স্বামী পর্ব ১০

#স্বামী
#লেখনীতেঃ_নুসরাত_জাহান
#পর্বঃ_১০

কিছুক্ষণ পরে রুমে এসে দেখি সোহান এখনো দাঁড়িয়ে আছে।
রুমে ঢুকে আড়চোখে সোহানের দিকে তাকিয়ে বললাম,
– কী ব্যাপার আপনি এখনো দাঁড়িয়ে আছেন..? ড্রেস চেইঞ্জ করে শাওয়ার নিচ্ছেন না কেন..? লাঞ্চ কী করা লাগবে না..?
কল্পনার রাজ্য থেকে বেরিয়ে এসে বলল,
– হ্যাঁ লাগবে তো।
– তাহলে যান না কেন..? আমার বাবা এসেছে সেটা তো নিশ্চয়ই জানেন!
– হুম জানি।
– তাহলে দেরী না করে তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে ডাইনিং রুমে আসেন কারণ বাবা তো আপনাকে ছাড়া খাবেন না।
– ঠিকাছে বিশ মিনিট অপেক্ষা কর আমি তার ভেতরেই আসছি।

সোহান আলমারি খুলে গেঞ্জি আর লুঙ্গি বের করে ওয়াশরুমে ঢুকল। শাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে এসে টাওয়ালটা বেলকুনিতে মেলে দিয়ে ডাইনিং রুমে গেল। সবাই তার জন্য অপেক্ষা করছে। সোহানকে দেখে জাহিদ সাহেব মুচকি হেসে বলল,
– ঐ তো জামাই বাবাজি এসে গেছে।
– আসসালামু আলাইকুম বাবা, কেমন আছেন..?
– ওয়ালাইকুম আসসালাম। আলহামদুলিল্লাহ।
– শুনে খুশি হলাম। তা বাবা তোমার চাকরীটা কেমন চলছে..?
– ভালোই। তবে আমার তো চাকরী করা লাগে না এটা তো নাম মাত্র করছি। কারণ চাকরীটা আজকাল ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে যার কারণে চাকরীটা নেওয়া।
– তবুও বাবা সরকারী চাকরী বলে কথা!
– চাকরীর পাশাপাশি আমি তো বাবার ব্যবসা দেখি। বাবার এত বড় বিজনেস সব কিছু আমাকেই সামলাতে হয়। ক্যাশিয়ারের তো প্রমোশন হয় না তাই চেষ্টা করছি অন্য ব্যাংকে জব করার।
– আলহামদুলিল্লাহ। তুমি অনেক বুদ্ধিমান ছেলে যার কারণে তোমাকে বেশি বলার প্রয়োজন হয় না অল্পতেই বুঝতে পার।
– বাবা আপনার চাকরীর আর কত বছর বাকী আছে..?
– আঠারো বছরের মতো। আমিও তোমার মতো চিন্তা করতেছি গ্রামে একটা ফার্মেসি দিব। বিকালে তো স্কুল থেকে বাসায় ফিরে আসি। সকালে কর্মচারী দিয়ে চালাব আর সন্ধ্যার পরে আমি নিজে বসব।
– এখনো বসে আছেন কেন..? কোন কাজ ভেবে বসে থাকবেন না সাথে সাথে ধৈর্য ধরে শুরু করে দিবেন। শুরুতেই যে সফল হবেন সেটা কিন্তু নয় তাই বলে হতাশ হবেন না। একবার না পারলেও বারবার চেষ্টা করবেন দেখবেন ইনশাআল্লাহ একদিন না একদিন সফল হবেন।
– জান্নাত দেখছিস তোর স্বামীর মাথায় কত বুদ্ধি! আজ আমি খুব গর্বিত এমন একটা ছেলের হাতে আমার একমাত্র মেয়েকে তুলে দিতে পেরে।

বাবার কথা শুনে মনে মনে বললাম ভালো না ছাই। সারাদিন তো শরীরের প্রতি মনোযোগ তার এখন তো ধোঁয়া তুলশি পাতা সেজেছে শ্বশুরকে দেখে।
দুপুরের খাওয়া-দাওয়া শেষ করে বাবার সাথে গেস্ট রুমে গেলাম।
অনেকদিন পরে বাবাকে দেখে খুব ভালো লাগছে। বাবার পাশে অনেকক্ষণ বসে থেকে কথা বলছিলাম তখনি সোহান এসে বলল,
– জান্নাত আমার হাত ঘড়িটা দেখছি না একটু খুঁজে দিয়ে যাও তো..?
– জান্নাত গিয়ে জামাইকে সাহায্য কর। সারদিন কত কষ্ট করে।

মেজাজ গরম করে বাবার রুম থেকে বেরিয়ে নিজের রুমে ঢুকে পিছনে তাকিয়ে দেখি সোহান আমার পিছনে দাঁড়িয়ে আছে।
ড্রয়ার খুলে হাত ঘড়িটা হাতে নিয়ে বললাম,
– এটা কী..? ঘড়িটা যেখানে রাখা ছিল সেখানেই আছে। না খুঁজে বানিয়ে কেন বললেন যে পাচ্ছেন না..?
সোহান দরজাটা বন্ধ করে দিতেই চমকে উঠলাম আমি।
– একি দরজা বন্ধ করলেন কেন..?

সোহান কথা না বলে আস্তে আস্তে আমার দিকে এগিয়ে এসে ঠোঁট জোড়া দখল করে নিল। কিছুক্ষণ পরে ঠোঁট ছেড়ে দিয়ে বিছানার উপরে এক লাফে উঠে বালিশে শুয়ে পড়ল।

সোহানের বিহেভ দেখে একদিকে ভালো লাগছে আরেকদিকে রাগও লাগছে। মনে মনে ভাবছি কিস করার জন্য রুমে নিয়ে আসছে যত্তসব ফালতু, লুচ্চা।
– আমাকে মনে মনে গালি দিচ্ছ না..? দাও বেশি করে দাও। তবুও আমি তোমাকে এভাবেই আদর করব। সুযোগ পেলেই করব…হা হা হা।

– আচ্ছা আপনাকে বলছি না কারও সামনে দিয়ে আমাকে ডাকবেন না। আপনার লজ্জা শরম না থাকতে পারে কিন্তু আমার আছে। বাবা মনে মনে কী ভাবছে আল্লাই জানে।

– আমার লজ্জা নেই। আমার বউকে আমি আদর করব এতে আবার লজ্জা কীসের..? এখানে আসো জড়িয়ে ধরে শুয়ে থাকি। তাছাড়া তোমার বাবা কী আমার বয়সী ছিল না..? তখন আমার চেয়ে আরও বেশি করছে বলে হা হা হা করে হাসল।

– এখন শুয়ে থাকাটা জরুরি না। আপনি শুয়ে থাকেন আমি বাবার কাছে যাচ্ছি।
– তোমার বাবা সারারাত লঞ্চে বসে ঘুমায়নি এখন একটু ঘুমাতে দাও না হলে শরীর খারাপ লাগবে।
এই সুযোগে তুমি আমাকে জড়িয়ে ধরে আদর কর।

– সোহানের কথায় শরীর জ্বলছে। কিছু বলতে গিয়েও নিজেকে সামলে নিয়ে বলতে পারলাম না। এখন যদি ঝামেলা করি তাহলে বাবা জানতে পারবে আর তিনি বুক ভরা কষ্ট নিয়ে বাসায় তো যাবে ঠিকি কিন্তু ঘুমাতে পারবে না। আজ যদি আমি নিজের পছন্দে বিয়ে করে অশান্তিতে থাকতাম তবে বাবার কষ্ট লাগত না। তখন বলত তুই নিজে যেনে শুনে চয়েজ করেছিস তাই যা হবে সেটাই তোকে মেনে নিতে হবে। কিন্তু আমার বিষয়টা সম্পূর্ণ ভিন্ন আমি তো বিয়ে করতে চাইনি তবুও বাবা ভালো ছেলে বলে জোর করে আমাকে বিয়ে দিল। তাই আমি শ্বাশুড়বাড়ি অশান্তিতে আছি এটা জানলে বাবার কষ্টটা হবে পাহাড় সমান। কথাগুলো মনে করতে করতে চোখের কোণে পানি চলে আসে সেই পানি সোহান দেখে ফেলার আগে হাত দিয়ে মুছে নিলাম। ধীরে ধীরে বিছানার কাছে গেলাম। আমি বালিশে মাথা রাখতেই সোহান আমার বুকের উপরে শুয়ে পড়ল।
আমি নিরুপায় হয়ে সোহানের মাথায় হাত বুলাতে লাগলাম।

রাত ১০ টা বাজলে জাহিদ সাহেব দরজার পাশ থেকে ডাক দিলেন, জান্নাত মা আছিস..?
– হ্যাঁ বাবা আসো।
– ঘুমিয়ে পড়েছিস মা..?
– নাহ্ বাবা, কিছু বলবা।
– তোর মায়ের সাথে কথা বলেছিলাম তোর সাথে কথা বলতে চেয়েছে।
– আচ্ছা বাবা আমি একটুপরে কথা বলব।
– আমি কল দিয়ে দিচ্ছি জান্নাত তুমি মায়ের সাথে কথা বল।
– ঠিকাছে।

সোহান কল করে জান্নাতকে ধরিয়ে দিয়ে বলল,
– নাও মায়ের সাথে কথা বল।

জান্নাত কথা বলতে বলতে রুম থেকে বের হয়ে গেল।
– বাবা আপনার কোন অসুবিধে হচ্ছে না তো.!
– না জামাই, আমার কোন অসুবিধে হচ্ছে না। তোমাকে একটা কথা বলব.?
– জি বলেন।
– আমার খুব ইচ্ছে ছিল জান্নাতকে পড়াশুনা করানোর। আর এত তাড়াতাড়ি বিয়ে দেওয়ার চিন্তা ছিল না। একান্নবর্তী পরিবারের আমরা থাকি তাই সবার মতামত নিয়ে আমাদের কাজ করতে হয়। তবে তোমার এবং তোমার পরিবার সম্পর্কে জানার পরে মেয়েটাকে বিয়ে দিতে সাহস পেয়েছি। তবে আমার মেয়েটা বড্ড চাপা স্বভাবের, কষ্ট হলেও নিজের মধ্যে রেখে দেয় কাউকে বুঝতে দেয় না। তুমি ওকে একটু দেখে রাখবে যাতে কখনও কোন কষ্ট না পায়।
– আচ্ছা বাবা।

আমি রুমে আসতেই বাবা আর সোহান চুপ হয়ে গেল।
– বাবা রাতে মা কল দিতে বলেছে।
– ওহ্ আচ্ছা। তোমরা রেস্ট কর কেমন আমি আসছি।

বাবা চলে গেলে সোহান আমার কোমড় জড়িয়ে ধরে গলায় চুমু দিয়ে বলল,
– আজকে দুপুরে তোমাকে অপ্সরীর মতো লাগছিল। আমি তো চোখের পলক ফিরাতেই পারছিলাম না। কিছুক্ষণের জন্য অন্য জগতে হারিয়ে গেছিলাম।
– রাত অনেক হয়েছে এখন ঘুমিয়ে যান।
– রাত হয়েছে তো কী হয়েছে আদর করে দাও..?
– আজকে কেন আরও কয়েকদিনেও সেটা সম্ভব না।

জান্নাতের কথায় সোহান বুঝতে পরল ওর পিরিয়ড হয়েছে। তাই চুপচাপ বিছানার উপরে গিয়ে ওপাশ করে শুয়ে পড়ল।
অনেকক্ষণ শুয়ে থাকার পরে সোহান
আমার গায়ে হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরল। জান্নাত এ মাসে এত তাড়াতাড়ি হল কেন..?
– কেন হল সেটা তো আমি জানি না..? আল্লাহর কাছে জিজ্ঞেস করতে হবে বলে…মুখ চেপে হাসলাম।
– হাসো হাসো বেশি করে। সুস্থ হও এর শোধ তুলব।
– এতদিন তো বিশ্রাম করি পরেরটা পরে দেখা যাবে।

মধ্যরাতে হঠাৎ সোহানের মোবাইলে কয়েকটা ম্যাসেজ আসল। আধো চোখে মোবাইলটা হাতে নিয়ে ইনবক্স চেক করে চমকে উঠল। শোয়া ছেড়ে উঠে বসে চোখদুটো হাত দিয়ে মুছতে লাগল। ম্যাসেজগুলো পড়ার পরে কপাল বেয়ে তরতর করে ঘাম পড়ছে সোহানের। এটা কী করে সম্ভব..?
তার মানে নিলয় আমার সাথে এত বড়…. প্রতারণা করল। ভাবতেও পারছি না। না না নিলয়কে বুঝাতে হবে
এটা কারও সামনে আসতে দেওয়া যাবে না। তাহলে আত্মহত্যা ছাড়া আর কোন রাস্তা থাকবে না।

চলবে……….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here