স্বামী পর্ব -২১

###__স্বামী__###
পর্ব-২১
Nirzana(Tanima_Anam)

-জানেন তো বেশি রাগ করলে পেট খারাপ হয়!!
-(…)
-ধূর আপনি না কেমন জানি যখন তখন হাত পা ধরে টানা টানি শুরু করে দেন!!
-(…)
-এই যে মি.গোমরা মুখো নির্ঝর চৌধুরী আমাকে তখন ওভাবে টানতে টানতে বাড়ি নিয়ে এলেন কেন?সবাই তো আজকে আনিকা আপুর বাসায় থাকবে আর আপনি শুধু শুধুই আমাকে ওভাবে ধরে বেঁধে নিয়ে চলে এলেন!!

অনু সোফায় পা গুটিয়ে বসে বসে তেতুল খাচ্ছে আর একাই বক বক করেই যাচ্ছে আর নির্ঝর নাক মুখ লাল করে চুপ চাপ বসে আছে।ভীষন রাগ হচ্ছে।
তখন নির্ঝরের মা কথাগুলো বলার পর পাশ ফিরে তাকাতেই দেখে ছেলে ঠিক ওনার পেছনে চোখ মুখ শক্ত করে দাড়িয়ে আছে।হটাৎ ছেলেকে এভাবে দেখে ওনি চমকে যান
-ইয়ে বাবু আমি ওভাবে বলতে চাি নি
-আসছি

কথাটা বলই নির্ঝর অনুর হাতটা ধরে উল্টো পথে হাটা ধরে।
-কোথায় যাচ্ছো??
-বউটা যেহেতু আমার তার সাথে জরিত সব কিছুই আমার।তার দ্বারা কোনো অমঙ্গল হলে সেটা আমার দ্বারাও হবে কারণ সে তো আমার অর্ধাঙ্গিনী….

মাকে কথাগুলো বলেই অনুর হাত ধরে টানতে টানতে বেরিয়ে আসে নির্ঝর।নির্ঝর মাও আর কিছু বলে নি।কি বলবে সে তো জানেই
” এই মেয়েটা একেবারে প্রথম থেকেই ছেলেটার গোটা মাথা খেয়ে বসে আছে।না হলে কোনো ছেলে জেনে বুঝে এমন বাজা মেয়েকে বিয়ে করে নাকি”

নির্ঝরের মা কিছু না বললেও
অনু বলেছে।সেই থেকে বলেই যাচ্ছে…
-আমরা কোথায় যাচ্ছি?কেন যাচ্ছি?আমি যাবো না
আরো কতো রকমের কথা।
আর বার বার তো নির্ঝরের কাছে শ্বাশুড়ির বলা কথাগুলোর অর্থ জানতে চাচ্ছিলো অনু।তবে প্রত্যেকবারই নির্ঝর অনুকে ধমকিয়ে চুপ করিয়ে দিয়েছে।

নির্ঝরের ধমকানিতে একটু থেমে গেলেও বাড়ি ফিরে আবার শুরু করে।
নির্ঝর অনুর কোনো কথারই উওর দেয় নি।

তবে অনুর মুখ কিন্তু থেমে নেই।বক বক করেই চলেছে।
অনু সোফা থেকে উঠে গিয়ে খাটের কিণারায় নির্ঝরের গা ঘেষে বসে পরে…নির্ঝর খাটে এক পাশে আধসোয়া হয়ে বসে ছিলো।।নির্ঝরের এই পাশে সামন্য জায়গা ছিলো অনুর তাতেই চলবে

-কি করছো কি পরে যাবে তো!!
-আপনি আমায় ধরে বসুন তাহলেই তো পরবো না।

নির্ঝর মুচকি হেসে অনুর কোমড় জড়িয়ে ধরে।
-আচ্ছা আপনি আমায় নিয়ে চলে এলেন কেন?
-বার বার এক কথা বলো না তো।ভালো লাগেছে না
-আমার ও ভালো লাগছে না…আরেকটু দেখতাম সব কিছু।আমার অবশ্য খুব ভালো লাগছিলো অদ্ভুদ কিছু নিয়ম এগুলো!!
-হুম্ম এই নিয়মগুলো দাদী খুব মানতো..আমাদের পরিবারের সবাই মানে
-ইসস্ আরেকটু থাকলেই সবাটা দেখতে পারতাম অবশ্য আমার যখন বেবী হবে তখন তো এমনিতেই দেখতে পারবো!!

কথাটা বলেই অনু জ্বিবে কামড় দেয়।মাথাটা নিচু করে নেয়।মেয়ে বেশ লজ্জা পেয়েছে।

কিন্তু এদিকে অনুর কথা শুনে নির্ঝরের বুকটা ধক করে উঠে…
“প্রত্যেক মেয়ের মধ্যেই তো একেকটা মা লুকিয়ে থাকে।বিয়ের পর সে পরিপূর্ণ মা হতে চাইবে এটাই স্বাভাবিক কিন্তু অনু তো”

নির্ঝর অনেক বার চেষ্টা করছে অনুকে সত্যিটা বলার কিন্তু পারছে না।কথাটা গলা অবদি এসে আটকে যাচ্ছে।

নির্ঝর অনুর থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে সিগারেট হাতে বারান্দায় চলে যায়।আপাতোতো মাথা শূন্য হয়ে যাচ্ছে।সেই শূন্যের মধ্যে শুধু একটা চিন্তায় ঘুর পাক খাচ্ছে
“আচ্ছা অনু যখন জানতে পারবে সে কখনো মা হতে পারবে না তখন কেমন রিয়াক্ট করবে??ও কি খুব কষ্ট পাবে??
খুব কি কান্না কাটি করবে?আচ্ছা আমি ওকে সামলাতে পারবো তো??”
যেই অনু জানতে পারবে সে কখনো মাতৃত্বের সাধ পাবে না সেই মূহুর্তটা কেমন হবে এসব ভেবেই
নির্ঝর সিগারেটে কয়েক টান দেয়।

হটাৎই অনু পেছন থেকে এসে নির্ঝরকে পেছন থেকে ঘুরিয়ে ঠোটে ঠোট মিলিয়ে দেয়।হুট
সিগারেটের ধোয়া অনুর গলায় চলে যায়…
-উহু উহু…ইস্স মি.চৌধুরী আপনি এসব ছাই পাশ গিলছিলেন কেন??
-অনুকে ধরে এরকম কেউ করে??
-আপনি উল্টো দিকে ঘুরে এসব খাচ্ছেন সেটা কি আমি জানতাম??
-সরি
-জানেন তো আমার ধৌয়াই খুব এলার্জি!!
-আমি সরি আসলে
-এতো আসল নকল আমি বুঝি না হু…(অনু মুখ বাকি চলে যেতে নিলে নির্ঝর অনুর হাত ধরে টান দেয় তারপর মুখটা অনুর দিকে বাড়িয়ে দেয়)
-দেখুন আমি আপনার ওমন পোড়া ঠোটে চুমু খেতে পারবো না।
আগে জানতাম না তাই এখন যখন জেনে গেছি তখন….
-তখন কি?
-ভুল করেও আর….নয়(ঠোটের দিকে ইশারা করে)

অনু নিজেকে ছাড়িয়ে ঘরে চলে আসে আর নির্ঝর মুচকি হেসে দাড়িয়ে আছে।
ভালোবাসার শুরুটা তো এমনই হয়!!কিছু টক ঝাল আর কিছু মিষ্টি মুহূর্ত!!

আজ সারাদিন আকাশটা মেঘলা ছিলো তবে এখন আকাশে কোনো মেঘ নেই। আজ পূর্ন চন্দ্র।চারদিকে চাঁদের আলো ছড়িয়ে পরেছে।নির্ঝরের হৃদয়ের মতো আকাশের মেঘগুলোও একটু একটু করে সরে যাচ্ছে।

নির্ঝর এক দৃষ্টিতে আকাঁশ পানে তাকিয়ে আছে।মুখে এক তৃপ্তির হাসি।অনু ভালোবাসতে শুরু করেছে নির্ঝরকে।এই দিনগুলোর জন্যয় তো অপেক্ষা করছিলো সে।।

হটাৎই নির্ঝরের ফোন বাজে উঠলো।নির্ঝর ঘরে উকি দিয়ে দেখে অনু নেই ওয়াশ রুমে গিয়েছে।নির্ঝর গিয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে সায়নের নাম্বার।হাজার অনিচ্ছা সত্তেও ফোনটা তোলে নির্ঝর।

-হ্যালো!!
-বাহ্ রে নির খুব ভালো খেলা খেললি আমার সাথে!!
-কি বলছিস এসব মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে?
-হ্যা আমার মাথা তো খারাপ হবেই শুধু আমার কেন তোর মতো বেঈমান,স্বার্থপর ভাই না না নোট ওনলি ব্রাদ্যার বাট অলসো বেস্ট ফ্রেন্ড যার থাকবে তার মাথা ত….তো খারাপ হবেই..ই

সায়নের গলার আওয়াজ নির্ঝরের কেমন লাগছে।কথাগুলো জড়িয়ে যাচ্ছে
-তুই কি ড্রাংক??তুই আবার খেয়েছিস??
-এমন ভব করছিস যেন তুই জীবনে খাস নি!!এখন অনুর সামনে ধোয়া তুলসি পাতা সাজছিস।
-সান মুখ সামলে কথা বল…
-মুখ সামলানোর কি দেখছিস হ্যা।বেঈমান কোথাকার অনুর সামনে আমাকে ভিলেন বানিয়ে দিয়ে নিজে হিরো সাজছিস??
-মাথা ঠিক নেই তোর!!
-সব ঠিক আছে….কি খাওয়াছিস তুই আমার গ্রার্লফ্রেন্ডকে যে সবসময় তোর নাম জপতিছে??
-মানে??
-এই বেঈমান তোর কি গার্লফ্রেন্ডের অভাব পরছে যে এতো মেয়ে থাকতে আমারটার দিকেই তোর নজর পড়লো….
-বাড়ি গিয়ে ঘুমিয়ে পড়….
-নির্ঝর চৌধূরী আমিও দেখবো তুমি কতো দিন আমার জিনিস নিজের কাছে রাখতে পারো!!
-টুট টুট টুট

নির্ঝর ফোনটা কেঁটে দিয়েছে।সায়ন ড্রাংক এখন ওর সাথে কথা বলা আর কলা গাছের সাথে কথা বলা দুটোই সমান!!!

শুধু শুধু ওর সাথে কথা বলে রাগ বাড়ানোর মানেই হয় না।।।
নির্ঝর ফোন কাটলেও সায়ন থেমে নেই বার বার নির্ঝরকে ফোন করেই যাচ্ছে।নির্ঝর ফোনটা ওফ করে দেয়।নির্ঝর বেশ কিছুক্ষন বারান্দায় থেকে ঘরে পা বারাতেই দেখে অনু মাথায় টাওয়াল পেঁচিয়ে আয়নার সামনে বসে আছে।

নির্ঝর অনুর কাছে এগিয়ে যায়।
পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে…
-এই সময় গোছল করলা যে??
-ইচ্ছা করলো তাই
-হটাৎ?
-এমনি!!
-ওওও

নির্ঝর হুট করেই অনুকে কোলে তুলে নেয়।
-বাহ্
-কি??
-আমার কিন্তু আপনার কোলে উঠতে ভালোই লাগে!!
-লাগাটাই স্বাভাবিক!!আমি যে তোমার বর

-হু(মুখ ভেংচি কেটে)
-অনু
-হুম্ম
-চলো না ছাদে যাই।আজ সারা রাত আমরা চাঁদ পোহাবো।
-ওকে ডান।তবে আমায় কোলে করেই নিয়ে চলুন।আমার খুব ইচ্ছে ছিলো সা..

নির্ঝর অনুকে কোলে করেই সিড়ির দিকে হাটা ধর
-অনু তোমায় অনেক কিছু বলার আছে আমার যা তুমি জানো না….
-কি????
-অনেক কিছু..

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here