###__স্বামী__###
পর্ব-২৪
#Nirzana(Tanima_Anam)
-অনু তুমি মন খারাপ করো না।আসলে অ্যান্টি তোমাকে নিয়ে প্রথম থেকেই অ্যাপসেট।আসলে যে মেয়ে মা হতে অক্ষম একজন মা হয়ে সেই মেয়েকে নিজের ছেলের লাইফে এক্সেপ্ট করাটা কষ্টকর।
অনু হা করে সিমির দিকে তাকিয়ে আছে।কি বলবে বুঝতে পারছে না।অনু তখন শ্বাশুড়ির বলা কথাগুলো শুনে কাঁদতে কাঁদতে ঘরে চলে আসে।কিন্তু নির্ঝর ঘুৃমোচ্ছে।তাই ঘর থেকে বের হতেই সিমি অনুকে হাত ধরে টেনে বাহিরে নিয়ে যায়।
-মানে সিমিআপি তোমার কথা আমি বুঝতে পারছি না!!
-ওও নির তোমায় কিছু বলে নি তাই না??থাক আমি ও না হয় না বলি!
-না না তুমি বলো…কি হয়েছে?? কেন এরকম বলছো তোমরা?
-আসলে অনু।আমার বলতে খারাপই লাগছে কিন্তুু..তুমি কখনো মা হতে পারবে না।সায়নের সাথে আকদের দিন ডক্টর তোমার পরিবারকে এসব জানায় আর তাই….!!কিন্তু সায়নের এতে কোনো সমস্যা ছিলো না।সমস্যাতো তৈরী করেছিলো অ্যান্টি মানে সায়নের মা।সেই সায়নকে আর বিয়েটা করতে দেয় নি।
(এক নিশ্বাসে গড়গড় করে কথাগুলো বলে দম নিলো সিমি)
কথাটা শোনার পর অনুর যেন গোটা পৃথিবী তোলপাড় হতে শুরু করে।কি শুনছে ও এসব!!
অনুর চোখ দিয়ে টুপটুপ করে বৃষ্টির মতো পানি পরছে।কি বলবে বুঝতে পারছে না।শুধু শান্ত চোখে সিমির দিকে তাকিয়ে আছে।
-তুমি কি আমার সাথে মজা করছো??
-উহু সব সত্যি অ্যান্টি তো নির্ঝরকে বিয়েটা করতেই দিবে না কিন্তু নির্ঝর….
অনু চুপচাপ মুর্তির মতো দাড়িয়ে আছে।এসব কি সত্যি?? তারমানে এই কারণে সায়ন বিয়েটা করেনি??মি.চৌধূরীও তো এতোদিন আমাকে কিচ্ছু বলে নি।কিন্তু কেন?ওনি কেন আমায় এগুলো বলেন নি??বাবা মা ভাইয়া ভাবি কেউই তো কিছু বলে নি??সিমি কি মিথ্যে বলছে না কি সত্যি বলছে??
অনু কাঁদতে কাঁদতে বাগান থেকে বাড়ির দিকে পা বাড়ায়।
নির্ঝর বিছানায় হেলান দিয়ে বসে ছিলো।অনুকে দেখে একটু উঠে বসে
-মি.চৌধূরী আমি কি সত্যিই কোনো দিন মা হতে পারবো না???আমিকি ইস্যুলেছ??
অনুর কথায় নির্ঝর অবাক চোখে তাকায়।হটাৎ এরকম সময় অনুর মুখে এই কথাটা শুনবে নির্ঝর মোটেও আশা করে নি!!
-মানে??
-মানে বুঝতে পারছেন না??আপনি তো সব জানেন আমাকে বলেন নাই কেন??
-আমি চাই নি তুমি কষ্ট পাও
-এখন আমার খুব মজা লাগতিছে তাই না??
অনু কাঁদতে কাঁদতে ফ্লোরে বসে পড়ে।নির্ঝর এগিয়ে যায় অনুর কাছে।
নির্ঝরকে কাছে পেয়ে অনু দু হাতে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।।।
এনিয়ে আর একটি কথাও বলেনি অনু।কি বলবে??বলার তো কোনো ভাষাই নেই।প্রত্যেক মেয়েই তো মাতৃত্বের সাধ পেতে চায়।কিন্তু অনু সেটা পাবে না।আজ অনুর কাছে গোটা জীবনটায় বিষাধময় লাগছে।
নির্ঝরকে অনেক কিছু বলতে ইচ্ছে করছে তবে কথাগুলো গলায় আটকে যাচ্ছে।সব কষ্ট একসাথে দলা পাকিয়ে আর মুখ দিয়ে বের হচ্ছে না।
সেই মুহূর্তে অনু নির্ঝরকে জড়িয়ে ধরে শুধু একটা কথায় বলেছিলো….
-নির্ঝর আমি মা হতে চাই!!
নির্ঝর অনুকে শক্ত করে বুকের মধ্যে আকড়ে ধরেছিলো।অনুর কথা প্রতি উওরে নির্ঝর শুধু এইটুকুই বলেছিলো
-আমার শুধু তোমাকে চাই।আল্লাহ যেমন আমার ইচ্ছে পুরোন করেছে তেমন হয়তো তোমায় ইচ্ছেও পুরোন করবে।
অনুর কাছে এখন সবটা পরিষ্কার সায়ন কেন সেদিন হাসপাতাল থেকো চলে গিয়েছিলো বিয়েটা আর করে নি।হয়তো অনুর এতো বড় দূর্বলতা সে মানতে পারে নি।তাই পালিয়ে গিয়েছিলো।
প্রেমিকার এতো বড় অপারগতা হয়তো সায়নের মতো প্রেমিক মানতে পারে নি।কিন্তু নির্ঝর মেনে নিয়েছে।মেনে নিয়েই তো বিয়েটা করেছে।
নির্ঝর বিষয়টা মেনে নিয়েছে না কি মানিয়ে নিয়েছে এ নিয়ে অনুর মনে বড্ড সন্দেহ ডানা বাদে।
-আচ্ছা নির্ঝর আপনি বিয়ের আগে সবটা জানতেন??
-কোনটা??
-আমি ইস্যুলেছ??
-হুম্ম
-সব জেনে কেন বিয়েটা করলেন??
নির্ঝর মুচকি হেসে জবাব দেয়
-মানুষ তো অনেক কিছুই চায় সব কি আর একসাথে পায়।আমি যা পেয়েছি তা নিয়েই ভালো আছি।
অনু মাথা নিচু করে নেয়
-কিন্তু আমি চাই।ছোট্ট ছোট্ট হাত পা নিয়ে খেলতে চায়। নাদুস নুদুস একটা বেবি যে আমাকে মা বলে ডাকবে।ওর তুলতুলে গাল ধরে আদর করতে চাই
-আল্লাহ চাই লে সব হবে!!
-নির্ঝর আপনি সায়নের ব্যাপারটা জানতেন??
নির্ঝর মুচকি হেসে জবাব দেয়।
-অনু এখনো অনেক কিছু আছে যা তুমি জানো না আমি চাই ও না তুমি জানো!!
-আমি জানতে চাই
-সব কিছু জানতে নেই!!
আজকাল অনুর শ্বাশুড়ি অনুকে বড্ড কথা শুনায়।যখন খুশি যা নয় তাই বলে অপমান করে।তবে অনু নিশ্চুপ।ওনি যা বলেন সত্যিই তো বলেন।
সেদিন হাসপাতালে আনিকা আপুর বাচ্চা দেখতে গিয়েও অনুর শ্বাশুড়ি একঘর লোকের সামনে অনুকে যা নয় তাই বলে অপমান করলো।বাচ্চাটাকে একটিবার দেখতেও দেয় নি।কেন দেবে এসব বাজা মেয়ে মানুষের ছায়া পরলেও নাকি বাচ্চাদের ক্ষতি হবে।শ্বাশুড়ির কথার প্রতিউওরে অনু শুধু বলেছিলো
-কোনো মেয়েই ইচ্ছে করে বন্ধ্যা হতে চায় না যদি আল্লাহ সন্তান না দেয় আমার কি করার আছে??নিজে সন্তানের জন্ম দিতে পারবো না বলে আমি অন্যের সন্তানের ক্ষতি চাইবো এটা কেমন কথা!!
সেদিন অনু মুখ গোমড়া করে বাড়ি চলে এসেছিলো!!নির্ঝরের বুকে মাথা রেখে বলেছিলো
-আমি মা হতে চাই!!
-আল্লাহ চাইলে সব হবে।
বেশ কয়েকটা দিন কেটে গেছে।সব কিছু মিলিয়ে অনু নিজেকে মানিয়ে নিয়েছে।আল্লাহ সবার কপালে কি সব সুখ রাখে।নির্ঝরের মতো স্বামী পেয়েছে এই অনেক।যে সব জেনে শুনে কখনো কোনো অভিযোগ করে না।
তবে আজকাল সায়ন বড্ড জ্বালায়।তার না কি কিসব গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে।তবে অনু সেসবের কিছুই জানতে চায় না।
এখন অনুর কাছে পৃথিবীর সবচেয়ে ভরসার জায়গা হলো নির্ঝর।সে ছাড়া অনু যেন আর কাওকে দেখতেই পায় না।
[আজকাল সিমিটা বড্ড জ্বলে।চোখের সামনে নির্ঝর আর অনুর ঢলাঢলি তার আর সহ্য হয় না
এতো কিছু করেও লাভ হলো না।সিমির ধারনা ছিলো বিদেশ থেকে সায়নকে এনে অনুকে বিদায় করবে তারপর নির্ঝর…..
কোনো লাভই তো হলো না।সায়ন তো এলো কিন্তু এ মেয়েকে কিছুতেই ভাগাতে পারছে না।
তারপর ভাবলো সায়নকে দিয়ে নির্ঝরের মনে সন্দেহ জাগাবে।সেই জন্য কতো কি না করলো।প্লান করে সেদিন সপিং মলে নিজে সায়নকে ডেকে অনুকে সেখানে পাঠিয়ে নির্ঝরকে ইনিয়ে বিনিয়ে বলেছিলো
-নির অনু বোধয় সত্যি তোর সাথে থাকতে চায় না।নাহলে এতো কিছুর পরও সে সায়নকে সপিং মলে ডেকে পাঠায় দেখা করার জন্য??
-কিহ্??
-হুম্ম।বোধয় আজই দুজন পালিয়ে যাবে….
নির্ঝর এসেছিলো, অনুকে হাতে নাতে ধরলো,প্রমানও পেলো তারপর আবার সব ভুলেও গেলো???
আচ্ছা এতো বড় ঘটনার পরও নির্ঝরের বিন্দু মাত্র হেদোল নেই।ঠিকই অনু অনু করছে।
সিমির সবচেয়ে বেশি অবাক লাগে
এই তো সেদিন আনিকা আপুর বেবি শওয়ারে সায়নকে ডাকলো।বেশ কিছু কাজের ছবিও তুললো নির্ঝরকেও পাঠালো।সে নিয়ে নির্ঝরের রিয়াক্টও দেখার মতো ছিলো।সিমি তো ভেবেছিলো কেল্লাফতে আজই নির অনুকে ঘার ধাক্কা দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দিবে।কিন্তু কোই ঠিক তার পরদিনই নির্ঝর সব ভুলে অনু অনু করছে।এমন একটা ভাব যেন ছবিগুলো তার চোখেই পরে নি।
রাগে গা জ্বলছে সিমির।এই মেয়েটা কি ম্যাজিক জানে??নাহলে এতো বড় বড় ঘটনা কেমনে ধামা চাঁপা দেয়??
নাহ্ এবার এমন কিছু করতে হবে যাতে অনু নামটা একেবারে নির্ঝরের মন থেকে মুছে যায়…..]
একদিন বিকেলে অনুর মন খারাপ করছিলো তাই সে বাগানে চলে আসে।কিছু কিছু গোলাপ কাছে নতুন কুড়ি ফুটেছে।সেগুলোতে পানি দেয়।একটু ঘোরা ফেরা করতেই শ্বাশুড়ি ডাক দেয়।
শ্বাশুড়ির ডাকে অনু ভেতরে আসতে নিলেই কেউ একজন অনুর হাত ধরে ফেলে…..
-কে(ভয় পেয়ে)
-নির্ঝরকে তুমি যতোটা মহান ভাবছো সে ঠিক ততোটা মহান নয় অনু যে তোমার সম্পর্কে এরকম কথা জেনেও তোমায় বিয়ে করবে।আসলে সব ওর পরিকল্পনা।
অনু পাশ ফিরে তাকায়।দেখে সায়ন দাড়িয়ে আছে…
-তুমি..
-হুম্ম তোমায় বার বার সত্যি জানাতে চেয়েছিলাম তুমি শোনো নি।
-আরো কি জানার বাকি আছে বলো??আমি কিচ্ছু জানতে চাই না।
-অনু এইসব কিছু নির্ঝরের প্লান ছিলো আমাদের আলাদা করার।
নির্ঝর ইচ্ছে করে এসব করেছে।ও প্লান করে আমাকে তোমার থেকে আলাদ করেছ….
সায়ন এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে দম নয়।অনু অবাক হয়ে দাড়িয়ে আছে।সায়ন কেমন এক অন্যরকম দৃষ্টি দিয়ে অনুকে দেখছে।এই দৃষ্টির মাঝেই তো অনু হারিয়ে গিয়েছিলো তবে আজ সেরকম কিছু হবে না।
অনু দ্রুত নিজের হাতটা সায়নের কাছ থেকে ছুটিয়ে নিয়ে হাটা ধরে।
-অনু বিশ্বাস করো তুমি যা জানো সব মিথ্যা….
চলবে….
(