#সুঁই_সুতোর_আসক্তি
#পর্বঃ৩০
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি
হসপিটালে এসে আরোহী,ইতি,কায়াসা।তাদের সাথে আরো দুজন লোক এসেছে কিন্তু তাদের ইতি বা কায়াসা কেউ চেনেনা।আরোহী লোক দুটোকে বাইরে দাঁড়াতে বলে দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করে।বেডে শুয়ে আছে রাতুল,তার একটা চোখে এখনো ব্যান্ডেজ করা,সেই সাথে হাতে পায়েও ব্যান্ডেজ আছে।আরোহীকে দেখে রাতুল নেকা সুরে বলে,
” আরু বেবি তুমি এসেছো।জানো আমার না তোমাকে খু্ব মনে পড়ছিল।আমি এটাই ভাবছিলাম যে…….” রাতুল আর কিছু বলবে তার আগেই আরোহী তাকে একটা থাপ্পড় মেরে বসে।আরোহীর এহেন কাজে ইতি,কায়াসা সহ পাশে বসে থাকা রাতুলের মাও অবাক।রাতুলের মা ক্ষেপে চিৎকার করে উঠে—
” এই মেয়ে তোমার সাহস কত বড় তুমি আমার ছেলেকে থাপ্পড় মেরেছো।”
” বেবি তুমি আমাকে মারলে।”
” তোকে তো এখন মাত্র একটা থাপ্পড় মেরেছি পারলে তো জানে মেরেই ফেলতাম।”
” এই মেয়ে তুমি এসব কি বলছো?”
” ঠিকই বলছি।এখন যা বলার সব আমি বলবো আপনি একদম চুপ করে থাকবেন।ছেলেকে যে সুশিক্ষা দিতে পারেননি তা আমি এখন আপনাকে দেখাবো।তুই কি ভেবেছিস আমি কিছু জানতে পারবোনা।তাহলে এই দেখ।”
আরোহী একটা ভিডিও প্লে করে রাতুলকে দেখায়।ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে যে রাতুল কায়াসার জুসে কিছু একটা মেশাচ্ছে আর তার সাথে খারাপ কিছু করতে চেয়েছে।ভিডিওটা দেখে রাতুল ঘাবড়ে যায়।
” তোর সাহস কি করে হয় আমার বান্ধবী সাথে বাজে কিছু করার চেষ্টা করার?তুই আমাকে ধোঁকা দিচ্ছিলিস না?” এটা বলেই আরোহী রাতুলের পায়ে জোরে একটা ঘুসি মারে।ব্যথায় রাতুল চিৎকার করে উঠে।
” এই মেয়ে তুমি এবার কিন্তু বাড়াবাড়ি করছো।আমি কিন্তু এবার পুলিশ ডাকতে বাধ্য হবো।”
” হাহাহাহা,হাসলেন আপনি।পুলিশ ডাকবেন আপনি।আপনাকে এতো কষ্ট করতে হবেনা আমি অলরেডি পুলিশকে সাথে করে নিয়ে এসেছি।”
আরোহন বাইরে গিয়ে লোকদুটোকে বলে,” স্যার এই নিন প্রমাণ।এই সুস্থ হলেই একে গ্রেপ্তার করবেন আর কঠিন শাস্তি দেবেন।”
ইতি আর কায়াসা অবাক হয়ে যায় এটা ভেবে যে এই লোকদুটো পুলিশ।যেহেতু তারা দুজন নরমাল ড্রেসে ছিল তাই তাদের কেউ চিনতে পারেনি।
বাইরে এসে আরোহী কায়াসাকে জরিয়ে ধরে কান্না করে দেয়।
” প্লিজ কায়ু আমাকে ক্ষমা করে দেয়।আমার দোষে তোর এই পরিস্থিতিতে পরতে হয়েছে।আমার জেদ আর বোকামির জন্য তোকে ওই জানোয়ারটার নজরে পড়তে হয়েছে।”
” শান্ত হ আরোহী।যা হওয়ার তা হয়ে গিয়েছে,এখন এসব ভেবে কোন লাভ নেই।চল এখন এখান থেকে যাওয়া যাক।”
” তুই আদ্রিক স্যারের সাথে দেখা করবিনা?” ইতি বলে।
” না,আমি তো ওনার সাথে দেখা করার জন্য আসিনি।আর উনি হয়তো কাজে ব্যস্ত।তাই ওনাকে বিরক্ত না করাই ভালো।”
১ সপ্তাহ পর,
মাঝরাতে,
কায়াসা নিজের রুমে ঘুমিয়ে আছে।আদ্রিক বাড়িতে নেই এখন,সে নাকি কিছু কাজে হসপিটালেই আটকে পড়েছে।তাই কায়াসা খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে।আদ্রিক আর কায়াসা দুজন আলাদা আলাদা রুমে থাকে।
ঘুমে আচ্ছন্ন কায়াসা কিন্তু অনবরত বেলের শব্দে কায়াসার ঘুম ভেঙে যায়।কায়াসা গায়ে ওড়না জরিয়ে তাড়াতাড়ি নিচে নেমে আসে।কায়াসা নিচে আসতে আসতে সুমি দরজা খুলে দিয়েছে।কায়াসা ভেবেছিল আদ্রিক এসেছে কিন্তু না এটা আদ্রিক নয় বরং জেমি।জেমিকে ওই অসময়ে তাও আদ্রিকের বাড়িতে দেখে কায়াসা বেশ অবাক হয়।
” আপনি!”
জেমি কায়াসার কাছে এসে কান্না করতে করতে বলে,
” প্লিজ আমাকে বাঁচাও,নয়তো ওরা আমার ক্ষতি করবো।”
” কারা?আর আপনি এতো রাতে বাইরে কেন?”
জেমি কান্না করতে করতে কায়াসা ব্যাখা দিতে থাকে।জেমির কথা শুনে কায়াসা যা বুঝতে পারে তা হলো জেমি একটা পার্টিতে গিয়েছিল আর ফেরার সময় তাকে কয়েকটা বাজে ছেলের কবলে পড়তে হয়।দৌড়াতে দৌড়াতে জেমি এই বাড়িটা দেখে তাই বাঁচার জন্য এখানে আসে।
জেমির কথা শুনে কায়াসা বুঝতে পারে জেমির মনে কি চলছে কারণ সেও এ-ধরনের পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছিল।কায়াসা সুমিকে বলে আজকে রাতের মতো জেমির একটা থাকার ব্যবস্হা করতে।
নিজের রুমে ঘুমিয়ে আছে কায়াসা।জেমি আস্তে আস্তে দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করে,তার হাতে একটা ছুড়ি।আসলে জেমি কায়াসাকে যা বলেছে সব মিথ্যা,সে সব বানিয়ে কায়াসাকে বলেছে।আর কায়াসাও জেমির মিথ্যা কথায় বিশ্বাস করে নিয়েছে।জেমি আসার আগে সব জেনে এবং প্ল্যান করেই এসেছে।তার এখানে আসার একমাত্র উদ্দেশ্য হলো কায়াসাকে মারা।ছুড়ি হাতে জেমি কায়াসার কাছে এসে দাঁড়ায়।
” তুমি আমার জীবনে এসে খুব ভুল করেছো কায়াসা,মস্ত বড় ভুল করেছো।তার থেকেও বড় ভুল করেছে আমার জিনিস নিজের করে নিয়ে।তুমি তো জানোই আমি নিজের লাভের জন্য সব করতে পারি,সব।কাউকে মারতেও পারি।টাটা কায়াসা।”
জেমি ছুড়িটা দিয়ে কায়াসাকে মরতে যাবে তখনই কেউ পেছন থেকে জেমির হাত ধরে ফেলে।জেমি ভয় পেয়ে পেছন ফিরে তাকাই,সে দেখে আদ্রিক তার দিকে গম্ভীর মুখ করে তাকিয়ে আছে।আদ্রিককে দেখে জেমি ভয় পেয়ে যায়।
” আ..পনি…?আ..প.নি…না.র.. না…এ..খন…হস..পিটা..লে…থা…কার..ক..থা…।”
আদ্রিক পাশ থেকে একটা কাপড় নিয়ে জেমির হাত আর মুখ বেঁধে দেয়।তারপর তাকে টানতে টানতে গাড়ির কাছে নিয়ে আসে।গাড়িতে জেমিকে বসিয়ে তার চোখ বেঁধে দেয় আদ্রিক।
আদ্রিক নিজের গোপন জায়গায় এনে গাড়িটা থামায়।তারপর আবারো জেমি টানতে টানতে একটা রুমে নিয়ে আসে আর তার বাঁধনগুলো খুলে দেয়।
” আমাকে কোথায় নিয়ে এসেছো?”
” বাহ্…আপনি থেকে তুমি।তুমি কি ভেবেছিলে?আমাকে হসপিটালে ব্যস্ত রেখে তুমি আমার কায়ুপাখির ক্ষতি করবে?স্বপ্নেও আমি সেটা হতে দেবোনা।তুমি সব প্ল্যান করে আসলেও তুমি হয়তো এটা জানোনা আমার বাড়ির প্রতিটা কোণায় সিসিটিভি ক্যামরা লাগানো।আমি যখন জানতে পারি তুমি আমার বাড়িতে এসেছো তখনিই আমার সন্দেহ হয় আর আমি তোমার উপর নজর রাখতে শুরু করি।কিছুটা সময় তোমার গতিবিধি লক্ষ করেই আমি বুঝতে পেরে যায় তুমি কেন আমার বাড়িতে এসেছো।কেন আমি আমার কায়ুপাখিকে মারা চেষ্টা করেছো?কি ক্ষতি করেছে ও তোমার?”
” আ….কায়ুপাখি কায়ুপাখি কায়ুপাখি।আর কি ক্ষতি করেছে ও আমার?ও আমার থেকে তোমাকে কেড়ে নিয়েছে।আমি কত চেষ্টা করেছি তোমাকে নিজের দিকে আর্কষিত করার কিন্তু তুমি তো ওই কায়াসার নামে চোখে কাপড় বেঁধে রেখেছো।এই ওর মধ্যে কি আছে যা আমার মধ্যে নেই?বলো?আমার কাছে রূপ,গাড়ি,বাড়ি,টাকা সব আছে।কিন্তু ওর কাছে কি আছে?”
” শুনবে আমার কায়ুপাখির মধ্যে কি আছে?আমার কায়ুপাখির মধ্যে মানবতা আছে,একটা বড় মন আছে,সে অন্যকে সম্মান করতে জানে,ভালোবাসতে জানে,সে নিজের আগে অন্যের ভালোটা ভাবে।যা তোমার মধ্যে নেই।”
” আ….আবার লেইম কথা।এই আদ্রিক প্লিজ তুমি আমার কাছে চলে এসো।আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসবো,অনেক সুখী রাখবো।প্লিজ তুমি আমার কাছে চলে এসো।”
” এই তোমার না বয়ফ্রেন্ড আছে?”
” আরে কিসের বয়ফ্রেন্ড,ওটা তো শুধু টাইম পাস।প্লিজ তুমি আমার কাছে চলে এসো,আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি।”
” তোমার মতো মেয়ের কাছে আমি আসবো,যে গিরগিটির মতো প্রতি মিনিটে মিনিটে বয়ফ্রেন্ড চেঞ্জ করে।স্বপ্নেও ভেবোনা আমি তোমার কাছে আসবো।তুমি হয়তো জানোনা আমি আসলে কি।তুমি আমার কায়ুপাখিকে মারতে চেয়েছিলেনা?এবার দেখো আমি তোমার কি করি।”
পরেরদিন সকালে,
কায়াসা গেস্ট রুমে গিয়ে দেখে জেমি ওখানে নেই।কায়াসা নিচে নেমে এসে দেখে সুমি টেবিলে ব্রেকফার্স্ট রাখছে।
” সুমি জেমি মানে কাল রাতে যে মেয়েটা এসেছিল সে কোথায়?”
” ম্যাডাম উনি হয়তো রুমেই আছেন।”
” না উনি তো রুমে নেই আমি দেখা এলাম।”
” তাহলে….”
” জেমি কাল রাতেই চলে গিয়েছে।” পেছন থেকে আদ্রিক বলে।
কায়াসা পেছন ফিরে দেখে আদ্রিক নিচে নামছে।
” আপনি কখন এলেন?”
” কাল মধ্যরাতে।আমি যখন এলাম তখনই জেমি চলে গিয়েছিল।”
” এতো রাতে।”
” জানিনা,হয়তো এখানে তার থাকতে ভালো লাগছিলোনা তাই চলে গিয়েছে।কলেজ যাবে তো?”
” হুম।”
” তাড়াতাড়ি খেয়ে তৈরি হয়ে নাও।”
কলেজে এসে কায়াসা দেখে সবাই কিছু একটা নিয়ে কথা বলছে।কায়াসা সেদিকে মনোযোগ না দিয়ে নিজের ক্লাসে চলে যায়।তবে সবার ফিসফিস করা দেখে আদ্রিক নিজের মনে মনে হাসে।ক্লাসে এসে কায়াসা দেখে এখানেও অনেকে ফিসফিস করে কিছু একটা নিয়ে কথা বলছে।
” ইতু সবাই কি নিয়ে কথা বলছেরে?”
” আরে তুই জানিস না নাকি?জেমি আছে না থার্ড ইয়ারের আরে ওই মেয়েটা যে তোকে দেখা হলেই উল্টাপাল্টা কথা বলতো ওনাকে পুলিশ এরেস্ট করে নিয়ে গিয়েছে।”
” এরেস্ট করেছে মানে?” অবাক হয়ে প্রশ্ন করে কায়াসা।
” আরে কাল রাতে নাকি ওনাকে পুলিশ একটা ক্লাব থেকে উদ্ধার করেছে।সেইসাথে অনেক মাদকদ্রব্যও।পুলিশ সন্দেহ করছে উনি মাদক সেবন করার সাথে সাথে মাদকের ব্যবসাও করেছেন।আর ওনার বাবা যেহেতু কমবেশি সবার চেনা পরিচিত তাই আজকের মূল টপিক হচ্ছেন উনি।টিভি,ফেসবুক,ইউটিউব খুললেই ওনার এরেস্টের খবরে ছড়াছড়ি।কলেজেও সবাই এটা নিয়েই কথা বলছে।”
ইতির কথা শুনে কায়াসা অবাক হয়ে যায়।সে বুঝতে পারছেনা জেমি তো কাল রাতে তার বাড়িতে এসেছিল তাহলে সে ক্লাবে কি করে পৌঁছালো।
চলবে…..