###__স্বামী__###
পর্ব-৩
নির্ঝর ধীর পায়ে এগিয়ে আসছে অনুর দিকে।অনুর ভয়ে বুক কাঁপছে….যদি কাল রাতের মতো আবার!!!
“না না অসম্ভব…..”
বউ ভাতের অনুষ্ঠান শেষে সবাইকে বিদায় দিয়ে অনু ঘরে চলে আসে।পোশাক পাল্টে….
বেশ আয়েশ করে বিছানায় বসতেই নির্ঝরের আগমন ঘটে।
নির্ঝরকে দেখে বিছানার একপাশে গুটিসুটি মেরে বসে পড়ে অনু।
নির্ঝর ঘরে ঢুকে অনুর দিকে তাকাতেই অনুর কাল রাতের কথা মনে পড়ে যায়।
নির্ঝরকে এগিয়ে আসতে দেখে অনু দুম করে দাড়িয়ে যায়।
একটা ছোট্ট ঢোক গিলে বলতে শুরু করে…..
-দেখুন মি.চৌধুরী আপনার সাথে আমাকে জোড় করে বিয়ে দেওয়া হয়েছে।আমি অন্য কাউকে ভালোবাসতাম। আর এখনো বাসি।কথাগুলো আমি আপনাকে কালই বলতাম কিন্তু আপনি তো আপনার কাজে না না স্বামীগিরি ফলাতে ব্যস্ত ছিলেন তাই বলার সুযোগটাই হয়ে ওঠে নি…..কিন্তু শুনে রাখুন যে দিন সে ফিরে আসবে সেদিন আমি…
বাকি কথা বলার সুযোগ হয়নি অনুর নির্ঝর অনুর চুলে মুঠি ধরে নিজে দিকে টেনে নেয়।তারপর ঠোটে ঠোট মিলিয়ে দেয়।
অনু বার বার হাত পা ছুড়ছে কিন্তু কিছু করার উপায় নেই।দুচোখ
অনু নির্ঝরকে সর্ব শক্তি দিয়ে ধাক্কা দিতেই নির্ঝর পেছনে সরে যায়।
-আপনি কি চান বলুনতো এভাবে বার বার জোড় করছেন কেন।যদি এতোই শরীরের নেশা হয়ে থাকে তাহলে পতিতা পল্লী গেলেই পারতেন। কেন আমার আর সায়নের মাঝে এলেন???
নির্ঝর বাক রুদ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে অনুর দিকে।
“তুমি তার কাছে যেতে চাও যে তোমার সবটা চায় না কিন্তু তার কাছে যেতে চাও না যে তোমার ভালোমন্দ সবটা চায়”
কথাগুলো বলেই নির্ঝর বিছানা থেকে একটা বালিস ঢিল মেরে অনুর দিকে ছুড়ে দেয়।
অনু বালিসটা হাতে নিয়ে বাঁক রুদ্ধ হয়ে দাড়িয়ে আছে।
আর কোনো কথা হয়নি দুজনের মাঝে।
নির্ঝর খাটের উপর উবু হয়ে শুয়ে পড়ে আর অনু এখনো ওভাবেই দাড়িয়ে আছে।
-লাইটটা ওফ করে দাও (অনুর দিকে না তাকিয়ে)
অনু একটা ভেংচি কেটে সোফার দিকে পা বাড়াতেই
-না এই ঘর তোমার না এই ঘরের জিনিসগুলো তাই এই ঘরের কোনো জিনিস ব্যবহার কারার অনুমতি তোমার নেই!!
-তাহলে আমি কোথায় শোবো?
-মেঝেতে??
-কি?
-ইচ্ছে কারলে বারান্দা ফাকা আছে!!
অনু গোল গোল চোখে নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে আছে।
এই লোকটা উন্নত শ্রেনীর অসভ্য।
অসভ্যতার সকল স্তর পাড় করে এসেছে।
কথাগুলো নিজের মনে মনে বলে অনু মেঝেতেই গুটি শুটি মেরে সুয়ে পড়ে।।।একটু কষ্ট হলেও
বেশ ক্লান্ত থাকায় ঘুম চলে এসেছে খুব দ্রুত।
আর তো মাত্র একটা দিন কালকে বাড়ি গিয়েই সায়নের কাছে চলে যাবে অনু সারা জীবনের জন্য।
সায়নের কথা মনে পড়তেই অনুর কাছে কোনো কষ্ট যেন কষ্টই মনে হচ্ছে না।
“আচ্ছা সায়ন কি মেনে নিবে আমাকে”
“নিবে না কেন যা হয়েছে নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধে এটাতো একরকম ধর্ষনই বলা যায়।সায়নের ভালোবাসার কাছে এসবই তুচ্ছ”
উওর গুলো নিজেই নিজের মতো সাজিয়েছে অনু।।
ভোর রাতে একটু চোখ মেলতেই অনু দেখতে পায় নির্ঝর নিচের দিকে ঝুকে উবু হয়ে তাকিয়ে আছে অনুর দিকে।
অনু বেশ ভায় পেয়ে যায়
“আবার কি কাল রাতের মতো”
“আচ্ছা অনু কখনো কি শুনেছো কোনো ছেলে কোনো মেয়ের নাক ফুলের প্রেমে পড়ে??
কখনো কি শুনেছো একটা মেয়ের গলুমলু গালের প্রেমে পড়ে??
কখনো কি শুনেছো কোনো ছেলে কোনো মেয়ের গালের মাঝখানে পড়া ছোট্ট টোলের প্রেমে পড়ে??
আমি পড়েছি….একবার নয় বার বার পড়েছি।
সে পড়ে প্রেমের পুড়ে ছারখার হয়েছি তবুও বলতে পারিনি”
কথাগুলো অনুর মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।
-মি.চৌধুরী কি বলছেন কি এই সব??
-জানি না!!
কথাগুলো বলেই নির্ঝর ঘর থেকে বেড়িয়ে যায়।
সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে সদর দরজার কাছে যেতেই
রাহেলা বেগম নির্ঝরের মায়ে চোখে পড়েন।ভোর বেলায় কোরআন তেলওয়াত করার অভ্যেস ওনার।একটু পিপাসা পেয়েছিলো তাই পানি খেতে এসে কাউকে যেতে দেখেন।নিচু গলায় ডেকে ওঠেন
-কে ওখানে
-আমি মা
-নির্ঝর
-এতো ভোর ভোর কই যাও আব্বু
-একটু বাহিরে যাবো ভালো লাগছে না….
আর কথা বাড়ান নি ওনি।
নির্ঝরের যখন মন খারাপ থাকে তখন সে বাহিরে চলে যায় হাটতে
খোলা আকাশ মৃদু বাতাস এসব নাকি নির্ঝরের কাছে মন ভালো কারার মেডিসিন।।
এখন বেশ ভোর হয়ে গেছে।তেমন আলো না ছড়ালেও বেশ সব কিছু স্পস্ট দেখা যাচ্ছে……
নির্ঝরের বলা কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই বাহিরে আজানের ধ্বনি কানে যায়।
অনু ঝটপট নামাজ পড়ে নেয়।
নামাজের বিছানায় কেঁদে বুক ভসিয়ে দেয়
অনুর চাওয়া বলতে ঐ একজনই “সায়ন”
সকাল সকাল শ্বশুড় বাড়ির সবার আবদার তারা আজ নতুন বউয়ের হাতে বানানো নাস্তা খাবে।
অনুও রান্না ঘরে ঢুকে বেশ হেলেদুলে রান্না করছে।
আজই তার এ বাড়িতে শেষ দিন।
তাই না হয় একটু সবার আবদার রাখলাম তাতে দোষের কি!!
খাবার টেবিলে সবাইকে খাবার দেওয়া হয়ে গেছে যে যার মতো বসে পড়েছে।
তবে রাহেলা বেগম সোফায় বসে অনুর গতিবিধী লক্ষ করছে।
অনু সবার সাথে নিজের প্লেটটাও সাজিয়ে ফেলেছে।
এবার অনু শ্বাশুড়ি মায়ের দিকে চোখ পড়ে…
-অ্যান্টি আসুন না খেতে বসুন
এবার রাহেলা বেগম তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠে
-কোনো মেয়ের নিজের স্বামীর কথা ভুলে যেতে পারে হয়তো কিন্তু কোনো মা নিজের ছেলের কথা ভুলতে পারে না!!!
কথাগুলো বলে ওনি সিড়ি বেয়ে উপরে ওঠে যান।
“সত্যি তো ওনি সেই কখন বেরিয়েছে গেছে এখনো ফিরলো না তবে কি আর বাড়ি যাওয়া হবে না”
অনুর মনটা খারাপ হয়ে যায়…..
হটাৎই পেছন থেকে কেউ হুংকার দিয়ে ওঠে….
-অনু তারাতারি তৈরী হয়ে নাও।
অনু পেছন ফিরে তাকাতেই দেখে নির্ঝর দাড়িয়ে আছে।
অনুর আর খাওয়া হলো না খুশির ঠ্যালায় নাচতে নাচতে উপড়ে চলে যায়।
আজ অনু আর নির্ঝর জোড় বেধে অনুদের বাড়ি এসেছে।
বিয়ের পর প্রথম মেয়ে জামাই বাড়ি এসেছে অনুর বাবার আনন্দের অন্ত নেই।
সবাই নির্ঝরকে নিয়ে ব্যস্ত আর অনুর দুচোখ একজনকে খুজছে।
হটাৎই অনুর চোখ যায়…
দরজার আড়ালে….
দরজার কাছে যেতেই দেখে সোহা সেখানে ঠোট উল্টে কাঁদছে!!
অনুর দুচোখ সোহাকেই খুজছিলো।
অনু কোনো দিকে না তাকিয়ে সোহার কাছে ছোট লাগায়….
-সোহা তোর ভাই কোথায়??
-অনু আপু ভাইয়া ….
-আমাকে তোর সাথে যেতে বলেছে তো??
-(…)
-চল সবাই এখন মি.চৌধূরীকে নিয়ে ব্যস্ত এই সুযোগ তুই বাহিরে অপেক্ষা কর আমি আমার ব্যাগ নিয়ে আসছি….!!!
সোহা হলো সায়নের একমাত্র ছোট বোন
(বাকি পরিচয় পরে দিবো)
সোহা নিরবে বাহিরে বেরিয়ে যায়।
অনুও ঘরে গিয়ে গুটি গুটি পায়ে সদর দরজা পেরিয়ে বাহিরে চলে আসে।
সে চলে যাচ্ছে তার ভালোবাসার মানুষ সায়নের কাছে।
আর পেছনে ফেলে যাচ্ছে তার দুই দিনের স্বামীকে……
চলবে……..