###__স্বামী__###
পর্ব-২৫
#Nirzana(Tanima_Anam)
-সায়ন লাগছে!! হাত ছাড়ো আমি তোমার কোনো কথায় শুনতে চাই না!!
-তোমাকে শুনতে হবে অনু সব জানতে হবে!!তুমি এভাবে আমাকে ফেলে ভালো থাকতে পারো না
-সায়ন লাগছে ছাড়ো বলছি….
সায়ন অনুর হাতটা শক্ত করে ধরে আছে।আজ অনুকে সব বলেই ছাড়বে।নির্ঝর যে কতো বড় বেঈমান তা আজ অনুকে জানাতে হবে
অনু বারবার ছুটার চেষ্ট করছে কিন্তু পারছে না।চিৎকার দিতে যাবে সায়ন মুখ চেঁপে ধরে অনুকে টেনে বাগানের ভেতর দিকে নিয়ে যায়
-অনু প্লিজ আমি যেই কথাগুলো বলবো সেগুলো শোনা খুব জরুরি।সেগুলো বলেই আমি চলে যাবো।প্লিজ এইটুকু সময় আমাকে দাও…
অনু একটু শান্ত হয়ে দাড়ায়।হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে বলে
-বলো কি বলবে???তবে শুনে রাখো তুমি যদি নির্ঝকে নিয়ে বানিয়ে বানিয়ে একটা ও মিথ্যে কথা বলো আমার থেকে খারাপ কিন্তু কেউ হবে
সায়ন মুচকি হেসে জবাব দেয়…
-অনু তোমার ভালোবাসা এতোই ঠুনকো ছিলো যে আমাকে এতো অল্পেতেই ভুলে গেলে।ভয় নেই আমি প্রমান ছাড়া কিছুই বলবো না…আর আমি যে তোমায় মিথ্যে বলতে পারি না এটা তুমিও ভালো করেই জানো!!
-যা বলবে তাড়াতাড়ি বলো…(একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে)
-নির্ঝর নিশ্চয় তোমাকে বলেছে তুমি ইস্যুলেছ তোমার কখনো বেবি হবে না তাই আমি তোমাকে ফেলে চলে গিয়ছিলাম!!….বলে নি এগুলো???
-হুম্ম আমি জানি কথাগুলো তবে নির্ঝরের কাছ থেকে না সি….
-কথাটা কিছুটা সত্যি হলেও গোটা টা নয়…
-মানে???
-অনু নির্ঝর আমার খালাতো ভাই হয় ওও শুধু ভাই বললে ভুল হবে এক কথায় জিগড়ি দোস্ত ছিলো।তোমার আমার সম্পর্কের শুরু থেকে শেষ অব্দি ও ছিলো।ও সব জানতো।কিন্তু ও না কি তোমাকে অনেক আগে থেকেই পছন্দ করতো।তবে আমি সেটা রিসেন্টলি জেনেছি। ওও তোমাকে আমার পাশে এক্সেপ্ট করতে পারে নি তাই তোমাকে আমার থেকে আলাদা করার জন্য প্লান করে এসব করেছে…
অনু হা করে সায়নের কথাগুলো গিলছে…
-কিসের প্লান??
-সেদিন আকদের দিন তুমি হুট করে সিড়ি থেকে পড়ে গিয়ে সেন্সহারিয়ে ফেল্লে ঐ সময় কি করবো বুঝতে পারছিলাম না তাই আমি সরাসরি নির্ঝরকে ফোন করি আর নির্ঝরই সব ব্যবস্থা করে।তোমাকে নির্ঝরের ফুপার নার্সিং হুমে নিয়ে যাওয়া হয়।আর তোমার ডক্টর কে ছিলো জানো??
-কে??
-আনিকা আপু…
-মানে নির্ঝরের সেই ফুপাতো বোন??
-হুম্ম!!
-তো…?
-আনিকা আপুই সবাইকে বলে তুমি না কি কোনো দিনও মা হতে পারবে না।ঐ কথাগুলো শোনার পর পরই মা বিয়েতে না করে দেয়।বিশ্বাস করো অনু আমার কোনো সমস্যা ছিলো না।আমি তো তোমায়…..কিন্তু মা কিছুতেই মানছিলো না। আমাকে কিসব কসম টসম দিলো আমি না চেয়েও তোমায় ফেলে চলে যেতে বাধ্য হয়েছিলাম!!ভেবেছিলাম পরে…মা কে বুঝিয়ে
অনু চুপচাপ মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে হয়তো সায়ন মিথ্যে বলছে।
অনু সায়নের দিকে একপলক তাকিয়ে যেতে নিলে সায়ন অনুর হাত ধরে নেয়।
-আমার কথা বিশ্বাস হচ্ছে না তাই তো?হবে কি করে তোমার স্বামী তো তোমার পরিবারের কাছে নিজে মহান সেজে আমাকে ভিলেন বানিয়ে দিয়েছে।
-জাস্ট স্যাট অ্যাপ এন্ড গেট লস্ট
-নির তোমার ভাইকে পটিয়ে পাটিয়ে তোমাকে বিয়ে করেছে।আমি বিয়েটা না করায় তোমার বাবা মা ভাই সবাই ভেঙ্গে পরেছিলো হয়তো তোমার ভবিষ্যৎ নিয়েই। তখন নির তোমাকে বিয়ে প্রস্তাব দেয় তোমার বাবা মা ও রাজি হয়ে যায়।তাদের কাছে তো নির্ঝর ফেরেস্তা!!
-আপনি জানতেন না আমার বিয়ে হচ্ছে??
-জানতাম কিন্তু নির্ঝরের সাথে হচ্ছে এটা জানতাম না।মা আসতে দেয় নি!!
-ওওও।তাহলে এখন কেম এসেছেন?এখন কি আপনার মা আপনাকে আসতে দিচ্ছে??
-অনু আমি আগে ভিতু ছিলাম এখন সাহসী হয়ে গেছি!!
-আফসোস এই সহসটা যদি আগে থাকতো!
-অনু তুমি এখনো আমাকে বিশ্বাস করছো না তাই না???
-আমি আমার স্বামীকে বিশ্বাস করি!!
-তাহলে এই নাও নিজেই দেখে নাও নিজে রিপোর্ট….
-কিসের…
-এই একটা নকল যেটা সেদিন অনামিকা আপু তৈরী করিয়েছিলো নির্ঝরের কথায় আর এইটা আসল।জানতে চাওনা রিপোর্টটাতে কি লিখা আছে
অনু জিঙ্গাসা সূচক দৃষ্টিতে সায়নের দিকে তাকিয়ে আছে..
-এই একটাতে লিখা আছে তোমার ওভারিতে প্রবলেম আছে।তুমি কখনো মা হতে পারবে না।আর একটাতে লিখা আছে তোমার সিস্ট হয়েছে যার জন্য পেট ব্যাথ্যা হচ্ছিলো।
-মানে?? কি সব বলছো তুমি??
-বুঝিয়ে বলি….আসলে তুমি কখনো মা পারবে না ব্লা ব্লা এগুলো সব সাজানো নাটক তোমাকে আমার থেকে আলাদা করার জন্য….ওঔ এর পেছনে অবশ্য তুমি ছাড়াও আরেকটা কারন আছে সেটা হলো- নীরা
-নীরা??
-হুম্ম নীরা আমায় ভালোবাসে ছোটবেলা থেকে!!
খালামুনি চান আমি নীরাকে বিয়ে করি সবাই এটাই চায় মা ও।কিন্তু আমি না করে দিই কারন তোমাকে…অনু নির্ঝর নিজের স্বার্থে আমাদের জীবনটা শেষ করে দিলো!!!
অনু চুপচাপ মূর্তির মতো দাড়িয়ে আছে।কি বলবে কি করবে বুঝতে পারছে না।কথায় আছে না অল্প শোকে কাতর আর অধিক শোকে পাথর….
-সায়ন তুমি নীরাকে বিয়ে করে নাও আর ভালো থেকো!!
-কি??
-হুম্ম ভুলে যাও আমাকে।ভুলে যাও অনু নামের কেউ তোমার জীবনে ছিলো।
কথাগুলো বলেই অনু ছুটতে ছুটতে বাড়ি চলে আসে।
এবার হয়তো অনুর সব হিসেব মিলে গেছে।
“কেন সেদিন নির্ঝর নীরার আকদে অনুকে থাকতে দেয় নি!!কেন নির্ঝর নীরার বিয়ের কথা বললেই এরিয়ে যেত আর কেনই বা নির্ঝর এভাবে জোড় করে অনুকে আটকে রেখেছে।সব মিলে যাচ্ছে সবকিছু”
অনুর চোখ দিয়ে পানি পারছে না।একরকম পাথর হয়ে গেছে।যাকে বিশ্বাস করলো ভরসা করলো সেই তো দাম দিলো না।
অনুকে ভেতের আসতে দেখে নীরা এগিয়ে যায়
-কি গো ভাবি কখন থেকে খুজছি তোমায় কোই ছিলা??
-নীরা তোমার হবু বরের নাম কি সাজ্জাদ আহম্মেদ সায়ন???
-হুম্ম কেন?(অবাক হয়ে)
-সে কি তোমার খালাতো ভাই হয়??তুমি কি তাকে ছোটবেলা থেকেই ভালোবাসতে??
-হুম্ম কিন্তু কেন???
-তোমার ভাই কি জানে সব??
-বাড়ির সবাই জানে সবাই তো চায় আমাদের বিয়েটা হোক শুধু সে চায় না।ইভেন এখনো রাজি না
-ভেবে না সেও রাজি হয়ে যাবে….
কথাগুলো বলে অনু উপরে চলে যায়।নীরা সেখানে দাড়িয়ে অনুর কথাগুলো ভাবছে।অনু কেমন অচেনা লাগছে নীরার।
অনু ঘরে এসে দরজা বন্ধ করে দেয়।বেশ কান্না পাচ্ছে কিন্তু কাঁদতে পারছে না।দুচোখ উপচে নোনা পানির ঢেউ আসছে কিন্তু কোনো এক বিশাল প্রাচীর সেই ঢেউকে বাহিরে আসতে বাধা দিচ্ছে….।
খুব কষ্ট হচ্ছে।
[কষ্ট পেয়ে কাঁদার মাঝেও এক অনন্য সুখ লুকিয়ে থাকে।তাতে হয়তো বেশির ভাগ কষ্ট চোখের সেই নোনা জলের মাধ্যমে বেরিয়ে পড়ে।কিন্তু মানুষ যখন কাঁদতে পারে না সেই কষ্ট গুলো বুকের মাঝে দলা পাকিয়ে পাথরের মতো ভরী হয়ে যায়।তখন কষ্ট হয় বড্ড বেশিই কষ্ট হয়]
এই ঘরে অনুর দম বন্ধ হয়ে আসছে।বেশ কিছুক্ষন অনু মেঝেতে গুটিশুটি হয়ে বসে থাকে তারপর হুট করেই এক কাঁপড়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ে।কোথায় যাবে আপাতোতো মাথায় আসছে না তবে এই ঘর এই বাড়ি এই মিথ্যে সম্পর্কগুলোর থেকে তার মুক্তি চাই।
অনুর চলে যাওয়া কারো চোখে না পড়লেও সিমির চোখে পড়ে।
এতো দিনের খাটাখাটুনির পর আজ সিমির কাজ সফল হলো!!সিমির মুখে এ তৃপ্তির হাসি
প্রায় সন্ধ্যে গড়িয়ে রাত নেমে এলো।এদিকে অনুর কোনো খোজ নেই।নীরা সারবাড়ি খুজেও অনুকে পায়নি।অনু কখন বাড়ি থেকে বেরিয়েছে…কোথায় গেছে কেউ জানে না।
নির্ঝরের মা তো রেগে মেগে আগুন।একেই তো এই মেয়ের দোষ আছে তার উপর এরকম হুট হাট করে বাড়ি ছেড়ে কোথায় গেছে কে জানে
“আজ নির বাড়ি ফিরুক এই মেয়েকে আর ঘরেই তুলবো না” কথাগুলো মনে মনে বলে নিজের ঘরে চলে যায় নির্ঝরের মা…
প্রায় রাত এগারোটা নাগাত নির্ঝর বাড়ি ফিরে।
নীরা ড্রইং রুমে বসে বসে কাঁদছে।সেই সন্ধ্যে থেকে অনুর কোনো খবর নেই।নির্ঝর ঘরে ঢুকতেই নীরা নির্ঝরকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেয়
-নীরা কি হয়েছে কাঁদছিস কেন?
-ভাইয়া ভাবি!!
-অনু!!কি হয়েছে অনুর??
-ভাইয়া ভাবিকে কোথাও খুজে পাওয়া যাচ্ছে না!!
নির্ঝরের মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে।
-কিহ্?
-হুম্ম…
-কোথায় গেছে অনু?
-জানি না।আমাদের কাউকে কিচ্ছু বলে যায় নি ভাইয়া।আমার না খুব ভয় করছে।
হুট করে সিমি এসে নির্ঝরের হাত ধরে নেয়।
-আমার সাথে চল আমি বলছি সব।
সিমি নির্ঝরকে টানতে টানতে ঘরে নিয়ে আসে।
-কি হয়েছে এভাবে এখানে আনলি কেন আমাকে??
-নির আমার কথা শোন আসলে অনু কোথা আমি জানি!!
-অনু কোথায় তুই জানিস?তোকে বলে গেছে??
-আসলে অনু সায়নের সাথে পালিয়ে গেছে….
-what??
-হুম্ম আমি জানতাম নির অনু তোকে কখনো ভালোবাসবে না আমি তো আগে থেকেই জানতাম!!
-(…)
-আমি তোকে বার বার চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিলাম।মনে আছে সেদিন সপিংমলেও তো অনু সায়নের সাথে পালাতে চেয়েছিলো।তুই তো ওকে কিছুই বললিই না!!তারপর ঐ ছবিগুলো আমি তোকে পাঠালাম তুই বিশ্বাসই করলি না।গোটা বিষয়টাকে এড়িয়ে গেলি এখন বোঝ।তোর বউ অন্য কারো সাথে পালিয়েছে…..এটাই সত্যি
নির্ঝর রাগে কটমট করতে করতে সিমিকে সামনে ঘুরাই তারপর ঠাটিয়ে একটা চড় মারে।
সমি টাল সামলাতে না পেরে নিচে পড়ে যায়….
-নির
সিমি উঠে দাড়াতেই নির্ঝর আরেকটা চড় মারে সিমি আবারো পড়ে যায়….
-নির তুই আমাকে মাড়লি??
-আরো একটা চড় বাকি আছে।তবে সেটা আমি মারবো না অনুকে দিয়ে মারাবো তুই শুধু অপেক্ষা কর..!!
(নির্ঝর চলে যেতে নিলে)
-যা সত্যি তাই তো বললাম খুব গায়ে লাগছে তাই না তোর বউ তার প্রেমিকের সাথে নোংরামি করবে আর আমি বললেই দোষ….
-সিমি যদি আর চড় না খেতে চাস তো প্লিজ চুপ হয়ে যা।কি সত্যি আর কি মিথ্যা তুইও ভালো জানিস আমি ও জানি তাই বলছি….(স্ স্ স্ স্) চুপ একদম চুপ….!!
কথাগুলো বলেই নির্ঝর বেরিয়ে যায় অনুকে খুজতে হবে।মেয়েটা যে বড্ড অভিমানী।যদি কিছু করে ফেলে….
নির্ঝরের বুকটা ধক করে উঠে
“ইস্স অনুকে যে আমার অনেক কিছু বলার ছিলো-সেগুলো কি অনুকে বলা হবে না???”
চলবে……