সূর্যস্নান পর্ব শেষ

#সূর্যস্নান
#পর্ব_অন্তিম পর্ব(প্রথমাংশ)
#Nishat_Tasnim_Nishi

জীবনপর ধূসর রং গুলো উড়ে গিয়ে রঙিন রং ঠাই করে নিয়েছিলো। সেখানে যাওয়ার প্রথম দিনেই শুরু হয়েছিলো আমার নতুন যাত্রা,!জীবনের সত্যিকার অর্থ তখনই বুঝেছিলাম,! নিশ্বাস নিলেই বেঁচে থাকা যায় না, বাঁচারও অনেকগুলো ধরন রয়েছে,!গত কয়েক টা মাস মৃতদের মতো জীবিত ছিলাম,অর্থাৎ নামমাত্র বেঁচে ছিলাম। মানুষ কতভাবেই বাঁচতে পারে,সবসময় তো আর জীবনে এক রকম পরিস্থিতি থাকে না। নানান রকরকম পরিস্থিতি চলে আসে জীবনে, প্রত্যেক টা পরিস্থিতির সাথেই খাপ খাইয়ে চলতে হয়,! আয়ানও আমার জন্য এক বিচিত্র পরিস্থিতি, আয়ানকে যেমন দেখতাম উনি মোটেও এমন নয়। মনে হয় যে উনার উপর আলাদা কোনো এক আস্তরণ রয়েছে যার কারণে উনার আসল অস্তিত্বকে চিনতেই পারি না। মাঝে মাঝে মনে হয় উনাকে আমি চিনি একদম রগে রগে চিনি,কিন্তুু আবার হঠাৎ মনে হয় উনাকে আমি মোটেও চিনি না,কখনো পরিচিতি ই হয় নি,! আমাদের বিয়ে টা দেখতে স্বাভাবিক হলেও আমাদের মধ্যে স্বাভাবিক সম্পর্ক ছিলো না। উনি স্বাভাবিক ছিলেন কিন্তু আমি নই। আমার আর উনার মধ্যে বিস্তর তফাৎ, একদম আকাশ-পাতালের মতো। আমার মনে সবর্ক্ষণ বিস্তার করতো নিদ্র,যে ছিলো আমার প্রথম ভালোবাসা ও স্বামী।উনাকে ভুলা আমার জন্য অসম্ভব,একদম অসম্ভব।আমি কখনো উনাকে ভুলতে পারবো না।

বিয়ের প্রথম দিনেই আয়ান আমাকে বলেছিলেনন,,’নূপুর, আমি সরাসরি কথা বলতে পছন্দ করি।তোমার অতীত-বর্তমান সব আমার জানা,তুমি কেমন সেটাও আমার জানা। আমি এটা বলবো না যে নিদ্রকে ভুলে যাও কারন টা আগেই বলেছি আর সেটা হলো তুমি কেমন সেটা আমার জানা। আর মোস্ট ফেক্ট হলো আমি চাই না তুমি ওকে ভুলে যাও,ভালোবাসা ভুলা এতটাও সহজ নয়,!সেটা আমি খুব ভালো করেই জানি, কারন রাত-দিন এক করেও তোমাকে ভুলতে পারি নি,উল্টো তোমাকে আরো বেশি মনে পড়েছে। ভালোবাসা কেনো এমন হয়? আর তোমার সাথে যা হয়েছে সেটা ছিলো তোমার নিয়তি, এরপর যা হবে সেটাও তোমার নিয়তি। তুমি ছিলে আমার ভাগ্যে তাই হয়তো এতকিছুর পরেও তুমি আজ আমার সাথে,!’ওই যে কথায় আছে না, যদি থাকে কপালে এমনিতেই আসিবে,!’নিদ্র তোমার কপালে ছিলো না,ছিলাম আমি। সেজন্যই হয়তো এত ট্র্যাজেডির পর আমি আর তুমি এক হয়েছি।।আর আমার মনে হয় আমাকে গ্রহণ করাই তোমার জন্য বেস্ট অপশন হবে,এমন নয় যে আমরা প্রেমিক-প্রেমিকা,আমরা কিন্তুু লিগ্যাল হ্যাসবেন্ড-ওয়াইফ। তাই তুমি ভাবো,সময় নেও,আমি অপেক্ষা করবো।

এটকু বলে উনি থামলেন,নিশ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক করে উনি আমার চোখে গভীর দৃষ্টি রেখে বললেন,,,
—“জানো,অপেক্ষা খুব খারাপ,!একদম অপেক্ষা করতে ইচ্ছে করে না,!কিন্তু তাই বলে আমি তোমার জন্য এতবছর অপেক্ষা করেও আর এখন বুঝি তুমি আমার এত কাছে থাকা স্বত্বেও অপেক্ষা করতে পারবো না।
আমি সবসময় তোমার অপেক্ষায় থাকবো,! আর কী বলোবো,তুমি যথেষ্ট শিক্ষিত এবং ম্যাচিউর,!তাই একটু জ্ঞান প্রয়োগ করে ভেবে দেখো,! আর হ্যা,আমি তোমার প্রতি করুণা দেখাচ্ছি কী না সেটা সেদিন আমার দেওয়া উপহার টা খুললেই বুঝতে,!”

শেষ এটুকু বলেই উনি চলে যান আর বেশি কথা বলেন নি। সেদিন সারাক্ষণ ভেবেছিলাম উনি যা বলেছে সেসব ই তো ঠিক বলেছে,! সব বুঝেও স্বাভাবিক হতে পারলাম না।কেমন দ্বিধা কাজ করতো,! সবকিছু কী এত সহজ?
মাঝো মাঝে কষ্ট হয়,খুব কষ্ট হয়,!

এর কয়েকদিন পর, বাড়ী ফিরেই আয়ান এসে আমার সামনে দাড়ালেন,উনার হাতে ছিলো একটা শপিং ব্যাগ। ব্যাগের মধ্যে ছিলো দুটো নিল আর সাদা শাড়ী সাথে ছিলো দু ডজন ম্যাচিং চুড়ি,! আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম এসব কেনো?উনি জবাবে বলেছিলেন, ‘কোনো কারন নেই।আমার শখ ছিলো বিয়ের পর বউকে মাঝেমধ্যেই নীল শাড়ী কিনে দিবো তাই কিনে দিয়েছি। ”

—“তাহলে সাদা শাড়ী কেনো?”
–“তোমাকে খুশি করার জন্য,!মানে আমি যদি নীল শাড়ী দেই তাহলে আমি খুশি আর যদি সাদা শাড়ী দেই তাহলে তুমি খুশি।সেজন্য আমি দুটোই নিয়ে এসেছি,এখন তুমিও খুশি, আমিও খুশি।”

আমি তীক্ষ্ণ গলায় বললাম,,”সাদা শাড়ীর সাথে আমার খুশির কীসের সম্পর্ক?”
উনি পাশ কাটিয়ে যেতে যেতে বললেন,,”নিজেকে প্রশ্ন টা করলে জবাব পেয়ে যাবে।” আমি বেশ অবাক হয়েছিলাম,পরে নিজের দিকে তাকিয়ে দেখলাম আমি সাদা জামা পরেছি।আর এতদিন সব সাদা জামা-কাপড় ই পড়েছি,! হঠাৎ কেমন অপরাধবোধ হচ্ছিলো,! সেদিনেরর পর আমি আর সাদা জাম পরি নি,ডিপ কালারের জামা পরেছিলাম।তবে শাড়ী দুটোর একটাও পরি নাই,! দেখতে দেখতে অনেকগুলো দিন কেটে গিয়েছিলো,এর মধ্যে আমাদের সম্পর্কটা কিছুটা স্বাভাবিক।আমি স্বামীর মতো উনার সাথে আচরণ না করলেও নরমাল আচরন ঠিকই করতাম। এর মধ্যে উনি আমার জন্য সেদিনের মতো এমন হাজারো জিনিস নিয়ে এসে এসে উনার ইচ্ছার কথা বলতেন।যেমন,মাঝরাতে আমাকে রেডী হয়ে রাস্তায় নিয়ে যেতেন,এরপর আইসক্রিম কিনে আমার হাতে ধরিয়ে অন্য হাত ধরে অনেক রাত পর্যন্ত হাটতেন।আমার কাছে বিষয়গুলো একদম অবাক লাগতো তবে ইন্টারেস্টিং ও লাগতো তাই কিছু বলতাম না। প্রায়ই উনার মধ্যে আমাকে পাওয়ার আকুলতা দেখতাম।সব বুঝেও চুপ করে থাকতাম।ধীরে ধীরে উনার প্রতি আমার মনের কোনে এক অনুভূতির জন্ম নেয় যার নাম মায়া। মায়া জিনিসটা খুব খারাপ,তবুও সেটাতে জড়িয়ে পরেছিলাম। মাস খানেক পেরিয়ে যায় আমাদের নতুন দাম্পত্য জীবনের,! আমাদের সম্পর্কের কোনো পরিবর্তন না দেখে উনি একদিন নিজ থেকে বললেন তুমি কী আমার বন্ধু হবে?বন্ধুত্বের বন্ধনের কারনে হয়তো কিছু পরিবর্তন আসতে পারে। হয়েছিলোও ঠিক তাই উনার সাথে আমার আর কথা বলার সময় জড়তা কাজ করতো না, খুবই মিশুক হয়ে গিয়েছিলাম।

সেদিন সকাল ভোরেই উনি আমাকে টেনে বসিয়ে দিলেন।ঘুমঘুম চোখে উনার দিকে তাকালাম,! উনি অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে বললেন,,”তুমি সত্যিই আজকে কাঁদো নি,!ও মাই গড বিশ্বাস ই হচ্ছে না?”

আমি বিস্মিত হয়ে বললাম,,”কী হয়েছে?”

উনি কেমন অঙ্গভঙ্গি করে বললেন,,”প্রতিদিন শেষ রাতেই তুমি নিদ্র বলে ফুফিয়ে কেঁদে উঠো।বিলিভ মি একটা রাত ও বাদ যায় নি,তুমি প্রতিদিনই কেঁদেছিলে,কিন্তুু কাল রাতে একটুও কাঁদো নি।আই কান্ট বিলিভ,হাউ ইস দিস পসিবল?”

আমি কিছুক্ষণ উনার মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলাম,এরপর কোনো কথা না বলেই চুপ-চাপ উঠে চলে যাই। এ প্রথম আমি জানলাম যে আমি প্রতিদিন মাঝরাতে নিদ্রের জন্য কাঁদি,উনি আমাকে একবারও এ বিষয়ে বলেন নি। আচ্ছা,উনার কেমন লাগতো যখন আমি উনার সামনে নিদ্রের কথা বলতাম?নিশ্চই খারাপ লাগতো,হয়তো খুব খারাপ লাগতো,!

এরমধ্যেই একদিন উনার বন্ধুদের দাওয়াত দিয়েছিলেন বাড়ীতে আসার জন্য,,সেদিন আমি নিজ হাতে সব রান্না করেছিলাম আর সেটাই প্রথম ছিলো,আমি এর আগে (বিয়ের পর) রান্না করি নি। ভয়,জড়তা সব মিলিয়ে অন্যরকম টেনশনে ছিলাম।উনি কিন্তু আমাকে প্রত্যেকটা কাজে সাহায্য করেছিলেন,! সেদিন উনি সেই নীল শাড়ী টা বের করে আমার হাতে দিয়ে বলেছিলেন যে আজকে যেনো ওই শাড়ী টা পরি। আমি কিছু একটা ভেবে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলাম,এরপর সেদিন শাড়ী টা পরে ছিলাম সাথে হালকা পাতলা সাজগোজ ও দিয়েছিলাম। তৈরী হয়ে রুমে আয়নার সামনে দাড়িয়ে ছিলামম তখনই উনি ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে ছিলেন।আমার দিকে উনার নজর পড়তেই উনি থমকে গিয়েছিলেন,উনি ধীরে ধীরে এক পা এক পা করে আমার সামনে এসে দাড়ালেন।আমি উনার দিকে তাকাচ্ছিলাম না কেমন জড়তা কাজ করছিলো,উনি তখন আমার হাত চেঁপে ধরলেন,আমি সাথে সাথে উনার দিলে তাকালাম। আমার হাত ধরে উনি রুমের বাহিরে নিয়ে যাচ্ছিলেন, আমি বারবার জিজ্ঞেস করতে যেয়েও করতে পারি নি,গলা দিয়ে কথা ই বের হচ্ছিলো না।

উনি কোনো কথা না বলে সোজা আমাকে নিয়ে ছাদে চলে আসলেন,তখন কড়া রোদ পড়ছিলো।আমাকে ছাদের দোলনাতে বসিয়ে দিলেন,এরপর চুলের খোপা খুলে দিলেন, আমি শুধু অবাক নয়নে উনার কান্ড দেখছিলাম।উনি ফোন বের করে ফটাফট দুটো ফটো ক্লিক করে নিলেন,! এরপর ফোন ঘাটাঘাটি করে বিরবির করে বললেন,পারফেক্ট! আমি উঁকি দিতেই দেখলাম ফোনের মধ্যে আমার একই পোজের দুটো ছবি।একটা এ মাত্র তোলা,আর দ্বিতীয় টা অনেক অনেক আগের। গায়ের জামা টা দেখে মনে হলো এটা হয়তো আমার ক্লাস এইটের সময়ের,!আমি আরেকটু ঝুঁকতেই উনি ফোন সরিয়ে ফেললেন। আমি উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,,”এটাতো আমার ছোটবেলার ছবি,!আপনি এটা কোথায় পেলেন আর এমন কোনো ছবি আমি তুলেছি বলে তো মনে হয় না।”

উনি কথাটা এড়িয়ে যাচ্ছিলেন দেখে আমি জোরাজুরি করলাম,উনি তখন এদিক-ওদিক তাকালেন।চোখ বন্ধ করে গাঢ় নিঃশ্বাস ফেললেন,আমার চোখে চোখ রেখে বললেন,,

—“আমি যখন টিনেজের ছিলাম তখন এক মায়াপরীর গভীর মায়ায় জড়িয়ে গিয়েছিলাম। যে দেখতে একদম জান্নাতের হূরের মতো। জানো কখন তার গভীর প্রেমে পড়েছিলাম,!এক রৌদ্রময় দুপুরে ছাদে গিয়েছিলাম জামা কাপড় নিয়ে আসার জন্য,কে জানতো সেদিন আমার কপালে সর্বনাশ ছিলো। ছাদের শেষ সিড়িতে পৌঁছাতেই থমকে গিয়েছিলাম,সেখানে যেতেই দেখেছিলাম ছোট্ট এক পরী নীল জামা পরে ছাদে বসে গায়ে রোদ মাখছে,সূর্যের ঝলমলে আলো সরাসরি ওর ওপর পড়ছিলো। আমি ভালো করে তাকাতেই দেখেছিলাম ও চুলগুলো এলোমেলোভাবে ছড়িয়ে বসে আছে,চুলগুলো পিঠ ছাড়িয়ে কোমড় অবধি ঠেকিয়েছে। ওকে দেখে মনে হয়েছিলো ও হয়তো সূর্যের আলোয় গোসল করছে।আমি এক ছুটে নিচে চলে এসেই আম্মুর ফোন নিয়ে আবারো এক ছুট দিয়ে ছাদে চলে আসি।আর তখন সে পরীর সে অবস্থার ছবি তুলে নিয়েছিলাম,ব্যাস!”

আমি অবাক হয়ে উনার কথা শুনছিলাম,,উনার কথাগুলো শুনতেই আমার মষ্তিষ্কে সেদিনের ঘটনা টা অস্পষ্টভাবে নাড়া দিয়ে উঠলো।আমি ক্ষীণ কন্ঠে বললাম,,

—“বাকিটুকু বললেন না?পরীটার সুখ আপনার সহ্য হয় নি তাই ওই পরীকে ধমক দিয়ে নিচে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন,!”

উনি হেসে দিলেন,হাসিমুখেই বললেন,,

—“আরে আমি কী করবো?পাশের বাসার ছাদ থেকে কয়েকটা ছেলে তখন তোমার দিকে কুদৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো,!চোখ দিয়েই গিলে খাচ্ছিলো,তাই তো তোমাকে ধমক দিয়ে নিচে পাঠিয়ে দিয়েছিলাম।”

আমি মুখ ঘুরিয়ে অন্যদিকে তাকালাম,তখন উনি পিছন থেকে আমার কানের কাছে এসে বললেন,,”রাগ করে কোনো লাভ নেই,আমি কোনো তোমার রাগ ভাঙ্গাবো না!”

উনার কথা শেষ হতেই কানের মাঝে অদ্ভুত সুর ভেসে আসলো,দ্বিতীয়বার শুনতেই বুঝতে পারলাম যে কেউ মুখ দিয়ে শিশ দিচ্ছে।দুজনেই চমকে পিছনে ফিরতেই দেখলাম যে কতগুলা ছেলে-মেয়ে একসাথে শিশ বাজাচ্ছে,উনার মুখে তখন লজ্জার আভা আর আমার মুখে অবাকতা,!উনারা সবাই একসাথে বলে উঠলো,,–“কি মাম্মা,কী চলে?আমরা এসে আপনাদের পুরো ঘর হন্নহন্ন হয়ে খুজতেছি আর আপনারা এখানে র-র-রোমেন্স করতেছেন,কাহিনী কী,!”

উনি সম্পূ্র্ণ কথাটা এড়িয়ে গিয়ে উনাদের বললেন,,”কীরে তোরা চলে এসেছিস,তাও এত বাহিনী নিয়ে?তোদের দেখে মনে হচ্ছে তোরা যদি পারতি তাহলে রাস্তা থেকেও তুলে আনতে,!পুরো ভার্সিটির পোলাপাইন নিয়ে এসেছিস নাকি?”
উনারা সবাই একসাথে কথা বললেন, এত জন একসাথে কথা বলায় ঠিক বুঝতে পারলাম না,মনে হচ্ছিলো যেনো ঝগড়া করছে। উনি সবাইকে হাত উঠিয়ে থামিয়ে বললেন,,”চুপ কর,প্লিজ।মানুষ দেখলে ভাববে পাওনাদার রা হানা দিতেছে।”
উনি ইশারায় আমাকে নিচে আসতে বলে উনাদের কথার ভাজে ফেলে নিচে চলে আসলেন,! সেদিন উনাদের সবার সাথে আমি খুব আনন্দ করেছিলাম,সবাই এত মিশুক আর দুষ্টু যে বলার বাহিরে,!সেদিন আমি নিজেকেই চিন্তে পারি নাই,অনেকদিন পর সেদিন মন খুলে হেসেছিলাম।উনার এত এত ফ্রেন্ডস এসেছিলো,আমি সবার সাথেই কথা বলেছিলাম, এমনকি ছেলেদের সাথেও। ছেলেগুলোর মধ্যে যে কয়েকজনের স্বভাব-চরিত্র বাজে ছিলো সেটা আমি জানতাম না।যে যেটা বলতো সেটাই শুনতাম,এটাই আমার জন্য কাল হয়ে দাড়ায়,! চিকন গড়নের একটা ছেলে এসে আমাকে বললো, ভাবি দুই গ্লাস জুস আনুন।খেতে খেতে আপনার সাথে পরিচিত হবো,!’ আমি আচ্ছা বলে আনার জন্য উঠতেই উনি আবারো বললেন,,”আরে ভাবি যাওয়ার দরকার নেই।এখানেই তো আছে,!’ এ কথা বলে উনি আমার হাতে এক গ্লাস জুশ দিয়ে উনি আরেক গ্লাস হাতে নিলেন,! জুশটুকু মুখে দিতেই অন্যরকম স্বাদ অনুভব করলাম। আমি গ্লাস টা রাখতে নিতেই উনি জোরাজুরি করে পুরো জুশ খাইয়ে দিলেন,! সবটুকু খেতেই আমার মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠলো, আমি নেশাক্ত চোখে সামনের ছেলেটির দিকে তাকালাম, ছেলেটির মুখে অন্যরকম হাসি দেখছিলাম। আমি হাত উঠিয়ে ওর গালে রাখলাম,গোর লাগা কন্ঠে বললাম,,”উফফ,কী সুন্দর আপনি,আপনাকে আমার খুব ভালো লাগে।আপনার গাল দুটু টেনে দিতে ইচ্ছে করতেছে,!”

ছেলেটি হেসে বললো,,”চলো তোমার সব ইচ্ছা পূরন করে দিবো। ওইদিকে আসো,!”

আমি খুশিতে গদগদ হয়ে ওর হাত ধরে স্টোর রুমের দিকে হাটা দিলাম।

.
.#সূর্যস্নান
#পর্ব_অন্তিম(শেষাংশ)
#Nishat_Tasnim_Nishi

ছেলেটি হেসে বললো,,”চলো তোমার সব ইচ্ছা পূরন করে দিবো। ওইদিকে আসো,!”

আমি খুশিতে গদগদ হয়ে ওর হাত ধরে স্টোর রুমের দিকে হাটা দিলাম। ছেলেটা আমাকে নিয়ে স্টোর রুমে চলে আসে,এরপর আমার মাথাটা প্রচন্ড ব্যাথা করে,কি হচ্ছিলো কোনো খবর ছিলো না।নিজের হুশেই ছিলাম না,!

প্রচন্ড মাথাব্যথা নিয়ে ঘুম থেকে উঠে বিছানায় বসলাম। কপালে হাত দিয়ে মাথা নিচু করে কয়েক সেকেন্ড বসে রইলাম। হঠাৎ নিজের দিকে তাকাতেই চমকে উঠলাম,আমার সর্বাঙ্গে কোনো বস্ত্র নেই,গায়ের উপর পাতলা চাদর জড়িয়ে শুয়েছিলাম। আমি প্রচন্ড গাবড়ে যাই, আমি এপাশ-ওপাশ তাকিয়ে খুজতে লাগলাম কেউ আছে কী না,কিন্তু আশেপাশে কাউকেই দেখলাম না। ব্যালকনির দিকে তাকাতেই দেখলাম আয়ান বাহিরের দিকে শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে সিগরেট ফুঁকছে,! অজানা এক ভয়ে শরীর শিউরে উঠলো,!

ওয়াশরুম থেকে বের হতেই দেখলাম আয়ান এখনও ওখানে দাড়িয়ে আছে,ওর আশেপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অনেকগুলো সিগারেটের শেষাংশ,! একটুপর আয়ান রুমে আসলো,ওর দৃষ্টি প্রথমেই আমার উপর পড়লো,!আমিও ওর চোখের দিকে তাকালাম।ও সাথে সাথেই চোখ সরিয়ে নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো এবং যাওয়ার সময় ঠাস করে দরজা টা লাগিয়ে দিলো। দরজা টা এত জোরে লাগিয়েছে যে আমিসহ পুরো ঘর কেঁপে উঠলো,!আমার কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমতে লাগলো,এবং গলা প্রচন্ড পিপাসা পেলো,!কারন আমার স্পষ্ট মনে আছে, আমি ওই ছেলেটার সাথে এক রুমে ছিলাম। আমি জোরে জোরে শ্বাস নিতে লাগলাম, কেনো যেনো শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছিলো,! ভয় পাওয়াটা আমার জন্য স্বাভাবিক ছিলো,কারন আমার ধারনা হলো হয়তো ওই ছেলেটার সাথে আমার কিছু হয়েছে,!নিজের উপর প্রচন্ড রাগ লাগলো,আমি এমন কীভাবে হলাম,?অন্য একটা ছেলের সাথে,!না,আর ভাবতে পারলাম না কিছু।
মাথায় হাত দিয়ে ধপ করে বিছানায় বসে পড়লাম,!

কিছুক্ষণপর রুম থেকে বেরিয়ে উনার সামনে যেতেই উনি মুখ ঘুরিয়ে অন্যদিকে করে ফেললেন,আমি আশপাশ তাকাতেই দেখলাম পুরো ঘর লন্ডভন্ড হয়ে আছে,! ফ্লোরের বিভিন্ন জায়গায় রক্তও লেগে আছে,! উনি কপালে হাত দিয়ে সোফায় হেলান দিয়ে বসে আছেন,!আর একটুপর পর নিজে নিজে বিরবির করছেন,! আমি গুটিগুটি পায়ে উনার সামনে দাড়ালাম,উনি আমার দিকে একপলক তাকিয়ে দৃষ্টি সরিয়ে নিলেন,! আমি উনাকে কিছু বলতে চাচ্ছিলাম,কিন্তুু পারতেছিলাম না,!ভয়ে,কান্নায় সব গলায় এসে আটকে যাচ্ছিলো,! হাটু গেড়ে উনার সামনে বসে পড়লাম, আমি মুখ দিয়ে একটা শব্দ বের করতেই উনি হাত উঠিয়ে থামিয়ে দিলেন।আর গম্ভীর গলায় বললেন “এখান থেকে চলে যাও,নাহলে আমি অন্যকিছু করে ফেলবো।” উনার একবাক্যেই বুঝেছিলাম যে কী হয়েছিলো,?আমি মুখে হাত দিয়ে দৌড়ে রুমে চলে আসলাম,!

আমি তখন পাগলের মতো হয়ে গিয়েছিলাম,কী করবো কী করবো ভেবে পাচ্ছিলাম না,! আয়নার উপর নিজের প্রতিফলন দেখেই রেগে গেলাম,!আমি পাশে থাকা ফুলদানি টা জোরে ছুড়ে মারলাম আয়ানা তে,সাথে সাথে বিকট আওয়াজ করে আয়না টা টুকরো টুকরো হয়ে গেলো,! আমার নিজের উপর ঘৃনা লাগতে লাগলো,আমি টেবিল থেকে ঔষধের পাতা থেকে সবগুলো ঔষধগুলো খুলে নিয়ে মুখে পুরে নিলাম,ঠিক তখনই কোথা থেকে আয়ান এসে আমার মুখ চেপে ধরে সবগুলো ঔষধ বের করিয়ে ফেললেন,!আমি উনার দিকে তাকাতেই উনি জোরে থাপ্পর দিয়ে দিলেন গালে,!এত জোরে দিলেন যে আমার পুরো দুনিয়া ঘুরে গেলো,! আমি ফিকরে কেঁদে দিলাম,উনি আমার মাথাটা টেনে উনার বুকের সাথে মিশিয়ে নিলেন,!আমার কান্নার বেগ দ্বিগুণ হয়ে গেলো,!উনি চুলে হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে উঠলেন,,”আই এম সরি,আমি যদি,,!”
উনার পুরো কথা শেষ হওয়ার আগেই আমি কান্নামাখা গলায় বলে উঠলাম,,”আমার সাথেই কেনো এমন হয়?” আমার কথাটা হয়তো বিষের মতো ছিলো উনার জন্য,তাই তো উনি একদম চুপ করে গেলেন,!উনি আর সেদিন আমার সাথে প্রয়োজন ছাড়া কথা বললেন না,,আমি ও চুপ ছিলাম। আমি এতটা ডিপ্রেশড হয়ে গিয়েছিলাম যে আশেপাশে কী হচ্ছে কোনো খবর ই ছিলো না,! দু-তিনদিন ঠিকঠাক মতো খেতেও পারছিলাম না,!গলা দিয়ে খাবারই নামছিলো না,!এর মধ্যে খবর পেয়েছিলাম যে ওই ছেলেটা নাকি হাসপাতালের আই সি ইউ তে ভর্তি হয়ে আছে,!আয়ান নাকি ওকে খুবই বাজেভাবে মেরেছিলো,কাঁচের গ্লাস দিয়ে মাথায় মেরেছিলো যার ফলে ওর মাথা দিয়ে প্রচুর রক্ত ক্ষরণ হয়েছিলো,! ছেলেটার অবস্থা নাকি এখন খুব করুন,!এসব শুনেছি উনার বন্ধুর কাছে ,কালকে উনার বন্ধু এসেছিলেন আমাকে দেখতে,! উনি বেশি কিছু বলতে পারেন নি কারন আয়ান এসে উনাকে জোর করে নিয়ে চলে যান,! সে কয়েকটা দিন আমি কী পরিমাণ ডিপ্রেশনে ছিলাম সেটা শুধু আমিই জানি,! আয়ান আমার সাথে ঠিক মতো কথাও বলতো না,এমনকি আমার চোখের দিকেও তাকাতোও না,! সারাক্ষণ নিজের মতো থাকতো,!হাহ্,তাতে আমার কী?আমি তো জানতাম ই ছেলেরা এমনই,!সব শুধু শরীরের টান,,ভালোবাসা বলতে কিছুই নেই,!অথচ দুইদিন আগেও উনার ভালোবাসা দেখে আমি অবাক হয়েছিলাম,!আমি বিবাহিত,বিধবা তারপরেও উনার আমার প্রতি পাগলামি দেখে আমি সত্যিই উনার মায়ায় পড়ে গিয়েছিলাম,! এমন অস্বাভাবিকভাবেই কেটে যায় দুইমাস,!দুইমাস পরে হঠাৎ ই আমি আমার কিছু পরিবর্তন দেখেছিলাম,সেটা দেখেই সন্দেহের বশে প্রেগন্যান্সি টেস্ট করাই,!আর রেজাল্ট কী ছিলো জানেন?পজিটিভ রেজাল্ট এসেছিলো,সেটা দেখেই আমি একদম ভেঙ্গে গিয়েছিলাম,!আমার কষ্টের পরিমান আরো বেড়ে গিয়েছিলো,! বাড়ীতে এসে একদম অন্যমনস্ক হয়ে গিয়েছিলাম,কোথায় হাটছি, কীসের উপর দিয়ে যাচ্ছি খবরই ছিলো না,!আমি ভাবলাম না এর একটা ব্যবস্থা করতে হবে,অন্যের সন্তান আমার পেটে বিষয়টা আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারলাম না,!আমি নিদ্রের ছবি টা বুকে জড়িয়ে নিলাম,শেষবারের মতো দুচোখ ভরে দেখলাম,!ছবি টা বুকে করেই আমি ছাদের উদ্দেশ্যে পা বাড়ালাম,!ছাদের কার্নিসে এসে দাড়িয়ে পড়লাম,চারতলা ছাদ, এখান থেকে যে কেউ পড়লে তার যে আর বাঁচার সম্ভাবনা নেই সেটা ভালোই বুঝতে পেরেছি,!সেখানে দাড়িয়ে নিদ্রের ছবির দিকে তাকিয়ে বলেতে লাগলাম,”আমি চলে আসছি তোমার কাছে,সরি তোমার কথা রাখতে পারলাম না,আমি পারবো না এভাবে বেঁচে থাকতে,!আমি না প্রতিদিন সৃষ্টিকর্তার প্রার্থনা করি যে আমাকে যেনো তোমার কাছে নিয়ে আসে,!জানে কেউ ভালো না,কেউ তোমার মতো নয়,আমি তোমার কাছে আসতে চাই,!
তুমি জানো আমি যদি এখন চলে আসি তাহলে দুজন একসাথে থাকতে পারবো,! আমি আরো নানান কথা বলতে লাগলাম। ”

আমার কথার মাঝখানেই হটাৎ কেউ পিছন থেকে আমাকে টান দেই,আমি ফিরে তাকাতেই আয়ান ঠাস করে থাপ্পর বসিয়ে দেয় আমার গালে,! এ নিয়ে দ্বিতীয়বার গায়ে হাত তুললো আয়ান,! ও চেঁচিয়ে আমাকে যা নয় তা বলতে লাগলো,আমি শুধু চেয়ে চেয়ে ওর দিকে তাকিয়ে ছিলাম,!ও কী বলছে তার কিছুই মাথা ডুকছিলো না,! উনার চোখ দুটো টকটকে লাল হয়ে আছে,কপাল দিয়ে দরদর করে গাম বেয়ে পড়ছে,! উনার চোখে গভীর দৃষ্টি ফেলে বললাম, “আমি প্রেগন্যান্ট,! ” আমার একবাক্যই যথেষ্ট ছিলো উনার মুখের রং উড়িয়ে দেওয়ার জন্য,! উনি আমার দিকে অবিশ্বাসের দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন।হাত দুটো আলগা করে ফেললেন,আমি উনার দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি দিলাম,এরপর বলতে লাগলাম,,”কী হলো,হাওয়া উবে গেলো?এতক্ষণ তো প্রেম/ভালোবাসার হাজার ডায়লগ দিলেন,! এখন যখন জানলেন যে আমার গর্ভে অবৈধ সন্তান আছে তখনই আপনার কথা বন্ধ হয়ে গেলো,! আপনার মতো পুরুষেরা এমনই,শুধু মেয়েদের শরীরকেই ভালোবাসে,অথচ দুনিয়াকে দেখিয়ে বেড়াই যে তারা মেয়েদের মনকে ভালোবাসে।তাদের ভালোবাসা দেখলে যে কারোরই চোখে জল চলে আসবে,!অথচ যখন শুনে যে মেয়েটা ভার্জিন না তখনই তাদের আসল রুপ দেখিয়ে দেয়,!”

আয়ান অবাক চোখে বললেন,,”কী বলছো এসব? আর সন্তান টাকে তুমি অবৈধ কীভাবে বলতে পারলে,মানছি যে তুমি এখনো আমাকে মেনে নিতে পারো নি,! কিন্তু সেখানে আমার একার দোষ ছিলো না তোমারও দোষ ছিলো,!তাই বলে তুমি আমার সন্তানকে অবৈধ বলবে?”

আয়ানের কথা শুনে আমি কিছুক্ষণ সম্মতি হারিয়ে ফেলেছিলাম,ও কী বলছে তার কিছুই বুঝতে পারছিলাম না,!কপালে কৌতুহলতার ভাজ ফেলে উনাকে প্রশ্ন করলাম যে কী বলছেন এসব? জবাবে উনি যা বললেন সেটা শুনে আমি অবাকের শেষ পর্যায়ে,!একদমই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না,!উনি বললেন যে সেদিন নাকি রাফি অর্থাৎ ওই ছেলেটা আমাকে স্টোর রুমে নিয়ে যাওয়ার সময় উনার কোন ফ্রেন্ড দেখে ফেলেছিলো, আর সে নাকি উনাকে গিয়ে সাথে সাথে বলে দিয়েছিলো,ব্যাস আর কী উনি নাকি এসে দরজা ভেঙ্গে রুমে প্রবেশ করলেন,দরজা খুলেই নাকি উনি দেখতে পেলেন আমার শাড়ি টা একটু এলোমেলো হয়ে আছে,উনি দ্রুত এসে আমার গায়ে ভালো করে কাপড় জড়িয়ে দিলেন এরপর নাকি সবাই মিলে ছেলেটাকে গণধোলাই দেয়,শেষমেশ আয়ান নাকি ওই করুন অবস্থা করেছিলো,!উনি আমাকে এক হাতে জড়িয়ে ধরে সবাইকে বিদায় করে দিয়েছিলেন,! আমি তখন নেশাই বুদ হয়েছিলাম,কী হচ্ছিলো কোনো কিছুই বোধগম্য হচ্ছিলো না,! উল্টো আয়ানের সাথে নাকি অতিমাত্রায় পাগলামি করছিলাম,!আয়ান নাকি অনেকবার চেষ্টা করেও আমাকে থামাতে পারে নি,!আর যেহেতু উনিও আমার প্রতি দূর্বল ছিলো তাই আর উনি আমাকে আটকান নি,!বিষয়টাতে আমি একদম অতিমাত্রায় শকড ছিলাম,! এদিকে এসব শুনে নিজের ভাবনার প্রতি তীব্র ধিক্কার আসছিলো,! আমি কান্নামাখা গলায় বললাম,, “যে আমি ভেবেছিলাম যে সেদিন রাতে ওই ছেলের সাথে আমার কিছু হয়েছিলো আর আপনি সেজন্যই আমার সাথে এমন করছেন,!” উনি স্থির দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকান,বড় বড় নিঃশ্বাস নিয়ে বললেন যে,, “মোটেও এমন নয়,আমি আমার কর্মকান্ডে লজ্জিত ছিলাম,!তাই তো তোমার সাথে দৃষ্টি মেলাতে পারছিলাম না,!মনের কোনে চাপা অভিমান জমা হয়েছিলো, দ্বিতীয়বার যাতে এমন কিছু না করি সেজন্য তোমার থেকে দূরে ছিলাম,!”

সেদিন শেষ হয়েছিলো আমাদের জীবনের সব অভিমান আর কষ্ট,
নেমে এসেছিলো এক সুখের বৃষ্টি,!
বদলেছিলো জীবনের সব পুরানো অভ্যাসগুলো , আসক্ত হয়েছিলাম নতুন অভ্যাসে,!
বদলেছিলাম আমি সাথে আমার নিজের তৈরীকৃত দুনিয়ার সবকিছু,!

আমি অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছিলাম উনার সাথে,দুজনেই নরমাল স্বামী-স্ত্রীর মতো সংসার শুরু করেছিলাম,!
বাচ্চার কথা জেনে উনি ঠিক আবারো আগের মতো হয়ে গেলেন তবে আগের মতো নয় আগের থেকেও বেশি পাগলামি করতেন,! এই যেমন বাচ্চা তিনমাসের না হতে ওর জন্য জামা-কাপড়,খেলনা সব নিয়ে আসতেন,!আমি তো অবাক চোখে উনার দিকে তাকিয়ে থাকতাম,!বাচ্চা নিয়ে উনার এক্সাইটমেন্ট দেখে আমি শকড,!আমার ধারনা ছিলো এই এইজের ছেলেরা বাচ্চা নিতে চাইবে না,উল্টো কাহিনী করবে বাচ্চা নষ্ট করার জন্য,আরো অজুহাত দিবে যে আমার এখন পড়ালেখার বয়স বাচ্চা-কাচ্চার নয়,!মাঝে মাঝে চিন্তায় পড়ে যাই আমি কী আদৌ উনাকে চিনি?

তবে এসবের মাঝে সবচেয়ে খুশির বিষয় ছিলো যে উনার পরিবারের সবাই সেদিন এসেছিলেন,উনারা খবর টা পেয়ে এতটাই খুশি ছিলো যে বাকি সব কিছু ভুলেই গিয়েছিলেন হয়তো,! আয়ান শুধু ইশারায় আমাকে চুপ থাকতে বললেন,! শাশুড়ি আর শশুড় আয়নকে বলেছিলেন যে আমার নাতির জন্য তোর সব ভুল মাফ,নাতির যাতে কিছু না হয়,!
বাচ্চাটার জন্যই আমার জীবনের সব মোড় বদলে গিয়েছিলে।বাচ্চাটা আমার জন্য আশীর্বাদ স্বরুপ,ও আসার আগেই আমার জীবনের সবকিছুই নরমাল হয়ে গিয়েছে।
এর কয়েকদিনের মধ্যেই আয়ান স্কলারশিপ পেয়ে যায়,কিন্তুু উনি রিজেক্ট করে দেয়।পুরো পরিবার উনাকে বুঝিয়ে পারে নি,উনার একটাই কথা তা হলো আমি একদম বেখেয়ালি, উনি আমাকে আর বাচ্চাকে ছেড়ে কোথাও যাবেন না। অনেক কষ্টে উনাকে রাজি করিয়ে পাঠিয়েছিলাম যাওয়ার আগে উনি আমাকে দিয়ে প্রমিস করিয়েছিলেন যে আমি যাতে বাচ্চার আর আমার সম্পূর্ণ খেয়াল রাখি।আমি তখন বলেছিলাম যে প্রমিস নিজের শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত আপনার বাচ্চার রক্ষা করবো। প্রতিমাসেই রেগুলার চেকআপের জন্য হাসপাতালে আসতে হয় কারন আমার অনেক কমপ্লিকেশন আছে,!

এজন্যই আমি বাচ্চা নিয়ে এতটা এগ্রেসিভ, বুঝেছেন আপু? আপুটি কিছুক্ষণ সচেতন চোখে আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন,!উনি মাথায় হাত দিয়ে বলেন,”ও মাই গড,এত কাহিনী!

এরপর আপুটির সাথে আরো কিছুক্ষণ কুশল-বিনিময় করে সেখান থেকে চলে আসলাম,!আজ বারবার বেঁচে গেলাম,সকাল থেকেই বারবার এখানে সেখানে পড়ে যাচ্ছিলাম,! মনটা বড্ড কু ডাকছে, নিশ্চই খারাপ কিছু হতে চলেছে,! বাড়ীতে আসতেই আয়ানের আম্মু একগাদা ফ্রুটস নিয়ে আমার রুমে আসলেন,আমি কাঁথা জড়িয়ে বসে আছি,কারন আমি খুব ভালো করেই জানি এখন কাটা-ছেড়া,ব্যান্ডেজ দেখে অনেক বড় প্যাচাল হবে। আমি কোনোরকম বাহানা দিয়ে উনাকে বের করে দিলাম,! এর মধ্যেই আয়ানের ফোন বেজে ওঠে,আমি নিজের অসুস্থের অংশগুলো আড়াল করে ওর সাথে বলতে লাগলাম,কিন্তু কে জানতো রুমে আগে থেকেই সিসি ক্যামেরা আছে,! শত মিথ্যা বলেও বিষয়গুলো লুকাতে পারি নি,! অতঃপর আর কি দুমাস না হতেই উনি আসার জন্য রওনা হলেন,! আমি তো একদম অবাক। শাশুড়ি আম্মুকে বলতেই উনি উল্টো বকাঝকা করতে লাগলেন,উনি বললেন,” আমি যে সাথে কাউকে নিতে বলেছিলাম তখন শুনলে না কেনো উল্টো নিজে পন্ডিৎ সেজে একা একা চলে গেলে। ”

আমি তবুও অনুনয় বিনিনয় করতে লাগলাম জবাবে উনি শান্তস্বরে বললেন,, “লাভ নেই।ওকে শত জ্ঞান পাঠ করিয়ে দিলেও কোনো পরিবর্তন হবে না।ও এখানে এসেই ছাড়বে,আর যেখানে বিষয়টা তোমার আর বাবুর সেখানে তো কোনো রিস্ক ই নিবে না।গিয়ে দেখো ও সব ক্যান্সেল করে দিয়ে রওনাও দিয়ে দিয়েছে,!”

এদিকে উনি সত্যিই ভোর চারটার দিকে এসে বাড়ীতে পৌঁছালেন। আমি ভয়ে উনার সামনে যেতেও পারছিলাম না।উনি সবার সাথে কুশল-বিনিময় করে রুমে আসলেন,আসার সময় বলে আসলেন মা সারা রাত জার্নি করে এসেছি আমি ১১ টা পর্যন্ত ঘুমাবো,কোনো ডিস্টার্ব যেনো না হয়।উনি রুমে এসে ঠাস করে দরজা লাগিয়ে দিলোন,আমি ভয়ে গুটিসুটি মেরে শুয়ে রইলাম। উনি আমার কাছে আসতেই আমি মেকি হেসে বললাম,”আপনি চলে এসেছেন!কোনো সমস্যা হয় নি তো?” উনি রাগ রাগ ভাব নিয়ে আমার দিকে তাকালেন।আমি ইনোসেন্ট ফেস করতেই উনি সব রাগ ঝেড়ে ফেললেন,যা করি নাই সেটার জন্যও বকা দিতে লাগলেন।উনি বকবক করতেছে আমি শুধু উনার দিকে সব শুনতেছি! আমি হুট করে জড়িয়ে ধরে বললাম ‘সরি’! বিষয়টাতে উনি একদম চমকে গেলেন,বুঝাই যাচ্ছে উনি একদম অপ্রস্তুত ছিলেন এই বিষয়ের জন্য।এই প্রথম নিজ থেকে আমি উনাকে স্পর্শ করেছি।আসলে ভয়কে জয় করতেই এই পন্থা অবলম্বন! কিছুক্ষণ পর উনি বললেন,,”হয়েছে, হয়েছে!এবার ছাড় আর ঝুলে থাকতে হবে না।তোমার মত চালাক মেয়ে আমি কোথাও দেখি নি। ”
আমি হেসে দিতেই উনি হাই তুলতে তুলতে বললেন,”হাসাহাসির কিছু নেই।এখন আমার চুলগুলো টেনে দেও, প্রচুর ঘুম পাচ্ছে।তোমার কারনে ঠিকমতো একটা দিনও ঘুমাতে পারি নি।” এ কথা বলে উনি শুয়ে পড়লেন।

আমার প্রেগন্যান্সির নয়মাস চলছে।কয়েকদিন থেকে আমার অবস্থা খুব ই খারাপ চলছে।একদম শুকিয়ে গিয়েছি,চলাফেরা করাটা দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে। এরমধ্যে আমার বাবা-মা এসে অনেকদিন থেকেও গিয়েছেন। সকাল থেকে অতিরিক্ত ব্যাথা করছে,দাত চেপে সহ্য করতেছিলাম কিন্তু এখন আর পারতেছি না। ড্রয়িংরুমে বসা ছিলাম,সাথে আমার শাশুড়ি মাও আছেন। হঠাৎ উনি আমার অবস্থা দেখে জোর গলায় আয়ানকে ডাক দিলেন।আয়ান প্রায় দৌড়েই আসলেন আমার কাছে। শাশুড়ি আম্মু অস্থির গলায় বললেন,” আয়ান ওকে হাসপাতালে নিয়ে চল,দ্রুত! ”
আয়ানও একবাক্যে রাজি হয়ে গেলো,পরনের কাপড় পরেই আমাকে নিয়ে বের হলেন।উনি শাশুড়িকে বললেন শশুড়ের সাথে সবাইকে নিয়ে আসতে। গাড়ীতে উঠার পর আমার পেইন দ্বিগুণ হয়ে যায়। আমি জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছিলাম আর আয়ানকে ডাকছিলাম।যেটা ছিলো আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল যার অনেক বড় দাম দিতে হয়েছে।হঠাৎ ই আয়ান গাড়ী থেকে হাত সরিয়ে আমাকে ছুয়ে বললেন,”খুব বেশি কষ্ট হচ্ছে।একটু অপেক্ষা করো আমরা হাসপাতালে,,” পুরো কথা বলার আগেই আমি চিৎকার দিয়ে বললাম আয়ান গাড়ী। কারন তখন সামনে থেকে বড় বাস আসতেছিলো আর আয়ান স্টেয়ারিং থেকে হাত সরিয়ে দিয়েছেন। হয়তো আমার অবস্থা দেখে আয়ানের হুশ ই ছিলো না ও কী করছে! লাস্ট সেকেন্ডেই আয়ান গাড়ী টা বাকা করে সরিয়ে ফেলেছে আর বাসেরর থেকে আমরা বেঁচে যাই।তবুও শেষ রক্ষা হয় নি, কারন গাড়ী গিয়ে একটা গাছের সাথে ধাক্কা লাগে।যার ফলে আমি বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হই। আমার শরীরের বিভিন্ন অংশ থেকে ফিনিক দিয়ে রক্ত বের হচ্ছিলো। আয়ানের কপাল ফেটে রক্ত বের হচ্ছিলো।ও সেদিকে তোয়াক্কা না করে নূপুরের জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ে। হাসপাতালে নিয়ে আসতেই ডাক্তার ওকে ইমার্জেন্সিতে শিফ্ট করায়। নূপুর কেবিনে যাওয়ার আগে আয়ানের হাত ধরে বলে,” কথা দেন, আমার কিছু হয়ে গেলেও আপনি আমার সন্তানের খেয়াল রাখবেন।আপনি কখনো ওকে একা ছেড়ে দিবেন না আর না আমার কমতি ওকে বুঝতে দিবেন। আমি জানি আমার কন্ডিশন খুব খারাপ, বেঁচে হয়তো ফিরবো না। আপনি ভুলেও ভুল পদক্ষেপ নিবেন না।কথা দেন!”
আয়ান নির্বাক ও ভাবতেও পারে নি নূপুর এমন কিছু বলবে।আয়ান বারবার বলতে লাগলো তোমার কিছুই হবে না। নূপুর ওর দিকে তাকিয়ে বললো এটা আমার শেষ অনুরোধ রইলো আপনার কাছে! ব্যাস আর কোনো কথা হয় নি ওকে অপারেশন রুমে শিফ্ট করায়।ডাক্তার রা তাদের বেস্ট ট্রাই করেও নূপুরকে বাঁচাতে পারে নি। বাচ্চাটাকে বাঁচাতেই তাদের হিমশিম খেতে হয়েছে। টানা পাঁচদিন বাচ্চাকে হাসপাতলে স্পেশাল কেয়ারে রাখা হয়েছে। ডাক্তার যখন নূপুরের মৃত্যুর কথা আয়ানকে বলেছিলো,আয়ান সেখানেই সেন্সলেস হয়ে যায়।পুরো আট ঘন্টা পর ওর সেন্স ফিরে আসে! সবাই জানে আয়ান এখন খুব পাগলামি করবে,কারন ও নূপুরের প্রতি ভীষণ এগ্রেসিভ ছিলো! কিন্তু এমন কিছুই হয় নি আয়ান একদম চুপচাপ হয়ে গিয়েছিলো।সবাই যখন ওকে নানান কথা বুঝাচ্ছিলো তখন ও নার্সের দিকে তাকিয়ে শান্ত গলায় বলে আমার বাচ্চা কই? নার্স ভয়ে ভয়ে পাশের রুম থেকে নূপুরের মেয়েকে নিয়ে এসে ওর কোলে দেয়। আয়ান কাপা কাপা হাতে ওকে কোলে নেয়। মেয়ের দিকে তাকাতেই ওর চোখ থেকে দুফোটা জল গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়লো বাচ্চার মুখে।বাচ্চা নড়েচড়ে উঠতেই ও বুকের সাথে মিশিয়ে নিয়েছিলো।

সাতবছর পর,

“আরুহি!আরুহি! দাড়াও,কই যাচ্ছো। এমন করে না, সোনা খেয়ে নেও,!”

আরুহি মুখ ফুলিয়ে তার দাদীকে বললো,,
—“না,আমি খাবো না। আমার সব ফেরেন্ড(ফ্রেন্ড) রা ওদের আম্মির হাতে খায়,আমিও আম্মির হাতে খাবো।আমাকে আম্মি এনে দেও,!”

আরুহির কথা শুনে ড্রয়িংরুমে উপস্থিত সবার মুখের রং বদলে যায়। আয়ান গভীর মনোযোগ দিয়ে ল্যাপটপে কাজ করছিলো,হঠাৎ এমন কথা শুনে ও চোখ তুলে তার মেয়ের দিকে তাকায়। সবার দৃষ্টি তখন আয়ানের উপর, আয়ান কোনো সাড়াশব্দ না করে ল্যাপটপ সহ উঠে চলে যায়। সবাই তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। আরুহির দাদী হাত থেকে খাবারের প্লেট টা টেবিলে রেখে দেন,আরুহিকে কোলে বসিয়ে বললেন,,
“তোমাকে না বলেছিলাম আম্মির কথা না বলতে,!দেখেছো বাবাই রাগ করে চলে গিয়েছে।”

–“বাবাই কী হার্ট হয়েছে?”

–“হুম,তুমি দেখো নি।”

আরুহি মাথা নাড়িয়ে বললো,”হ্যা,তাই তো।” তারপর কী ভেবে যেনো বললো,দাড়াও আমি এক্ষুণি ঠিক করে দিচ্ছি। বলেই ও গুটিগুটি পায়ে ওর বাবাকে খুজতে বেরিয়ে পড়ে। অনেক খোঁজার পর, ছাদে ওর বাবার দেখা পায়,! ও চুপিচুপি পা ফেলে ওর বাবার সামনে গিয়ে দাড়ায়,চট করে দুই হাত উঠিয়ে কান ধরে বললো,”সরি বাবাই,আমি আর আম্মির কথা বলবো না।তুমি কী রাগ করেছো?”
আরুহির আওয়াজ পেয়ে আয়ান আকাশের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে ওর দিকে তাকায়। মেয়েটা অবিকল তার মায়ের মতো। সেই চোখ,সেই নাক, ঠোঁট,শুধুমাত্র গায়ের রং টাই আয়ানের মতো,ধবধবে সাদা!ওকে কিছুটা বিদেশি বাবুদের মতো মনে হয় তবে মুখে বাঙালির চাপ রয়েছে। মেয়েটা যখন এভাবে সরি বলে তখন ওর রাগ সব ধুলোয় মিশে যায়। ও আরুহিকে হাত উঠিয়ে কোলে নেয় ওর কপালে আলতো স্পর্শ করে বললো,”না,বাবাই আমি একদম রাগ করি নি। তুমি না তোমার আম্মিকে দেখতে চেয়েছিলে,দেখবে?”

আরুহির চোখে তখন খুশির ঝিলিক,ও দ্রুত মাথা নাড়িয়ে বলে,”হ্যা!”
আয়ান হাত উঠিয়ে আকাশের দিকে তাক করে আর বলে যে ওইখানে আছে তোমার আম্মু।ও তোমাকে সবসময় দেখে,তুমি জানো তোমার আম্মি কত কষ্ট পায় যখন তুমি ওর জন্য না খেয়ে থাকো।ওর জন্য কান্না করো,ও কিন্তু ভীষণ কষ্ট পায়!তুমি কী চাও তোমার জন্য তোমার আম্মিই কষ্ট পাক?”

আরুহি মাথা দুলিয়ে বলে,”না!কিন্তু বাবা আমি কেনো দেখতে পাচ্ছি না?”

–“তুমি এখন দেখতো পাবে না যখন বড় হবে তখন দেখতে পাবে!এখন বলো তুমি আর আম্মির জন্য এমন করবে?”
আরুহি লক্ষী মেয়ের মতো মাথা নাড়ায়।ওর অবুঝ মন বলে যে ওর বাবা যা বলছে সেটাই সত্যি,ও যখন বড় হবে তখনই দেখতে পাবে। ও আকাশের দিকে তাকিয়ে মনেমনে বলে আম্মু আমি তাড়াতাড়ি বড় হয়ে তোমাকে দেখতে আসবো।তুমি কোথাও যেয়ো না!
আয়ান মেয়ের মুখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে,এরপর ওর মাথা টা কাধে রেখে কোলে নিয়ে ছাদ ত্যাগ করে। আয়ান আজ খুব অসহায়,!যখন নুপূর এ পৃথিবী ত্যাগ করে চলে গিয়েছিলো সেদিন থেকেই ও একদম অসহায়। নূপুরের মৃত্যুর জন্য ও নিজেকে দায়ী করে,আজও নিজেকে ক্ষমা করতে পারে নি। সেদিনের এক্সিডেন্ট ও স্বাভাবিকভাবে নিতেই পারে নি,! নূপুর চলে যাওয়ার পরে দ্বিতীয়বার আর বিয়ে করে নি। ওর পরিবার কম চাপ দেয় নি বিয়ের জন্য। এমনকি আরুহির অজুহাত দিয়েও ওকে বিয়ে করাতে পারে নি। ও সবচেয়ে বেশি কষ্ট পায় যখন আরুহি মায়ের জন্য কান্না করে। একদম ই মেনে নিতে পারে না,কতবার জীবনের মায়া ত্যাগ করতে যেয়েও পারে নি,কারন ও তো নূপুরের কাছে ওয়াদাবদ্ধ ছিলো। এখন তো ও নানান বাহানা দিয়ে থামাতে পারে কিন্তুু যখন দুধের শিশু ছিলো তখন? ও ফিডার একদম ই মুখে নিতো না সব বমি করে বের করে দিতো,নিজের ছোটছোট হাতদুটো চুষতো সারাক্ষণ। ক্ষুধায় যখন কান্না করতো তখন আয়ানের বুক ফেটে যেতো।বাবা হয়ে মেয়ের এ কষ্ট একদম ই সহ্য করতে পারতো না।মাঝে মাঝে মেয়ের কষ্ট দেখে ও শব্দ করে কেঁদে দিতো। মেয়েটার একদম ই পুষ্টি নেই,অপুষ্টিহীনতার স্বীকার।সব ভেঙ্গে গুড়িয়ে ফেলতে চাইতো,নিজেকে শেষ করে দিতে ওর ইচ্ছা করতো। ছয়বছরের বাচ্চা হওয়া স্বত্তেও ও অনেক অস্বাভাবিক। এসব ভেবে আয়ান দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে আর ভাবে জীবন তো এখন শুরু ভবিষ্যৎ এ হয়তো আরো কষ্ট সহ্য করতে হবে মেয়েটাকে।

মানুষ বলে চোখের আড়াল হলেই নাকি মনের আড়াল।কিন্তুু কই আয়ানের ক্ষেত্রে তার ছিঁটেফোটাও নেই।না হলে নূপুরের মৃত্যুর এত বছর পরেও ও কেনো নূপুরকে ভুলতে পারছে মা উল্টো আরো বেশি ভালোবেসে ফেলেছে। মানুষ মরেও অমর হয়ে থাকে মানুষের হৃদয়ে!নূপুর ও আয়ানের হৃদয়ে অমর হয়ে আছে।আজও আয়ান ওর স্মৃতিচারণ করে।এ বুঝিই সত্যিকারের ভালোবাসা যা কিছু মানুষ ভাগ্য করে পায়! নূপুর সত্যিই অনেক ভাগ্যবতী,ভাগ্য করেই হয়তো এমন জীবনসঙ্গী পেয়েছে!বেঁচে থাকুক মানুষের হৃদয়ে এমন হাজারো আয়ানের ভালোবাসা!

সমাপ্ত!

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here