নিজেই আস্তে আস্তে কথা বলছে কায়াসা।

” কি মিস ইডিয়েট?এভাবে পাগলের মতো একা একা কথা বলছো কেন?”

কারো কথা শুনে চমকে তাকাই কায়াসা।সে পাশ ফিরে দেখে সিম্পল ড্রেসআপে দাঁড়িয়ে আছে আদ্রিক,হাতে তার কয়েকটা ব্যাগ।

” কি?এখানে কি করছো?”

” মানুষ শপিং মলে কি করতে আসে?শপিং করতেই আসে তো?তো আমিও সেটাই করতে এসেছে।”

” তা নাহয় বুঝলাম।কিন্তু শপিং করতে এভাবে একা একা কথা বলছো কেন?”

” কোথায় একা একা কথা বলছিলাম?আমি তো ওই পান্ডা রঙের টেডিটার সাথে কথা বলছিলাম?”

” পছন্দ হয়েছে বুঝি?”

” হলেও কি?আমি নেবোনা ওটা।”

” কেন নেবেনা?”

” কারণ আমি এখন বড় হয়ে গিয়েছে।এখন টেডি নিয়ে কি করবো?”

” তাহলে ওটাে সাথে কথা বলছিলে কেন?”

” আরে ওটা তো এমনিতেই বলছিলাম।কোন বাচ্চা আপনার কিউট লাগলে আপনি তার সাথে কথা বলেন তেমনিই আমিও বলছিলাম।”

” আমি আসছি তুমি এখানেই দাঁড়াও।”

কায়াসাকে কিছু বলতে না দিয়ে আদ্রিক পুতুলের দোকানটায় ডুকে যায় আর টেডিটা কিনে নেয়।

” এই নাও তোমার পান্ডা কালারের টেডি।”

” আরে আমার এটা লাগবেনা।আমার তো জাস্ট কিউট লেগেছিল বলে কথা বলছিলাম,কিউট লাগলেই কি কিনতে হয় নাকি?আপনি এটা ফেরত দিয়ে আসুন।”

” এখন আর এটা ফেরত দেওয়া যাবেনা।তোমার যদি নিতে ইচ্ছে না করে তাহলে আমাকে দিয়ে দাও,আমিই নিয়ে যাচ্ছি।”

কিছু একটা ভেবে কায়াসা জট করে আদ্রিকের থেকে টেডিটা নিয়ে শক্ত করে বুকের সাথে চেপে ধরে।

” নট থাংকু।কারণ এটা আপনি নিজের থেকে দিয়েছেন,আমি কিন্তু চাইনি।সো কোন থাংকিউ না।”

” হয়েছে তোমার থাংকিউ আমার লাগবেনা।এবার চলো বাসাই যাবো তো নাকি?আর তোমার না এই সময়ে টিউশনি থাকে।”

” স্টুডেন্ট একটু বাইরে গিয়েছে,তাই আজ অফ।”

কথা বলতে বলতে কায়াসা আর আদ্রিক নিচে নেমে আসে।শপিং মল থেকে বেরিয়ে দুজন দুজনকে বিদায় জানিয়ে দুদিকে চলে যায়।

রাতে,

রুমে ড্রিমলাইট জ্বলছে।আদ্রিকের দেওয়া টেডিবেয়ারটাকে জরিয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে কায়াসা।এশান নিঃশব্দে বারান্দায় দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করে।সে খুব সাবধানে পা ফেলে কায়াসার মাথার কাছে এসে বসে।এশান আস্তে আস্তে কায়াসার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে।হঠাৎ এশানের চোখ যায় টেডিবেয়ারটার দিকে।সে খুবই অদ্ভুত দৃষ্টিতে টেডিটার দিকে তাকিয়ে থাকে।

পরেরদিন,

” হ্যাপি বার্থডে টু ইউ,হ্যাপি বার্থডে টু ইউ,হ্যাপি বার্থডে ডেয়ার কায়ু।হ্যাপি বার্থ ডে টু ইউ।হে………” আরোহী আর ইতি একসাথে কায়াসা জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাই।

ক্যান্টিনের একটা টেবিলে বসে আছে তারা তিনজন।টেবিলে মিনি সাইজের একটা কেক।কায়াসার মনে ছিল আজ তার জন্মদিন কিন্তু সে এটাকে এতোটা গুরুত্ব দেয়নি কিন্তু কে জানতো যে তার বান্ধবী দুটো তার জন্য সারপ্রাইজ প্ল্যান করে রেখেছে।আসলে ইতিই আরোহীকে কায়াসার জন্মদিনের কথা বলে আর এটা জানার জন্য আরোহী ঠিক করে তারা দুজন মিলে কায়াসার জন্মদিন ছোট করে পালন করবে।

সারপ্রাইজ পেয়ে কায়াসার চোখে পানি জমে যায় তবে তার মুখে একটা তৃপ্তির হাসি লেগে আছে।সে আরোহী আর ইতি খুব শক্ত করে জরিয়ে ধরে।

” হয়েছে হয়েছে এখন এতো কান্না করিস না,বিয়ের সময় যখন বিদায় হবে তখনের জন্যও কিছু বাঁচিয়ে রাখ।” মজা করে বলে আরোহী।আরোহীর কথা শুনে কায়াসা হেসে দেয়।

” কায়ু এবার তাড়াতাড়ি কেকটা কেটে ফেলতো দেখি।”

কায়াসা কেক কেটে আরোহী আর ইতিকে খাইয়ে দেয়।যেহেতু কেকটা ছোট ছিল তাই তারা তিনজন ক্যান্টিনে বসে সেটা খেয়ে নেয়।

টিচার্স রুম থেকে প্র্যাকটিকাল খাতার নেওয়ার জন্য এসেছে কায়াসা।সে নিজের খাতা নিয়ে চলে যাওয়ার সময় আদ্রিকের সামনে পড়ে যায়।আদ্রিককে গুড মর্নিং বলে চলে যেতে নিলেও আদ্রিকের কথায় থেমে যায়।

” খাতা নিতে এসেছো বুঝি?”

” হুম।” মাথা নাড়িয়ে উওর দেয় কায়াসা।

” এই নাও।” একটা ডেইরি মিল্ক চকলেট কায়াসার দিকে দিয়ে বলে আদ্রিক।কায়াসা বোকার মতো প্রশ্নবোধক চাহনিতে আদ্রিকের দিকে তাকিয়ে তাকে।

” কি দেখছো?নাও এটা।”

কায়াসা কিছুনা বলে চুপচাপ চকলেটটা নিয়ে নেয়।

” হ্যাপি বার্থডে।দোয়া করি যে জীবনে আরো এগিয়ে যাও আর নিজের লক্ষ্য পৌঁছাতে পারো।”

কায়াসা এবারো কিছু না বলেনা,সে পিটপিট করে এখনো আদ্রিকের দিকে তাকিয়ে আছে।

” এভাবে তাকিয়ে না থেকে ক্লাসে যাও,তোমার ক্লাসে ম্যাডাম অলরেডি চলে এসেছে।”

কায়াসা কিছুনা বলে চুপচাপ নিজের ক্লাসের দিকে যেতে থাকে।যেতে যেতে সে তার হাতে থাকে চকলেটটার দিকে একবার তাকাই।

বাসার সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে কায়াসা খেয়াল করে তার বাসার দরজার সামনে একটা বড় বক্স রাখা আছে।কায়াসা তাড়াতাড়ি উপরে উঠে আসে।কায়াসা কিছুক্ষণ বক্সটা নেড়েচেড়ে দেখে তারপর বক্সসহ বাসার ভেতরে ঢুকে পড়ে।বক্সটা ড্রয়ংরুমের টেবিলে রেখে কায়াসা ফ্রেশ হতে চলে যায়।

ফ্রেশ হয়ে এসে কায়াসা বক্সটা খুলতে বসে।বক্সটা খুলে কায়াসা যা দেখতে পাই তাকে সে প্রচুর অবাক।সে দৌড়ে তার রুমে ভেতর গিয়ে দেখে না আদ্রিকের দেওয়া টেডিটাতো তার বিছানায় আছে তাহলে বাইরে ওটা কি করে আসলো।কায়াসা বিছানার উপর থেকে টেডিটা নিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসে,তারপর বক্সটাতে থাকা টেডিটা বের করে।কায়াসা একবার এটার দিকে তাকাই তো আরেকবার ওটার দিকে।দুটো টেডিই হুবহু সেইম দেখতে।অনেক খুঁজেও কায়াসা দুটোর মধ্যে কোন পার্থক্য খুঁজে পাইনা।কায়াসা রুম থেকে একটা মার্কার এনে আদ্রিকের দেওয়া টেডিটার হাতে ছোট করে একটা ফোঁটা দিয়ে দেয়।টেডি দুটোকে সাইডে রেখে কায়াসা দেখতে থাকে বক্সে আর কি কি আছে।

চলবে……
চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here