“সেই তুমি💐 পর্ব -২৯+৩০

0
503

সেই তুমি💐
পর্ব -২৯+৩০
Samira Afrin Samia
#Nipa

ইশিতা রুমে পায়চারি করছে। ইয়াশ নিচে এসে ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা পানির বোতল বের করে কয়েক ঢোক পানি খেয়ে উপরে রুমে চলে গেল। ইয়াশ দরজায় একটু শব্দ করে রুমের ভেতর আসে। ইশিতা ইয়াশ কে দেখে পায়চারি বন্ধ করে দাঁড়িয়ে যায়। ইয়াশ স্বাভাবিক ভাবেই
— এখনো জেগে আছো কেন?
ঘুমাতে যাও নি। রাত অনেক হয়েছে।
ইয়াশ বেডে শুতে শুতে
— লাইট অফ করে দিবো?
ইশিতা কিছু বলছে না। ইশিতার কানে ইয়াশের কথা গুলো ঢুকছে কি না ইয়াশ তা ও বুঝতে পারছে না। ইশায় কপালের উপর হাত রেখে শুয়ে আছে। ইশিতা আগের মতই দাঁড়িয়ে আছে।
— ইয়াশ।
ইশিতার মুখ থেকে ইয়াশ নিজের নাম শুনে তড়িঘড়ি করে শুয়া থেকে উঠে বসলো।
— কি হলো এভাবে ভুত দেখার মত অবাক হয়ে তাকিয়ে কি দেখছো?
আগেও তো আমি তোমাকে তুমি করেই বলতাম তাই না?
ইয়াশ কিছু না বলে মাথা নাড়লো।
— আমি তো তোমার কথা ভুলেই গেছিলাম। তুমি এখনও আমাকে মনে রেখেছো।
ইয়াশ কিছু বলছে না। ইশিতা ও কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলো। দু’জনই চুপচাপ একে অপরের দিকে তাকিয়ে আছে।
— ছোট বেলা থেকেই কি তুমি আমাকে ভালোবাসতে?
— ছোট বেলা বুঝতে পারিনি ভালোবাসা কি, ভালোবাসা কাকে বলে। তবে যখন থেকে বুঝতে পেরেছি ভালোবাসা কি তখন থেকেই আমি তোমাকে ভালোবেসেছি।
— তুমি কি এখনও আমাকে ঠিক আগের মতই ভালোবাসো?
— আগে ঠিক কতটা ভালোবাসতাম তা বলতে পারবো না। তবে এখন আগের থেকে আরও অনেক গুণ বেশি ভালোবাসি।
একটা মানুষ দূরে গেলেই বুঝা যায় সে আমাদের কতটা আপন ছিল। তুমি আমার থেকে দূরে যাওয়ার পর আমি বুঝতে পারলাম তুমি আমার কে ছিলে আর কতটা আপন ছিলে।
— তুমি প্রথম দিন থেকেই আমাকে চিনতে?
— না। প্রথম যে দিন তোমাকে লিফট দিয়েছিলাম তখন তোমাকে চিনতাম না। তবে সেদিন কেনই যেন তোমাকে খুব চেনা চেনা মনে হয়েছিল। এমন মনে হয়েছিল তুমি আমার কত দিনের চেনা।
— পরে কখন জানতে পারলে আমি ই তোমার ছোট বেলার খেলার সাথী ইশু?
— ইফানের সাথে তোমার সম্পর্ক আছে জেনে যখন তোমার সম্পর্কে খোঁজ নিলাম তখন।
— তুমি ছোট থেকে যাকে ভালোবাসো এতো বছর পর যখন তার খোঁজ পেলে আর এটাও জানতে পারলে সে তোমার ছোট ভাইয়ের সাথে রিলেশন করে তখন তোমার কষ্ট হয়নি?
— কষ্ট হওয়া টা কি স্বাভাবিক না?
তবে তুমি যদি ইফানের সাথে ভালো থাকতে তাহলে হয়ত এতো কষ্ট পেতাম না।
— আমার উপর তোমার রাগ হয়নি, ঘৃণা হয়নি আমাকে?
একজনের সাথে রিলেশন করে বিয়ের আগেই প্রেগন্যান্ট হয়ে গেলাম।
— রাগ হবে কেন? তুমি তো আর জানতে না আমি তোমাকে ভালোবাসি।
আর ঘৃণা?
যাকে ভালোবাসা যায় তাকে কখনও ঘৃণা করা যায় না।
ইশিতা কাঁদছে। ওর চোখ থেকে এমনিতেই পানি পড়ছে।
— আমাকে আগের মত করে ভালোবাসতে পারবে?
— আগের থেকেও বেশি ভালোবাসতে পারবো।
— একটা নষ্টা, কলঙ্কিনী মেয়ের সাথে নিজের বাকি টা জীবন কাটাতে পারবে?
ইশিতার মুখে এ কথা শুনে ইয়াশ আঙ্গুল দিয়ে ইশিতার মুখ আটকে দিলো।
— কে বলেছে তুমি নষ্টা,কলঙ্কিনী?
— সমাজের সবাই তো বলছে।
— আমি সমাজের মানুষের কথার ধার ধারিনা।
আর তুমি কলঙ্কিনী না। তুমি একজন কে ভালোবাসেছো। তাকে বিশ্বাস করেছো।
সে তোমার ভালোবাসার দাম দেয়নি। তোমার বিশ্বাসের মর্যাদা রাখেনি। তোমার দূর্বলতার সুযোগ নিয়েছে। এতে তো তোমার কোন দোষ নেই।
তুমি তো ইচ্ছে করে ওর কাছে নিজেকে সমর্পণ করোনি। এমনকি নিজের সেন্সে থেকে ওর সাথে ফিজিক্যাল রিলেশনে যাও নি। ইফান তোমার ড্রিঙ্কে নেশার ঔষধ মিশিয়ে দিয়ে তোমার অঙ্গত অবস্থায় তোমার সাথে ঘনিষ্ট হয়েছে।আমি তোমার স্বামী হলেও আমাদের বিয়ে বৈধ হয়নি। তাই এতো দিনে আমি তোমাকে স্পর্শ ও করিনি। আমাদের মাঝে কখনও স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক তৈরি হয়নি। তাই কোনো ভাবেই কোন দিক থেকে তুমি নষ্টা নও।
ইশিতা ইয়াশ কে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো। ইশিতা ইয়াশ কে জড়িয়ে ধরায় ইয়াশ পাথর হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।
— সত্যি ই আমি খুব ভাগ্য করে তোমাকে আমার স্বামী হিসেবে পেয়েছি।
ইয়াশ হালকা করে ইশিতার পিঠে হাত রাখলো।
— আমি চেষ্টা করবো তুমি আমাকে যতটা ভালোবাসো ঠিক ততটাই তোমাকে ভালোবাসতে। হয়তো তোমার মত করে এতটা ভালোবাসতে পারবো না। পরেও তুমি আমাকে কখন ছেড়ে যেও না। আমি সারা জীবন তোমার হাত ধরে হাঁটতে চাই।
— ছেড়ে দেওয়ার জন্য তোমার হাত ধরি নি। জীবনের শেষ মূহুর্ত পর্যন্ত আমি তোমার পাশে থাকবো।

রিহা তার নিজের হাতে সাজানো বাসর ঘরে বসে আছে। ইফানের জন্য অপেক্ষা করছে। কখন আসবে ইফান? কখন এসে নিজের হাতে রিহার ঘোমটা তুলে দিয়ে বলবে “” লাল শাড়িতে আমার বউ টা কে একেবারে লাল পরির মত লাগছে “”” ইফানের কথা শুনে রিহা লজ্জা পেয়ে মুখ অন্য পাশে ফিরিয়ে নিবে। এসব ভেবে রিহা নিজে একা একাই লজ্জা পাচ্ছে।
— ইফান এখনও আসছো না কেন? তাড়াতাড়ি আসো। আমি জানি তুমি আমার জন্য গিফট নিতে গেছো।
ইফান যত দ্রুত সম্ভব কার ড্রাইভ করে বাসায় আসে। ইফানের মাথা হ্যাং হয়ে আছে। ভেতরে এসে রিহা কে দেখে ও কি করবে তা ইফান নিজে ও জানে না।
দৌঁড়ে মেইন ডোরের কাছে আসে। কলিং বেল চাপতে হয়নি আগে থেকেই মেইন ডোর খোলা রয়েছে। ইফান ভেতর এসে দেখে সব কিছু নিশ্চুপ। যে যার রুমে আছে পার্টি ও শেষ বাসা তেমন ভাবেই সাজানো আছে। এসব দেখে ইফানের মাথায় আগুন ধরে গেল। ইফান কোন ভাবে নিজেকে সামলে নিয়ে নিজের রুম পর্যন্ত গেল।রুমের ভিতর গিয়ে ইফান কিছু দেখতে পারছে না পুরো রুম অন্ধকার হয়ে আছে। রুমের লাইট অফ করা। ইফান অন্ধকারে হাত বাড়িয়ে লাইট অন করে থমকে গিয়ে দু’হাত শক্ত করে মুঠো বন্দী করে হাতে হাত চেপে কিরমির করতে লাগলো। রুমে লাইট অন করার সাথে সাথে রিহা ইফান বলে বেড থেকে উঠে আসলো।
— ইফান বেবী কোথায় ছিলে তুমি? সেই কখন থেকে তোমার জন্য ওয়েট করে বসে আছি। তুমি জানো না আজ আমাদের বাসর রাত। আমি নিজের হাতে পুরো রুম কত সুন্দর করে সাজিয়েছি।
রিহা ছুটে বেডের কাছে গিয়ে অস্থির হয়ে বেডে লাগানো ফুল গুলোয় হাত বুলিয়ে
— এই দেখো তোমার রজনীগন্ধা পছন্দ তাই আমি পুরো রুমের বেশির ভাগ রজনীগন্ধা দিয়ে সাজিয়েছি।
রিহা আবার ইফানের কাছে এসে ইফানের সাথে ঘেসে দাঁড়িয়ে ইফানের হালে হাত রেখে
— তুমি এমন করো কেন?
তুমি আমার ফিলিংস গুলো বুঝো না। আমি তোমাকে কতটা ভালোবাসি এটা কি তুমি জানো না?
রাগে ইফানের চোখ লাল হয়ে গেছে। মনে হচ্ছে চোখ দিয়ে আগুন বের হবে। ইফান রিহার এসব কথা শুনে শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে রিহার গালে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয়। রিহা ইফানের থাপ্পড় খেয়ে নিজের টাল সামলাতে না পেরে ছিটকে নিচে পড়ে যায়। রিহা নিচে পড়ে গালে হাত দিয়ে ইফানের দিকে তাকিয়ে আছে। ইফান নিজের রাগের উপর কন্ট্রোল হারিয়ে। রিহার কাছে গিয়ে রিহার হাত ধরে টেনে নিচে থেকে তুলে দাঁড় করায়।
— আর কত নাটক করবি তুই?
তোর সব নাটক আমার কাছে ধরা পড়ে গেছে। এখন আমার সামনে আর একটা মিথ্যে কথা বললে আমি তোর জ্বীব টেনে ছিড়ে ফেলবো।
— কি বলছো তুমি এসব কিসের নাইট?
ইফান রিহা কে সাথে সাথে লাগালাগি আরো কয়েকটা থাপ্পড় মারে।
— চুপ একদম চুপ। কোন কথা বলবি না তুই। তাহলে কিন্তু আমি তোকে খুন করে ফেলবো। আমাকে এতোটা নিচে নামতে বাধ্য করিস না তুই।
কথা গুলো বলে ইফান বেডের দিকে তাকিয়ে দেখে রজনীগন্ধা ফুল দিয়ে খুব সুন্দর করে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। ইফান রাগে কটমট করতে করতে বেডের কাছে গিয়ে। সব কিছু টেনে হেচড়ে ছিড়ে ফেলতে লাগলো। মূহুর্তের মধ্যে ইফান পুরো রুম উলট পালট করে দিলো। সব কিছু ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়ে চিৎকার দিয়ে দুই হাঁটু গেড়ে নিচে বসে পড়লো।
— তুই আমার জীবন টা শেষ করে দিয়েছিস। তোর জন্য ইশিতা আমার থেকে দূর হয়ে গেছে। তোর জন্য আমি আমার সন্তান কে মেনে নেই নি।
ইফান দেয়ালে জোরে জোরে ঘুসি দিতে লাগলো। এক পর্যায়ে ইফানের হাত ফেটে রক্ত বের হতে লাগলো। রিহা ইফানের কাছে গিয়ে ইফানের হাত ধরে
— ওই রাফি তাহলে তোমাকে সব কিছু জানিয়ে দিয়েছে তাই না? ওকে বাঁচিয়ে রাখা টা ই আমার ভুল হয়েছে ইডিয়ট টার বেঁচে থাকার কোন অধিকার ই নেই।
রিহা নিজের শাড়ি দিয়ে ইফানের হাতে লাগা রক্ত মুছতে মুছতে এতো সহজেই কথা গুলো বললো যা শুনে ইফান অবাক না হয়ে পারলো না।
ইফান এক ঝটকায় হাত সরিয়ে নিয়ে।
— ডোন্ট র্টাচ মি। তুই সত্যি ই সুস্থ না। তুই কাল ই আমার বাড়ি থেকে বের হয়ে যাবি। আমি তোকে আমার চোখের সামনে দেখতে চাই না। তুই আর আমার সামনে আসবি না। নয়তো তোকে খুন করতে আমি দুবার ভাববো না।
ইফান রুম থেকে বের হতে নিলে রিহা ইফান কে আটকে ধরে
— কোথায় যাচ্ছো তুমি?
আজ তোমার সাথে আমার বাসর হবে। আমি এই দিনের জন্য কত অপেক্ষা করেছি। কত স্বপ্ন সাজিয়েছি এই রাত টা কে নিয়ে।
— আমি পারলে এখনই তোর গায়ে আগুন লাগিয়ে দেই। তোর সাথে বাসর কারা তো দূর আমি তোর মুখ টা ও দেখতে চাই না।
ইফান রিহা কে ধাক্কা দিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেল। রিহা ধাক্কা খেয়ে বেডের কাছে ছিটকে পড়ে। বেডের কোনায় মাথা লেগে অনেক টা কেটে গিয়ে রক্ত বের হতে লাগলো। মাথা কেটে রক্ত বের হচ্ছে সেদিকে রিহার কোন মাথা ব্যথা নেই। রিহা হয়তো খেয়াল ই করেনি ওর মাথা কতটা কেটে গেছে।
— ইফান তুমি আমাকে এভাবে রেখে চলে যেতে পারো না। তুমি আমার স্বপ্ন গুলো এভাবে মাটি করে দিতে পারো না।ইফান রাতে রুম থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর আর রুমে আসেনি। পুরো রাত বাইরেই ছিল।

ইয়াশ ইশিতার পাশে শুয়ে আছে। ইশিতা ঘুমাচ্ছে। ঘুমের মধ্যে এক হাত ইয়াশের বুকের উপর তুলে রাখছে। ইয়াশ অপলক ভাবে ইশিতার মুখের দিকে তাকিয়ে ইশিতা কে দেখছে। কতই না মায়াবী লাগে ইশিতা কে ঘুমানোর সময়। এই মেয়েটা এইটুকু সময়ে কত কষ্ট পেয়েছে। কত কিছু সহ্য করেছে।
ইয়াশ কিছু সময় ইশিতা কে দেখে আনমনে হঠাৎ করে ইশিতার কপালে একটা চুমু এঁকে দিলো।
ইশিতা ইয়াশের ছোঁয়া পেয়ে নড়ে উঠলো। ইয়াশ খুব সাবধানে ইশিতার পাশ থেকে উঠে গেল।

ভোর সকাল এখনও কারো ঘুম ভাঙে নি। ইফান হলরুমে দাঁড়িয়ে ইশিতার নাম ধরে জোরে জোরে ডাকতে লাগলো।
— ইশিতা,,, ইশিতা
প্রায় অনেকক্ষণ ডাকার পর ইশিতার ঘুম ভাঙলো।
নিচে থেকে কার যেন ডাক শুনে ইশিতার ঘুম ভেঙে গেলে ইশিতা উঠে বসলো। পাশে ফিরে ইয়াশ কে পেল না। ইয়াশ আজও ইশিতার আগে উঠে গেছে।
নিচ থেকে আবার ডাক শুনা যাচ্ছে।
— এতো সকাল সকাল আমার নাম ধরে কে এভাবে ডাকাডাকি করছে?
ইশিতা নিজের শাড়ি ঠিক করে কি হয়েছে তা দেখার জন্য নিচে গেল।
নাজমা চৌধুরী ইফানের ডাক শুনে নিচে আসে।
— কি হচ্ছে ইফান সকাল সকাল এভাবে ইশিতা কে ডাকছিস কেন?
আবার কি নতুন অশান্তি শুরু করেছিস?
ইফান নাজমা চৌধুরী কে কিছু বলতে যাবে তখনই দেখতে পেল ইশিতা সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামছে।
ইশিতা কে দেখে ইয়াশ ব্যস্ত হয়ে ইশিতার কাছে গেল।
— ইশিতা।
ইফান কে দেখে ইশিতার ভয় হতে লাগলো। না জানি ইফান আবার কোন নতুন অশান্তি শুরু করবে। ইশিতার হাত পা কাঁপছে। বুক ধুকপুক করতে লাগলো। ইফান কি করবে এখন?এটা ভেবে।

চলবে…..

সেই তুমি💐
পর্ব -৩০
Samira Afrin Samia
#Nipa

ইশিতা ভয়ে ভয়ে সিঁড়ি বেয়ে নামছে। ইফান ইশিতার কাছে গিয়ে
— ইশিতা তোমার সাথে আমার অনেক কথা আছে।
ইফানের মুখে তুমি কথা টা শুনে ইশিতা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। ইফান তো এই কদিন ইশিতা কে একদম সহ্য করতে পারতো না। তাহলে আজ হঠাৎ করে এতো ভালো করে ইশিতার সাথে কথা বলছে।
ইফান আচমকাই ইশিতা হাত ধরে নিয়ে
— আমার অনেক বড় ভুল হয়ে গেছে ইশিতা। তুমি আমাকে হ্মমা করে দেও। আমি নিজের ভুল বুঝতে পেরেছি। এখন আমি আমার ভুল শুধরে নিতে চাই।
ইফানের কোন কথাই ইশিতা বুঝতে পারছে না।
— তুমি এসব কি বলছো ইফান?
— আমি সব জেনে গেছি তোমার কোন ভুল ছিল না। ওই রিহা আমাকে ভুল বুঝিয়েছে এতদিন। আমি তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি তুমি আমাকে মাফ করে দেও ইশিতা।
ইশিতা ইফানের হাত থেকে নিজের হাত সরিয়ে নিয়ে
— এখন এসব বলে কোন লাভ নেই ইফান। এসব কথা বলার জন্য এখন অনেক দেরি হয়ে গেছে।
— না ইশিতা তুমি চাইলে এখনও সব কিছু ঠিক করতে পারো। আমি তোমাকে আমার বাচ্চা কে ফিরে পেতে চাই।
নাজমা চৌধুরী ইফানের কথা শুনে
— তোর মাথা ঠিক আছে তো ইফান কি বলছিস তুই এসব?
— আমি ঠিকই বলছি মা। আমি আবার সব কিছু ফিরে পেতে চাই। আমি আমার বাচ্চা কে নিজের পরিচয় দিতে চাই।
— তুমি চাইলে ই এখন কিছু হবে না।
— কেন হবে না ইশিতা?
— কারণ আমি চাই না। আমি চাই না তোমার মত একটা অমানুষের পরিচয় নিয়ে আমার বাচ্চা এই দুনিয়াতে আসুক। আর তাছাড়া আমি বিবাহিত। আমার স্বামী মি.ইয়াশ চৌধুরী। উনি ই আমার বাচ্চার বাবা।
— তুমি তো ভাইকে ভালোবাসো না। তুমি আমাকে ভালোবাসো।
ইশিতা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে
— ভালোবাসা?
তোমার মুখের ভালোবাসার কথা শোভা পায় না ইফান। ভালোবাসা পবিত্র শব্দ টা তোমার অপবিত্র মুখে মানায় না।ভালোবাসার তুমি কি বুঝো?
— আমি সত্যি ই আমার ভুল বুঝতে পেরেছি। তুমি আমাকে মাফ করে দেও ইশিতা।
— কিসের ভুল বুঝতে পেরেছো তুমি?
তোমার এই একটা ভুলের জন্য আমার জীবন টা শেষ হতে হতেও বেঁচে গেল। আমি তো নিজের হাতে আমার বাচ্চা কে মেরে ফেলতে গেছিলাম। যদি না ইয়াশ এসে আমার পাশে দাঁড়াতো তাহলে তো আমার এতো
ইশিতা কথা শেষ করতে পারলো না চোখ ভরে পানি পড়তে লাগলো। কথা গুলো গলায় বেঁজে উঠছিল।
— প্লিজ ইশিতা প্লিজ।দরকার পড়লে আমি তোমার পায়ে ধরে হ্মমা চাইবো। তার পরও তুমি আমাকে হ্মমা করে দাও। ফিরে আসো আমার জীবনে। আমি আমার সন্তান কে চাই তোমাকে চাই।
— প্লিজ ইফান আমি তোমার আর একটা কথাও শুনতে চাই না। এখন তোমার সন্তানের কথা মনে হচ্ছে। কই আগে তো সন্তানের প্রতি এতো দরদ ছিল না। তোমার মনে আছে তুমি নিজে আমাকে বলেছিলে এ্যাবরেশন করিয়ে নিতে।
— তখন রিহার কথা শুনে আমি তোমাকে অবিশ্বাস করেছি।
— আসলে কি জানো ইফান। তুমি কোন দিনও আমাকে সত্যি কারে ভালোবাসো নি। যদি সত্যি কারে ভালোবাসতে তাহলে অন্য কারো কথায় নিজের ভালোবাসার মানুষ কে অবিশ্বাস করতে পারতে না।
তুমি কোন দিনও আমাকে বিশ্বাস করো নি। যেখানে বিশ্বাস নেই সেখানে ভালোবাসা ও নেই।
আমি আমার নিজের লাইফে আমার স্বামীর হাত ধরে অনেক টা পথ এগিয়ে গেছি। এখন আমি পিছনে ফিরে তাকাতে চাই না।
— আমি জানি তুমি এসব কথা অভিমান করে বলছো।এগুলো তোমার মনের কথা না। তুমি ভাইকে ভালোবাসো না।
নাজমা চৌধুরী ইফানের এসব পাগলামি দেখে হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
ইফান ইশিতার কাছে এসে জোর করে ইশিতার হাত ওর হাতের মুঠোয় নিয়ে।
— তুমি শুধু আমাকে ভালোবাসো আমি তা খুব ভালো করেই জানি।
ইশিতা ইফানের থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না। ইফান খুব শক্ত করে ইশিতার হাত ধরে আছে।
— ইফান আমার হাত ছাড়ো।
ইফান আরও শক্ত করে ইশিতার হাত ধরে
— না ইশিতা। আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি এখন আমি তোমাকে আর আমার বাচ্চা কে চাই। তুমি আমাকে ফিরিয়ে দিতে পারবে না।
— ইফান আমার হাত ছাড়ো বলছি।
ইশিতার বার বার বলাতে ও ইফান কিছুতেই ইশিতার হাত ছাড়ছে না। উল্টে ইশিতা যতই হাত ছাড়ার কথা বলছে ইফান ততই শক্ত করে হাত ধরে রাখছে।
এক পর্যায়ে ইশিতা জোর জবরদস্তি করে ও হাত ছাড়াতে না পেরে নাজমা চৌধুরী কে ডাকতে লাগলো।
— ইফান আমার হাতে লাগছে। আমার হাত ছাড়ো বলছি।
মা মা আপনি ইফান কে বলেন এসব পাগলামি বন্ধ করতে।
ইশিতা কাঁদো কাঁদো কন্ঠে কথা গুলো বললো। ইশিতার চোখের কোণা বেয়ে কয়েক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পরলো। নাজমা চৌধুরী পাশেই ছিল। নাজমা চৌধুরী এই পরিস্থিতি দেখে ইফান হাত থেকে ইশিতার হাত ছাড়ানোর বৃথা চেষ্টা করছে।
— ইফান পাগলামি বন্ধ করে ইশিতার হাত ছাড়। ইশিতার লাগছে। ও ব্যথা পাচ্ছে।

ইফান রুম থেকে বের হয়ে চলে যাওয়ার পর রিহা একটু ও ঘুমাই নি। সারা রাত প্রায় জেগেই ছিল। ভোর হওয়ার একটু আগে আগে রিহার চোখ লেগে গেলে রিহা ফ্লোরে শুয়েই ঘুমিয়ে পড়ে।সকালে এতো চেচাঁমেচি শুনে রিহার ঘুম ভেঙে যায়। রিহা চোখ ডলতে ডলতে রুম থেকে বের হয়ে নিচে আসে। সিঁড়ির উপর দাঁড়িয়ে ইফান ইশিতার হাত ধরে আছে এটা দেখে রিহা ইফান বলে চিৎকার দিয়ে উঠলো।
— ইফান।
তুমি ওই মেয়েটার হাত ধরে আছো কেন। ছাড়ো বলছি।
রিহা এক প্রকার দৌঁড়ে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে আসে।
রিহা ও ইফানের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছে।
— ইফান তুমি এই নষ্টা মেয়েটার হাত ধরে আছো কেন?
রিহার মুখে ইশিতার জন্য নষ্টা কথা টা শুনে ইফান ইশিতার সাথে সাথে ছেড়ে দিয়ে রিহা কে শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে একটা চড় মারে। রিহা টাল সামলাতে না পেরে উপুড় হয়ে নিচে পড়ে যায়। ইফানের এমন ব্যবহার দেখে ইশিতা ভয়ে আঁতকে উঠে।
নাজমা চৌধুরী রেগে গিয়ে চিৎকার দিয়ে।
— ইফান কি শুরু করেছিস তুই?
তুই পাগল হয়ে গেলি নাকি?
ইফান নাজমা চৌধুরীর কথা কানেও নিলো না। ইফান রিহার দিকে তাকিয়ে
— আর কোন দিন ইশিতা কে নষ্টা বলার দুঃসাহস দেখাতে আমি তোকে জানে মেরে ফেলবো।
— ইফান রিহা তোর বউ। তুই ওর গায়ে হাত তুললি। আর কত নিচে নামবি তুই?
— ও আমার বউ না মা। আমি ওকে ডিভোর্স দিবো। ওর জন্য আমি এতো দিন ইশিতা কে কষ্ট দিয়েছি। নিজের সন্তানের দায়িত্ব নিতে অস্বীকার করেছি। সব কিছুর পিছনে রিহা ছিল। এখন ওর সাহস করে কি করে হয় আমার সামনে আসার। আমি ওকে এখনও জীবিত রেখেছি এটা ওর ভাগ্য।
রিহা নিচে থেকে উঠে কাঁদো কাঁদো হয়ে।
— ইফান আমি তোমাকে ভালোবেসে এসব করেছি। আমি যা করেছি সব কিছুই তো তোমাকে নিজের করে পাবার জন্য করেছি।
— চুপ আর একটা কথা বলবি না তুই। তুই এখনই আমার বাড়ি থেকে বের হ।
ইফান রিহার হাত ধরে টেনে মেইন ডোর পর্যন্ত নিয়ে গেল।
— আমি কোথাও যাবো না। আমি তোমার বিয়ে করা বউ। তুমি চাইলেই আমাকে এ বাড়ি থেকে বের করে দিতে পারো না।
রিহার কথা শুনে ইফান রেগে গিয়ে রিহার গলা চেপে ধরে।
— আচ্ছা তোর এ বাড়ি থেকে যেতে হবে না। আমি তোকে একে বারে দুনিয়া থেকেই বিদায় করে দিব।
নাজমা চৌধুরী ইশিতা দুজন এসে ইফান কে ছাড়ানোর চেষ্টা করেও পারছে না।
এমন সময় ইয়াশ জগিং করে বাইরে থেকে ফিরে আসে। বাসায় এসে ইয়াশ দেখতে পেলো ইফান রিহার গলা চেপে ধরে আছে ইশিতা আর নাজমা চৌধুরী ছাড়ানোর চেষ্টা করছে। ইয়াশ এসে ইফান কে ছাড়িয়ে নিয়ে ইফান কে একটা চড় মারে।
রিহার চোখ লাল হয়ে গেছে। দম বন্ধ হয়ে আসছিল। রিহা জোরে জোরে শ্বাস টানতে লাগলো আর কাশতে লাগলো।
— কি করছিস তুই এসব?
— ভাই তুই আমাকে আরো মার আমি কিছু বলবো না। পরেও রিহা কে আমার চোখের সামনে থেকে দূর কর। ও আমার সামনে থাকলে আমি ওকে খুন করে ফেলবো ভাই।
— তুই রিহা কে বিয়ে করেছিস। এখন ওকে খুন করতে যাবি কেন?
— রিহা আমাকে মিথ্যে বলে আমাকে দিয়ে এসব করিয়েছে।
এখন ওর সত্যি আমার সামনে এসে গেছে।
ইফান ইশিতার কাছে এসে
— ইশিতা তুমি ভাই কে বলো তুমি শুধু আমাকে ভালোবাসো।
তুমি আমার কাছে ফিরে আসতে চাও।
ইফানের কথা শুনে ইয়াশ ইশিতার মুখের দিকে তাকায়। ইশিতা ইয়াশের দিকে এক পলক তাকিয়ে
— কে বলেছে আমি তোমাকে ভালোবাসি,তোমার কাছে ফিরে যেতে চাই?
আমি তোমাকে ভালোবাসি এটা একান্তই তোমার ভুল ধারনা। আমি আমার স্বামী কে ভালোবাসি। আর উনার সাথে ভিষণ সুখে আছি।
ইশিতা আজ সবার সামনে ইয়াশ কে ভালোবাসি কথা টা বলে দিলো। সবার সামনে নিজের ভালোবাসা স্বীকার করে নিলো। ইয়াশ ইশিতার দিকে তাকে আছে আগের মতই।
— একটা কথা শুনে রাখো ইফান। আমার বাচ্চার উপর তোমার কোন অধিকার নেই। এই বাচ্চার বাবা ইফান চৌধুরী না। এই বাচ্চার বাবা ইয়াশ চৌধুরী। আর হ্যা এখন সম্পর্কে আমি তোমার ভাবী হই। তোমার বড় ভাইয়ের বউ। এই কথা টা ভালো করে মাথায় ঢুকিয়ে নিও।
ইফান ইয়াশের কাছে এসে
— ভাই তুই ইশিতা কে বুঝা। আমি ওকে অনেক ভালোবাসি। তুই ওকে আমার কাছে ফিরিয়ে দে। প্লিজ ভাই আমি তোর পায়ে পড়ি। তুই আমার ভালোবাসা আমার বাচ্চা কে আমার করে দে।
ইয়াশ কি বলবে বুঝতে পারছে না। ইয়াশ শুধু বোকার মতো ইশিতার দিকে তাকিয়ে আছে।
— তোমার কাছে বিয়ে টা ছেলেখেলা হতে পারে। কিন্তু আমার কাছে না। যখন যাকে মন চাইলো তাকে বিয়ে করলে। আবার যখন মন চাইবে তাকে ছেড়ে দিবে এটা হতে পারে না। রিহা তোমার বিয়ে করা বউ এটা তুমি মানো বা না মানো। সত্যি টা সত্যি ই থাকবে তোমার না মানাতে পাল্টে যাবে না।
তুমি রিহা কে ছেড়ে দিলেও আমি কখনও আমার স্বামী কে ছাড়বো না। উনি আমার স্বামী এটাই এখন আমার আসল পরিচয়।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here