সেই তুমি💐
পর্ব -১৩+১৪
Samira Afrin Samia
#Nipa
ইশিতা ওয়াশরুমে চলে গেলে ইয়াশ বেডের উপর থেকে তার ফোন টা হাতে নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে যায়। ইশিতা ওয়াশরুমে গিয়ে চোখে মুখে পানি ছিঁটা দিয়ে নেয়। হঠাৎ করে ইশিতার ওয়াশরুমের আয়নার দিকে চোখ চলে যায়। ইশিতা আয়নায় নিজেকে দেখছে আর ভাবছে এই কিছু দিনে তার সাথে কত কিছু ঘটে গেল। কি থেকে কি হয়ে গেল তার সাথে। সে যেমন ভেবেছিল তেমন কিছুই হয়নি। উল্টো যা কখনও ভাবেনি তা ই হয়ে গেল। যাকে ভালোবাসে তাকে স্বামী হিসেবে না পেলেও এমন একজন কে স্বামী হিসেবে পেয়েছে যে তাকে অনেক সন্মান করে তার অনেক খেয়াল রাখে। ইয়াশ ইশিতা কে ভালোবাসে কিনা তা ইশিতা জানে না তবে এটা খুব ভালো করে বুঝতে পারছে ইয়াশ আর যাই করুক কোনো দিনও ইশিতা কে বিন্দু মাত্র কষ্ট পেতে দিবে না।
ইশিতা ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে রুমে আসে। ইশিতা রুমে এসে রুম টা ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলো। রুমের সব কিছুই অনেক গুছানো। কোনো ছেলের রুম যে এতোটা গুছানো হতে পারে তা ইশিতার জানা নেই। রুম টা ধরতে গেলে অনেক টা ই বড়। জিনিস পত্র দিয়ে পুরো রুম পরিপূর্ণ। প্রত্যেক টা জিনিস খুব দামী বলে মনে হচ্ছে। ইয়াশের রুম দেখে বুঝা যায় ইয়াশের রুচি খুব উন্নত। ইশিতা হাঁটতে হাঁটতে ব্যালকনি তে গেল। ইশিতা ব্যালকনিতে গিয়ে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। ইয়াশের এই রুমের ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে শহরের প্রায় অনেক টা অংশ দেখা যায়। রাতে যে বাইরের জগৎ টা এতো সুন্দর হয় তা ইশিতা আগে কখনও দেখেনি। ছোট থেকেই তো সন্ধ্যার পর নিজের রুম থেকে কখনও বের হয় নি। মামা মামী কখনও রাতে বাইরে যেতে দেয়নি।
বিভিন্ন ধরনের লাইট রাতের অন্ধকারের মাঝেও আলো করে রেখেছে। নিচে রোড দিয়ে কত গাড়ি, কত মানুষ যাতায়াত করছে বুঝা ই যাচ্ছে না এখন রাত। ইশিতা মন ভরে রাতের পৃথিবী টা কে উপভোগ করছে। কিছু মুহূর্তের জন্য নিজের সব দুঃখ কষ্ট ভুলে গেছে ইশিতা।
ইয়াশ রুমে এসে ইশিতা কে না পেয়ে ভয় পেয়ে গেল। ইয়াশ ভাবছিল ইশিতা হয়ত নিচে মায়ের কাছে গেছে কিন্তু মায়ের কাছে গিয়েও যখন ইশিতা কে পেল না। তখন ইয়াশ সত্যি সত্যিই অনেক ভয় পেয়ে যায়। ইশিতা কোথাও চলে গেল না তো?
ইয়াশ আবার রুমে এসে ফোন হাতে নিয়ে কাকে যেন কল করতে নিছিলো। তখন ইয়াশের মনে হলো ব্যালকনিতে কেউ একজন আছে। এতো রাতে ইয়াশের রুমের ব্যালকনিতে ইশিতা ছাড়া আর কে ই বা হবে। তাহলে ইশিতা ব্যালকনিতে আছে। ইয়াশ ব্যালকনিতে গিয়ে ইশিতার পেছনে দাঁড়ায়। ইয়াশ রুমে এসেছে এটার দিকে ইশিতার কোন খেয়াল নেই। ইয়াশ ইশিতার দিকে তাকিয়ে দেখে ইশিতা গভীর মনোযোগ নিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। ইশিতা বাইরের দিকে তাকিয়ে এমন ভাবে কি দেখছে তা ইয়াশ বুঝতে পারছে না। মিনিট কয়েক হয়ে গেল তার পরও ইশিতা এখনও ওভাবেই বাইরে তাকিয়ে আছে দেখে ইয়াশ একটু শব্দ করে উঠলো।
ইশিতা পেছন থেকে কারো শব্দ শুনে পেছনে তাকিয়ে দেখে ইয়াশ এসেছে। ইয়াশ কে দেখে ইশিতা কিছু না বলে,একটুও দেরি না করে ইয়াশের পাশ কাটিয়ে রুমে চলে এলো।
ইয়াশ ও ইশিতার পেছন পেছন রুমে আসে। ইয়াশ রুমে এসে টেবিলের উপর থেকে একটা ব্যাগ হাতে নিয়ে ইশিতার দিকে এগিয়ে ধরে।
— এটা তোমার জন্য।
ইশিতা ব্যাগ হাতে না নিয়েই ইয়াশের দিকে জিঙ্গাসা সূচক দৃষ্টিতে তাকায়।
— হাতে নিয়েই দেখো না এটাতে তোমার জন্য কি আছে।
ইশিতা ব্যাগ টা হাতে নিয়ে বেডে বসে ব্যাগ টা খুলে। ব্যাগের ভেতর থেকে ইশিতা বেশ কয়েকটা শাড়ি বের করে।
— শাড়ি?
— হুম। তুমি তো বাড়ি থেকে আসার সময় সাথে করে কিছু নিয়ে আসো নি। এক কাপড় পড়ে তো আর থাকতে পারবে না তাই এখন মার্কেটে গিয়ে এগুলো আনছি। শাড়ি আনতাম না কিন্তু তোমার কোন সাইজের ড্রেস লাগে আমি তো তা জানি না। তাই কিছু বুঝতে না পেরে শাড়ি ই নিয়ে আসছি।
ইশিতা কিছু না বলে চুপচাপ শাড়ি গুলো দেখছে। পাঁচ থেকে ছয়টা শাড়ি হবে। দেখেই বুঝা যাচ্ছে অনেক দামী। একটা জর্জেট গোল্ডেন কালারের মাঝে পুরো বডি তে গোল্ডেন কালারের ছোট ছোট স্টোন বসানো। একটা নীল কালারের সুতির মাঝে আঁচলের দিকে লাল ডোরা কাটা। আর একটা বেগুনী কালারের আর দুই টা প্রায় এক রকম ই আকাশী কালারের মাঝে। সব গুলো শাড়ি ই ইশিতার কাছে অনেক ভালো লেগেছে।
— আচ্ছা তুমি শাড়ি পড়তে পারো তো?
ইশিতা মাথা নিচু করে আস্তে করে উত্তর দিলো
— হুম।
— আচ্ছা তাহলে ওয়াশরুমে গিয়ে চেঞ্জ করে নেও। অনেক রাত হয়ে গেছে চেঞ্জ করে এসে শুয়ে পড়ো।
— হুম।
ইয়াশ রুম থেকে বের হয়ে চলে গেল। কোথায় গেল তা ইশিতা জিঙ্গেস করেনি। ইশিতা শাড়ি হাতে নিয়ে বসে আছে। ইয়াশের কাছে তো খুব সুন্দর করে বলে দিল সে শাড়ি পড়তে পারে। কিন্তু আসলে ইশিতা তো শাড়ি পড়তে পারে না। আগে কখনও শাড়ি পরেনি। ইশিতা একবার মনে মনে নিজেকে বকছে আবার নিজেই নিজেকে শান্তনা দিয়ে বলছে
— আগে কখনও শাড়ি পরিনি তো কি হয়েছে?
শাড়ি পড়া টা এমন কোন কঠিন কাজ না। যা চেষ্টা করলে পারা যাবে না।ভালো করে একবার চেষ্টা করলেই পারবো।প্রায় অনেকক্ষণ ধরে ইশিতা শাড়ি পড়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু কিছুতেই হচ্ছে না। কুচি দিতে গিয়ে বার বার খুলে যাচ্ছে।
— ধ্যাত আমার দ্বারা সত্যিই কিছু হবে না মামী ঠিকই বলতো।
সেই কখন থেকে একটা শাড়ি পরতে পারছি না। বাঙালি নারী হয়ে শাড়ি পরতে পারি না এটা লোকে শুনলে কি বলবে।
এখন মামী থাকলে এতক্ষণে কিছু কথা শুনিয়ে শাড়ি টা পড়িয়ে দিত।
মামীর কথা মনে হয়ে ইশিতার মন খারাপ হয়ে গেল। সবাই কি করছে এখন? সবাই কি ইশিতার কথা মনে করছে?
মামা কি করছে এখন মামা তো ইশিতা কে চোখের সামনে না দেখে এক মুহূর্ত ও থাকতে পারতো না।
এসব ভেবে ইশিতার খুব কান্না পাচ্ছে।
ইয়াশ নিচে গিয়ে ফ্রিজ থেকে পানি নিতে গিয়ে মনে পড়লো ইশিতা তো রাতে কিছু খায়নি। মামার বাড়ি থেকে আসার সময় তো ইয়াশ খেয়ে এসেছিল কিন্তু ইশিতা খেয়ে আসেনি। এখন এই অবস্থায় ইশিতার না খেয়ে থাকা টা কি ঠিক হবে?
না এমনিতেই মনে হয় ইশিতা এই কিছু দিন ঠিক মত খাওয়া দাওয়া করেনি। তার উপর আবার সে প্রেগন্যান্ট। এখন তো ইশিতা একা না তার ভিতরে ছোট একটা প্রান বেড়ে উঠছে। এখন ইশিতার না খেয়ে থাকলে চলবে না।
ইয়াশ কিচেনে গিয়ে প্লেটে করে ইশিতার জন্য খাবার নিয়ে রুমে যেতে লাগলো।
— দূর ভাল্লাগে না। এখন তো মনে হচ্ছে শাড়ি পড়া পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন কাজ গুলোর মধ্যে থেকে একটা। নাহলে এতক্ষণ ধরে চেষ্টা করার পর ও পারছি না কেন?
ইচ্ছে তো করছে শাড়ি গুলো কে ই আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দেই। এগুলো মানুষে পড়ে?
ইশিতা নিজে নিজে কথা বলছে। আর ইয়াশ খাবার নিয়ে হঠাৎ করেই রুমে এসে গেছে। ইশিতা ইয়াশ কে দেখার সাথে সাথে পেছনে ঘুরে গেল। ইয়াশ ও ইশিতা কে এভাবে দেখে সাথে সাথেই নিজের চোখ বন্ধ করে নিলো। ইয়াশ ভাবতে পারেনি এখন রুমে এসে ইশিতা কে এভাবে দেখবে। ইশিতা ও রুমের দরজা লক করে নেয়নি। কারণ ইশিতা বুঝতে পারেনি ইয়াশ আবার রুমে আসবে। ইশিতা যদি আগে জানতো ইয়াশ এভাবে না বলে হঠাৎ করে রুমে চলে আসবে তাহলে কখনও ই দরজা খোলা রেখে শাড়ি পরতে নিতো না।
ইয়াশ চোখ বন্ধ রেখেই হাতে খাবারের প্লেট টা বেড সাইড টেবিলের উপর রাখে।
ইশিতা পিছন দিকে ঘুরা অবস্থায় দাঁড়িয়ে
— আপনি রুমে আসার আগে নক করে নিবেন তো নাকি?
— আসলে আমি বুঝতে পারিনি তুমি এখন শাড়ি চেঞ্জ করছো জানলে কখনও আমি রুমে আসতাম না।
ইশিতা ইয়াশ কে ই বা কি বলবে দোষ তো ওর নিজের ই। সে কেন দরজা লাগিয়ে নিলো না।
— আচ্ছা আমি চলে যাচ্ছি। তোমার জন্য খাবার দিয়ে গেলাম খেয়ে নিও।– হুম।
— মনে করে খাবে কিন্তু।
— আচ্ছা।
ইয়াশ রুম থেকে বের হতে নিয়ে দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে পরলো।
— ওয়েট ওয়েট। তুমি কি সত্যি ই শাড়ি পড়তে পারো?
তুমি যদি শাড়ি পড়তে জানতে তাহলে তো শাড়ি পড়তে এতো সময় লাগার কথা না।
ইশিতা কি করবে তা বুঝতে না পেরে বলেই দিলো
— আমি শাড়ি পড়তে পারি না। আসলে শাড়ি কিভাবে পড়ে তা ই জানি না। কিন্তু একবার দেখলে ঠিক পারবো।
— হুম আমি দেখছি।
ইশিতা ভাবলো ইয়াশ হয়ত এখন ওকে শাড়ি পড়িয়ে দিতে আসবে এটা ভেবে ইশিতা ভয় পেয়ে বলে উঠলো
— না নাহ! আমি আপনার কাছে শাড়ি পড়বো না। আপনার শাড়ি পড়িয়ে দিতে হবে না।
ইয়াশ ইশিতা কে ভয় পেয়ে এভাবে বলতে দেখে একটু হেসে উঠলো।
— টেনশন নিও না। আমি তোমাকে শাড়ি পড়াতে আসছি না। তুমি তো বলেছিলে একবার দেখলে শাড়ি পড়তে পারবে।
তাই ফোনে নেট থেকে দেখে নেও শাড়ি কিভাবে পড়তে হয়।
ইয়াশ কে এভাবে হাসতে দেখে ইশিতা লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে নিলো।
— আমি তো তোমাকে জিঙ্গেস করেছিলাম তুমি যদি তখন বলতে তুমি শাড়ি পড়তে জানো না। তাহলে তো আমি তোমার জন্য অন্য কোন ড্রেস আনিয়ে নিতাম।
যাক অনেক চেষ্টার পর অনেক কষ্টে ইশিতা শাড়ি পড়তে পারলো। ইয়াশ এতক্ষণ ফোন হাতে নিয়ে চোখ বুঁজে দাঁড়িয়ে ছিল। আর ইশিতা দেখে দেখে শাড়ি পড়ছিল। শাড়ি পড়া শেষে
— হয়ে গেছে।
— সিউর, হয়ে গেছে?
— হুম।
ইয়াশ চোখ খুলে সামনে ইশিতা কে দেখে ইশিতার উপর থেকে নিজের চোখ সরাতে পারছে না। নীল রঙের শাড়ি তে ইশিতা কে কতটা সুন্দর লাগছে তা বলে বুঝানো যাবে না। ইশিতা অনেক ফর্সা হওয়ার কারনে নীল রঙে একেবারে ফোটে উঠেছে। ইয়াশ সব কিছু ভুলে গিয়ে হা করে ইশিতা কে দেখে যাচ্ছে। ইয়াশ কে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে ইশিতা একটু অপ্রস্তুত পরিস্থিতি তে পড়ে গেল।
ইশিতা ইয়াশ কে কিছু না বলে ইয়াশের সামনে থেকে চলে আসলো। এসে শুবার জন্য বেড গোছাতে লাগলো। ইশিতা সামনে থেকে চলে যাওয়ায় ইয়াশের ঘোর কাটলো।
চলবে…..
সেই তুমি💐
পর্ব -১৪
Samira Afrin Samia
#Nipa
ইশিতা খাবার না খেয়ে ই রুমের লাইট অফ করে শুয়ে পড়লো।
–সে কি তুমি শুয়ে গেলে যে খাবে না?
— না খুদা নেই।
— খুদা নেই মানে। তুমি তো রাতে কিছুই খাও নি। তোমার এখন না খেয়ে থাকা চলবে না। উঠে খেয়ে তারপর ঘুমাও।
ইশিতা ইয়াশের কথা শুনলো না এখন ও এভাবেই শুয়ে আছে।
— কি হলো উঠছো না কেন?
তুমি নিজের জন্য না খাও কিন্তু তোমার ভেতর যে আছে তার জন্য তো খেতে হবে। তুমি এই বাচ্চা টা কে কোনো ভাবে অবহেলা করছো না তো?
আমি জানি ইফান এই বাচ্চার বাবা। কিন্ত ইফান ওর দায়িত্ব দিতে অস্বীকার করেছে।
তুমিও ওকে দুনিয়াতে আনতে ভয় পাচ্ছিলে আর তাই ওকে মেরে ফেলতে চাইছিলে।
ইশিতা ইয়াশের কথা শুনে শুয়া থেকে উঠে বসে।
— আমি এই বাচ্চা টার জন্য ই তোমাকে বিয়ে করেছি। ও যাতে বাবার পরিচয় নিয়ে পৃথিবীতে আসতে পারে, মাথা তুলে বাঁচতে পারে। যেভাবেই হোক আর যে কারনেই হোক আমি তোমাকে বিয়ে করেছি। এখন তুমি আমার বউ। আর এই বাচ্চা টা ও আমার। ও আমার পরিচয়ে বড় হবে। আমি চাই না আমার বাচ্চার কোনো অবহেলা হোক বা অযত্ন হোক। তুমি নিজের খেয়াল না রাখলে ও আমার সন্তানের খেলায় রাখতে হবে। এখন ও তোমার মাঝে আছে তুমি না খেলে ওর ও খাওয়া হবে না।
ইশিতা ফ্যালফ্যাল চোখে ইয়াশের দিকে তাকিয়ে আছে। এই বাচ্চার প্রতি ইফানের একটু ও মায়া নেই অথচ ইফান ওর বাবা। ইয়াশের সাথে তো বাচ্চা টার কোন সম্পর্ক নেই তার পর ও ইয়াশের ওর প্রতি কতো টান কতো ভালোবাসা।
ইশিতা উঠে গিয়ে খাবার প্লেট হাতে নিয়ে খেতে শুরু করলো। খাওয়ার সময় ইশিতার চোখ বেয়ে পানি পড়ছে।
সকালে ইয়াশ ঘুম থেকে উঠে নামাজ পড়ে জগিং করতে চলে গেল। নাজমা চৌধুরী কিচেনে রান্না করছে। ইশিতা ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে এসে কিচেনে নাজমা চৌধুরীর কাছে গেল।
— ইশিতা তুমি। ঘুম হয়েছে?
— হুম।
— আচ্ছা তাহলে তুমি রুমে যাও। রান্না প্রায় শেষ। আমি তোমাকে খাবার জন্য ডেকে নিবো।
— মা আমি আপনার সাথে কিছু কাজ করি।
— তুমি কি কাজ করবে?
তোমার কাজ করতে হবে না। আর এমনিতেও আমার কাজ শেষ।
— আপনি আমাকে মেয়ের জায়গা দিছেন। মেয়ের সামনে মা কাজ করবে এটা মেয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখলে কি ঠিক হবে?
আর মা আমি তো আপনার মেয়ে তাই না?
তাহলে মেয়েকে তুমি করে না বলে তুই করে বলেন।
নাজমা চৌধুরী একটু হাসলো কিন্তু হাসির শব্দ হলো না
— আচ্ছা তাহলে এখন থেকে তুই করেই বলবো।
আমার তো রান্না শেষ তাহলে তুই গিয়ে একটু টেবিল টা সাজিয়ে দে।
— আচ্ছা।
ইশিতা ডাইনিং টেবিলে প্লেট ঠিক করে রাখছে।নাজমা চৌধুরী ডাইনিং টেবিলে খাবার সাজিয়ে রাখলেন।
— ইশিতা ইয়াশ কোথায়?
— মা আমি জানি না। সকালে ঘুম থেকে উঠে উনাকে দেখিনি।
— কোথায় গেছে তোকে বলে যায়নি?
— নাহ।
নাজমা চৌধুরী আর ইশিতা কথা বলতে বলতে ইয়াশ বাসায় ঢুকলো। ইয়াশ নিজের রুমে যাবার আগে আড়চোখে ইশিতার দিকে এক নজর তাকিয়ে দেখে উপরে যেতে লাগলো।
নাজমা চৌধুরী ইয়াশ কে ডেকে
— ইয়াশ সকাল সকাল কোথায় গেছিলি?
— আমি প্রতি দিন সকালে জগিং করতে যাই এটা কি তুমি জানো না?
— ওহ! ভুলেই গেছিলাম। আচ্ছা যা ফ্রেশ হয়ে আয় আমি কখন থেকে খাবার সাজিয়ে রাখছি।
ইয়াশ ফ্রেশ হওয়ার জন্য রুমে চলে গেল।
খাবার টেবিলে ইয়াশ খাচ্ছে নাজমা চৌধুরী আর ইশিতা ও পাশেই বসে খাচ্ছে। নাজমা চৌধুরী খেতে খেতে
— ইয়াশ ইফান এখনও নিচে আসলো না। তুই ওকে একটু ডেকে নিয়ে আয় না। আমার ডাকে তো কখনও ওর ঘুম ভাঙ্গবে না।
ইশিতা ইফানের কথা শুনে ভয় পেতে লাগলো। ইফান ইশিতা কে ওর বাড়িতে দেখলে কি করবে?
ইশিতার গলায় খাবার বেঁজে উঠলে ইশিতা কাশতে লাগলো?
ইয়াশ ইশিতা কে কাশতে দেখে ব্যস্ত হয়ে পানির গ্লাস ইশিতার দিকে এগিয়ে দিলো।
নাজমা চৌধুরী চেয়ার থেকে উঠে ইশিতার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
— আস্তে খাবি তো।
ইয়াশ বুঝতে পারলো ইশিতা ইফানের কথা শুনে ভয় পেয়েছে। আর তাই গলায় খাবার বেঁজে উঠেছে।
নাজমা চৌধুরী আবার বললেন
— ইফান তো ইশিতা কে দেখে ই নি। ও তো মনে হয় এটাই জানে না ওর ভাই যে বিয়ে করে বউ বাড়িতে নিয়ে এসেছে।
ইশিতা তুই তো ইফান কে চিনিস না। ওর সাথে তোর কথা ও হয়নি।
ইফান আমার ছোট ছেলে। তোর দেবর হয়। ও যদি জানতে পারে ওর ভাই বিয়ে করে ফেলছে তাহলে ও খুব খুশি হবে। অনেক ভালোবাসে ইয়াশ কে।
ইয়াশ নাজমা চৌধুরী কে থামিয়ে দিয়ে
— মা এখন খেয়ে নেও পরে এসব কথা হবে।
আর ইশিতা তুমি কি ভার্সিটিতে যাবে?
ইশিতা মাথা নাড়িয়ে
— হুম।
— আচ্ছা তাহলে রেডি হও আমি তোমাকে ভার্সিটি ড্রব করে দিব।
ইয়াশ খাওয়া শেষ করে হাত ধুয়ে উঠে গেল।
ইশিতার মনে এখনও সেই ভয় ই কাজ করছে। ইফানের সামনাসামনি হলে তখন ও কি করবে?
ইফান ওকে এ বাড়িতে দেখে উল্টা পাল্টা কিছু করে বসবে না তো?
আর ওর শাশুড়ি ও তো এসব সম্পর্কে কিছুই জানে না। উনি এসব ব্যাপারে জানতে পারলে তখন ইশিতা কে মেনে নিবে তো?
উনি যদি জানতে পারে ইশিতা প্রেগন্যান্ট আর এই বাচ্চা টা ইফানের তাহলে হয়ত কোনো দিন ও ওকে মেনে নিবে না।
ইশিতা ভার্সিটির জন্য রেডি হয়ে নিচে দাঁড়িয়ে ইয়াশের জন্য অপেক্ষা করছে।ইফান ঘুম থেকে উঠে চোখ কচলাতে কচলাতে সিড়ি দিয়ে নিচে নামছে। ইশিতা ইফান কে দেখতে পায়নি।
আজ শাড়ি পড়ে ভার্সিটি যেতে হবে। শাড়ি পড়ে ভালো করে দু’পা হাঁটতে পারে না। পায়ে বেঁজে পড়ে যেতে নেয়। আর এখন ভার্সিটিতে সারা দিন কিভাবে শাড়ি পড়ে থাকবে এটাই ভাবছে ইশিতা।
ইশিতা নিচু হয়ে শাড়ির কুঁচি ভাঁজ করছে। ইফান নিচে নামার সময় ইশিতা কে দেখে ভাবলো ও হয়ত ঘুমের ঘোরে ভুল দেখছে। ইশিতা এ বাসায় কোথায় থেকে আসবে?
ওর তো এখানে আসার কথা না।
ইফান দুই হাত দিয়ে ভালো করে চোখ কচলিয়ে আবার ইশিতার দিকে তাকায়। ইফান এবার ও ইশিতা কে দেখতে পেল।
— কি হলো আমার?
আমি ওই ক্যারেক্টারলেস মেয়েটা কে বার বার কেন দেখছি?
আমি কি ভুল দেখছি নাকি ওই মেয়েটা সত্যি ই আমার সামনে?
এতো বার করে তো ভুল দেখার কথা না।
ইফান ইশিতার কাছে আসলে ইশিতা ইফানকে দেখে ওভাবেই স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।
— তুই এখানে?
তুই আমার বাসায় কি করছিস? তোর সাহস হয় কি করে আমার বাসায় আসার। বের হ তুই এখুনি আমার বাসা থেকে বের হ। চলে যা তুই আমার চোখের সামনে থেকে।
ইফান ইশিতার হাত ধরে ইশিতা কে টেনে নিয়ে বাসা থেকে বের করে দিতে যাচ্ছিল। পেছন থেকে ইয়াশ ইফাবের হাত ধরে এক ঝটকায় ইশিতার হাত ছাড়িয়ে নিয়ে।
— হাও ডেয়ার ইউ! তোর সাহস হয় কি করে আমার ওয়াইফের হাত ধরার?
— ওয়াইফ?
— হুম ইশিতা আমার ওয়াইফ। আমি সমস্ত নিয়ম রীতি মেনে ইশিতা কে বিয়ে করেছি।
ইয়াশের কথা শুনে ইফান শব্দ করে জোরে জোরে হাসতে লাগলো
— ইশিতা তোর ওয়াইফ? তুই ইশিতা কে বিয়ে করেছিস?
রিয়েলি ভাই?
হাসালি তুই। তুই নাকি ওই ক্যারেক্টারলেস মেয়েটা কে বিয়ে করেছিস এটা আমাকে বিশ্বাস করতে হবে সো ফানি।
— তুই বিশ্বাস কর আর না কর তাতে আমার কিছু আসে যায় না। ইশিতা আমার ওয়াইফ এই বাড়ির বউ আর তোর ভাবী।
— আমি এই দুশ্চরিত্রা মেয়েকে কখন এই বাড়িতে থাকতে দিব না। এই তোর লজ্জা করে না। তুই আমাকে ঠকিয়ে এখন আবার আমার ভাই কে ঠকানোর চেষ্টা করছিস।
— সেটআপ। ইশিতা তোর ভাবী। ভাবীর সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় তা শিখে নিবি। তুই যদি এভাবেই ইশিতার সাথে কথা বলিস তাহলে কিন্তু তোর জন্য মোটেও ভালো হবে না।
আর ইশিতা কে এ বাড়িতে থাকতে না দেওয়ার তুই কে?
এটা তো তোর একার বাড়ি না। ইশিতা তোকে ঠকিয়েছে নাকি তুই ইশিতা কে ঠকিয়েছিস তা আমি খুব ভালো করে জানি।
ইফান ভ্যাঙ্গ করে
— ওহ আচ্ছা এতো ভালোবাসিস ভাবী কে?
তা ওর সাথে তোর কবে থেকে রিলেশন?
আমার আগে থেকে নাকি আমি ওকে ইউজ করার পর থেকে?
ইয়াশ রেগে গিয়ে ইফান কে মারতে আসলে। নাজমা চৌধুরী উপর থেকে দাঁড়িয়ে
— কি হচ্ছে এসব?
ইয়াশ নাজমা চৌধুরীর কন্ঠ শুনতে পেতে স্বাভাবিক হয়ে গেল
— কিছু না মা।
ইফান কে ওর ভাবীর সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছিলাম। ইফানের তো ইশিতার সাথে কথা হয়নি তাই একটু
— ইয়াশ আজ কি তুই অফিসে যাবি না। এখনও বের হলি না যে?
— এই তো আমি এখন অফিসের জন্য বের হবো।
ইয়াশ ইফানের কাছে এসে কানে কানে
— মা এসব ব্যাপারে কিছু জানে না। তোর জন্য এটাই বেটার হবে তুই মা কে কিছু জানতে দিস না। আর হ্যা মনে রাখিস আজকের পর থেকে এ বাড়িতে থাকতে হলে ইশিতা কে সন্মান করে থাকতে হবে। আমি কি বুঝাতে চাইছি আশা করছি তুই বুঝে গেছিস।
এটা বলে ইয়াশ ইশিতা কে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেল।
ইফান রাগে ফুঁসতে লাগলো। ওর রাগ হচ্ছে ইশিতার উপর। ইফান মনে করছে এসব কিছুর জন্য ইশিতা দায়ী।
কারে বসে ইশিতা চুপচাপ কেঁদে যাচ্ছে। ইশিতার মনে হচ্ছে ওর জন্য আজ দুই ভাইয়ের মধ্যে ঝামেলা সৃষ্টি হলো। ইয়াশ সামনের দিকে তাকিয়ে কার চালিয়ে
— কি হলো কাঁদছো কেন?
ইশিতা ইয়াশের কথা শুনে চোখ মুছে নিয়ে
— কাঁদছি না তো।
— আমাকে দেখে তোমার কি মনে হয় বলো তো?
আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি তুমি আমার সামনে বসে কাঁদছো। এখন জিঙ্গেস করার পর বলছো। কই তুমি তো কাঁদছো না।
— আমার জন্য আজ আপনাদের দু ভাইয়ের মাঝে ঝগড়া সৃষ্টি হলো। আমার জন্য আজ আপনি আপনার ভাইয়ের সাথে ওভাবে কথা বলেছেন।
— যা হচ্ছে সব কিছু ইফানের জন্য হচ্ছে এতে তোমার কিছু করার নেই। ইফান কে ওর পাপের শাস্তি পেতে হবে।
চলবে…..