#সুঁই_সুতোর_আসক্তি
#পর্বঃ২২
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি
” কিরে কায়ু উঠে পড়েছিস?শরীর কেমন লাগছে এখন?” ইতি রুমে ঢুকতে ঢুকতে প্রশ্ন করে।
” হুম ঠিক আছি কিন্তু তুই আমার বাড়িতে এতো সকালে?”
” আমি তো কাল রাত থেকে এখানেই আছি।”
” কিন্তু আমার যতটুকু মনে আছে আমি তো কাল রাতে আরোহী জন্মদিনের পার্টিতে ছিলাম।আমার শরীরটা খারাপ লাগছিল তাই আরোহী আমাকে একটা রুমে শুয়ে দিয়েছিল।তাহলে বাড়ি এলাম কি করে?”
” তোকে আমি বাড়িতে নিয়ে এসেছিলাম।হোটেলের রুমে বেহুশ হয়ে ছিলিস তুই।”
” কি?তুই কি করে জানলি আমি কোথায় আছি?”
ইতি আরোহীর পাশে বসে তাকে বলতে থাকে তার দিক থেকে সে কি জানে।
ফ্ল্যাশবেক,(ইতির দৃষ্টি অনুযায়ী)
মাত্রই রেস্টুরেন্টে এসে পৌঁছেছে ইতি।সে এসে প্রথমেই কায়াসাকে খুঁজতে শুরু করে কিন্তু তাকে দেখতে পাইনা।কায়াসাকে খুঁজতে খুঁজতে ইতি আরোহীকে পেয়ে যায়।
” এই আরু।”
” আরে ইতু তুই এসেছিস।এতো দেরি হলো কেন আসতে?কেক তো কখন কাটে শেষ হয়ে গিয়েছে।”
” আসলে গাড়িতে একটু সমস্যা হয়েছিল।আচ্ছা কায়ু কোথায়?ওকে তো দেখছিনা।ও কি চলে গিয়েছে?”
” আরে না না ও এখানে আছে।”
” তাহলে দেখছিনা যে?”
” আসলে ওর একটু শরীর খারাপ লাগছিল তাই আমি ওকে এখানে একটা রুমে বিশ্রাম করতে বলেছি।ও চলে যেতে চেয়েছিল কিন্তু আমি যেতে দিয়নি।একা এই খারাপ শরীর নিয়ে গেলে যদি কোন সমস্যা হয়ে যায়।”
ইতি কি বলবে তার আগেই তার ফোন বেজে উঠে।ইতি ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখে আননোন নম্বর থেকে ফোন এসেছে।
” হ্যালো।কে বলছেন?”
” কায়াসা এখানের একটা রুমে আছে।তুমি তাড়াতাড়ি ওর কাছে যাও।ও মোটেও এখানে সেফ না।তাড়াতাড়ি ওর কাছে যাও নয়তো আবারো বাজে কিছু হয়ে যেতে পারে।”
” হ্যালো কে বলছেন আপনি?”
” আমি কে যেটা পরেও জানতে পারবে।কিন্তু এখন কায়াসার তোমাকে প্রয়োজন।তাড়াতাড়ি ওর কাছে যাও।”
ফোন কেটে যায়।ইতি ভ্রু-কুচকে ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকে।
” আরু কায়ু কোন রুমে আছে?আমাকে সেখানে নিয়ে চল।”
আরোহী ইতিকে কায়াসা যেখানে আছে সেখানে নিয়ে যায়।দরজা খুলে ইতি দেখে কায়াসা শুয়ে আছে।ইতি কায়াসার কাছে গিয়ে ওকে ডাকতে থাকে।
” কায়ু,এই কায়ু।উঠ,দেখ আমি চলে এসেছি।কায়ু?”
কায়াসা কোন উওর দেয় না শুধু বিরবির করে যাচ্ছে।কায়াসার এই অদ্ভুত ব্যবহারে ইতির কপাল কুচকে যায়।সে ধাক্কা দিয়ে আরো কয়েকবার কায়াসাকে ডাকে কিন্তু কায়াসা চোখ খোলেনা।
” আরোহী কায়াসা উঠছেনা কেন?”
আরোহী এতক্ষণ চুপচাপ ইতির পেছনে দাঁড়িয়ে ছিল।সেও কায়াসার না উঠা দেখে অবাক।
” আমি জানিনারে ইতু।আমি তো যখন ওকে রেখে গিয়েছিলাম তখন তো ও ঠিকই ছিল।”
” তাহলে কি ওকে ভুতে এরকম করে দিয়েছে?” বিরক্তি নিয়ে বলে ইতি।প্রথমে ফোন আর এখন কায়াসার অবস্থা দেখে ইতির চিন্তা হতে থাকে কায়াসাকে নিয়ে।এরিই মধ্যে আবারো ইতির ফোন বেজে উঠে।ইতি দেখে আবারো সেই নম্বর থেকে ফোন এসেছে।এবার ইতি তাড়াতাড়ি ফোনটা রিসিভ করে নেয় তবে এবার সে কিছু না বলে অপরপাশের মানুষটাকে বলার সুযোগ করে দেয়।
” কায়াসা নিয়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এখন থেকে বেরিয়ে যাও।এই জায়গাটা কায়াসার জন্য মোটেও সেফ না সেইসাথে তোমার জন্যও।তোমরা দুজনেই তাড়াতাড়ি এখান থেকে বেরিয়ে যাও।পারলে তোমার ওই বান্ধবীকেও বলো এই ফালতু পার্টি শেষ করে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে যেতে।আর বাড়িতে গিয়ে কোন পরিচিত ডাক্তারকে ফোন করে ডাকবে।কায়াসাকে ডাক্তার দেখানোর প্রয়োজন।যেরকম বলছি সেরকমটা তাড়াতাড়ি করো নয়তো ভালো হবেনা।”
ইতির আর কোন কথা না বলে আরোহীকে বলে কায়াসাকে একপাশে ধরতে।ইতি আর আরোহী মিলে কায়াসাকে ইতির গাড়িতে তোলে।গাড়ি ছাড়ার আগে ইতি আরোহীকে তার জন্য এশানের বলা কথাগুলো বলে।কিন্তু মনে হয়না এতে আরোহীর মধ্যে কোন প্রভাব পড়েছে।
ফ্ল্যাশবেক এন্ড…….
” কিন্তু তুই বেহুশ হলি কি করে?কি হয়েছে?”
” আমি জানিনারে।আমি তো ভালোই ছিলাম কিন্তু হঠাৎ করেই অস্তিত্ব লাগতে শুরু করলো।তারপর ওয়াশরুমে গিয়ে বমি করলাম।শরীরটা খারাপ লাগছিল তাই আরোহী একটা রুমে নিয়ে গেলে।আমি শুয়ে পড়েছিলাম এরপর আর কিছু মনে নেই।”
” তুই কি কিছু খেয়েছিলিস?”
” না তো।”
” ঠিক মতো মনে কর।তা না হলে হুট করে তো এরকম হওয়ার কথা নয়।কোন খাবার না হলেও পানি,জুস বা কোলড্রিংক খেয়েছিলিস?”
” আরে ওই রাতুল……..এ মিনিট তুই তখন কি যেন বলেছিস?ওই লোকটা তোকে ফোনে কি বলেছিলো?এটাও বলেছিল না ‘তাড়াতাড়ি ওর কাছে যাও নয়তো আবারো বাজে কিছু হয়ে যেতে পারে।’এটাই বলেছিল তো?”
” হুম।”
কায়াসার চোখ বন্ধ করে আবারো চিন্তা করতে থাকে এবার আস্তে আস্তে কিছুটা হলে মনে পড়ছে তার সাথে কি হয়েছিল।সব ভেবেচিন্তে কায়াসা বুঝে যায় রাতুলই এসব করেছে।এটা ভাবতে একদিকে কায়াসার যেমন রাগ হচ্ছে তেমনি গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠছে এটা ভেবে যে কাল রাতে সে কত বড় একটা বাজে পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছিল।
” কিরে কি ভাবছিস?বললিনাতো রাতুলটা কে?”
” আরোহীর বয়ফ্রেন্ড।” খুবই গম্ভীরভাবে বলে কায়াসা।
” কি!আরুর বয়ফ্রেন্ড?” অবাক হয়ে প্রশ্ন করে ইতি।কারণ সেও বিশ্বাস করতে পারছেনা।
” হুম।”
” কিন্তু কিভাবে কি?ও তো আমাদের আগে বলেলি।”
কায়াসা আরোহীকে রাতুল আর আরোহীর বেপারে সব বলতে থাকে শুধু রাতুলের কথা জঘন্য কাজটা বাদে।
” তার মানে আরোহী আমাদের কাছে ওর বয়ফ্রেন্ড সম্পর্কে লুকিয়েছিল।কিন্তু কেন?আমাদের বললে কি হতো?”
” জানিনা কেন লুকিয়েছিল।”
” তোর কথা শুনে আমি যা বুঝতে পেরেছি রাতুল ছেলেটা মোটেও সুবিধার না।আচ্ছা আবার এটা নয়তো যে রাতুলই তোকে কিছু খেতে দিয়েছে আর তার সাথে বাজে কি করার চেষ্টা করেছে?”
ইতির কথা শুনে কায়াসা কিছু না বলে মাথা নিচু করে থাকে।
” কি হলো কিছু বলছিস না কেন?তারমানে আমি যেটা সন্দেহ করছি সেটাই কি ঠিক?রাতুলই……? ”
” আমি জানিনা তবে আমারও তাই মনে হচ্ছে।” একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলে কায়াসা।
” ওই রাতুলকে তো আমি ছাড়বোনা আর আরোহীকে তো মোটেও না।আমি এখুনি আরোহীকে ফোন করে এসব জানাচ্ছি।”
” ইতি থাম থাম,শান্ত হয়।কি করছিস তুই?এভাবে হুট করে কোন কিছু করা ঠিক নয়।তুই আরোহীকে এখন এসব বললে ও মোটেও বিশ্বাস করবেনা উল্টো আমাদের অবিশ্বাস করবে।তাড়াহুড়ো করে কোনকিছু করা মোটেও ঠিক হবেনা।”
” তাই বলেকি এসব কিছু জেনে এভাবে চুপ করে থাকবো?”
” আমরা জানাবো তবে এখন নয় সময় হলে প্রমাণসহ জানাবো।”
ইতি চোখ বন্ধ করে নিজের রাগ দমানোর চেষ্টা করে এরপর কায়াসার হাত ধরে বলে,
” আমাকে ক্ষমা করে দিস কায়ু।আজ আমার জন্য তোকে এই পরিস্থিতিতে পড়তে হলো।আমি যদি তোকে জোর না করতাম পার্টিতে যাওয়ার জন্য তাহলে তুই রাজি হতিনা আর না যেতে।আর আমার যদি পার্টিতে যেতে দেরি না হয় তাহলে আমি তোর সাথে থাকতে পারতাম আর তোর এই পরিস্থিতিতে পড়তে হতোনা।আমাকে ক্ষমা করে দে কায়ু,আমি বুঝতে পারিনি এরকম কিছু হবে।আজ আমার ভুলের জন্য তোর……” ইতি আর কিছু বলতে পারে।সে অজোরে কান্না করছে।সে ভাবতেও পারছেনা তারজন্য আজ তার বেস্টফ্রেন্ড এতো বড় একটা জঘন্য পরিস্থিতিতে পড়েছিল।কায়াসা ইতিকে জরিয়ে ধরে তাকে শান্ত করা চেষ্টা করে।অনেক্ষন কান্না করার পর ইতি কান্না বন্ধ করে।
” এই বোকা মেয়ে এভাবে কান্না করছিস কেন?তুই কি ছোট বাচ্চা নাকি?আর যা হয়েছে তাতে তোর কোন দোষ নেই।ভাগ্য না ছিল তাই হয়েছে।এটাকে আমরা পাল্টাতে পারবোনা।এখন এসব ভুলে যায়।আমি এরজন্য তোকে না দোষ দিয়েছি আর না দেবো।তাই এতো গিলটি ফিল করার কিছু নেই।”
ইতি কায়াসাকে শক্ত করে জরিয়ে ধরে।কায়াসাও হাসি মুখে ইতিকে জরিয়ে ধরে কিন্তু তার মাথায় অন্যকিছু চলছে।
চলবে………