#স্বামী
#লেখনীতেঃ_নুসরাত_জাহান
#পর্বঃ_১১
সোহানের কপাল বেয়ে ঘাম পরছে। শরীরটা থরথর করে কাঁপছে। কিছুক্ষণের জন্য মনে হচ্ছে সে আর বেঁচে নেই। মানুষ যখন ডিপ্রেশনে ভুগতে থাকে তখন হাজারও চিন্তা মাথার ভেতরে ঘুরপাক খায়। মোবাইলটা রেখে ল্যাপটপটা অন করল। প্রতিটা ফাইল তন্ন তন্ন করে খুঁজতে লাগল কীভাবে নিলয়কে আটকানো যায়..? কিন্তু কোন কিছু না পেয়ে ল্যাপটপটা বন্ধ করে মোবাইলটা হাতে নিল। মোবাইল হাতে ধরে আছে ঠিকি তবুও তার হাতসহ মোবাইল কাঁপছে। দীর্ঘশ্বাস টেনে পাসওয়ার্ড দিয়ে মোবাইলের লক খুলে নিলয়ের নাম্বারে কল দিল। নিলয়ের মোবাইলে সংযোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। আবারও ট্রাই করলে একইভাবে মোবাইল কোম্পানি বলেই যাচ্ছে। মাথায় হাত দিয়ে ঝিম মেরে বসে আছে সোহান। কী করবে কিছু বুঝতে পারছে না। নিলয়কে এত ভালো জানত কিন্তু শেষমেষ কী বের হল..? এতদিন দুধ কলা দিয়ে কালসাপ পুশেছে বলে নিজের চুল নিজেই টানছে। ইচ্ছে করছে চিৎকার করে কাঁদতে। ভাবনার রাজ্য থেকে বেরিয়ে এসে পাশে তাকিয়ে দেখে জান্নাত ঘুমাচ্ছে। ডিম লাইটের হালকা আলোয় ওর মুখ বেশ উজ্জল লাগছে। অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে জান্নাতের দিকে।
আজ কেন জানি খুব মায়া লাগছে ওর দিকে তাকাতে। মোবাইলটা গুতাচ্ছে সোহান।
হঠাৎ জান্নাতের কণ্ঠ ভেসে আসলে চমকে যায় সোহান। জান্নাতের দিকে আবারও তাকিয়ে দেখে ও চোখ বন্ধ করে কথা বলছে। জান্নাতের কাছে মুখ নিতে শুনতে পেলে ও ঘুমের মধ্যে কথা বলছে। কথা বলার ফাঁকে ফাঁকে কেঁদে উঠছে। সোহান কিছুটা ভয় পেয়ে যায়। বিছানা দিয়ে নেমে রুমের লাইট জ্বালিয়ে জান্নাতকে ডাকল। সোহানের ডাক শুনে লাফিয়ে উঠে আধো চোখে কী কী করতে লাগলাম। ঘুমের কারণে চোখ মেলে তাকাতে পারছি না তবুও চোখদুটো টেনে খুললাম। হাত দিয়ে চোখ ডলে বললাম,
– কী হয়েছে এত রাতে মোতাচ্ছেন কেন..? আপনি কী মানুষ না অন্য কিছু..? ঘড়ির দিকে একপলক তাকিয়ে মেজাজটা পুরো গরম হয়ে গেল। সত্যি আপনি একটা সাইকো বুঝলেন..? রাত এখন তিনটে বাজে আর আপনি না ঘুমিয়ে জেগে আছেন..? মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছেন কেন..? শুয়ে পড়েন কালকে আবার অফিস আছে না আপনার..? তাছাড়া আমার মাথাটা খুব ব্যথা করছে আমি ঘুমাব। সকালে আবার নাস্তা বানিয়ে বাবাকে খেতে দিতে হবে।
সোহান কোন উত্তর দিল না কপাল বেয়ে তরতর করে ঘাম পড়ছে। অথচ রুমের এসি অন করা। বুঝতে পারছিলাম না তার কী হয়েছে..? তবে আন্দাজ করতে পারছি বড় ধরণের কিছু একটা হয়েছে।
আচ্ছা বলুন তো আপনার কী হয়েছে..? এভাবে চুপচাপ করে তাকিয়ে আছেন কেন..? শুয়ে পড়ুন।
সোহান সমস্ত রুমে একবার করে চোখ বু্লিয়ে লাইট অফ করে বিছানার এক পাশে গিয়ে শুয়ে পরল।
পরেরদিন সকালে,,
সকাল ৭ টার সময় দরজা ধাক্কার আওয়াজ শুনে বিছানা দিয়ে ধড়মড় করে গায়ে কোন রকমে ওড়নাটা পেঁচিয়ে নিচে নামলাম। দরজাটা খুলে দিয়ে দেখি ট্রে হাতে সাথী দাঁড়িয়ে আছে। ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি এনে বলল,
– শুভ সকাল ভাবী। কেমন আছ..?
– শুভ সকাল ননদিনী। আলহামদুলিল্লাহ। তুমি কেমন আছ..?
– আলহামদুলিল্লাহ। জানো ভাবী আপু আগামী মাসে আসতেছে। আজকে রাতে তোমার সাথে ভিডিও কলে কথা বলতে বলেছে। গতকালকেই বলতে চেয়েছিল কিন্তু আমি স্টাডি নিয়ে ব্যস্ত থাকার কারণে কথা বলাতে পারিনি। যাই হোক কাল পারিনি তো কী হয়েছে আজকে বলিয়ে দিব।
– সাথী এত তাড়াহুড়া করার কোন প্রয়োজন নেই। আমি তো ঘরের মানুষ তাই আমাকে নিয়ে এত চিন্তা করতে হবে না। সাথী বাবা কী উঠেছেন বলতে পার..?
– হ্যাঁ উঠেছ। আমি তাকে চা আর মুড়ি দিয়ে এসেছি।
– মুড়ি..!
– হ্যাঁ মুড়ি। আমি জানি গ্রামের মানুষদের মুড়ি খুব পছন্দ। দুধ চায়ের সাথে তারা মুড়ি খায় প্রতিদিন সকালে।
– বাহ্ তোমার তো ভালোই ধারণা আছে। মাকে বলব তোমাকে যেন গ্রামে বিয়ে দিতে।
– ভালোই হবে। গ্রামই ভালো।
– সত্যি!
– হ্যাঁ সত্যি। গ্রামের মানুষরা মানুষকে সম্মান দিতে জানে আর শহরের মানুষরা সম্মান তো দূরের কথা দোতালায় কেউ মারা গেলে তিন তলায় গান-বাজনা বাজিয়ে জন্মদিনের পার্টি করে। এদের ভেতরে বিবেক কম।
দেখ না কুরবানির গোশত ফ্রিজে ভরে রাখে। তারপর একবছরের গোশত আরেক বছর কুরবানি আসার আগে শেষ করে নতুন গোশত ভরার জন্য। গরিবদের তো দেয় না বললেই চলে সমস্ত গোশত নিজেরাই খায়। এতে কী কুরবানী হয়..? এটা শুধুমাত্র ফ্যাশন। কে কত টাকা দামের গরু কুরবানি দিবে এটা নিয়ে পরে থাকে। তারচেয়ে গ্রামের মানুষেরা অনেক ভালো।
– হা হা হা কী বলছ এসব..?
– ঠিকি বলছি ভাবী। সত্যি কথায় আমি আমার বাপকেও ছাড় দেই না। এখন চলো মা তোমাকে ডেকেছে।
– হুম চলো।
দরজার সামনে দাঁড়িয়ে পিছনে মুখটা ঘুরিয়ে সোহানের দিকে এক নজর দেখে সাথীর সাথে গেলাম মায়ের রুমে।
– মা আসব..?
– হ্যাঁ আয়।
– আমাকে ডেকেছেন নাকি.?
– হুম। তোর বাবার তো একটুপরে চলে যাবে তাই যাওয়ার সময়ে ব্যাগটা দিয়ে দিস।
– ব্যাগে কী মা..?
– তোর মায়ের জন্য শাড়ি আর তোর বাবার জন্য পাঞ্জাবী আর লুঙ্গি।
– এসবের কী দরকার ছিল মা..?
– তোর বাবা আমাদের বাসায় প্রথম এসেছে। তাকে সাথে করে নিয়ে তারপর কেনা উচিত ছিল কিন্তু সে সময় তো আর পাইনি তাই সাথী আর আমি গিয়ে কালকে কিনে এনেছি।
– হুম।
– আচ্ছা যা ব্যাগটা নিয়ে তোর বাবার কাছে রাখ না হলে ভুলে থেকে যাবে।
– বাবার মাপ পেলেন কোথায়.?
– কালকে তার পাঞ্জবীটা খুলে বেলকুনিতে রেখেছিল না সেটাই নিয়ে গেছিলাম।
আমি তো পুরোই অবাক হয়ে যাই মায়ের কথা শুনে। চুপচাপ ব্যাগটা হাতে করে বাবার রুমে রাখলাম।
ব্যাগটা রাখতেই বাবা জিজ্ঞেস করল মা এতে কী আছে..?
– গিফট আছে বাসায় গিয়ে দেখবে।
– কিসের গিফট.?
– এত প্রশ্ন করো না যা বলছি তাই কর। এখন চলো নাস্তা করবে।
বাবাকে নাস্তা করানো শেষ হলে রাহিমা সোহানকে বলল,
– তুই গিয়ে জান্নাতের বাবাকে বাসে তুলে দিয়ে আয়।
– আমি!
– হ্যাঁ, কেন সমস্যা আছে..?
– ড্রাইভারকে দিয়ে পাঠালেই তো হয় মা, আমার যেতে ইচ্ছে করছে না।
– সোহান এসব তুই কী বলছিস..? তুই না গেলে জান্নাতের বাবা কী মনে করবে..?
– কী মনে করবে মা..? এটা কোন কথা হলো নাকি..? আমারই যে যাওয়া লাগবে এমন তো কোন কথা নেই তাই না!
– দেখ সোহান আমার মেজাজ গরম করবি না জলদি রেডী হয়ে বেরিয়ে যা।
ইচ্ছা না থাকা শর্তেও সোহান রেডী হয়ে জান্নাতের বাবাকে নিয়ে রওনা দিল। যাওয়ার সময় সোহানের হাত ধরে বিনয়ের সুরে অনুরোধ করল তার মেয়ে যেন কখনও কষ্ট না পায় সেদিকটায় খেয়াল রাখতে। বাবার কথা শুনে চোখের কোণে পানি জমে আসল আমার।
শ্বশুরকে বাসে তুলে দিয়ে বাসায় আসার সময় পথে নিলয়ের সাথে দেখা হয়। সোহানকে দেখে মোবাইলটা দেখে আবার পকেটে রাখল। সোহান নিলয়কে বলল,
– কাজটা কিন্তু ঠিক করছিস না.?
– শোন কী করব সেটা আমার ব্যাপার তবে আমার মাথা খারাপ করবি না।
– নিলয় কালকে যেটা দেখালি সেটা ডিলিট করে দে। তুই না আমার বন্ধু!
– হা হা হা বিপদে পড়লে বন্ধু না আর বিপদ শেষ হলে শত্রু।
– প্লিজ নিলয় আমার কথাটা রাখ।
– এত করে যখন বলছিস তাহলে রাখতে পারি তবে একটা শর্তে..?
– কী শর্ত..?
– এখন না রাতে ক্লাবে আসিস সেখানে বলব।
– কয়টায়..?
– রাত ১০ টায়।
– ঠিকাছে।
– আসবি কিন্তু তোর অপেক্ষায় থাকব।
নিলয়ের কথা শুনে সোহান আবারও চিন্তায় পরে গেল।
#স্বামী
#লেখনীতেঃ_নুসরাত_জাহান
#পর্বঃ_১২
নিলয়ের কাছ থেকে বেরিয়ে সোজা অফিসে ঢুকল সোহান। মাথার ভেতরে নিলয়ের কথাগুলো ঘুরপাক খাচ্ছে। অফিসে ঢুকে কারও সাথে তেমন কথা না বলে সোজা গিয়ে কাউন্টারে বসল। যাওয়ার মিনিট দশেকের ভেতরে বুয়া এসে জিজ্ঞেস করল,
– স্যার এখন চা দিব নাকি পরে..?
সোহান কোন উত্তর দিচ্ছে না। মাথাটা নিচু করে ঝিম দিয়ে বসে আছে। বুয়া আবারও জিজ্ঞেস করলে সোহানের কোন উত্তর না দিলে পাশের চেয়ারের বসা রহমান গায়ে হাত দিয়ে বলল,
– কী রে সোহান তোর মন কোথায়..?
এতটুকু সময়ের ভেতরে বুয়ার দুইবার জিজ্ঞেস করা হয়ে গেছে চা খাবি কিনা! কিন্তু তোর তো কোন মনই নেই। বউয়ের সাথে ঝগড়া করে এসেছিস নাকি.?
এতক্ষণ পরে সোহান ভাবনার জগত থেকে বেরিয়ে এসে আমতা আমতা করে বলল,
– কী যে বলিস না..? বউয়ের সাথে ঝগড়া করব কেন..? বউ তো ঘরের লক্ষ্মী। তাছাড়া ঝগড়া বাঁধানোর কোন কারণ নেই।
– বাহ্ ভুতের মুখে রাম রাম কথাটা শুনে বেশ হাসি পাচ্ছে আমার। যে মেয়েদেরকে সহ্য করতে পারে না সে কিনা এসব বলে..? বিয়ের আগে তো বলত বিয়ে করে পাগলে তবে এখন এত ভালো কথা আসে কোথা থেকে ভাবছি। মেয়েরা তো ওর পায়ের জুতা হবারও যোগ্য না। বিয়ে ঠিক হওয়ার দুইদিন আগেও বলেছে এক নারীতে নাকি মন ভরে না তাই নতুন নতুন মেয়েদের ট্রাই করতে হয়।
সোহান কোন উত্তর না দিয়ে বুয়াকে বলল,
– সব মসলা দিয়ে অল্প করে লিকার দিবেন যাতে ঘ্রাণ আসে। আজ ব্যাংকে কালেকশন নেই তাই ঝিম দিয়ে বসে আছে আর মাথা দিয়ে ঘাম পড়ছে। রহমান টিস্যুর বক্সটা এগিয়ে দিল। ঘামগুলো মুছে নে।
টিস্যু হাতে নিয়ে ঘাম মুছতে লাগল। একটু পর বুয়া এসে চায়ের মগটা ডেস্কের উপরে রাখল।
– বুয়া চায়ের সাথে বিস্কুট দিলেন না যে..?
– বুয়া তো পুরোই অবাক! আপনি তো কখনও বিস্কুট খান না। তাহলে আজকে হঠাৎ করে খেতে চাইলেন.?
সোহান কথার প্রসঙ্গ পাল্টে বলল,
– আপনার ঘরের জন কী এখন সুস্থ হয়েছে..? বাচ্চাদের পড়াশুনা কেমন চলে..?
– আলহামদুলিল্লাহ, আগের চেয়ে সুস্থ। বাচ্চাদের পড়াশুনা ভালোই চলছে।
চা খাওয়া শেষ করে ওয়াশরুমে ঢুকে চোখে মুখে বেশি করে পানি ছিটিয়ে দিল। চোখদুটো লাল হয়ে গেছে। রাতে না ঘুমানোর কারণে শরীরটা খুব খারাপ লাগছে। মনে হচ্ছে এখনি শরীরটা বিছানায় এলিয়ে দিয়ে শুয়ে পড়তে। বেশ অনেকক্ষণ ওয়াশরুমে থাকার পরে বেরিয়ে এসে চেয়ার টেনে বসল। লাঞ্চ টাইমে খাওয়া শেষ করে সাথীকে কল দিল।
– সাথী জান্নাত কোথায়..?
– ভাবী গোসল করে।
– কখন গেছে.?
– এইমাত্রই ঢুকল।
– ওহ্।
– কিছু বলা লাগবে..?
– নাহ্। কথা বলতে ইচ্ছা করছিল তাই কল দিলাম। আচ্ছা রাখছি তাহলে বাসায় এসে কথা হবে।
কলটা রেখে মাথা চুলকাচ্ছে এত রাতে কী বলে বাসা থেকে বের হবে..? জান্নাত তো রাতে বের হওয়াটা পছন্দ করে না। জান্নাত পছন্দ করে না তো কী হয়েছে..? আমার প্রয়োজন থাকলে কী বের হব না? এটা কোন কথা হলো.? তাছাড়া আমার কাজে আমি কারও কমেন্ট শুনি না।
আজকে কোনভাবে কাজে মন বসছে না সোহানের। মোবাইলের দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে।
অফিস শেষ করে বাসায় আসল সোহান।
দরজায় কলিংবেল বাজালে সাথী এসে দরজাটা খুলে দিল।
– সাথী মা কী করে..?
সাথী তো পুরো অবাক! জীবনে এই প্রথম বাসায় এসে মা কী করে কথাটা জিজ্ঞেস করল। কিছুটা তোতলাতে তোতলাতে বলল,
– ভাবীর সাথে কথা বলে।
– আচ্ছা। আমি রুমে গিয়ে ফ্রেশ হচ্ছি ততক্ষণে তুই আমার জন্য এক কাপ কফি বানিয়ে নিয়ে আয়।
– তুমি রুমে যাও আমি আসছি।
সোহান রুমে ঢুকে মোবাইলটা ওয়্যারড্রবের উপর রেখে শার্টটা খুলে হ্যাঙারে ঝুলিয়ে রেখে ওয়াশরুমে ঢুকল। হাত মুখ ধুয়ে মুখ মুছতে মুছতে বেরিয়ে এসে দেখে জান্নাত দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
– জান্নাত কথা বলা শেষ.?
– হুম।
– মায়ের মন তে পুরোই জয় করে নিয়েছ দেখছি। নিজের ছেলের চেয়ে পরের মেয়েকে বেশি ভালোবাসে।
সোহান খালি গায়ে বিছানার উপরে বসল। আমি আড়চোখে সোহানকে দেখছি। বুকের উপরে বড়বড় পশম যেটা খুব করে আমাকে টানছে।
নিজেকে সামলে নিয়ে বিছানার উপরে বাসলাম।
সোহান এদিকে তাকিয়ে মোবাইলটা হাতে নিয়ে বিছানার উপরে বসল। কিছুক্ষণ মোবাইলটা নাড়াচাড়া করে বলল,
– রাতে আমার একটা বন্ধুর বোনকে দেখতে আসবে তাই ফিরতে রাত হবে। তুমি ডিনার করে ঘুমিয়ে যেও কেমন!
– হঠাৎ করে বন্ধুর বোনকে দেখতে আসবে..? আগে তো কিছু বলেননি।
– আগে তো সিউর ছিল না দুপুরে কল করে বলল আরকি!
– ঠিকাছে।
সোহান ল্যাপটপটা নিয়ে বসে পড়েছে। আবারও পুরো ফাইলের ডকুমেন্ট চেক করছে কিন্তু কোন কিছুই না পেয়ে হতাশ হয়ে যায়। নিজের ভুলের জন্য আজকে তার এই পরিণতি হয়েছে। উফফ! সেদিন যদি সব চেক করে নিতাম তাহলে আর এমন বিপদে পড়া লাগত না। কিন্তু কী করে বুঝব ওই ঘরে ক্যামেরা রাখা আছে। ল্যাপটপে লিজার সাথে কয়েকটা পিক দেখে ভয়ে চমকে উঠল। রুমের চারদিকে চোখ বুলিয়ে দীর্ঘশ্বাস নিয়ে পিকগুলো ফাইলসহ ডিলিট করে শান্তির নিঃশ্বাস নিল সোহান। মনে মনে নিজেকে এই বলে সান্ত্বনা দিল যাক বাঁচলাম যদি পিকগুলো জান্নাতের সামনে পড়ত তাহলে আজকে খবর হয়ে যেত। অল্পের জন্য বাঁচলাম। হঠাৎ মাথায় আসল মেমোরিতে কিছু পিক থাকতে পারে।
মোবাইলের ফাইলে খুঁজতেছে তন্ন তন্ন করে কিন্তু এত পিকচার যার কারণে এত তাড়াতাড়ি খুঁজে পাওয়া চারটেখানি ব্যাপার না। এমন সময় রুমের ভেতরে সাথী আসল।
– ভাইয়া মা তোমাকে ডাকছে।
ভয়ে চমকে উঠে বলল,
– আচ্ছা তুই যা আমি আসছি।
বিছানা দিয়ে নেমে ল্যাপটপ আর মোবাইলটা ড্রয়ারের ভিতরে রেখে লক করে রুম থেকে বেরিয়ে গেল সোহান।
আমি তো বিষয়টা উপলদ্ধি করে অবাক হয়ে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকলাম। ভাবলাম সোহান তো কখনও মোবাইল আটকে যায় না তাহলে আজকে হঠাৎ করে এমনটা কেন করল..?
মায়ের রুমের সামনে দাঁড়িয়ে আছে ঠিকি তবে পা থরথর করে কাঁপছে সোহানের।
দরজা ধাক্কা দিয়ে ভিতরে ঢুকে বলল,
– মা আমাকে ডেকেছ..?
– হ্যাঁ। এদিকে আয় তোর সাথে জরুরি কথা ছিল।
– জি মা বলেন।
– জান্নাতের সার্টিফিকেট এখানে টান্সফার করিয়ে এনেছি তাই জান্নাত আবার পড়াশুনা চালু করবে। আমি শুধু তোকে জানালাম তোর মতামত জানতে চাইনি।
– তাহলে আমাকে বলার দরকার কী ছিল তুমি তো সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছ।
– হ্যাঁ নিয়েছি তবুও তোকে জানিয়ে রাখা আমার দ্বায়িত্ব।
– মা তুমি জান্নাতকে কলেজে ভর্তি করবে ভালো কথা কিন্তু যদি কোন সমস্যা হয় তাহলে সে দ্বায়িত্ব কে নিবে..?
– কিসের সমস্যা..?
– আজকাল তো জানো টিভিতে নিউজ দেখলেই শুনতে পাওয়া যায় অমুক ঘরের বউ পরকিয়া করে অবশেষে আরেক ছেলের বাপের সাথে পালিয়ে গেছে। যার কারণে মেয়েদেরকে বেশি দূর পড়ানোকে সার্পোট করি না তবুও যদি তুমি জান্নাতকে পড়াতে চাও তাহলে তোমাকে দ্বায়িত্ব নিতে হবে।
– হুম বুঝলাম। তোর কথা ঠিকাছে তবে সব বউয়েরা যে পালিয়ে যাবে এটা বলা যাবে না। হাতে গোনা দু’একজন খারাপ বলে সবাইকে এক পালায় মাপা যাবে না। তোর যখন সন্দেহ বেশি তাহলে জান্নাতের দ্বায়িত্ব আমি নিলাম। আসা করি জান্নাত আমার মান-সম্মান নষ্ট করবে না।
সোহান কথাগুলো শুনে মাথা নাড়িয়ে বলল,
– আচ্ছা।
মায়ের রুম থেকে বেরিয়ে ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে রাত ৮ টা বাজলেই বাসা থেকে বের হবে মনে মনে পরিকল্পনা করল সোহান। আজকে যেভাবেই হোক ভিডিওটা ডিলিট করবেই।
চলবে………
চলবে………