#সূখতারার_খোজে
[খন্ড-২]
লেখক: আর আহমেদ
পর্ব ১
ইরা ধপ করে মেঝেতে বসে পড়লো। বুক হাহাকার কারছে! বুকের সন্তানকে হিরহির করে টেনে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ! কোন মা তা সহ্য করতে পারবে? চোখ ফেটে পানি গড়িয়ে পড়ে মেঝেতে। আমির হাত মুঠো করে ইরার পাশে হাটু মুড়িয়ে বসলো। কাধে হাত রাখতেই ইরা নিজের মাথা আমিরের বুকে গুজে হু হু করে কেঁদে উঠলো। আমির নিজেও আটকাতে পারলো না নিজের চোখের পানি। গাল বেয়ে নোনাজলের স্রোত বয়ে যাচ্ছে বাপ মায়ের। আদরের সন্তানকে কিডন্যাপার আখ্যা দিয়ে নিয়ে গেলো। আমির নিজের ওষ্ঠদ্বয় ভিজিয়ে মাথায় হাত রাখলেন ইরার৷ ইরা সশব্দে কাঁদছে। বুক চিঁড়ে,ফেটে আসছে। অসহায় লাগছে ইরার। দিকশারা তিনি।
___
বেলা গড়ালো। সূর্য হেলে পড়েছে পশ্চিমের দিকে। ছায়া দ্বিগুন হলো খানিক আগে। জানালার ফাঁক দিয়ে উষ্ণ রৌদ্র ঘরে প্রবেশ করে। তারা থরথর করে কাপছে। বুকে বয়ে চলেছে তান্ডব। মাথা প্রচুর ভার৷ যেন কেউ পাথর রেখেছে নাথায়। কেউ চাদর গায়ে দিতেই চোখ খুলে নিলো তারা। সায়ন স্মিত হাসি ঝুলিয়ে তাকিয়ে তারার দিকে। তারার চোখ দুটি গর্তে তলিয়ে এসেছে। একশো চার জ্বর! গা পুড়ে আসছে। শরীরে শক্তি নেই। একটু পর পর জোড়ে জোরে কেঁপে কেঁপে উঠছে সে। সায়ন মাথায় আলতো স্পর্শ করলো তারার। তারা চোখ বুজিয়ে নিলো।
এভাবেই কাটলো কিছুক্ষণ। সায়ন পাশে বসেই আছে। তারা ঘুমিয়ে গেছে হয়তো। ঘরে প্রবেশ করলো সাবিহা। সায়ন দ্রুত হাত সরিয়ে নিলো তারার থেকে। সাবিহার মুখ ভার। সে বললো,
-ভাবি কিছু বললো তোমায় ভাইয়া?
-না।
-তুমি ঔষধগুলো নিয়ে আসো। আমি ভাবির পাশে আছি।
-হুম। তুই সাথেসাথে থাকিস।
সায়ন বেড়িয়ে গেলো রুম থেকে। বাড়িতে আর মাত্র চারজন। তইমুর,তূর চলে গেছে। তনয়া যায়নি! যাওয়ার জন্য রেডিও হয়েছিলো কিন্তু তার যাওয়া হলো না বোনের করুন হাল দেখে। উত্তর দিকে অজ্ঞান তারাকে পাওয়া গেছে। সবার আগে দেখেছে বাড়ির কাজের মেয়ে জবা। বাগানে ফুল তুলতে গিয়ে ওমন চিৎ হয়ে তারাকে পড়ে থাকতে দেখে আৎকে ওঠে জবা। সাথে ভয়ও পায়। দ্রুত ঘরে গিয়ে সবটা জানান আয়রাকে। আয়রা সায়নকে দিয়ে ঘরে আনান তারাকে। ডাক্তার চেকাপ করে বলেছেন,’চিন্তার কারন নেই! ভয় পেয়েছে তাই এমন হয়েছে।’ ভয় পেয়েছে? কেন? আর ওখানে পড়ে থাকারই বা কারন কি? বাড়ির কারো কাছে কিছুই পরিষ্কার নয়। তারার যখন জ্ঞান ফেরে তখন তারার জ্বর খুব। গা পুড়ে আসছিলো। চোখও খুলতে পারছিলো না তারা৷
সাবিহা বসে পড়লো তারার পাশে। তারা শ্যামলা,কিন্তু তাকে এখন কালো লাগছে। হয়তো জ্বরের জন্য এমন হয়েছে।
কিছুক্ষণের মধ্যোই হাজির হলো সায়ন। সাবিহা পাশ থেকে উঠে গেলো। সায়ন তারার পাশে বসে মাথায় হাত রাখলো । এরপর শিতল কন্ঠে ডাকতে লাগলো,
-তারা…তারা..
পিটপিট করে চোখ মেললো তারা। চোখ খুলে রাখতে বেগ পেতে হচ্ছে। মাথা খুব ভার। চারপাশ কেমন ডুলছে। সায়ন আবারো বললো,
-উঠে কিছু খেয়ে নাও। তোমার ঔষধ আছে।
এরপর সাবিহার দিকে তাকিয়ে বললো,মাকে বল একটু সুপ করে দিতে। যাহ্
সাবিহা চলে গেলো। সায়ন আস্তে করে পিঠে হাত দিয়ে উঠে বসালো তারাকে।
-ইউ ফিল বেটার?
কোনমতে উঠে বসলো তারা। বললো,
-অনেকটা..
-ওখানে কি করছিলে?
-ওখানে…
‘ভাইয়া এই নে’ বলেই পাশে টি টেবিলে সুপের বাটি রেখে দিলো সাবিহা। সায়ন সুপ হাতে নিলো। চামুচ দিয়প একটু নাড়িয়ে এগিয়ে দিলো তারার মুখে,
-এই নাও।
তারা খেলো। কিছুটা খাওয়ার পর বাহানা জুড়েছিলো খাবেনা। কিন্তু না খেয়ে পারলো না। জোর করে হলেও পুরোটা খাওয়ালো সায়ন।
___
ইলিমা ঘর ঝাড় দিচ্ছিলেন। কোথথেকে তূর ছুটে এলো তার সামনে। প্যান্ট থেকে হাজার একটা নোট বের করে বললো,
-মা এটা নাও।
ইলিমার ভ্রু কুঁচকে আসে। তূর টাকা পেলো কোথায়? সন্দিহান কন্ঠে বললো ইলিমা,
-টাকা কই পেলি তুই?
-কাজ পেয়েছি। আব্বাকে বলো যেন অত না খাটে।
বলে বেড়িয়ে যেতে চাইছিলো তূর৷ ইলিমা পিছু ডাকলেন,
-দাড়া তূর!
তূর থাকলো। পেছন ফিরে আহ্লাদি হাসি ফুটিয়ে বললো,
-আবার কি?
-কি কাজ পেয়েছিস তুই?
-জেনে রেখো,অন্যায় কিছু করছি না।
ফোনে হিন্দি গান ছেড়ে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে গেলো তূর। ইলিমা কচকচে নোটের পানে দৃষ্টি রাখলো। আঁখি পানিতে টইটুম্বুর। একজন বাবা-মার জন্য এর থেকে বেশি সুখ আর হয়? হালাল উপার্জন? এখতেয়ার খুব খুশি হবে।
___
সূর্য ডুবে গেছে। ঔষধ খেয়ে বেশ সুস্থ তারা। খুব হাটাহাটি করতে মন চাইছে তারার। মনে হচ্ছে শরীরে জং ধরেছে। একটু হাটলে ভালো লাগতো। কিন্তু সামনে সয়ং সায়ন রাজা পায়ে পা তুলে বই পড়ছে। হুমায়ুন আহমেদের বই। কখনো দেখিনি এমন বই পড়তে। তাহলে আজ হঠাৎ? গভির মগ্ন! তারা গলা খাকরি দিয়ে দেখলো। তবুও কোন হেলদোল নেই। তারা আর পারলো না। বলেই ফেললো,
-বলি আজ বই নিয়ে বসেছেন যে?
সায়ন আড়চোখে তাকালো। বললো,
-কোন সমস্যা?
-আমি বাইরে যাবো। যেতে দেন। এভাবে বসে থাকতে পারছি না। বিরক্ত লাগছে।
-লাগুক।
-কিহ্? (চেঁচিয়ে)
-কি হয়েছিলো কাল রাতে?
-আপনি বলেন যেতে দিবেন তাহলে বলবো।
-আচ্ছা বলো।
একে একে পুরো ঘটনা বললো তারা। সায়ন বইটা পাশের টেবিলে রেখে বিহ্বল হয়ে বললো,
-তূর’ও ছিলো?
-হুম। এবার যাই?
-তুমি অজ্ঞান হলে কি করে?
তারা বিছানা থেকে উঠে দাড়ালো। গায়ের ওড়না ঠিক করতে করতে বললো,
-একজন মহিলাকে দেখে।
-মহিলা?
তারা আনমনে বললো,
-আমার মনে হয় আপনার পিতার প্রক্তন স্ত্রী বেঁচে আছে।
সায়ন চেয়ার ছেড়ে তড়িৎ গতিতে উঠে দাড়ালো। ঠোঁট ভিজিয়ে বললো,
-এটা সম্ভব নয়।
তারা ঠোঁট টেনে হাসলো। বললো,
-না হলে নয়।
বলেই ঘর থেকে বেড়িয়ে গেলো তারা। নিজে না মানলেও মন খচখচ করছে সায়নের। কোন মহিলা? আর এই মহিলাকে দেখে আরমানের প্রক্তনের কথাই বা কেন মনে আসলো তারার? যে মেয়েটা এই বিষয়ে এতটা ইন্টারেস্টেড ছিলো সে আজ হেয়ালি করলো? কেন?
#চলবে…