“সেই তুমি💐 পর্ব -২৫/২৬

0
452

সেই তুমি💐
পর্ব -২৫/২৬
Samira Afrin Samia
#Nipa

কোনো ভাবেই রিহার পাগলামি বন্ধ করতে না পেরে ইফান শেষমেশ রিহা কে বিয়ে করতে রাজি হয়। ইফান বিয়েতে রাজি হওয়াতেই শুধু রিহা শান্ত হয়নি। আজই তাকে বিয়ে করতে হব। ইফান অনেক টা বাধ্য হয়ে রিহা কে বিয়ে করে। কি করবে রিহার এমন পাগলামি দেখে ইফানের মন টা ও একটু গলে গেল।
বাড়িতেই কাজী ডাকা হলো খুব সাধারণ ভাবেই আর পাঁচ টা বিয়ের মত কাজী সাহেব ইফান আর রিহার বিয়েটা ও পড়িয়ে দিলেন। তিন বার কবুল বলে রিহা নিজের জেদ পূরণ করে ইফান কে স্বামী হিসেবে পেয়ে যায়। ইফান ভালোবাসে না স্বত্বেও রিহা কে বিয়ে করে।

রাতে খাওয়া দাওয়ার পর্ব শেষ করে ইশিতা নিজের রুমে আসে। কিন্তু ইয়াশ দুই শালীকার সাথে আটকা পড়ে যা। ইশিতার দুই মামাতো বোন জিজুর সাথে গল্প করবে। তাই ইয়াশ ওদের সাথে ওদের রুমে গেল।
কত দিন পর ইশিতা নিজের রুমে এলো। সব কিছু আগের মতই আছে। ইশিতা কত যত্ন নিয়ে ঘর টা সাজিয়ে ছিল। তেমন দামী জিনিস হয়ত নেই তবে অনেক ভালোবাসা লুকিয়ে আছে ঘরের জিনিস গুলোর মাঝে।
রাত অনেক হয়েছে ঘুমোতে হবে কাল তো আবার ইয়াশের অফিস আছে। এটা তো ইয়াশ কে জিঙ্গেস করা হয়নি কাল কি এখান থেকে অফিসে যাবে? আচ্ছা রুমে আসলে জেনে নেওয়া যাবে।
ইশিতা বিছানা গোছাতে লাগলো। ইশিতা খেয়াল করলো ওর রুমে তো সোফা নেই। একটা মাত্র বেড তাও একজন থাকার মত। ইয়াশ কোথায় থাকবে এখন?
বাসায় তো ইয়াশ সোফায় ঘুমাতো আর ইশিতা বেডে।ইশিতা ভাবতে ভাবতে ইয়াশ রুমে এসে গেল। ইয়াশ এসে সোজা বেডে শুয়ে গেল।
— আহ মনে হচ্ছে পেট ফেটে খাবার গুলো বের হয়ে আসবে। এতো খাবার কেউ খেতে পারে নাকি। শাশুড়ি আম্মা আমার কষ্ট টা বুঝলো না। নতুন জামাই কে প্রথম দিন ই এতো টর্চার করলো।
ইয়াশের কথায় ইশিতার এদিকে খেয়াল হলো।
— আপনি ও তো দেখলাম খুব তৃপ্তি করে খেয়েছেন। কোনো কিছুর জন্য না করেন নি।
— শাশুড়ি মায়ের হাতের রান্না এতো ভালো কি বলবো। তাই না করতে পারিনি।
— তাহলে এখন মজা বুঝতে। একদম ওহ্ আহ্ করবেন না। আপনি নিজে থেকে এতো খেয়েছেন। কেউ জোর করে আপনার মুখে তুলে দেয়নি।
— নিজের বাড়ি এসে একদিন ও হলো না এখনই আমার সাথে এভাবে কথা বলছো?
এই তো বউয়ের দজ্জাল রূপ বের হয়ে আসছে।
— হুম দজ্জাল এর দেখলেন কি?
শবে তো মাত্র শুরু হলো এখনো অনেক বাকি আছে দেখার।
ইয়াশ ছোট বাচ্চাদের মত করে
— এখন কিছু সত্যি ই আমি ভয় পাচ্ছি।
ইয়াশের এমন ভাবে কথা বলায় ইশিতা হেঁসে উঠলো। ইয়াশ ইশিতার হাসি দেখে মনে মনে বলছে।
— এই হাসি টা দেখার জন্য ই তো এতো কিছু। তোমার মুখে হাসি দেখার জন্য আমি সব কিছু করতে পারি। কখনও তোমার মুখ থেকে এই হাসিটা আলাদা হতে দিব না। এটা আমার প্রমিজ।
ইশিতা হাসছে ইয়াশ ইশিতার দিকে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ ইশিতা ইয়াশের দিকে তাকিয়ে হাসি থামিয়ে দিলো। ইয়াশ ও ইশিতার থেকে চোখ ফিরিয়ে নিলো।
— আচ্ছা আজ আপনি কোথায় থাকবেন?
ইয়াশ মাথা চুলকিয়ে
— কোথায় থাকবো মানে?
এটা কেমন কুয়েশ্চন?
— এটা কেমন কুয়েশ্চন মানে?
বাংলায় একটা কথা বললাম তা বুঝেন না।
— তুমি কি আমাকে তোমার রুমে থাকতে দিবে না?
— আমি এটা কখন বললাম?
— তাহলে বলছো যে কোথায় থাকবো। অফকোর্স আমি তো এই রুমেই থাকবো। শশুড়বাড়ি এসে বউয়ের রুমে না ঘুমিয়ে আমি তো আর উঠানের নিচের তেঁতুল গাছ টায় ঘুমাতে পারি না।
— আপনি এমন কেন বলুন তো?
আমি কি আপনাকে বলছি আপনি আমার রুমে ঘুমাতে পারবেন না। রুমে তো মাত্র একটা বেড তাও অনেক ছোট। দুজন ভালো করে জায়গা নিবে না। আর সোফা ও তো নেই। বাসায় তো আপনি সোফায় ঘুমান। তাই বলছিলাম।
ইয়াশ কিছু না বলে একটা বালিশ নিয়ে বেডের এক পাশে শুয়ে পড়লো।
— অনেক খেয়ে ফেলেছি। এখন আমি সারা রাত না ঘুমিয়ে থাকতে পারবো না। আমি বেডে ই শুলাম। তোমার ইচ্ছে হলে এক পাশে শুইয়ো নয়তো এভাবে সারা রাত বসে থেকো।
গুড নাইট দজ্জাল বউ।
— এটা কি হচ্ছে আমার বেডে আমি শুবো। আপনি উঠোন বলছি।
ইয়াশ একটা বালিশ নিয়ে ইয়াশ আর ইশিতার মাঝে রেখে দিলো।
— এই নেও ইন্ডিয়া পাকিস্তানের বর্ডার দিয়ে দিলাম। এই বালিশের এপাশে একদম আসার চেষ্টা করবে না বুঝলে।
ইশিতা ভ্রু কুঁচকে চোখ ছোট করে ইয়াশের দিকে তাকালো।
— বলা তো যায় না নিজের বেড বলে কখন আবার আমাকে লাথি দিয়ে বেড থেকে ফেলে নিবে তার পর বলবে ঘুমের ঘোরে লাথি দিয়েছি। এমন ও হতে পারে ঘুমের ভান করে সজাগ থেকেই লাথি টা দিতে পারো।
— মানে?
— কোনো মানে না। এখন ঘুমাও।
ইয়াশ পাশ ফিরে শুয়ে পড়লো।
ইশিতা মেজাজ প্রচন্ড রকমে খারাপ হয়ে আছে।
— কি বললো?
আমি উনাকে বেড থেকে লাথি দিয়ে ফেলে দিব। উনি আমার সম্পর্কে এমন টা ভাবতে পারলো।
অসহ্য লোক একটা। মামার বাড়ি আসার পর থেকে আমার পিছনে এভাবে হাত ধুয়ে পড়েছে। বাসায় থাকতে তো ভালো করে কথা ও বলতো না। আমি কিছু বললে শুধু তার উত্তর দিতো। নিজে থেকে কিছুই বলতো না। সব সময় ভাব নিয়ে থাকতো। আর এখন
ইয়াশ ওপাশ ফিরে শুয়ে ইশিতার কথা গুলো শুনছে আর হাসছে।

ইফান রিহার রুমে সোফায় বসে আছে। আর ভাবছে আমি যা করেছি ঠিক করেছি তো?
এভাবে পরিবারের কাউকে না জানিয়ে হঠাৎ করে রিহা কে বিয়ে করে নিয়েছি। রিহা কে বিয়ে করার সিধান্ত টা কি আমার ঠিক হয়েছে।
রিহা কি সত্যি ই আমাকে ভালোবাসে নাকি শুধু?
ভাবতে পারছি না কিছুই।
ইফান দু’হাতে মাথা চেপে ধরে হাঁটু বরাবর নিচু হয়ে বসে রইলো।
মা ভাই কেউ ই তো কিছু জানে না। রাগ করে বাড়ি ছেড়ে চলে এসেছি তাই বলে কি আমার জীবনের এতো বড় একটা সিধান্তে ওদের মতামত নেওয়ার দরকার ছিলো না?
ইফান আর কিছু ভাবতে পারছে না। ওর মধ্যে সংকোচ কাজ করছে। নিজের নেওয়া সিধান্তের উপর ই হাজার বার প্রশ্ন তুলছে।

রিহা শান্তিতে তার বেডে শুয়ে ঘুমাচ্ছে। এতো দিন ধরে যা চেয়ে এসেছিল রিহা আজ তা পেয়ে গেছে। ইফান কে নিজের করে পেয়েছে। যার জন্য রিহা এতো কাঠখড় পুড়িয়েছে তাকে আজ হাসিল করতে পেতে সস্তি ভরে নিশ্বাস নিয়ে শান্তিতে তে ঘুমিয়ে আছে।

ইয়াশ প্রতি দিন ফজরের আযান দেওয়ার সাথে সাথে ঘুম থেকে উঠে পড়ে। নামাজ শেষ করে জগিং করতে যার। প্রতি দিনের রুটিন অনুযায়ী আজ ও আযানের সাথে সাথে ই উঠে গেল ইয়াশ।
ইয়াশ বেড ছেড়ে উঠতে গিয়েও উঠতে পারলো না। নিজের উপর কিছু একটা অনুভব করলো ইয়াশ। ইয়াশ ভালো করে তাকিয়ে দেখে ইশিতা ইয়াশ কে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে। ইশিতার এক হাত এক পা ইয়াশের উপর। ইয়াশের ডান হাতের উপর ইশিতার মাথা। ইশিতার চুল দিয়ে ওর মুখ ঢেকে আছে। আর কিছু চুল এলোমেলো হয়ে ইয়াশের মুখে উপর এসে আছে। ইশিতা ঘুম যাতে না ভেঙে যায় তাই ইয়াশ খুব সর্তকতার সাথে ইশিতার মুখের উপর আসা চুল গুলো সরিয়ে দিলো। ইয়াশ একটু হেঁসে নিজের মুখের উপরে থাকা চুল গুলো ও সরিয়ে দিলো।
ইশিতার তৈলাক্ত ও ফোলে যাওয়া মুখের দিকে এক নজরে তাকিয়ে আছে ইয়াশ। সকালে ঘুম থেকে উঠলে এমনিতেই মুখে একটা তৈলাক্ত ভাব চলে আসে। আর মুখ স্বাভাবিকের চেয়ে একটু ফোলে ও যায়। সব অবস্থাতেই ইয়াশের চোখে ইশিতা ই শ্রেষ্ঠ।
হয়ত ভালোবাসার মানেই এইটা। নিজের ভালোবাসার মানুষ কে পৃথিবীর সবথেকে সুন্দর মানুষ বলে মনে হয়। হতে পারে সে কালো তার পর ও ভালোবাসার মানুষের চোখে সে ই সবচেয়ে সুন্দর।
ইয়াশ অনেকক্ষণ ইশিতার মায়া মাখা মুখ টার দিকে তাকিয়ে আছে। মাঝে মাঝে ইয়াশ ইশিতার এই মায়ার মাঝে হারিয়ে যায়। সব কিছু ভুলে গিয়ে ইশিতার মাঝে নিজেকে হারিয়ে ফেলে।

আযান দিয়েছে অনেকক্ষণ হয়েছে এখন না উঠলে নামাজের জন্য দেরি হয়ে যাবে। তাই ইয়াশ ইশিতা কে সরিয়ে আস্তে আস্তে উঠতে চেষ্টা করছে কিন্তু উঠতে পারছে না। ইশিতা ইয়াশ কে এতো টা ই শক্ত করে জড়িয়ে আছে ইয়াশের নড়া ও সম্ভব হচ্ছে না।
এরই মাঝে ইশিতা নিজে থেকে একটু নড়ে উঠলো। ইয়াশ সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে নিলো। ইশিতা ঘুম থেকে উঠে নিজেকে এভাবে ইয়াশের সাথে দেখলে নিশ্চয় অনেক লজ্জা পাবে। আর যদি দেখে ইয়াশ সজাগ তাহলে তো আর কোনো কথাই নেই। এমনিতেই তো লজ্জা পেয়ে লাল নীল বেগুনী হয়। ইশিতা যদি দেখে ইয়াশ সজাগ আর ইশিতা এভাবে ইয়াশ কে জড়িয়ে ধরে আছে তাহলে তো এক সপ্তাহ আর ইয়াশের সামনে পড়বে না। তাই ইয়াশ ঘুমের ভান করে শুয়ে রইলো।
ইশিতার ঘুম ভেঙে গেলে একটু নড়েচড়ে মিটমিট করে চোখ খুলে তাকায়। কোথায় আছে প্রথমে তা বুঝতে না পেরে ডানে বামে তাকিয়ে লাফ দিয়ে শুয়া থেকে উঠে বেস।
কি লজ্জা, কি লজ্জা! ইশিতা কি সারা রাত ইয়াশ কে এভাবেই জড়িয়ে ধরে শুয়ে ছিল। ইয়াশ কি ইশিতা কে এমন অবস্থায় দেখেছে?
ইয়াশ যদি ইশিতা কে এমন ভাবে দেখে থাকে তাহলে কি মনে করবে?
ইশিতা মুখ টা কালো করে মনে মনে এমন আরো কত কথা ভাবছে। রাতে বসে থাকতে থাকতে কখন যে চোখ লেগে গেল। আর কখনই বা ইয়াশের পাশে শুয়ে পড়লো তা একদম মনে নেই ইশিতার।
— যাক যা হয়েছে এখন এটা নিয়ে ভেবে আর লাভ কি উনি ঘুমিয়ে আছেন এই সুযোগে আমি উঠে যাই।
ইশিতা নিজের শাড়ি ঠিক করে। বিছানা ছেড়ে উঠে বাইরে বের হয়ে গেল।
ইশিতা যাওয়ার সাথে সাথেই ইয়াশ চোখ খোলে নিলো।
এক গাল হেসে নিজে নিজেই বলে উঠলো
— কি লজ্জাবতী বউ আমার।

তিন থেকে চার দিনের মত ইয়াশ আর ইশিতা মামার বাড়ি থেকে বাসায় চলে আসে। এখান থেকে ইয়াশের অফিসে যাওয়ায় সমস্যা হয়। তাই ইশিতা ইচ্ছে করেই চলে আসে।

রিহা ইফান কে বিয়ে করতে পেরে মনে হয় পুরো পৃথিবী নিজের হাতের মুঠোয় পেয়ে গেছে। ইফান এখনও বুঝতে পারলো না রিহা কে বিয়ে করে ও ঠিক করেছে নাকি ভুল করেছে।
রিহা এখন আগের থেকে অনেক টা সুস্থ হয়েছে।

এভাবেই কেটে যায় কয়েক সপ্তাহ।
ইশিতার প্রেগন্যান্সির ছয় মাস হতে চলেছে। অনেকটা পরিবর্তন এসেছে ইশিতার শরীরে। ইয়াশ আগের থেকে দ্বিগুণ করে ইশিতার খেয়াল রাখছে। সব কিছু ঠিকঠাক ই চলছে।

এর মাঝেই একদিন রাফি ইফানের সাথে দেখা করতে চায়। রাফি ইফান কে ফোন করে এক জায়গায় আসতে বলে।
রাফি রিহার সাথে মিলে ইশিতার সাথে যা যা করেছে তার জন্য এখন সত্যিই অনুতপ্ত। রাফি এটাও জানে এখন অনুতপ্ত হলেও কোনো লাভ নেই। যা হবার তা অনেক আগেই হয়ে গেছে। এখন আর কিছু নতুন করে হবার মত নয়। আর কিছু ঠিক হবার পরিস্থিতি ও নেই। তার পর ও ইফান কে সব কিছু খুলে না বললে রাফি বাঁচতে পারবে না। এতো বড় পাপের বোঝা মাথায় নিয়ে সত্যি ই বাঁচা সম্ভব না।
সব কিছু জেনেও চুপ করে থেকে নিজের চোখের সামনে কয়েকটা জীবন নষ্ট হতে দেখেছে রাফি। এই পাপের হয়ত কোনো মাফ নেই পরেও নিজের মনে যে বোঝা টা তৈরি হয়েছে তা তো একটু হলেও হালকা হবে।

অনেকক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে ইফানের জন্য অপেক্ষা করছে রাফি। এখনো ইফান আসছে না।
— কি ব্যাপার ইফানের তো এতো দেরি করার কথা না। ওকে বললাম খুব জরুরি কথা বলার আছে পরেও ও আসতে এতো লেট করছে কেন?
রাফি রাস্তার দিকে তাকিয়ে ইফানের আসার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে। একটু সময় পাড় হওয়ার পর রাফি পায়চারী করতে শুরু করে দিল।হঠাৎ রিহার গাড়ি এদিকে আসতে দেখা গেল। রাফি বুঝে গেল এটা ইফান ই এসেছে। ইফান তো এখন রিহাদের বাসায় থাকে। আর রিহার গাড়ি নিয়েই চলাফেরা করে। রাফি কয়েক পা হেঁটে ইফানের দিকে এগিয়ে গেল। গাড়ি টা সোজা রাফির সামনে এসে ব্রেক করলো।
— ইফান এতো দেরি করলি কেন?
কতক্ষণ ধরে তোর জন্য এখানে দাঁড়িয়ে আছি।
ইফান গাড়ি থেকে নামার আগেই কথা গুলো বলে উঠলো।
গাড়ি থেকে ইফান না, রিহা বের হয়ে আসলো। রাফি রিহা কে দেখে মোটামুটি অনেক টা অবাক হয়ে গেল।
— রিহা তুই?
রিহা রাফির সামনে এসে দাঁড়িয়ে
— হ্যা আমি। বল কি বলার জন্য ডেকেছিস।
— আমি তো তোকে ডাকি নি। ইফানের জায়গায় তুই আসলি কেন?
ইফান কোথায়?
রিহা একটু হেসে
— আমার স্বামী কে বলা যে কথা আমাকে বলাও তো একই কথা।
— আমি তো ইফানের ফোনে কল করেছি। তুই কি ভাবে জানলি আমি ইফান কে আমার সাথে দেখা করার জন্য এখানে ডেকেছি?
— রাফি তুই কি সত্যি ই এতো টা বোকা?
নাকি বোকা হবার নাটক করছিস?
তুই ফোন করেছিলি ইফান কে তা ঠিকই। কিন্তু ফোন টা তুলেছিল কে তা কি জেনে নিছিলি?
— তার মানে তুই ফোন তুলেছিলি?
— হুম।
ইফান ওয়াশরুমে ছিল। ফোনে রিং হচ্ছে দেখে আমি ফোন তুলতে গিয়ে দেখি তুই ফোন দিছিস। প্রথমে ভালো ভাবেই ফোন তুলেছি। কিন্তু ফোন তুলে আমি কিছু বলার আগেই তুই বলতে শুরু করে দিলি। ফোনে তোর কন্ঠে কাঁপাকাঁপা কথা গুলো শুনেই মনে হলো তুই আজ কোনো পাগলামি করতে যাচ্ছিস।
আর তাই আমাকে এখানে আসতে হলো।
— তুই ইফান কে বলে এখানে এসেছিস?
— পাগল নাকি?
দোস্ত তোকে আমি বারণ করেছিলাম আমার আর ইফানের মাঝে আসতে। তোকে না করেছিলাম ইফান কে এসব সম্পর্কে কিছু জানাতে। আমি বারবার বারণ করার পরও তুই আজ সেই ভুল টা ই করতে যাচ্ছিলি।

চলবে…..

সেই তুমি💐
পর্ব -২৬
Samira Afrin Samia
#Nipa

— আমি ইফান কে সব সত্যি বলে দিব রিহা।
— ওহ আচ্ছা!
— হুম। আমি আর পারছি না। এখন তো ইফানের এমন অবস্থা দেখে নিজের কাছেই নিজেকে অপরাধী মনে হয়। মনে হয় ইফানের এমন অবস্থার জন্য আমি দায়ী।
— রিয়েলি?
আচ্ছা ঠিক আছে তুই ইফান কে সব কিছু সত্যি সত্যি বলে দে।
— সিরিয়াসলি এই কথা তুই বলছিস রিহা?
— ইয়াহ 100% আমিই বলছি।

রাফি রিহার মতিগতি বুঝতে না পেরে এখান থেকে চলে যাওয়া টাই ভালো মনে করে, চলে আসতে নিলে রিহা পেছন থেকে কি যেন ভারী একটা কিছু দিয়ে জোরে রাফির মাথায় আগাত করে। যার কারনে রাফি উপুড় হয়ে মাটিতে পড়ে যায়।
রিহা পেছনে থেকে একটা হকি স্টিক হাতে নিয়ে ওটা এদিক সেদিন নাড়াতে নাড়াতে। রাফির সামনে এসে এক হাঁটু গেড়ে মাটিতে বসে।
— তুই এতো বোকা কেন রাফি?
আমার এতো দিনে এতো কষ্ট, এতো সাধনা এভাবে মুহূর্তের মধ্যে তুই শেষ করে দিতে চাইবি আর আমি তা চেয়ে চেয়ে দেখবো।
তুই ভাবলি কি করে তুই এখান থেকে ভালোয় ভালোয় যেতে চাইবি আর আমি তোকে যেতে দিব।
ফোনে তোর কথা শুনেই আমার মনে হয়েছিল আজ তোর একটা ব্যবস্থা করতেই হবে। নাহলে তুই ইফান কে আমার থেকে অনেক দূরে সরিয়ে দিবি।
রিহা রাফি মাথায় হাত দিয়ে
— ইশ দেখ তো কতো টুকু ফেটে গেছে আর কতো রক্ত বের হচ্ছে। কেন এমন বোকামী করিস দোস্ত বল তো?
তুই আমাকে বাধ্য করলি তোর সাথে এমন কিছু করতে। বিশ্বাস কর রাফি তোর সাথে এমন কিছু করার আমার মোটেও ইচ্ছে ছিল না। কি করার যে যেমন তাকে তেমন ভাবেই বুঝাতে হয়।
তোকে ভালো কথায় বুঝাতে চেয়েছিলাম কিন্তু তুই ভালো কথায় বুঝলি না।
রিহা জোরে জোরে হাসতে লাগলো। রিহা কে দেখে মনে হচ্ছে না ও কোনো সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ। কারণ কোনো মানুষ পুরোপুরি সুস্থ মস্তিষ্ক নিয়ে এমন কিছু করতে পারবে না। তাও আবার নিজের বন্ধুর সাথে।
রিহা উঠে দাঁড়িয়ে ফোন বের করে কাকে যেন কল করে।
— মরে গেছে নাকি বলতে পারবো না। হয়ত এখনও মরে নি বেঁচে আছে। বডি টা এখানে পড়ে আছে তোরা এসে তুলে নিয়ে যা। যেমন যেমন বলেছি ঠিক তেমন টাই করবি। একটু উল্টা পাল্টা হলে কিন্তু তোদের খবর আছে। আমি কি কি করতে পারি এটা তো তোরা খুব ভালো করেই জানিস।
আর হ্যাঁ দেখিস ওর যেন কোনো কষ্ট না হয়। হাজার হোক আমার বন্ধু। ওর খুব ভালো করে যত্ন নিবি।

রিহা আবার খুব স্বাভাবিক হয়ে বাসায় ফিরে আসলো।
দিন কয়েক কেটে গেলে মনির চৌধুরী ইফানের সাথে কথা বলতে আসে। ইফান বেডে বসে আছে আর মনির চৌধুরী সোফায়।
— দেখো বাবা তোমার আর রিহার বিয়ের সপ্তাহ কয়েক হয়ে গেছে। শুনতে পারছি সোসাইটির মানুষ গুলো নাকি তোমাকে নিয়ে নানান কথা বলছে।
তুমি যদি কিছু মনে না করো বাবা তাহলে একটা কথা বলি।
তুমি রিহা কে নিয়ে তোমার বাসায় যাও। আমার যা আছে এখন সব কিছুই তোমার পরেও বিয়ের পর মেয়ের বাবার বাড়ি থাকলে লোকে তো কথা বলবে ই।
— আঙ্কেল
— তুমি না যেতে চাইলে জোর করবো না। আমি তো শুধু তোমাকে বলছি।
ওটা তোমার ও বাড়ি তুমি কেন মা ভাইয়ের সাথে রাগ করে বাড়ি ছেড়ে থাকবে। ওই বাড়িতে তোমার ও ইয়াশের মত সমান অধিকার আছে।
আর বাবা তোমার মা ই কেমন? সৎ ছেলের পহ্ম নিয়ে নিজের আসল ছেলেকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছেন।
মনির চৌধুরীর এই কথা শুনে ইফান সাত আসমান থেকে নিচে পড়লো।
— কি বললেন আঙ্কেল। সৎ ছেলে?
ভাই কি আমার নিজের আপন ভাই না?
— এসব কথা কি বলবো বাবা।
— আমার থেকে কিছু লুকাবেন না আঙ্কেল। আপনি যা যা জানেন সব সত্যি করে আমাকে বলেন।
সত্যি টা জানা আমার খুব দরকার। ভাই আমার নিজের ভাই না।
— তাহলে শুনো বাবা। তোমার বাবা আমি আর আমাদের আরেক বন্ধু। আমরা তিনজন তিনজনের জীবন ছিলাম। তিন জন এক সাথে থাকতাম এক সাথেই ব্যবসা করতাম। তোমার বাবা ইকবাল চৌধুরী আর আমাদের আরেক বন্ধু খলিল আহমেদ বউ বাচ্চা নিয়ে সবাই একসাথে সুখে শান্তিতে দিন যাপন করছিলাম।
ইয়াশের যখন আট বছর বয়স তখন ইয়াশের মা আমেনা চৌধুরীর ব্রেন টিউমার হয়। অনেক ডক্টর দেখিয়ে ও কোনো লাভ হয়নি। টিউমার টা ব্রেনে হওয়ার কারনে কোনো ভাবেই অপারেশন করা সম্ভব না। অপারেশন করলে উনাকে বাঁচানো যাবে তার গ্যারান্টি ছিল ২০% তাই ভাবী ই জোর করে অপারেশন করায় নি। আমার বন্ধু অবশ্য অনেক জোর করেছিল কিন্তু ভাবী কোনো ভাবেই রাজি হয়নি।
এভাবেই তিন মাসের মাথায় ভাবী আমাদের সবাইকে ছেড়ে চলে গেলেন। ইকবাল একেবারে একা হয়ে গেল। ইয়াশ ছোট বয়সেই মা হারালো।
ইকবাল বিজনেস দেখার পাশাপাশি ইয়াশের ঠিক মত খেয়াল রাখতে পারছিল না। বাড়ি অফিস দুই দিক সামলে উঠতে অনেক কষ্ট হচ্ছিল।
আমরা অনেক বুঝিয়েছি আবার বিয়ে করে নিতে। নিজের জন্য না হলেও ইয়াশের কথা ভেবে আবার বিয়ে করা উচিত। কোনো কথাতেই কোনো কাজ হলো না। ইকবাল বিয়ে করার জন্য কোনো ভাবেই রাজি হলো না।একদিন ইয়াশ নিজে ওর বাবা কে বলে
— বাবা সবার মা আছে আমার মা নেই। আমাকেও তুমি মা এনে দেও বাবা। এভাবে একা একা আমার ভালো লাগে না। মায়ের কথা খুব মনে হয়।
ওই দিন ইকবাল চৌধুরী ইয়াশ কে জড়িয়ে ধরে অনেকক্ষণ কান্না করে। অবশেষে ইকবাল চৌধুরী দ্বিতীয় বার বিয়ে করার জন্য রাজি হয়। তবে এমন একজন কে বিয়ে করবে যে ইয়াশ কে নিজের ছেলের মত করে মানুষ করবে। কখনও সৎ বলে মনে করবে না।

এই টুকু শুনে ইফান মাথায় হাত দিয়ে নিচে ফ্লোরে বসে পড়লো। মনির চৌধুরী ইফানের মাথায় হাত রেখে
— নিজেকে সামলাও বাবা।
ইফান কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে
— তার পর কি হলো আঙ্কেল?
— তার পর একদিন আমাদের কোম্পানিতে তোমার মা একটা কাজের জন্য আসে।
আমার ওই বন্ধ খলিল আহমেদ তোমার বাবাকে আগে থেকেই চিনতো যার কারনে তোমার মা’কে ও চিনতো।
তোমার মা হঠাৎ করে কাজের জন্য আসলে খলিল সব কিছু জানতে চাইলো, কেন হঠাৎ করে তোমার মায়ের চাকরি দরকার।
তোমার মা আমাদের সব খুলে বললো।
যিনি তোমার নিজের বাবা, উনি নাকি তার অফিসের ই একজন কর্মচারি কে ভালোবাসে তাকে বিয়ে করবে বলে তোমার মাকে ডিভোর্স দেয় তোমাকে আর তোমার মা’কে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। তখন তোমার বয়স ছয় বছর। তুমি ইয়াশের থেকে দুই বছরের ছোট ছিলে।
তোমার মা’কে আমরা ইকবালের সাথে বিয়ের প্রস্তাব দিলে প্রথমে রাজি হয়নি। কিন্ত পরে তোমার কথা ভেবে, তোমাকে বড় করতে হলে, ভালো ভাবে মানুষ করতে হলে, তোমার পড়াশুনা, ভরনপোষণ করবে হলে নতুন করে আবার কারো সাথে জীবন শুরু করতে হবে। একা নিজের পহ্ম্যে তোমার ভরনপোষণ করা সম্ভব না।

অবশেষে ইকবালের আর তোমার মা’র দুজনেই আবার নতুন করে জীবন শুরু হয়। দুজন দুজনের বাকি টা পথ চলার সাথী হয়। তোমার মা ইয়াশ কে কখনও সৎ ছেলে মনে করেনি সব সময় তোমার থেকে একটু বেশি ভালোবাসা দিয়েছে ইয়াশ কে। ইয়াশ ও তোমার মা’কে নিজের মায়ের জায়গা দিয়ে আপন করে নিয়েছে।
তোমাদের দুই ভাইয়ের মধ্যে বড় হয়ে যাতে ঝগড়া বিবাদ সৃষ্টি না হয় তাই ছোট বেলা ই ইকবালের সমস্ত সম্পত্তি তোমাদের দুই ভাইয়ের নামে সমান ভাবে ভাগ করে লিখে দেয়।
তাই বলছি বাবা নিজের অংশের ভাগ ছেড়ে বাড়ি থেকে চলে আসা তোমার ঠিক হয়নি।
ইফান মনির চৌধুরীর কথা গুলো শুনে কিছু না বলে চুপচাপ রুম থেকে বের হয়ে যায়।

রাতে ইয়াশ ইশিতা আর নাজমা চৌধুরী এক সাথে ডাইনিং টেবিলে বসে ডিনার করছে। খাওয়া শেষে ইশিতা সব কিছু গুছিয়ে রাখতে যাচ্ছিল। ঠিক তখনই বিকট শব্দে কলিং বেল বাজতে লাগলো। এতো রাতে কে এসেছে। আর এমন ভাবে কলিং বেল চাপছে?
নাজমা চৌধুরী দরজা খোলার জন্য উঠতে নিলে।
— তুমি বসো মা। আমি দেখছি কে এসেছে।
— আচ্ছা তাড়াতাড়ি দেখ। মনে হচ্ছে কলিং বেল চাপতে চাপতে ভেঙে ফেলবে।
ইশিতা গিয়ে দরজা খুলে দেয়। সামনে ইফান রিহা কে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ইশিতা ওদের দুজন কে এক সাথে দেখে মোটেও অবাক হয়নি।
ইফান ইশিতা কে ধাক্কা দিয়ে দরজার সামনে থেকে সরিয়ে ভেতর চলে আসে। নাজমা চৌধুরী ইফান কে দেখে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ায়।
— ইফান তুই এসেছিস?
এতো দিন পর ইফান কে দেখে নাজমা চৌধুরীর চোখ জলে ভরে উঠলো।
— আয় বাবা আয়। রাগ করে কি কেউ এতো দিন বাড়ি ছেড়ে থাকে?
ইয়াশ ইফান আর রিহা কে দেখতে পেয়ে ওদের কাছে আসে।
— ইফান তোর সাথে রিহা কেন এসেছে?
ইফান শার্টের কলারের ভাঁজ ভেঙে কলার টা একটু উপরে তুলে নিয়ে সোফায় গিয়ে বসে।
— রিহা আমার ওয়াইফ। এই বাড়ির ছোট বউ।
নাজমা চৌধুরী কান্না ভেজা কন্ঠে
— তুই রিহা কে বিয়ে করেছিস। তা আমাদেরকে একবার ও জানানোর প্রয়োজন মনে করিস নি। আমরা কি তোর কেউ না।
ইফান বিরক্তি নিয়ে
— মা বন্ধ করো তো তোমার কান্না। এতো দিন আমি বাড়ি না থাকায় তো বড় ছেলেকে নিয়ে ভালোই ছিলে। আমি না থাকায় তো তোমাদের কোনো কষ্ট হয়নি।
— ইফান তুই মায়ের সাথে এভাবে কথা বলতে পারিস না।
— ওহ জাস্ট সেটআপ। তুই আমার সাথে উচু গলায় কথা বলতে আসবি না। এটা তোর একার বাড়ি না। তুই যেমন এ বাড়ির ছেলে তেমন আমিও এ বাড়ির ছেলে। এই বাড়ি তোর যতটুকু অধিকার আছে ঠিক ততটা আমার ও আছে।
— তুই কি অধিকার ফলানোর জন্য এতো দিন পর বাড়ি ফিরেছিস?
— অবশ্যই। তুমি তোমার বড় ছেলে
না আমার কোথাও একটা ভুল হচ্ছে, ওটা বড় ছেলে না ওটা সং ছেলে হবে।
তুমি তোমার সৎ ছেলের জন্য আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিতে এটা তো হতে পারে না।
ইফানের মুখে এই কথা শুনে নাজমা চৌধুরী ধপ করে চেয়ারে বসে পড়লো।
— ইফান কি বলছিস তুই এসব?
— ঠিক ই তো বলছি। তুমি তো তোমার সৎ ছেলেকে ই নিজের ছেলে মনে করো। আর নিজের ছেলেকে সৎ।
ইয়াশ রেগে ত্যারে এসে
— তোকে এসব কে বলেছে?
তোর সাহস হয় কি করে মা’কে এসব কথা বলার। স্কাউন্ডেল আমি তোকে জানে মেরে ফেলবো।
ইয়াশ ইফানের শার্টের কলার ধরে টান দিয়ে সোফা থেকে তুলে নিয়ে আসে।
ইফান ইয়াশ কে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দিয়ে।
— আমার গায়ে হাত তুলার সাহস দেখাতে আসিস না ভাই।
নাজমা চৌধুরী ইয়াশের কাছে এসে ইয়াশ কে দুই হাতে আটকে ধরে
— ও একটা অমানুষ হয়ে গেছে বাবা। তুই তোর সাথে লাগতে যাস না।
— হুম এখন তো সৎ ছেলেকে পেয়ে গেছো। তাই নিজের ছেলেকে অমানুষ মনে হয়।
ভাগ্য ভালো আমার সৎ বাবা ভালো মানুষ ছিলেন। আর আমার নামে ও উনার সম্পত্তি লিখে দিয়ে গেছিলেন। নয়তো তোমরা তো ঘাড় ধাক্কা দিয়ে আমাকে এ বাড়ি থেকে বের করে দিতে।
ইশিতা এক পাশে দাঁড়িয়ে নির্বোধ দর্শকের মত সব কিছু দেখে যাচ্ছে। কোনো কিছুই ইশিতার মাথায় ঢুকছে না। ইফান এতো টা নিচে কি করে নামতে পারলো।
— আমার সাথে এক বাড়িতে থাকতে তোমাদের অসুবিধা হলে, তোমরা আমার প্রাপ্য অংশ আমাকে দিয়ে দেও আমি এ বাড়ি থেকে চলে যাবো।
ইফানের এমন রূপ দেখে নাজমা চৌধুরী কিছু বলতে পারছে না। নিজের পেটের সন্তান যাকে দশ মাস গর্ভে ধরেছে সে আজ নাজমা চৌধুরী কে এমন ভাবে কথা শুনাচ্ছে। যে ভাই তাকে কোনো দিনও সৎ ভাই মনে করেনি। সব সময় নিজের আপন ভাই ভেবে কলিজায় জায়গা দিয়েছে ইফান আজ তার সাথে ও বাজে ব্যবহার করেছে।
— আমি বিয়ে করে বউ নিয়ে বাসায় এসেছি। তার পর ও তোমরা এসব ড্রামা করলে। কোথায় নতুন বউকে বরণ করে ঘরে তুলবে তা না করে ড্রামা স্টার্ট করে দিলে।
আমি ভিষণ টায়ার্ড। রিহা এখানে তোমাকে কেউ বরণ করে রুমে নিয়ে যাবে না। তুমি তো আমার রুম চিনো ই। তাই নিজে থেকেই আমার সাথে চলো।
ইফান নিজের রুমে যেতে লাগলো। পিছন ফিরে তাকিয়ে আবার বলতে লাগলো
— আজকের জন্য ড্রামা শেষ। আর যদি বাকি থাকে তাহলে আবার কাল সকাল থেকে স্টার্ট করবো। এখন ঘুমাতে যাও গুড নাইট অল।

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here