স্বামী পর্ব -০২

###__স্বামী__###
পর্ব-২

-শাড়ির আঁচলটা ঠিক করো। এভাবে শরীর দেখিয়ে আর যার মন পাও না কেন আমার মন পাবে না।

কথাটা বলেই ঘরের দিকে পা বাড়ায় নির্ঝর।

সেই ভোর রাত থেকেই অনু বারান্দায় দাড়িয়ে আছে।ভোরের আকাশ অনেকদিন দেখা হয় না।
সকালের রক্তিম সূর্য আর কিচির মিচির পাখির গান।হালকা বাতাস।

অনেক দিন পর এভাবে খোলা আকাশ দেখতে বড্ড ভালো লাগছিলো অনুর।সারা রাতে হৃদয়ে যে ঝড় শুরু হয়েছিলো তার অনেকটাই শান্ত হয়ে গিয়েছে।

মৃদু বাতাসে শাড়ির আঁচলটা বুক থেকে একটু সরে গিয়ে পেটের কিছু অংশ দেখা যাচ্ছিলো ব্যাস তা দেখেই নির্ঝরের এমন মন্তব্য।

:::ভুল করেই তো সরে গেছে ইচ্ছে করে তো আর দেখিয়ে বেরাচ্ছি না আমি কি তেমন মেয়ে নাকি??স্বামীই তো পর পুরুষ তো আর নয় এমন করে বলার কি আছে…..
কি নোংরা মানুষ আর কি নোংরা চিন্তা ভাবনা তার ছি!!

কথাগুলো নিজে নিজেই বলছিলো অনু।

হটাৎই দরজার খটখট শব্দে অনু ছুট লাগায় ঘরের দিকে।এতো চিন্তার মাঝে অনু ভুলেই গিয়েছিলো বেশ বেলা হয়ে গেছে।

নির্ঝর ওয়াশরুমে।বোধয় আরেক দফা শাওয়ার নিচ্ছে।বার বার এতো শাওয়ার নেওয়ার কি আছে।
নিক না তাতে আমার কি!ও

অনু দরজা খুলতেই ধরফর করে নীরা ভেতরে ঢুকে পড়ে…….

নীরা হলো নির্ঝরের ছোট বোন…

-কি গো ভাবি এতো বেলা হলো এখনো ঘুম ভাঙ্গছে না বুঝি??
-ঘুমোলে তো ঘুম ভাঙ্গবে ঘুমালাম কখন!!(মনে মনে)
-কিছু বললে??
-কই না তো
-তোমার বর কই??
-শাওয়ারে!!
-ওওও আচ্ছা তো এবার তোমাদের ভালোবাসাবাসির সমাপ্তি ঘটলে নিচে নামো মা তখন থেকে তোমার জন্য অপেক্ষা করছে…..
-ভালোবাসা মাই ফুট(মনে মনে)
-কিছু বললে?
-না তো
-ওও তুমি খুব মিষ্টি তাই তো আমার ভাই সেই তুমি তুমি করে একেবারে……
-কি??
-ইয়ে মানে কিছু না।আসছি আমি তোমরা তারাতারি নিচে এসো!!!

অনু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে সেখানেই দাড়িয়ে আছে…..
কি বলে গেল??

অনু পেছন ফিরে তাকাতেই দেখে নির্ঝর দাড়িয়ে আছে।
চোখ দুটো লাল টুকটুকে হয়ে আছে।বোধয় এক্ষুনি টুপ করে রক্ত চলে আসবে।নাকের মাথাটাও লাল হয়ে আছে।নাকটা ফুলে আছে….

নির্ঝর এক দৃষ্টিতে অনুর দিকে তাকিয়ে আছে।অনুর দিকে নয় অনুর গলায় পড়ে থাকা চেইনটার দিকে।

অনুর কেমন ভয় ভয় করছে।।।
-কিছু বলবেন??
-(..)
-এভাবে কি দেখছেন??

অনু একটু পেছাতেই নির্ঝর অনুর হাত ধরে একটানে বুকের সাথে মিশিয়ে নেয়
তারপর অনুর ঠোটে ঠোট মিলিয়ে দেয়।অনু বার বার ছোটার চেষ্টা করছে।কিন্তু পারছে না কিছুক্ষন পর নির্ঝর নিজেই অনুকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দেয়। অনু হটাৎ ধাক্কায় টাল সমলাতে না পেড়ে দুম করে গিয়ে খাটের কোনে বারি খায়।কপালে একটু লাগলেও কাটে নি।
তবে ব্যাথ্যা করছে।

এতোক্ষনে নির্ঝর ঘর থেকে বেরিয়ে গেছে।অনু বরফের মতো সেখানেই জমে গেছে।
কি হচ্ছে তার সাথে এসব??

“আচ্ছা যদি সায়ন আমাকে এভাবে একা ফেলে চলে না যেতো যদি বিয়েটা সায়নের সাথে হতো তখনই কি এরকম কিছু ঘটতো”

“হয়তো না…..!!!
তবে সে তো চলে গেছে।চলে যাবে কেন পালিয়ে গেছে।
এসবের মাঝে আমাকে একা ফেলে পালিয়ে গেছে…না কি কেউ তাকে দূরে সড়িয়ে দিয়েছে”

কিছুক্ষন চুপচাপ কান্না করার পর নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে নিচে নামে।
এখন সব কিছুই মেনে নিতে হবে।স্বামী বলে কথা!!

নিচে অনুর শ্বাশুড়ি ননদ শ্বশুড় সবাই টেবিলে বসে আছে করছে…
বাড়ির সবাই খুব ভালো।তাদের কাছে অনু যেন এক মহামূল্যবান জিনিস।তাতে একটু আঁচরও যদি লাগে তাতে বোধয় মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে……
তবে অনু শ্বাশুড়ি একদম চুপ চাপ।কোনো কথা বলছে না।
অনুর দিকে একবার ফিরেও তাকাচ্ছে না।
নির্ঝরের সাথে গোটা বিয়েতে অনু তার শ্বাশুড়িকে একবার ও দেখে নি।বোধয় তিনি এই অনুষ্ঠানে নিজেকে জড়াতেই চান নি।

বিষয়টা অনুর চোখে বড্ড লাগছে কিন্তু মনে দাগ কাটছে না।
“নতুন বউ বলে কথা”
আর ভালোই তো লাগছে এতো আদর যত্ন মন্দ লাগার প্রশ্নয় ওঠে না”
তবে অনুর ধারণা মতে শ্বাশুড়িরা এমনই হয়।
তবে সায়নের মা ভদ্র মহিলা ছিলো একদম এরকম বড্ড রাগী।তবে অনুকে তার ভারী পচ্ছন্দ ছিলো।।।

আজ অনুর বউ ভাত।
অনুর মা বাবা ভাই ভাবি সবাই এসেছে….

অনু এতো লোকের মাঝে মাকে টেনে নিয়ে আড়ালে চলে যায়
এতোটা সময় বোধয় সে মায়েরই অপেক্ষায় ছিলো!!
মাকে জড়িয়ে ইচ্ছে মতো কেঁদে দেয়

-অনু
-মা আমাকে নিয়ে চলো আমি থাকবো না এখানে
-কেন রে বাবুই কি হয়েছে??
-আমি সায়নের কাছে যাবো।সায়ন কোথায়??
-অনু!! (ধমকিয়ে)
-বলো না মা আমার সান কোথায়??
-অনু…..
-মা প্লিজ এই লোকটার সাথে থাকা আমার পক্ষে অসম্ভব!!এই লোকটা খুব বাজে….

অনুকে কথার মাঝখানে থামিয়ে দিয়ে।

-অনু নির্ঝর খুব ভালো ছেলে একটু মানিয়ে নাও…ও তোমাকে সুখে রাখবে।

(অনুর মা কথাগুলো বলে মাথা নিচু করে ফেলে….)
-সায়নকে ছাড়া আমি সুখে থাকতে পারবো না মা।
মা প্লিজ বলো না সায়ন কোথায়।আমি সায়নের কাছে চলে যাবো……

মেয়ের ছলছল চোখের দিকে তাকিয়ে অনুর মা অনামিকা আড়া মুখ খোলে

-অনু আসলে সায়ান….

কোথা থেকে দুম করে নির্ঝর চলে আসে।অনুর মাকে ইশাড়ায় চুপ করিয়ে দেয়।

-অ্যান্টি বাহিরে খেতে দিয়েছে আপনি খাবেন না চলুন!!

-হুম্ম বাবা চলো।।

অনুর মা যাওয়ার আগে ছলছল চোখে একবার নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নেয়।

অনুর মা চলে যায়।অনু মায়ের পেছন পেছন যেতে লাগলে নির্ঝর অনুর হাত ধরে টেন মারে

অনুও হুমড়ি খেয়ে পড়ে নির্ঝরের বুকে।

-কি হলো হাত ধরেছেন কেন ছাড়ুন!!
-(…)
-কি অসভ্যতামি হচ্ছে শুনি।
-(…)
-ছাড়ুন অসভ্য লোক একটা….!!
-(…)

নির্ঝর অনুকে শক্ত করে বুকের সাথে চেপে ধরে আছে।
তারপর পকেট থেকে একটা রুমাল বের করে অনুর চোখের নিচে টেপ্টে যাওয়া কাজলটা মুছিয়ে দেয়।।।
কান্না করার ফলে চোখের নিচে কাজলটা টেপ্টে গিয়েছিলো!!

“তোমার চোখে দেখেছিলেম আমি আমার সর্বনাশ”

-কিহ্
-(…)
-কি বললেন??
-জানি না!!
-নিজে বলে এখন বলছেন জানি না।
-হুম্ম সত্যিই জানি না তোমাকে এখন ঠিক কি করা উচিত
-মানে??
-জানি না!!!

কথাটা বলেই নির্ঝর রুমালটা পকেটে রেখে দিয়ে হাটা ধরে।
অনুও নির্ঝরের পেছন পেছন হাটছে।হাটছে না রিতিমতো ছুটছে….
নির্ঝর ইয়া লম্বা মানুষ।তার উচ্চতার কাছে অনু নিছকই বাচ্চা।
“উফ একেবারে হাতি একটা”

অনুর কাছে তার স্বামীকে পৃথিবীর সবচেয়ে রহস্যময় চরিত্র বলে মনে হচ্ছে।
যার হৃদয়ের বেলাভূমিতে কখনো মেঘ তো কখনো বৃষ্টি।
আবার মাঝে মাঝে রোদ্দুরও উকি মারে……!!!
কি চায় এই রহস্যময় মানব!!
না রহস্যময় স্বামী নামক এক অজানা চরিত্র….!!

চলবে……

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here